Ajker Patrika

ডিজির সঙ্গে তর্ক: অব্যাহতির ৪ দিনের মাথায় পুনর্বহাল ময়মনসিংহের চিকিৎসক

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ০৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনে আসা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আবু জাফরের সঙ্গে তর্কে জড়ানো চিকিৎসক ধনদেব চন্দ্র বর্মণ শোকজের সন্তোষজনক জবাব দেওয়ায় তাঁকে ক্ষমা করে আগের পদে বহাল করা হয়েছে। গতকাল বুধবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম ফেরদৌস স্বাক্ষরিত একটি আদেশ জারির মাধ্যমে তাঁকে বহাল করা হয়।

আদেশে বলা হয়, ৬ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনকালে হাসপাতালের আবাসিক সার্জন (ক্যাজুয়ালটি) ও সহকারী অধ্যাপক (সার্জারি) ইনসিটু ধনদেব চন্দ্র বর্মণ মহাপরিচালকের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। পরে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়, সেই সঙ্গে ক্যাজুয়ালটি ওটি ইনচার্জের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তিনি তাঁর অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের কারণে ক্ষমা চেয়ে এবং ভবিষ্যতে এরূপ অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ করবেন না বলে অঙ্গীকার করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে লিখিত জবাব দাখিল করেছেন। পরে তাঁর দাখিল করা জবাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়।

এতে আরও বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয় বরাবর পাঠানো প্রতিবেদন সন্তোষজনক হওয়ায় মহাপরিচালক ধনদেব চন্দ্র বর্মণকে ক্ষমা প্রদর্শন করেন এবং তাঁকে আগের কর্মস্থল ক্যাজুয়ালটি ওটি ইনচার্জ পদে পুনর্বহাল রাখার জন্য নির্দেশ দেন। সে মোতাবেক তাঁকে ক্যাজুয়ালটি ওটি ইনচার্জের দায়িত্বে পুনর্বহাল করা হলো।

চিঠি জারির বিষয়টি নিশ্চিত করে মমেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মুহাম্মদ মাইনউদ্দিন খান বলেন, এই আদেশ গতকাল থেকে কার্যকর হয়েছে।

ধনদেব চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ আমাকে আগের পদে বহাল করেছে। আমি কাজ শুরু করেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গভীর নলকূপ খনন: বরেন্দ্রজুড়ে শত শত মৃত্যুকূপ

  • সংকটের মধ্যেও অবৈধ সেমিডিপ বসিয়ে পানির ব্যবসা
  • এক স্থানে পানি না পেলে বোরহোল হচ্ছে অন্য স্থানে
  • ঝুঁকিপূর্ণ এক বোরহোলে পড়ে শিশু সাজিদের মৃত্যু
 রিমন রহমান, রাজশাহী
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

পানির স্তর নিচে নামছে। নামতে নামতে একটা সময় আর পানিই পাওয়া যাচ্ছে না। তখন অগভীর নলকূপ (সেমিডিপ) তুলে অন্য জায়গায় বসানো হচ্ছে। কিন্তু পুরোনো নলকূপের গর্তটি সেভাবেই পড়ে থাকছে অনেক জায়গায়। আবার নতুন নলকূপ স্থাপনের ক্ষেত্রেও পানি পেতে একাধিক জায়গায় খনন করার প্রয়োজন পড়ছে। তখনো পড়ে থাকছে পরিত্যক্ত গর্তটি। রাজশাহীর গোদাগাড়ী, তানোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও নাচোল এবং নওগাঁর নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার উপজেলায় এ রকম শত শত পরিত্যক্ত গর্ত রয়েছে। এগুলোর ব্যাসার্ধ ৮ থেকে ১২ ইঞ্চি। গত বুধবার এমন একটি মৃত্যুকূপে পড়েই মারা যায় রাজশাহীর তানোরের কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামের রাকিবুল ইসলামের দুই বছরের সন্তান সাজিদ।

বরেন্দ্র অঞ্চলে মূলত কৃষকদের সেচ দেওয়ার কাজটি করে থাকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। কৃষিজমিতে সেচের জন্য এই অঞ্চলে তাদের কয়েক হাজার গভীর নলকূপ রয়েছে। এর পাশাপাশি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে আরও কয়েক হাজার সেমিডিপ বসে গেছে ব্যক্তিমালিকানায়।

পানির স্তর ক্রমাগত নিচে নামতে থাকায় ২০১৫ সালে বিএমডিএ সিদ্ধান্ত নেয়, তারা নতুন করে আর কোনো গভীর নলকূপ বসাবে না। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা আর গভীর নলকূপ বসাচ্ছেও না। কিন্তু ব্যক্তিমালিকানায় সেমিডিপ বসানোর কাজ থেমে নেই।

বিদ্যমান সেচ আইন অনুযায়ী বিএমডিএর অধিক্ষেত্রে ব্যক্তিমালিকানার গভীর বা অগভীর নলকূপ স্থাপনের কোনো সুযোগ নেই। তারপরও ব্যক্তিমালিকানার সেমিডিপের অনুমোদন দেওয়া হয় সেখানে। অভিযোগ রয়েছে, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে উপজেলা সেচ কমিটিকে ম্যানেজ করে এসব অনুমোদন দেওয়া হয়। সবশেষ গত বছর তানোরে ৩২টি সেমিডিপ বসানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

অনুমোদন না নিয়েও সেমিডিপ

কৃষি দপ্তর থেকে জানা গেছে, তানোর উপজেলায় সেচযন্ত্র আছে ২ হাজার ১৯৫টি। এগুলোর মধ্যে বিএমডিএর গভীর নলকূপ ৫২৯টি। ব্যক্তিমালিকানায় গভীর নলকূপ আছে ১৬টি, বাকিগুলো অগভীর। এর বাইরে প্রায় আড়াই হাজার অনুমোদনহীন সেমিডিপ রয়েছে। শুধু তানোর নয়, গোটা রাজশাহী, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে উপজেলা সেচ কমিটির অনুমোদন ছাড়াও শত শত সেমিডিপ চলছে। এসব সেমিডিপ থেকে ৩০ থেকে ৪০ বিঘা পর্যন্ত জমিতে সেচ দেওয়া যায়। কোথাও মুরগির খামার, কোথাও আবাসিক কিংবা ক্ষুদ্রশিল্পের নামে বিদ্যুৎ-সংযোগ নিয়ে নলকূপ বসিয়ে সেচপাম্প চালাচ্ছেন অনেকে।

নিহত শিশু সাজিদের বাড়ি যাওয়ার রাস্তায় পড়ে দুবইল গ্রাম। সরেজমিন দেখা যায়, এই গ্রামের একটি বাড়ির পাশে ‘মোহাম্মদ আলী পোলট্রি খামার’ লেখা সাইনবোর্ড। এর মালিক শফিকুল ইসলাম। খামারে কোনো মুরগি নেই। এর পাশেই বসানো হয়েছে সেমিডিপ। শফিকুল ইসলাম জানান, মুরগির খামারের বিদ্যুৎ-সংযোগ নিয়ে তিনি সেমিডিপ চালাচ্ছেন। তাঁর মতো আরও অনেকে এভাবে সেমিডিপ চালান বলে তিনি জানান।

সংকটের মধ্যে রমরমা ব্যবসা

রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভূগর্ভস্থ পানি কমছেই। কোথাও কোথাও মাটির ২০০ ফুট গভীরে পানির স্তর পাওয়া যায় না। তাই এই তিন জেলার ৪ হাজার ৯১১ মৌজায় এখন খাওয়ার পানি ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহারের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি তোলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। গত ৬ নভেম্বর এ-সংক্রান্ত গেজেট জারি করা হয়।

তবে পানিসংকট নিয়ে কাজ করেন এমন ব্যক্তিরা বলছেন, এই সংকটের মধ্যেও অবৈধভাবে নতুন নতুন সেমিডিপ ব্যক্তিমালিকানায়। উন্নয়নকর্মী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি একটি দামি ব্যবসা। এখান থেকে ভালো মুনাফা হয়। অন্তত ৭৫ শতাংশ লাভ থাকে। তাই অবৈধভাবে সেমিডিপ বসানোর প্রতিযোগিতা চলছে। বিভিন্ন আলোচনায় বিএমডিএ দাবি করে, তাদের যত গভীর নলকূপ রয়েছে, তারও বেশি আছে অগভীর নলকূপ।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এমনিতে মাটির নিচে পানি নেই। তাই মাঝে মাঝে আমরা দেখি, দুই বছর পর এক স্থান থেকে সেমিডিপ সরিয়ে অন্য জায়গায় বসানো হচ্ছে। এটাকে রিবোরিং বলা হয়। খুঁজলে দেখা যাবে, তিন ভাগের এক ভাগ সেমিডিপ এভাবে স্থান বদল করেছে। স্থান পরিবর্তনের পর পাইপের গর্তটিও অনেক স্থানে থেকে গেছে। আবার নতুন সেমিডিপ বসানোর সময় নিচে পানির লেয়ার পাওয়া যায় না। তখন এক স্থান বোরহোলের পর আবার অন্য স্থানে বোরহোল করতে হয়। এভাবে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর সংকটাপন্ন এলাকাগুলোতে বহু গর্ত আছে। এমন একটি গর্তেই ছোট বাচ্চাটা পড়ে যায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৩ উপজেলার দাপুটে শিক্ষাকর্তা

  • তিন উপজেলার কোথাও নিয়মিত বসেন না
  • টাকা না দিলে নানা অজুহাতে ফাইল ফেরত
  • বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি না করার অনুরোধ তাঁর
আনোয়ার হোসেন শামীম, গাইবান্ধা
এ বি এম নকিবুল হাসান।
এ বি এম নকিবুল হাসান।

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ বি এম নকিবুল হাসানের বিরুদ্ধে এমপিওভুক্তির আবেদন যাচাই-বাছাইয়ে অনিয়ম, জাল-জালিয়াতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও ঘুষ- বাণিজ্যের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। পলাশবাড়ীর পাশাপাশি তিনি সাদুল্লাপুর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বেও রয়েছেন। এ সুযোগে ব্যাপক দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। অভিযোগকারীরা বলেন, নকিবুল হাসান কোনো উপজেলা অফিসেই নিয়মিত বসেন না।

১০ ডিসেম্বর তিন উপজেলার বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছয়জন প্রধান ও সহকারী শিক্ষক গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে বলা হয়, বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত অনেক শিক্ষক-কর্মচারী এমপিও আবেদন করতে চাইলে নকিবুল নানা অজুহাতে তাঁদের ফাইল ফেরত দেন। কিন্তু জাল সিল-স্বাক্ষর, টেম্পারিং করা সিএস কপি, ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিসহ ত্রুটিপূর্ণ ফাইল ২ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে গ্রহণ ও অগ্রায়ণ করেন।

অভিযোগে সাদুল্লাপুর উপজেলার হিংগারপাড়া উচ্চবিদ্যালয় ও বিএম কলেজের কথিত আইসিটি শিক্ষক মো. মোজাম্মেল হকের ভুয়া নিয়োগের সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে। অভিযোগকারীরা জানান, ভুয়া নিয়োগপ্রাপ্ত মোজাম্মেল হকের টেম্পারিং করা সিএস কপি, জাল সিল-স্বাক্ষর এবং ব্যাকডেট নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিসহ সব কাগজপত্র ভুয়া দেখিয়ে কয়েক লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে তাঁর এমপিও আবেদন অগ্রায়ণ করা হয়েছে। অথচ ২০২৪ সালের ১১ জানুয়ারি উপজেলা কমিটির যাচাই-বাছাইয়ে মোজাম্মেল হকের সিএস কপিতে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার স্বাক্ষর না থাকার বিষয়টি ধরা পড়ে। কিন্তু জালিয়াতি করে সেই সিএস কপি দিয়ে আবেদন করেন তিনি।

একইভাবে মাদারহাট আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে শতভাগ ‘সুবিধাভোগী’ দেখিয়ে দুজনের ভুয়া এমপিও আবেদনের ঘটনা ঘটেছে। সহকারী শিক্ষক সাদেকুল ইসলাম (ভৌতবিজ্ঞান) ও আয়া খালেদা খাতুনের নিয়োগে ভুয়া বিজ্ঞপ্তি, সৃজিত রেজল্যুশন ও টেম্পারিং করা কাগজপত্র ব্যবহার করা হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী ২৮ সেপ্টেম্বর তাঁদের এমপিও আবেদন দাখিল করেন।

অভিযোগকারীদের একজন ইদ্রাকপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, নকিবুল হাসান বৈধ নিয়োগপ্রাপ্তদের এমপিও আবেদন নেন না; বরং ভুয়া নিয়োগপ্রাপ্তদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাঁদের ফাইল অগ্রায়ণ করেন। তাঁর দুর্নীতির কারণে শিক্ষকেরা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

অন্যদিকে, হিংগারপাড়া বিএম কলেজের কথিত আইসিটি শিক্ষক মো. মোজাম্মেল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আগে যাচাই-বাছাইয়ে সিএস কপিতে স্বাক্ষর না থাকার মন্তব্য থাকলেও পরে তা ‘সঠিক হয়েছে’। তবে তিনি বিস্তারিত কিছু না বলে বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি না করার অনুরোধ করেন এবং প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানান।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তা এ বি এম নকিবুল হাসানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি নানা ব্যস্ততার অজুহাতে কথা বলতে রাজি হননি। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার দুপুরের পর সাদুল্লাপুর অফিসে পাওয়া গেলে তিনি বলেন, ‘শত শত শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করেছেন। তিন-চার দিন সময়ের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটারে বসে এসব আবেদন যাচাই করা সম্ভব নয়। ভুয়া ও জালিয়াতি সত্ত্বেও আবেদন অগ্রায়ণের বিষয়ে দায় সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষকের বলে মন্তব্য করে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।

গাইবান্ধা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান বলেন, ভুয়া ও জালিয়াতি করে কোনো শিক্ষক-কর্মচারী আবেদন করলেও এমপিওভুক্তির সুযোগ নেই, এসব আবেদন বাতিল করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফুটপাত দখল, পথচারী রাস্তায়

  • ফুটপাতে অসংখ্য দোকান, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে পথচারীরা
  • বারবার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও কাজ হচ্ছে না: সিটি করপোরেশন
  • চাঁদাবাজদের ধরতে না পারলে এর কোনো সমাধান নেই: সচেতন নাগরিক
জয়নাল আবেদীন, ঢাকা
রাজধানীর ফুটপাত দখল করে বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন এক ব্যবসায়ী। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় চলাচলকারীদের। সম্প্রতি মিরপুরে। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর ফুটপাত দখল করে বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন এক ব্যবসায়ী। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় চলাচলকারীদের। সম্প্রতি মিরপুরে। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়কে ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ দোকান। ফলে প্রতিদিন পথচারীদের চরম দুর্ভোগ হচ্ছে। বাধ্য হয়ে অনেকে ঝুঁকি নিয়ে মূল রাস্তা দিয়ে পার হচ্ছে।

সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বারবার উচ্ছেদ অভিযান চালালেও তাতে কাজ হচ্ছে না। দু-এক দিন পরই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আবার ফুটপাত দখল করছে।

এই অবৈধ দোকানের মূলে রয়েছে চাঁদাবাজি। তাই চাঁদাবাজদের না ধরতে পারলে এর কোনো সমাধান নেই বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন নাগরিক ও বিশেষজ্ঞরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর নতুন বাজার এলাকা, নিউমার্কেট, পল্টন, ধানমন্ডির গ্রিন রোড এলাকা, গুলিস্তান, মতিঝিল, মিরপুর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা মেডিকেল এলাকাসহ বেশির ভাগ এলাকার ফুটপাত দখল করে ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা নানান পণ্যের পসরা সাজিয়েছে। অধিকাংশ ফুটপাতে জামাকাপড়ের দোকান, চাসহ খাবারের দোকান, জুতা, প্রসাধনী ও ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দোকান দেখা গেছে। তবে জামাকাপড়ের দোকানই বেশি। কোথাও কোথাও ফুটপাত ছাড়িয়ে সড়কের পাশে পণ্য সাজিয়ে বসতে দেখা গেছে। এমনকি ওভারব্রিজে রয়েছে ভাসমান দোকান।

পল্টন এলাকায় সড়ক দিয়ে হাঁটছিলেন আবু উবাইদা নামের একজন। ফুটপাত রেখে মূল সড়কে কেন হাঁটছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ফুটপাত দিয়ে হাঁটার জায়গাই তো নেই। সবই তো দোকান। ক্রেতা-বিক্রেতায় গাদাগাদি। বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছি।’

নতুন বাজার এলাকায় আরিফ শিকদার নামের এক পথচারী বলেন, ফুটপাত এখন পথচারীদের জন্য নয়, হকারদের জন্য। আর ফুটপাত দখল নেওয়ার জন্য তাদের তো বড় সিন্ডিকেট রয়েছে।

এদিকে ফুটপাত দখল করে অবৈধভাবে ব্যবসার বিষয়ে কথা বলতে চান না দখলদার ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করতে হয় তাঁদের। কেউ কেউ দৈনিক, সাপ্তাহিক বা মাসিক চুক্তিতে চাঁদা দেন স্থানীয় নেতাদের। আর এর বিনিময়ে ফুটপাতে নির্ধারিত স্থানে ব্যবসা করার অনুমতি মেলে।

চাঁদা দেওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘কে নেবে চাঁদা? আমরা বর্তমানে কাউকে চাঁদা দেই না। তবে কোনো কোনো ব্যবসায়ী উত্তর সিটি এলাকায় চাঁদা দিতে পারে, সেটি আমার জানা নেই।’

সম্প্রতি ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকায় অবৈধ দোকান উচ্ছেদের উদাহরণ টেনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করে আসেন, পরে দেখা যায় আবারও দোকান বসেছে। স্থানীয় প্রতিষ্ঠান এবং লোকজনের সহযোগিতা ছাড়া এসব উচ্ছেদ করা সম্ভব না।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শহরের বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় চাঁদাবাজদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ফুটপাত দখল করা হচ্ছে। যেকোনো অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। উচ্ছেদ কার্যক্রম আরও কার্যকর এবং শক্তিশালী করার পাশাপাশি উচ্ছেদের পর পুনরায় অবৈধ দখল বা স্থাপনা নির্মাণ রোধে আনসার সদস্য নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আসিফ-উজ-জামান খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একদিন উচ্ছেদ করলে, আবার দু-তিন দিন পর তারা হাজির হচ্ছে, এটাই বড় সমস্যা। মানুষেরও কোনো প্রতিবাদ নেই যে কেন ফুটপাতে অবৈধ দোকান দিয়েছে। মানুষও এটার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে নিজের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নেমে চলাফেরা করছে। ৩০ সেকেন্ডের জন্য রাস্তায় নামলেও বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এককভাবে এর সমাধান সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্থানীয় লোকজন, প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন—সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকতে হবে। না হলে উচ্ছেদের পরে ব্যবসায়ীরা আবার বসবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি ও পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ফুটপাত থেকে যারা মাসোহারা নেয়, তাদের যদি সরকার কঠোরভাবে ডিল করে, তাহলে এটা দখলমুক্ত রাখা খুবই সম্ভব। কিন্তু যারা মাসোয়ারা নেয়, রাষ্ট্র তাদের কখনো ধরে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মৌলভীবাজারের ৪টি আসন: নজরে চা-বাগান ও নতুন ভোটার

  • ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকের অপেক্ষায় বিএনপি
  • বিদ্রোহীদের ব্যাপারে কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত
  • কুলাউড়ায় আলোচনায় জামায়াতের আমির
মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
(ওপরে বাঁ থেকে) নাসির উদ্দীন মিঠু, শওকতুল ইসলাম শকু, এম নাসের রহমান, মুজিবুর রহমান চৌধুরী (নিচে বাঁ থেকে) আমিনুল ইসলাম, এম সায়েদ আলী, আব্দুল মান্নান ও মোহাম্মদ আব্দুর রব।
(ওপরে বাঁ থেকে) নাসির উদ্দীন মিঠু, শওকতুল ইসলাম শকু, এম নাসের রহমান, মুজিবুর রহমান চৌধুরী (নিচে বাঁ থেকে) আমিনুল ইসলাম, এম সায়েদ আলী, আব্দুল মান্নান ও মোহাম্মদ আব্দুর রব।

চা-বাগান ও প্রবাসী-অধ্যুষিত জেলা মৌলভীবাজার। জেলার প্রায় ১৬ লাখ ভোটারকে কাছে টানতে জোর প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। ভোটারদের মধ্যে ২ লাখ ৭০ হাজারই ৯২টি চা-বাগানের। সাধারণত ভোটও সবচেয়ে বেশি পড়ে তাঁদের। এ ছাড়া রয়েছেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নতুন ভোটার। তাই বিশেষ করে চা-বাগান এলাকা এবং নতুন ভোটারদের প্রতি বাড়তি নজর দিচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। কেননা অনেক ক্ষেত্রে ভোটের ফল নির্ধারণে তাঁদের নির্ণায়ক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন বলেন, কিছুদিনের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক হবে। এরপর সবাই মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়বে। দলের বিরুদ্ধে কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে দল থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ইয়ামীর আলী বলেন, ‘আমরা দলের ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। তবে জোট হলে শরিকদের আসন ছাড় দিতে কোনো আপত্তি নেই।’

মৌলভীবাজার-১

জুড়ী ও বড়লেখা নিয়ে গঠিত আসনে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাসির উদ্দীন মিঠু। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী আমিনুল ইসলাম। খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হতে পারেন কাতারপ্রবাসী লুকমান আহমদ। এনসিপি থেকে আলোচনায় আছেন জাকির চৌধুরী ও তামিম আহমেদ। জাতীয় পার্টির নেতা রিয়াজ উদ্দিনও প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এই আসনে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ২২ হাজার।

মৌলভীবাজার-২

কুলাউড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটিতে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা আমির প্রকৌশলী এম সায়েদ আলী। দীর্ঘদিন ধরে নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকায় প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তবে দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান এই আসনের বাসিন্দা হওয়ায় গুঞ্জন রয়েছে, শেষ পর্যন্ত তিনি এখান থেকে প্রার্থী হতে পারেন। কেন্দ্রীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি গত কয়েক মাসে এলাকায় বেশ কিছু অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন তিনি। স্থানীয় নেতা-কর্মীরাও তাঁকে প্রত্যাশা করছেন। মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ইয়ামীর আলী বলেন, ডা. শফিকুর রহমানের জন্মস্থান হওয়ায় এলাকাবাসী ও তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এখানে তাঁকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান। আশা করি, কেন্দ্র এই দাবি পূরণ করবে।

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের সাবেক উপজেলা সভাপতি শওকতুল ইসলাম শকু। তবে তাঁকে মেনে নিতে রাজি নন আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আবেদ রেজা। প্রাথমিক মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করেছেন তাঁরা। আনজুমানে আল-ইসলাহ নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী ফজলুল হক খান সাহেদও প্রার্থী হতে পারেন। জাতীয় পার্টির (জাফর) মনোনয়ন পেতে পারেন সাবেক এমপি নবাব আলী আব্বাছ খান। খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হতে পারেন সাইফুর রহমান। এই আসনে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ।

মৌলভীবাজার-৩

মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলা নিয়ে এই আসন। এখানে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ছেলে এম নাসের রহমান। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক জেলা আমির আব্দুল মান্নান। খেলাফত মজলিসের মনোনয়ন পেতে পারেন রাজনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ বিলাল। এনসিপি থেকে এহসানুল হক জাকারিয়ার নাম শোনা যাচ্ছে। এই আসনে ভোটার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ। ভোটের মাঠে দৃশ্যত এম নাসের রহমানের পাল্লা ভারী। তবে হাল ছাড়তে রাজি নয় জামায়াত। নেতা-কর্মীদের নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন আব্দুল মান্নান।

মৌলভীবাজার-৪

শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ নিয়ে গঠিত আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী মুজিবুর রহমান চৌধুরী (হাজি মুজিব)। তবে তাঁর জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারেন দলের আরেক নেতা মহসিন মিয়া মধু। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সাবেক মেয়র মহসিন আসনটি থেকে স্বতন্ত্র নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুর রব। এনসিপি থেকে প্রীতম দাশ ও খেলাফত মজলিস থেকে নূরুল মোত্তাকিন জুনায়েদ মনোনয়ন পেতে পারেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন শেখ নুরে আলম হামিদি। এই আসনের প্রায় সাড়ে ৪ লাখ ভোটারের মধ্যে শুধু চা-বাগানের ভোটার ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি। ফলে ভোটের ফল নির্ধারণে এসব বাগানের ভোট বড় ভূমিকা রাখবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত