শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সেকশন

 

যশোর-খুলনা মহাসড়কে ওয়ে স্কেল: দেড় কোটির প্রকল্প বিফলে

আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:২১

অতিরিক্ত পণ্যবাহী যানবাহন ঠেকাতে যশোর-খুলনা মহাসড়কের চেঙ্গুটিয়া এলাকায় স্থাপিত ওজন মাপার যন্ত্র ও নিয়ন্ত্রণকক্ষ। ছবি: আজকের পত্রিকা অতিরিক্ত পণ্যবাহী যানবাহন ঠেকাতে গত বছর যশোর-খুলনা মহাসড়কের চেঙ্গুটিয়া এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) একটি ওয়ে স্কেল (ওজন মাপার যন্ত্র) স্থাপন করে। যন্ত্রটি চালু হওয়ার তিন দিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়; যা এখনো বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন পড়ে থেকে ওয়ে স্কেলের যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে।

সওজ বিভাগ বলছে, স্কেলটি স্থাপন করা হলেও স্থানীয় ট্রাক ও ট্যাংকলরি মালিক সমিতির আপত্তির মুখে চালু করে আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে সরকারি প্রকল্পটির প্রায় দেড় কোটি টাকা বিফলে গেছে।

এদিকে অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই যানবাহন চলাচলের কারণে মহাসড়কটি দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাঁরা বলছেন, অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই যানবাহনের কারণে মহাসড়কের বেশির ভাগ অংশ দেবে উঁচু-নিচু হয়ে গেলেও সওজ বিভাগ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

যশোর সওজ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে যানবাহন চলাচল ঠেকাতে ২০২০-২১ অর্থবছরে যশোর-খুলনা মহাসড়কের অভয়নগর উপজেলার চেঙ্গুটিয়া এলাকায় পণ্য পরিমাপের জন্য সওজ বিভাগ একটি ওয়ে স্কেল বা ওজন নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র স্থাপন করে। ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ওয়ে স্কেলটি স্থাপন করা হয়। এর পাশেই ওয়ে স্কেলটির পরিচালনা করার জন্য ১০ কর্মচারীর জন্য তিন কক্ষবিশিষ্ট একতলা একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু স্কেলটি চালু হওয়ার তিন দিনের মাথায় নওয়াপাড়া এলাকার ট্রাক মালিক সমিতির লোকজন স্কেলটি বন্ধ করার জন্য কর্মকর্তাদের কাছে দাবি জানান। এমনকি সেটি বন্ধ না করায় ট্রাক মালিক সমিতির লোকজন স্কেল পরিচালনা শ্রমিকদের মারধরও করেন। এরপর খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এ বিষয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকের পর স্কেলটি বন্ধ করে রাখা হয়।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাসড়কের পাশে ওয়ে স্কেলটি স্থাপন করা আছে। স্কেলের পাশেই একটি দাপ্তরিক কক্ষ রয়েছে। কক্ষটি তালাবদ্ধ পড়ে রয়েছে। স্কেলের ওপরে যানবাহন ওঠানামার মুখেই কয়েকটি ট্রাক দাঁড় করিয়ে রাখা আছে। স্থানীয় লোকজন স্কেলের পাশে বালু স্তূপ করে রেখেছেন। এই ওয়ে স্কেলটি পরিচালনার কাজে নিয়োজিত কর্মচারীদের আবাসন সুবিধার জন্য পাশে তিন কক্ষবিশিষ্ট একতলা একটি ভবন রয়েছে।

হানিফ নামে একজন ট্রাকচালক বলেন, ‘আমরা নওয়াপাড়া থেকে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে সারা দেশে পৌঁছে দিয়ে থাকি। যেখান থেকে পণ্য বোঝাই করি, সেখানেই ওজন করে গাড়িতে তোলা হয়। ওয়ে স্কেল থাকলে তো ভালো। কয়েক দিন এই ওয়ে স্কেল চালু হলে ট্রাকে সড়কের নির্ধারিত পণ্যের তালিকার বাইরে বেশি পণ্য কেউ নিতে পারতেন না।’

যশোর জেলা ট্রাক ও ট্যাংকলরি মালিক সমিতির সভাপতি রেজাউল বিশ্বাস বলেন, ‘ওয়ে স্কেলটি চালু হলে আমরা আপত্তি জানিয়েছিলাম, এটা সত্য। আমাদের দাবি ছিল, সারা দেশে একযোগে ওয়ে স্কেল কার্যকর করতে হবে। শুধু নওয়াপাড়া এলাকায় এই স্কেল কার্যকর হলে সারা দেশের ব্যবসায়ীরা নওয়াপাড়া নৌবন্দর ব্যবহার করতে আসতেন না। ফলে বন্দরটি ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি হারাত। যে কারণে আমরা খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে গিয়ে বৈঠক করে এই দাবি জানিয়েছিলাম। সারা দেশে ওয়ে স্কেল কার্যকর না হলে শুধু যশোরে কার্যকর করা ঠিক হবে না।’

যশোর জেলা নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সমন্বয়ক শেখ মাসুদুজ্জামান মিঠু বলেন, ‘প্রথম এই মহাসড়ক নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সড়ক বিভাগ অনিয়ম-দুর্নীতি করেছে। এর ফলে কিছুদিনের মধ্যে এই সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তার পরেও মহাসড়ক ঠিক রাখতে সওজ যে ওয়ে স্কেল স্থাপন করেছিল; সেটি চালু হওয়ার পর বন্ধ রাখা হয়। ঘটনাটি দুঃখজনক।’

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর যশোরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফ মাহমুদ বলেন, ‘ওয়ে স্কেল বসানোতে এই মহাসড়কে যানবাহনে অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণেই স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ট্রাক মালিক সমিতির লোকজন আমাদের ওপর আক্রমণ করেছিল।’

সওজ বিভাগ যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বলেন, স্কেলটি চালু হওয়ার পর স্থানীয় ট্রাকমালিক ও শ্রমিকদের আপত্তির মুখে সেটি বন্ধ রাখা হয়। এখনো ওই অবস্থায় পড়ে আছে।’

মন্তব্য

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।
Show
 
    সব মন্তব্য

    ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

    পঠিতসর্বশেষ

    এলাকার খবর

     

    রাজধানীতে যানজটে আরও মন্থর গতি

    খাসজমি দখল করে দক্ষিণ বনশ্রীতে ১০ তলা ভবন

    সাবেক এমপির দখলেই ১৪ বছর, রাজস্ব ফাঁকি

    যশোরে আহ্বায়ক কমিটিতেই পার ৬ বছর, চলছে অস্থিরতা

    দুর্নীতি-লুটপাট বিচারে কমিশন গঠনের দাবি

    নিরাপদ সড়কের গল্প

    এখন একটা সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব ঘটে গেছে: ফরহাদ মজহার

    ট্রেনের নিচে ঝাঁপ বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তার, দ্বিখণ্ডিত লাশের পাশে সুইসাইড নোট

    রাজধানীর মোহাম্মদপুরে দুই যুবককে কুপিয়ে হত্যা

    ফেরার সময় ফুল নিয়ে ফিরতে পারলেই সফলতা: নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য 

    রাশিয়ার সবচেয়ে ধনী নারীর কাছে স্বামী এখন শত্রু

    সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি পার, বৃষ্টি কবে জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর