Ajker Patrika

রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ড বাবাকে খুঁজে বেড়ায় আনোয়ারা

মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২১, ১১: ৪৫
রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ড  বাবাকে খুঁজে বেড়ায় আনোয়ারা

রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহর বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু আনোয়ারা খাতুন। বয়স সাত পেরোলেও কথা বলতে পারে না। বাবার সঙ্গেই ছিল সারা দিন তার ওঠাবসা। খেতে-পরতে সবখানেই সঙ্গী ছিল বাবা। সেই বাবা যে আনোয়ারার জীবনে আর কোনো দিন ফিরবে না, এ কঠিন বাস্তবতাটি তাকে কে বোঝাবে? সারা দিন তার প্রিয় ঝুপড়ি বাড়ি ও বাবার সংগঠনের কার্যালয় আছে পুলিশ পাহারায়। এক সপ্তাহ ধরে কত অচেনা-অজানা মানুষের আনাগোনা দেখছে আনোয়ারা। সবখানেই যেন বাবাকেই খোঁজে বেড়ায়!

গত বুধবার বাড়ির দরজায় ছোট ভাই মাহবুব উল্লাহর পাশে দাঁড়িয়ে ছিল আনোয়ারা। চোখে-মুখে খেলা করছে আতঙ্ক ও হতাশা। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে! এদিক-ওদিক চাহনি।

মুহিবুল্লাহর চাচা ছৈয়দ আলম (৬২) বলেন, আট সন্তানের মধ্যে মুহিবুল্লাহর খুবই আদরের ছিল আনোয়ারা। এখন বাবাকে হারিয়ে আনোয়ারার ভবিষ্যৎ কী হবে-আল্লাহই জানে!

মুহিবুল্লাহর ভাগিনা রশিদ উল্লাহ জানান, আনোয়ারা ক্ষণে ক্ষণে দরজায় এসে দাঁড়িয়ে থাকে, কান্নাকাটি করে। একটু পর পরই বাবার খুঁজে বেরিয়ে পড়ে।

কক্সবাজার শহর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ১ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরের লম্বাশিয়া বাজার। জনাকীর্ণ বাজারের পাশেই পরিবার নিয়ে থাকতেন রোহিঙ্গাদের শীর্ষস্থানীয় নেতা এবং তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মুহিব উল্লাহ। তাঁর ঝুপড়ি বাড়ির পাশেই সংগঠনের কার্যালয়। সেখানেই গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে মেঝেতে বসে সমর্থকদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করার সময় কয়েকজন আততায়ীর গুলিতে খুন হন তিনি

ঘটনার পর থেকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কয়েকজন সদস্য মুহিবুল্লাহর বাড়ি ও অফিস পাহারা দিচ্ছেন।

রোহিঙ্গাদের কাছে খুব জনপ্রিয় এই নেতা মাস্টার মুহিবুল্লাহ হিসেবেই পরিচিত। তাঁর এ হত্যাকাণ্ড মেনে নিতে পারছে না সাধারণ রোহিঙ্গারা। তারা এ ঘটনার পর থেকে ভয়-আতঙ্ক ও শোকে মুহ্যমান।

হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে মুহিবুল্লাহর স্ত্রী নাসিমা খাতুন ও ভাই হাবিবুল্লাহর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তাঁরা ভয়ের মধ্যে রয়েছেন বলে জানান স্বজনেরা। এর মধ্যে খুনিরা নানা মাধ্যমে তাঁদের মামলা প্রত্যাহার ও হত্যাকাণ্ড নিয়ে মুখ না খুলতে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের সেক্রেটারি ডা. মোহাম্মদ জুবাইর বলেন,‘ বাংলাদেশ সরকার এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত করছে। আমরা সরকারের তৎপরতায় সন্তুষ্ট।’

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান জানান, শিগগিরই এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ