Ajker Patrika

কারাগার

সম্পাদকীয়
কারাগার

খুলনায় এখন থেকে দুটি কারাগার থাকবে। পুরোনো কারাগার তো থাকছেই, এখন থেকে নতুন কারাগারেও থাকবেন বন্দীরা। পুরোনো কারাগার থেকে আধুনিক কারাগারে ১০০ জন বন্দীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে গত শনিবার। নতুন কারাগারে ৪ হাজার বন্দী থাকতে পারবেন। নতুন কারাগারে পৌঁছানোর পর কারাবন্দীদের রজনীগন্ধা ও গোলাপ ফুল দিয়ে বরণ করেন কারা উপমহাপরিদর্শক। এমন একটি ঘটনা ঘটেছে দেখে বেশ ভালো লাগল। খবরটি শনিবারের আজকের পত্রিকার অনলাইনের।

বলতেই হয়, খুব ভালো হতো, যদি খুলনায় কোনো অপরাধ না থাকত। কারাগার না থাকত। কারাগারহীন নগরজীবন থাকলে কী অসাধারণ ঘটনা ঘটতে পারত! শুধু খুলনায় কেন, দেশের কোথাও কোনো অপরাধ নেই, গড়ে উঠেছে দুর্নীতি-ঘুষ-চাঁদাবাজিমুক্ত দেশ—এ রকম স্বপ্ন দেখতে কার না ভালো লাগে। কিন্তু অদৃষ্ট এমনই, মানুষ যেকোনো কারণেই হোক, অপরাধ করে ফেলেন। ধরা পড়লে বিচারের মাধ্যমে তাঁকে যেতে হয় কারাগারে। অন্যদিকে রাজনৈতিক কারণেও গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরাও কাটান রাজবন্দীর জীবন।

খুলনার আধুনিক কারাগারে থাকবে একটি বিশাল গ্রন্থাগার। শুনে ভালো লাগছে। সত্যিই যদি বন্দীরা একটু জ্ঞানচর্চায় মন দেন, তাহলে মুক্তির পর একটি ভালো জীবনের দিশা তাঁরা পেতে পারেন। একসময় কারাগার ছিল ভয়ংকর। এখন তো সংশোধনাগার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তাই বন্দীদের জীবনে আনন্দ এনে তাঁদের অপরাধ শুধরে নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

কারাগার নিয়ে এবার অন্য কথা বলি। এ বিষয়ে সাহিত্য রচিত হয়েছে অনেক। নাজিম হিকমত তাঁর ‘জেলখানার চিঠি’ বা ‘আমি জেলে যাবার পর’ কবিতা দুটিতে যে বিশ্ববীক্ষার সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়েছেন, তা অতুলনীয়। কারাগারের কাহিনি নিয়ে বিশ্ববিখ্যাত কিছু চলচ্চিত্র আছে, যেগুলো কারাজীবন সম্পর্কে একটা ধারণা দেয়। ১৯৯৪ সালে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘শশাঙ্ক রিডেম্পশন’কে বিশ্বের সেরা কারাগারভিত্তিক চলচ্চিত্র হিসেবে মনে করেন অনেক চলচ্চিত্র সমালোচক। মরগ্যান ফ্রিম্যান আর টিম রবিনসের অনবদ্য অভিনয়ে ছবিটি এক ক্ল্যাসিক ছবিতে পরিণত হয়েছে। ‘দ্য গ্রিন মাইল’ ছবিটির কথাও বলা যেতে পারে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক বন্দী ও কারারক্ষীর মধ্যে মানবিক সম্পর্ক নিয়ে গড়ে উঠেছে সেই কাহিনি। আমাদের দেশেও কিছুকাল আগে নির্মিত হয়েছিল কারাগারভিত্তিক ছবি ‘আয়নাবাজি’। ভালো চলচ্চিত্রের আকালে সেই ছবি আশার আলো জাগিয়েছিল সিনে-দর্শকদের মনে।

কারাগারকে যদি সংশোধনাগার হিসেবে নেওয়া হয়, তাহলে কারারক্ষী ও কারাবন্দীদের মধ্যে একটি স্বাভাবিক শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করে। কারাগারে নানাভাবে বন্দীদের বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত করে তাঁদের নৈতিক অবস্থান পোক্ত করা যায়। শক্তি দিয়ে দমনের চেয়ে কাউন্সেলিং হয়ে উঠতে পারে কথোপকথনের ভাষা। কারাবন্দী যেন মনে করতে পারেন, কারাজীবনটাই শেষ কথা নয়। কারাগার থেকে বের হয়ে আসার পর স্বাভাবিক জীবনে প্রবেশ করার সুযোগ আছে তাঁর।

মুশকিল হলো, সব সময় এই ধারণার জয় হয় না। কিন্তু সেটা হলে তা মানবজীবনের এক অসাধারণ ইতিবাচক গল্প হয়ে উঠতে পারত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনা আর বাড়তে না দেওয়ার আহ্বান রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ