মারুফ ইসলাম

ক্রিস্টিনা ক্যালডেরনের বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। ১৭ ফেব্রুয়ারি মারা গেছেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শুধু এক বর্ষীয়সী নারীরই মৃত্যু হয়নি, মৃত্যু হয়েছে একটি ভাষারও। ভাষাটির নাম ‘ইয়ামানা’।
দক্ষিণ আমেরিকার এই নারী কথা বলতেন প্রাচীন ইয়াগন সম্প্রদায়ের ভাষায়। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ক্রিস্টিনাই ছিলেন এই পৃথিবীর সর্বশেষ ব্যক্তি, যিনি ইয়ামানা ভাষায় কথা বলতে পারতেন। ইয়াগন সম্প্রদায়ের আরও অনেক মানুষ রয়েছেন বিশ্বে, কিন্তু কেউ এখন ইয়ামানা ভাষায় কথা বলেন না।
এভাবে মৃত্যু হচ্ছে অনেক ভাষার। এরই মধ্যে কালের গর্ভে ভেসে গেছে কত ভাষা, তার খবর কি আমরা জানি?
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো প্রতিবছর ভাষা নিয়ে একটি তালিকা প্রকাশ করে থাকে। ইউনেসকো বলছে, ইতিমধ্যে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে কত ভাষা, তার সঠিক হিসাব তাদের জানা নেই। ভাষাবিদেরা বিভিন্ন অঞ্চলের হারিয়ে যাওয়া ভাষা গণনা করেছেন। তাঁদের মতে, ইউরোপ ও এশিয়া অঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে অন্তত ৭৫টি ভাষা। যুক্তরাষ্ট্র অঞ্চল থেকে গত ৫০০ বছরে কমপক্ষে ১১৫টি ভাষা হারিয়ে গেছে। অথচ কলম্বাসের সময়ে ওই অঞ্চলে ভাষা ছিল ১৮০টি।
নিউইয়র্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম কোয়ার্টাজের এক প্রতিবেদন বলছে, ১৯৫০ সালের পর আফ্রিকা অঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ৩৭টি ভাষা। আর এই সময়ের মধ্যে সারা পৃথিবী থেকেই হারিয়ে গেছে ২৩০টি ভাষা।
সম্প্রতি বিলুপ্ত হয়েছে এমন কিছু ভাষার তালিকা দিয়েছে ইউনেসকো। সেই তালিকায় রয়েছে ‘আক্কালা সামি’, ‘আসেক্স’, ‘উবাই’ ও ’ইয়াক’।
দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, আক্কালা সামি রাশিয়া অঞ্চলের ভাষা। এই ভাষায় কথা বলা শেষ মানুষটি মারা গেছেন ২০০৩ সালে। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বিলুপ্ত হয়ে গেছে আক্কালা সামি। তানজানিয়ার ভাষা আসেক্স বিলুপ্ত হয়েছে ১৯৭৬ সালে। উবাই তুরস্কের আশপাশের অঞ্চলের একটি ভাষা। এই ভাষায় কথা বলতে পারতেন একমাত্র তেফভিক ইসেংক নামের এক ব্যক্তি। তিনি ১৯৯২ সালে মারা যান। তারপর থেকে উবাই ভাষায় কথা বলার মতো একজন মানুষকেও পাওয়া যায়নি। এ রকম আরেক ব্যক্তির নাম মারিয়ে স্মিথ জোনস। তিনি বাস করতেন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায়। মারিয়ে ছিলেন ইয়াক ভাষায় কথা বলা শেষ ব্যক্তি। তিনি ২০০৮ সালে মারা গেলে তাঁর সঙ্গে ‘মারা’ যায় ইয়াক ভাষাও।
একটি ভাষার মৃত্যু মানে তার সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেক কিছুর মৃত্যু। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সংস্কৃতি, প্রথা, আচরণ ইত্যাদিও মরে যায় তখন, ভেসে যায় কালের স্রোতে।
ভাষাবিদেরা বলেন, কোনো ভাষা এক দিনে মরে না। একটু একটু করে মৃত্যু হয় ভাষার। যেসব ভাষা মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে, তাদের বলা হয় বিলুপ্তপ্রায় ভাষা। পৃথিবীতে এখন বিলুপ্তপ্রায় ভাষার সংখ্যা অনেক।
গত বছরের ১৬ ডিসেম্বরে নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভল্যুশন সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়েছে, আগামী ১০০ বছরের মধ্যে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে প্রায় দেড় হাজার ভাষা। এই ভাষাগুলো এখন বিলুপ্তপ্রায় অবস্থায় আছে।
কোন কোন অঞ্চলের ভাষা সেগুলো? ভাষাবিজ্ঞানীরা বলছেন, এশিয়া অঞ্চলে অন্তত ৮টি ভাষা বিলুপ্তপ্রায় অবস্থায় রয়েছে। এই ভাষাগুলো হচ্ছে সারিকলি, সেজ, আইনু, নাইকান উপিক, হিজল, সোয়াচ, কুসুন্দা ও মেডনেস আলেয়ুত।
এশিয়ান জিয়োগ্রাফিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্ব তাজিকিস্তানের ভাষা ‘সারিকলি’। এ ভাষায় এখনো ১৬ হাজার মানুষ কথা বলেন। আর রাশিয়ার সুন্তা অঞ্চলের মুসলিম নৃগোষ্ঠীদের ভাষা ‘সেজ’। এ ভাষায় এখন কথা বলেন ১৫ হাজার ১৫৪ জন মানুষ। আইনু ভাষায় কথা বলেন কতজন মানুষ, জানেন কি? জাপানের হোক্কাইদু অঞ্চলের মাত্র ১০০ জন মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এই এক শ মানুষের মৃত্যু হলেই হারিয়ে যাবে ভাষাটি।
ওদিকে ‘নাইকান উপিক’ ভাষায় কথা বলা মানুষদের দেখা যায় সাইবেরিয়ান অঞ্চলের চুকসি পেনিনসুলায়। এই ভাষার মানুষের সংখ্যা মাত্র ৭০০। ককেশিয়ায় মাত্র ৫০ থেকে ৬০ জন আদিবাসী মানুষ আছে, যারা হিজল ভাষায় কথা বলে। কম্বোডিয়ার সামরং লয়েউ গ্রামে মাত্র ১০ জন মানুষ বাস করে, যারা ‘সোয়াচ’ ভাষায় কথা বলে। নেপালের গান্দুক গ্রামে কুসুন্দা আদিবাসীদের মধ্যে মাত্র আটজন ব্যক্তি কুসুন্দা ভাষায় কথা বলে। রাশিয়ার বেরিং আইল্যান্ডের মাত্র পাঁচজন ব্যক্তি মেডনেস আলেয়ুত ভাষায় কথা বলে। এই মুষ্টিমেয় মানুষগুলোর মৃত্যু হলে কী হবে এসব ভাষার? স্রেফ চিরতরে হারিয়ে যাবে।
আচ্ছা, আফ্রিকা অঞ্চলের ভাষার খবর কী? এ অঞ্চলের বিলুপ্তপ্রায় ভাষা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম কোয়ার্টাজ। সেই প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, সুদানের ৬৫টি, ক্যামেরুনের ৩৬টি, নাইজেরিয়ার ২৯টি, চাদের ২৯টি, ইথিওপিয়ার ২৮টি, সেনেগালের ১৫টি, কেনিয়ার ১৩টি, তানজানিয়ার ১২টি ও দক্ষিণ আফ্রিকার ১০টি ভাষা বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে।
পৃথিবীর সবচেয়ে বৈচিত্রপূর্ণ ভাষাভাষীর অঞ্চল বলা হয় উত্তর আমেরিকাকে। স্টোরি ম্যাপসের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, এ অঞ্চলের দেশগুলোতে কমপক্ষে ৪০০ ভাষায় কথা বলা মানবসন্তান আছে। এই ৪০০ ভাষার মধ্যে অর্ধেক ভাষাই বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে বলে জানিয়েছে উত্তর আমেরিকার এনডেঞ্জার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ প্রজেক্ট। এই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, যদি ভাষাগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করার উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে অচিরেই এ অঞ্চল থেকে ঐতিহ্যবাহী দুই শ ভাষা হারিয়ে যাবে।
শুধু বিদেশি ভাষাই বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে এমন নয়। বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশের কিছু ভাষাও। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ২০১৮ সালে ভাষা নিয়ে একটি গবেষণা করেছিল। সেই গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রচলিত ১৪টি ভাষা বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাষাগুলো হচ্ছে কুন্দ, খারিয়া, কোদা, সৌরা, মুন্দারি, কোল, মাল্টো, খুমি, পাংখুয়া, রেঙ্গমিচা, চাক, খায়াং, লুসি ও লালেং। এসব ভাষাভাষী মানুষেরা প্রধানত দেশের উত্তরাঞ্চলে, সিলেট অঞ্চলে এবং চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে বাস করে। তারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশে ৪১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রয়েছে, যারা নিজস্ব ভাষায় কথা বলে। তারা জনসংখ্যার দিক থেকে খুব বেশি নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংখ্যা হাজারের ঘর পার হবে না।
হারিয়ে যাওয়া এবং হারাতে বসা এসব ভাষার পরিণতিই বলে দিচ্ছে, ভাষারও যত্ন নিতে হয়। না হলে বাঁচে না। ফি বছর ভাষা দিবস আসে আর যায়, কিন্তু ভাষার আর্তনাদ কারও কানে পৌঁছায় কি? একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আন্তুর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বিশ্বের অনেক দেশেই এ দিবস ঘটা করে পালিত হয়। কিন্তু ভাষার ভেসে যাওয়া ঠেকাতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ আজ অব্দি কোনো দেশ নিতে পেরেছে কি? বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময় এসেছে বোধ হয়।

ক্রিস্টিনা ক্যালডেরনের বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। ১৭ ফেব্রুয়ারি মারা গেছেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শুধু এক বর্ষীয়সী নারীরই মৃত্যু হয়নি, মৃত্যু হয়েছে একটি ভাষারও। ভাষাটির নাম ‘ইয়ামানা’।
দক্ষিণ আমেরিকার এই নারী কথা বলতেন প্রাচীন ইয়াগন সম্প্রদায়ের ভাষায়। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ক্রিস্টিনাই ছিলেন এই পৃথিবীর সর্বশেষ ব্যক্তি, যিনি ইয়ামানা ভাষায় কথা বলতে পারতেন। ইয়াগন সম্প্রদায়ের আরও অনেক মানুষ রয়েছেন বিশ্বে, কিন্তু কেউ এখন ইয়ামানা ভাষায় কথা বলেন না।
এভাবে মৃত্যু হচ্ছে অনেক ভাষার। এরই মধ্যে কালের গর্ভে ভেসে গেছে কত ভাষা, তার খবর কি আমরা জানি?
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো প্রতিবছর ভাষা নিয়ে একটি তালিকা প্রকাশ করে থাকে। ইউনেসকো বলছে, ইতিমধ্যে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে কত ভাষা, তার সঠিক হিসাব তাদের জানা নেই। ভাষাবিদেরা বিভিন্ন অঞ্চলের হারিয়ে যাওয়া ভাষা গণনা করেছেন। তাঁদের মতে, ইউরোপ ও এশিয়া অঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে অন্তত ৭৫টি ভাষা। যুক্তরাষ্ট্র অঞ্চল থেকে গত ৫০০ বছরে কমপক্ষে ১১৫টি ভাষা হারিয়ে গেছে। অথচ কলম্বাসের সময়ে ওই অঞ্চলে ভাষা ছিল ১৮০টি।
নিউইয়র্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম কোয়ার্টাজের এক প্রতিবেদন বলছে, ১৯৫০ সালের পর আফ্রিকা অঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ৩৭টি ভাষা। আর এই সময়ের মধ্যে সারা পৃথিবী থেকেই হারিয়ে গেছে ২৩০টি ভাষা।
সম্প্রতি বিলুপ্ত হয়েছে এমন কিছু ভাষার তালিকা দিয়েছে ইউনেসকো। সেই তালিকায় রয়েছে ‘আক্কালা সামি’, ‘আসেক্স’, ‘উবাই’ ও ’ইয়াক’।
দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, আক্কালা সামি রাশিয়া অঞ্চলের ভাষা। এই ভাষায় কথা বলা শেষ মানুষটি মারা গেছেন ২০০৩ সালে। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বিলুপ্ত হয়ে গেছে আক্কালা সামি। তানজানিয়ার ভাষা আসেক্স বিলুপ্ত হয়েছে ১৯৭৬ সালে। উবাই তুরস্কের আশপাশের অঞ্চলের একটি ভাষা। এই ভাষায় কথা বলতে পারতেন একমাত্র তেফভিক ইসেংক নামের এক ব্যক্তি। তিনি ১৯৯২ সালে মারা যান। তারপর থেকে উবাই ভাষায় কথা বলার মতো একজন মানুষকেও পাওয়া যায়নি। এ রকম আরেক ব্যক্তির নাম মারিয়ে স্মিথ জোনস। তিনি বাস করতেন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায়। মারিয়ে ছিলেন ইয়াক ভাষায় কথা বলা শেষ ব্যক্তি। তিনি ২০০৮ সালে মারা গেলে তাঁর সঙ্গে ‘মারা’ যায় ইয়াক ভাষাও।
একটি ভাষার মৃত্যু মানে তার সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেক কিছুর মৃত্যু। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সংস্কৃতি, প্রথা, আচরণ ইত্যাদিও মরে যায় তখন, ভেসে যায় কালের স্রোতে।
ভাষাবিদেরা বলেন, কোনো ভাষা এক দিনে মরে না। একটু একটু করে মৃত্যু হয় ভাষার। যেসব ভাষা মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে, তাদের বলা হয় বিলুপ্তপ্রায় ভাষা। পৃথিবীতে এখন বিলুপ্তপ্রায় ভাষার সংখ্যা অনেক।
গত বছরের ১৬ ডিসেম্বরে নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভল্যুশন সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়েছে, আগামী ১০০ বছরের মধ্যে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে প্রায় দেড় হাজার ভাষা। এই ভাষাগুলো এখন বিলুপ্তপ্রায় অবস্থায় আছে।
কোন কোন অঞ্চলের ভাষা সেগুলো? ভাষাবিজ্ঞানীরা বলছেন, এশিয়া অঞ্চলে অন্তত ৮টি ভাষা বিলুপ্তপ্রায় অবস্থায় রয়েছে। এই ভাষাগুলো হচ্ছে সারিকলি, সেজ, আইনু, নাইকান উপিক, হিজল, সোয়াচ, কুসুন্দা ও মেডনেস আলেয়ুত।
এশিয়ান জিয়োগ্রাফিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্ব তাজিকিস্তানের ভাষা ‘সারিকলি’। এ ভাষায় এখনো ১৬ হাজার মানুষ কথা বলেন। আর রাশিয়ার সুন্তা অঞ্চলের মুসলিম নৃগোষ্ঠীদের ভাষা ‘সেজ’। এ ভাষায় এখন কথা বলেন ১৫ হাজার ১৫৪ জন মানুষ। আইনু ভাষায় কথা বলেন কতজন মানুষ, জানেন কি? জাপানের হোক্কাইদু অঞ্চলের মাত্র ১০০ জন মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এই এক শ মানুষের মৃত্যু হলেই হারিয়ে যাবে ভাষাটি।
ওদিকে ‘নাইকান উপিক’ ভাষায় কথা বলা মানুষদের দেখা যায় সাইবেরিয়ান অঞ্চলের চুকসি পেনিনসুলায়। এই ভাষার মানুষের সংখ্যা মাত্র ৭০০। ককেশিয়ায় মাত্র ৫০ থেকে ৬০ জন আদিবাসী মানুষ আছে, যারা হিজল ভাষায় কথা বলে। কম্বোডিয়ার সামরং লয়েউ গ্রামে মাত্র ১০ জন মানুষ বাস করে, যারা ‘সোয়াচ’ ভাষায় কথা বলে। নেপালের গান্দুক গ্রামে কুসুন্দা আদিবাসীদের মধ্যে মাত্র আটজন ব্যক্তি কুসুন্দা ভাষায় কথা বলে। রাশিয়ার বেরিং আইল্যান্ডের মাত্র পাঁচজন ব্যক্তি মেডনেস আলেয়ুত ভাষায় কথা বলে। এই মুষ্টিমেয় মানুষগুলোর মৃত্যু হলে কী হবে এসব ভাষার? স্রেফ চিরতরে হারিয়ে যাবে।
আচ্ছা, আফ্রিকা অঞ্চলের ভাষার খবর কী? এ অঞ্চলের বিলুপ্তপ্রায় ভাষা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম কোয়ার্টাজ। সেই প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, সুদানের ৬৫টি, ক্যামেরুনের ৩৬টি, নাইজেরিয়ার ২৯টি, চাদের ২৯টি, ইথিওপিয়ার ২৮টি, সেনেগালের ১৫টি, কেনিয়ার ১৩টি, তানজানিয়ার ১২টি ও দক্ষিণ আফ্রিকার ১০টি ভাষা বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে।
পৃথিবীর সবচেয়ে বৈচিত্রপূর্ণ ভাষাভাষীর অঞ্চল বলা হয় উত্তর আমেরিকাকে। স্টোরি ম্যাপসের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, এ অঞ্চলের দেশগুলোতে কমপক্ষে ৪০০ ভাষায় কথা বলা মানবসন্তান আছে। এই ৪০০ ভাষার মধ্যে অর্ধেক ভাষাই বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে বলে জানিয়েছে উত্তর আমেরিকার এনডেঞ্জার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ প্রজেক্ট। এই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, যদি ভাষাগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করার উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে অচিরেই এ অঞ্চল থেকে ঐতিহ্যবাহী দুই শ ভাষা হারিয়ে যাবে।
শুধু বিদেশি ভাষাই বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে এমন নয়। বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশের কিছু ভাষাও। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ২০১৮ সালে ভাষা নিয়ে একটি গবেষণা করেছিল। সেই গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রচলিত ১৪টি ভাষা বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাষাগুলো হচ্ছে কুন্দ, খারিয়া, কোদা, সৌরা, মুন্দারি, কোল, মাল্টো, খুমি, পাংখুয়া, রেঙ্গমিচা, চাক, খায়াং, লুসি ও লালেং। এসব ভাষাভাষী মানুষেরা প্রধানত দেশের উত্তরাঞ্চলে, সিলেট অঞ্চলে এবং চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে বাস করে। তারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশে ৪১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রয়েছে, যারা নিজস্ব ভাষায় কথা বলে। তারা জনসংখ্যার দিক থেকে খুব বেশি নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংখ্যা হাজারের ঘর পার হবে না।
হারিয়ে যাওয়া এবং হারাতে বসা এসব ভাষার পরিণতিই বলে দিচ্ছে, ভাষারও যত্ন নিতে হয়। না হলে বাঁচে না। ফি বছর ভাষা দিবস আসে আর যায়, কিন্তু ভাষার আর্তনাদ কারও কানে পৌঁছায় কি? একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আন্তুর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বিশ্বের অনেক দেশেই এ দিবস ঘটা করে পালিত হয়। কিন্তু ভাষার ভেসে যাওয়া ঠেকাতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ আজ অব্দি কোনো দেশ নিতে পেরেছে কি? বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময় এসেছে বোধ হয়।

আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
১৫ ঘণ্টা আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

নানাভাবে মৃত্যু হচ্ছে অনেক ভাষার। এরই মধ্যে কালের গর্ভে ভেসে গেছে কত ভাষা, তার খবর কি আমরা জানি?
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

নানাভাবে মৃত্যু হচ্ছে অনেক ভাষার। এরই মধ্যে কালের গর্ভে ভেসে গেছে কত ভাষা, তার খবর কি আমরা জানি?
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
১৫ ঘণ্টা আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

নানাভাবে মৃত্যু হচ্ছে অনেক ভাষার। এরই মধ্যে কালের গর্ভে ভেসে গেছে কত ভাষা, তার খবর কি আমরা জানি?
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
১৫ ঘণ্টা আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

নানাভাবে মৃত্যু হচ্ছে অনেক ভাষার। এরই মধ্যে কালের গর্ভে ভেসে গেছে কত ভাষা, তার খবর কি আমরা জানি?
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
১৫ ঘণ্টা আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে