Ajker Patrika

অনুমোদনহীন স্থাপনা: ১২০০ ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

  • অননুমোদিত ও নকশাবহির্ভূতভাবে নির্মাণাধীন ভবনের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে: রাজউক
  • রাজউকের কর্মকর্তা পরিচয়ে লাখ লাখ টাকা দাবির অভিযোগ
  • টাকা না পেলে অভিযান চালিয়ে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়: ভুক্তভোগী
অরূপ রায়, সাভার
আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ৩৮
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ঢাকার আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকায় ছোট্ট একটি বাড়ি নির্মাণ করছিলেন শারীরিক প্রতিবন্ধী আব্দুর রব ব্যাপারী। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) গত জুন মাসে অভিযান চালিয়ে আব্দুর রবের বাড়ির বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এর পর থেকে বাড়িটির নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে।

সাভার ও আশুলিয়া রাজউকের মহাপরিকল্পনাভুক্ত এলাকার মধ্যে পড়েছে। ওই এলাকায় কোনো স্থাপনা নির্মাণের আগে রাজউকের অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু আব্দুর রব ব্যাপারীর জানা ছিল না বলে তিনি বাড়ি নির্মাণের আগে অনুমোদন নেননি। অননুমোদিত ও নকশাবহির্ভূতভাবে নির্মাণাধীন এ রকম ১২০০ ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে রাউজক। তবে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা পরিচয়ে ঘুষ দাবির অভিযোগ করেছেন কয়েকজন বাড়ির মালিক।

সাভার ও আশুলিয়ার বেশ কয়েকজন বাড়ির মালিক অভিযোগ করে বলেন, প্রতিটি এলাকাতেই রাজউকের তথ্যদাতা রয়েছেন। তাঁদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়। অনুমোদনহীন বা অনুমোদিত নকশার বাইরে নির্মাণাধীন ভবনের কয়েক ফুট ভেঙে দিয়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। এতে ওই সব এলাকায় অন্য বাড়ির মালিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে রাজউকের একশ্রেণির কর্মকর্তা তথ্যদাতাদের মাধ্যমে বাড়ির মালিকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেন। যেসব বাড়ির মালিকেরা টাকা দেন, ওই সব বাড়ির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

কাঠগড়া এলাকার আব্দুর রব ব্যাপারীর ছেলে সোহেল হোসেন বলেন, ‘আমাদের বাড়ির পাশেই রয়েছে ছয়তলা জনি ভিলা। জনি ভিলার পাশেই গড়ে উঠেছে আরও একটি পাঁচতলা বাড়ি। ওই বাড়ি দুটিরও কোনো অনুমোদন নেই। কিন্তু রাজউক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অথচ আমাদের কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না।’

জনি ভিলার মালিক তাইজুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রামে বাড়ি নির্মাণের জন্য রাজউকের অনুমোদন নিতে হয়, তা আমার জানা ছিল না। তা ছাড়া রাজউকের পক্ষ থেকেও কিছু বলা হয়নি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কাঠগড়া এলাকার ভুক্তভোগী এক বাড়ির মালিক বলেন, পুনরায় বিদ্যুৎ-সংযোগের ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে রাজউকের পরিদর্শক পরিচয়ে হাবিবুর রহমান নামের এক ব্যক্তি তাঁর কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করেছিলেন। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তাঁকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

ভুক্তভোগী বাড়ির মালিক পরিচয় দিয়ে এই প্রতিবেদক মোবাইল ফোনে হাবিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমি পরিদর্শক নই, এক পরিদর্শকের সঙ্গে কাজ করি। আপনার কোনো সমস্যা থাকলে মহাখালীর অফিসে আইসেন, স্যারকে দিয়ে কাজ করিয়ে দেওয়া যাবে।’

পরে এ প্রতিবেদক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে হাবিবুর রহমান কথা না বলে ফোন কেটে দেন। পরে কল করা হলেও তিনি আর রিসিভ করেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত তিন মাসে দুই দফায় রাজউক সাভার পৌর এলাকার ভাটপাড়া মহল্লায় জাহাঙ্গীর নগর হাউজিং সোসাইটিতে অভিযান চালিয়ে অন্তত ২২টি নির্মাণাধীন ৮ থেকে ১০ তলা ভবনের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এর পর থেকে বিদ্যুতের অভাবে ওই সব বাড়ির নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে।

গত মে মাসে জাহাঙ্গীর নগর হাউজিং সোসাইটিতে অভিযান চালিয়ে রাজউক ‘বি’ ব্লকের ১৮৪ নম্বর প্লটের নির্মাণাধীন ১০ তলা বাড়ির বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ভবনমালিকদের একজন রিপন চন্দ্র দাস আজকের পত্রিকা'কে বলেন, ‘আমাদের ৪ হাজার ৫০০ বর্গফুট ভূমির পুরোটাতেই ১০ তলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু রাজউকের নকশায় ২ হাজার ৭০০ বর্গফুট ছেড়ে দিয়ে ১ হাজার ৮০০ বর্গফুটের মধ্যে ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নকশাবহির্ভূতভাবে ভবন নির্মাণ করার কারণে রাজউক অভিযান চালিয়ে বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি আমাদের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।’

রিপন চন্দ্র দাস আরও বলেন, রাজউকের অনুমোদিত নকশা বা ইমারত নির্মাণ বিধান মেনে কারও পক্ষেই বাড়ি নির্মাণ করা সম্ভব নয়। কেউ তা মানেনও না। সোসাইটির ভেতরেই আরও দুই শতাধিক ভবন রয়েছে। ৮ থেকে ১০ তলা উচ্চতার ওই সব ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে রাজউকের অনুমোদিত নকশা মানা হয়নি। এরপরও ওই সব ভবনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

রিপন দাসের বাড়ির পাশেই ১৩০ নম্বর প্লটে রয়েছে আরও একটি ১০ তলা বাড়ি। ‘জম জম টাওয়ার’ নামের ওই বাড়ির নির্মাণকাজ শেষ হয় বছর দু-এক আগে। গত শনিবার জম জম টাওয়ারে গিয়ে দেখা যায়, চারপাশে কোনো উন্মুক্ত স্থান না রেখেই বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ রাজউক থেকে বাড়িটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ভবনমালিকদের একজন সৈয়দ আব্দুল মোমিনের স্ত্রী রাহেলা বেগম বলেন, ‘আমরা রাজউকের অনুমোদন নিয়েই বাড়িটি নির্মাণ করেছি। তবে নির্মাণের ক্ষেত্রে অনুমোদিত নকশা মানা হয়েছে কি না, তা বলতে পারব না।’

ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি জাহাঙ্গীর নগর হাউজিং সোসাইটির ‘এ’ ব্লকের ১০২ নম্বর প্লটের নির্মাণাধীন ১০ তলা বাড়ির বিরুদ্ধেও। বাড়িটি দেখভালের দায়িত্বে থাকা জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘রাজউক আমাদের এখানে আসেনি। হয়তো মালিকপক্ষ রাজউকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের উত্তরা জোনাল অফিসের সদ্য সাবেক অথরাইজড অফিসার ও রাজউক প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত পলাশ শিকদার বলেন, সাভার ও আশুলিয়া এলাকায় পাকা কোনো স্থাপনা নির্মাণের আগে রাজউকের অনুমোদন নিতে হবে এবং অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করতে হবে। যাঁরা এর ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সাভার, আশুলিয়াসহ সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ অভিযান চলবে।

অবৈধভাবে নির্মিত কোনো ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, আবার কোনোটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, এমন প্রশ্নের জবাবে রাজউকের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, অনুমোদনবিহীন বা অনুমোদিত নকশাবহির্ভূতভাবে কোনো ভবনের নির্মাণকাজ চলমান থাকলে সেই সব ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তবে যেসব ভবনে মানুষ বসবাস শুরু করেছে, তা অবৈধ হলেও সেই সব ভবনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে বারণ করা হয়েছে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বদলি নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ শিক্ষক নেতার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ

সহকর্মী এবং নিজের বদলি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমাকে সাড়ে ৪০০ মাইল দূরে বদলি করা হয়েছে। এতে আমি বিচলিত নই।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া শতাধিক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা এবং বিভাগে। আরও অনেককে বদলি করা হতে পারে। এ নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাব। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসব না। আপনাদের পাশে রয়েছি। অবিলম্বে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। সে জন্য যদি জেলেও যেতে হয়, প্রস্তুত রয়েছি।’

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মাহফুজা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে বরিশাল সদরের চরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমনের বাম্পার ফলনেও মুখে হাসি নেই কৃষকের, বাজারে ধানের দাম কমায় হতাশা

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তাই ফলন ভালো হওয়ার পরও বাজারে ধানের যথার্থ মূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়ছেন তাঁরা।

কৃষকেরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম অনেক কম। গত বছর বাজারে যেখানে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে, এই বছর মাঝারি শুকনা ধান ৯০০ ও শুকনা ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার আগপর্যন্ত অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০ টন ধান উৎপাদন হবে। আর এই ধান থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমন ধানের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা।

বাজারে আমন ধানের দাম কম হলেও সরকারিভাবে ভালো দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতি কেজি আমন ধান ৩৪ টাকা মূল্যে ৭৯০ টন, সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা কেজি মূল্যে ২ হাজার ৬৭৭ টন ও আতপ চাল ৪৯ টাকা কেজি মূল্যে ৫ হাজার ৬৪৬ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার আমনখেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত। অনেক এলাকায় দ্রুত সময়ে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ একসঙ্গে সেরে নিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে সময়, খরচ ও কষ্ট কম করতে হচ্ছে। আবার কেউ কাজের লোক এনে ধান কেটে ফসলের মাঠেই মাড়াই করে সেদ্ধ দিচ্ছেন। অনেক কৃষক মাঠের মধ্যে রাত জেগে ধান সেদ্ধ করছেন। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও ধানের দাম কম থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন কৃষকেরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়ন কৃষক আনোয়ার খান বলেন, ‘গত বছর আমাদের ধান একেবারেই হয়নি। এ বছর অনেক ভালো ধান হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম অনেক কম। প্রতি মণ ধান মাত্র ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মিলন কান্তি চাকমা বলেন, ‘আমাদের ধান-চাল সংগ্রহের কার্যক্রম ২০ নভেম্বর শুরু হয়েছে; চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সরকারিভাবে ধানের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ১ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। একটা সময় আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারতাম না; তবে এখন ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। আশা করি, চলতি মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘জেলায় এ বছর খুব ভালো আমন ধান হয়েছে। কৃষকেরা অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে ধান ঘরে তুলছেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও দিনের বেলা কুয়াশা না থাকায় সহজে কৃষকেরা ধান কাটা, মাড়াই ও সেদ্ধ করতে পারছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা
হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা

উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ে ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে তাপমাত্রার পারদ। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯২ শতাংশ।

গত কয়েক দিন পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৩ ডিগ্রির ঘরে থাকছে। ফলে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। আজ শুক্রবার সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। সুনসান নীরবতায় গরম কাপড় পরে প্রয়োজনীয় কাজে বের হয়েছে লোকজন। কেউ কেউ মাঠে করছেন হালচাষ। এরই মধ্যে পূর্ব আকাশে সূর্য দেখা দিলেও নেই প্রখর রোদ।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার তালমা এলাকার গৃহবধূ নাজমা বেগম বলেন, ‘সকাল-বিকেল খুব ঠান্ডা পড়ে। ঘর থেকে বের হলেই যেন বাতাসে শরীর কেঁপে ওঠে। বাচ্চাদের নিয়ে সবচেয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। ঠান্ডা লাগলে হাসপাতালে যেতে হয় বারবার।’

একই এলাকার দিনমজুর মিজানুর রহমান বলেন, ‘শীতে কাজ পাওয়া কষ্ট হয়ে গেছে। সকালে কুয়াশায় কিছু দেখা যায় না, হাত-পা জমে থাকে। ঠান্ডায় শরীর ঠিকমতো সাড়া না দেওয়ায় কাজের গতি কমে গেছে।’

স্কুলছাত্রী তানজিলা আক্তার বলে, ‘সকালে কলেজ ও প্রাইভেটে যেতে খুব সমস্যা হয়। ঠান্ডা এমন যে হাতে গ্লাভস ছাড়া সাইকেল চালানো যায় না। শীত যেমন বাড়ছে, তেমনি অসুস্থ হওয়ার ভয়ও বাড়ছে।’

জেলার আশপাশ এলাকায় বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগী। এতে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তনজনিত অ্যালার্জিতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, দিন-রাতের তাপমাত্রার এই বড় পার্থক্য শরীরের ওপর চাপ ফেলে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ বেশি ঝুঁকিতে থাকে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ চিকিৎসকের।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, শীত ধীরে ধীরে নামছে। আজ ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। সামনে শীত আরও তীব্র হতে পারে। শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গলায় রশি পেঁচানো নছিমনচালকের লাশ উদ্ধার

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
ডোবায় নছিমনচালকের লাশ পাওয়া যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ডোবায় নছিমনচালকের লাশ পাওয়া যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ওমর আলী শেখ (৫০) নামের এক নছিমনচালকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে মোবারকগঞ্জ চিনিকল ফার্মের সড়কের ডোবা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। পুলিশের ধারণ, নছিমনচালককে কুপিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।

নিহত ওমর আলী কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার হাটবেলাটপুর গ্রামের ছাত্তার শেখের ছেলে।

বারোবাজারের ইসমাইল নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে বারোবাজারে শ্রমিকের কাজ করতাম। কিছুদিন আগে ওমর আলী নছিমন কিনেছে। সে বারোবাজারের মাছের ভাড়া টানে। সকালে তার মোবাইলে ফোন দিলে রিসিভ হচ্ছিল না। পরে জানতে পারি, তাকে হত্যা করা হয়েছে।’

কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানান, সকালে ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির গলায় ধারালো অস্ত্রের কাটা দাগ রয়েছে। এ ছাড়া রশি দিয়ে তাঁর গলা পেঁচানো। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁকে কুপিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যা করে ফেলে রেখে গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত