কামরুল হাসান

মালিবাগ মোড় থেকে গ্রিনলাইন বাস কাউন্টারের দিকে কয়েক পা যেতেই বাঁ দিকে চোখে পড়ে একসময়ের বিশাল এনজিও কারিতাসের কার্যালয়। সেখানকার একটি একতলা টিনের ঘরে বসতেন নটর ডেম কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রিচার্ড উইলিয়াম টিম, যিনি ফাদার টিম নামে সবার কাছে পরিচিত ছিলেন। অবসর নেওয়ার পর ফাদার টিম প্রথমে ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদ’ নামে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর একটি মোর্চা গড়ে তোলেন। শুরুতে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও কিছুদিন যেতেই নেতৃত্ব নিয়ে সংগঠনগুলোর ভেতরে কোন্দল দেখা দেয়। এরপর তিনি সমন্বয় পরিষদের পাশাপাশি গড়ে তোলেন ‘হটলাইন বাংলাদেশ’ নামে আরেকটি এনজিও। ১৯৯৮-৯৯ সালের দিকে নটর ডেম কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন ফাদার বেঞ্জামিন কস্তা। তাঁর ছোট বোন রোজালিন ডি কস্তা ছিলেন ফাদার টিমের প্রধান সহকারী। একই সঙ্গে তিনি হটলাইন বাংলাদেশের মানবাধিকার সমন্বয়কারী হিসেবেও কাজ করতেন।
রোজালিন কিছুটা খিটখিটে মেজাজের হলেও মানুষ হিসেবে ছিলেন অসাধারণ। আমি তাঁকে ডাকতাম ‘রোজিদি’ বলে। কেন জানি না, আমার প্রতি তাঁর ছিল অপত্যস্নেহ। কোনো কাজে গেলেই তিনি নিজে চা বানিয়ে হাতে ধরিয়ে দিতেন। তাঁর হাতের লাল চায়ের স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। সেই রোজালিন একদিন জরুরি খবর দিলেন দেখা করার জন্য। এটা ছিল ২০০৬ সালের ২২ আগস্টের সকাল।
গিয়ে দেখি ফাদার টিম অফিসে নেই। রোজালিন একাই আছেন। তাঁর সামনে মলিন পোশাকের এক বয়স্ক লোক, হাতে অনেকগুলো কাগজপত্র। লোকটাকে দেখিয়ে রোজালিন বললেন, ওনার জীবনে বড় একটা ট্র্যাজেডি আছে। একটু অপেক্ষা করেন, সবই দেখতে পাবেন।
সেদিন আমার তেমন কোনো তাড়া ছিল না, এই ফাঁকে লাল চা এসে গেল। আমি আয়েশে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললাম, তিনি কী করেন? রোজালিন বললেন, আগে রিকশা চালাতেন, এখন বারডেম হাসপাতালে ছোট চাকরি করেন। বাড়ি ফরিদপুরে। এটুকু শুনে আমার কোনো আগ্রহ জন্মাল না। রোজালিন আমার মুখের দিকে তাকিয়ে সন্দেহ করলেন, বিষয়টি আমি কম গুরুত্ব দিচ্ছি। তিনি বললেন, আগে পুরো ঘটনা শোনেন তারপর বুঝবেন। রোজালিন বলতে থাকলেন।
নেদারল্যান্ডস থেকে এক দম্পতি এল ঢাকায়—রিনা ও ড্যানিশ। সামনে দিয়ে কোনো রিকশাচালক গেলেই তাঁরা উৎসুক চোখে তাকাতেন। কাকে যেন খোঁজেন। আমি বললাম, কাকে খুঁজতেন? রোজালিন বললেন, ২৬ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া বাবাকে! এতক্ষণ আমার যে বিরক্তি ছিল, এক লহমায় উবে গেল। রোজালিনও বুঝলেন তাঁর প্রতি আমার মনোযোগ বেড়েছে। রোজালিন বলেই চলেছেন।
রিনা পেশায় আইনজীবী। তবে জন্মগতভাবে কিন্তু মেয়েটা ওলন্দাজ নয়। তো? প্রশ্ন করতেই বললেন, সে বাঙালি। ১৯৮০ সালে ঢাকার একটি বেবি হোম থেকে রিনাকে দত্তক নিয়েছিলেন নেদারল্যান্ডসের (তখন নাম ছিল হল্যান্ড) নাগরিক ভ্যান ডার মির। তখন কাগজে-কলমে মেয়েটির নাম ছিল রিনা আক্তার। সেই বছরের মার্চ কিংবা এপ্রিলে রিনাকে নিয়ে উড়োজাহাজে চড়ে বসেন ভ্যান ডার মির। রিনার বয়স তখন মোটে ছয় মাস। তারপর একে একে পেরিয়ে যায় ২৬ বছর। রিনা বড় হয়েছেন, পড়াশোনা শেষ করে আইন পেশায় ঢুকেছেন। বিয়ে করেছেন, স্বামী পেশায় শিক্ষক। রিনার যখন বিয়ে হয়, তখন একদিন তাঁর পালক বাবা ভ্যান ডার মির রিনাকে বলে বসেন বাংলাদেশ নামের একটা দেশের সঙ্গে তাঁর অচ্ছেদ্য বন্ধনের কথা।
এমন এক দেশের নাম বলছেন বাবা, জ্ঞান হওয়ার পর যে দেশটিকে কখনোই চোখে দেখেননি রিনা। কিন্তু রিনা তখনো জানেন না তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে আরও বড় বিস্ময়। ভ্যান ডার মির তাঁকে জানালেন, তিনি তাঁর আসল বাবা নন, তার আসল বাবা একজন বাংলাদেশি, নাম মতিউর রহমান। বাড়ি ফরিদপুরে, পেশায় রিকশাওয়ালা। রিনাকে তাঁর নানি একটি হোমে রেখে গিয়েছিলেন।
নিজের প্রকৃত পরিচয় জানার পর রিনাকে গ্রাস করে বসে এক বিপন্ন বিস্ময়। তিনি পণ করেন, নিজের অতীত জানবেন। একদিন আলাপের ছলে স্বামী ড্যানিশের কাছে সেই ইচ্ছার কথা পেড়ে বসেন। ড্যানিশ সেদিন রিনাকে অবাক করে দিয়ে বলেন, চলো বাংলাদেশে যাব।
‘বাবার নাম মতিউর রহমান, পেশায় রিকশাওয়ালা, বাড়ি ফরিদপুর’—শুধু এটুকু তথ্য নিয়ে ১৫ দিনের ভিসায় ২০০৬ সালের ৩ আগস্ট দুজনে ঢাকায় আসেন। সোজা চলে যান ফরিদপুরে। সেখানে সংবাদ সম্মেলন করে হতদরিদ্র বাবা মতিউর রহমানকে খুঁজে দেওয়ার আকুতি জানান।
এই সংবাদ সম্মেলনের পর ফরিদপুর শহরের উপকণ্ঠ আলীপুরের আবদুল জব্বার মোল্লার বাড়ি থেকে তাঁদের ডাক আসে। জব্বার মোল্লা ও তাঁর স্ত্রী রিজিয়া বেগম তাঁদের মেয়েকে হল্যান্ডের এক দম্পতির হাতে তুলে দিয়েছিলেন। রিজিয়া বেগম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন রিনাকে। রিনার বুকে আশা, হয়তো তিনি খুঁজে পেয়েছেন তাঁর বাবা-মাকে। কিন্তু হতাশ হতে হয় তাঁকে। জব্বার-রিজিয়া দম্পতি তাঁদের মেয়েকে দত্তক দেন ১৯৭৫ সালে। হতাশ হন দুজনে। এভাবে গাইড আবু তাহের বাবলুকে নিয়ে যেখান থেকেই ডাক আসে, দুজনে ছুটে যান।
খবরের কাগজে এই সংবাদ দেখে বারডেম হাসপাতালের কর্মচারী মতিউর রহমান ছুটে আসেন রোজালিনের কাছে। তিনি বলেন, এই মেয়ের তিনিই বাবা। রোজালিনও সহজে ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নন, তিনি জেরা করতে থাকেন মতিউরকে। মতিউর তাঁকে জানান, স্বাধীনতার আগে থেকেই পুরান ঢাকায় রিকশা চালাতেন তিনি। সেখানে হাসিনা নামের এক নারীকে বিয়ে করেন। সেই সংসারে তিন সন্তান। বছর পাঁচেক পর তাঁদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর তিনি হালিমা নামের আরেকজনকে বিয়ে করেন। তাঁদের কোলজুড়ে আসে এক মেয়ে। নাম রাখেন রিনা। সরকারি বরাদ্দের সুবাদে টঙ্গীতে একটি কক্ষে স্বামী-স্ত্রীর মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়। চরম দারিদ্র্য আর নিঃসীম বঞ্চনার সুযোগে একটি সাহায্য সংস্থার স্থানীয় কিছু কর্মী মতিউরকে লোভ দেখান। সেই লোভে পড়ে আগের স্ত্রীর দুই সন্তান নীলু, লাইলি আর রিনাকে টঙ্গীর একটি বেসরকারি শিশু আশ্রমে পাঠিয়ে দেন। সেখানে স্ট্যাম্প লাগানো সাদা কাগজে সইও করেন। কিছুদিন পর বুঝতে পারেন, সমাজকর্মী পরিচয়ের আড়ালে ওরা আসলে পাচারকারী। তাঁর সন্তানেরা বিক্রি হয়ে গেছে।
মতিউর সেই আশ্রমে গিয়ে সন্তানদের ফিরিয়ে দিতে পীড়াপীড়ি শুরু করেন। এরপর কয়েকজন সেখানকার একটি কক্ষে তাঁকে আটকে রাখেন। পরে কোনো রকমে বেরিয়ে বাড়ি এসে মামলা করতে চাইলে বাদ সাধেন তাঁর স্ত্রী। তারপরও মতিউর দমে যাওয়ার লোক নন। নিজের সন্তানদের পাচারের অভিযোগ করে ১৯৮০ সালে সামরিক আদালতে মামলা দায়ের করেন তিনি। মামলায় মোসলেম আলী খান, শামসুল হুসাইন, হুমায়ুন কবির, আবদুর রব ও আবদুস সালামকে আসামি করেন। সিআইডি এই মামলা তদন্ত করে ১৯৮২ সালে অভিযোগপত্র জমা দেয় (মামলা নম্বর ৮২, তারিখ: ১৭-১০-১৯৮২)। তবে পরে এই মামলার কী হয়েছে তিনি আর জানেন না। মামলা দায়ের করার পর মোসলেম আলী খান ও তাঁর সহযোগীরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে নিয়ে মতিউরকে হত্যার চেষ্টাও করেন। রোজালিন এ পর্যন্ত বলে মতিউরের দিকে ইঙ্গিত করে আমাকে বলেন, এই সেই মতিউর।
রোজালিনের কথা শুনে আমি মতিউর রহমানের দিকে তাকাই। তিনি আমার হাতে একটি পত্রিকা ধরিয়ে দেন। সেটা ছিল ১৯৮১ সালের ৭ ডিসেম্বরে প্রকাশিত মার্কিন সাময়িকী দ্য পিপলস। মতিউর বলেন, হল্যান্ড থেকে এক সাংবাদিক তাঁর কাছে এসেছিলেন। তিনি তাঁর এক মেয়ে লাইলির ছবিসহ একটি পত্রিকা তাঁকে দেখিয়ে বলেন, ভালো থাকা-খাওয়ার কথা বলে এই মেয়েকে পাচার করা হয়েছিল।
একপর্যায়ে মতিউরের সব কথায় বিশ্বাস করেন রোজালিন। এরপর তিনি রিনা-ড্যানিশ দম্পতির খোঁজ করতে শুরু করেন। এই দম্পতি তখন ফরিদপুর থেকে সিলেট হয়ে চট্টগ্রামে চলে গেছেন। দুই দিনের মধ্যে রোজালিন তাঁদের খুঁজে বের করেন। ২০০৬ সালের ২২ আগস্ট তাঁদের আসতে বলেন মালীবাগে হটলাইন কার্যালয়ে। সেই ঘটনার সাক্ষী হতে আমাকেও ডাকেন।
মতিউরের গল্প শুনতে শুনতে দুপুর হয়ে যায়। আমরা অপেক্ষা করতে থাকি রিনা আর ড্যানিশের জন্য। চট্টগ্রাম থেকে তাঁরা আসেন দুপুরের পরে। রিনা খুবই নির্লিপ্ত, দেখে মনে হয় তাঁর ভেতরে কোনো উচ্ছ্বাস নেই। এই কয়েক দিনে বাবা দাবি করা আরও অনেক লোকের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তিনি। কাউকেই তাঁর বাবা মনে হয়নি। মতিউর সম্পর্কে হয়তো সে রকমই ভেবেছিলেন।
রিনা আর ড্যানিশ এসে বসলেন রোজালিনের সামনের চেয়ারে। শুরু হলো কথোপকথন। মতিউরের কাছ থেকে নেওয়া কিছু কাগজ রিনার হাতে ধরিয়ে দিলেন রোজালিন। তিনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকলেন। কিছুক্ষণ পর মনে হলো, হালে পানি পেয়েছেন রিনা। খুব আগ্রহ নিয়ে মতিউরকে একটার পর একটা প্রশ্ন করতে থাকলেন। রোজালিন সেই সব অনুবাদ করে দিচ্ছেন। কথার ফাঁকে মতিউর মার্কিন সাময়িকী দ্য পিপলস রিনার হাতে ধরিয়ে দিলেন। সেই সাময়িকীতে থাকা ছবিটি দেখেই চিৎকার করে উঠল রিনা, ‘আমি তো একে চিনি। সে আমার সঙ্গে স্কুলে পড়েছে।’ মতিউর বললেন, এটা তাঁর পাচার হওয়া আরেক মেয়ে। মতিউরের কাছে তাঁর স্ত্রীর কথা জানতে চাইলেন রিনা। মতিউর বললেন, স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ নেই।
আমি একবার রিনার দিকে, আরেকবার মতিউরের দিকে তাকাই। পেশাদার আইনজীবী রিনার চোখ-মুখ চিকচিক করছে। তিনি মতিউরের কাছে থাকা সব কাগজপত্র আরও ভালো করে দেখছেন। একবার, দুবার, বারবার। এক মুহূর্তে মনে হল রিনার চোখেমুখে অন্য রকম অভিব্যক্তি। রিনা তার স্বামী ড্যানিশের দিকে তাকালেন, তাঁকে বুঝিয়ে দিলেন, তিনি নিশ্চিত, মতিউরই তাঁর পিতা। এক রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তার মধ্যে নিমেষে পিতা-কন্যার কান্নাঝরা পুনর্মিলন হয়ে গেল। পাশে দাঁড়িয়ে চোখ মুছলেন হটলাইনের কর্মীরা। পিতা-কন্যার স্বর্গীয় এই মিলন স্পর্শ করল সবার মতো ড্যানিশকেও। তাঁর দুই চোখজুড়ে পদ্মা-মেঘনা।
আমার কাজ শেষ। এবার আমাকে উঠতে হবে। ওঠার আগে রোজালিন আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন রিনার সঙ্গে। রিনা আমার হাত ধরে ঝাঁকুনি দিতে দিতে বললেন, ‘এ দেশে কেউই আমার চেনা ছিল না। অথচ আজ সবাইকে বড় আপন মনে হচ্ছে, তোমাকেও।’ আসলে রক্তের টান বড় বিচিত্র!
আরও পড়ুন:

মালিবাগ মোড় থেকে গ্রিনলাইন বাস কাউন্টারের দিকে কয়েক পা যেতেই বাঁ দিকে চোখে পড়ে একসময়ের বিশাল এনজিও কারিতাসের কার্যালয়। সেখানকার একটি একতলা টিনের ঘরে বসতেন নটর ডেম কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রিচার্ড উইলিয়াম টিম, যিনি ফাদার টিম নামে সবার কাছে পরিচিত ছিলেন। অবসর নেওয়ার পর ফাদার টিম প্রথমে ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদ’ নামে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর একটি মোর্চা গড়ে তোলেন। শুরুতে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও কিছুদিন যেতেই নেতৃত্ব নিয়ে সংগঠনগুলোর ভেতরে কোন্দল দেখা দেয়। এরপর তিনি সমন্বয় পরিষদের পাশাপাশি গড়ে তোলেন ‘হটলাইন বাংলাদেশ’ নামে আরেকটি এনজিও। ১৯৯৮-৯৯ সালের দিকে নটর ডেম কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন ফাদার বেঞ্জামিন কস্তা। তাঁর ছোট বোন রোজালিন ডি কস্তা ছিলেন ফাদার টিমের প্রধান সহকারী। একই সঙ্গে তিনি হটলাইন বাংলাদেশের মানবাধিকার সমন্বয়কারী হিসেবেও কাজ করতেন।
রোজালিন কিছুটা খিটখিটে মেজাজের হলেও মানুষ হিসেবে ছিলেন অসাধারণ। আমি তাঁকে ডাকতাম ‘রোজিদি’ বলে। কেন জানি না, আমার প্রতি তাঁর ছিল অপত্যস্নেহ। কোনো কাজে গেলেই তিনি নিজে চা বানিয়ে হাতে ধরিয়ে দিতেন। তাঁর হাতের লাল চায়ের স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। সেই রোজালিন একদিন জরুরি খবর দিলেন দেখা করার জন্য। এটা ছিল ২০০৬ সালের ২২ আগস্টের সকাল।
গিয়ে দেখি ফাদার টিম অফিসে নেই। রোজালিন একাই আছেন। তাঁর সামনে মলিন পোশাকের এক বয়স্ক লোক, হাতে অনেকগুলো কাগজপত্র। লোকটাকে দেখিয়ে রোজালিন বললেন, ওনার জীবনে বড় একটা ট্র্যাজেডি আছে। একটু অপেক্ষা করেন, সবই দেখতে পাবেন।
সেদিন আমার তেমন কোনো তাড়া ছিল না, এই ফাঁকে লাল চা এসে গেল। আমি আয়েশে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললাম, তিনি কী করেন? রোজালিন বললেন, আগে রিকশা চালাতেন, এখন বারডেম হাসপাতালে ছোট চাকরি করেন। বাড়ি ফরিদপুরে। এটুকু শুনে আমার কোনো আগ্রহ জন্মাল না। রোজালিন আমার মুখের দিকে তাকিয়ে সন্দেহ করলেন, বিষয়টি আমি কম গুরুত্ব দিচ্ছি। তিনি বললেন, আগে পুরো ঘটনা শোনেন তারপর বুঝবেন। রোজালিন বলতে থাকলেন।
নেদারল্যান্ডস থেকে এক দম্পতি এল ঢাকায়—রিনা ও ড্যানিশ। সামনে দিয়ে কোনো রিকশাচালক গেলেই তাঁরা উৎসুক চোখে তাকাতেন। কাকে যেন খোঁজেন। আমি বললাম, কাকে খুঁজতেন? রোজালিন বললেন, ২৬ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া বাবাকে! এতক্ষণ আমার যে বিরক্তি ছিল, এক লহমায় উবে গেল। রোজালিনও বুঝলেন তাঁর প্রতি আমার মনোযোগ বেড়েছে। রোজালিন বলেই চলেছেন।
রিনা পেশায় আইনজীবী। তবে জন্মগতভাবে কিন্তু মেয়েটা ওলন্দাজ নয়। তো? প্রশ্ন করতেই বললেন, সে বাঙালি। ১৯৮০ সালে ঢাকার একটি বেবি হোম থেকে রিনাকে দত্তক নিয়েছিলেন নেদারল্যান্ডসের (তখন নাম ছিল হল্যান্ড) নাগরিক ভ্যান ডার মির। তখন কাগজে-কলমে মেয়েটির নাম ছিল রিনা আক্তার। সেই বছরের মার্চ কিংবা এপ্রিলে রিনাকে নিয়ে উড়োজাহাজে চড়ে বসেন ভ্যান ডার মির। রিনার বয়স তখন মোটে ছয় মাস। তারপর একে একে পেরিয়ে যায় ২৬ বছর। রিনা বড় হয়েছেন, পড়াশোনা শেষ করে আইন পেশায় ঢুকেছেন। বিয়ে করেছেন, স্বামী পেশায় শিক্ষক। রিনার যখন বিয়ে হয়, তখন একদিন তাঁর পালক বাবা ভ্যান ডার মির রিনাকে বলে বসেন বাংলাদেশ নামের একটা দেশের সঙ্গে তাঁর অচ্ছেদ্য বন্ধনের কথা।
এমন এক দেশের নাম বলছেন বাবা, জ্ঞান হওয়ার পর যে দেশটিকে কখনোই চোখে দেখেননি রিনা। কিন্তু রিনা তখনো জানেন না তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে আরও বড় বিস্ময়। ভ্যান ডার মির তাঁকে জানালেন, তিনি তাঁর আসল বাবা নন, তার আসল বাবা একজন বাংলাদেশি, নাম মতিউর রহমান। বাড়ি ফরিদপুরে, পেশায় রিকশাওয়ালা। রিনাকে তাঁর নানি একটি হোমে রেখে গিয়েছিলেন।
নিজের প্রকৃত পরিচয় জানার পর রিনাকে গ্রাস করে বসে এক বিপন্ন বিস্ময়। তিনি পণ করেন, নিজের অতীত জানবেন। একদিন আলাপের ছলে স্বামী ড্যানিশের কাছে সেই ইচ্ছার কথা পেড়ে বসেন। ড্যানিশ সেদিন রিনাকে অবাক করে দিয়ে বলেন, চলো বাংলাদেশে যাব।
‘বাবার নাম মতিউর রহমান, পেশায় রিকশাওয়ালা, বাড়ি ফরিদপুর’—শুধু এটুকু তথ্য নিয়ে ১৫ দিনের ভিসায় ২০০৬ সালের ৩ আগস্ট দুজনে ঢাকায় আসেন। সোজা চলে যান ফরিদপুরে। সেখানে সংবাদ সম্মেলন করে হতদরিদ্র বাবা মতিউর রহমানকে খুঁজে দেওয়ার আকুতি জানান।
এই সংবাদ সম্মেলনের পর ফরিদপুর শহরের উপকণ্ঠ আলীপুরের আবদুল জব্বার মোল্লার বাড়ি থেকে তাঁদের ডাক আসে। জব্বার মোল্লা ও তাঁর স্ত্রী রিজিয়া বেগম তাঁদের মেয়েকে হল্যান্ডের এক দম্পতির হাতে তুলে দিয়েছিলেন। রিজিয়া বেগম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন রিনাকে। রিনার বুকে আশা, হয়তো তিনি খুঁজে পেয়েছেন তাঁর বাবা-মাকে। কিন্তু হতাশ হতে হয় তাঁকে। জব্বার-রিজিয়া দম্পতি তাঁদের মেয়েকে দত্তক দেন ১৯৭৫ সালে। হতাশ হন দুজনে। এভাবে গাইড আবু তাহের বাবলুকে নিয়ে যেখান থেকেই ডাক আসে, দুজনে ছুটে যান।
খবরের কাগজে এই সংবাদ দেখে বারডেম হাসপাতালের কর্মচারী মতিউর রহমান ছুটে আসেন রোজালিনের কাছে। তিনি বলেন, এই মেয়ের তিনিই বাবা। রোজালিনও সহজে ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নন, তিনি জেরা করতে থাকেন মতিউরকে। মতিউর তাঁকে জানান, স্বাধীনতার আগে থেকেই পুরান ঢাকায় রিকশা চালাতেন তিনি। সেখানে হাসিনা নামের এক নারীকে বিয়ে করেন। সেই সংসারে তিন সন্তান। বছর পাঁচেক পর তাঁদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর তিনি হালিমা নামের আরেকজনকে বিয়ে করেন। তাঁদের কোলজুড়ে আসে এক মেয়ে। নাম রাখেন রিনা। সরকারি বরাদ্দের সুবাদে টঙ্গীতে একটি কক্ষে স্বামী-স্ত্রীর মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়। চরম দারিদ্র্য আর নিঃসীম বঞ্চনার সুযোগে একটি সাহায্য সংস্থার স্থানীয় কিছু কর্মী মতিউরকে লোভ দেখান। সেই লোভে পড়ে আগের স্ত্রীর দুই সন্তান নীলু, লাইলি আর রিনাকে টঙ্গীর একটি বেসরকারি শিশু আশ্রমে পাঠিয়ে দেন। সেখানে স্ট্যাম্প লাগানো সাদা কাগজে সইও করেন। কিছুদিন পর বুঝতে পারেন, সমাজকর্মী পরিচয়ের আড়ালে ওরা আসলে পাচারকারী। তাঁর সন্তানেরা বিক্রি হয়ে গেছে।
মতিউর সেই আশ্রমে গিয়ে সন্তানদের ফিরিয়ে দিতে পীড়াপীড়ি শুরু করেন। এরপর কয়েকজন সেখানকার একটি কক্ষে তাঁকে আটকে রাখেন। পরে কোনো রকমে বেরিয়ে বাড়ি এসে মামলা করতে চাইলে বাদ সাধেন তাঁর স্ত্রী। তারপরও মতিউর দমে যাওয়ার লোক নন। নিজের সন্তানদের পাচারের অভিযোগ করে ১৯৮০ সালে সামরিক আদালতে মামলা দায়ের করেন তিনি। মামলায় মোসলেম আলী খান, শামসুল হুসাইন, হুমায়ুন কবির, আবদুর রব ও আবদুস সালামকে আসামি করেন। সিআইডি এই মামলা তদন্ত করে ১৯৮২ সালে অভিযোগপত্র জমা দেয় (মামলা নম্বর ৮২, তারিখ: ১৭-১০-১৯৮২)। তবে পরে এই মামলার কী হয়েছে তিনি আর জানেন না। মামলা দায়ের করার পর মোসলেম আলী খান ও তাঁর সহযোগীরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে নিয়ে মতিউরকে হত্যার চেষ্টাও করেন। রোজালিন এ পর্যন্ত বলে মতিউরের দিকে ইঙ্গিত করে আমাকে বলেন, এই সেই মতিউর।
রোজালিনের কথা শুনে আমি মতিউর রহমানের দিকে তাকাই। তিনি আমার হাতে একটি পত্রিকা ধরিয়ে দেন। সেটা ছিল ১৯৮১ সালের ৭ ডিসেম্বরে প্রকাশিত মার্কিন সাময়িকী দ্য পিপলস। মতিউর বলেন, হল্যান্ড থেকে এক সাংবাদিক তাঁর কাছে এসেছিলেন। তিনি তাঁর এক মেয়ে লাইলির ছবিসহ একটি পত্রিকা তাঁকে দেখিয়ে বলেন, ভালো থাকা-খাওয়ার কথা বলে এই মেয়েকে পাচার করা হয়েছিল।
একপর্যায়ে মতিউরের সব কথায় বিশ্বাস করেন রোজালিন। এরপর তিনি রিনা-ড্যানিশ দম্পতির খোঁজ করতে শুরু করেন। এই দম্পতি তখন ফরিদপুর থেকে সিলেট হয়ে চট্টগ্রামে চলে গেছেন। দুই দিনের মধ্যে রোজালিন তাঁদের খুঁজে বের করেন। ২০০৬ সালের ২২ আগস্ট তাঁদের আসতে বলেন মালীবাগে হটলাইন কার্যালয়ে। সেই ঘটনার সাক্ষী হতে আমাকেও ডাকেন।
মতিউরের গল্প শুনতে শুনতে দুপুর হয়ে যায়। আমরা অপেক্ষা করতে থাকি রিনা আর ড্যানিশের জন্য। চট্টগ্রাম থেকে তাঁরা আসেন দুপুরের পরে। রিনা খুবই নির্লিপ্ত, দেখে মনে হয় তাঁর ভেতরে কোনো উচ্ছ্বাস নেই। এই কয়েক দিনে বাবা দাবি করা আরও অনেক লোকের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তিনি। কাউকেই তাঁর বাবা মনে হয়নি। মতিউর সম্পর্কে হয়তো সে রকমই ভেবেছিলেন।
রিনা আর ড্যানিশ এসে বসলেন রোজালিনের সামনের চেয়ারে। শুরু হলো কথোপকথন। মতিউরের কাছ থেকে নেওয়া কিছু কাগজ রিনার হাতে ধরিয়ে দিলেন রোজালিন। তিনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকলেন। কিছুক্ষণ পর মনে হলো, হালে পানি পেয়েছেন রিনা। খুব আগ্রহ নিয়ে মতিউরকে একটার পর একটা প্রশ্ন করতে থাকলেন। রোজালিন সেই সব অনুবাদ করে দিচ্ছেন। কথার ফাঁকে মতিউর মার্কিন সাময়িকী দ্য পিপলস রিনার হাতে ধরিয়ে দিলেন। সেই সাময়িকীতে থাকা ছবিটি দেখেই চিৎকার করে উঠল রিনা, ‘আমি তো একে চিনি। সে আমার সঙ্গে স্কুলে পড়েছে।’ মতিউর বললেন, এটা তাঁর পাচার হওয়া আরেক মেয়ে। মতিউরের কাছে তাঁর স্ত্রীর কথা জানতে চাইলেন রিনা। মতিউর বললেন, স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ নেই।
আমি একবার রিনার দিকে, আরেকবার মতিউরের দিকে তাকাই। পেশাদার আইনজীবী রিনার চোখ-মুখ চিকচিক করছে। তিনি মতিউরের কাছে থাকা সব কাগজপত্র আরও ভালো করে দেখছেন। একবার, দুবার, বারবার। এক মুহূর্তে মনে হল রিনার চোখেমুখে অন্য রকম অভিব্যক্তি। রিনা তার স্বামী ড্যানিশের দিকে তাকালেন, তাঁকে বুঝিয়ে দিলেন, তিনি নিশ্চিত, মতিউরই তাঁর পিতা। এক রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তার মধ্যে নিমেষে পিতা-কন্যার কান্নাঝরা পুনর্মিলন হয়ে গেল। পাশে দাঁড়িয়ে চোখ মুছলেন হটলাইনের কর্মীরা। পিতা-কন্যার স্বর্গীয় এই মিলন স্পর্শ করল সবার মতো ড্যানিশকেও। তাঁর দুই চোখজুড়ে পদ্মা-মেঘনা।
আমার কাজ শেষ। এবার আমাকে উঠতে হবে। ওঠার আগে রোজালিন আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন রিনার সঙ্গে। রিনা আমার হাত ধরে ঝাঁকুনি দিতে দিতে বললেন, ‘এ দেশে কেউই আমার চেনা ছিল না। অথচ আজ সবাইকে বড় আপন মনে হচ্ছে, তোমাকেও।’ আসলে রক্তের টান বড় বিচিত্র!
আরও পড়ুন:
কামরুল হাসান

মালিবাগ মোড় থেকে গ্রিনলাইন বাস কাউন্টারের দিকে কয়েক পা যেতেই বাঁ দিকে চোখে পড়ে একসময়ের বিশাল এনজিও কারিতাসের কার্যালয়। সেখানকার একটি একতলা টিনের ঘরে বসতেন নটর ডেম কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রিচার্ড উইলিয়াম টিম, যিনি ফাদার টিম নামে সবার কাছে পরিচিত ছিলেন। অবসর নেওয়ার পর ফাদার টিম প্রথমে ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদ’ নামে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর একটি মোর্চা গড়ে তোলেন। শুরুতে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও কিছুদিন যেতেই নেতৃত্ব নিয়ে সংগঠনগুলোর ভেতরে কোন্দল দেখা দেয়। এরপর তিনি সমন্বয় পরিষদের পাশাপাশি গড়ে তোলেন ‘হটলাইন বাংলাদেশ’ নামে আরেকটি এনজিও। ১৯৯৮-৯৯ সালের দিকে নটর ডেম কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন ফাদার বেঞ্জামিন কস্তা। তাঁর ছোট বোন রোজালিন ডি কস্তা ছিলেন ফাদার টিমের প্রধান সহকারী। একই সঙ্গে তিনি হটলাইন বাংলাদেশের মানবাধিকার সমন্বয়কারী হিসেবেও কাজ করতেন।
রোজালিন কিছুটা খিটখিটে মেজাজের হলেও মানুষ হিসেবে ছিলেন অসাধারণ। আমি তাঁকে ডাকতাম ‘রোজিদি’ বলে। কেন জানি না, আমার প্রতি তাঁর ছিল অপত্যস্নেহ। কোনো কাজে গেলেই তিনি নিজে চা বানিয়ে হাতে ধরিয়ে দিতেন। তাঁর হাতের লাল চায়ের স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। সেই রোজালিন একদিন জরুরি খবর দিলেন দেখা করার জন্য। এটা ছিল ২০০৬ সালের ২২ আগস্টের সকাল।
গিয়ে দেখি ফাদার টিম অফিসে নেই। রোজালিন একাই আছেন। তাঁর সামনে মলিন পোশাকের এক বয়স্ক লোক, হাতে অনেকগুলো কাগজপত্র। লোকটাকে দেখিয়ে রোজালিন বললেন, ওনার জীবনে বড় একটা ট্র্যাজেডি আছে। একটু অপেক্ষা করেন, সবই দেখতে পাবেন।
সেদিন আমার তেমন কোনো তাড়া ছিল না, এই ফাঁকে লাল চা এসে গেল। আমি আয়েশে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললাম, তিনি কী করেন? রোজালিন বললেন, আগে রিকশা চালাতেন, এখন বারডেম হাসপাতালে ছোট চাকরি করেন। বাড়ি ফরিদপুরে। এটুকু শুনে আমার কোনো আগ্রহ জন্মাল না। রোজালিন আমার মুখের দিকে তাকিয়ে সন্দেহ করলেন, বিষয়টি আমি কম গুরুত্ব দিচ্ছি। তিনি বললেন, আগে পুরো ঘটনা শোনেন তারপর বুঝবেন। রোজালিন বলতে থাকলেন।
নেদারল্যান্ডস থেকে এক দম্পতি এল ঢাকায়—রিনা ও ড্যানিশ। সামনে দিয়ে কোনো রিকশাচালক গেলেই তাঁরা উৎসুক চোখে তাকাতেন। কাকে যেন খোঁজেন। আমি বললাম, কাকে খুঁজতেন? রোজালিন বললেন, ২৬ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া বাবাকে! এতক্ষণ আমার যে বিরক্তি ছিল, এক লহমায় উবে গেল। রোজালিনও বুঝলেন তাঁর প্রতি আমার মনোযোগ বেড়েছে। রোজালিন বলেই চলেছেন।
রিনা পেশায় আইনজীবী। তবে জন্মগতভাবে কিন্তু মেয়েটা ওলন্দাজ নয়। তো? প্রশ্ন করতেই বললেন, সে বাঙালি। ১৯৮০ সালে ঢাকার একটি বেবি হোম থেকে রিনাকে দত্তক নিয়েছিলেন নেদারল্যান্ডসের (তখন নাম ছিল হল্যান্ড) নাগরিক ভ্যান ডার মির। তখন কাগজে-কলমে মেয়েটির নাম ছিল রিনা আক্তার। সেই বছরের মার্চ কিংবা এপ্রিলে রিনাকে নিয়ে উড়োজাহাজে চড়ে বসেন ভ্যান ডার মির। রিনার বয়স তখন মোটে ছয় মাস। তারপর একে একে পেরিয়ে যায় ২৬ বছর। রিনা বড় হয়েছেন, পড়াশোনা শেষ করে আইন পেশায় ঢুকেছেন। বিয়ে করেছেন, স্বামী পেশায় শিক্ষক। রিনার যখন বিয়ে হয়, তখন একদিন তাঁর পালক বাবা ভ্যান ডার মির রিনাকে বলে বসেন বাংলাদেশ নামের একটা দেশের সঙ্গে তাঁর অচ্ছেদ্য বন্ধনের কথা।
এমন এক দেশের নাম বলছেন বাবা, জ্ঞান হওয়ার পর যে দেশটিকে কখনোই চোখে দেখেননি রিনা। কিন্তু রিনা তখনো জানেন না তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে আরও বড় বিস্ময়। ভ্যান ডার মির তাঁকে জানালেন, তিনি তাঁর আসল বাবা নন, তার আসল বাবা একজন বাংলাদেশি, নাম মতিউর রহমান। বাড়ি ফরিদপুরে, পেশায় রিকশাওয়ালা। রিনাকে তাঁর নানি একটি হোমে রেখে গিয়েছিলেন।
নিজের প্রকৃত পরিচয় জানার পর রিনাকে গ্রাস করে বসে এক বিপন্ন বিস্ময়। তিনি পণ করেন, নিজের অতীত জানবেন। একদিন আলাপের ছলে স্বামী ড্যানিশের কাছে সেই ইচ্ছার কথা পেড়ে বসেন। ড্যানিশ সেদিন রিনাকে অবাক করে দিয়ে বলেন, চলো বাংলাদেশে যাব।
‘বাবার নাম মতিউর রহমান, পেশায় রিকশাওয়ালা, বাড়ি ফরিদপুর’—শুধু এটুকু তথ্য নিয়ে ১৫ দিনের ভিসায় ২০০৬ সালের ৩ আগস্ট দুজনে ঢাকায় আসেন। সোজা চলে যান ফরিদপুরে। সেখানে সংবাদ সম্মেলন করে হতদরিদ্র বাবা মতিউর রহমানকে খুঁজে দেওয়ার আকুতি জানান।
এই সংবাদ সম্মেলনের পর ফরিদপুর শহরের উপকণ্ঠ আলীপুরের আবদুল জব্বার মোল্লার বাড়ি থেকে তাঁদের ডাক আসে। জব্বার মোল্লা ও তাঁর স্ত্রী রিজিয়া বেগম তাঁদের মেয়েকে হল্যান্ডের এক দম্পতির হাতে তুলে দিয়েছিলেন। রিজিয়া বেগম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন রিনাকে। রিনার বুকে আশা, হয়তো তিনি খুঁজে পেয়েছেন তাঁর বাবা-মাকে। কিন্তু হতাশ হতে হয় তাঁকে। জব্বার-রিজিয়া দম্পতি তাঁদের মেয়েকে দত্তক দেন ১৯৭৫ সালে। হতাশ হন দুজনে। এভাবে গাইড আবু তাহের বাবলুকে নিয়ে যেখান থেকেই ডাক আসে, দুজনে ছুটে যান।
খবরের কাগজে এই সংবাদ দেখে বারডেম হাসপাতালের কর্মচারী মতিউর রহমান ছুটে আসেন রোজালিনের কাছে। তিনি বলেন, এই মেয়ের তিনিই বাবা। রোজালিনও সহজে ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নন, তিনি জেরা করতে থাকেন মতিউরকে। মতিউর তাঁকে জানান, স্বাধীনতার আগে থেকেই পুরান ঢাকায় রিকশা চালাতেন তিনি। সেখানে হাসিনা নামের এক নারীকে বিয়ে করেন। সেই সংসারে তিন সন্তান। বছর পাঁচেক পর তাঁদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর তিনি হালিমা নামের আরেকজনকে বিয়ে করেন। তাঁদের কোলজুড়ে আসে এক মেয়ে। নাম রাখেন রিনা। সরকারি বরাদ্দের সুবাদে টঙ্গীতে একটি কক্ষে স্বামী-স্ত্রীর মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়। চরম দারিদ্র্য আর নিঃসীম বঞ্চনার সুযোগে একটি সাহায্য সংস্থার স্থানীয় কিছু কর্মী মতিউরকে লোভ দেখান। সেই লোভে পড়ে আগের স্ত্রীর দুই সন্তান নীলু, লাইলি আর রিনাকে টঙ্গীর একটি বেসরকারি শিশু আশ্রমে পাঠিয়ে দেন। সেখানে স্ট্যাম্প লাগানো সাদা কাগজে সইও করেন। কিছুদিন পর বুঝতে পারেন, সমাজকর্মী পরিচয়ের আড়ালে ওরা আসলে পাচারকারী। তাঁর সন্তানেরা বিক্রি হয়ে গেছে।
মতিউর সেই আশ্রমে গিয়ে সন্তানদের ফিরিয়ে দিতে পীড়াপীড়ি শুরু করেন। এরপর কয়েকজন সেখানকার একটি কক্ষে তাঁকে আটকে রাখেন। পরে কোনো রকমে বেরিয়ে বাড়ি এসে মামলা করতে চাইলে বাদ সাধেন তাঁর স্ত্রী। তারপরও মতিউর দমে যাওয়ার লোক নন। নিজের সন্তানদের পাচারের অভিযোগ করে ১৯৮০ সালে সামরিক আদালতে মামলা দায়ের করেন তিনি। মামলায় মোসলেম আলী খান, শামসুল হুসাইন, হুমায়ুন কবির, আবদুর রব ও আবদুস সালামকে আসামি করেন। সিআইডি এই মামলা তদন্ত করে ১৯৮২ সালে অভিযোগপত্র জমা দেয় (মামলা নম্বর ৮২, তারিখ: ১৭-১০-১৯৮২)। তবে পরে এই মামলার কী হয়েছে তিনি আর জানেন না। মামলা দায়ের করার পর মোসলেম আলী খান ও তাঁর সহযোগীরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে নিয়ে মতিউরকে হত্যার চেষ্টাও করেন। রোজালিন এ পর্যন্ত বলে মতিউরের দিকে ইঙ্গিত করে আমাকে বলেন, এই সেই মতিউর।
রোজালিনের কথা শুনে আমি মতিউর রহমানের দিকে তাকাই। তিনি আমার হাতে একটি পত্রিকা ধরিয়ে দেন। সেটা ছিল ১৯৮১ সালের ৭ ডিসেম্বরে প্রকাশিত মার্কিন সাময়িকী দ্য পিপলস। মতিউর বলেন, হল্যান্ড থেকে এক সাংবাদিক তাঁর কাছে এসেছিলেন। তিনি তাঁর এক মেয়ে লাইলির ছবিসহ একটি পত্রিকা তাঁকে দেখিয়ে বলেন, ভালো থাকা-খাওয়ার কথা বলে এই মেয়েকে পাচার করা হয়েছিল।
একপর্যায়ে মতিউরের সব কথায় বিশ্বাস করেন রোজালিন। এরপর তিনি রিনা-ড্যানিশ দম্পতির খোঁজ করতে শুরু করেন। এই দম্পতি তখন ফরিদপুর থেকে সিলেট হয়ে চট্টগ্রামে চলে গেছেন। দুই দিনের মধ্যে রোজালিন তাঁদের খুঁজে বের করেন। ২০০৬ সালের ২২ আগস্ট তাঁদের আসতে বলেন মালীবাগে হটলাইন কার্যালয়ে। সেই ঘটনার সাক্ষী হতে আমাকেও ডাকেন।
মতিউরের গল্প শুনতে শুনতে দুপুর হয়ে যায়। আমরা অপেক্ষা করতে থাকি রিনা আর ড্যানিশের জন্য। চট্টগ্রাম থেকে তাঁরা আসেন দুপুরের পরে। রিনা খুবই নির্লিপ্ত, দেখে মনে হয় তাঁর ভেতরে কোনো উচ্ছ্বাস নেই। এই কয়েক দিনে বাবা দাবি করা আরও অনেক লোকের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তিনি। কাউকেই তাঁর বাবা মনে হয়নি। মতিউর সম্পর্কে হয়তো সে রকমই ভেবেছিলেন।
রিনা আর ড্যানিশ এসে বসলেন রোজালিনের সামনের চেয়ারে। শুরু হলো কথোপকথন। মতিউরের কাছ থেকে নেওয়া কিছু কাগজ রিনার হাতে ধরিয়ে দিলেন রোজালিন। তিনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকলেন। কিছুক্ষণ পর মনে হলো, হালে পানি পেয়েছেন রিনা। খুব আগ্রহ নিয়ে মতিউরকে একটার পর একটা প্রশ্ন করতে থাকলেন। রোজালিন সেই সব অনুবাদ করে দিচ্ছেন। কথার ফাঁকে মতিউর মার্কিন সাময়িকী দ্য পিপলস রিনার হাতে ধরিয়ে দিলেন। সেই সাময়িকীতে থাকা ছবিটি দেখেই চিৎকার করে উঠল রিনা, ‘আমি তো একে চিনি। সে আমার সঙ্গে স্কুলে পড়েছে।’ মতিউর বললেন, এটা তাঁর পাচার হওয়া আরেক মেয়ে। মতিউরের কাছে তাঁর স্ত্রীর কথা জানতে চাইলেন রিনা। মতিউর বললেন, স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ নেই।
আমি একবার রিনার দিকে, আরেকবার মতিউরের দিকে তাকাই। পেশাদার আইনজীবী রিনার চোখ-মুখ চিকচিক করছে। তিনি মতিউরের কাছে থাকা সব কাগজপত্র আরও ভালো করে দেখছেন। একবার, দুবার, বারবার। এক মুহূর্তে মনে হল রিনার চোখেমুখে অন্য রকম অভিব্যক্তি। রিনা তার স্বামী ড্যানিশের দিকে তাকালেন, তাঁকে বুঝিয়ে দিলেন, তিনি নিশ্চিত, মতিউরই তাঁর পিতা। এক রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তার মধ্যে নিমেষে পিতা-কন্যার কান্নাঝরা পুনর্মিলন হয়ে গেল। পাশে দাঁড়িয়ে চোখ মুছলেন হটলাইনের কর্মীরা। পিতা-কন্যার স্বর্গীয় এই মিলন স্পর্শ করল সবার মতো ড্যানিশকেও। তাঁর দুই চোখজুড়ে পদ্মা-মেঘনা।
আমার কাজ শেষ। এবার আমাকে উঠতে হবে। ওঠার আগে রোজালিন আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন রিনার সঙ্গে। রিনা আমার হাত ধরে ঝাঁকুনি দিতে দিতে বললেন, ‘এ দেশে কেউই আমার চেনা ছিল না। অথচ আজ সবাইকে বড় আপন মনে হচ্ছে, তোমাকেও।’ আসলে রক্তের টান বড় বিচিত্র!
আরও পড়ুন:

মালিবাগ মোড় থেকে গ্রিনলাইন বাস কাউন্টারের দিকে কয়েক পা যেতেই বাঁ দিকে চোখে পড়ে একসময়ের বিশাল এনজিও কারিতাসের কার্যালয়। সেখানকার একটি একতলা টিনের ঘরে বসতেন নটর ডেম কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রিচার্ড উইলিয়াম টিম, যিনি ফাদার টিম নামে সবার কাছে পরিচিত ছিলেন। অবসর নেওয়ার পর ফাদার টিম প্রথমে ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদ’ নামে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর একটি মোর্চা গড়ে তোলেন। শুরুতে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও কিছুদিন যেতেই নেতৃত্ব নিয়ে সংগঠনগুলোর ভেতরে কোন্দল দেখা দেয়। এরপর তিনি সমন্বয় পরিষদের পাশাপাশি গড়ে তোলেন ‘হটলাইন বাংলাদেশ’ নামে আরেকটি এনজিও। ১৯৯৮-৯৯ সালের দিকে নটর ডেম কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন ফাদার বেঞ্জামিন কস্তা। তাঁর ছোট বোন রোজালিন ডি কস্তা ছিলেন ফাদার টিমের প্রধান সহকারী। একই সঙ্গে তিনি হটলাইন বাংলাদেশের মানবাধিকার সমন্বয়কারী হিসেবেও কাজ করতেন।
রোজালিন কিছুটা খিটখিটে মেজাজের হলেও মানুষ হিসেবে ছিলেন অসাধারণ। আমি তাঁকে ডাকতাম ‘রোজিদি’ বলে। কেন জানি না, আমার প্রতি তাঁর ছিল অপত্যস্নেহ। কোনো কাজে গেলেই তিনি নিজে চা বানিয়ে হাতে ধরিয়ে দিতেন। তাঁর হাতের লাল চায়ের স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। সেই রোজালিন একদিন জরুরি খবর দিলেন দেখা করার জন্য। এটা ছিল ২০০৬ সালের ২২ আগস্টের সকাল।
গিয়ে দেখি ফাদার টিম অফিসে নেই। রোজালিন একাই আছেন। তাঁর সামনে মলিন পোশাকের এক বয়স্ক লোক, হাতে অনেকগুলো কাগজপত্র। লোকটাকে দেখিয়ে রোজালিন বললেন, ওনার জীবনে বড় একটা ট্র্যাজেডি আছে। একটু অপেক্ষা করেন, সবই দেখতে পাবেন।
সেদিন আমার তেমন কোনো তাড়া ছিল না, এই ফাঁকে লাল চা এসে গেল। আমি আয়েশে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললাম, তিনি কী করেন? রোজালিন বললেন, আগে রিকশা চালাতেন, এখন বারডেম হাসপাতালে ছোট চাকরি করেন। বাড়ি ফরিদপুরে। এটুকু শুনে আমার কোনো আগ্রহ জন্মাল না। রোজালিন আমার মুখের দিকে তাকিয়ে সন্দেহ করলেন, বিষয়টি আমি কম গুরুত্ব দিচ্ছি। তিনি বললেন, আগে পুরো ঘটনা শোনেন তারপর বুঝবেন। রোজালিন বলতে থাকলেন।
নেদারল্যান্ডস থেকে এক দম্পতি এল ঢাকায়—রিনা ও ড্যানিশ। সামনে দিয়ে কোনো রিকশাচালক গেলেই তাঁরা উৎসুক চোখে তাকাতেন। কাকে যেন খোঁজেন। আমি বললাম, কাকে খুঁজতেন? রোজালিন বললেন, ২৬ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া বাবাকে! এতক্ষণ আমার যে বিরক্তি ছিল, এক লহমায় উবে গেল। রোজালিনও বুঝলেন তাঁর প্রতি আমার মনোযোগ বেড়েছে। রোজালিন বলেই চলেছেন।
রিনা পেশায় আইনজীবী। তবে জন্মগতভাবে কিন্তু মেয়েটা ওলন্দাজ নয়। তো? প্রশ্ন করতেই বললেন, সে বাঙালি। ১৯৮০ সালে ঢাকার একটি বেবি হোম থেকে রিনাকে দত্তক নিয়েছিলেন নেদারল্যান্ডসের (তখন নাম ছিল হল্যান্ড) নাগরিক ভ্যান ডার মির। তখন কাগজে-কলমে মেয়েটির নাম ছিল রিনা আক্তার। সেই বছরের মার্চ কিংবা এপ্রিলে রিনাকে নিয়ে উড়োজাহাজে চড়ে বসেন ভ্যান ডার মির। রিনার বয়স তখন মোটে ছয় মাস। তারপর একে একে পেরিয়ে যায় ২৬ বছর। রিনা বড় হয়েছেন, পড়াশোনা শেষ করে আইন পেশায় ঢুকেছেন। বিয়ে করেছেন, স্বামী পেশায় শিক্ষক। রিনার যখন বিয়ে হয়, তখন একদিন তাঁর পালক বাবা ভ্যান ডার মির রিনাকে বলে বসেন বাংলাদেশ নামের একটা দেশের সঙ্গে তাঁর অচ্ছেদ্য বন্ধনের কথা।
এমন এক দেশের নাম বলছেন বাবা, জ্ঞান হওয়ার পর যে দেশটিকে কখনোই চোখে দেখেননি রিনা। কিন্তু রিনা তখনো জানেন না তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে আরও বড় বিস্ময়। ভ্যান ডার মির তাঁকে জানালেন, তিনি তাঁর আসল বাবা নন, তার আসল বাবা একজন বাংলাদেশি, নাম মতিউর রহমান। বাড়ি ফরিদপুরে, পেশায় রিকশাওয়ালা। রিনাকে তাঁর নানি একটি হোমে রেখে গিয়েছিলেন।
নিজের প্রকৃত পরিচয় জানার পর রিনাকে গ্রাস করে বসে এক বিপন্ন বিস্ময়। তিনি পণ করেন, নিজের অতীত জানবেন। একদিন আলাপের ছলে স্বামী ড্যানিশের কাছে সেই ইচ্ছার কথা পেড়ে বসেন। ড্যানিশ সেদিন রিনাকে অবাক করে দিয়ে বলেন, চলো বাংলাদেশে যাব।
‘বাবার নাম মতিউর রহমান, পেশায় রিকশাওয়ালা, বাড়ি ফরিদপুর’—শুধু এটুকু তথ্য নিয়ে ১৫ দিনের ভিসায় ২০০৬ সালের ৩ আগস্ট দুজনে ঢাকায় আসেন। সোজা চলে যান ফরিদপুরে। সেখানে সংবাদ সম্মেলন করে হতদরিদ্র বাবা মতিউর রহমানকে খুঁজে দেওয়ার আকুতি জানান।
এই সংবাদ সম্মেলনের পর ফরিদপুর শহরের উপকণ্ঠ আলীপুরের আবদুল জব্বার মোল্লার বাড়ি থেকে তাঁদের ডাক আসে। জব্বার মোল্লা ও তাঁর স্ত্রী রিজিয়া বেগম তাঁদের মেয়েকে হল্যান্ডের এক দম্পতির হাতে তুলে দিয়েছিলেন। রিজিয়া বেগম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন রিনাকে। রিনার বুকে আশা, হয়তো তিনি খুঁজে পেয়েছেন তাঁর বাবা-মাকে। কিন্তু হতাশ হতে হয় তাঁকে। জব্বার-রিজিয়া দম্পতি তাঁদের মেয়েকে দত্তক দেন ১৯৭৫ সালে। হতাশ হন দুজনে। এভাবে গাইড আবু তাহের বাবলুকে নিয়ে যেখান থেকেই ডাক আসে, দুজনে ছুটে যান।
খবরের কাগজে এই সংবাদ দেখে বারডেম হাসপাতালের কর্মচারী মতিউর রহমান ছুটে আসেন রোজালিনের কাছে। তিনি বলেন, এই মেয়ের তিনিই বাবা। রোজালিনও সহজে ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নন, তিনি জেরা করতে থাকেন মতিউরকে। মতিউর তাঁকে জানান, স্বাধীনতার আগে থেকেই পুরান ঢাকায় রিকশা চালাতেন তিনি। সেখানে হাসিনা নামের এক নারীকে বিয়ে করেন। সেই সংসারে তিন সন্তান। বছর পাঁচেক পর তাঁদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর তিনি হালিমা নামের আরেকজনকে বিয়ে করেন। তাঁদের কোলজুড়ে আসে এক মেয়ে। নাম রাখেন রিনা। সরকারি বরাদ্দের সুবাদে টঙ্গীতে একটি কক্ষে স্বামী-স্ত্রীর মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়। চরম দারিদ্র্য আর নিঃসীম বঞ্চনার সুযোগে একটি সাহায্য সংস্থার স্থানীয় কিছু কর্মী মতিউরকে লোভ দেখান। সেই লোভে পড়ে আগের স্ত্রীর দুই সন্তান নীলু, লাইলি আর রিনাকে টঙ্গীর একটি বেসরকারি শিশু আশ্রমে পাঠিয়ে দেন। সেখানে স্ট্যাম্প লাগানো সাদা কাগজে সইও করেন। কিছুদিন পর বুঝতে পারেন, সমাজকর্মী পরিচয়ের আড়ালে ওরা আসলে পাচারকারী। তাঁর সন্তানেরা বিক্রি হয়ে গেছে।
মতিউর সেই আশ্রমে গিয়ে সন্তানদের ফিরিয়ে দিতে পীড়াপীড়ি শুরু করেন। এরপর কয়েকজন সেখানকার একটি কক্ষে তাঁকে আটকে রাখেন। পরে কোনো রকমে বেরিয়ে বাড়ি এসে মামলা করতে চাইলে বাদ সাধেন তাঁর স্ত্রী। তারপরও মতিউর দমে যাওয়ার লোক নন। নিজের সন্তানদের পাচারের অভিযোগ করে ১৯৮০ সালে সামরিক আদালতে মামলা দায়ের করেন তিনি। মামলায় মোসলেম আলী খান, শামসুল হুসাইন, হুমায়ুন কবির, আবদুর রব ও আবদুস সালামকে আসামি করেন। সিআইডি এই মামলা তদন্ত করে ১৯৮২ সালে অভিযোগপত্র জমা দেয় (মামলা নম্বর ৮২, তারিখ: ১৭-১০-১৯৮২)। তবে পরে এই মামলার কী হয়েছে তিনি আর জানেন না। মামলা দায়ের করার পর মোসলেম আলী খান ও তাঁর সহযোগীরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে নিয়ে মতিউরকে হত্যার চেষ্টাও করেন। রোজালিন এ পর্যন্ত বলে মতিউরের দিকে ইঙ্গিত করে আমাকে বলেন, এই সেই মতিউর।
রোজালিনের কথা শুনে আমি মতিউর রহমানের দিকে তাকাই। তিনি আমার হাতে একটি পত্রিকা ধরিয়ে দেন। সেটা ছিল ১৯৮১ সালের ৭ ডিসেম্বরে প্রকাশিত মার্কিন সাময়িকী দ্য পিপলস। মতিউর বলেন, হল্যান্ড থেকে এক সাংবাদিক তাঁর কাছে এসেছিলেন। তিনি তাঁর এক মেয়ে লাইলির ছবিসহ একটি পত্রিকা তাঁকে দেখিয়ে বলেন, ভালো থাকা-খাওয়ার কথা বলে এই মেয়েকে পাচার করা হয়েছিল।
একপর্যায়ে মতিউরের সব কথায় বিশ্বাস করেন রোজালিন। এরপর তিনি রিনা-ড্যানিশ দম্পতির খোঁজ করতে শুরু করেন। এই দম্পতি তখন ফরিদপুর থেকে সিলেট হয়ে চট্টগ্রামে চলে গেছেন। দুই দিনের মধ্যে রোজালিন তাঁদের খুঁজে বের করেন। ২০০৬ সালের ২২ আগস্ট তাঁদের আসতে বলেন মালীবাগে হটলাইন কার্যালয়ে। সেই ঘটনার সাক্ষী হতে আমাকেও ডাকেন।
মতিউরের গল্প শুনতে শুনতে দুপুর হয়ে যায়। আমরা অপেক্ষা করতে থাকি রিনা আর ড্যানিশের জন্য। চট্টগ্রাম থেকে তাঁরা আসেন দুপুরের পরে। রিনা খুবই নির্লিপ্ত, দেখে মনে হয় তাঁর ভেতরে কোনো উচ্ছ্বাস নেই। এই কয়েক দিনে বাবা দাবি করা আরও অনেক লোকের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তিনি। কাউকেই তাঁর বাবা মনে হয়নি। মতিউর সম্পর্কে হয়তো সে রকমই ভেবেছিলেন।
রিনা আর ড্যানিশ এসে বসলেন রোজালিনের সামনের চেয়ারে। শুরু হলো কথোপকথন। মতিউরের কাছ থেকে নেওয়া কিছু কাগজ রিনার হাতে ধরিয়ে দিলেন রোজালিন। তিনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকলেন। কিছুক্ষণ পর মনে হলো, হালে পানি পেয়েছেন রিনা। খুব আগ্রহ নিয়ে মতিউরকে একটার পর একটা প্রশ্ন করতে থাকলেন। রোজালিন সেই সব অনুবাদ করে দিচ্ছেন। কথার ফাঁকে মতিউর মার্কিন সাময়িকী দ্য পিপলস রিনার হাতে ধরিয়ে দিলেন। সেই সাময়িকীতে থাকা ছবিটি দেখেই চিৎকার করে উঠল রিনা, ‘আমি তো একে চিনি। সে আমার সঙ্গে স্কুলে পড়েছে।’ মতিউর বললেন, এটা তাঁর পাচার হওয়া আরেক মেয়ে। মতিউরের কাছে তাঁর স্ত্রীর কথা জানতে চাইলেন রিনা। মতিউর বললেন, স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ নেই।
আমি একবার রিনার দিকে, আরেকবার মতিউরের দিকে তাকাই। পেশাদার আইনজীবী রিনার চোখ-মুখ চিকচিক করছে। তিনি মতিউরের কাছে থাকা সব কাগজপত্র আরও ভালো করে দেখছেন। একবার, দুবার, বারবার। এক মুহূর্তে মনে হল রিনার চোখেমুখে অন্য রকম অভিব্যক্তি। রিনা তার স্বামী ড্যানিশের দিকে তাকালেন, তাঁকে বুঝিয়ে দিলেন, তিনি নিশ্চিত, মতিউরই তাঁর পিতা। এক রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তার মধ্যে নিমেষে পিতা-কন্যার কান্নাঝরা পুনর্মিলন হয়ে গেল। পাশে দাঁড়িয়ে চোখ মুছলেন হটলাইনের কর্মীরা। পিতা-কন্যার স্বর্গীয় এই মিলন স্পর্শ করল সবার মতো ড্যানিশকেও। তাঁর দুই চোখজুড়ে পদ্মা-মেঘনা।
আমার কাজ শেষ। এবার আমাকে উঠতে হবে। ওঠার আগে রোজালিন আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন রিনার সঙ্গে। রিনা আমার হাত ধরে ঝাঁকুনি দিতে দিতে বললেন, ‘এ দেশে কেউই আমার চেনা ছিল না। অথচ আজ সবাইকে বড় আপন মনে হচ্ছে, তোমাকেও।’ আসলে রক্তের টান বড় বিচিত্র!
আরও পড়ুন:

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
৪ দিন আগে
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় কর হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
৮ দিন আগে
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
২০ নভেম্বর ২০২৫
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
২০ নভেম্বর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।
দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’
পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।
২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।
ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।
মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।
দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’
পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।
২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।
ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।
মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

মালিবাগ মোড় থেকে গ্রিনলাইন বাস কাউন্টারের দিকে কয়েক পা যেতেই বাঁ দিকে চোখে পড়ে একসময়ের বিশাল এনজিও কারিতাসের কার্যালয়। সেখানকার একটি একতলা টিনের ঘরে বসতেন নটর ডেম কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রিচার্ড উইলিয়াম টিম, যিনি ফাদার টিম নামে সবার কাছে পরিচিত ছিলেন। অবসর নেওয়ার পর ফাদার টিম
১১ জুন ২০২২
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় কর হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
৮ দিন আগে
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
২০ নভেম্বর ২০২৫
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
২০ নভেম্বর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।
মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।
মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।
মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।
মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

মালিবাগ মোড় থেকে গ্রিনলাইন বাস কাউন্টারের দিকে কয়েক পা যেতেই বাঁ দিকে চোখে পড়ে একসময়ের বিশাল এনজিও কারিতাসের কার্যালয়। সেখানকার একটি একতলা টিনের ঘরে বসতেন নটর ডেম কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রিচার্ড উইলিয়াম টিম, যিনি ফাদার টিম নামে সবার কাছে পরিচিত ছিলেন। অবসর নেওয়ার পর ফাদার টিম
১১ জুন ২০২২
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
৪ দিন আগে
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
২০ নভেম্বর ২০২৫
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
২০ নভেম্বর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।
গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।
গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

মালিবাগ মোড় থেকে গ্রিনলাইন বাস কাউন্টারের দিকে কয়েক পা যেতেই বাঁ দিকে চোখে পড়ে একসময়ের বিশাল এনজিও কারিতাসের কার্যালয়। সেখানকার একটি একতলা টিনের ঘরে বসতেন নটর ডেম কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রিচার্ড উইলিয়াম টিম, যিনি ফাদার টিম নামে সবার কাছে পরিচিত ছিলেন। অবসর নেওয়ার পর ফাদার টিম
১১ জুন ২০২২
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
৪ দিন আগে
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় কর হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
৮ দিন আগে
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
২০ নভেম্বর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।
ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’
কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।
পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’
যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।
নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।
সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।
ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’
কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।
পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’
যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।
নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।
সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

মালিবাগ মোড় থেকে গ্রিনলাইন বাস কাউন্টারের দিকে কয়েক পা যেতেই বাঁ দিকে চোখে পড়ে একসময়ের বিশাল এনজিও কারিতাসের কার্যালয়। সেখানকার একটি একতলা টিনের ঘরে বসতেন নটর ডেম কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রিচার্ড উইলিয়াম টিম, যিনি ফাদার টিম নামে সবার কাছে পরিচিত ছিলেন। অবসর নেওয়ার পর ফাদার টিম
১১ জুন ২০২২
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
৪ দিন আগে
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় কর হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
৮ দিন আগে
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
২০ নভেম্বর ২০২৫