চিন্ময়কে নিয়ে সংঘর্ষ: অস্ত্রধারীদের পেছনে দাঁড়ানো যুবকটি ছাত্রলীগ নেতা নন

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৩: ১৩
আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৩: ৪৩
হামলার আগে মিনহাজ ঝন্টুর তোলা ছবি। লাল তীর চিহ্নিত স্থানে এডিট করা হয়। ছবি: ফটোগ্রাফার থেকে নেওয়া

চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ খুনের আগে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মারমুখী অবস্থানে প্রায় ১০ যুবক—এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিটিতে বাকলিয়া কলেজের ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জিয়া উদ্দিন ফাহিমের মুখ দেখা গেছে। তবে আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ছবিটি এডিট করা।

আজকের পত্রিকা ছবিটি বিশ্লেষণ করে দেখেছে, মূল ছবির একজনের মুখে জিয়া উদ্দিন ফাহিমের ছবি বসিয়ে দেওয়া হয়। তবে, অস্ত্র হাতে মূল ছবির অন্যরা ঠিক আছে।

গত মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে দুর্বৃত্তরা হত্যা করে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বিকেলে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ চট্টগ্রাম আদালত ভবনের প্রধান প্রবেশপথ দিয়ে বেরিয়ে সড়কের উল্টোদিকে সরকারি মুসলিম উচ্চবিদ্যালয়ের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনিসহ আরও ১০-১২ জন আইনজীবীকে জয় শ্রীরাম বলে ধাওয়া দেওয়া হয়। এ সময় পা পিছলে পড়ে যান সাইফুল ইসলাম। ওই সময় ধারালো অস্ত্রধারী ১০-১৫ জনের একদল যুবক রঙ্গম কমিউনিটি সেন্টারের সামনে প্রথমে পিটিয়ে, তারপর মাথা থেঁতলে দেওয়ার পর আরেক দল কুপিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে।

তাঁকে হত্যার আগে চট্টগ্রামের বাণ্ডেল কলোনির সামনে থেকে দুটি ছবি তোলেন দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার ফটোগ্রাফার মিনহাজ উদ্দিন ঝন্টু। একটি ছবিতে দেখা যায় দুজন বটি ও রামদা হাতে দাঁড়ানো ১০ জন যুবক। আরেকটি আইনজীবীকে হত্যা করতে যাওয়ার আগে অ্যাকশন সংবলিত ছবি।

১০ জনের ছবির মধ্যে বামদিক থেকে তৃতীয় নম্বরের লাল-হলুদ মিশ্রিত ছবির ব্যক্তির মুখ এডিট করে বসানো হয় ছাত্রলীগ নেতা ফাহিমের ছবি। মূল ছবির সঙ্গে মেলালে যেটি স্পষ্ট হয়।

তবে, ওই ছবির মধ্যে বাকিরা ঠিক আছেন। ওই ছবিতে ডানদিক দিয়ে চার নম্বর ঘোমটা দেওয়া ব্যক্তি বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির এলএলবির ৩৬ তম ব্যাচের ৪র্থ সেমিস্টারের ছাত্র শ্রী শুভ কান্তি দাশ। তাঁর আইডি নম্বর ২৩০৫৩৬০৩২। তাঁকে ইতিমধ্যে ভার্সিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বাকি যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে তাঁরা হলেন—চট্টগ্রামের মেথর পট্টি এলাকার টিভি চোর সুমন দন্দি, কোতোয়ালীর হাজারীগলি এলাকার মৃত মনোরঞ্জন দের ছেলে বিকাশ দে (৪০), কোতোয়ালীর জলসা মার্কেট এলাকার মৃত সুধীর চক্রবর্তীর ছেলে নারায়ণ চক্রবর্তী (৫০) ও বন্দরের নিমতলা এলাকার মানিক দের ছেলে মন্টু দে।

সংঘর্ষের পর ছবিটি প্রথম নিজাম উদ্দিন নামে একটি আইডি থেকে প্রকাশ করা হয়। এরপর সেটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

ছবির বিষয়ে জানতে চাইলে জিয়া উদ্দিন ফাহিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই দিন আমার মুঠোফোন অন ছিল। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চাইলে, আমার মোবাইলের অবস্থান ট্রাক করতে পারে। ওই দিন আমি কোতোয়ালী এলাকায় ছিলাম না। আমাদেরই প্রতিপক্ষ ছবিটি ইডিট করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে।’

ফটোগ্রাফার মিনহাজ ঝন্টু বলেন, ‘আপনার কাছে (আজকের পত্রিকা) সরবরাহ করা ছবিটি আমার। ইডিট করা ছবিটি আমার না।’

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল করিমও এডিটেড এবং আসল দুটি ছবি পেয়েছেন বলে আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সংঘর্ষে জড়িত না থাকলে নিরপরাধ কাউকে কখনো হয়রানি করা হবে না। তবুও আমরা যাচাই-বাছাই করছি। ইতিমধ্যে জিয়া উদ্দিন ফাহিমের মাকে থানায় আসতে বলেছি।’

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এডিটেড ছবি। ছবি: সংগৃহীত
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এডিটেড ছবি। ছবি: সংগৃহীত

উল্লেখ্য, গত সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। পরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার পর মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে তাঁকে চট্টগ্রাম আদালতে মহানগর হাকিম ষষ্ঠ কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে তোলা হয়।

শুনানি শেষে দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে চিন্ময় কৃষ্ণকে প্রিজনভ্যানে ওঠানো হয়। তবে তাঁর অনুসারীরা এ সময় বাধা দিলে প্রিজনভ্যানটি প্রায় তিন ঘণ্টা সেখানে আটকে থাকে। পরে পুলিশ আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিতে চাইলে বেলা ৩টার দিকে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পুলিশও এ সময় কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। লাঠিচার্জও করে। পরে চিন্ময় কৃষ্ণকে চট্টগ্রাম কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত