বিনদ ঘোষাল

এই লেখাটি লিখতে বসে প্রথমে যে কথাটি মনে হচ্ছে তা হলো, নারায়ণ দেবনাথের কারণেই আমার অতি দ্রুত বাংলা অক্ষরজ্ঞান হয়েছিল। কীভাবে? সে কথা একটু বলি।
আমি তখন সবে পাঁচ বছরে পা দিয়েছি। উনিশ শ সত্তরের দশকে পাঁচ বছর বয়সের আগে ইশকুলে ভর্তি করানো যেত না। তাই পাঁচে পড়তেই বাবা আমাকে নবগ্রামের শিশু ভারতী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেজি ওয়ানে ভর্তি করে দিলেন। ভর্তি হয়েছি কি হইনি অত সব বোঝার ক্ষমতা হয়নি, তবে একদিন লোডশেডিংয়ের সন্ধেবেলায় বারান্দায় বসে রয়েছি, দেখলাম বাবা দোকান থেকে আমার জন্য অনেক রংচঙে বই এনেছেন। সেই সব বইয়ের মধ্যে বর্ণপরিচয় নামের একটা বই ছিল আর ছিল নন্টে-ফন্টের নানান কীর্তি নামের একটা বই। সাদাকালো সেই বইটার মলাটে একটা মোটা, টেকো মানুষের রাগী মুখ আর দু’জন আমার থেকে একটু বড় ছেলের হাসি-হাসি মুখ। সেই বইটার পাতা ওল্টালাম। তখন মা আমাকে বাড়িতে অ আ ক খ শেখাচ্ছেন। খুব অল্পই শিখেছি।
বইয়ের পাতায় পাতায় দেখলাম অনেক মজার ছবি। দুটো ছেলে অনেক হাসছে, মজা করছে। আমার বাবার মতো ধুতি-পাঞ্জাবি পরা ভুঁড়িওয়ালা একটা লোক খুব রাগী-রাগী মুখ করে কখনো ওদের পেটাচ্ছে, কখনো তাড়া করছে। কিন্তু ছবিগুলোর মাথায় কী লেখা রয়েছে ভালোভাবে পড়ে উঠতে পারছি না। দিদিকে জিজ্ঞাসা করলাম। দিদি পড়ে শোনাল। খুব মজা লাগল শুনে। মনে জেদ চাপল এমন মজার লেখা নিজেই পড়ব। কিন্তু তার জন্য খুব দ্রুত বাংলা শিখতে হবে। সেদিন থেকেই খুব মন দিয়ে ফেললাম পড়াশোনায়। বর্ণ-পরিচয়ের পাশাপাশি আমার নন্টে-ফন্টের নানান কীর্তি পড়া শুরু। পাড়ায় আমার বয়সী বন্ধুদের মধ্যে সব থেকে আগে আমি পুরো বাক্য লিখতে ও পড়তে শিখেছিলাম আর সেটা একমাত্র সম্ভব হয়েছিল ওই নারায়ণ দেবনাথের জন্য।
তারপর? তারপর পুরো নেশা লেগে গেল। কেজি ওয়ান, টু-থ্রি-ফোর...টেন-টুয়েলভ-কলেজ। আজ এখন মধ্য-চল্লিশে পৌঁছে জীবনের নানা জটিলতায় যখন হাঁপিয়ে পড়ি তখন মোবাইল নয়, ট্যাব-ল্যাপটপ-টিভি-গান-গল্প-উপন্যাস কিচ্ছু না, আলমারি থেকে হাতে টেনে নিই নন্টে-ফন্টে কিংবা বাঁটুল দি গ্রেট সমগ্র। কারণ আমি জানি, মন খারাপ দূর করার জন্য এর থেকে বড় ম্যাজিক আর কারও নেই। বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ একটা মানুষ কীভাবে এত চরিত্র নির্মাণ করে গেছেন, তাদের নিয়ে রাশি রাশি গল্প লিখে গেছেন, তাদের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন তা ভাবলে এই বয়সে বিস্মিত হই। নন্টে-ফন্টে, হাঁদা-ভোঁদা, বাঁটুল দি গ্রেট, বাহাদুর বেড়াল, ডানপিটে খাঁদু, গোয়েন্দা কৌশিক—আরও কত যে চরিত্রের স্রষ্টা তিনি এবং প্রতি চরিত্রের মেজাজ আলাদা, গল্পের চলন আলাদা। কীভাবে এতসব চরিত্রকে সামলাতেন তা ভাবলে অবাক হয়ে যাই! আর গল্পের পাশাপাশি মুগ্ধ হতে হয় তাঁর ড্রয়িং দেখে। ফিগার ড্রয়িংয়ে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। যে কোনো পশচার, যে কোনো মুভমেন্টকে অভাবনীয় অনায়াসে আঁকতেন!
আমাদের ছোটবেলায় ভিডিও গেম ছিল না, টিভি ছিল না, মোবাইল, হেন-তেন কিছুই ছিল না। ছিল অনেক বন্ধু, খেলার মাঠ আর ছিল নারায়ণ দেবনাথের অলৌকিক জগৎ। যেখানে ডুব দিলেই সুপারিন্টেন্ডেন্ট বাবু, পিসেমশাইয়ের শাসন, কেল্টুদার বদমাইশি, নন্টে-ফন্টের বন্ধুত্ব, বাঁটুলের অভাবনীয় দৈহিক শক্তি, পিসিমা, দুই বিচ্ছু—আরও অনেকের দেখা মিলত। তারা সকলেই ছিল আমার বন্ধু, আমার আপনার জন। আমার মন খারাপ হতোই না কখনো। ডিপ্রেশন কী কখনো বুঝিইনি ওদের জন্য।
সাদাকালো ওই খোপগুলোয় আঁকা ছবি আর ডায়লগবক্সের ‘ইররক, ওকৎ, উলস, আফস, সুরুৎ’ শব্দগুলোর সঙ্গে সেই যে পরিচয় হয়ে গিয়েছিল নারায়ণ দেবনাথের হাত ধরে, আজও ভুলিনি।
অনেক বড় হয়ে যাওয়ার পর একদিন চাকরিসূত্রে আমার সুযোগ হয়েছিল ওই জাদুকরের সাক্ষাৎকার নেওয়ার। হাওড়ার এক শতাব্দীপ্রাচীন বাড়ির নোনাধরা ছোট ঘরের ভেতরে যখন প্রবেশ করেছিলাম আর সেই মানুষটির সঙ্গে কথা বলতে বলতে ডুবে যাচ্ছিলাম শৈশবের স্মৃতিতে, সে এক অনির্বচনীয় অনুভূতি আর জীবনের সেরা প্রাপ্তি ছিল আমার। আর সেদিনই মানুষটির শিশুর মতো সারল্য, মনের স্বচ্ছতা টের পেয়ে উপলব্ধি করেছিলাম, এমন শিশুসুলভ মন না থাকলে অমন চরিত্রদের সৃষ্টি করাই যায় না। আমি জীবনে নিজের পেশার সূত্রে অনেক কৃতী মানুষের সংস্পর্শে আসার সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু নারায়ণ দেবনাথের মতো এমন সহজ, নিরহংকার মানুষ দুটি দেখিনি। এই আত্মপ্রচারের যুগে, এই আপন দামামা বাজানোর যুগে তিনি সত্যি এক বিস্ময়, নিজের সম্পর্কে বলতে ওঁর কত কুণ্ঠা! মস্ত শিক্ষা নিয়ে সেদিন ফিরেছিলাম আমি।
নারায়ণ দেবনাথ চলে গেলেন। আটানব্বই বছর বয়সে। হ্যাঁ, চলে যাওয়ার বয়স হয়েছিল ওঁর। সবই জানি, সবই বুঝি, কিন্তু...। এখন অনেকেই বলেন, এই বাংলায় জন্মেছিলেন বলে, এই বাংলায় কাজ করেছিলেন বলে তিনি তাঁর প্রতিভার যোগ্য সমাদর পাননি, অনেক বড় সম্মান তাঁর প্রাপ্য ছিল। তবু জীবনের শেষপ্রান্তে এসে শিশুসাহিত্যে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বঙ্গবিভূষণ, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিলিট এবং শেষশয্যায় তিনি পদ্মশ্রী পেয়েছেন—এই আমাদের গৌরব।
হয়তো এইটুকুও যথেষ্ট নয়, ইউরোপ কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের দেশগুলোতে তিনি জন্মালে বিশ্ববিখ্যাত হতে পারতেন স্ট্যান লি অথবা ডিজনির মতো। সেই যোগ্যতা তাঁর ছিল। কিন্তু এটাও তো সত্যি, তাঁর চলে যাওয়ার খবরটি পেয়ে আমার মতো এক মধ্য-চল্লিশ মানুষ সকাল থেকে বারংবার চোখ মুছছে আর আবারও চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে উঠছে। এই পুরস্কারের মূল্য যে কিছু কম নয়, এই সম্মানের যে কোনো তুলনা নেই তা তিনি অন্তত জানেন।
নারায়ণ দেবনাথ কয়েকটি প্রজন্মকে আশ্রয় দিয়েছিলেন, কল্পনা করতে, নির্মলভাবে হাসতে শিখিয়েছিলেন। তিনি চলে গেলেন। শুধু একটা কথাই শেষে বলার, নারায়ণ দেবনাথ কারও বিকল্প ছিলেন না, নারায়ণ দেবনাথেরও কোনো দিন বিকল্প হবে না। তিনি চিরকালের এক জাদুকর।
লেখক: কথাসাহিত্যিক, কলকাতা

এই লেখাটি লিখতে বসে প্রথমে যে কথাটি মনে হচ্ছে তা হলো, নারায়ণ দেবনাথের কারণেই আমার অতি দ্রুত বাংলা অক্ষরজ্ঞান হয়েছিল। কীভাবে? সে কথা একটু বলি।
আমি তখন সবে পাঁচ বছরে পা দিয়েছি। উনিশ শ সত্তরের দশকে পাঁচ বছর বয়সের আগে ইশকুলে ভর্তি করানো যেত না। তাই পাঁচে পড়তেই বাবা আমাকে নবগ্রামের শিশু ভারতী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেজি ওয়ানে ভর্তি করে দিলেন। ভর্তি হয়েছি কি হইনি অত সব বোঝার ক্ষমতা হয়নি, তবে একদিন লোডশেডিংয়ের সন্ধেবেলায় বারান্দায় বসে রয়েছি, দেখলাম বাবা দোকান থেকে আমার জন্য অনেক রংচঙে বই এনেছেন। সেই সব বইয়ের মধ্যে বর্ণপরিচয় নামের একটা বই ছিল আর ছিল নন্টে-ফন্টের নানান কীর্তি নামের একটা বই। সাদাকালো সেই বইটার মলাটে একটা মোটা, টেকো মানুষের রাগী মুখ আর দু’জন আমার থেকে একটু বড় ছেলের হাসি-হাসি মুখ। সেই বইটার পাতা ওল্টালাম। তখন মা আমাকে বাড়িতে অ আ ক খ শেখাচ্ছেন। খুব অল্পই শিখেছি।
বইয়ের পাতায় পাতায় দেখলাম অনেক মজার ছবি। দুটো ছেলে অনেক হাসছে, মজা করছে। আমার বাবার মতো ধুতি-পাঞ্জাবি পরা ভুঁড়িওয়ালা একটা লোক খুব রাগী-রাগী মুখ করে কখনো ওদের পেটাচ্ছে, কখনো তাড়া করছে। কিন্তু ছবিগুলোর মাথায় কী লেখা রয়েছে ভালোভাবে পড়ে উঠতে পারছি না। দিদিকে জিজ্ঞাসা করলাম। দিদি পড়ে শোনাল। খুব মজা লাগল শুনে। মনে জেদ চাপল এমন মজার লেখা নিজেই পড়ব। কিন্তু তার জন্য খুব দ্রুত বাংলা শিখতে হবে। সেদিন থেকেই খুব মন দিয়ে ফেললাম পড়াশোনায়। বর্ণ-পরিচয়ের পাশাপাশি আমার নন্টে-ফন্টের নানান কীর্তি পড়া শুরু। পাড়ায় আমার বয়সী বন্ধুদের মধ্যে সব থেকে আগে আমি পুরো বাক্য লিখতে ও পড়তে শিখেছিলাম আর সেটা একমাত্র সম্ভব হয়েছিল ওই নারায়ণ দেবনাথের জন্য।
তারপর? তারপর পুরো নেশা লেগে গেল। কেজি ওয়ান, টু-থ্রি-ফোর...টেন-টুয়েলভ-কলেজ। আজ এখন মধ্য-চল্লিশে পৌঁছে জীবনের নানা জটিলতায় যখন হাঁপিয়ে পড়ি তখন মোবাইল নয়, ট্যাব-ল্যাপটপ-টিভি-গান-গল্প-উপন্যাস কিচ্ছু না, আলমারি থেকে হাতে টেনে নিই নন্টে-ফন্টে কিংবা বাঁটুল দি গ্রেট সমগ্র। কারণ আমি জানি, মন খারাপ দূর করার জন্য এর থেকে বড় ম্যাজিক আর কারও নেই। বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ একটা মানুষ কীভাবে এত চরিত্র নির্মাণ করে গেছেন, তাদের নিয়ে রাশি রাশি গল্প লিখে গেছেন, তাদের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন তা ভাবলে এই বয়সে বিস্মিত হই। নন্টে-ফন্টে, হাঁদা-ভোঁদা, বাঁটুল দি গ্রেট, বাহাদুর বেড়াল, ডানপিটে খাঁদু, গোয়েন্দা কৌশিক—আরও কত যে চরিত্রের স্রষ্টা তিনি এবং প্রতি চরিত্রের মেজাজ আলাদা, গল্পের চলন আলাদা। কীভাবে এতসব চরিত্রকে সামলাতেন তা ভাবলে অবাক হয়ে যাই! আর গল্পের পাশাপাশি মুগ্ধ হতে হয় তাঁর ড্রয়িং দেখে। ফিগার ড্রয়িংয়ে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। যে কোনো পশচার, যে কোনো মুভমেন্টকে অভাবনীয় অনায়াসে আঁকতেন!
আমাদের ছোটবেলায় ভিডিও গেম ছিল না, টিভি ছিল না, মোবাইল, হেন-তেন কিছুই ছিল না। ছিল অনেক বন্ধু, খেলার মাঠ আর ছিল নারায়ণ দেবনাথের অলৌকিক জগৎ। যেখানে ডুব দিলেই সুপারিন্টেন্ডেন্ট বাবু, পিসেমশাইয়ের শাসন, কেল্টুদার বদমাইশি, নন্টে-ফন্টের বন্ধুত্ব, বাঁটুলের অভাবনীয় দৈহিক শক্তি, পিসিমা, দুই বিচ্ছু—আরও অনেকের দেখা মিলত। তারা সকলেই ছিল আমার বন্ধু, আমার আপনার জন। আমার মন খারাপ হতোই না কখনো। ডিপ্রেশন কী কখনো বুঝিইনি ওদের জন্য।
সাদাকালো ওই খোপগুলোয় আঁকা ছবি আর ডায়লগবক্সের ‘ইররক, ওকৎ, উলস, আফস, সুরুৎ’ শব্দগুলোর সঙ্গে সেই যে পরিচয় হয়ে গিয়েছিল নারায়ণ দেবনাথের হাত ধরে, আজও ভুলিনি।
অনেক বড় হয়ে যাওয়ার পর একদিন চাকরিসূত্রে আমার সুযোগ হয়েছিল ওই জাদুকরের সাক্ষাৎকার নেওয়ার। হাওড়ার এক শতাব্দীপ্রাচীন বাড়ির নোনাধরা ছোট ঘরের ভেতরে যখন প্রবেশ করেছিলাম আর সেই মানুষটির সঙ্গে কথা বলতে বলতে ডুবে যাচ্ছিলাম শৈশবের স্মৃতিতে, সে এক অনির্বচনীয় অনুভূতি আর জীবনের সেরা প্রাপ্তি ছিল আমার। আর সেদিনই মানুষটির শিশুর মতো সারল্য, মনের স্বচ্ছতা টের পেয়ে উপলব্ধি করেছিলাম, এমন শিশুসুলভ মন না থাকলে অমন চরিত্রদের সৃষ্টি করাই যায় না। আমি জীবনে নিজের পেশার সূত্রে অনেক কৃতী মানুষের সংস্পর্শে আসার সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু নারায়ণ দেবনাথের মতো এমন সহজ, নিরহংকার মানুষ দুটি দেখিনি। এই আত্মপ্রচারের যুগে, এই আপন দামামা বাজানোর যুগে তিনি সত্যি এক বিস্ময়, নিজের সম্পর্কে বলতে ওঁর কত কুণ্ঠা! মস্ত শিক্ষা নিয়ে সেদিন ফিরেছিলাম আমি।
নারায়ণ দেবনাথ চলে গেলেন। আটানব্বই বছর বয়সে। হ্যাঁ, চলে যাওয়ার বয়স হয়েছিল ওঁর। সবই জানি, সবই বুঝি, কিন্তু...। এখন অনেকেই বলেন, এই বাংলায় জন্মেছিলেন বলে, এই বাংলায় কাজ করেছিলেন বলে তিনি তাঁর প্রতিভার যোগ্য সমাদর পাননি, অনেক বড় সম্মান তাঁর প্রাপ্য ছিল। তবু জীবনের শেষপ্রান্তে এসে শিশুসাহিত্যে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বঙ্গবিভূষণ, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিলিট এবং শেষশয্যায় তিনি পদ্মশ্রী পেয়েছেন—এই আমাদের গৌরব।
হয়তো এইটুকুও যথেষ্ট নয়, ইউরোপ কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের দেশগুলোতে তিনি জন্মালে বিশ্ববিখ্যাত হতে পারতেন স্ট্যান লি অথবা ডিজনির মতো। সেই যোগ্যতা তাঁর ছিল। কিন্তু এটাও তো সত্যি, তাঁর চলে যাওয়ার খবরটি পেয়ে আমার মতো এক মধ্য-চল্লিশ মানুষ সকাল থেকে বারংবার চোখ মুছছে আর আবারও চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে উঠছে। এই পুরস্কারের মূল্য যে কিছু কম নয়, এই সম্মানের যে কোনো তুলনা নেই তা তিনি অন্তত জানেন।
নারায়ণ দেবনাথ কয়েকটি প্রজন্মকে আশ্রয় দিয়েছিলেন, কল্পনা করতে, নির্মলভাবে হাসতে শিখিয়েছিলেন। তিনি চলে গেলেন। শুধু একটা কথাই শেষে বলার, নারায়ণ দেবনাথ কারও বিকল্প ছিলেন না, নারায়ণ দেবনাথেরও কোনো দিন বিকল্প হবে না। তিনি চিরকালের এক জাদুকর।
লেখক: কথাসাহিত্যিক, কলকাতা
বিনদ ঘোষাল

এই লেখাটি লিখতে বসে প্রথমে যে কথাটি মনে হচ্ছে তা হলো, নারায়ণ দেবনাথের কারণেই আমার অতি দ্রুত বাংলা অক্ষরজ্ঞান হয়েছিল। কীভাবে? সে কথা একটু বলি।
আমি তখন সবে পাঁচ বছরে পা দিয়েছি। উনিশ শ সত্তরের দশকে পাঁচ বছর বয়সের আগে ইশকুলে ভর্তি করানো যেত না। তাই পাঁচে পড়তেই বাবা আমাকে নবগ্রামের শিশু ভারতী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেজি ওয়ানে ভর্তি করে দিলেন। ভর্তি হয়েছি কি হইনি অত সব বোঝার ক্ষমতা হয়নি, তবে একদিন লোডশেডিংয়ের সন্ধেবেলায় বারান্দায় বসে রয়েছি, দেখলাম বাবা দোকান থেকে আমার জন্য অনেক রংচঙে বই এনেছেন। সেই সব বইয়ের মধ্যে বর্ণপরিচয় নামের একটা বই ছিল আর ছিল নন্টে-ফন্টের নানান কীর্তি নামের একটা বই। সাদাকালো সেই বইটার মলাটে একটা মোটা, টেকো মানুষের রাগী মুখ আর দু’জন আমার থেকে একটু বড় ছেলের হাসি-হাসি মুখ। সেই বইটার পাতা ওল্টালাম। তখন মা আমাকে বাড়িতে অ আ ক খ শেখাচ্ছেন। খুব অল্পই শিখেছি।
বইয়ের পাতায় পাতায় দেখলাম অনেক মজার ছবি। দুটো ছেলে অনেক হাসছে, মজা করছে। আমার বাবার মতো ধুতি-পাঞ্জাবি পরা ভুঁড়িওয়ালা একটা লোক খুব রাগী-রাগী মুখ করে কখনো ওদের পেটাচ্ছে, কখনো তাড়া করছে। কিন্তু ছবিগুলোর মাথায় কী লেখা রয়েছে ভালোভাবে পড়ে উঠতে পারছি না। দিদিকে জিজ্ঞাসা করলাম। দিদি পড়ে শোনাল। খুব মজা লাগল শুনে। মনে জেদ চাপল এমন মজার লেখা নিজেই পড়ব। কিন্তু তার জন্য খুব দ্রুত বাংলা শিখতে হবে। সেদিন থেকেই খুব মন দিয়ে ফেললাম পড়াশোনায়। বর্ণ-পরিচয়ের পাশাপাশি আমার নন্টে-ফন্টের নানান কীর্তি পড়া শুরু। পাড়ায় আমার বয়সী বন্ধুদের মধ্যে সব থেকে আগে আমি পুরো বাক্য লিখতে ও পড়তে শিখেছিলাম আর সেটা একমাত্র সম্ভব হয়েছিল ওই নারায়ণ দেবনাথের জন্য।
তারপর? তারপর পুরো নেশা লেগে গেল। কেজি ওয়ান, টু-থ্রি-ফোর...টেন-টুয়েলভ-কলেজ। আজ এখন মধ্য-চল্লিশে পৌঁছে জীবনের নানা জটিলতায় যখন হাঁপিয়ে পড়ি তখন মোবাইল নয়, ট্যাব-ল্যাপটপ-টিভি-গান-গল্প-উপন্যাস কিচ্ছু না, আলমারি থেকে হাতে টেনে নিই নন্টে-ফন্টে কিংবা বাঁটুল দি গ্রেট সমগ্র। কারণ আমি জানি, মন খারাপ দূর করার জন্য এর থেকে বড় ম্যাজিক আর কারও নেই। বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ একটা মানুষ কীভাবে এত চরিত্র নির্মাণ করে গেছেন, তাদের নিয়ে রাশি রাশি গল্প লিখে গেছেন, তাদের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন তা ভাবলে এই বয়সে বিস্মিত হই। নন্টে-ফন্টে, হাঁদা-ভোঁদা, বাঁটুল দি গ্রেট, বাহাদুর বেড়াল, ডানপিটে খাঁদু, গোয়েন্দা কৌশিক—আরও কত যে চরিত্রের স্রষ্টা তিনি এবং প্রতি চরিত্রের মেজাজ আলাদা, গল্পের চলন আলাদা। কীভাবে এতসব চরিত্রকে সামলাতেন তা ভাবলে অবাক হয়ে যাই! আর গল্পের পাশাপাশি মুগ্ধ হতে হয় তাঁর ড্রয়িং দেখে। ফিগার ড্রয়িংয়ে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। যে কোনো পশচার, যে কোনো মুভমেন্টকে অভাবনীয় অনায়াসে আঁকতেন!
আমাদের ছোটবেলায় ভিডিও গেম ছিল না, টিভি ছিল না, মোবাইল, হেন-তেন কিছুই ছিল না। ছিল অনেক বন্ধু, খেলার মাঠ আর ছিল নারায়ণ দেবনাথের অলৌকিক জগৎ। যেখানে ডুব দিলেই সুপারিন্টেন্ডেন্ট বাবু, পিসেমশাইয়ের শাসন, কেল্টুদার বদমাইশি, নন্টে-ফন্টের বন্ধুত্ব, বাঁটুলের অভাবনীয় দৈহিক শক্তি, পিসিমা, দুই বিচ্ছু—আরও অনেকের দেখা মিলত। তারা সকলেই ছিল আমার বন্ধু, আমার আপনার জন। আমার মন খারাপ হতোই না কখনো। ডিপ্রেশন কী কখনো বুঝিইনি ওদের জন্য।
সাদাকালো ওই খোপগুলোয় আঁকা ছবি আর ডায়লগবক্সের ‘ইররক, ওকৎ, উলস, আফস, সুরুৎ’ শব্দগুলোর সঙ্গে সেই যে পরিচয় হয়ে গিয়েছিল নারায়ণ দেবনাথের হাত ধরে, আজও ভুলিনি।
অনেক বড় হয়ে যাওয়ার পর একদিন চাকরিসূত্রে আমার সুযোগ হয়েছিল ওই জাদুকরের সাক্ষাৎকার নেওয়ার। হাওড়ার এক শতাব্দীপ্রাচীন বাড়ির নোনাধরা ছোট ঘরের ভেতরে যখন প্রবেশ করেছিলাম আর সেই মানুষটির সঙ্গে কথা বলতে বলতে ডুবে যাচ্ছিলাম শৈশবের স্মৃতিতে, সে এক অনির্বচনীয় অনুভূতি আর জীবনের সেরা প্রাপ্তি ছিল আমার। আর সেদিনই মানুষটির শিশুর মতো সারল্য, মনের স্বচ্ছতা টের পেয়ে উপলব্ধি করেছিলাম, এমন শিশুসুলভ মন না থাকলে অমন চরিত্রদের সৃষ্টি করাই যায় না। আমি জীবনে নিজের পেশার সূত্রে অনেক কৃতী মানুষের সংস্পর্শে আসার সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু নারায়ণ দেবনাথের মতো এমন সহজ, নিরহংকার মানুষ দুটি দেখিনি। এই আত্মপ্রচারের যুগে, এই আপন দামামা বাজানোর যুগে তিনি সত্যি এক বিস্ময়, নিজের সম্পর্কে বলতে ওঁর কত কুণ্ঠা! মস্ত শিক্ষা নিয়ে সেদিন ফিরেছিলাম আমি।
নারায়ণ দেবনাথ চলে গেলেন। আটানব্বই বছর বয়সে। হ্যাঁ, চলে যাওয়ার বয়স হয়েছিল ওঁর। সবই জানি, সবই বুঝি, কিন্তু...। এখন অনেকেই বলেন, এই বাংলায় জন্মেছিলেন বলে, এই বাংলায় কাজ করেছিলেন বলে তিনি তাঁর প্রতিভার যোগ্য সমাদর পাননি, অনেক বড় সম্মান তাঁর প্রাপ্য ছিল। তবু জীবনের শেষপ্রান্তে এসে শিশুসাহিত্যে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বঙ্গবিভূষণ, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিলিট এবং শেষশয্যায় তিনি পদ্মশ্রী পেয়েছেন—এই আমাদের গৌরব।
হয়তো এইটুকুও যথেষ্ট নয়, ইউরোপ কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের দেশগুলোতে তিনি জন্মালে বিশ্ববিখ্যাত হতে পারতেন স্ট্যান লি অথবা ডিজনির মতো। সেই যোগ্যতা তাঁর ছিল। কিন্তু এটাও তো সত্যি, তাঁর চলে যাওয়ার খবরটি পেয়ে আমার মতো এক মধ্য-চল্লিশ মানুষ সকাল থেকে বারংবার চোখ মুছছে আর আবারও চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে উঠছে। এই পুরস্কারের মূল্য যে কিছু কম নয়, এই সম্মানের যে কোনো তুলনা নেই তা তিনি অন্তত জানেন।
নারায়ণ দেবনাথ কয়েকটি প্রজন্মকে আশ্রয় দিয়েছিলেন, কল্পনা করতে, নির্মলভাবে হাসতে শিখিয়েছিলেন। তিনি চলে গেলেন। শুধু একটা কথাই শেষে বলার, নারায়ণ দেবনাথ কারও বিকল্প ছিলেন না, নারায়ণ দেবনাথেরও কোনো দিন বিকল্প হবে না। তিনি চিরকালের এক জাদুকর।
লেখক: কথাসাহিত্যিক, কলকাতা

এই লেখাটি লিখতে বসে প্রথমে যে কথাটি মনে হচ্ছে তা হলো, নারায়ণ দেবনাথের কারণেই আমার অতি দ্রুত বাংলা অক্ষরজ্ঞান হয়েছিল। কীভাবে? সে কথা একটু বলি।
আমি তখন সবে পাঁচ বছরে পা দিয়েছি। উনিশ শ সত্তরের দশকে পাঁচ বছর বয়সের আগে ইশকুলে ভর্তি করানো যেত না। তাই পাঁচে পড়তেই বাবা আমাকে নবগ্রামের শিশু ভারতী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেজি ওয়ানে ভর্তি করে দিলেন। ভর্তি হয়েছি কি হইনি অত সব বোঝার ক্ষমতা হয়নি, তবে একদিন লোডশেডিংয়ের সন্ধেবেলায় বারান্দায় বসে রয়েছি, দেখলাম বাবা দোকান থেকে আমার জন্য অনেক রংচঙে বই এনেছেন। সেই সব বইয়ের মধ্যে বর্ণপরিচয় নামের একটা বই ছিল আর ছিল নন্টে-ফন্টের নানান কীর্তি নামের একটা বই। সাদাকালো সেই বইটার মলাটে একটা মোটা, টেকো মানুষের রাগী মুখ আর দু’জন আমার থেকে একটু বড় ছেলের হাসি-হাসি মুখ। সেই বইটার পাতা ওল্টালাম। তখন মা আমাকে বাড়িতে অ আ ক খ শেখাচ্ছেন। খুব অল্পই শিখেছি।
বইয়ের পাতায় পাতায় দেখলাম অনেক মজার ছবি। দুটো ছেলে অনেক হাসছে, মজা করছে। আমার বাবার মতো ধুতি-পাঞ্জাবি পরা ভুঁড়িওয়ালা একটা লোক খুব রাগী-রাগী মুখ করে কখনো ওদের পেটাচ্ছে, কখনো তাড়া করছে। কিন্তু ছবিগুলোর মাথায় কী লেখা রয়েছে ভালোভাবে পড়ে উঠতে পারছি না। দিদিকে জিজ্ঞাসা করলাম। দিদি পড়ে শোনাল। খুব মজা লাগল শুনে। মনে জেদ চাপল এমন মজার লেখা নিজেই পড়ব। কিন্তু তার জন্য খুব দ্রুত বাংলা শিখতে হবে। সেদিন থেকেই খুব মন দিয়ে ফেললাম পড়াশোনায়। বর্ণ-পরিচয়ের পাশাপাশি আমার নন্টে-ফন্টের নানান কীর্তি পড়া শুরু। পাড়ায় আমার বয়সী বন্ধুদের মধ্যে সব থেকে আগে আমি পুরো বাক্য লিখতে ও পড়তে শিখেছিলাম আর সেটা একমাত্র সম্ভব হয়েছিল ওই নারায়ণ দেবনাথের জন্য।
তারপর? তারপর পুরো নেশা লেগে গেল। কেজি ওয়ান, টু-থ্রি-ফোর...টেন-টুয়েলভ-কলেজ। আজ এখন মধ্য-চল্লিশে পৌঁছে জীবনের নানা জটিলতায় যখন হাঁপিয়ে পড়ি তখন মোবাইল নয়, ট্যাব-ল্যাপটপ-টিভি-গান-গল্প-উপন্যাস কিচ্ছু না, আলমারি থেকে হাতে টেনে নিই নন্টে-ফন্টে কিংবা বাঁটুল দি গ্রেট সমগ্র। কারণ আমি জানি, মন খারাপ দূর করার জন্য এর থেকে বড় ম্যাজিক আর কারও নেই। বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ একটা মানুষ কীভাবে এত চরিত্র নির্মাণ করে গেছেন, তাদের নিয়ে রাশি রাশি গল্প লিখে গেছেন, তাদের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন তা ভাবলে এই বয়সে বিস্মিত হই। নন্টে-ফন্টে, হাঁদা-ভোঁদা, বাঁটুল দি গ্রেট, বাহাদুর বেড়াল, ডানপিটে খাঁদু, গোয়েন্দা কৌশিক—আরও কত যে চরিত্রের স্রষ্টা তিনি এবং প্রতি চরিত্রের মেজাজ আলাদা, গল্পের চলন আলাদা। কীভাবে এতসব চরিত্রকে সামলাতেন তা ভাবলে অবাক হয়ে যাই! আর গল্পের পাশাপাশি মুগ্ধ হতে হয় তাঁর ড্রয়িং দেখে। ফিগার ড্রয়িংয়ে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। যে কোনো পশচার, যে কোনো মুভমেন্টকে অভাবনীয় অনায়াসে আঁকতেন!
আমাদের ছোটবেলায় ভিডিও গেম ছিল না, টিভি ছিল না, মোবাইল, হেন-তেন কিছুই ছিল না। ছিল অনেক বন্ধু, খেলার মাঠ আর ছিল নারায়ণ দেবনাথের অলৌকিক জগৎ। যেখানে ডুব দিলেই সুপারিন্টেন্ডেন্ট বাবু, পিসেমশাইয়ের শাসন, কেল্টুদার বদমাইশি, নন্টে-ফন্টের বন্ধুত্ব, বাঁটুলের অভাবনীয় দৈহিক শক্তি, পিসিমা, দুই বিচ্ছু—আরও অনেকের দেখা মিলত। তারা সকলেই ছিল আমার বন্ধু, আমার আপনার জন। আমার মন খারাপ হতোই না কখনো। ডিপ্রেশন কী কখনো বুঝিইনি ওদের জন্য।
সাদাকালো ওই খোপগুলোয় আঁকা ছবি আর ডায়লগবক্সের ‘ইররক, ওকৎ, উলস, আফস, সুরুৎ’ শব্দগুলোর সঙ্গে সেই যে পরিচয় হয়ে গিয়েছিল নারায়ণ দেবনাথের হাত ধরে, আজও ভুলিনি।
অনেক বড় হয়ে যাওয়ার পর একদিন চাকরিসূত্রে আমার সুযোগ হয়েছিল ওই জাদুকরের সাক্ষাৎকার নেওয়ার। হাওড়ার এক শতাব্দীপ্রাচীন বাড়ির নোনাধরা ছোট ঘরের ভেতরে যখন প্রবেশ করেছিলাম আর সেই মানুষটির সঙ্গে কথা বলতে বলতে ডুবে যাচ্ছিলাম শৈশবের স্মৃতিতে, সে এক অনির্বচনীয় অনুভূতি আর জীবনের সেরা প্রাপ্তি ছিল আমার। আর সেদিনই মানুষটির শিশুর মতো সারল্য, মনের স্বচ্ছতা টের পেয়ে উপলব্ধি করেছিলাম, এমন শিশুসুলভ মন না থাকলে অমন চরিত্রদের সৃষ্টি করাই যায় না। আমি জীবনে নিজের পেশার সূত্রে অনেক কৃতী মানুষের সংস্পর্শে আসার সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু নারায়ণ দেবনাথের মতো এমন সহজ, নিরহংকার মানুষ দুটি দেখিনি। এই আত্মপ্রচারের যুগে, এই আপন দামামা বাজানোর যুগে তিনি সত্যি এক বিস্ময়, নিজের সম্পর্কে বলতে ওঁর কত কুণ্ঠা! মস্ত শিক্ষা নিয়ে সেদিন ফিরেছিলাম আমি।
নারায়ণ দেবনাথ চলে গেলেন। আটানব্বই বছর বয়সে। হ্যাঁ, চলে যাওয়ার বয়স হয়েছিল ওঁর। সবই জানি, সবই বুঝি, কিন্তু...। এখন অনেকেই বলেন, এই বাংলায় জন্মেছিলেন বলে, এই বাংলায় কাজ করেছিলেন বলে তিনি তাঁর প্রতিভার যোগ্য সমাদর পাননি, অনেক বড় সম্মান তাঁর প্রাপ্য ছিল। তবু জীবনের শেষপ্রান্তে এসে শিশুসাহিত্যে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বঙ্গবিভূষণ, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিলিট এবং শেষশয্যায় তিনি পদ্মশ্রী পেয়েছেন—এই আমাদের গৌরব।
হয়তো এইটুকুও যথেষ্ট নয়, ইউরোপ কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের দেশগুলোতে তিনি জন্মালে বিশ্ববিখ্যাত হতে পারতেন স্ট্যান লি অথবা ডিজনির মতো। সেই যোগ্যতা তাঁর ছিল। কিন্তু এটাও তো সত্যি, তাঁর চলে যাওয়ার খবরটি পেয়ে আমার মতো এক মধ্য-চল্লিশ মানুষ সকাল থেকে বারংবার চোখ মুছছে আর আবারও চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে উঠছে। এই পুরস্কারের মূল্য যে কিছু কম নয়, এই সম্মানের যে কোনো তুলনা নেই তা তিনি অন্তত জানেন।
নারায়ণ দেবনাথ কয়েকটি প্রজন্মকে আশ্রয় দিয়েছিলেন, কল্পনা করতে, নির্মলভাবে হাসতে শিখিয়েছিলেন। তিনি চলে গেলেন। শুধু একটা কথাই শেষে বলার, নারায়ণ দেবনাথ কারও বিকল্প ছিলেন না, নারায়ণ দেবনাথেরও কোনো দিন বিকল্প হবে না। তিনি চিরকালের এক জাদুকর।
লেখক: কথাসাহিত্যিক, কলকাতা

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৯ ঘণ্টা আগে
ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়
৪ দিন আগে
উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান।
৪ দিন আগে
ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লকের বধ্যভূমিটি ‘জল্লাদখানা বধ্যভূমি’ নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর ও বিহারিরা এখানে বাঙালিদের ধরে এনে হত্যা করত। মিরপুর খালের পাশে এক নির্জন এলাকায় দুটি পয়োনিষ্কাশন ট্যাংকের ওপর ছিল একটি পরিত্যক্ত পাম্পহাউস।
৪ দিন আগেসম্পাদকীয়

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।
সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।
সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

নারায়ণ দেবনাথ চলে গেলেন। আটানব্বই বছর বয়সে। তিনি শিশুসাহিত্যে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বঙ্গবিভূষণ, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিলিট এবং শেষশয্যায় পদ্মশ্রী উপাধি পেয়েছেন। নারায়ণ দেবনাথ কারও বিকল্প ছিলেন না, নারায়ণ দেবনাথেরও কোনো দিন বিকল্প হবে না।
২৩ জানুয়ারি ২০২২
ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়
৪ দিন আগে
উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান।
৪ দিন আগে
ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লকের বধ্যভূমিটি ‘জল্লাদখানা বধ্যভূমি’ নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর ও বিহারিরা এখানে বাঙালিদের ধরে এনে হত্যা করত। মিরপুর খালের পাশে এক নির্জন এলাকায় দুটি পয়োনিষ্কাশন ট্যাংকের ওপর ছিল একটি পরিত্যক্ত পাম্পহাউস।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়েছে।
অক্সফোর্ড জানিয়েছে, চলতি বছর ‘রেজ বেইট’ শব্দের ব্যবহার তিন গুণ বেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, মানুষ এখন আগের চেয়ে দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যালগরিদম প্রভাবিত বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে। ক্ষুদ্র কোনো বিষয়ও মুহূর্তের মধ্যে রাগ, ক্ষোভ ও বিভাজন তৈরি করছে—যা মূলত এনগেজমেন্ট বাড়ানোর কৌশল।
‘রেজ বেইট’ সব সময় যে বিপজ্জনক হবে, এমন নয়। কখনো এটি হতে পারে অদ্ভুত কোনো রেসিপি বা এমন ভিডিও যেখানে কেউ নিজের পোষা প্রাণী বা পরিবারের সদস্যকে মজার ছলে বিরক্ত করছে। তবে রাজনীতি ও জনপরিসরেও এখন এটি শক্তিশালী হাতিয়ার। কারণ প্ররোচিত ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়ার ঢেউ অনেক সময়ই রাজনৈতিক প্রচারণাকে আরও উসকে দেয়।
শুধু অক্সফোর্ড নয়, প্রায় সব বড় অভিধানই এবার ইন্টারনেট-সম্পর্কিত শব্দকেই ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে বেছে নিয়েছে। এবার কলিন্স ডিকশনারির বেছে নেওয়া শব্দটি হলো ‘ভয়েস কোডিং’। যেখানে এআই ব্যবহার করে মানুষের ভাষাকে কম্পিউটার কোডে রূপান্তর করা হয়। অন্যদিকে ক্যামব্রিজ ডিকশনারি বেছে নিয়েছে ‘প্যারাসোশ্যাল’ শব্দটি, যা অনলাইনে অপরিচিত কারও সঙ্গে গড়ে ওঠা একতরফা সম্পর্ককে নির্দেশ করে।
গত বছর (২০২৪) অক্সফোর্ড বেছে নিয়েছিল ‘ব্রেইন রট’ শব্দটি, যা ছিল মূলত অবিরাম স্ক্রলিংয়ে মানসিক ক্লান্তির রূপকার্থ। অক্সফোর্ড ল্যাংগুয়েজেসের প্রেসিডেন্ট ক্যাসপার গ্র্যাথওহলের মতে, ‘রেজ বেইট’ এবং ‘ব্রেন রট’—দুটি শব্দই দেখায় কীভাবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম আমাদের চিন্তা ও আচরণকে বদলে দিচ্ছে। একটি প্ররোচিত রাগ বাড়ায়, অন্যটি সেই রাগের মধ্যেই মানুষকে আবিষ্ট রাখে।
এ বছর অক্সফোর্ড সাধারণ মানুষের ভোটে ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচন করেছে। সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল আরও দুটি শব্দ—‘অরা ফার্মিং’ ও ‘বায়োহ্যাক’। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব তৈরি করার কৌশলকে বোঝাতে ‘অরা ফার্মিং’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়, আর শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বাড়াতে জীবনযাপনে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘বায়োহ্যাক’।
শেষ পর্যন্ত ‘রেজ বেইট’ শব্দটিই জিতেছে—যে শব্দের মধ্য দিয়ে আজকের অনলাইন জীবনের রাগ, প্রতিক্রিয়া এবং ক্লান্তির বাস্তবতা সবচেয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়েছে।
অক্সফোর্ড জানিয়েছে, চলতি বছর ‘রেজ বেইট’ শব্দের ব্যবহার তিন গুণ বেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, মানুষ এখন আগের চেয়ে দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যালগরিদম প্রভাবিত বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে। ক্ষুদ্র কোনো বিষয়ও মুহূর্তের মধ্যে রাগ, ক্ষোভ ও বিভাজন তৈরি করছে—যা মূলত এনগেজমেন্ট বাড়ানোর কৌশল।
‘রেজ বেইট’ সব সময় যে বিপজ্জনক হবে, এমন নয়। কখনো এটি হতে পারে অদ্ভুত কোনো রেসিপি বা এমন ভিডিও যেখানে কেউ নিজের পোষা প্রাণী বা পরিবারের সদস্যকে মজার ছলে বিরক্ত করছে। তবে রাজনীতি ও জনপরিসরেও এখন এটি শক্তিশালী হাতিয়ার। কারণ প্ররোচিত ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়ার ঢেউ অনেক সময়ই রাজনৈতিক প্রচারণাকে আরও উসকে দেয়।
শুধু অক্সফোর্ড নয়, প্রায় সব বড় অভিধানই এবার ইন্টারনেট-সম্পর্কিত শব্দকেই ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে বেছে নিয়েছে। এবার কলিন্স ডিকশনারির বেছে নেওয়া শব্দটি হলো ‘ভয়েস কোডিং’। যেখানে এআই ব্যবহার করে মানুষের ভাষাকে কম্পিউটার কোডে রূপান্তর করা হয়। অন্যদিকে ক্যামব্রিজ ডিকশনারি বেছে নিয়েছে ‘প্যারাসোশ্যাল’ শব্দটি, যা অনলাইনে অপরিচিত কারও সঙ্গে গড়ে ওঠা একতরফা সম্পর্ককে নির্দেশ করে।
গত বছর (২০২৪) অক্সফোর্ড বেছে নিয়েছিল ‘ব্রেইন রট’ শব্দটি, যা ছিল মূলত অবিরাম স্ক্রলিংয়ে মানসিক ক্লান্তির রূপকার্থ। অক্সফোর্ড ল্যাংগুয়েজেসের প্রেসিডেন্ট ক্যাসপার গ্র্যাথওহলের মতে, ‘রেজ বেইট’ এবং ‘ব্রেন রট’—দুটি শব্দই দেখায় কীভাবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম আমাদের চিন্তা ও আচরণকে বদলে দিচ্ছে। একটি প্ররোচিত রাগ বাড়ায়, অন্যটি সেই রাগের মধ্যেই মানুষকে আবিষ্ট রাখে।
এ বছর অক্সফোর্ড সাধারণ মানুষের ভোটে ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচন করেছে। সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল আরও দুটি শব্দ—‘অরা ফার্মিং’ ও ‘বায়োহ্যাক’। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব তৈরি করার কৌশলকে বোঝাতে ‘অরা ফার্মিং’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়, আর শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বাড়াতে জীবনযাপনে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘বায়োহ্যাক’।
শেষ পর্যন্ত ‘রেজ বেইট’ শব্দটিই জিতেছে—যে শব্দের মধ্য দিয়ে আজকের অনলাইন জীবনের রাগ, প্রতিক্রিয়া এবং ক্লান্তির বাস্তবতা সবচেয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

নারায়ণ দেবনাথ চলে গেলেন। আটানব্বই বছর বয়সে। তিনি শিশুসাহিত্যে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বঙ্গবিভূষণ, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিলিট এবং শেষশয্যায় পদ্মশ্রী উপাধি পেয়েছেন। নারায়ণ দেবনাথ কারও বিকল্প ছিলেন না, নারায়ণ দেবনাথেরও কোনো দিন বিকল্প হবে না।
২৩ জানুয়ারি ২০২২
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৯ ঘণ্টা আগে
উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান।
৪ দিন আগে
ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লকের বধ্যভূমিটি ‘জল্লাদখানা বধ্যভূমি’ নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর ও বিহারিরা এখানে বাঙালিদের ধরে এনে হত্যা করত। মিরপুর খালের পাশে এক নির্জন এলাকায় দুটি পয়োনিষ্কাশন ট্যাংকের ওপর ছিল একটি পরিত্যক্ত পাম্পহাউস।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান। সেই মর্মান্তিক ঘটনা, গারফিল্ডের জীবন ও তাঁর উত্তরাধিকার নিয়ে এবার নেটফ্লিক্স-এ আসছে চার পর্বের ড্রামা সিরিজ, ‘ডেথ বাই লাইটনিং’।
প্রেসিডেন্টের উত্থান ও প্রগতিশীল এজেন্ডা
১৮৮০ সালে আমেরিকা এক কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েছিল। সদ্য দাসপ্রথা বিলুপ্তির পর আফ্রিকান-আমেরিকানরা কি নাগরিক হিসেবে পূর্ণ অধিকার পাবেন? নাকি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সরকারি চাকরি বণ্টনের সেই দীর্ঘদিনের দুর্নীতিগ্রস্ত ‘পচে যাওয়ার ব্যবস্থা’ অব্যাহত থাকবে? রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে ওহাইও-এর জনপ্রিয় কংগ্রেসম্যান জেমস গারফিল্ড এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার আহ্বান জানান। দারিদ্র্য থেকে উঠে আসা, গৃহযুদ্ধে অসামান্য বীরত্ব দেখানো এই কমান্ডার নভেম্বরে দেশের ২০ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে গারফিল্ড উচ্চাভিলাষী এজেন্ডা নিয়ে কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে ছিল: মার্কিন নৌবাহিনীর আধুনিকীকরণ, লাতিন আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো এবং বিশেষত নাগরিক অধিকারের পক্ষে জোরালো সওয়াল করা। তিনি সাবেক ক্রীতদাস ফ্রেডরিক ডগলাসকে ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার রেকর্ডার অব ডিডস পদে নিযুক্ত করেন। একজন আফ্রিকান-আমেরিকানের জন্য প্রথম সারির একটি কেন্দ্রীয় পদ পাওয়ার বিরল ঘটনা ছিল এটি।
হত্যার নেপথ্যে
১৮৮১ সালের ২ জুলাই ওয়াশিংটন ডিসি-র রেলওয়ে স্টেশনে চার্লস এল. গুইটো নামক এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি গারফিল্ডকে গুলি করে। গুইটো তার জীবনকাল ধরে একজন ব্যর্থ আইনজীবী, সাংবাদিক, ধর্মপ্রচারক এবং ফ্রি লাভ কমিউনের সদস্য হিসেবে এক ব্যর্থ অ্যাকটিভিস্ট ছিলেন। তা সত্ত্বেও, তিনি বিশ্বাস করতেন, ঈশ্বর তাকে মহৎ উদ্দেশ্যের জন্য সৃষ্টি করেছেন। গারফিল্ডের মনোনয়নের পর তিনি তাঁর সমর্থনের বিনিময়ে প্যারিসে গুরুত্বপূর্ণ কনস্যুলার পদ দাবি করে হোয়াইট হাউসে ধরনা করতেন। প্রেসিডেন্ট ‘প্যাট্রোনেজ সিস্টেম’-এর ঘোর বিরোধী হওয়ায় তাঁকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরই গুইটো সিদ্ধান্ত নেন—গারফিল্ডকে হত্যা করে ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থারকে ক্ষমতায় আনার ‘ঈশ্বর প্রদত্ত নির্দেশ’ তাঁর ওপর বর্তেছে।
আসল খুনি কে?
লেখক ক্যান্ডিস মিলার্ড তাঁর বেস্ট সেলিং বই ডেসটিনি অব দ্য রিপাবলিক-এ তুলে ধরেছেন, গারফিল্ডের মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল চিকিৎসার চরম অব্যবস্থা। ড. উইলফ্রেড ব্লিস নামক দাম্ভিক চিকিৎসক গারফিল্ডের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। তিনি ব্রিটিশ সার্জন জোসেফ লিস্টার কর্তৃক প্রবর্তিত আধুনিক অ্যান্টিসেপটিক পদ্ধতিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেন। ব্লিস জীবাণুমুক্ত নয় এমন যন্ত্র এবং খালি হাত ব্যবহার করে প্রেসিডেন্টের মেরুদণ্ডের কাছে থাকা গুলিটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। এর ফলে সংক্রমণ (সেপসিস) ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি, গুলি খুঁজতে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল তাঁর সদ্য আবিষ্কৃত প্রারম্ভিক মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করেছিলেন, কিন্তু ব্লিসের অসহযোগিতার কারণে সেটিও ব্যর্থ হয়। শট নেওয়ার প্রায় আশি দিন পর প্রেসিডেন্ট মারা যান এবং এই মৃত্যুর সম্পূর্ণ দায় ড. ব্লিসের ওপর বর্তায়।
রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও গারফিল্ডকে নিউইয়র্কের প্রভাবশালী রিপাবলিকান সিনেটর রোসকো কনকলিং-এর বিরোধিতা মোকাবিলা করতে হয়েছিল। কনকলিং প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক ছিলেন এবং গারফিল্ডের প্রগতিশীল ভাবধারা পছন্দ করতেন না। মাকোভস্কি বিবিসিকে জানান, এই সিরিজের মূল আকর্ষণ হলো ইতিহাসের সেই ‘যদি’ প্রশ্নটি—যদি প্রেসিডেন্ট গারফিল্ড বেঁচে থাকতেন, তবে তিনি হয়তো আমেরিকার অন্যতম সেরা প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন। মাকোভস্কির মতে, ‘গারফিল্ডের অসাধারণ মেধা ছিল। তাঁকে যে আজ ইতিহাসে একটি অস্পষ্ট পাদটীকা হিসেবে স্থান দেওয়া হয়, তা এক ট্র্যাজেডি।’
অভিনেতা মাইকেল শ্যানন গারফিল্ডের ‘ঐশ্বর্য ও মর্যাদা, বিশেষ করে তাঁর শালীনতা’ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন লেখক মিলার্ড।
গারফিল্ডের উত্তরাধিকার ও আইন সংস্কার
মাত্র ৪৯ বছর বয়সে গারফিল্ডের মৃত্যু পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দেয় এবং দেশজুড়ে সরকারি চাকরি সংস্কারের দাবি জোরালো হয়। জনগণের ক্ষোভের কারণেই ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থার, যিনি একসময় প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তিনিই ১৮৮৩ সালে ‘পেন্ডলটন অ্যাক্ট’-এ স্বাক্ষর করেন। এই আইনের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে ‘যোগ্যতা-ভিত্তিক’ নিয়োগের নীতি শুরু হয়, যা মার্কিন সরকারি আমলাতন্ত্রের পেশাদারি নিশ্চিত করার পথ দেখায়। এইভাবে, এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড আমেরিকার শাসনব্যবস্থার ইতিহাসে এক স্থায়ী প্রগতিশীল পরিবর্তন এনে দেয়।

উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান। সেই মর্মান্তিক ঘটনা, গারফিল্ডের জীবন ও তাঁর উত্তরাধিকার নিয়ে এবার নেটফ্লিক্স-এ আসছে চার পর্বের ড্রামা সিরিজ, ‘ডেথ বাই লাইটনিং’।
প্রেসিডেন্টের উত্থান ও প্রগতিশীল এজেন্ডা
১৮৮০ সালে আমেরিকা এক কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েছিল। সদ্য দাসপ্রথা বিলুপ্তির পর আফ্রিকান-আমেরিকানরা কি নাগরিক হিসেবে পূর্ণ অধিকার পাবেন? নাকি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সরকারি চাকরি বণ্টনের সেই দীর্ঘদিনের দুর্নীতিগ্রস্ত ‘পচে যাওয়ার ব্যবস্থা’ অব্যাহত থাকবে? রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে ওহাইও-এর জনপ্রিয় কংগ্রেসম্যান জেমস গারফিল্ড এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার আহ্বান জানান। দারিদ্র্য থেকে উঠে আসা, গৃহযুদ্ধে অসামান্য বীরত্ব দেখানো এই কমান্ডার নভেম্বরে দেশের ২০ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে গারফিল্ড উচ্চাভিলাষী এজেন্ডা নিয়ে কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে ছিল: মার্কিন নৌবাহিনীর আধুনিকীকরণ, লাতিন আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো এবং বিশেষত নাগরিক অধিকারের পক্ষে জোরালো সওয়াল করা। তিনি সাবেক ক্রীতদাস ফ্রেডরিক ডগলাসকে ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার রেকর্ডার অব ডিডস পদে নিযুক্ত করেন। একজন আফ্রিকান-আমেরিকানের জন্য প্রথম সারির একটি কেন্দ্রীয় পদ পাওয়ার বিরল ঘটনা ছিল এটি।
হত্যার নেপথ্যে
১৮৮১ সালের ২ জুলাই ওয়াশিংটন ডিসি-র রেলওয়ে স্টেশনে চার্লস এল. গুইটো নামক এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি গারফিল্ডকে গুলি করে। গুইটো তার জীবনকাল ধরে একজন ব্যর্থ আইনজীবী, সাংবাদিক, ধর্মপ্রচারক এবং ফ্রি লাভ কমিউনের সদস্য হিসেবে এক ব্যর্থ অ্যাকটিভিস্ট ছিলেন। তা সত্ত্বেও, তিনি বিশ্বাস করতেন, ঈশ্বর তাকে মহৎ উদ্দেশ্যের জন্য সৃষ্টি করেছেন। গারফিল্ডের মনোনয়নের পর তিনি তাঁর সমর্থনের বিনিময়ে প্যারিসে গুরুত্বপূর্ণ কনস্যুলার পদ দাবি করে হোয়াইট হাউসে ধরনা করতেন। প্রেসিডেন্ট ‘প্যাট্রোনেজ সিস্টেম’-এর ঘোর বিরোধী হওয়ায় তাঁকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরই গুইটো সিদ্ধান্ত নেন—গারফিল্ডকে হত্যা করে ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থারকে ক্ষমতায় আনার ‘ঈশ্বর প্রদত্ত নির্দেশ’ তাঁর ওপর বর্তেছে।
আসল খুনি কে?
লেখক ক্যান্ডিস মিলার্ড তাঁর বেস্ট সেলিং বই ডেসটিনি অব দ্য রিপাবলিক-এ তুলে ধরেছেন, গারফিল্ডের মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল চিকিৎসার চরম অব্যবস্থা। ড. উইলফ্রেড ব্লিস নামক দাম্ভিক চিকিৎসক গারফিল্ডের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। তিনি ব্রিটিশ সার্জন জোসেফ লিস্টার কর্তৃক প্রবর্তিত আধুনিক অ্যান্টিসেপটিক পদ্ধতিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেন। ব্লিস জীবাণুমুক্ত নয় এমন যন্ত্র এবং খালি হাত ব্যবহার করে প্রেসিডেন্টের মেরুদণ্ডের কাছে থাকা গুলিটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। এর ফলে সংক্রমণ (সেপসিস) ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি, গুলি খুঁজতে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল তাঁর সদ্য আবিষ্কৃত প্রারম্ভিক মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করেছিলেন, কিন্তু ব্লিসের অসহযোগিতার কারণে সেটিও ব্যর্থ হয়। শট নেওয়ার প্রায় আশি দিন পর প্রেসিডেন্ট মারা যান এবং এই মৃত্যুর সম্পূর্ণ দায় ড. ব্লিসের ওপর বর্তায়।
রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও গারফিল্ডকে নিউইয়র্কের প্রভাবশালী রিপাবলিকান সিনেটর রোসকো কনকলিং-এর বিরোধিতা মোকাবিলা করতে হয়েছিল। কনকলিং প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক ছিলেন এবং গারফিল্ডের প্রগতিশীল ভাবধারা পছন্দ করতেন না। মাকোভস্কি বিবিসিকে জানান, এই সিরিজের মূল আকর্ষণ হলো ইতিহাসের সেই ‘যদি’ প্রশ্নটি—যদি প্রেসিডেন্ট গারফিল্ড বেঁচে থাকতেন, তবে তিনি হয়তো আমেরিকার অন্যতম সেরা প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন। মাকোভস্কির মতে, ‘গারফিল্ডের অসাধারণ মেধা ছিল। তাঁকে যে আজ ইতিহাসে একটি অস্পষ্ট পাদটীকা হিসেবে স্থান দেওয়া হয়, তা এক ট্র্যাজেডি।’
অভিনেতা মাইকেল শ্যানন গারফিল্ডের ‘ঐশ্বর্য ও মর্যাদা, বিশেষ করে তাঁর শালীনতা’ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন লেখক মিলার্ড।
গারফিল্ডের উত্তরাধিকার ও আইন সংস্কার
মাত্র ৪৯ বছর বয়সে গারফিল্ডের মৃত্যু পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দেয় এবং দেশজুড়ে সরকারি চাকরি সংস্কারের দাবি জোরালো হয়। জনগণের ক্ষোভের কারণেই ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থার, যিনি একসময় প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তিনিই ১৮৮৩ সালে ‘পেন্ডলটন অ্যাক্ট’-এ স্বাক্ষর করেন। এই আইনের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে ‘যোগ্যতা-ভিত্তিক’ নিয়োগের নীতি শুরু হয়, যা মার্কিন সরকারি আমলাতন্ত্রের পেশাদারি নিশ্চিত করার পথ দেখায়। এইভাবে, এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড আমেরিকার শাসনব্যবস্থার ইতিহাসে এক স্থায়ী প্রগতিশীল পরিবর্তন এনে দেয়।

নারায়ণ দেবনাথ চলে গেলেন। আটানব্বই বছর বয়সে। তিনি শিশুসাহিত্যে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বঙ্গবিভূষণ, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিলিট এবং শেষশয্যায় পদ্মশ্রী উপাধি পেয়েছেন। নারায়ণ দেবনাথ কারও বিকল্প ছিলেন না, নারায়ণ দেবনাথেরও কোনো দিন বিকল্প হবে না।
২৩ জানুয়ারি ২০২২
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৯ ঘণ্টা আগে
ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়
৪ দিন আগে
ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লকের বধ্যভূমিটি ‘জল্লাদখানা বধ্যভূমি’ নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর ও বিহারিরা এখানে বাঙালিদের ধরে এনে হত্যা করত। মিরপুর খালের পাশে এক নির্জন এলাকায় দুটি পয়োনিষ্কাশন ট্যাংকের ওপর ছিল একটি পরিত্যক্ত পাম্পহাউস।
৪ দিন আগেসম্পাদকীয়

ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লকের বধ্যভূমিটি ‘জল্লাদখানা বধ্যভূমি’ নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর ও বিহারিরা এখানে বাঙালিদের ধরে এনে হত্যা করত। মিরপুর খালের পাশে এক নির্জন এলাকায় দুটি পয়োনিষ্কাশন ট্যাংকের ওপর ছিল একটি পরিত্যক্ত পাম্পহাউস। ঘাতকেরা এ জায়গাকে বেছে নিয়েছিল বধ্যভূমি হিসেবে।
স্বাধীনতার পরপরই এই বধ্যভূমির সন্ধান যখন পাওয়া যায়, তখন প্রত্যক্ষদর্শীরা সেখানে অসংখ্য বাঙালির কঙ্কাল দেখতে পান। স্থানীয় জনগণ জল্লাদখানার পাশে সে কঙ্কালগুলো দাফন করেন। এ পাম্পহাউসের ভেতরে উঁচু এক বেদিতে লেখা ছিল ‘জল্লাদখানা’। এখানে অনেক বাঙালিকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছিল।
তথ্য: সংগ্রামের নোটবুক

ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লকের বধ্যভূমিটি ‘জল্লাদখানা বধ্যভূমি’ নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর ও বিহারিরা এখানে বাঙালিদের ধরে এনে হত্যা করত। মিরপুর খালের পাশে এক নির্জন এলাকায় দুটি পয়োনিষ্কাশন ট্যাংকের ওপর ছিল একটি পরিত্যক্ত পাম্পহাউস। ঘাতকেরা এ জায়গাকে বেছে নিয়েছিল বধ্যভূমি হিসেবে।
স্বাধীনতার পরপরই এই বধ্যভূমির সন্ধান যখন পাওয়া যায়, তখন প্রত্যক্ষদর্শীরা সেখানে অসংখ্য বাঙালির কঙ্কাল দেখতে পান। স্থানীয় জনগণ জল্লাদখানার পাশে সে কঙ্কালগুলো দাফন করেন। এ পাম্পহাউসের ভেতরে উঁচু এক বেদিতে লেখা ছিল ‘জল্লাদখানা’। এখানে অনেক বাঙালিকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছিল।
তথ্য: সংগ্রামের নোটবুক

নারায়ণ দেবনাথ চলে গেলেন। আটানব্বই বছর বয়সে। তিনি শিশুসাহিত্যে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বঙ্গবিভূষণ, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিলিট এবং শেষশয্যায় পদ্মশ্রী উপাধি পেয়েছেন। নারায়ণ দেবনাথ কারও বিকল্প ছিলেন না, নারায়ণ দেবনাথেরও কোনো দিন বিকল্প হবে না।
২৩ জানুয়ারি ২০২২
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৯ ঘণ্টা আগে
ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়
৪ দিন আগে
উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান।
৪ দিন আগে