Ajker Patrika

ছাত্রদের ওপর হামলা

গাজীপুরে হামলায় মুখ খুলছে না এলাকাবাসী

  • মন্ত্রীর বাড়ির আশপাশের প্রায় সবাই বলছেন, তাঁরা কিছু জানেন না।
  • ভাইরাল ফুটেজের কণ্ঠস্বরের ভিত্তিতে দুজনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে।
গাজীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০: ০৮
অভিযানে আটক ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পুলিশের ভ্যানে করে। গতকাল গাজীপুরে। ছবি: আজকের পত্রিকা
অভিযানে আটক ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পুলিশের ভ্যানে করে। গতকাল গাজীপুরে। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুর মহানগরীর ধীরাশ্রম দক্ষিণখান এলাকায় সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে শিক্ষার্থীদের মারধর ও নির্যাতনের ঘটনায় নতুন শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনার জেরে আওয়ামী লীগের নেতারা এখন ঘরছাড়া। হামলার বিষয়ে সাধারণ মানুষেরা মুখ খুলছেন না। হামলায় গ্রেপ্তারে অভিযান শুরুর পর সাবেক মন্ত্রীর বাড়ির আশপাশ থেকে আতঙ্কে সরে গেছেন অনেক সাধারণ মানুষ।

গত শুক্রবার ওই হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর শনিবার সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ সভায় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারাও যোগ দেন। এরপর সারা দেশে শুরু হয় অপারেশন ‘ডেভিল হান্ট’।

এদিকে সাবেক মন্ত্রীর বাড়িতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় গতকাল রোববার থানায় মামলা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক মো. আব্দুল্লাহ মুহিত। এতে ২৩৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা দুই থেকে তিন শ জনকে আসামি করা হয়। প্রধান আসামি মোজাম্মেলের ভাতিজা আমজাদ হোসেন মোল্লা।

গাজীপুর মহানগর পুলিশ (জিএমপি) জানিয়েছে, গত শনিবার রাত থেকে শুরু হওয়া বিশেষ অভিযানে মোট ৮১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গাজীপুরকে অস্থিতিশীল করতে প্রচুর অস্ত্র ঢুকছে বলে জানিয়েছেন মহানগর পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান।

গতকাল সরেজমিনে মোজাম্মেল হকের বাড়িটি ঘুরে দেখেন এই প্রতিবেদক। এ সময় বাড়ির সামনের সড়কের পূর্বদিকে রাস্তার শেষ মাথায় লোকজনের জটলা দেখা যায়। সেখানে কয়েকজন জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মাইকে ডাকাত পড়ার ঘোষণা শোনার পর সবাই যার যার ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে ছিলেন। তাঁরা কেউ ঘটনার সময় বাইরে আসেননি। শিক্ষার্থীদের ওপরে কারা হামলা করেছে, এ বিষয়ে কেউ কিছু বলতে পারেননি।

সেখানের একজন বলেন, এসব আমাদেরও প্রশ্ন।

এখানেই কথা হয় আব্দুস সামাদ সঙ্গে। তাঁর এক পায়ে সমস্যা থাকায় লাঠিভর দিয়ে চলেন। বলেন, ‘এ সবকিছু মন্ত্রীর আত্মীয়স্বজনেরা করেছেন। আমরা সত্যি কথা বললে, আমাদের বিপদ হবে।’

সেখানে কথা হয় মন্ত্রী মোজাম্মেলের ভাতিজা আবু তাহেরের সঙ্গে। তিনি মন্ত্রীর বাড়ির সামনের রাস্তার পূর্ব পাশের মাথায় একা দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘মন্ত্রীর বাড়িতে ছাত্রদের মারধরের অভিযোগে পুলিশ আমার দুই ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে।’

ঘটনার সময় কোথায় ছিলেন জানতে চাইলে আবু তাহের বলেন, ‘শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মাইকে যখন ডাকাত পড়েছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়, তখন ভয় ও আতঙ্কে আমি আমার ছেলেদের নিয়ে ঘরের ভেতরে দরজা বন্ধ করে বসে থাকি। মাইকে ঘোষণার কিছু সময় পরে অনেক হইচই, মারধর, কান্নাকাটি শব্দ শুনতে পাই। কিন্তু আমরা ঘর থেকে বের হইনি।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া দুটি ভিডিওর ক্লিপ দেখিয়ে, এখানে যারা কথা বলেছে তারা কারা চিনতে পারেন জানতে চাইলে আবু তাহের বলেন, কণ্ঠ শুনে মনে হচ্ছে, এরা ফারুক ও সোহাগ।

জানা যায়, সোহাগ তাজউদ্দীন হাসপাতালে মাস্টাররোলে চাকরি করেন। হাসপাতালে গিয়ে তাঁর বিষয়ে খোঁজ নিলে জানা যায়, তিনি মন্ত্রী মোজাম্মেলের ভাতিজা। বিগত সময়ে তিনি মন্ত্রীর পরিচয় দিয়ে হাসপাতালে অনেক দাপট নিয়ে চলতেন।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ঘটনার সময়ের আরেকটি ভিডিওতে শিক্ষার্থীদের মারধর করার সময় ছাত্রদেরকে উদ্দেশ্যে বলতে শোনা যায়, ‘মন্ত্রী মোজাম্মেল আমাদের অহংকার, আমাদের রত্ন।’ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই কণ্ঠস্বর ফারুকের। তিনি হায়দরাবাদ এলাকার হাবিবুরের ছেলে।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) তাহেরুল হক চৌহান বলেন, এ ঘটনায় কিছু এজাহারভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত