Ajker Patrika

‘বর্তমানে স্কুলের ভেতরে শাসন করলে বাইরে ভয় হয়’

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ফরিদপুরের সালথা উপজেলার কাগদী মুরুটিয়া আলহাজ্ব মো. আব্দুল মজিদ উচ্চ বিদ্যালয়ের পুন: মিলনী অনুষ্ঠান। গতকাল রোববার বিকালে। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফরিদপুরের সালথা উপজেলার কাগদী মুরুটিয়া আলহাজ্ব মো. আব্দুল মজিদ উচ্চ বিদ্যালয়ের পুন: মিলনী অনুষ্ঠান। গতকাল রোববার বিকালে। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘এক দশক আগের কথা। বেশ পুরোনোও নয়। তখনকার সময়ে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ছাত্ররা যখন তাঁর স্যারকে দেখতে পেত, সালাম দিয়ে মাথা নিচু করে চলে যেত। এমনকি সাইকেল চালিয়ে এলে দূর থেকে দেখেও নেমে হেঁটে এসে সালাম দিয়ে চলে যেত। এটাই শিক্ষাগুরুর মর্যাদা। এখনকার সময়ে সাইকেল থেকে নামা দূরের কথা, পারলে সাইকেল চালিয়ে যেন উঠিয়ে দিয়ে চলে যায়। সালামও মেলে না! বর্তমানে স্কুলের ক্লাসের ভেতরে কাউকে শাসন করলে বাইরে গেলে ভয় হয়। হয়তো ওই ছাত্র লাঞ্ছিত করতে দ্বিধাবোধ করবে না। কখনো আবার অভিভাবকেরও একই গম্ভীরতা নিয়ে অকথ্য সুরে অপমান করতেও বাধবে না!’

প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পেয়ে এসব আক্ষেপর কথা বলেন কাগদী মুরুটিয়া আলহাজ্ব মো. আব্দুল মজিদ উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিতের পণ্ডিত স্যার হিসেবে খ্যাত সঞ্জিৎ কুমার রায়।

গতকাল রোববার (৮ জুন) বিকালে কাগদী মুরুটিয়া আলহাজ্ব মো. আব্দুল মজিদ উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রাক্তন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে পুনর্মিলন অনুষ্ঠান হয়। স্কুলটি ফরিদপুরের সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের কাগদী গ্রামে অবস্থিত। ১৯৮৭ সালে একচালা টিনের ছাউনি থেকে শুরু হয়ে আজ স্কুলটি চারতলা ভবনবিশিষ্ট। এই বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করা শিক্ষার্থীদের অনেকে চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, সাংবাদিক থেকে শুরু করে সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হয়েছেন।

আরেক শিক্ষক মো. শাহজাহান হোসেন বলেন, আমাদেরই ব্যর্থতা। আমরাই ফিরিয়ে আনতে পারি শিক্ষাগুরুর মর্যাদা, হয়তো ভিন্নভাবে। নৈতিক অবক্ষয় নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।’

১৯৯৮ সাল থেকে ২০২৫ সালের এসএসসি ব্যাচের অনেকে অনুষ্ঠানে এসেছেন। এসেছেন তাঁদের আলোকবর্তিকা সেই শিক্ষকেরা। একে একে প্রিয় শিক্ষকদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। এরপর চলে স্মৃতিচারণা। ফাঁকে ছবি তোলা ও গল্পে মেতে ওঠেন অনেকে। যেন স্কুলজীবনের নির্মল সময়কে ফিরে পেয়েছেন। অজস্র স্মৃতিঘেরা স্কুলে ঘুরে বেড়ান তারা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক মাহাবুব আলী মিঞা। ১৯৯২ সাল থেকে শুরু করে ২০০৭ সাল পর্যন্ত স্কুলটিতে কর্মরত ছিলেন। এই সময়কালে তাঁর শাসন, কঠোরতা ও উদারতা নিয়েও স্মৃতিচারণা করেন অনেকে। মাহাবুব আলী মিঞা তাঁর বক্তব্যে আবেগাপ্লুত হয়ে যান। তিনি জানান, শত ব্যস্ততার মাঝেও ছুটে এসেছেন। তাঁর বক্তব্যে এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানান। গ্রামে গ্রামে বিভেদ মীমাংসায় কাজ করার কথাও জানান।

বক্তব্য রাখেন সাবেক সহকারী শিক্ষক (গণিত) মিসকাদ হোসেন। সাবেক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, অনেকে আজ সফল হয়েছ, কিন্তু তোমার পাশের বন্ধুটার কথা ভুলে যেও না। সে যেন হতাশায় না ভোগে। তার গায়ে একটু হাত রাখলে সেও হালছাড়া হবে না, তাকে আশ্বস্ত করো। আমি আজও তোমাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখি, তোমরা মানুষের মতো মানুষ হলে আমরা সফল হব।

এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক শিক্ষক প্রবীণ খন্দকার রোকনুজ্জামান ও সমীর কুমার কর এবং বর্তমান সহকারী শিক্ষক তপন কুমার। অনুষ্ঠান শেষে সব শিক্ষকের মধ্যে উপহারসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত