Ajker Patrika

মিয়ানমারের মর্টার-গোলায় সীমান্তে আতঙ্ক, পালাচ্ছে মানুষ

আমানুর রহমান রনি ও মাঈনুদ্দিন খালেদ, নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) থেকে
আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২: ২৭
মিয়ানমারের মর্টার-গোলায় সীমান্তে আতঙ্ক, পালাচ্ছে মানুষ

ওপারে মিয়ানমারে লড়াই তীব্রতর হয়ে উঠেছে। একের পর এক ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে সামরিক বাহিনী। লড়াইয়ের আঁচ লাগছে সীমান্তের এপার বাংলাদেশেও। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে মর্টার শেলের আঘাতে দুজন নিহত হওয়ার পর গতকাল উখিয়ায় আহত হয়েছেন সাতজন। এর পর থেকে সীমান্ত এলাকার মানুষ সরে যাচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ের আশায়। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসছেন মিয়ানমার বাহিনীর সদস্যরা। এ অবস্থায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে সতর্ক করে দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে সরকার। 

কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালীর বালুখালী জমিদারপাড়ায় সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য প্রয়াত ইসলাম খানের বাড়ি। সীমান্ত লাগোয়া বাড়িটির পূর্ব দিকে আধা কিলোমিটার ধানখেত। এরপর নাফ নদী। ওপারে একটি সড়ক, তার পাশ ঘেঁষে মিয়ানমারের ডেকুবুনিয়া চেকপোস্ট। এই চেকপোস্ট দখলে নিতে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে লড়ছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় গোলাগুলি শুরু হতেই স্থানীয় লোকজনকে হুড়মুড়িয়ে প্রয়াত ইসলাম খানের বাড়ির টিনের বেড়ার পাশে আশ্রয় নিতে দেখা যায়। এ সময় সংঘাতে থাকা মিয়ানমারের দুই পক্ষই বাংলাদেশেও ঢুকে পড়ে।

স্থানীয় সূত্র বলেছে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এবং কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়াসংলগ্ন এলাকায় মিয়ানমারের ভেতরে দেশটির সামরিক বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মি ও রোহিঙ্গা স্যালভেশন অর্গানাইজেশনের (আরএসও) ত্রিমুখী সংঘর্ষ চলছে। সেখান থেকে ছুটে আসা মর্টার শেলের আঘাতে বান্দরবানে গত সোমবার দুজন নিহত হয়েছেন। গত কয়েক দিনে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে গতকাল উখিয়া সীমান্ত এলাকায় সাত বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। এদিকে যুদ্ধে টিকতে না পেরে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্যসংখ্যা বেড়ে ২৬৪ জন হয়েছে বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

গতকাল উখিয়ার মিয়ানমার সীমান্তবর্তী দামনখালী, রহমতেরবিল, চাকমা কাটাসহ অন্তত সাতটি এলাকায় গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। গোলাগুলির একপর্যায়ে কয়েকটি গুলি বালুখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসে পড়ে। অবশ্য স্কুলটি বন্ধ ছিল।

পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এম গহুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রহমতেরবিলে সাত বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কজনক। তাঁকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আমাকে রহমতের বিলের বাসিন্দারা ফোন করে জানান, বৃষ্টির মতো গোলাগুলি হচ্ছে। আমি দৌড়ে সেখানে যাই। এ সময় মিয়ানমার বাহিনীর ১১১ জন বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। আমরা, বিজিবি গিয়ে তাদের ধরে ফেলি। একই সময় একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর ২৪ জনকে আটক করি। তাদের কাছে অস্ত্র ছিল। সেগুলো বিজিবি হেফাজতে নিয়েছে। দুপুর সাড়ে ১২টার পর গোলাগুলির শব্দ আর পাওয়া যায়নি।’

এদিকে সকাল সোয়া ৯টার দিকে মিয়ানমার থেকে ছোড়া একটি মর্টার শেল এসে পড়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের মধ্যমপাড়ায়। মর্টার শেলটি ঘুমধুম উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পেছনে বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের বাড়ির উঠানের আমগাছে লেগে মাটিতে গেঁথে যায়। এতে কেউ হতাহত না হলেও বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আগেই সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’

নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু সীমান্ত এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিভিন্ন ঘাঁটি পাহারা দিচ্ছেন আরাকান আর্মির সদস্যরা। এই এলাকায় গতকাল কোনো গোলাগুলির ঘটনা ঘটেনি। তবে সীমান্ত এলাকার মানুষ কেউ বাড়িঘরে থাকছে না।

গতকাল বিকেল ৪টায় ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, সীমান্ত এলাকায় সমস্যার কারণে সাময়িকভাবে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য এলাকার লোকজনকে অনুরোধ করা হচ্ছে। দুটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা আছে, সেখানেও যেতে পারবে স্থানীয় বাসিন্দারা।’ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গতকাল বিকেল পর্যন্ত স্থানীয় কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে যাননি।

সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে 
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, বিজিবির নবনিযুক্ত মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেছেন, ‘সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। আমরা ধৈর্য ধারণ করে মানবিক দিক থেকে এবং আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক বজায় রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করছি।’

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গতকাল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিজিবির মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘সোমবার রাত পর্যন্ত মিয়ানমারের বিজিপি, সেনাবাহিনী, অন্যান্যসহ ১১৫ জন সদস্য আত্মসমর্পণ করে আমাদের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে ১১৪ জন যোগ হয়েছেন। দুপুরের মধ্যে আরও ৩৫ জন এসেছেন। বর্তমানে ২৬৪ জন আছেন। আমরা তাঁদের আশ্রয় ও খাবার দিয়েছি। তাঁদের মধ্যে আহত ১৫ জন। ৮ জনের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের ৪ জনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এবং বাকিদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, ‘টুঙ্গিপাড়ায় আসার পথে খবর পেলাম, ৬৫ জন রোহিঙ্গা নৌকায় করে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছিল। টেকনাফে বিজিবি তাদের ঠেকিয়ে ফিরিয়ে দেওয়ার কাজ করছে। আমরা আর কোনো রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেব না।’

রাষ্ট্রদূতকে তলব, মর্টার ছোড়ায় প্রতিবাদ
কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা জানান, সামরিক কাজে ব্যবহৃত হয় মিয়ানমারের এমন কোনো উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টার যাতে বাংলাদেশের আকাশসীমায় না ঢোকে, সে জন্য দেশটিকে সতর্ক করে দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি সরকার মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে বাংলাদেশে দুজন নিহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় গতকাল মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে ডেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার অনুবিভাগের মহাপরিচালক মিয়া মো. মাইনুল কবির এ সতর্কতার কথা জানান। বাংলাদেশের অবস্থানের বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের জন্য রাষ্ট্রদূতের কাছে মহাপরিচালক একটি কূটনৈতিক চিঠিও হস্তান্তর করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ পরে সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে প্রাণহানি ও সম্পত্তির ক্ষতি হয়, এমন কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নয়। মিয়ানমার সরকারকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের আর বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না।

বিজিবির সঙ্গে কাজ করছে পুলিশ 
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা জানান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, সীমান্ত এলাকায় বিজিবির সঙ্গে পুলিশও কাজ করছে। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশে গুরুতর আহত পুলিশ সদস্য রাজ্জাককে গতকাল রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

সীমান্তে মর্টার শেলের আঘাতে নিহত দুজনের পরিবার কাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, ‘কে মর্টার শেল নিক্ষেপ করেছে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। আমরা একটা মামলা নিয়েছি। আসামি অজ্ঞাতনামা। তদন্তে যাদের নাম আসবে, পরবর্তী সময়ে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রথম আলো, ডেইলি স্টারে হামলা ও নূরুল কবীরকে হেনস্তার ঘটনায় বিপিজেএর নিন্দা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রথম আলো, ডেইলি স্টারে হামলা ও নূরুল কবীরকে হেনস্তার ঘটনায় বিপিজেএর নিন্দা

দেশের পাঠকপ্রিয় দুই সংবাদমাধ্যম দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা এবং প্রবীণ সাংবাদিক ও দ্য নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে নাজেহাল ও হেনস্তা করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ পার্লামেন্ট জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজেএ)।

আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি হারুন জামিল ও সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী লিথো এই প্রতিবাদ জানান।

বিপিজেএ নেতারা বলেন, সংবাদপত্রের ওপর যেকোনো ধরনের হামলা স্বাধীন মতপ্রকাশের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে এ ধরনের সহিংসতা অগ্রহণযোগ্য।

বিবৃতিতে তাঁরা উল্লেখ করেন, সমাজে ভিন্নমত থাকবেই এবং মতের ভিন্নতা একটি সুস্থ সমাজ বিনির্মাণে সহায়তা করে। সাংবাদিকতা কোনো অপরাধমূলক কাজ নয়, বরং এটি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার দায় দুষ্কৃতকারীদের। নেতারা বলেন, অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢালাওভাবে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করা চরম অন্যায়।

বিবৃতিতে নেতারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, দেশে যখন একটি সুস্থ ধারার রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে, ঠিক সেই মুহূর্তে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের ওপর এ ধরনের বর্বরোচিত হামলা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার একটি অপচেষ্টা হতে পারে।

বিপিজেএ অবিলম্বে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদের পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ১৬
প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব

দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ন্যক্কারজনক ঘটনায় গভীর উদ্বেগ, ক্ষোভ এবং তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ ও সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াব। একই সঙ্গে এসব ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে সংগঠন দুটি।

আজ শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এই নিন্দা জ্ঞাপন ও শাস্তি দাবি করেন তাঁরা।

এতে বলা হয়, ‘এই হামলা শুধু গণমাধ্যমের ওপর নয়, এটা আমাদের সমাজের ওপর, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর আক্রমণ। সর্বোপরি বাংলাদেশের ওপর আক্রমণ। গভীর রাতের ওই হামলায় প্রতিষ্ঠান দুটির গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও সম্পদহানির পাশাপাশি সংবাদকর্মীদের জীবনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল। এটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির পাশাপাশি রাষ্ট্রের দায় এবং দায়িত্বহীনতারও স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব মনে করে, এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। শুরু থেকেই মব ভায়োলেন্স (সংগঠিত) প্রতিরোধে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার যে ধারাবাহিকতা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, সর্বশেষ ঘটনা তার আরেকটি ভয়াবহ উদাহরণ। গণমাধ্যম কার্যালয়ে হামলা প্রমাণ করে যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো অপরাধ দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।’

একই সঙ্গে সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব ছায়ানটে হামলার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান এবং দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামকে ফোন করে নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন এবং পাশে আছেন বলে জানান। তবে এই হামলা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় অন্তর্বর্তী সরকারকেই নিতে হবে। বিবৃতি বা আশ্বাস নয়, অবিলম্বে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারসহ সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নূরুল কবীরকে হেনস্তায় ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছে সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব।

পেশাজীবী সংগঠন, ব্যবসায়ী, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলসহ সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে এ দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির মৃত্যুতে উদ্বেগ, নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানালেন জাতিসংঘের ফলকার তুর্ক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ১৭
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক। ছবি: সংগৃহীত
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক। আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে তিনি এ ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

১২ ডিসেম্বর ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘হাদির মৃত্যুর ঘটনায় যারা দায়ী, তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত, নিরপেক্ষ, পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং স্বচ্ছ তদন্ত করার জন্য আমি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে দায়ীদের জবাবদিহি এবং আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার অনুরোধ করছি।’

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বাংলাদেশে বিক্ষোভ চলছে। এই পরিস্থিতিতে ফলকার তুর্ক সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ‘প্রতিহিংসা এবং প্রতিশোধ কেবল বিভাজন বাড়াবে এবং পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।’

আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই সময়টিকে অত্যন্ত সংবেদনশীল উল্লেখ করে ফলকার তুর্ক বলেন, ‘এই সময়ে এমন একটি পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি, যেখানে জনজীবনে সবার নিরাপদ অংশগ্রহণ এবং স্বাধীনভাবে ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ থাকবে।’

ফলকার তুর্ক আরও বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ অস্থিরতা যাতে আর না বাড়ে, সে বিষয়ে সরকারকে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদি হত্যার প্রতিবাদে গণমাধ্যমের ওপর হামলার দায় সরকার এড়াতে পারে না: টিআইবি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে পরিকল্পিত ও নির্মম হত্যাকাণ্ডে গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই সঙ্গে, এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে মুক্ত গণমাধ্যম, ভিন্নমত ও বাক্‌স্বাধীনতার ওপর সংঘটিত ও অভূতপূর্ব ধ্বংসাত্মক হামলার ঘটনাকে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ভিত্তি, নাগরিক নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার চেতনার বিরুদ্ধে সরাসরি আঘাত বলে মন্তব্য করেছে সংস্থাটি।

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক লিখিত বিবৃতিতে এসব কথা জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, টার্গেটেড শুটিংয়ে জড়িতদের গ্রেপ্তারে ব্যর্থতা এবং পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে যেতে সহায়তার অভিযোগ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অদূরদর্শিতা ও অদক্ষতারই প্রতিফলন। এর ফলে গণরোষ থেকে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি আরও বেড়েছে, যার দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।

ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতনের পর বিজয়ের দাবিদার কিছু শক্তির আক্রোশপূর্ণ ও প্রতিশোধপ্রবণ আচরণ রাষ্ট্র ও সমাজে নতুন ধরনের দমনমূলক প্রবণতা তৈরি করছে। এর সরাসরি শিকার হচ্ছে মুক্ত গণমাধ্যম, ভিন্নমত ও বাক্‌স্বাধীনতা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার কার্যকর অবস্থান নিতে ব্যর্থ হয়েছে; বরং অতীতে অনুরূপ সংকটে নতজানু অবস্থান গ্রহণ করে রাষ্ট্র নিজেই অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতার ক্ষেত্র প্রসারিত করেছে।

টিআইবি জানায়, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের মতো শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, দৈনিক নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর হামলা, সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটে আক্রমণ এবং কথিত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে দীপু চন্দ্র দাসকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন নয়। বরং এসবই মুক্তচিন্তা, ভিন্নমত ও স্বাধীন মতপ্রকাশকে পরিকল্পিতভাবে দমনের জ্বলন্ত উদাহরণ।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কর্তৃত্ববাদী শাসনামলে যেভাবে মানবিক মূল্যবোধ ও মৌলিক মানবাধিকার পদদলিত হয়েছিল, আজ সেই একই দমনমূলক বাস্তবতা নতুন রূপে ফিরে আসছে। যারা বিগত ১৬ বছর অধিকার হরণের শিকার হয়েছেন এবং জুলাই আন্দোলনের বিজয়ী হিসেবে নিজেদের দাবি করছেন, তাঁদেরই একাংশের হাতে আজ মুক্ত গণমাধ্যম ও ভিন্নমতের অধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে।

ড. ইফতেখারুজ্জামান সতর্ক করে বলেন, এসব ঘটনার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা, জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ও মূল্যবোধ চরম হুমকির মুখে পড়ছে। বৈষম্যমুক্ত সমাজ, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সম্প্রীতি ও বহু সংস্কৃতির সহাবস্থানের যে স্বপ্ন একাত্তর ও জুলাই ধারণ করেছিল, তা আজ গভীর সংকটে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট আবেগকে কাজে লাগিয়ে মুক্ত গণমাধ্যম ও নাগরিক অধিকারের বিরোধী স্বার্থান্বেষী মহল পতিত শক্তির ইন্ধনে সহিংসতা উসকে দিচ্ছে। তিনি হত্যাকারীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক বিচার, উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থতার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি এবং মুক্ত গণমাধ্যম ও নাগরিক অধিকারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে কার্যকর, সমন্বিত ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।

ড. ইফতেখারুজ্জামান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এসব পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ, রাষ্ট্র সংস্কারের প্রত্যাশা, সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং একাত্তর ও জুলাইয়ের মৌলিক আদর্শ আরও গভীর সংকটে পড়বে, যার দায় সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত