Ajker Patrika

আঁখির আয়ের উৎস ‘মায়ের স্মৃতি’ মাটির গয়না

মো. হোসেন আলী কাজী, আমতলী (বরগুনা)
মাটির গয়না তৈরিতে ব্যস্ত আঁখি। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাটির গয়না তৈরিতে ব্যস্ত আঁখি। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরগুনার আমতলীর কলেজ পড়ুয়া আয়শা আক্তার আঁখি মায়ের স্মৃতি ধরে রাখতে হারিয়ে যেতে বসা মাটির গয়না তৈরি করছেন। গত চার বছরে তিনি সাফল্যের সঙ্গে পাঁচ শতাধিক গয়না তৈরি করেছেন। এর মধ্যে তিন শতাধিক গয়না বিক্রি করেছেন। অনলাইনে গয়না বিক্রির মাধ্যমে তিনি বেশ সাড়া পেয়েছেন। মাটির গয়না বিক্রিই এখন তাঁর সংসারে অর্থ জোগানের মূল মাধ্যম।

উপজেলার পশ্চিম চিলা গ্রামের আলমগীর গাজীর মেয়ে আয়শা আক্তার আঁখি। তার মা মরিয়ম বেগম ছোটবেলায় একটি মাটির কানের দুল কিনে আনেন, যা অনেক বছর আলমারিতে রাখা ছিল। সেই মায়ের ব্যবহৃত মাটির গয়নার স্মৃতি আঁখির মনে গভীর প্রভাব ফেলে এবং তিনি মাটির গয়না তৈরির উদ্যোগ নেন। নিজের অদম্য চেষ্টায় গয়না তৈরির কৌশল শেখেন তিনি। ২০২১ সালে আমতলী বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আয়শা আক্তার আঁখির বিয়ে হয় এবং বর্তমানে তিনি আমতলী সরকারি কলেজে ডিগ্রি শ্রেণিতে পড়াশোনা করছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি সংসারে বাড়তি আয় জোগাতে মাটির গয়না তৈরির কাজ শুরু করেন তিনি।

আয়শা আক্তার আঁখি এ পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক গয়না তৈরি করেছেন। এসবের মধ্যে রয়েছে কানের দুল, গলার সেট, মালা, চুড়িসহ নানা ধরনের গয়না। মাটির গয়নায় নান্দনিক ডিজাইন ও কারুকাজ যুক্ত করে সেগুলো তৈরি করেন তিনি। শুরুতে তেমন সাড়া না পেলেও এখন তাঁর তৈরি গয়নাগুলো অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে এবং ক্রেতারা নতুন অর্ডার দিচ্ছেন। দামও খুব কম—প্রতি সেট গয়না ৭০ থেকে ১৫০ টাকা।

এ বিষয়ে ক্রেতা তানজিলা বলেন, ‘বর্তমানে সোনার গয়না অত্যন্ত দামি, যা আমাদের সাধ্যের বাইরে। আমি অনলাইনে আয়শা আঁখির কাছ থেকে একটি মাটির গয়না সেট কিনেছি এবং সেটা পরিধান করতে বেশ ভালো লাগছে।’

স্বামী গাজী মো. সোলায়মান বলেন, ‘স্ত্রী আয়শা অত্যন্ত ভালো কাজ করছে এবং আমি সব সময় তার পাশে আছি। তার তৈরি মাটির গয়নার বিক্রির টাকা দিয়ে সংসারের খরচ মেটাচ্ছে।’

আঁখির তৈরি করা মাটির গয়না। ছবি: আজকের পত্রিকা
আঁখির তৈরি করা মাটির গয়না। ছবি: আজকের পত্রিকা

আঁখির মা মরিয়ম বেগম বলেন, ‘ছোটবেলায় আমি একটি মাটির গয়না কিনে এনেছিলাম। সেই গয়না গত ২৫ বছর ধরে আলমারিতে ছিল, কিন্তু পাঁচ বছর আগে হারিয়ে ফেলেছি। আমার মেয়ে সে গয়না দেখে মাটির গয়না তৈরির উদ্যোগ নেয়।’

উদ্যোক্তা আয়শা আঁখি বলেন, ‘বিলুপ্ত মাটির জিনিস সংরক্ষণ এবং মায়ের গয়নার স্মৃতি ধরে রাখতে আমি এই উদ্যোগ নিয়েছি। এখন পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক গয়না তৈরি করেছি এবং তিন শতাধিক বিক্রি করেছি। অনলাইনে ক্রেতারা আমাকে বেশ সাড়া দিচ্ছেন। তবে সরকার থেকে আর্থিক সহায়তা পেলে আমার কাজের পরিধি আরও বাড়াতে পারব।’

এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারেক হাসান বলেন, ‘আঁখির মাটির গয়না তৈরির উদ্যোগ খুবই চমৎকার। তাঁর এই উদ্যোগের জন্য আবেদন পেলে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত