Ajker Patrika

ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে ৮ মাস ধরে একঘরে পরিবার, জানাজাতেও আসেনি কেউ

মঞ্জুর রহমান, মানিকগঞ্জ
আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০১: ২৯
ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে ৮ মাস ধরে একঘরে পরিবার, জানাজাতেও আসেনি কেউ

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার নালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিরোধের জেরে কুন্দরিয়া গ্রামে একটি পরিবারকে একঘরে করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। প্রায় আট মাস ধরে ভুক্তভোগী আহসান উদ্দিনের পরিবারকে একঘরে করে রাখায় তাঁরা মসজিদে নামাজ পড়তে পারছেন না। এমনকি ওই পরিবারের কেউ মারা গেলে সামাজিক কবরস্থানে দাফন করাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। 

সর্বশেষ আজ মঙ্গলবার সকালে ওই বাড়ি থেকে বের হওয়ার একমাত্র রাস্তাটি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। 

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কদ্দুস মধু এবং তাঁর অনুসারীদের অভিযোগ, ওই পরিবারের সদস্যরা সমাজের কাউকে সম্মান করে কথা না বলায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

এদিকে দীর্ঘ বছর ধরে যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটি বাঁশের বেড়া দিয়ে আটকে দেওয়ায় আহসান উদ্দিনসহ এলাকার বেশ কিছু পরিবার ওই রাস্তাটি ব্যবহার করতে পারছে না। কি কারণে হঠাৎ করে দীর্ঘ বছরের চলাচলের রাস্তাটি আটকে দেওয়া হলো সেটাও বলতে পারছেন না এলাকার অনেক মানুষ। 

আজ মঙ্গলবার সরেজমিনে জানা যায়, ঘিওর উপজেলার নালী ইউনিয়নের কুন্দরিয়া গ্রামের বাসিন্দা আহসান উদ্দিনের সঙ্গে তাঁর প্রতিবেশি চাচা শফিউদ্দিনের সঙ্গে বাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে এলাকায় বেশ কয়েকবার সালিস দরবার হয়। কিন্তু বিষয়টি সমাধান না হওয়ায় গত আট মাস আগে চেয়ারম্যান এবং তার অনুসারীদের নির্দেশে আহসান উদ্দিনের পরিবারকে এক ঘরে করে রাখার সিদ্ধান্ত হয়। 

ভুক্তভোগী আহসান উদ্দিন জানান, তাঁর বাড়ির পশ্চিম পাশে প্রতিবেশী চাচা শফিউদ্দিনের বাড়ি, সামনে চাচাতো ভাই তাঁরা মিয়ার বাড়ি ও বামপাশে প্রতিবেশী আব্দুর রাজ্জাকের বাড়ি রয়েছে। আহসান উদ্দিনের বাড়ি ও শফিউদ্দিনের বাড়ির সামনে দিয়ে গ্রামের মানুষের চলাচলের জন্য একটি রাস্তা রয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে আজ মঙ্গলবার সেই রাস্তাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। 

২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে তাঁর ছোট ছেলে শাকিল পরিবারের সদস্যদের না জানিয়ে একটি মেয়েকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। এরপর সমাজের লোকজনদের দাওয়াত দিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান করা হয়। কিন্তু বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্ব ও টাকা-পয়সা চেয়ারম্যানের অনুসারীদের না দেওয়ায় তাঁরা দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করেন। পরে এ নিয়ে সালিস ডাকা হলে আহসান উদ্দিন সালিসে গ্রামের মানুষের কাছে ক্ষমা চান। 

এরপর এলাকায় আহসান উদ্দিনের একটি গাছ কাটা নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস মধুর সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ওই দ্বন্দ্বে ২০২৩ সালে ১৯ এপ্রিল রাতে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস মধু মিয়া আহসান উদ্দিনকে ছাড়াই নিজের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে আরেকটি সালিস ডাকেন। ওই সালিসে আহসান উদ্দিনের বিরুদ্ধে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেন। সেসব সিদ্ধান্ত আহসান উদ্দিনকে অবগত করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার শংকরকে নির্দেশ দেন। 

পরদিন ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার শংকর চেয়ারম্যানের নির্দেশ অনুযায়ী আহসান উদ্দিনকে বলেন, ‘আজ থেকে আপনারা সমাজের মসজিদে নামাজ পড়তে যাবেন না, ঈদের নামাজে অংশ নিতে পারবেন না, পরিবারে কারও মৃত্যু হলে গ্রামের লোকজন জানাজায় অংশ নেবেন না এবং সমাজের কবরস্থানে আহসানের পরিবারের কাউকে দাফন করা যাবে না।’ 

ভুক্তভোগী আহসান উদ্দিনের ছেলে সাকিব মিয়া বলেন, ‘চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুসের নির্দেশে সমাজে আমাদের পরিবারকে একঘরে করে রেখেছে। গত বছর ২২ জানুয়ারি আমার সদ্যভূমিষ্ঠ কন্যা মারা যায়। নবজাতক মারা যাওয়ায় সমাজের মসজিদের ইমাম চাকরি হারানোর ভয়ে সন্তানের জানাজা পড়াতে আসেননি, এলাকার মানুষ জানাজায় আসেননি, সমাজের কবরস্থানে দাফন করতে দেয়নি। পরে আমার সন্তানের জানাজা আমি নিজে পড়িয়ে বাড়িতে সমাহিত করেছি।’ 

আহসান উদ্দিনের বড় ছেলে রাকিব হোসেন বলেন, ‘আমাদের কোনো দোষ না থাকার পরও চেয়ারম্যান আমাদের একঘরে করে রেখেছেন। এরপরও আমরা কোনো প্রতিবাদ করিনি। কাউকে জানাইনি। কিন্তু আজ মঙ্গলবার চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে আমাদের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমান যুগে এমন আচরণ সহ্য করা যায় না। আমরা আমাদের ওপর এমন অত্যাচারের বিচার চাই।’ 

আহসান উদ্দিনের প্রতিবেশী আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী আঞ্জু আরা বেগম বলেন, তিনি বিয়ের পর থেকে ওই রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করছেন। কিন্তু আজ মঙ্গলবার ওই রাস্তা বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন অন্যের বাড়ির ওপর দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। 

প্রতিবেশী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সমাজের সিদ্ধান্তে ওই বেড়া নাকি দেওয়া হয়েছে। বেড়া দেওয়াতে তাঁরও সমস্যা হচ্ছে; কিন্তু সমাজের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। 

প্রতিবেশী শফিউদ্দিনের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, তাঁদের সঙ্গে ভুক্তভোগী আহসান উদ্দিনের জমি নিয়ে বিরোধ থাকলেও কোনো ঝগড়া নেই। চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তে অনুযায়ী ওই বেড়া দেওয়া হয়েছে। 

অভিযোগের বিষয়ে নালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস মধু মিয়া বলেন, ‘ওই পরিবারের সদস্যরা গ্রামের কাউকে সম্মান করে না। গ্রামবাসীর সিদ্ধান্তের কারণে ওই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সমাজের ৯০ ঘরের কেউ কথা বলে না। আহসানের পরিবারকে একঘরে করে রাখা হয়েছে; এটা সঠিক নয়। তাঁরা ইচ্ছে করেই মসজিদে যান না। ওই পরিবারে কারও মৃত্যুর খবর আমার জানা নেই।’ 

আব্দুল কুদ্দুস মধু আরও বলেন, ‘আহসান উদ্দিন গ্রামবাসীর সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রতিবেশী শফিউদ্দিনের বাড়ির সীমানার বাইরে এসে টিনের বেড়া দিয়েছেন। তাই সমাজের সিদ্ধান্তে শফিউদ্দিন নিজের জায়গায় বাঁশের বেড়া দিয়েছেন। তবে আহসান সমাজের কাছে আবেদন করলে, যদি সমাজ মনে করে; তাহলে বাঁশের বেড়া উঠিয়ে দেওয়া হবে।’ 

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ইন্তাজ উদ্দিন বলেন, ‘বর্তমান যুগে এক ঘরে করে রাখার কোনো সুযোগ নেই। এই ধরনের ঘটনা সত্যি খুব ন্যক্কারজনক। আমাদের প্রশাসনের উচিত দ্রুত ভুক্তভোগীকে আইনি সাহায্য দেওয়া এবং এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িতদের আইনের আওতায় আনা।’ 

ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই ধরনের কোনো অভিযোগ আমি পাইনি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি সম্মিলিত নারী প্রয়াসের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘সম্মিলিত নারী প্রয়াস’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘সম্মিলিত নারী প্রয়াস’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের পাশাপাশি ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সব দলের জন্য সমান প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবেশ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) তৈরির দাবি জানিয়েছেন সম্মিলিত নারী প্রয়াস সংগঠনের সভানেত্রী এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামীমা তাসনিম।

আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ‘নতুন বাংলাদেশ, চাই সুষ্ঠু নির্বাচন, চাই যোগ্য নেতৃত্ব’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকের আয়োজন করে সম্মিলিত নারী প্রয়াস।

সরকারের কাছে দাবি তুলে শামীমা তাসনিম বলেন, ‘সব দলের রাজনৈতিক সুযোগ রেখে সমান প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেটাকে আমরা বলছি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। সঙ্গে সঙ্গে ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে হবে এবং সেটি ভয়ভীতি যেন না দেখানো হয়। মানে ভোট দিতে যে আমি যাব, যেন সুস্থ অবস্থায় ফেরত আসতে পারি।’

অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ নির্বাচনের কথা বলতে গিয়ে ড. শামীমা তাসনিম বলেন, বাংলাদেশে অতীতে যে দলই ক্ষমতায় এসেছে, তারা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো ব্যবহার করেছে। বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে আমলা নিয়োগ এবং পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় আনুগত্যকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। অতীতে ছাত্রলীগের কর্মীদের নিয়োগের বিষয়টি উল্লেখ করেন তিনি।

কথায় ও কাজে সৎ এবং জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন, যিনি দুর্নীতি করবেন না এবং দুর্নীতির প্রশ্রয় দেবেন না, যিনি বাংলাদেশকে একমাত্র স্থায়ী ঠিকানা মনে করবেন এবং বিদেশে কোনো ‘সেকেন্ড হোম’ রাখবেন না, আধিপত্যবিরোধী হবেন—এমন নেতৃত্ব আনার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

সম্মিলিত নারী প্রয়াস সংগঠনের সহকারী সেক্রেটারি ইঞ্জিনিয়ার নিয়ামা ইসলামের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সংগঠনটির সেক্রেটারি ড. ফেরদৌস আরা খানম, সহকারী সম্পাদক মাহসিনা মমতাজ মারিয়া, লেকচারার ড. জেবুন্নেসা, ড. মেহের আফরোজ লুৎফা, জান্নাতুন নাইম প্রমি প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শিক্ষক নেটওয়ার্ক বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি: রাকসু জিএস আম্মার

রাবি প্রতিনিধি  
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৩০
রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার। গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) শিক্ষক নেটওয়ার্কের ‘ক্যাম্পাসে ছাত্র প্রতিনিধিদের এখতিয়ারবহির্ভূত তৎপরতা বন্ধ হোক’ শিরোনামে দেওয়া বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় এই আহ্বান জানান তিনি।

শিক্ষক নেটওয়ার্কের ফেসবুক পেজে দেওয়া ওই বিবৃতির মন্তব্যে আম্মার লেখেন, ‘শিক্ষক নেটওয়ার্ক বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি’।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘আমি কমেন্ট করেছি, ডিলিট করি নাই। তাঁরা (শিক্ষক নেটওয়ার্ক) আমার কাজকে যদি অপতৎপরতা হিসেবে দেখের, তাহলে আমিও তাঁদের বিবৃতি সন্দেহের চোখে দেখি। তাঁরা আমাকে একটি আহ্বান জানিয়েছেন, আমিও তাঁদের আহ্বান জানিয়েছি। তাঁরা এটাকে স্বাধীনতা হিসেবে দেখলে, আমিও আমার স্বাধীনতা প্রকাশ করছি।’

শিক্ষক নেটওয়ার্কের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মারের নেতৃত্বে নানা ধরনের মবপ্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। ডিনদের পদত্যাগ করানো, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের হয়রানি তৎপরতা চলমান আছে। রাকসুর জিএস প্রশাসনের কাছে জবাবদিহি না চেয়ে বরং ছয়জন ডিনের পদত্যাগ দাবি করেন। কেবল তা-ই নয়, নিজেই যেন “প্রশাসন” হয়ে অত্যন্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভাষায় ডিনদের বিরুদ্ধে হুমকি দেন, এমনকি এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে নিজে পদত্যাগপত্র লিখে এনে বিভিন্ন বিভাগে গিয়ে ডিনদের খুঁজতে থাকেন, সম্ভবত লাঞ্ছিত করার উদ্দেশ্যে। মোট ১২ জন ডিনের প্রত্যেকেই গত আওয়ামী শাসনামলে নির্বাচিত হলেও, বাকি ছয়জন হয়তো রাকসু জিএসের বিবেচনায় “রাজনৈতিক বিবেচনায় উত্তীর্ণ”, ফলে তাঁদের পদত্যাগের দাবি ওঠেনি, তাঁদের নিয়ে অবমাননাকর কিছু বলাও হয়নি। এই উদ্ভূত অসম্মানজনক পরিস্থিতিতে “প্রগতিশীল শিক্ষক” হিসেবে পরিচিত ছয়জন ডিন দায়িত্ব পালতে অপারগতা প্রকাশ করেন।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে রাকসুর জিএস ভব্যতার সব সীমা ছাড়িয়ে বারবার ঘোষণা করতে থাকেন, লীগপন্থী শিক্ষকেরা ক্যাম্পাসে ঢুকলে কলার ধরে টেনে এনে প্রশাসন ভবনের সামনে বেঁধে রাখা হবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যা করছেন, তা রাকসুর এখতিয়ারবহির্ভূত এবং তাঁদের আচরণও আগ্রাসী ও সন্ত্রাসীদের মতো। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমরা এর জবাবদিহি প্রত্যাশা করি। কেননা, রাকসুর নেতৃবৃন্দের এ রকম আচরণ কেবল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করেনি; এটা সরাসরি বিদ্যায়তনিক স্বাধীনতার ওপরে হামলা। এর “স্পাইরাল ইফেক্ট” পড়েছে সারা দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।’

সার্বিক বিষয়ে রাবির বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও শিক্ষক নেটওয়ার্কের সদস্য সৌভিক রেজা বলেন, ‘শিক্ষক নেটওয়ার্ক ২০১৪ সালে যাত্রা শুরু করে। যদি ভিন্ন মতাদর্শের হওয়ার কারণে চাকরি চলে যেত বা পদচ্যুত করানো হতো তাহলে তো শিক্ষক নেটওয়ার্কের অনেকেরই আওয়ামী আমলে চাকরি চলে যেত। ৭৩-এর অধ্যাদেশ আমাদেরকে একটা রক্ষাকবজ দিয়েছে, যে কারণে আমরা শিক্ষকেরা সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার পরও আমাদের চাকরি চলে যায়নি।’

সৌভিক রেজা আরও বলেন, ‘ভিন্ন মতাদর্শের শিক্ষক কর্মকর্তাদের গাছে বেঁধে রাখা, চাকরিচ্যুত কিংবা জোরপূর্বক পদত্যাগ করানো একজন শিক্ষার্থীর এখতিয়ারের বাইরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও এ ক্ষমতা রাখেন না। তবে শিক্ষকেরা কিন্তু আইনের ঊর্ধ্বে নন। আইনানুযায়ী তাঁদের শাস্তি দেওয়া যেতে পারে, তবে মব সৃষ্টি করে নয়। কেউ যদি সরাসরি হামলা বা দালালি করে থাকেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু একজন নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধি এভাবে কাউকে পদত্যাগে বাধ্য করতে পারেন না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাতক্ষীরায় জেলা আ.লীগ নেতার মনোনয়নপত্র জমা, সমর্থক আটক

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
এস এম মুজিবর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
এস এম মুজিবর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

সাতক্ষীরার চারটি সংসদীয় আসনে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আ.লীগ নেতাসহ ২৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। আজ সোমবার জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিজ নিজ মনোনয়নপত্র জমা দেন তাঁরা।

সাতক্ষীরা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

সাতক্ষীরা-১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির হাবিবুল ইসলাম হাবিব, জামায়াতের মো. ইজ্জতুল্লাহ, জাতীয় পার্টির জিয়াউর রহমান ও ইসলামী আন্দোলনের শেখ মো. রেজাউল করিম ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. ইয়ারুল ইসলাম।

আর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক এস এম মুজিবর রহমান ওরফে সরদার মুজিব স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। পরে তাঁর পক্ষে মনোনয়ন জমা দেওয়ার অভিযোগে মাগফুর রহমান নামের এক সমর্থককে আটক করেছে পুলিশ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীন জানান, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষে মনোনয়ন জমা দেওয়ার অভিযোগে মাগফুর রহমান নামের এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে আটক করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা-২ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জামায়াতের মুহাম্মদ আব্দুল খালেক, বিএনপির মো. আব্দুর রউফ, জাতীয় পার্টির মো. আশরাফুজ্জামান ও মাতলুব হোসেন।

এ ছাড়া এলডিপির শফিকুল ইসলাম শাহেদ, ইসলামী আন্দোলনের মুফতি রবিউল ইসলাম, বাংলাদেশ জাসদের মো. ইদ্রিস আলী ও এবি পার্টির জিএম সালাউদ্দীন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

সাতক্ষীরা-৩ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জামায়াতের মুহা. রবিউল ইসলাম, বিএনপির কাজী আলাউদ্দীন ও জাতীয় পার্টির মো. আলিপ হোসেন।

এ ছাড়া মাইনরিটি জনতা পার্টির রুবেল হোসেন, ইসলামী আন্দোলনের ওয়েজ কুরনী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এম এ আসফউদ্দৌলা খান, আসলাম আল মেহেদী ও ডা. শহিদুল আলম (বিএনপির বিদ্রোহী) মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

সাতক্ষীরা-৪ আসনে জামায়াতের গাজী নজরুল ইসলাম, বিএনপির মো. মনিরুজ্জামান ও জাতীয় পার্টির হুসেইন মো. মায়াজ, গণঅধিকার পরিষদের এইচ এম গোলাম রেজা, ইসলামী আন্দোলনের মোস্তফা আল মামুন ও আব্দুল ওয়াহেদ (বিএনপির বিদ্রোহী) প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভোলায় বিজেপি কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর

ভোলা প্রতিনিধি
ভোলায় বিজেপি কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুরের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভোলায় বিজেপি কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুরের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে সোমবার বিকেলে ভোলায় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছুড়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।

বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শহরের নতুন বাজার এলাকায় জেলা বিজেপি অফিসের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে ছাত্রদলের নেতা সিফাত হত্যার প্রতিবাদ মিছিলে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আল আমিন অভিযোগ করেন, মিছিলটি নতুন বাজার এলাকায় বিজেপি অফিসের সামনে পৌঁছালে সেখান থেকে মিছিল লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হলে বিক্ষুব্ধ জনতা বিজেপি অফিসে হামলা চালায়।

বিজেপির অঙ্গ সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক পার্টির জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সামছুল আলম অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাঁদের দলীয় অফিস বন্ধ ছিল। বিজেপির জনসমর্থনে ঈর্ষান্বিত হয়ে বিএনপি পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালিয়েছে।

ভোলা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে বিজেপি অফিসে হামলা কিংবা কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে কি না তা আমাদের জানা নেই।’ তিনি আরও জানান, কে বা কারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, সেটা এখনো পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি।

ভোলার জেলা প্রশাসক ডা. শামীম রহমান রাতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন তৎপর রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত