Ajker Patrika

ইসকনের সাবেক নেতা চিন্ময়ের জামিন নামঞ্জুর, সহিংসতার পর দিনভর উত্তপ্ত চট্টগ্রাম

 নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রাম আদালতে ইসকন নেতা ও সনাতন সম্মিলিত জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুরের পর চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ ও সহিংসতায় রাষ্ট্রপক্ষের এক আইনজীবী নিহতের ঘটনায় দিনভর উত্তপ্ত ছিল বন্দরনগরী। গতকাল সোমবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময়কে গ্রেপ্তার করে ঢাকা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে তাঁকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করার পর থেকে উত্তেজনার শুরু। তাঁর সমর্থক একদল বিক্ষোভকারী প্রায় তিন ঘণ্টা তাঁর প্রিজনভ্যান আটকে রাখে। পুলিশ সরাতে গেলে তাঁদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে।

এ সময় বিক্ষোভকারীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, এপিবিএন ও বিজিবি সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ওই বিক্ষোভে অংশ নেওয়া লোকজনদের মধ্যে চট্টগ্রাম আদালতে কর্মরত সনাতন ধর্মাবলম্বী আইনজীবীরাও ছিলেন।

পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানো ও রাষ্ট্রপক্ষের এক আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার মধ্য দিয়ে দিনভর পরিস্থিতি উত্তপ্ত ও থমথমে ছিল। বিক্ষোভের মধ্যে অনেকের হাতে দা-বটিসহ বিভিন্ন দেশি অস্ত্র থাকতে দেখা গেছে।

যেভাবে বিক্ষোভ ও সহিংসতার শুরু হয়

গতকাল সোমবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। পরে তাঁকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আজ মঙ্গলবার তাঁর বিরুদ্ধে সম্প্রতি এক বিএনপি নেতার (পরে বহিষ্কৃত) দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে চট্টগ্রাম আদালতে তোলা হয়। এ সময় চিন্ময়ের আইনজীবীরা তাঁর জামিন আবেদন করেন। পরে আদালত চিন্ময়ের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। চিন্ময়কে গ্রেপ্তারের পর গতকাল সোমবার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর জামালখান ও চেরাগি পাহাড় মোড়ে বিক্ষোভ হয়।

পুলিশের সূত্র জানায়, সোমবার রাতেই চিন্ময়কে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আজ বেলা ১১টার দিকে চিন্ময়কে আদালতে তোলা হয়। এর আগে আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকেন তাঁর সমর্থকেরা। এ সময় আদালত জুড়ে পুলিশ, এপিবিএনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা ছিল।

চিন্ময়ের জামিন নামঞ্জুর

মঙ্গলবার সকালে আদালতে তোলার পর চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালত চিন্ময়ের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা

দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে সনাতনী জাগরণ জোটের এই মুখপাত্রকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাহারায় প্রিজনভ্যানে ওঠানো হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীদের বাধার কারণে প্রিজনভ্যানটি আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বের হতে পারেনি। প্রায় তিন ঘণ্টা প্রিজনভ্যান আটকে রাখার পর বিকেল ৩টা নাগাদ পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ বাঁধে।

বিক্ষোভকারীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, এপিবিএন ও বিজিবি সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

একপর্যায়ে আসামি চিন্ময়কে প্রিজন ভ্যান থেকে নামিয়ে পুলিশের একটি পিকআপে তুলে প্রচলিত সড়ক দিয়ে না গিয়ে আদালতের পেছনে বিকল্প পথ দিয়ে চট্টগ্রাম কারাগারে নেওয়া হয়। তাঁকে যে গাড়িতে করে নেওয়া হয়, সেটির সামনে-পেছনে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী ছিল। তাঁকে কারাগারে নেওয়ার সময়ও বিক্ষোভকারীরা বিক্ষিপ্তভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়ে।

বিক্ষোভকারীরা আদালতে যাওয়া-আসা সড়ক লালদীঘি এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। এতে যান চলাচল ব্যাহত হয়। এ সময় সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান ঘটনাস্থলে থাকতে দেখা যায়।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল কাদের চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, সংঘর্ষ চলাকালে বিক্ষোভকারীরা একটি মসজিদসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা ভাঙচুর চালায়। এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। আহতদের সংখ্যা এখনই বলা যাচ্ছে না।’

আইনজীবী নিহতের পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত

মঙ্গলবার বিকেলে সংঘর্ষে ১৯ জন হতাহতের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম আদালতে কর্মরত অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম নামে রাষ্ট্রপক্ষের এক আইনজীবী নিহত হয়েছেন। চট্টগ্রামে লোহাগাড়া উপজেলার জালাল উদ্দিনের ছেলে সাইফুল ইসলাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন বলে জানান তাঁর সহকর্মী আদালতের আরেক সহকারী পিপি অ্যাডভোকেট এনামুল হক।

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম আদালতে সংঘর্ষের ঘটনায় বিকেলে হতাহত ৭ জনকে চমেক হাসপাতালে আনা হয়। এর মধ্যে একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। বাকিদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।’

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) কাজী মো. তারেক আজিজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনার মধ্যে পড়ে একজন নিহত হয়েছেন। নিহতের শরীরের লক্ষণ দেখে মনে হয়েছে তাঁকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তবে কে বা কারা তাঁর ওপর হামলা চালিয়েছে সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এটা তদন্ত চলছে।’ নিহতের ঘটনায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।

অতিরিক্ত উপকমিশনার বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের ১২ জন সদস্য ও ৬ জন সাধারণ মানুষ আহত হয়েছেন বলে আমরা সর্বশেষ তথ্য পেয়েছি।’

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ চলাকালে চট্টগ্রাম আদালতের প্রবেশমুখের সামনে লালদীঘি সড়কে রঙ্গম টাওয়ারের সামনে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তবে কে বা কারা এই হামলায় জড়িত ছিল তা নিশ্চিত করা যায়নি। তবে সংঘর্ষ চলাকালে বিক্ষোভকারীদের একটি দলকে দা-বটি দিয়ে সেখানে অবস্থান করতে দেখা গেছে।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম রাজ্জাক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সংঘর্ষের সময় ইসকন সমর্থকেরা অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলামকে ধরে নিয়ে রঙ্গম টাওয়ার এলাকায় কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেছে। এ হত্যার প্রতিবাদে বুধবার আদালতে কর্মবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে।’

এছাড়া বিকেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রামে ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। আইনজীবীকে হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রামের আইনজীবীরা বিক্ষোভ মিছিল করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে এখনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি ভারত: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

রংপুর প্রতিনিধি
রংপুরে সার্কিট হাউসে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
রংপুরে সার্কিট হাউসে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত দেয়ার ব্যাপারে ভারত এখনও ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। ট্রাইব্যুনালের রায় নিয়ে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে, আমরাও তাদের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছি। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে রংপুর সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি। রংপুর অঞ্চলে চার দিনের সফরে এসেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা তো চেয়েছি যে তাকে (শেখ হাসিনাকে) ফেরত পাঠানো হোক। যেহেতু উনি একজন কনভিক্টেড, যেহেতু সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা তাকে একটি শাস্তি দিয়েছে। কিন্তু আমরা ইতিবাচক কোনো সাড়া এখন পর্যন্ত পাইনি। এটা নিয়ে আমার মনে হয় স্পেকুলেট না করাই ভালো। দেখা যাক কী হয়। আমরা তো চেয়েছি খুব, এ ধরনের ঘটনায় তো ঝট করে একদিনে সাত দিনে কোনো পরিবর্তন ঘটে না। আমরা অপেক্ষা করব, দেখি, ভারতের পক্ষ থেকে কি আসছে রিঅ্যাকশন।’

তৌহিদ হোসেন বলেন, একটা রিঅ্যাকশন আমরা দেখেছি যেটা, সেটা হলো তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে, এরকম একটা কথা আসছে আমাদের। দেখুক তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে।

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরে কোনো তথ্য নেই বলে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, "তারেক সাহেব কখন আসবেন এই সম্বন্ধে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। উনার স্ত্রী সম্ভবত আসছেন বা পৌঁছে গেছেন হয়তো ইতিমধ্যে। আজকে সকালে পৌঁছার কথা ছিল। বেগম জিয়াকে আজকে নেওয়া হচ্ছে না, আমি ঢাকা থেকে আজকে সকালে জানলাম যে, আজকে নেওয়া হচ্ছে না। একটু টেকনিক্যাল প্রবলেম দেখা দিয়েছে ওই এয়ারক্রাফট নিয়ে। সেক্ষেত্রে হয়তো এক-আধ দিন দেরি হতে পারে। "

আরাকান আর্মি বাংলাদেশিদের ধরে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, "আরাকান আর্মির সাথে আমাদের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা সম্ভব নয়। তারা একটা নন-স্টেট অ্যাক্টর। আমরা স্টেট হিসেবে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা যেমন মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ, থাইল্যান্ড বা ভারতের সাথে করতে পারি সেটা তাদের সাথে করতে পারি না। তবে আমাদের স্বার্থ যেহেতু আছে, আমাদের দেখতে হবে। এই ঘটনা যাতে কমে বা আদৌ না ঘটে, এটার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। "

এছাড়াও নীলফামারীতে প্রস্তাবিত চীনা হাসপাতালের কার্যক্রম অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত শুরু করে যেতে চায় বলেও জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। একই সঙ্গে নির্বাচিত সরকার এলে এই কাজ সমাপ্ত করবে বলেও আশা তার। এ সময় পিছিয়ে পড়া রংপুরের প্রত্নতাত্ত্বিকসহ সবক্ষেত্রে নেয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সরকারের সদিচ্ছার কথা জানান তৌহিদ হোসেন।

এরপর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সপরিবারে রংপুর জমিদার বাড়ি তাজহাটে পরিদর্শনে যান। এছাড়াও বিকেলে রংপুর সার্কিট হাউসে চা-চক্রের কথা রয়েছে তৌহিদ হোসেনের। আগামীকাল রংপুরের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং রংপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জিলা স্কুল পরিদর্শন করার কথাও রয়েছে তার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাতিয়ায় ৫৬০০ কেজি জাটকা ইলিশ জব্দ, এতিমখানায় বিতরণ

­হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
কোস্ট গার্ডের অভিযানে জব্দ জাটকা ইলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
কোস্ট গার্ডের অভিযানে জব্দ জাটকা ইলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

নোয়াখালীর হাতিয়ার জাগলার চর এলাকার মেঘনা নদীতে অভিযান চালিয়েছে কোস্ট গার্ড। এ সময় একটি নৌকা থেকে ৫ হাজার ৬০০ কেজি জাটকা ইলিশ জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় আটক কয়েকজন মাঝিমাল্লার কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কোস্ট গার্ড হাতিয়ার একটি দল এই অভিযান চালায়। জব্দ করা জাটকাগুলোর মূল্য প্রায় ২৮ লাখ টাকা।

কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট মো. আবুল কাশেম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কোস্ট গার্ড। অভিযানে মেঘনা নদীর জাগলার চর এলাকায় একটি কাঠের নৌকায় তল্লাশি করা হয়। ওই নৌকা থেকে ৫ হাজার ৬০০ কেজি জাটকা জব্দ করা হয়। এ সময় মাঝিদের মুচলেকা নিয়ে নৌকা ছেড়ে দেওয়া হয়। জব্দ মাছগুলো মৎস্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এতিমখানা ও দুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। মৎস্য সম্পদ রক্ষায় কোস্ট গার্ডের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাঠে পড়ে ছিল মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের সালথায় উৎপল সরকার (৩৫) নামের এক মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গৌরদিয়া এলাকার কালীতলা ব্রিজ-সংলগ্ন মাঠ থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় মাঠ-সংলগ্ন সেতু থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় থাকা ফিরোজ মোল্যা নামের এক ভ্যানচালককে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন।

নিহত উৎপল ফরিদপুর জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের রনকাইল গ্রামের অজয় সরকারের ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও আড়াই বছর বয়সী এক শিশুসন্তান রয়েছে।

থানা-পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ ভোরে সড়কের পাশে ফাঁকা মাঠে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি লাশ দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন। পাশেই একটি সেতুর সঙ্গে একই গ্রামের ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় বেঁধে রাখা হয়েছিল। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি খুলে বলেন তিনি।

ভ্যানচালকের বরাত দিয়ে রনকাইল গ্রামের বাসিন্দা ও প্রতিবেশী কাজী শাহীন বলেন, উৎপল সরকার ব্যাটারিচালিত ভ্যানে করে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে মাছ কিনতে যাচ্ছিলেন। পথে অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চার ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্রের মুখে ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে ব্রিজের রেলিংয়ে বেঁধে ফেলে। তারা উৎপলের সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা লুট করে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সালথা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কে এম মারুফ হাসান রাসেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই থেকে তিনজন দুর্বৃত্ত ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে এটাকে ডাকাতি বলা যায় না। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষে মূল কারণ বলা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসার দরজা ভেঙে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

চবি প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওমর ফারুক সুমন নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সুমন খুলশীতে তাঁর মামার বাসায় থাকতেন। তাঁর বড় ভাইও সেখানে থাকেন। দুই দিন আগে সুমনের মামা পুরো পরিবার নিয়ে তুরস্কে বেড়াতে যান। বাসায় সুমন ও তাঁর বড় ভাই ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সুমন। ফোনে তাঁর বড় ভাই কখন বাসায় ফিরবেন জানতে চান সুমন। বড় ভাই জানান যে তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। এর কিছুক্ষণ পর বড় ভাই সুমনকে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। পরে বাড়ি থেকে সুমনের মা ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি বড় ভাইকে জানান। এতে উদ্বেগ দেখা দিলে বড় ভাই বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে দিয়ে বাসা চেক করান।

দারোয়ান কলিংবেল বাজিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে বড় ভাইকে জানালে তিনি দ্রুত বাসায় এসে সুমনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে চিরকুট মিলেছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমি সুমন, ওমর ফারুক সুমন। আমার কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। আর আমার কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভালো থাকবেন।’ এর আগে ১ ডিসেম্বর লেখা আরেকটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল—‘আশাই জীবন, আশাই মরণ, ব্যর্থতা হতাশা-অন্ধকারে নিয়ে যায়।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান বলেন, ‘সুমন ও তাঁর বড় ভাই একসঙ্গে মামার বাসায় থাকতেন। মামা ও মামি বর্তমানে বিদেশে আছেন। বড় ভাই সন্ধ্যায় বাইরে যান। সে সময় সুমন বাসায় একা ছিলেন। বড় ভাই বাসায় ফিরে এসে বারবার ডাকলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে সুমনের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও আমরা সব সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত