Ajker Patrika

চবির ১০ ছাত্রী বহিষ্কার: প্রশাসনকে চাপ দিতে ছাত্রনেতাদের বার্তা পাঠান সহকারী প্রক্টর

  • এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সহকারী প্রক্টরের ইন্ধনের তথ্য মিলেছে।
  • চাপ দিয়ে তদন্তে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ।
  • আমাদের বিরুদ্ধে অপবাদ হচ্ছে, দাবি দুই প্রক্টরের।
সাখাওয়াত ফাহাদ, ঢাকা 
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২: ২৩
চবির ১০ ছাত্রী বহিষ্কার: প্রশাসনকে চাপ দিতে ছাত্রনেতাদের বার্তা পাঠান সহকারী প্রক্টর

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে একটি ছাত্রী হলের সামনে ভাঙচুরকে কেন্দ্র করে ১০ জন নারী শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সহকারী প্রক্টরের ইন্ধনের তথ্য মিলেছে। অভিযোগ উঠেছে, সহকারী প্রক্টর নূরুল হামিদ কানন ও অধ্যাপক ড. মো. কোরবান আলী নারী শিক্ষার্থীদের শাস্তির দাবিতে প্রশাসনকে ‘চাপ দিতে’ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাদের কাছে বার্তা পাঠিয়েছিলেন।

কয়েকটি ছাত্রসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এই অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। তাঁরা বলেছেন, ১০ নারী শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল ও অন্যান্য প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, ছাত্রী হলের সামনে গভীর রাতে মব তৈরি হলে বিভিন্ন প্রগতিশীল ও নারী অধিকারের সঙ্গে যুক্ত ছাত্রীরাই প্রথমে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানান। জুলাই অভ্যুত্থানেও তাঁদের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। অভ্যুত্থানের পরও তাঁরা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অধিকারের আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতিতে জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের আধিপত্য বিস্তার এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতি নারী শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার ত্বরান্বিত করতে নেপথ্যে কাজ করেছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের এক নেতা আজকের পত্রিকাকে অভিযোগ করে বলেন, ‘তদন্ত কমিটি গঠনের পরই নারী শিক্ষার্থীদের বিচার চেয়ে প্রশাসনকে চাপ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের প্রায় ২০ জনের বেশি নেতা-কর্মীর কাছে বার্তা পাঠান দুই সহকারী প্রক্টর।’ তবে বার্তাপ্রাপ্ত অধিকাংশই এতে সাড়া দেননি বলে জানান তিনি।

৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে সহকারী প্রক্টরদের ‘প্রেসক্রিপশনে’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন শিক্ষার্থী শেখ হাসিনা হলের ছাত্রলীগ নেত্রীদের সিট বাতিল ও তদন্ত সাপেক্ষে ছাত্রত্ব বাতিলের দাবিতে প্রক্টর অফিস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন। পরে তাঁরা নারী শিক্ষার্থী কর্তৃক ছাত্র-সাংবাদিক আহত হওয়া ও শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফকে অভিযোগপত্র দেন। অন্যদিকে সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ ও হেনস্তার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি।

কী ঘটেছিল ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে

বহিষ্কারের ঘটনায় ভুক্তভোগী, বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা আজকের পত্রিকাকে জানান, রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২-এ ভাঙচুরের উত্তেজনা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রী হলের সামনে স্থাপিত ‘নৌকা’সদৃশ বসার স্থান ভাঙতে রাত সাড়ে ১১টায় ছাত্রী হলের সামনে ‘মব’ তৈরি হয়। এতে নারী শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং হলের নিচে নেমে আসেন। এ সময় অনেকেই ‘ঘরের’ পোশাকে ছিলেন, তাই সাংবাদিকেরা ভিডিও চিত্র নিতে চাইলে তাঁরা নিষেধ করেন। একপর্যায়ে এ নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

বহিষ্কারের ঘটনায় ভুক্তভোগী এক নারী শিক্ষার্থী আজকের পত্রিকাকে বলেন, সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. কোরবান আলী ঘটনাস্থলে এসে ‘মবের’ পক্ষ নেন এবং নারী শিক্ষার্থীদের ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’সহ নানা অশালীন ভাষায় গালাগাল শুরু করেন। এতে এক শিক্ষার্থী ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁর গায়ে হাত তোলে। তাঁর ভাষা ব্যবহার ও আচরণে তিনি যে সহকারী প্রক্টর, তা অনেকেই বুঝতে পারেননি।

চাপ দিয়ে তদন্তে প্রভাব বিস্তার

৫ ফেব্রুয়ারি রাতের ঘটনা নিয়ে পরদিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে আয়োজিত এক সভায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, সব হলের প্রভোস্ট ও হাউস টিউটর, নিরাপত্তা কর্মকর্তা, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য এবং পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী ও একটি নিবন্ধিত ইসলামি রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, তদন্ত কমিটি গঠনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সহকারী প্রক্টর নূরুল হামিদ কানন তাঁদের দলীয় নেতা-কর্মীদের তদন্ত কমিটি ও প্রশাসনকে ‘চাপ দিতে’ তাঁদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান। অন্যদিকে ঘটনায় ‘দায়ী’ হিসেবে চিহ্নিত করা ছাত্রীদের ছবি পাঠিয়ে ছাত্রসংগঠনের নেতাদের প্রক্টর ও প্রশাসনিক কার্যালয় ঘেরাওয়ের কথা বলেন অধ্যাপক ড. মো. কোরবান আলী।

৬ ফেব্রুয়ারি সহকারী প্রক্টর নূরুল হামিদ কানন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের শীর্ষপর্যায়ের এক নেতাকে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান। সেই নেতা এবং সহকারী প্রক্টরের কথোপকথনে দেখা যায়, সহকারী প্রক্টর তদন্ত কমিটির প্রজ্ঞাপনটি পাঠিয়ে তাঁকে বলেন, ‘চাপ দাও, দাবি আদায় করো।’ এ ছাড়াও চিহ্নিত করা ছাত্রীদের ছবি পাঠিয়ে সহকারী প্রক্টর লেখেন, ‘এদের বিরুদ্ধে শাস্তি নিতে প্রশাসনকে চাপ দাও। প্রক্টর অফিস ঘেরাও করো। বৈষম্যবিরোধীদের পক্ষে।’ এ ছাড়াও প্রাথমিক শাস্তি হিসেবে হল থেকে যেন নারী ছাত্রীদের বের করে দেওয়া হয়, এ দাবি তোলার কথা বলেন সহকারী প্রক্টর নূরুল হামিদ কানন।

কয়েকটি ছাত্রসংগঠনের নেতারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে জানান, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৩ ফেব্রুয়ারি বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব রেসিডেন্স হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটি। এই কমিটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেও সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. কোরবান আলী ১২ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাদের নারী শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের দাবি জানাতে বলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিআরএফ ইয়ুথ ক্লাবের ব্যানারে মানববন্ধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সহকারী প্রক্টর নূরুল হামিদ কানন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ছাত্রসংগঠনের দায়িত্বে আছেন, তাঁদের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের প্রতিনিয়ত যোগাযোগ হয়। সে সময় যেহেতু ওই ঘটনা ঘটছিল, তাই সেটা নিয়েই তাঁদের সঙ্গে কথা হয়েছে, হয় নাই তা বলছি না।’ অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে কেউ এ ধরনের কথা বললে মনে করি আমাদের অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এ ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।’

অভিযোগের বিষয়ে আরেক সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. কোরবান আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এসব বিষয়ে তো আমি কিছু জানি না, আপনার কাছ থেকেই বিষয়টি জানলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার কয়েকজন ছাত্র আমাকে জিজ্ঞেস করছে, কোন মেয়েরা আপনাকে ইয়ে করেছে, তাদের ছবি পাঠান, আমি বিভিন্ন মাধ্যমে আসা ছবিগুলো তাদের পাঠিয়েছি। ঘেরাওয়ের কথা বলার কোনো প্রশ্নই আসে না।’ ছাত্রসংগঠনের নেতারা তবে মিথ্যা অভিযোগ করছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তা তো অবশ্যই। এগুলো করার কোনো দরকার আছে আমার?’ নারী শিক্ষার্থীদের ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে অশালীন ভাষায় গালাগালের বিষয়টি উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘আপনি ভিডিওতে যা শুনেছেন, তা ভুল শুনেছেন। আপনার শোনা ঠিক নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার স্বৈরাচারী আমলে সাংবাদিক দমন-পীড়নের পুনরাবৃত্তি

ফুল, প্রশংসা আর ডলারে ভাসছেন বন্ডাই বিচের ‘নায়ক’ আল-আহমেদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ফয়সালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ০৩
হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় গ্রেপ্তার যুবক। ছবি: আজকের পত্রিকা
হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় গ্রেপ্তার যুবক। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সন্দিগ্ধ কবিরকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন–র‍্যাব।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, গত সোমবার রাতে নারায়গঞ্জ থেকে কবিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ মঙ্গলবার তাকে পল্টন–থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হবে।

জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গত শুক্রবার রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে দুর্বৃত্তরা রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে গুলি করে।

ওসমান হাদি ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার জন্য প্রচার চালাচ্ছিলেন। মাথায় গুলিবিদ্ধ হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে গতকাল সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার স্বৈরাচারী আমলে সাংবাদিক দমন-পীড়নের পুনরাবৃত্তি

ফুল, প্রশংসা আর ডলারে ভাসছেন বন্ডাই বিচের ‘নায়ক’ আল-আহমেদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সুবর্ণচরে নদীভাঙন: ২ বছরে ভিটেমাটি হারা চার হাজার পরিবার

  • ভুক্তভোগীদের জন্য নেই সরকারি সুযোগ-সুবিধা ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ।
  • প্রশাসনের কাছে নির্ভরযোগ্য কোনো তালিকা নেই।
মুজাহিদুল ইসলাম সোহেল, সুবর্ণচর (নোয়াখালী) 
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৬
মেঘনা নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ভিটেমাটি। সম্প্রতি নোয়াখালীর সুবর্ণচরের বোয়ালখালী স্লুইসগেট এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
মেঘনা নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ভিটেমাটি। সম্প্রতি নোয়াখালীর সুবর্ণচরের বোয়ালখালী স্লুইসগেট এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

মেঘনা নদী থেকে জেগে ওঠা নতুন চর নোয়াখালীর সুবর্ণচরের আয়তন বাড়ালেও একই সঙ্গে ভয়াবহ ভাঙনে বিলীন হচ্ছে জনপদ। শুধু সুবর্ণচর নয়, উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীর সর্বত্রই চলছে নদীর এই ভাঙা-গড়ার খেলা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা ভূমির পরিমাণ ভাঙনের চেয়ে বেশি হলেও নতুন জেগে ওঠা চরগুলো এখনো বসতিস্থাপনের উপযোগী হয়ে ওঠেনি।

বাংলাদেশ সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস)-এর হিসাবে, গত ৭০ বছরে নোয়াখালীতে প্রায় ২০০ বর্গকিলোমিটার ভূমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে যুক্ত হয়েছে প্রায় এক হাজার বর্গকিলোমিটার ভূমি। তবে এই ভাঙা-গড়ার প্রক্রিয়ায় যারা সব হারায়, তাদের জন্য থাকে কেবল হাহাকার।

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, নদীভাঙনে নিঃস্ব মানুষের জন্য সরকারিভাবে কোনো আলাদা সুযোগ-সুবিধা নেই। নেই পুনর্বাসনের কার্যকর উদ্যোগ। এমনকি কত মানুষ ভিটেমাটি হারিয়েছে, তারও কোনো নির্ভরযোগ্য তালিকা তৈরি করা হয়নি।

জানা গেছে, মেঘনা নদীর তীব্র ভাঙনে সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ও চরক্লার্ক ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই বছরে এই দুই ইউনিয়নে অন্তত তিন হাজার পরিবার গৃহহীন হয়েছে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা আরও বিস্তৃত হওয়ায় মোট ভিটেমাটি হারানো পরিবারের সংখ্যা প্রায় চার হাজার।

স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, চরক্লার্ক ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ হেমায়েতপুরের একটি অংশ, চর বায়েজিদ মৌজা, চর খন্দকার, আলেমপুর, সৈয়দপুর, চর নোমান সমাজ ও চর মোজাম্মেল মৌজাসহ অন্তত ১০টি এলাকা ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গেছে কয়েক হাজার একর ফসলি জমি, চর উন্নয়ন ও বসতি স্থাপন প্রকল্পের (সিডিএসপি) ৭/৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এবং বন বিভাগের রোপণ করা নানা প্রজাতির গাছ।

এক বছর আগে চরক্লার্ক ইউনিয়নের চর খন্দকার এলাকায় সাবেক ২ নম্বর কাটাখালী স্লুইসগেট নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এতে জোয়ারের সময় পানি দ্রুত উত্তর দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে সোলেমান বাজারসহ আশপাশের এলাকাও নতুন করে ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে হাজারো পরিবার।

জানতে চাইলে চরক্লার্ক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল বাশার জানান, ভাঙনের বিষয়টি উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। উপদেষ্টা পর্যায়েও বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

সুবর্ণচরের সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সাধারণ সম্পাদক আবদুল বারী বাবলু বলেন, ভাঙা-গড়া প্রকৃতির নিয়ম হলেও নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তরা জেগে ওঠা চরে তাঁদের পুরোনো অবস্থান বা জীবন ফিরে পান না। নদীশাসন এবং জেগে ওঠা চরে বসতি স্থাপন নিয়ে রাষ্ট্রীয় নীতিমালা জরুরি। নদী ভাঙলে শুধু মানুষের ঘরবাড়ি নয়, জনপদের চিহ্নও মুছে যায়।

এ বিষয়ে সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আকিব ওসমান বলেন, মোহাম্মদপুর ও চরক্লার্ক ইউনিয়নের ভাঙনের বিষয়টি প্রশাসনের জানা আছে। তবে এখনো পর্যন্ত কত পরিবার গৃহহীন হয়েছে, তার কোনো তালিকা প্রস্তুত করা হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ভাঙন রোধ ও ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার স্বৈরাচারী আমলে সাংবাদিক দমন-পীড়নের পুনরাবৃত্তি

ফুল, প্রশংসা আর ডলারে ভাসছেন বন্ডাই বিচের ‘নায়ক’ আল-আহমেদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদি সিঙ্গাপুরে, হামলার নেপথ্যের ব্যক্তিরা অজানা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। গতকাল রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। ছবি: পিআইডি
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। গতকাল রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। ছবি: পিআইডি

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলার নেপথ্যের ব্যক্তিদের এবং উপকরণ সরবরাহকারীদের বিষয়ে এখনো কিছু জানতে পারেনি পুলিশ। হামলাকারী দুজন ঘটনার আগে-পরে যাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, তাঁদের কয়েকজনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে ডিবি ও র‍্যাব। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গতকাল সোমবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়েছে। এই হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে রাহুল ওরফে দাউদের (৩৭) স্ত্রীসহ তিনজনকে গতকাল ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

১২ ডিসেম্বর বেলা আড়াইটার দিকে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে ব্যাটারিচালিত রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে গুলি করেন মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তরা। প্রথমে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়; পরে সেখান থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। গতকাল নেওয়া হয় সিঙ্গাপুরে। এই ঘটনায় ১৪ ডিসেম্বর রাতে পল্টন থানায় করা মামলার তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ডিবির মতিঝিল বিভাগ।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো. শফিকুল ইসলাম গতকাল বলেন, এখন পর্যন্ত এই মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

ওসমান হাদিকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বেলা ১টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে। বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি সিঙ্গাপুরে পৌঁছায়। মাথায় গুলিবিদ্ধ হাদির শরীরের অন্য অঙ্গগুলো এখনো ‘নিয়ন্ত্রণযোগ্য’ বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়) অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা হামলায় অংশ নেওয়া দুজনের পরিচয় শনাক্ত করেছেন। তাঁরা হলেন–ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে রাহুল ওরফে দাউদ ও আলমগীর হোসেন। তবে মামলার এজাহারে আলমগীরের নাম নেই। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এই দুজনের এবং তাঁদের বহনকারী গাড়ির চালকদের তথ্য পেলেও হামলার নেপথ্যের ব্যক্তিদের সম্পর্কে এখনো জানা যায়নি। ফয়সাল ও আলমগীর ইতিমধ্যে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে গেছেন বলেও ডিবি নিশ্চিত হয়েছে।

হামলার আগের রাতে সাভারের একটি রিসোর্টে ছিলেন দুজন। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হামলার আগের দিন, অর্থাৎ ১১ ডিসেম্বর রাতে সাভারের গ্রিন জোন রিসোর্টের পৃথক কক্ষে ছিলেন ফয়সাল ও আলমগীর। রাত ২টার দিকে সেখানে ফয়সালের বান্ধবী ছোট বোনকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সকালে হাদির কিছু ভিডিও দেখার পর ঢাকায় আসেন তাঁরা। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে ফয়সালের বান্ধবী জানান, হাদির ভিডিও দেখার সময় গালিগালাজ করেন ফয়সাল। হাদিকে কিছু একটা করবেন, তা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন।

দুবার মোটরসাইকেলের নম্বরপ্লেট পরিবর্তন: ১২ ডিসেম্বর সকালে সাভার থেকে ঢাকায় এসে ফয়সাল ও আলমগীর আগারগাঁওয়ে ফয়সালের বোনের বাসায় যান। সেখানে ফয়সালের বাবা-মাও থাকেন। ওই বাসার গ্যারেজের সিসি ক্যামেরার ফুটেজের সূত্র ধরে ডিবি বলছে, বাসা থেকে বের হওয়ার আগে ফয়সালের বাবা একটি নম্বরপ্লেট নিয়ে গ্যারেজে এলে তাঁরা নম্বরপ্লেট পরিবর্তন করে বের হন। গুলি করার পর পল্টনের বক্স কালভার্ট রোড থেকে মোটরসাইকেলে করে তাঁরা আবার আগারগাঁওয়ে ফয়সালের বোনের বাসায় যান। আবার মোটরসাইকেলের নম্বরপ্লেট পরিবর্তন করেন। একটি নম্বরপ্লেট তাঁরা ম্যানহোলে ফেলে দেন। বাসায় কিছুক্ষণ থেকে ফয়সাল ও আলমগীর দুটি কালো ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে বাসার নিরাপত্তাকর্মীর ঠিক করা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে আমিন বাজারের ঢালে নামেন। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে ওই অটোরিকশাচালক জানান, আমিনবাজারে ওই দুজন এক তরুণীর সঙ্গে কথা বলেন। তিনি গাড়ি নিয়ে আগে থেকে সেখানে অপেক্ষা করছিলেন বলে ডিবি নিশ্চিত হয়েছে। সেখানে তাঁরা মোবাইল ও সিম ফেলে দেন। এরপর কালামপুর, টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা হয়ে ময়মনসিংহ যান। ময়মনসিংহের সেতুর পাড়ে গাড়ি বদলে আরেকটি প্রাইভেট কারে উঠে হালুয়াঘাটের ধারাবাজারের একটি পেট্রলপাম্পে গিয়ে থামেন। সেখানে তিন যুবক ওই দুজনকে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে হালুয়াঘাটের ভুটিয়াপাড়ায় নিয়ে যান। রাত আড়াইটার দিকে ভুটিয়াপাড়া সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দুজনে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরায় যান। হামলা ও ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পুরো বিষয়টি ছিল নিখুঁত পরিকল্পনার অংশ। ময়মনসিংহে নেওয়া গাড়িটি ছিল ভাড়া করা।

৪ ডিসেম্বর থেকে হামলাকারী ফয়সাল, আলমগীর ও জাকির প্রার্থী ওসমান হাদির গণসংযোগে নিয়মিত অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইনকিলাব মঞ্চের নেতা-কর্মী ও পুলিশ। এর দেড় মাস আগে তাঁরা জুলাই যোদ্ধা পরিচয়ে হাদির দলে ভিড়েছিলেন।

ফয়সালের স্ত্রীসহ তিনজন রিমান্ডে: প্রধান আসামি ফয়সালের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ও ফয়সালের এক বান্ধবীকে গতকাল আদালতে হাজির করে তদন্ত কর্মকর্তা প্রত্যেকের সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানান। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলাম তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

হাদির মোবাইলের হদিস নেই: হামলার পর ওসমান হাদির ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। ডিবি বলেছে, তাঁর মোবাইলে যেহেতু বারবার হত্যার হুমকি আসছিল, তাই মোবাইলটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে ঘটনার পর মোবাইলটি পাওয়া যায়নি। ওই মোবাইল নম্বরটি নিয়ে কাজ করছে পুলিশ।

সীমান্ত পারাপারে জড়িত আরও দুজন আটক: হাদির ওপর হামলাকারীদের সীমান্ত পার করানোর ঘটনায় শেরপুরের নালিতাবাড়ী সীমান্ত এলাকা থেকে আরও দুজনকে আটক করেছে বিজিবি। ময়মনসিংহের ৩৯ বিজিবির সেক্টর সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বিষয়টি জানান। আটক দুজন হলেন, শেরপুরের নালিতাবাড়ী সীমান্ত থেকে অবৈধভাবে মানুষ পারাপারে সহায়তাকারী ফিলিপের মামাশ্বশুর বেঞ্জামিন চিড়ান এবং ফিলিপের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সীশল। এর আগে রোববার ডিবি পুলিশ ওই এলাকা থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করে। সিবিয়ন দিও ও সঞ্চয় চিসিম নামের ওই দুজন পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার স্বৈরাচারী আমলে সাংবাদিক দমন-পীড়নের পুনরাবৃত্তি

ফুল, প্রশংসা আর ডলারে ভাসছেন বন্ডাই বিচের ‘নায়ক’ আল-আহমেদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি: পাহাড়-টিলা সাবাড়, ভরাট হচ্ছে পুকুর

  • সন্ধ্যা নামলেই মাটি কাটা শুরু হয়; চলে ভোর পর্যন্ত।
  • ধ্বংস হচ্ছে পাহাড়-টিলা, এমনকি কৃষিজমির উর্বর মাটিও।
ফটিকছড়ি সংবাদদাতা
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৭
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় টিলা কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় টিলা কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় পরিবেশ ধ্বংসের হিড়িক পড়েছে। চক্রের থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছে না বনাঞ্চলের পাহাড়-টিলা, এমনকি কৃষিজমির উর্বর মাটিও। স্থানীয় প্রশাসনের অভিযান এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলার পরও কোনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না মাটিখেকোদের দৌরাত্ম্য।

জানা গেছে, উপজেলার পাইন্দং, ভূজপুর, নারায়ণহাট, দাঁতমারা, বাগানবাজার, সুয়াবিল, হারুয়ালছড়ি ও কাঞ্চননগর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় এসব মাটি কাটার ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের নেতৃত্বে চলছে এই কর্মকাণ্ড।

স্থানীয়রা বলেন, কৃষিজমি থেকে মাটি কাটা রোধে অভিযান চালাচ্ছে প্রশাসন। তবে কৌশল বদলে দিনের বেলার পরিবর্তে রাতে কাটা হচ্ছে মাটি। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত চলে মাটি কাটা।

জানা গেছে, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে উপজেলার ফসলি জমি ও টিলা থেকে মাটি কাটছে অর্ধশতাধিক চক্র। এক্সকাভেটর দিয়ে ফসলি জমির টপসয়েল কেটে ডাম্পট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে করে ইটভাটা, পুকুর, ডোবা ও নতুন বাড়ির জায়গায় মাটি ভরাট করছে তাঁরা।

সরেজমিনে গত শনি ও রোববার দুই দিন উপজেলার পাইন্দং, ভূজপুর, বাগানবাজার ইউনিয়নের একাধিক এলাকা ঘুরে দেখা মেলে পরিবেশ ধ্বংসের এমন ভয়াবহতার চিত্র।

অনুসন্ধানে জানা যায়, পাইন্দংয়ের ফকিরাচাঁন আমতল এলাকায় রাতের আঁধারে কয়েকটি এক্সকাভেটর দিয়ে কাটা হচ্ছে কৃষিজমির মাটি। ভূজপুর ইউনিয়নের আন্ধারমানিক গলাচিপা এলাকায় স্থানীয় মো. রাশেদের নেতৃত্বে চার-পাঁচজনের একটি চক্র রাতের আঁধারে কেটে নিয়েছে বিশালাকার টিলার মাটি। এসব মাটি ডাম্পট্রাকে করে যাচ্ছে কাজীরহাট বাজারের একাধিক কৃষিজমি ভরাট কাজে। একই কায়দায় হারুয়ালছড়ি ইউনিয়নের আপন ব্রিকস ফিল্ডসংলগ্ন বাংলাবাজার সরকার বাড়ি এলাকায় কাটা হয়েছে টিলা। ভূজপুর ইউনিয়নের আছিয়া চা-বাগানসংলগ্ন মা আমেনা লেয়ার ফার্মের পাশে মো. আরিফ নামে এক ব্যক্তির মুরগির ফার্ম তৈরির জন্য কাটা হয়েছে বিশালাকার টিলা। একই দৃশ্য বাগানবাজার ইউনিয়নের লালমাই এলাকায়। যেখানে ভবন নির্মাণের জন্য দিনদুপুরে কাটা হচ্ছে উঁচু পাহাড়-টিলা। লালমাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে স্থানীয় মনির ও মফিজের নেতৃত্বে পেলোডার দিয়ে কেটে সাবাড় করা হয়েছে ব্যবসায়ী মো. হাসেমের টিলা।

মাটি কাটার বিষয়টি স্বীকার করেন হাসেমের ছেলে মাহবুব। তিনি বলেন, ‘আমরা যাদের দিয়ে মাটি কাটিয়েছি তারা প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছে বলে আমাদের জানিয়েছে।’ তবে কাদের দিয়ে মাটি কাটিয়েছেন তাদের নাম বলেননি মাহবুব। একই ইউনিয়নের বাগমারা এলাকায় মাহবুবুল হকের বসত টিলা, গার্ডের দোকানে নবী মাস্টারের টিলা, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান একরামুল হক বাবুলের ভাই লায়েসের নেতৃত্বে কাটা হচ্ছে কৃষিজমি। তবে মাটি কাটার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মো. লায়েস।

লালমাই এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ‘যখন যে দল ক্ষমতায় আসে, সে দলের লোকেরাই পাহাড়-টিলা কর্তন করে। প্রভাবশালী হওয়ার ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলে না, প্রতিবাদ করে না।’

চট্টগ্রাম জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের রিসার্স অফিসার মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, কর্তনকৃত এসব স্থান পরিদর্শন করে শিগগিরই জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মাটি কাটার সংবাদ পেলে যত রাতই হোক অভিযান পরিচালনা করছি।’ তিনি বলেন, টিলা-পাহাড় ও কৃষিজমির টপসয়েল কাটা আমলযোগ্য অপরাধ। পুলিশ প্রশাসন চাইলে স্বপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার স্বৈরাচারী আমলে সাংবাদিক দমন-পীড়নের পুনরাবৃত্তি

ফুল, প্রশংসা আর ডলারে ভাসছেন বন্ডাই বিচের ‘নায়ক’ আল-আহমেদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত