Ajker Patrika

ছাত্ররাজনীতি: ঢাবির সিদ্ধান্তে বাড়ল উত্তাপ, ডাকসু নির্বাচন নিয়ে সংশয়

  • ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের’ দাবির মুখে নিষেধাজ্ঞা বহাল
  • ষড়যন্ত্র বলছে ছাত্রদল, বিরোধিতা আরও সংগঠনের
  • হল সংসদগুলোর নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে
  • তফসিল ঘোষিত সময়ে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে সংশয়
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২৫, ১৫: ৪৩
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের হল কমিটি ঘোষণার প্রতিবাদে গত শুক্রবার রাতে ক্যাম্পাসে মিছিল হয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে। এই উত্তাপের মধ্যেই গতকাল ক্যাম্পাসে হাততালি দিয়ে মিছিল করেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।	ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের হল কমিটি ঘোষণার প্রতিবাদে গত শুক্রবার রাতে ক্যাম্পাসে মিছিল হয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে। এই উত্তাপের মধ্যেই গতকাল ক্যাম্পাসে হাততালি দিয়ে মিছিল করেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন আগামী ৯ সেপ্টেম্বর। এই নির্বাচনের মাত্র এক মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্র রাজনীতিতে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখায় ক্যাম্পাসে সক্রিয় ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে বিরোধ আরও বেড়েছে। বেশির ভাগ ছাত্রসংগঠন এই নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করলেও কোনো কোনো ছাত্রসংগঠন এই সিদ্ধান্তকে সমর্থনও করেছে। ছাত্রসংগঠনগুলোর পাল্টাপাল্টি অবস্থানে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলে আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে হল সংসদে কী ছাত্রসংগঠনগুলো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে, নাকি হলে নির্দলীয় প্রার্থী থাকবেন–এমন প্রশ্নও এসেছে সামনে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, হল পর্যায়ের ছাত্ররাজনীতি নিয়ে তাদের আলাপ-আলোচনা চলছে। এ নিয়ে শিগগির সিদ্ধান্ত হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া গতকাল শনিবার রাজশাহীতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, তিনি মনে করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ছাত্রসংগঠনগুলো যদি নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করত, তাহলে তাদের মধ্যে মুখোমুখি বিদ্বেষমূলক পরিস্থিতি এবং হলে রাজনীতি নিষিদ্ধের মতো সিদ্ধান্ত আসত না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিষিদ্ধঘোষিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগবিহীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সক্রিয় হয়ে ওঠে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন। ক্যাম্পাসগুলোতে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরিতে মাঠে নামে বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন এবং বামপন্থী বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন। গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমর্থিত বলে পরিচিত।

ইতিমধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের মধ্যে প্রকাশ্য বিরোধ হয়েছে। একে অন্যকে দোষারোপ করেছে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু, ১১ সেপ্টেম্বর রাকসু ও ১৫ সেপ্টেম্বর জাকসু নির্বাচন হওয়ার কথা। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে হল সংসদের নির্বাচনও হয়।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ছাত্রসংগঠনগুলো আরও জোরেশোরে তৎপর হয়। নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে সংগঠনগুলো সভা-সমাবেশ, বিভিন্ন কর্মসূচিতে শক্তি প্রদর্শন করছে। এই আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কোনো কোনো সংগঠন প্রতিপক্ষকে বিষোদগারও করছে। এ অবস্থায় গত শুক্রবার রাতের ঘটনা পরিস্থিতিতে নতুন উত্তাপ যুক্ত করল। এ জন্য ছাত্রদল ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ প্রতিদ্বন্দ্বী একটি সংগঠনের ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতিতে নিষেধাজ্ঞা বহাল হয়েছে শুক্রবার ঢাবির ১৮টি হলে ছাত্রদল আহ্বায়ক কমিটি দেওয়ার পর হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে রাতেই ‘সাধারণ শিক্ষার্থীর’ ব্যানারে বিক্ষোভের পর।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ১৮টি হলে ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার গভীর রাতে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীর’ ব্যানারে একদল শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করে হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানান। একপর্যায়ে রোকেয়া হল ও শামসুন নাহার হলের ছাত্রীদের একাংশ হলের ফটকের তালা ভেঙে বের হয়ে এসে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। রাত ১টার দিকে তাঁরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন।

দেড় ঘণ্টা আলোচনার পর ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান ও প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে প্রকাশ্য ও গুপ্ত ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দেন। এ সময় প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে প্রকাশ্য ও গুপ্ত রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে। এ ঘোষণার পর সেখানে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা হাততালি দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।

ঢাবি শাখা ছাত্রদল গতকাল বিকেলে ক্যাম্পাসে স্লোগান ছাড়া মিছিল করেছে। মিছিলটি ভিসি চত্বর থেকে শুরু হয়ে টিএসসিতে গিয়ে শেষ হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রগুলো বলছে, শুক্রবার রাতের বিক্ষোভে ইন্ধন দিয়েছে ছাত্রদলের প্রতিদ্বন্দ্বী একাধিক ছাত্রসংগঠন। এর মূল কারণ ক্যাম্পাসে ৫ আগস্ট-পরবর্তী আধিপত্য ধরে রাখা, গোপনে সংগঠনের বিস্তার, ডাকসু নির্বাচনের হিসাব-নিকাশ এবং দেশের সামগ্রিক রাজনীতির কৌশল।

হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ রাখাকে ছাত্রদল দেখছে ষড়যন্ত্র হিসেবে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে একটি বিশেষ গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে ছাত্রদলের জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতা আব্দুল কাদের গতকাল এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, শৃঙ্খলা কমিটি কিংবা ব্যাচ প্রতিনিধির নামে ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা হলগুলোতে ছায়া প্রশাসন জারি রেখেছেন। হলের শৃঙ্খলা কমিটির অধিকাংশই ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে যুক্ত।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে ছাত্রশিবির হলভিত্তিক কোনো রাজনীতি করে না। তাঁদের সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড টিএসসি, মধুর ক্যানটিনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য এলাকায় পরিচালনা করা হয়। সেবামূলক যেসব কার্যক্রম রয়েছে সেগুলো পরিচালনা করতে হলে কার্যক্রম চালান। দলীয় বা রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচি তাঁরা হল এলাকায় করেননি।

ঢাবি শাখা ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি মেঘমল্লার বসুও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি যদি থাকে এবং বিশ্ববিদ্যালয় যদি একটি জেলা ইউনিট হয়, তবে এর অধীনে অন্যান্য শাখা ইউনিট থাকা স্বাভাবিক। রাজনীতি করাটাও একটা অধিকারের বিষয়। কারও যেমন রাজনীতি না করার অধিকার আছে, তেমনি রাজনীতি করারও অধিকার আছে।

তফসিল অনুযায়ী আগামী মাসে ডাকসু নির্বাচন থাকায় হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হল সংসদের নির্বাচনের প্রক্রিয়া কী হবে, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের মতো হল সংসদেও কী সংগঠনগুলো প্যানেল দিতে পারবে, নাকি প্রার্থীরা নির্দলীয়ভাবে প্রার্থী হবেন? কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি পরিষ্কার না করায় এ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। ডাকসু নির্বাচন পেছানোর এবং এই নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হওয়ার সংশয়ও প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।

জানতে চাইলে ঢাবির প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন পেছানোর সম্ভাবনা নেই, অবশ্যই নির্বাচন হবে। হল পর্যায়ে ছাত্ররাজনীতি কেমন হবে তা নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করছি। আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হইনি। আশা করি আমরা শিগগির একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হব।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিশ্লেষকেরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার দরকার কেন? বুদ্ধিটা আসলে কার? কেন? রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের কথা না ভেবে পুরোটা বন্ধ করার চেষ্টা যাঁরা করছেন, তাঁরা একটু কল্পনা করেন তো ২০২৪ সালে শিক্ষার্থীরা রাজনীতি না করলে কী হতো?’ তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ’৭৩-এর আদেশে চলে। এ আদেশ অনুযায়ী এ রকম একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার কার এবং কী প্রক্রিয়ায় সেটা হতে হবে?’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি, লেজুড়বৃত্তিভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি, গুপ্ত রাজনীতির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আমি মনে করি পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে এ বিষয়ে আমাদের ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

এদিকে ঢাবি হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ রাখার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিষয়ে গতকাল রাজশাহীতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলগুলোয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে। আমাদের ছাত্রসংগঠনগুলোর আরেকটু ম্যাচিউরড হওয়ার সুযোগ ছিল। এখন শিক্ষার্থীবান্ধব একটা রূপরেখা প্রণয়ন করে বোঝাপড়া হতে পারে এবং তার ভিত্তিতে আগামীতে চলতে পারে।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের ৯ শতাংশ নারী ধর্ষণের শিকার: বিএনপিএস

কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজার শহরের একটি হোটেলের সম্মেলনকক্ষে আজ বুধবার বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ আয়োজিত গোল টেবিল বৈঠক। ছবি: আজকের পত্রিকা
কক্সবাজার শহরের একটি হোটেলের সম্মেলনকক্ষে আজ বুধবার বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ আয়োজিত গোল টেবিল বৈঠক। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে বসবাস করা ৫৫ শতাংশ নারী ও কন্যা শিশু প্রতিনিয়ত সুরক্ষা, শিক্ষা, পুষ্টি ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, আশ্রয়শিবিরগুলোয় ৯ শতাংশ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) কক্সবাজার শহরের একটি হোটেলের সম্মেলনকক্ষে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) আয়োজিত গোল টেবিল বৈঠকে এ তথ্য তুলে ধরে সংস্থাটি।

বিএনপিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সাল থেকে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে তারা কক্সবাজারের ৩৩টি শিবিরে বসবাস করছে, যা বিশ্বে বৃহত্তম শরণার্থী আশ্রয়স্থলগুলোর একটি। এই জনগোষ্ঠীর ৫২ শতাংশের বেশি নারী ও কন্যা।

সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে আট বছরেরও বেশি সময়ে কক্সবাজারের প্রায় ৫ লাখ মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই দীর্ঘস্থায়ী সংকটের প্রভাবে স্থানীয় জনগোষ্ঠী জীবিকা, মজুরি, বন ও জলসম্পদ, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক সংহতির ওপর ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে পড়েছে। ফলে এটি শুধু শরণার্থী সংকট নয়; এটি মানবিকতা, উন্নয়ন এবং শান্তির এক যৌথ চ্যালেঞ্জ।

‘শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অধিকার ও দায়িত্ব’ শীর্ষক এ গোল টেবিল বৈঠক সঞ্চালনা করেন বিএনপিএসের উপপরিচালক নাসরিন বেগম। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (যুগ্ম সচিব) মোহাম্মদ শামসুদ্দৌজা নয়ন। এ ছাড়া শরণার্থী ত্রান ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এম এ সানোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ পরিবশে আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য হুমায়রা বেগমসহ সংশ্লিষ্টরা বক্তব্য রাখেন।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শামসুদ্দৌজা নয়ন বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আন্তর্জাতিক অর্থ সহায়তা কমে এসেছে। এর ফলে সামাজিক নিরাপত্তা সংকট তৈরি হচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নারীরা।

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপত্তা, খাদ্য, আশ্রয়, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং ও সহিংসতা থেকে সুরক্ষার অধিকার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কাঠামোর অধীনে নিশ্চিত করা নৈতিক ও আইনগত দায়িত্ব। একইভাবে, আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়েরও টেকসই উন্নয়ন, পরিবেশ সুরক্ষা, সম্মানজনক কাজ এবং জনসেবায় ন্যায্য প্রবেশাধিকারের জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যবিপ্রবির প্রথম উপাচার্য রফিকুল ইসলাম মারা গেছেন

­যশোর প্রতিনিধি
মো. রফিকুল ইসলাম সরকার। ছবি: সংগৃহীত
মো. রফিকুল ইসলাম সরকার। ছবি: সংগৃহীত

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরকার মারা গেছেন (ইন্না...রাজিউন)। আজ বুধবার সকালে ঢাকার নিজ বাসা থেকে বের হয়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তাঁকে একটি বেসরকারি বিশেষায়িত হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরকার যবিপ্রবি স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক। পরবর্তীতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। সেখানে তিনি কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি কৃষিবিদ গ্রুপের চেয়ারম্যান ও যবিপ্রবির রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এ ছাড়া তিনি একজন কৃষি বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলী হিসেবে দেশের কৃষি খাতের যান্ত্রিকীকরণ ও আধুনিকায়নে দীর্ঘ পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে কৃতিত্বের সঙ্গে অবদান রেখেছেন।

এদিকে, ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরকারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হোসেন আল মামুন, রিজেন্টবোর্ড সদস্যবৃন্দসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার।

এক শোক বার্তায় যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ বলেন, রফিকুল ইসলাম সরকার ছিলেন একজন সৎ, মানবিক, ধর্মভীরু ও দায়িত্বশীল মানুষ। যবিপ্রবির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজ অবধি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতিতে নিরলস পরিশ্রম করেছেন।

তিনি ছিলেন একজন দক্ষ প্রশাসক এবং বরেণ্য কৃষি বিজ্ঞানী। যবিপ্রবির সূচনালগ্নে তার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও দূরদর্শী পরিকল্পনা বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আজকের এই অবস্থানে পৌঁছাতে ভিত গড়ে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসেবে তিনি শূন্য থেকে একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার যে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিলেন, তা যবিপ্রবি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১০ কিলোমিটার যানজট

সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ২৪
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে কাঁচপুর সেতু থেকে লাঙ্গলবন্দ পর্যন্ত ১০ কিলোমাটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে একটি ট্রাক দুর্ঘটনার পর দীর্ঘ সময় সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হওয়ায় এ যানজট তৈরি হয়।

এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে আটকে থেকে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক, ব্যক্তিগত যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রাত সাড়ে ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মহাসড়কে যানজট দেখা গেছে।

কাঁচপুর হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী জানান, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে লাঙ্গলবন্দ ব্রিজ এলাকায় একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতুর রেলিংয়ে সজোরে আঘাত করে। ট্রাকটিতে প্রায় ২৭ টন মালামাল বোঝাই ছিল। দুর্ঘটনায় সেতুর রেলিং ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তিনি আরও জানান, ট্রাকটিতে অতিরিক্ত মালামাল থাকায় রেকার দিয়ে সরানো সম্ভব হয়নি। ফলে প্রথমে অন্য একটি ট্রাকে মালামাল স্থানান্তরের কাজ শুরু করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময় লাগায় দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাকটি বিকেলের আগে সরানো যায়নি। এর ফলে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রামমুখী লেনে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট। ছবি: আজকের পত্রিকা

পণ্যবাহী ট্রাকচালক শাহ আলম জানান, দুর্ঘটনার কারণে রাস্তা বন্ধ ছিল বুঝতে পারছি। কিন্তু এত সময় লাগবে ভাবিনি। মালামাল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এতে আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে।

আরেক যাত্রী আক্তার হোসেন বলেন, আমি চট্টগ্রামে যাচ্ছি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু তিন ঘণ্টা ধরে একই জায়গায় আটকে আছি। ছোট বাচ্চা নিয়ে খুব বিপদে পড়েছি।

কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে পুলিশের একাধিক টিম কাজ শুরু করে। বিকেল নাগাদ মালামাল সরিয়ে ট্রাকটি সড়ক থেকে অপসারণ করা হলে ধীরে ধীরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

কাঁচপুর হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমাদের একাধিক টিম কাজ করছে। টানা তিন দিনের ছুটি থাকায় মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেশি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মগবাজারে ককটেল বিস্ফোরণে নিহতের মরদেহ ঢামেক মর্গে

ঢামেক প্রতিবেদক
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৪৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর মগবাজারে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত সিয়াম মজুমদারের (২১) মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে হাতিরঝিল থানা পুলিশ মরদেহটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন।

হাতিরঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইদুর রহমান জানান, সিয়াম মজুমদারের (২১) বাড়ি খুলনার দিঘুলিয়া উপজেলার কলোনীতে। তার বাবার নাম আলী আকবর মজুমদার। পরিবারের সাথে নিউ ইস্কাটন দুই হাজার গলির ১০১ নম্বর বাসায় থাকতেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার তার মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হবে।

নিহত সিয়ামের সহকর্মী অহিদুল হাওলাদার জানান, নিউ ইস্কাটনে ‘জাহিদ কার ডেকোরেশনের’ কর্মচারী সিয়াম। গত ৩-৪ বছর যাবৎ এখানে কাজ করে সে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে দোকানে কাজ সেরে চা পান করার জন্য বের হয়েছিল সিয়াম। চা পান করেই চলে আসবে। এর আধাঘণ্টা পর দোকানে এসে কয়েকজন খবর দেয়, তাদের দোকানের কর্মচারী সিয়াম মারা গেছে। রাস্তায় তার মরদেহ পড়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে তারা দোকান থেকে ঘটনাস্থলে গিয়ে সিয়ামের রক্তাক্ত মৃতদেহ দেখতে পান। সিয়াম অবিবাহিত ছিল। তার বাবা সিএনজি অটোরিকশা চালক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত