Ajker Patrika

রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়

জাহীদ রেজা নূর
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১: ৪৫
রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়

রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ নিয়ে অন্য অনেক দেশের মতো আমাদের দেশের মানুষও তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এক পক্ষ এই হামলায় সরাসরি দোষী সাব্যস্ত করছে রাশিয়াকে। বলছে, রাশিয়ার এই ঔদ্ধত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের ওপর এই হামলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

অন্য এক পক্ষ এই মতের বিরোধী অবস্থান নিয়েছে। তারা বলছে, দোনবাসে (ইউক্রেনের লুগান্স্‌ক ও দানিয়েৎস্ক অঞ্চল) ইউক্রেনীয় বাহিনী রুশভাষী নাগরিকদের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে দিনের পর দিন, তার একটা ফয়সালা হওয়া উচিত ছিল। এ কথার সমর্থনে তারা বলছে, পশ্চিমা বিশ্বই মূলত উসকে দিয়েছে রাশিয়াকে। ক্রমাগত নিষেধাজ্ঞা আর অপমানের ফলে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া ভালুকের মতো ঘুরে দাঁড়িয়েছে রাশিয়া।

তৃতীয় পক্ষ এই পুরো ব্যাপারে সতর্ক হয়ে শুধু যুদ্ধ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। আপাতত কারও পক্ষ নিচ্ছে না তারা। এই তৃতীয় পক্ষের মধ্যে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোও রয়েছে।

দুই. আমরা যদি শুরুতে একটি প্রবাদবাক্যের আশ্রয় নিই, তাহলে ইউক্রেনে রুশ আক্রমণ বিষয়ে বর্তমান পরিস্থিতি বোঝা হয়তো কিছুটা হলেও সম্ভব হবে। ‘রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়’ প্রবাদটি এ ক্ষেত্রে সুপ্রযুক্ত বলে মনে হয়। গোটা বিশ্বে যারা জমিদারি করে বেড়াচ্ছে, বিশ্ববাসীর ওপর ছড়ি ঘোরাচ্ছে, তাদের দাপটে ছোট ছোট দেশগুলোর অবস্থা যে ত্রাহি মধুসূদন, ইউক্রেন তারই সর্বশেষ উদাহরণ।

একটু পেছনে ফিরে তাকালেই আমরা এই সারিতে ইরান, ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া ও সিরিয়াকে দেখতে পাব। পরাশক্তিরা ভেবেছে, এই দেশগুলোকে নিজেদের মতো ‘সভ্য’ বানাতে হবে, ব্যস, তা থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশগুলোয় হামলা করা হয়েছে।

যে দেশগুলোর কথা বলা হলো, সেই দেশগুলোয় সব সময় সুশাসন চলছিল— এমনটা বলা আমার উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু বাইরে থেকে কোনো দেশকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বিচারের রায় মেনে নেওয়ার জন্য পরাশক্তিগুলো যা করেছে, তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য ছিল না। এখন কে না জানে, সোভিয়েত ইউনিয়নকে ঠেকাতে গিয়ে কিংবা মুসলিম বিশ্বকে দ্বিধাবিভক্ত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সাদ্দাম হোসেন, লাদেনদের জন্ম দিয়েছে। স্বার্থ সিদ্ধি হয়ে গেলে তাদেরই শত্রু বানিয়ে নিশ্চিহ্ন করেছে। সোভিয়েত ইউনিয়নও হাঙ্গেরি, চেকোস্লোভাকিয়া, আফগানিস্তানে যা করেছে, সেদিকেও আগ্রহী পাঠকের দৃষ্টি নিশ্চয়ই যাবে এবং সবখানেই পাঠক আবিষ্কার করতে পারবেন, পরাশক্তিগুলো নিজেদের মধ্যে পৃথিবীকে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেওয়ার জন্য যা খুশি তা করে যাচ্ছে।

ফলে প্রবাদবাক্যটি বর্তমান বিশ্বের দর-কষাকষির প্রেক্ষাপটে যথার্থ।

তিন. এ কথা বলতে গিয়ে আরও বলতে হচ্ছে, বর্তমান বাজার অর্থনীতিতে ভূ-রাজনৈতিকভাবে কোন দেশ কখন কার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, সেটা বুঝে নেওয়ার পর তার ওপরই নির্ভর করবে বিশ্ব বাজারব্যবস্থা কোনদিকে এগোবে।

সবচেয়ে শঙ্কার ব্যাপার হলো, এই বাণিজ্যই এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের সম্পর্ককে নিয়ন্ত্রণ করে। ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালানোর আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চীন সফরে গিয়েছিলেন। এ কথা নিশ্চয়ই কাউকে মনে করিয়ে দিতে হবে না, গত শতাব্দীর ষাটের দশক থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের সম্পর্ক কতটা নাজুক হয়ে পড়েছিল। অনেকেরই মনে পড়ে যাবে, সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের কতটা কাছে চলে গিয়েছিল চীন। বাণিজ্যের দর-কষাকষির ক্ষেত্রে এরপর যুক্তরাষ্ট্র আর চীনের মধ্যে সূক্ষ্ম বিরোধিতার সৃষ্টি হলো, যার ফলে এখন এশিয়া ও উত্তর আমেরিকার দেশ দুটি কে কাকে ল্যাং মারতে পারে, তা নিয়েই নানা কলাকৌশল করে যাচ্ছে।

 ভ্লাদিমির পুতিন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে নিশ্চয়ই তাঁর ইউক্রেন আক্রমণের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। ‘শত্রুর শত্রু মিত্র’—এই সমীকরণে এখন রাশিয়া আর চীনের সম্পর্ক প্রগাঢ় হয়েছে। কিন্তু চীন কি নির্দ্বিধায় রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পক্ষে দাঁড়াবে? মোটেই না। তারা দেখেশুনে পা ফেলবে। এই যুদ্ধ নিয়ে মাথাব্যথা আছে যুক্তরাষ্ট্রের, মাথাব্যথা আছে রাশিয়ার। মাথাব্যথা আছে পশ্চিম ইউরোপের। চীন সেখানে ঝাড়া হাত-পা। কিন্তু বিশ্বরাজনীতির স্বার্থেই (তথা বিশ্ববাণিজ্য) কেউ কাউকে সেভাবে চটাতে চাইবে না।

বিষয়টি পরিষ্কার করা দরকার।

চার. রাশিয়া আর চীন এ দুই দেশই বুঝতে পারছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের ‘কোল্ডওয়ার’-এর সামনে পড়েছে। তাই মার্কিনদের জবাব দিতে যেকোনো ফ্রন্টে তাদেরও কিছু করতে হবে। সে ফ্রন্ট হোক ইউক্রেন, হোক তাইওয়ান।

কিন্তু কতটা নিবিড় হবে দেশ দুটির সম্পর্ক? পিকিংয়ের কাছ থেকে মস্কো কতটা আশা করতে পারে? কম করে হলেও রাশিয়া আশা করতে পারে, ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের ব্যাপারটি মন দিয়ে বুঝবে চীন। চীনের পররাষ্ট্র দপ্তর যেন এ ব্যাপারে সক্রিয় হয়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যেন রুশবিরোধী কোনো প্রস্তাব এলে তার বিপক্ষে দাঁড়ায়, চীনের পত্রপত্রিকা যেন রাশিয়ার পক্ষে লেখালেখি করে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যে অর্থনৈতিক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আসছে, তা থেকে চীন নিজেদের সরিয়ে রাখতে পারে। এরপর আরও বড় পরিকল্পনা করতে পারে দেশ দুটি। তারা জাপান সাগরে দ্বিদেশীয় কৌশলগত সামরিক মহড়া করতে পারে, মার্কিন সপ্তম নৌবহরের জন্য হুমকির জন্ম দিতে পারে।

পিকিং মস্কোর কাছে কী চাইতে পারে? পিকিং মস্কোর কাছ থেকে চাইবে পাল্টা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ক্ষেত্রে সংযম। অ্যাংলোস্যাকসনদের প্রতিনিধিরা এখন ‘কাগুজে বাঘ’ হয়ে গেছে বলে মনে করে চীন। এই বাঘ এখন ক্লান্ত। কিন্তু তারা এখনো ধনী। চীন পশ্চিমাদের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক খতিয়ে দেখবে, সেই সঙ্গে রুশদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করবে। ভুলে গেলে চলবে না, আমেরিকার সঙ্গে চীনের বাণিজ্য হয় ৬০০ ট্রিলিয়ন ডলারের, প্রায় একই অঙ্কের বাণিজ্য হয় পশ্চিম ইউরোপের সঙ্গেও। আর রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য হয় ১৫০ ট্রিলিয়ন ডলারের। সুতরাং চীন বুঝে-শুনেই পা ফেলবে।

অন্যদিকে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়ার তেল ও গ্যাস নিয়ে সংকটে পড়তে পারে ইতালি, জার্মানি আর ফ্রান্স। তারা কীভাবে এ সময় পদক্ষেপ নেবে, সেটাও দেখার বিষয়। তবে একটা কথা বলা দরকার, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে যেভাবে আশ্বস্ত করছিল, তাতে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার আক্রমণকে শুরুতে পাত্তা দিতে চাননি। কিন্তু ইউরোপ যে শুধু বক্তৃতা-বিবৃতিতে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখবে, সেটা বুঝতে পারেননি তিনি। সেই সুযোগটাই নিয়েছে রাশিয়া।

পাঁচ. রাশিয়া আর ইউক্রেনের সংকটটার দিকে একটু তাকানো যাক। ইউক্রেনের অভ্যন্তরস্থ লুগান্স্ক ও দানিয়েৎস্ক প্রজাতন্ত্রকে রাশিয়া স্বীকৃতি দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপের দেশগুলো নতুন করে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল। আর তাতে সংকটটা আরও ঘনীভূত হলো। ইউক্রেন সংকট যে শুধু রাশিয়া আর ইউক্রেনের সংকট, তা তো নয়। এই সংকটের আরও কয়েকটি মুখ রয়েছে। যেমন রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সার্বভৌম অঞ্চল প্রশ্নে বিরোধ আছে; নিরাপত্তা নিয়ে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিম ইউরোপের ভাবনার গরমিল আছে; ন্যাটোর সম্প্রসারণ নিয়ে ন্যাটোভুক্ত দেশ আর রাশিয়ার মধ্যে বিরোধ আছে। এগুলো এড়িয়ে ইউক্রেন সমস্যাকে বোঝা শক্ত।

শীতল যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ন্যাটোর উপযোগিতা আর ছিল না। তাই তাকে প্রসারিত করার চিন্তাও ছিল না। বড় বড় ইউরোপীয় দেশ আমেরিকাকে ছাড়াই নিজেদের নিরাপত্তা নিজেরাই রক্ষা করবে—এ রকম ভাবনাচিন্তা করছিল। অন্তত যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল না হওয়ার চেষ্টা করছিল। বিশেষ করে জার্মানি তখন রাশিয়ার সঙ্গে নানা ধরনের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা ভাবছিল। কিন্তু যুগোস্লাভিয়ার সংকট সবকিছুই ওলোট-পালট করে দিল। ন্যাটোয় যোগ দিল চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরি আর পোল্যান্ড। লাইনে থাকল জর্জিয়া আর ইউক্রেন। তখনই রাশিয়া সতর্ক হয়ে গেল। জর্জিয়া আর ইউক্রেন যেন ন্যাটোভুক্ত না হয়, সে জন্য তারা নানা ধরনের চাপ দিতে থাকল দেশ দুটির ওপর।

জর্জিয়ার চেয়ে ইউক্রেন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ইউক্রেন হলো ইউরোপের সিংহদ্বার। সেটা ছিল ইউরোপের শস্যভান্ডার। কিন্তু এখন সোভিয়েত-উত্তর প্রজাতন্ত্রগুলোর মধ্যে ইউক্রেনের অবস্থা জীর্ণশীর্ণ। রাজনৈতিকভাবেও দেশটি দুটো আলাদা শিবিরে বিভক্ত। এক দল তাকিয়ে আছে রাশিয়ার দিকে, আরেক দল ন্যাটোর মুখাপেক্ষী। আর তাদের মধ্যে থাকা সংঘাত দুর্বল করেছে ইউক্রেনকে।

ছয়. ইউরোপের পূর্ব দিকে ন্যাটোর সম্প্রসারণের চিন্তা ইউক্রেন সংকটকে ঘনীভূত করেছে। ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের প্রসঙ্গ যদি আসে, তাহলে তা নিয়ে দ্বিমত করার কিছু নেই। কিন্তু জগতের সব বিষয় এতটা সরল নয়। বর্তমান বিশ্বে সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যও নজর রাখতে হয় পাশে কোন রাষ্ট্র আছে, কোন পথে এগোবে দেশ, দেশের অভ্যন্তরে মানুষের মনস্তত্ত্ব কী ধরনের। এসব কারণেই ইউক্রেন হয়ে উঠেছে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার বলি। দেশটির ভেতরেও জাতিসত্তাভিত্তিক সংকট অনেক গভীর। আরও একটি দুঃখজনক ব্যাপার রয়েছে। ইউক্রেন এতটা বড় দেশ নয় যে নিজেই নিজের সমস্যাগুলোর সমাধান করবে, আবার এতটা ছোট দেশও নয় যে অন্য দেশগুলো ইউক্রেনকে অগ্রাহ্য করে এগিয়ে যাবে। ইউক্রেনের মতো দেশ যদি নির্দিষ্ট কোনো শক্তির কাছাকাছি হয়, তাহলে বিপরীত শক্তিও সক্রিয় হয়ে ওঠে। ইউক্রেন সংকট আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, এই সংকট শুধু একটি দেশের নয়। দেখিয়ে দিল, ইউক্রেনকে এখন কত ধরনের ধ্বংসের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

ইউক্রেনের সংকটটি শুধু কিয়েভের মাথাব্যথার কারণ নয়, পৃথিবীর মোড়লদের মাথাব্যথার কারণও। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ইউক্রেন তার অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সমস্যাগুলোর সমাধান করার অধিকার রাখে। তবে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার প্রশ্ন যদি আসে, তাহলে বলতে হয়, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ওয়ারশ জোটের পতন ও ন্যাটোর সম্প্রসারণ আন্তর্জাতিক রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট করে দিয়েছে। তাই ইউক্রেন সমস্যার সমাধান ইউক্রেনকে করতে দেওয়া হচ্ছে না। পৃথিবীর মোড়লেরাই তা নিয়ন্ত্রণ করছে। কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো যুদ্ধবিরতি হবে, শান্তিচুক্তি হবে। কিন্তু এই উন্মাদনায় যেসব মানুষ বাস্তুচ্যুত হলো, যেসব মানুষ প্রাণ হারাল, তাদের দুঃখ দেখার কেউ থাকবে না।

এই হলো বাস্তব পরিস্থিতি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত