Ajker Patrika

বরগুনায় গত বছর ১২৪ আত্মহত্যা, অধিকাংশই খেয়েছেন ‘গ্যাস ট্যাবলেট’

রুদ্র রুহান, বরগুনা
আপডেট : ০১ জুন ২০২৩, ২২: ২৩
বরগুনায় গত বছর ১২৪ আত্মহত্যা, অধিকাংশই খেয়েছেন ‘গ্যাস ট্যাবলেট’

বরগুনায় ২০২২ সালে ১২৪ জন আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগই নারী। তাঁদের মধ্য ৫৮ জনই অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড বা গ্যাস ট্যাবলেট নামের একপ্রকার কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। বরগুনা সদর হাসপাতালের গত এক বছরের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট থেকে এ তথ্য জানা গেছে। 

জেলার সচেতন নাগরিকেরা মনে করছেন, আত্মহত্যা রোধে প্রয়োজনীয় সচেতনতার অভাব রয়েছে। পাশাপাশি কীটনাশকের সহজলভ্যতার কারণেও আত্মহত্যা প্রবণতা বেড়েছে যা উদ্বেগজনক। 

বরগুনা সদর হাসপাতালের ময়নাতদন্ত রিপোর্টের তথ্যমতে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বরগুনায় মোট ১৪৯টি অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১২৪ জনের রিপোর্ট এসেছে সুইসাইডাল ডেথ বা আত্মহত্যা। এর মধ্যে ৭৬ জনই নারী, বাকিরা পুরুষ। নারীদের ৪২ জনই কীটনাশক (গ্যাস ট্যাবলেট) খেয়ে এবং বাকি ২৪ জন গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এসব নারীর বয়স ১৫ থেকে ৩২ বছর।

এ ছাড়া একই বছর আত্মহত্যাকারী ৪৮ জন পুরুষদের মধ্যে ৩২ জন গলায় ফাঁস এবং ১৬ জন কীটনাশক (গ্যাস ট্যাবলেট) খেয়ে আত্মহত্যা করেন। তাঁদের বয়স ২৫ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে। সজীব নামের ১৩ বছরের এক কিশোরও আছে এই তালিকায়। 

বরগুনায় ২০২২ সালের আলোচিত আত্মহত্যার ঘটনাগুলো

২০২২ সালে বরগুনায় সবচেয়ে আলোচিত অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল বেতাগী উপজেলায়। উপজেলার জোয়ার করুণা গ্রামের গ্রামের বাসিন্দা হিরু হাওলাদারের মেয়ে তামান্না ও মনির হাওলাদারের ছেলে আসলামের প্রেমের সম্পর্ক থেকে বিয়ে হয়। ছেলের পরিবার মেনে নিলেও মেয়ে তামান্নার পরিবারের কেউ এ বিয়ে মেনে নেননি। ২০২২ সালের ১৩ মার্চ উভয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। 

একই বছরের ২৭ জুলাই বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের পোটকাখালী গ্রামে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া শারমিন নামে এক ছাত্রী আত্মহত্যা করে। শারমিনের বয়স মাত্র ১২ বছর। ঘরে ওড়না পেঁচিয়ে সে আত্মহত্যা করে। 

 ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বরগুনা সদর উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের বাওলাকার গ্রামে সুরমা (১৭) নামের এক মাদ্রাসাছাত্রীর বিয়ে হয়। বাবা শাহ আলম সিকদার একপ্রকার মতের বিরুদ্ধেই তাঁর মেয়ে সুরমাকে পাশের গ্রামের নির্মাণশ্রমিক বশিরের সঙ্গে বিয়ে দেন। পড়াশোনা করে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন মুহূর্তেই ফিকে হয়ে যায় সুরমার। নববধূ হয়ে লাল শাড়ি পরে চলে মাদ্রাসার বদলে তাঁকে চলে যেতে হয় শ্বশুরবাড়ি। 

এরপর কিছুদিন যেতে না যেতেই যৌতুকের চাপে চলে আসতে হয় বাবার বাড়ি। টাকা নিয়ে তবেই ফিরতে হবে শ্বশুরালয়ে, নয়তো নির্যাতনের শিকার হতে হবে। কিন্তু সুরমা যৌতুক দিয়ে স্বামী সংসারে যেতে ছিল নারাজ। এ নিয়ে বাবার সঙ্গে তার বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে বাবা রেগে গিয়ে হাত তোলেন মেয়ের গায়ে। অভিমানে কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করে সুরমা। 

সুরমার মতোই উপকূলীয় বরগুনা জেলার উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক কিশোরী গৃহবধূ পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। 

বরগুনায় ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আলোচিত আত্মহত্যার ঘটনাগুলো

এদিকে হাসপাতালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধু ২০২৩ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে বরগুনায় মোট ১৯টি অপমৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৩টিই আত্মহত্যা। বাকি ছয়জন রোগাক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। 

২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি পাথরঘাটা উপজেলার নাচনাপাড়া এলাকায় পারিবারিক কলহের জেরে দুই সন্তানের মা সাবিনা বেগম ফুর্তি (২৮) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। 

এরপর ৫ জানুয়ারি সদরের তানজিলা আক্তার পুতুল নামের এক গৃহবধূ, ৭ জানুয়ারি রাব্বি খান নামের এক কিশোর, ৯ জানুয়ারি মাত্র আমতলী উপজেলার হুলাটানা এলাকার মাত্র ১২ বছরের শিশু নূপুর পারিবারিক কলহের জেরে অভিমানে আত্মহত্যা করে। 

একই বছরের ১১ জানুয়ারি সদর উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের বদরখালী গ্রামের বেড়িবাঁধের একটি গাছ থেকে মাতুব্বর (৫৫) নামের এক কৃষকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে পুলিশের তদন্তে জানা যায়, ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন দুলাল। 

যে কেউ চাইলেই কিনতে পারেন ‘গ্যাস ট্যাবলেট’ 

বেশির ভাগ নারী-পুরুষেরাই সহজলভ্য ‘অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড’ পান করে আত্মহত্যা করছেন। স্থানীয়ভাবে যার নাম ‘গ্যাস ট্যাবলেট’। কৃষকেরা সংরক্ষিত ধান, চাল ও ডাল কীটনাশক মুক্ত রাখতে ট্যাবলেট জাতীয় এই কীটনাশক ব্যবহার করেন। প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই এই গ্যাস ট্যাবলেট থাকে। 

বরগুনা শহর ও গ্রামাঞ্চলে সরকারের কৃষি বিভাগ অনুমোদিত কীটনাশক বিক্রেতাদের (ডিলারদের) কাছে যে কেউ গিয়ে ‘গ্যাস ট্যাবলেট’ নাম বললেই এই কীটনাশক কিনতে পারেন। 

কয়েকজন কীটনাশক বিক্রেতা প্রতিবেদককে জানান, গ্যাস ট্যাবলেটজাতীয় কীটনাশক মূলত গেরস্তের বাড়িতে ধান-চাল কীটনাশক মুক্ত রাখতে ব্যবহার করা হয়। কৃষকেরা কিনে নিয়ে বাড়িতে রেখেও দেন অনেকে। অন্য সব কীটনাশক বিক্রিতে যেমন নিয়ম, গ্যাস ট্যাবলেট বিক্রির ক্ষেত্রেও একই। তবে নারীরা কেউ কিনতে আসলে জেনে-বুঝে বিক্রি করা হয়।  

সার্বিক বিষয়ে বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আহম্মেদ বলেন, ‘প্রতিটি আত্মহত্যার ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়। আমরা তদন্ত করে আদালতের কাছে প্রতিবেদন দিই। আমরা তদন্তে দেখেছি, বেশির ভাগ আত্মহত্যাই পারিবারিক কলহের জের, ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েন, হতাশা, প্রতারণা ও আর্থসামাজিক কারণে হয়ে থাকে।’ 

বরগুনায় আত্মহত্যা প্রবণতা বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা কমিউনিটি পুলিশিং ও বিগ পুলিশিংয়ের মধ্য দিয়ে আত্মহত্যার বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছি। এ ছাড়া আত্মহত্যার উপাদানগুলো সহজলভ্য কি না বা এ বিষয়ে বিক্রির কোনো বিধিবিধান রয়েছে কি না, আমরা এ বিষয়গুলো খোঁজ নিয়ে দেখব। এ বিষয়ে অভিভাবক এবং সমাজের সচেতন ব্যক্তিদেরও কাজ করতে হবে।’ 

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে সহকারী ডোম হিসেবে কাজ করেন মালেক ফকির। তিনি বলেন, ‘আত্মহত্যার ঘটনায় মর্গে আসা অধিকাংশ মরদেহের পাকস্থলীতে গ্যাস ট্যাবলেট নামের একপ্রকার মারাত্মক বিষ পাওয়া যায়। যা পান করার পরপরই বিষক্রিয়া গোটা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া বাকিরা প্রায় সবই ঝুলন্ত রশি বা কাপড়ের টুকরায় গলায় ফাঁস দিয়ে মারা যান।’

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ লোকমান হাকিম বলেন, ‘বরগুনায় আত্মহত্যার হার বেড়েছে। এখানে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ১০টিরও বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। আত্মহত্যা আসলে মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক ব্যাধি। এর প্রতিরোধও সম্মিলিত সামাজিকভাবে করতে হবে। আমাদের প্রতিনিয়তই আত্মহত্যার পোস্টমর্টেম করতে হচ্ছে। আবার কাউকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করতে হয়। আমি বলব এটা প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নেই।’

বরগুনা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শায়লা আহসানের সঙ্গে কথা হয় আত্মহত্যার বিষয়ে। তিনি বলেন, আত্মহত্যা একটি মনস্তাত্ত্বিক সামাজিক ব্যাধি। প্রথমে ব্যক্তি ঘুমের ওষুধ সেবনে আসক্ত হয়ে পড়েন। ঘুমের ওষুধ বিষণ্নতা আরও বাড়িয়ে দেয় এবং আত্মহত্যার দিকে ধাবিত করে। অধিকাংশ নারীই পারিবারিক বিরোধের কারণে আত্মহত্যা করেন। এর মধ্যে কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েনও বড় কারণ। 

ডা. শায়লা আহসান আরও বলেন, ‘আমাদের সমাজব্যবস্থায় এখনো ব্যক্তিগত সমস্যার বিষয়ে পরিবারের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করার সুযোগ যেমন নেই। অভিভাবকেরাও অনেকে ছেলেমেয়েকে শাসনের ক্ষেত্রে শুধু শাস্তিমূলক মনোভাবে স্থির। সামাজিক এই ব্যাধি দূর করতে জেলা পর্যায়ে সমাজসেবার কাউন্সেলিং চালু থাকলেও অনেকে জানেন না বা আসতেও চান না। এ সমস্যা সমাধানে প্রথমেই পরিবারকে সচেতন হতে হবে। পরবর্তীকালে সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগও কাজে লাগাতে হবে।’ 

বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন জাগো নারীর নির্বাহী পরিচালক হোসনেয়ারা হাসি বলেন, ‘উপকূলীয় জেলা বরগুনার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। এ বিষয়ে এখনই সচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নেওয়া জরুরি। গত কয়েক বছরে আমরা আত্মহত্যার যে প্রবণতা দেখছি, তা রীতিমতো ভয়াবহ ও শঙ্কাজনক পর্যায়ে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে গুলি: আসামি গ্রেপ্তারের আশা ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত
ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের আশা একরকম ছেড়েই দিচ্ছে পুলিশ। কারণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জোর অনুমান, হামলাকারীরা ইতিমধ্যে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন। গত শুক্রবারের হামলার ঘটনার পর থেকে র‍্যাব ও ঢাকা মহানগর পুলিশ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করলেও তাঁরা কেউ সরাসরি হামলাকারী নন।

গতকাল রোববার রাত পর্যন্ত গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছে হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক, মানব পাচারে জড়িত চক্রের দুই সহযোগী, সন্দেহভাজন শুটার ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবী। তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানা গেছে।

হাদির হত্যাচেষ্টাকে কেন্দ্র করে অভিযানে সর্বশেষ গতকাল রাতে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রী সামিয়া, শ্যালক শিপু ও বান্ধবী মারিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে এক বার্তায় জানিয়েছে র‍্যাব।

র‍্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, সামিয়া ও শিপুকে নারায়ণগঞ্জ থেকে এবং মারিয়াকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, শুক্রবার হাদিকে গুলির ঘটনার আগে ও পরে ফয়সালের সঙ্গে তাঁদের ঘন ঘন ফোনে যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে।

পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, ফয়সাল করিম মাসুদ যে হাদির ওপর হামলা চালানো ‘শুটার’ আর আলমগীর শেখ মোটরসাইকেলচালক, তা শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁরা ‘ডিজিটাল ডিভাইস’ ব্যবহার করে অবস্থান লুকিয়ে রেখেছিলেন। হামলার পর এই দুজন ঢাকা থেকে বেরিয়ে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত পার হয়ে ভারতের মেঘালয় অঞ্চলে চলে যান। তদন্তকারীরা বলছেন, মূল সন্দেহভাজনেরা সীমান্ত পার হওয়ার আগে ধাপে ধাপে ঢাকা থেকে হালুয়াঘাট পর্যন্ত গেছেন।

গত শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করা হয়। হামলাকারীরা মোটরসাইকেলে হাদিকে অনুসরণ করে খুব কাছ থেকে গুলি চালায়।

গতকাল বিকেলে এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এন এস নজরুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি অবশ্য জানান, সন্দেহভাজনদের কেউ বিদেশে পালিয়ে গেছেন কি না—এমন কোনো তথ্য ইমিগ্রেশন ডেটাবেইসে পাওয়া যায়নি। ফয়সালের সর্বশেষ দেশের বাইরে যাওয়ার তথ্য অনুযায়ী, তিনি জুলাই মাসে থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফেরেন। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত তাঁর বৈধভাবে দেশত্যাগের কোনো রেকর্ড নেই।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, সন্দেহভাজনদের বিষয়ে অভিযান চালিয়ে দেশের সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের নালিতাবাড়ী থেকে মানব পাচার চক্রের দুই সদস্যকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিককে র‍্যাব গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। সীমান্ত থেকে আটক করা দুই ব্যক্তি হলেন সিবিয়ন দিও ও সঞ্চয় চিসম।

তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, আটক করা দুই ব্যক্তি মূল হামলাকারীদের সীমান্ত পার করতে সাহায্য করেছেন। তাঁদের মাধ্যমে মূল সন্দেহভাজনদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হলেও সফল হওয়া যায়নি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হামলায় অংশ নেওয়া দুজনের মোবাইল ফোনের তথ্য বিশ্লেষণ করে ঢাকার অদূরের একটি উপজেলা থেকে তাঁদের দুই সহযোগী মো. মিলন ও হাবিবুর রহমান হাবিবকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার দিন এই দুজনের সঙ্গে হামলাকারীদের শতাধিকবার ফোনে যোগাযোগ হয়। আর হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক মো. আবদুল হান্নানকে র‍্যাব-২ গ্রেপ্তার করে পল্টন থানায় হস্তান্তর করেছে।

পল্টন থানা-পুলিশ হান্নানকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করলে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ সময় আবদুল হান্নান আদালতকে বলেন, মোটরসাইকেলটি তিনি একটি শোরুমে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। মালিকানা পরিবর্তনের জন্য দুই মাস আগে কল দেওয়া হলেও অসুস্থ থাকায় তিনি যেতে পারেননি।

ভারতের প্রতি আহ্বান

এদিকে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করে হাদির ওপর হামলাকারীরা ভারতে ঢুকে পড়লে তাঁদের গ্রেপ্তার করে ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর বিপরীতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম জনগণের স্বার্থের পরিপন্থী কোনো কার্যকলাপে ভারতের ভূখণ্ড কখনোই ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘আমরা আশা করি, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাসহ অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অবৈধ ৫ সার কারখানা বর্জ্যে বিপাকে স্থানীয়রা

  • জনবসতিপূর্ণ এলাকায় অনুমোদনহীন সার কারখানা।
  • দুর্গন্ধে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি­
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

জৈব কৃষি এবং পরিবেশবান্ধব সারের ক্রমবর্ধমান চাহিদার সুযোগ নিয়ে চুয়াডাঙ্গার আলুকদিয়া ইউনিয়নে গত কয়েক মাসে পাঁচটি ছোট-বড় ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) ও অন্যান্য জৈবসারের কারখানা গড়ে উঠেছে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে এই উদ্যোগ গতি আনলেও, কারখানার অব্যবস্থাপনা, প্রয়োজনীয় পরিবেশগত ছাড়পত্র এবং সার লাইসেন্স না থাকায় আশপাশের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিক না হওয়ায় বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বেড়েছে, যা স্থানীয়ভাবে বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা ছাড়া কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হওয়া সত্ত্বেও আয়কর বা মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) সরকারের কোষাগারে সঠিকভাবে জমা না দেওয়ায় রাষ্ট্র বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে বলেও জানান তাঁরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নে কৃষি খামার, মডার্ন অ্যাগ্রো ফার্ম, চুয়াডাঙ্গা অ্যাগ্রো কম্পোস্ট, চুয়াডাঙ্গা ভার্মি কম্পোস্ট ও মা অ্যাগ্রো নামের পাঁচটি অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানে সার উৎপাদন করা হচ্ছে। জনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব কারখানায় খোলামেলা পরিবেশে বিপুল কাঁচা গোবর ও জৈব পদার্থ স্তূপ করে রাখা হয়েছে। ফলে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে চুয়াডাঙ্গা অ্যাগ্রো কম্পোস্ট ও চুয়াডাঙ্গা ভার্মি কম্পোস্টের স্বত্বাধিকারী এরফান বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি, আবেদন করেছি। তবে এখনো লাইসেন্স নেই।’ কৃষি খামার নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আশরাফুল বলেন, ‘এত নিয়ম আইন জানি না। এখন সরকার বন্ধ করতে বললে বন্ধ করে দেব।’

সরেজমিনে দেখা যায়, অননুমোদিত কারখানাগুলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মানদণ্ড অনুসরণ করছে না। ভার্মি কম্পোস্ট তৈরির প্রধান উপাদান হলো গোবর এবং অন্যান্য জৈব বর্জ্য। সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত না করলে এই কাঁচামাল এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ-পরবর্তী অব্যবস্থাপিত বর্জ্য সরাসরি পরিবেশে মিশে যাচ্ছে। কারখানার অপরিশোধিত তরল বর্জ্য সরাসরি নিকটস্থ পুকুর, খাল বা কৃষিজমিতে ফেলার কারণে ভূপৃষ্ঠের জল এবং মাটির মারাত্মক দূষণ ঘটছে। এই বর্জ্যের কারণে জলজ প্রাণীরও ক্ষতি হচ্ছে। এ ছাড়া কাঁচা গোবর ও জৈব পদার্থ খোলা জায়গায় দীর্ঘ সময় স্তূপ করে রাখলে বা সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করলে তা পচনের সময় তীব্র দুর্গন্ধ ছড়ায়। ফলে বায়ুর গুণমান নষ্ট এবং আশপাশের মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে যাচ্ছে। দুর্গন্ধ ও পরিবেশদূষণের কারণে কারখানা পরিচালনাকারীদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রায়ই বিরোধ তৈরি হচ্ছে বলেও জানা গেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, ‘অনুমোদনহীন কারখানা চালু রাখা যাবে না। আমরা বিষয়টির খোঁজ নিয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’

চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নরেশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘আলুকদিয়ায় কয়েকটি অবৈধ সার কারখানার বিষয়ে শুনেছি। আমরা দ্রুতই সেখানে অভিযান চালাব। ওই এলাকায় কেউ ছাড়পত্র নেননি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাজারের নামে ফুটপাত ভাড়া বিএনপি নেতার

গনেশ দাস, বগুড়া 
ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধভাবে বসানো হয়েছে দোকান। সম্প্রতি বগুড়ার তিনমাথা রেলগেট বাজার এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধভাবে বসানো হয়েছে দোকান। সম্প্রতি বগুড়ার তিনমাথা রেলগেট বাজার এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

বগুড়ায় বাজার ইজারার নামে মহাসড়কসংলগ্ন ফুটপাত ও ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধ দোকান বসিয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে বগুড়া শহর বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে। সেই নেতার নাম সায়েদুল ইসলাম সায়েদ। তিনি বগুড়া শহর বিএনপির ১৩ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি।

জানা গেছে, বগুড়া পৌরসভা থেকে তিনমাথা রেলগেট বাজার ইজারা নিয়েছেন সায়েদুল ইসলাম সায়েদ। কিন্তু বাজার ছাড়াও মহাসড়কসংলগ্ন ফুটপাত ও ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধ দোকান বসিয়ে প্রতিদিন প্রতিটি দোকান থেকে ৩০ টাকা করে চাঁদা নেন তিনি।

জানতে চাইলে ফ্লাইওভারের নিচে বসানো দোকানদার রাসেল, জালাল ও ইদ্রিস জানান, ফুটপাত ও ফ্লাইওভারের নিচে অস্থায়ী দোকান বসানোর অনুমতি পেতে এবং ব্যবসা চালাতে প্রতিদিন ৩০ টাকা হারে চাঁদা দিতে হচ্ছে। ইজারাদারের নিয়োজিত লোকজন পৌরসভার রশিদ দিয়ে চাঁদা নিলেও সেখানে টাকার অঙ্ক লেখা থাকে না। কেউ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে দোকান সরিয়ে দেওয়ার হুমকি, এমনকি হয়রানির অভিযোগও রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা নিয়ম মেনে দোকান করতে চাই। কিন্তু প্রতিদিন নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা না দিলে ব্যবসা করতে দেওয়া হয় না।’

বগুড়া পৌরসভার বাজার পরিদর্শক আব্দুল হাই বলেন, শহরের মধ্যে কিছু অস্থায়ী বাজার রয়েছে, যা পৌরসভা থেকে পেরিফেরি করা হয়নি। যেখানে বাজার বসে, সেই স্থানকে বাজার হিসেবে ইজারা দেওয়া হয়েছে। তিনমাথা রেলগেট বাজার বাংলা ১৪২৩ সনের জন্য ৫ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে ইজারাদার ও বিএনপি নেতা সায়েদুল ইসলাম সায়েদ বলেন, ‘৫ লাখ টাকায় বাজার ইজারা নেওয়া হলেও পৌরসভা থেকে বাজারের অবস্থান চিহ্নিত করে দেওয়া হয়নি। আয়কর ভ্যাট এবং অন্যান্য খরচ দিয়ে আমার ৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ। বাজারের স্থান নির্ধারণ করা না থাকায় এবং বিনিয়োগ করা টাকা তুলতে ফুটপাত এবং ফ্লাইওভারের নিচে বসা দোকান থেকে ইজারার টাকা তুলতে হয়।’

চাঁদা আদায়ের রশিদ
চাঁদা আদায়ের রশিদ

এ বিষয়ে বগুড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুর বলেন, ‘ফুটপাত ও ফ্লাইওভারের নিচে দোকান বসানো আইনবিরোধী। সাসেক প্রকল্প থেকে এখনো মহাসড়ক আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। তারপরও এসব অবৈধ দোকান উচ্ছেদ ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ শহিদ উল্লাহ বলেন, ‘মহাসড়কের পাশের ফুটপাত এবং ফ্লাইওভারের নিচে দোকান বাসানোর কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। হাইওয়ে পুলিশ এর আগেও এসব অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করেছে। শিগগির আবারও উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চুয়াডাঙ্গার দুই আসন: একটিতে লড়াইয়ের আভাস, অন্যটিতে এগিয়ে বিএনপি

  • নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রচারে সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
  • কর্মসংস্থানে জোর বিএনপির প্রার্থীদের।
  • কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়নের অঙ্গীকার জামায়াতের।
মেহেরাব্বিন সানভী, চুয়াডাঙ্গা
মাহমুদ হাসান খান বাবু, মো. শরীফুজ্জামান শরীফ, রুহুল আমিন, তৌহিদ হোসেন, মাসুদ পারভেজ রাসেল, মোল্লা ফারুক এহসান, আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা ও শেখ সেলিম। ছবি: সংগৃহীত
মাহমুদ হাসান খান বাবু, মো. শরীফুজ্জামান শরীফ, রুহুল আমিন, তৌহিদ হোসেন, মাসুদ পারভেজ রাসেল, মোল্লা ফারুক এহসান, আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা ও শেখ সেলিম। ছবি: সংগৃহীত

একসময় চুয়াডাঙ্গার দুটি আসনেই ছিল বিএনপির আধিপত্য। আগামী নির্বাচনেও দৃশ্যত চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে এগিয়ে বিএনপি। তবে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে জামায়াতের শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে দলটিকে। সেখানে দুই দলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন ভোটাররা। দুই আসনেই নেতা-কর্মীদের নিয়ে জোর প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

চুয়াডাঙ্গা-১ আসনটি ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বিএনপির দখলে ছিল। ২০০৮ সালের পর থেকে নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগের হাতে। এবার এখানে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা সেক্রেটারি মো. শরীফুজ্জামান শরীফ। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ রাসেল। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হতে পারেন জহুরুল ইসলাম। এনসিপি থেকে আলোচনায় আছেন দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব মোল্লা ফারুক এহসান। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) প্রার্থী হতে পারেন কেন্দ্রীয় সহসভাপতি তৌহিদ হোসেন। ২০ ডিসেম্বর জেলা নির্বাচন অফিস ঘোষিত চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী, এখানে মোট ভোটার ৫ লাখ ৭ হাজার ৪৮১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫১ হাজার ৯৭১ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৫৫ হাজার ৫০৩ জন।

মো. শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, ‘নির্বাচিত হলে চুয়াডাঙ্গা শহরে বাইপাস সড়ক, আলমডাঙ্গায় বড় হাসপাতাল, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন করব। শিল্পকারখানা গড়ে তুলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব। বিএনপির ৩১ দফা রূপরেখা এই অঞ্চলের অবকাঠামো, ব্যবসা-বাণিজ্য, শ্রমজীবী ও মধ্যবিত্তদের জন্য একটি গ্যারান্টি হবে। ধানের শীষ বিজয়ী হলে আধুনিক ও জনবান্ধব মডেল শহর গড়ে তুলব।’

অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ রাসেল বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের পর মানুষ সন্ত্রাসমুক্ত স্বচ্ছ নির্বাচন চায়। কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা, জনগণের এই তিন প্রত্যাশায় ন্যায়ভিত্তিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আমরা প্রস্তুত। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।’

চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে ১৯৯১ সালে জামায়াতের টিকিটে নির্বাচিত হন হাবিবুর রহমান। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপি থেকে নির্বাচিত হন হাজী মো. মোজাম্মেল হক। ২০০৮ সাল থেকে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। এবার এখানে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা সভাপতি ও বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা আমির অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হতে পারেন জেলা সভাপতি হাসানুজ্জামান সজীব। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) থেকে আলোচনায় আছেন শেখ সেলিম। আসনটিতে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৬ হাজার ১৯৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪৩ হাজার ৩১ জন। নারী ভোটার ২ লাখ ৪৩ হাজার ১৬৩ জন।

মাহমুদ হাসান খান বাবু ব্যবসায়ী নেতা হওয়ায় এলাকায় তাঁর যাতায়াত অপেক্ষাকৃত কম। তবে ভোটকে সামনে রেখে নেতা-কর্মীদের নিয়ে জোর প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। জামায়াতের রুহুল আমিন আগে থেকেই এলাকায় সক্রিয়। সাধারণ ভোটাররা বলছেন, এখানে বিএনপি ও জামায়াত দুই দলের মধ্যে শক্ত লড়াই হবে।

মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, ‘জেলার উন্নয়নে আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চাই। অবকাঠামোগত উন্নয়ন, রাস্তাঘাট, বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা, প্রতি উপজেলায় ৫০ শয্যার হাসপাতালগুলোকে ২০০ শয্যা করার বিষয়ে আমরা কাজ করব। বেকারত্ব দূরীকরণে দলীয় কর্মসূচির আলোকে কাজ করব।’

জামায়াতের রুহুল আমিন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমলে নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়িয়েছি। মানুষের জন্য কাজ করেছি। নির্বাচনের জন্য আমরা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চাই। আমাদের প্রত্যাশা, এবার বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ব্যতিক্রমী নির্বাচন হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত