আপনাকে স্বাধীনতা দেওয়া হলো—খবরটি শোনার পর চাইলে আপনি হো হো করে হাসতে পারেন, চাইলে ভ্রু কুঁচকে বলতে পারেন, ‘মানুষ কতটা গর্দভ হলে এ রকম কাজ করতে পারে!’
৯৪ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়ে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তোড়জোড় করে রাস্তা তৈরির কাজ শুরু করেছেন। শুরুতে খুঁড়েছেন সড়ক। আধা কিলোমিটার খুঁড়ে ফেলার পর টনক নড়ল তাঁদের। আরে! দরপত্র তো পাওয়া গেছে অন্য এক সড়কের জন্য! তাহলে এই সড়ক খুঁড়ছি কেন? খোঁড়াখুঁড়ির আগে ভাবাই হয়নি, ঠিক সড়কের মাটি কাটা হচ্ছে কি না। ব্যস! এরপর খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ! দরপত্রে উল্লিখিত সড়কের বদলে ইটের সলিং বসানো সড়ক কেন খুঁড়ল এই প্রতিষ্ঠান, তার কী ব্যাখ্যা হতে পারে, তা আমাদের জানা নেই। তবে বিষয়টিকে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার একটি প্রকট উদাহরণ হিসেবে ধরা হলে সম্ভবত ভুল করা হবে না।
ঘটনাটি ময়মনসিংহের গৌরীপুরের। মইলাকান্দা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর বাজার থেকে শোলগাই গ্রামের সড়কে এই তাণ্ডব চালানো হয়। বেচারা সড়কটি নিছক প্রাণহীন বলে আর্তনাদ করে উঠতে পারেনি। কিন্তু এই সড়ককে যখন পঙ্গু করে দেওয়া হলো, তখন নিশ্চয়ই এই সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী মানুষ বিপদে পড়ল এবং তাদের কণ্ঠেও ওই আর্তনাদের চেয়েও ভয়াবহ হতাশা এসে ভিড় করেছে, এ কথা বলে দেওয়া শক্ত নয়।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের ভুল স্বীকার করেছে। শিগগিরই সড়কটিকে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনবে বলেও কথা দিয়েছে। সেটা না হয় বোঝা গেল, কিন্তু তাদের এই দায়িত্বজ্ঞানহীনতাকে কোন চোখে দেখতে হবে?
পেশাদার কোনো প্রতিষ্ঠান এ ধরনের ভুল করতে পারে না। এই ভুল তখনই করা সম্ভব, যখন সেই প্রতিষ্ঠান নিশ্চিত জানে, এই অপরাধের জন্য কোনো শাস্তি তার হবে না। দায়িত্বে এ রকম প্রকট গাফিলতি থাকলেও তা এমন কোনো অপরাধ বলে গণ্য হবে না, যে অপরাধ করলে লজ্জায় মাথা নত হয়।
আমরা ধীরে ধীরে নিজেদের দায়িত্ববোধ আর লজ্জা হারিয়ে ফেলছি। তা না হলে এক সড়ক খুঁড়তে গিয়ে আরেক সড়ক খুঁড়ব কেন? দরপত্র হয়েছিল গোবিন্দপুর বাজারসংলগ্ন ঈদগাহ মাঠ থেকে উত্তর দিকের সড়কের দেড় কিলোমিটার এইচবিবি সড়ক উন্নীতকরণের জন্য। বুঝুন তাহলে ব্যাপারটা!
এখন যে ব্যাপারে নজর রাখতে হবে তা হলো, অন্য একটি সড়কের অর্ধকিলোমিটার খুঁড়ে ফেলার যে ব্যয় হয়েছে, সেই ব্যয় উশুল করার জন্য প্রতিষ্ঠানটি দরপত্রে উল্লিখিত সড়ক নির্মাণ সুষ্ঠুভাবে করে কি না। অভিজ্ঞতা বলে, অনেক সময়ই ঠিকাদারেরা যেনতেনভাবে সড়ক নির্মাণ করেন। তাতে শুভংকরের ফাঁকি থাকে। কিছুদিন পরেই বেরিয়ে আসে সড়কের কঙ্কাল। এলাকার মানুষ আবার দুর্বিষহ জীবনযাপনে ফিরে যায়। পুরো টাকাটাই জলাঞ্জলি যায়। অথচ সৎভাবে কাজ করলেও লাভ থাকে এবং উপকার হয় এলাকাবাসীর।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি সেই সততা থেকে দূরে সরে আসছে কি না, সেটা যাচাই করার জন্য এই সড়ক নির্মাণের দিকে চোখ রাখা দরকার।
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে