Ajker Patrika

ইসলামী ব্যাংকে লুটপাট: শুধু খাতুনগঞ্জ শাখার ক্ষতি পোষাতেই লাগবে ১৩ বছর

  • খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে ৪৫ হাজার কোটি টাকা তুলে নেয় এস আলম গ্রুপ
  • ঋণের বিপরীতে যোগ্য জামানত মাত্র ৫৫৬ কোটি টাকা
  • শুধু খাতুনগঞ্জেই সঞ্চিতি ঘাটতি ৪২ হাজার কোটি টাকা
ওমর ফারুক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৪ মে ২০২৫, ১৭: ৩২
ইসলামী ব্যাংকে লুটপাট: শুধু খাতুনগঞ্জ শাখার ক্ষতি পোষাতেই লাগবে ১৩ বছর

আওয়ামী লীগ আমলে ব্যাংকিং খাতে চলা লুটপাটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের একটি হলো ইসলামী ব্যাংক। কারণ, এই ব্যাংক থেকে বিতর্কিত শিল্পগ্রুপ এস আলম একাই বের করে নিয়েছে প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকা। এই ঋণের অর্ধেকেরই বেশি অর্থাৎ ৪৫ হাজার কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে।

ব্যাংকটির তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ছিল ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে, খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে শুধু এস আলম যে অর্থ লুট করেছে, তা কাটিয়ে উঠতে কমপক্ষে ১৩ বছর সময় লাগবে। কারণ, ৪৫ হাজার কোটি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকটির কাছে যোগ্য জামানত রয়েছে মাত্র ৫৫৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। ফলে এস আলম স্বেচ্ছায় ঋণের টাকা ফেরত না দিলে ব্যাংকের পক্ষে আইনগতভাবে এই ঋণ আদায় সহজ হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মালিকানা বা আধিপত্য শুরুর আগে থেকেই ইসলামী ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখায় ঋণ ছিল এস আলম গ্রুপের। এরপর ২০১৭ সালে মালিকানা প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত এই শাখার সংশ্লিষ্ট কয়েক কর্মকর্তা গ্রুপটির লুটপাটে সহযোগিতা করেছেন। তাঁদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা স্বপ্রণোদিত হয়ে এসব লুটপাটে অংশ নিয়েছেন। ফলে ব্যাংকটির একটি শাখা এত বড় লুটপাটের সুযোগ হয়েছে, যা ব্যাংকিং খাতের এযাবৎকালের সব রেকর্ডকে হার মানিয়েছে।

ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খাতুনগঞ্জ শাখার বিতরণ করা এই ঋণ এখন ব্যাংকটির বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, এস আলম গ্রুপকে দেওয়া এই ঋণে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করা হয়নি।

শাখাটির অনিয়ম উল্লেখ করতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট টিম মন্তব্য করেছে, ইসলামী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখায় বিগত কয়েক বছর কার্যত কোনো ব্যাংকিং হয়নি; যা হয়েছে তা স্বাভাবিক ব্যাংকিং নিয়মাচারের সম্পূর্ণ বিপরীত। ব্যাংকটির শাখা ও প্রধান কার্যালয়ের কয়েকজন অতি উৎসাহী, অসাধু, দুর্নীতিগ্রস্ত ও উচ্চাভিলাষী কর্মকর্তা স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে এস আলমের সঙ্গে যোগসাজশ করে বিনিয়োগের নামে ব্যাংকের বিপুল অর্থ আত্মসাতে কুশীলবের ভূমিকায় নিয়োজিত ছিলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন টিমের এক কর্মকর্তা বলেন, ঋণের বিপরীতে ব্যাংকটির কাছে এস আলম গ্রুপের ১১ হাজার শতক জমি, ১৫ হাজার বর্গফুট ফ্লোর স্পেস, স্থাপনা, মেশিনারিজ, নগদ ও এফডিআর মিলে মোট ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সহায়ক জামানত রয়েছে। এর মধ্যে এমনও সম্পত্তি রয়েছে, যা এখনো নামজারিও হয়নি এস আলমের নামে কিংবা ইসলামী ব্যাংকের অনুকূলে আইজিপিএ (ইরিভোকেবল জেনারেল পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) সম্পাদন হয়নি। নামজারি না হওয়া সম্পত্তি ব্যাংকের পক্ষে বিক্রি তো দূরের কথা, বন্ধক রাখারও সুযোগ নেই। ফলে ঋণের টাকার প্রায় পুরোটাই ব্যাংকটিকে তাদের মুনাফা থেকে প্রভিশন করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ইসলামী ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে এস আলম ভেজিটেবল অয়েল, মেসার্স সোনালী ট্রেডার্স, ডেলটা অয়েল রিফাইনারি, মেসার্স সাদিয়া ট্রেডার্স, গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন, ওজি ট্রাভেলস, এস আলম সুপার এডিবল অয়েল, এস আলম রিফাইনড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ, এস আলম স্টিলস, এস আলম ট্রেডিং কোম্পানি, সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টস, মেসার্স আদিল করপোরেশন, ইনফিনিয়া সিনথেটিক ফাইবার, জেনেসিস টেক্সটাইল অ্যাকসেসরিজ অ্যান্ড অ্যাপারেলস, চেমন ইস্পাত, এস আলম ক্লোড রোল্ড স্টিল, সাভোলা অয়েল ও ইনফিনিটি সিআর স্ট্রিপসের নামে এই ঋণ নেওয়া হয়েছে।

এসব প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসেবে রয়েছেন মোহাম্মদ সাইফুল আলম, স্ত্রী ফারজানা পারভীন, সহোদর ওসমান গণি, রাশেদুল আলম, শহিদুল আলম, আব্দুস সামাদ, ভাইয়ের স্ত্রী শাহানা ফেরদৌস ও ভাগনে মোস্তান বিল্লাহ আদিলসহ আত্মীয়স্বজন, প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও নামে-বেনামে এই ঋণ নেওয়া হয়েছে।

খাতুনগঞ্জের সঞ্চিতি ঘাটতি ৪২ হাজার কোটি টাকা

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ইসলামী ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে এস আলম গ্রুপকে দেওয়া ঋণের পুরোটাই এখন খেলাপি হয়ে পড়েছে। তাই ব্যাংকটির শুধু খাতুনগঞ্জ শাখাতেই প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাতুনগঞ্জ শাখার ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড ঋণের বিপরীতে ৪৩ হাজার ১৭৩ কোটি টাকার প্রভিশন রাখতে হবে। যেখানে সংরক্ষণ করা হয়েছে মাত্র ১ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। ঘাটতি হয়েছে ৪১ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা।

ব্যাংকটিতে মোট ৭৭ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকার প্রভিশন রাখতে হবে। অথচ ব্যাংক সংরক্ষণ করেছে মাত্র ৭ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা। এতে ঘাটতি দেখা দিয়েছে ৬৯ হাজার ৮১৬ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখার আমানত রয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। এর বিপরীতে শাখাটির মাধ্যমে দায় সৃষ্টি হয়েছে ৫৩ হাজার ৫০১ কোটি টাকা।

গত ডিসেম্বরে ইসলামী ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখা খেলাপি ঋণ দেখিয়েছে ৩২ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে, শাখাটির প্রকৃত খেলাপি ঋণ ঠেকেছে ৬৫ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ইসলামী ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখায় বিগত কয়েক বছর যে লুটপাট হয়েছে, তা বিশ্বের ব্যাংক লুটপাটকে ছাড়িয়ে গেছে। শুধু খাতুনগঞ্জ শাখা কিংবা ইসলামী ব্যাংক নয়, দেশের বিপর্যস্ত ব্যাংকিং খাতে ঘুরে দাঁড় করাতে ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ হয়েছে। অধ্যাদেশের আলোকে ইসলামী ব্যাংকসহ পুরো ব্যাংকিং খাতকে পুনরুদ্ধার করতে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

শাখাটির সার্বিক বিষয়ে খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখার ব্যবস্থাপক এসভিপি জামাল উদ্দীন বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংক জনগণের আস্থার প্রতীক। গ্রাহকের আস্থা ও আমানতের সুরক্ষায় আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। গত ৭-৮ বছর ব্যাংকের যে ক্ষতি হয়েছে, তা ছিল রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের তত্ত্বাবধানে সুপরিকল্পিতভাবে ইসলামি ব্যাংকিং ধ্বংস করার হীন চক্রান্ত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসার দরজা ভেঙে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

চবি প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওমর ফারুক সুমন নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সুমন খুলশীতে তাঁর মামার বাসায় থাকতেন। তাঁর বড় ভাইও সেখানে থাকেন। দুই দিন আগে সুমনের মামা পুরো পরিবার নিয়ে তুরস্কে বেড়াতে যান। বাসায় সুমন ও তাঁর বড় ভাই ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সুমন। ফোনে তাঁর বড় ভাই কখন বাসায় ফিরবেন জানতে চান সুমন। বড় ভাই জানান যে তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। এর কিছুক্ষণ পর বড় ভাই সুমনকে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। পরে বাড়ি থেকে সুমনের মা ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি বড় ভাইকে জানান। এতে উদ্বেগ দেখা দিলে বড় ভাই বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে দিয়ে বাসা চেক করান।

দারোয়ান কলিংবেল বাজিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে বড় ভাইকে জানালে তিনি দ্রুত বাসায় এসে সুমনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে চিরকুট মিলেছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমি সুমন, ওমর ফারুক সুমন। আমার কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। আর আমার কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভালো থাকবেন।’ এর আগে ১ ডিসেম্বর লেখা আরেকটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল—‘আশাই জীবন, আশাই মরণ, ব্যর্থতা হতাশা-অন্ধকারে নিয়ে যায়।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান বলেন, ‘সুমন ও তাঁর বড় ভাই একসঙ্গে মামার বাসায় থাকতেন। মামা ও মামি বর্তমানে বিদেশে আছেন। বড় ভাই সন্ধ্যায় বাইরে যান। সে সময় সুমন বাসায় একা ছিলেন। বড় ভাই বাসায় ফিরে এসে বারবার ডাকলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে সুমনের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও আমরা সব সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বদলি নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ শিক্ষক নেতার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ

সহকর্মী এবং নিজের বদলি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমাকে সাড়ে ৪০০ মাইল দূরে বদলি করা হয়েছে। এতে আমি বিচলিত নই।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া শতাধিক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা এবং বিভাগে। আরও অনেককে বদলি করা হতে পারে। এ নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাব। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসব না। আপনাদের পাশে রয়েছি। অবিলম্বে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। সে জন্য যদি জেলেও যেতে হয়, প্রস্তুত রয়েছি।’

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মাহফুজা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে বরিশাল সদরের চরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমনের বাম্পার ফলনেও মুখে হাসি নেই কৃষকের, বাজারে ধানের দাম কমায় হতাশা

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তাই ফলন ভালো হওয়ার পরও বাজারে ধানের যথার্থ মূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়ছেন তাঁরা।

কৃষকেরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম অনেক কম। গত বছর বাজারে যেখানে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে, এই বছর মাঝারি শুকনা ধান ৯০০ ও শুকনা ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার আগপর্যন্ত অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০ টন ধান উৎপাদন হবে। আর এই ধান থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমন ধানের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা।

বাজারে আমন ধানের দাম কম হলেও সরকারিভাবে ভালো দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতি কেজি আমন ধান ৩৪ টাকা মূল্যে ৭৯০ টন, সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা কেজি মূল্যে ২ হাজার ৬৭৭ টন ও আতপ চাল ৪৯ টাকা কেজি মূল্যে ৫ হাজার ৬৪৬ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার আমনখেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত। অনেক এলাকায় দ্রুত সময়ে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ একসঙ্গে সেরে নিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে সময়, খরচ ও কষ্ট কম করতে হচ্ছে। আবার কেউ কাজের লোক এনে ধান কেটে ফসলের মাঠেই মাড়াই করে সেদ্ধ দিচ্ছেন। অনেক কৃষক মাঠের মধ্যে রাত জেগে ধান সেদ্ধ করছেন। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও ধানের দাম কম থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন কৃষকেরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়ন কৃষক আনোয়ার খান বলেন, ‘গত বছর আমাদের ধান একেবারেই হয়নি। এ বছর অনেক ভালো ধান হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম অনেক কম। প্রতি মণ ধান মাত্র ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মিলন কান্তি চাকমা বলেন, ‘আমাদের ধান-চাল সংগ্রহের কার্যক্রম ২০ নভেম্বর শুরু হয়েছে; চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সরকারিভাবে ধানের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ১ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। একটা সময় আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারতাম না; তবে এখন ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। আশা করি, চলতি মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘জেলায় এ বছর খুব ভালো আমন ধান হয়েছে। কৃষকেরা অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে ধান ঘরে তুলছেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও দিনের বেলা কুয়াশা না থাকায় সহজে কৃষকেরা ধান কাটা, মাড়াই ও সেদ্ধ করতে পারছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা
হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা

উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ে ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে তাপমাত্রার পারদ। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯২ শতাংশ।

গত কয়েক দিন পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৩ ডিগ্রির ঘরে থাকছে। ফলে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। আজ শুক্রবার সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। সুনসান নীরবতায় গরম কাপড় পরে প্রয়োজনীয় কাজে বের হয়েছে লোকজন। কেউ কেউ মাঠে করছেন হালচাষ। এরই মধ্যে পূর্ব আকাশে সূর্য দেখা দিলেও নেই প্রখর রোদ।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার তালমা এলাকার গৃহবধূ নাজমা বেগম বলেন, ‘সকাল-বিকেল খুব ঠান্ডা পড়ে। ঘর থেকে বের হলেই যেন বাতাসে শরীর কেঁপে ওঠে। বাচ্চাদের নিয়ে সবচেয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। ঠান্ডা লাগলে হাসপাতালে যেতে হয় বারবার।’

একই এলাকার দিনমজুর মিজানুর রহমান বলেন, ‘শীতে কাজ পাওয়া কষ্ট হয়ে গেছে। সকালে কুয়াশায় কিছু দেখা যায় না, হাত-পা জমে থাকে। ঠান্ডায় শরীর ঠিকমতো সাড়া না দেওয়ায় কাজের গতি কমে গেছে।’

স্কুলছাত্রী তানজিলা আক্তার বলে, ‘সকালে কলেজ ও প্রাইভেটে যেতে খুব সমস্যা হয়। ঠান্ডা এমন যে হাতে গ্লাভস ছাড়া সাইকেল চালানো যায় না। শীত যেমন বাড়ছে, তেমনি অসুস্থ হওয়ার ভয়ও বাড়ছে।’

জেলার আশপাশ এলাকায় বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগী। এতে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তনজনিত অ্যালার্জিতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, দিন-রাতের তাপমাত্রার এই বড় পার্থক্য শরীরের ওপর চাপ ফেলে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ বেশি ঝুঁকিতে থাকে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ চিকিৎসকের।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, শীত ধীরে ধীরে নামছে। আজ ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। সামনে শীত আরও তীব্র হতে পারে। শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত