
ফওজিয়া মোসলেম বাংলাদেশের নারী মুক্তি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের একজন নিরলস যোদ্ধা। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি। পেশায় চিকিৎসক ছিলেন।’ ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধসহ প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক সব আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। একসময় সিপিবিতেও সক্রিয় ছিলেন। মৃদুভাষী, সদালাপি ফওজিয়া মোসলেমের সঙ্গে নারীর অবস্থা ও অবস্থান নিয়ে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার বিভুরঞ্জন সরকার।
বিভুরঞ্জন সরকার

আপনার জীবনের শুরু এবং রাজনীতিতে অংশগ্রহণের পেছনের প্রেরণা কী ছিল?
আমার বেড়ে ওঠা ঢাকায়। ষাটের দশকে যখন ছাত্ররাজনীতির পরিবেশ গড়ে উঠছিল, চিকিৎসাবিজ্ঞানে অধ্যয়নের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজে আমি ভর্তি হই ১৯৬৪ সালে। তখন চারদিকে উত্তাল সময়—ভাষা, স্বাধিকার, সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলন। সেই পরিবেশে রাজনৈতিক চেতনা জন্মানো খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়। বিশেষ করে আমার ছোট মামা ডাক্তার সৈয়দ খলিলউল্লাহ বাম রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি আমাকে ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করেন।
তৎকালীন পাকিস্তানে শিক্ষার ক্ষেত্রে বিরাজমান বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক ধরনের নৈতিক দায়বোধ থেকেই আমি রাজনীতিতে সক্রিয় হই। সময়ের পরিক্রমায় আমিও কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হই। এখন অবশ্য আমার কোনো রাজনৈতিক দলে সম্পৃক্ততা নাই।
আপনি বহু বছর ধরে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সঙ্গে যুক্ত আছেন। এই সময়কালে কী পরিবর্তন দেখেছেন?
হ্যাঁ, মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠার সময় থেকে আমি এর সঙ্গে যুক্ত। প্রথম দিকে আমাদের মূল লড়াই ছিল সাংবিধানিক অধিকার, নারী শিক্ষা, যৌতুকবিরোধী আইন, বাল্যবিবাহের অভিঘাত বিষয়ে নারী সমাজকে সচেতন করা ও সংগঠিত করা। পরের দশকে আমরা নারী নির্যাতনবিরোধী আইন, পারিবারিক আইন সংস্কার, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আন্দোলনে অগ্রসর হই। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নারীর অধিকার মানব অধিকার হিসেবে পরিচিতি পায়।
নারীর জীবনে পরিবর্তন অবশ্যই এসেছে। মূল পরিবর্তন ঘটেছে নারীর চিন্তা জগতে। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী প্রজন্মের নারীর মধ্যে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নারী মুক্তি অর্জনের আকাঙ্ক্ষা জন্মেছে এবং নারীর শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র, মিডিয়া ও সামাজিক ক্ষেত্রে দৃশ্যমানতা বেড়েছে। কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গে নারীর প্রতি সহিংসতাও বেড়েছে। যেমন এখন নারী শিক্ষা বাড়লেও কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকা কঠিন; আইন থাকলেও প্রয়োগ হয় না। সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা আগের তুলনায় সহিংস ও আরও নিষ্ঠুর রূপ নিচ্ছে, যা ঘটছে কখনো প্রকাশ্যে, কখনো আবার পরোক্ষভাবে। সাম্প্রতিক সময়ে নারী বিদ্বেষী গোষ্ঠী কর্তৃক সমাজের মধ্যে নারী বিদ্বেষ প্রচারের অপচেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশকে ঘিরে সাম্প্রতিক যে ধর্মীয় বিরোধিতা দেখা গেছে, আপনি সেটিকে কীভাবে দেখছেন?
এটি নতুন নয়। আমরা যখনই নারীর অধিকার নিয়ে কোনো আইনি সংস্কারের কথা বলি, তখন একটি গোষ্ঠী ধর্মের ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে নারী আন্দোলনকে আঘাত করার চেষ্টা করে। নারী সংস্কার কমিশন মূলত বিদ্যমান বৈষম্য দূর করে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সুপারিশ করেছে, বিশেষ করে নারীর পারিবারিক ও ব্যক্তিগত অধিকার বিষয়ে আইনের অসামঞ্জস্যতা দূর করে মানবিক ও সাংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে। যেমন: উত্তরাধিকার, বিবাহ ও তালাক, সন্তানের অভিভাবকত্ব ইত্যাদি। কিন্তু কিছু সংগঠন একে ‘ধর্মবিরোধী’ বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং অত্যন্ত অশোভন, অশ্লীল ও কুৎসিতভাবে তা প্রকাশ করছে যা কখনো রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ভাষা হতে পারে না। এইসব দলের বক্তব্য সংবিধানের সমতা ও মর্যাদার লক্ষ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
তাহলে আপনি বলছেন, ধর্মীয় গোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া কেবল মতভিন্নতা নয়, বরং সাংগঠনিকভাবে অধিকার হরণ?
সাংগঠনিক অধিকার হরণ এভাবে আমি বলতে চাই না, কিন্তু নাগরিক অধিকার ও ব্যক্তিগত অধিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। যারা নারী সংস্কার কমিশনের বিরোধিতা করছে তারা কেবল নারীর বিরুদ্ধে নয়, প্রগতিশীল সমাজের বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছে। আমরা বলি, ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে মানবাধিকারের বিরোধ নেই। আপনি যখন বলছেন, মেয়েরা সমান উত্তরাধিকার পাবে, কিংবা বিবাহে যৌক্তিক শর্ত থাকবে, তখন আপনি মূলত সামাজিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার কথা বলছেন। আপনি মুসলমান হিসেবে জীবন যাপন করুন, কিন্তু তার মানে এই নয় যে রাষ্ট্রীয় আইনে একজন নারী দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক থাকবে। সংবিধানও সমতার কথাই বলে। এই কথাটিই আমরা আবার প্রতিষ্ঠা করতে চাইছি।
কর্মক্ষেত্রে নারীরা এখনো বৈষম্যের মুখোমুখি হচ্ছে। এটা আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
প্রশ্নটি বর্তমান সময়োপযোগী। আজকে যে নারী বিভিন্ন অফিসে ব্যাংকে, স্কুলে, মেডিকেল বা আইটি সেক্টরে কাজ করছেন তাঁকে দেখে মনে হতে পারে যে ‘সব ঠিক আছে’। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তাঁকে প্রতিদিন প্রমাণ করতে হয় যে সে ‘পুরুষের সমান’ কাজ করতে পারে। এই প্রমাণের চাপ পুরুষদের ওপর থাকে না।
নারীরা সমান কাজে কম মজুরি পাওয়া বৈশ্বিক সমস্যা হলেও বাংলাদেশে তা আরও প্রকট। ২০২৩ সালের একটি জরিপ বলছে, বেসরকারি সেক্টরে নারীরা পুরুষদের তুলনায় গড়ে ২১% কম পারিশ্রমিক পান। এ ছাড়া কর্মস্থলে যৌন হয়রানির ভয়, মাতৃত্বকালীন ছুটিতে চাকরি হারানোর ঝুঁকি, পদোন্নতিতে বঞ্চনা ইত্যাদি তো আছেই।
যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে যে নীতিমালা আছে, তাও কি কার্যকরভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না?
২০০৯ সালে উচ্চ আদালত যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, সব প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ কমিটি গঠন করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে খুব কম প্রতিষ্ঠানে এই কমিটি গঠিত হয়েছে। তদুপরি কমিটি গঠিত হলেও পিতৃতান্ত্রিক প্রথা ও সংস্কৃতির কারণে সেগুলো নিরপেক্ষ ও যথাযথভাবে কাজ করতে পারছে না। এ ছাড়া হাইকোর্টের নীতিমালার ভিত্তিতে এখনো কোনো আইন প্রণয়ন করা হয় নাই। নারী আন্দোলন এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে তাগিদ দিয়ে আসছে। ফলে অনেক নারী অভিযোগ করেও বিচার পান না, বরং উল্টো হেনস্তার শিকার হন। এই অবস্থায় নারী আত্মরক্ষার ও চাকরির স্বার্থে চুপ করে থাকার সংস্কৃতি অনুসরণ করে। এটা ভীষণ ভয়ংকর পরিস্থিতি। আমরা চাই এই নীতিমালাকে আইন হিসেবে প্রণয়ন করা হোক এবং বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মনিটরিং সেল গঠিত হোক।
সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহে নারীকে পদায়ন করার মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায় না। গণতান্ত্রিক পরিবেশ, প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও ইতিবাচক নীতি-সক্ষমতা এগুলো সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের পূর্বশর্ত। নারী বলতে আমরা শুধু সংসদ সদস্য বা মন্ত্রী বুঝি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, ব্যাংকের বোর্ড, স্থানীয় সরকার, রাজনৈতিক দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতে কোথাও নারীর প্রকৃত অংশগ্রহণ নেই।
সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন আছে, কিন্তু সেটা মনোনয়ননির্ভর। রাজনৈতিক দলগুলো নারীদের মাঠে ব্যবহার করে, কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণে পুরুষদেরই আধিপত্য। আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করছি, দলীয় পদে ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। সংবিধানের ১৯ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এটি রাষ্ট্রের দায়।
নারীর চলাচলে, নিরাপত্তায় যে প্রতিবন্ধকতা, আপনি কি মনে করেন তা রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা?
খুব পরিষ্কারভাবে বলি হ্যাঁ, এটি রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা। আপনি যদি একটি মেয়ে হয়ে বাসে উঠে নিরাপদ না বোধ করেন, রাতের শহরে হাঁটতে ভয় পান, এতে নারীর ব্যক্তিগত মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় যা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাষ্ট্র সে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। বিচারহীনতার সংস্কৃতি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে প্রচলিত পিতৃতান্ত্রিক ধ্যানধারণার সংস্কৃতি এবং নারীর অভিযোগকে তুচ্ছ করার প্রবণতা এসব মিলে নারীর চলাচল, আত্মবিশ্বাস, কর্মপরিসর সংকুচিত করে ফেলেছে।
তাহলে ভবিষ্যৎটা আপনি কেমন দেখছেন?
আমি আশাবাদী। কারণ, তৃণমূল থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে এ প্রজন্মের নারী মানসিকভাবে অগ্রসর, শক্তিশালী। ধারাবাহিক নারী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নারীর মধ্যে যে শক্তি সঞ্চারিত হয়েছে তা নারীকে সাহসী করে তুলেছে। বর্তমান প্রজন্মের নারীরা সব কাজে অংশগ্রহণে আগ্রহী, দক্ষ। আর এখনকার মেয়েরা টেকনোলজি, ব্যবসা, সাংবাদিকতা, খেলাধুলা সব জায়গায় আত্মপ্রকাশ করছে। তবে আমাদের এই পথচলা এখনো ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা যদি রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার এই ত্রিপক্ষীয় কাঠামোয় সমতা না আনতে পারি, তাহলে ব্যক্তি অর্জন সমাজে প্রভাব ফেলবে না।
নারী শিক্ষা এখন অনেক এগিয়েছে। তাহলে শিক্ষার এই বিস্তৃত সুযোগ নারীর অবস্থানকে কতটা বদলাতে পেরেছে?
আমাদের সময়ে, বিশেষ করে ষাট-সত্তরের দশকে, মেয়েদের মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ালেখা করাটাই ছিল বিশেষ কিছু। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সাহস কিংবা সুযোগ অনেকেই পেত না। এখন গ্রামের মেয়েরাও কলেজে যায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। এটা নিঃসন্দেহে বড় অগ্রগতি।
কিন্তু শুধু শিক্ষার পরিসংখ্যান দিয়ে নারীর অবস্থান নির্ধারণ করা যায় না। আজকে আপনি একজন নারীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেষ্ঠ ছাত্রী হিসেবে দেখবেন, কিন্তু কর্মক্ষেত্রে সে যখন পদোন্নতির সময় নিজের যোগ্যতার বদলে ‘নারী হওয়া’কে বাধা হিসেবে পায়, তখন বুঝতে পারবেন, শিক্ষা সমাজের চেতনাকে কতটুকু বদলাতে পেরেছে। শিক্ষা মানেই ক্ষমতায়ন নয়, যদি সেই শিক্ষায় নারীর আত্মমর্যাদা, সমতা ও অধিকারবোধ না থাকে। আর এটিই হলো আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ।
তাহলে আপনি বলছেন, শিক্ষা সত্ত্বেও নারীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে না?
ঠিক সেটাই। আপনি মেয়েটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে গেলেন, সে পড়ালেখা করল কিন্তু তার কর্মস্থলে যেতে নিরাপত্তা নেই, বাসে উঠে হয়রানির শিকার হয়, পরিবারে সে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, তাহলে এই শিক্ষার সুফল কোথায়? দীর্ঘকালব্যাপী আমরা যে যে সামাজিক প্রথা কাঠামো গড়ে তুলেছি, আইন প্রণয়ন করেছি তা নারীর ক্ষমতায়নের অনুকূলে না। সুতরাং আমরা যখন ‘নারী উন্নয়ন’ বলি, তখন শুধু সংখ্যার উন্নয়ন দিয়ে কাজ হবে না, প্রয়োজন নারীবান্ধব সামাজিক কাঠামো, যা নারীর অধিকার।
বাংলাদেশের নগর জীবনে নারীর চলাচলের ওপর যেসব প্রতিবন্ধকতা, বিশেষত গণপরিবহনে, তা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
এটা আমাদের রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন চিন্তার বড় ত্রুটি। আপনি নগরায়ণের কথা বলছেন, কিন্তু নগরবাসীর চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন হয় না। সেখানে নারী আরও প্রান্তিক। নারীর নিরাপদ চলাচল এই মৌলিক বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয় না। আজকে একজন মেয়ে সকালে অফিসে যাবে, সন্ধ্যায় ফিরবে, সে জানে না সে কোন বাসে উঠলে নিরাপদ থাকবে।
গণপরিবহনে যৌন হয়রানি এখন একটি নিরন্তর বাস্তবতা। শুধু শারীরিক হেনস্তা নয়, মানসিক যন্ত্রণাও প্রচণ্ড। আমরা বহু মেয়েকে পেয়েছি যারা হয়রানির ভয়ে পড়ালেখা বা চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। এটা কেবল একজন ব্যক্তির ক্ষতি নয়, রাষ্ট্রের সম্পদের অপচয়।
এ ছাড়া, নারীর চলাচলের জন্য শহরে নারীবান্ধব অবকাঠামো নেই। না আছে নারীবান্ধব ফুটপাত, না পর্যাপ্ত আলো বা নিরাপত্তাব্যবস্থা। এটা রাষ্ট্রীয় অবহেলার নমুনা।
রাজনৈতিক দলগুলো নারীর প্রতিনিধিত্ব নিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দেয়, বাস্তবে তার প্রতিফলন কতটা দেখছেন?
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নারীর প্রশ্নে এখনো দায়বদ্ধতার নিদর্শন দেখা যায় না। নির্বাচনের আগে তারা নারী ভোটের কথা বলে, সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা নিয়ে গর্ব করে, কিন্তু বাস্তবে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিসরে নারীর ভূমিকা নেই।
দলীয় কাউন্সিল, সিদ্ধান্ত গ্রহণ কমিটি, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সাংগঠনিক পদে নারীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। শুধু পোস্টারে মুখ থাকলেই ‘উন্নয়ন’ হয় না। আমরা চাই রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রকৃত, নির্বাচিত, জবাবদিহিমূলক নারী নেতৃত্ব।
আর সংরক্ষিত আসনের নারী এমপিদের আমরা শ্রদ্ধা করি, কিন্তু তাঁরা যদি দলনির্ভর হন এবং জনগণের কাছে দায়বদ্ধ না থাকেন, তবে তাঁর রাজনৈতিক গুরুত্ব কমে যায়। এটা শুধু একটি প্রতীক হয়ে থাকে। সেই কারণে আমরা সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন চাই।
আপনি একাধিকবার বলেছেন, রাষ্ট্র নারীকে দয়া নয়, অধিকার দিক। এই বার্তাটা যদি আপনি সরাসরি রাষ্ট্রকে দিতে চান, কী বলবেন?
আমি রাষ্ট্রকে আহ্বান জানাব নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় দায়বদ্ধ হওয়ার জন্য। সংবিধানে সমতার যে কথা বলা হয়েছে, তা যেন কাগজে না থাকে, বাস্তবেও প্রতিফলিত হয়। একটি মেয়ে শিশুকে জন্মের পর থেকেই যেন রাষ্ট্রীয় সমান মর্যাদার আশ্বাস দিতে পারে—এই হোক রাষ্ট্রের নৈতিক দায়।
আমাদের নারীসুলভ কাজ বা ‘মা-বোন’ ভেবে সহানুভূতির দরকার নেই, আমাদের নাগরিক, সামাজিক ও পারিবারিক অধিকার চাই। একজন পুরুষের মতো একজন নারীও মানুষ হিসেবে পরিচিত হবে, রাষ্ট্রের নাগরিক হবে এবং সেই মর্যাদায় বাঁচবে এটাই রাষ্ট্রের নৈতিক ও সাংবিধানিক দায়িত্ব। নারী ও পুরুষ উভয়কে মানবিক সমান অধিকার দিতে হবে।
তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে তরুণ নারীরা এখন সোশ্যাল মিডিয়ায়, ফিল্ম, লেখালেখিতে, প্রতিবাদে অনেক দৃঢ় অবস্থানে আসছে। আপনি এটাকে কীভাবে দেখছেন?
আমি এটা অনেক ইতিবাচকভাবে দেখি। একসময় নারীরা সাহস করত না প্রতিবাদ করার, কিন্তু এখন তারা শুধু প্রতিবাদ করছে না, নিজের কণ্ঠও নির্মাণ করছে। তারা লিখছে, ছবি তুলছে, গান বানাচ্ছে, প্রতিবাদ করছে।
তবে এই চেতনার বিস্তার যেন শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে। গ্রাম, শ্রমজীবী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, সুবিধাবঞ্চিত মেয়েরা যেন এই আন্দোলনের আওতায় আসে, এই সংযোগটা আমাদের করতে হবে।
আপনি যে সংগ্রাম করেছেন, যে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, সেই অভিজ্ঞতা থেকে তরুণদের উদ্দেশে কোনো বার্তা দিতে চান?
আমরা যারা আগের প্রজন্ম, তারা শুধু একটা কাঠামো তৈরি করে দিয়েছি। নতুন প্রজন্মকে তার গঠন, নির্মাণ ও পুনর্গঠন করতে হবে। তাদের বলব, পিছিয়ে পড়া নারীকে খুঁজে নাও, তাকে সঙ্গে নাও। নিজের উন্নয়নে আত্মতুষ্ট না হয়ে, অন্য নারীর অনুপস্থিতি বা সমস্যা চিহ্নিত করে সেখানেই কাজ শুরু করো। আর রাষ্ট্রের কাছে দাবি করতে শেখো—দয়া নয়, অধিকার চাও। একই সঙ্গে নিজ দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়ে উঠতে হবে। অধিকার এবং দায়িত্ব একে অপরের সহযোগী। যথাযথ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে অধিকার হাতছাড়া হয়ে যায়।
আপনি দীর্ঘদিন কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সে অভিজ্ঞতা নারী প্রশ্নে কেমন ছিল?
কমিউনিস্ট রাজনীতি আমাকে শিখিয়েছে সংগ্রাম করতে, সংহতি গড়তে। কিন্তু সত্য বলতেই হয়, বাম রাজনীতির ভেতরেও নারীর প্রশ্ন সব সময় প্রাধান্য পায়নি। অনেক সময় ‘বৃহত্তর বিপ্লব’-এর কথা বলতে গিয়ে নারী বিষয়কে গৌণ করা হয়েছে। এখনো তাদের কমিটিগুলোতে ৩৩ শতাংশ নারী অন্তর্ভুক্ত হয় নাই।
তবুও বলব, সেখান থেকে আমি রাজনৈতিক চেতনা পেয়েছি, বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গি গড়েছি। পরবর্তী সময়ে যখন আমি মহিলা পরিষদে কাজ শুরু করি, তখন সেই চেতনা কাজে লেগেছে।
আপনি যখন মহিলা পরিষদে কাজ শুরু করেন, তখন কি ভেবেছিলেন এই পথটা এত দীর্ঘ ও কণ্টকাকীর্ণ হবে?
শুরুতে বুঝি নাই যে নারী মুক্তির পথ এতটাই দীর্ঘ, জটিল ও বন্ধুর। আমাদের মানব সভ্যতার আদিতে যখন শ্রমের বিভাজন এবং সম্পদের মালিকানা ছিল না, তখন সমাজ ছিল নারীপ্রধান। পরবর্তী সময়ে শ্রমের এবং সম্পদের মালিকানাকে ভিত্তি করে গড়ে উঠল পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা। নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য পিতৃতান্ত্রিক সামাজিক কাঠামোর মধ্যে প্রোথিত নারীবিরোধী আইন, কাঠামো, প্রথার অবসান ঘটিয়ে সমতাভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্যেই আছে নারী মুক্তির পথ। সেই পথে নারী ও পুরুষকে একসঙ্গে লড়াই করতে হবে। এই কাঠামো পুরুষে-পুরুষেও বৈষম্য সৃষ্টি করে। অতীতের আন্দোলন এবং বর্তমান আন্দোলনকে এক ধারায় গ্রথিত করতে হবে। তাই আজও আমি আশাবাদী। এই যে এত প্রতিবন্ধকতার মাঝেও মেয়েরা লড়ছে, নতুন প্রজন্ম এগিয়ে আসছে, তাদের দেখে মনে হয়, পথটা কণ্টকাকীর্ণ হলেও, হাঁটতে হবেই।
আপনি নিজে একজন চিকিৎসক, শিক্ষক, রাজনৈতিক কর্মী, সংগঠক। এত পরিচয়ের ভেতর নারী হিসেবে নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন?
খুব স্পষ্ট করে যদি বলি অবশ্যই আমার পরিচয় আমি একজন নারী, একজন চিকিৎসক, একজন শিক্ষক এবং একজন রাজনৈতিক কর্মী। তবে আমার কর্মজীবনের সব ক্ষেত্রে আমার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রতিফলন ঘটেছে। আমার কাজ লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একজন মানুষ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরা। আমার পরিবার এবং সহকর্মীরা আমার যাত্রায় যেভাবে সহায়তা করেছেন, তার জন্য আমি তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
আপনি কি মনে করেন, এই দেশ একদিন নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সত্যিকারের রাষ্ট্র হবে?
আমি স্বপ্ন দেখি সে স্বপ্ন ঘুমিয়ে নয়, জাগরণে, কর্মজগতে। আমি মনে করি, স্বপ্ন না থাকলে সংগ্রাম অর্থহীন হয়ে যায়। আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম একটা রাষ্ট্রের, যেখানে নারী স্বাধীনভাবে হাঁটবে, সিদ্ধান্ত নেবে এবং নিজের চাহিদা ও জীবনের অধিকার নিজেই স্থির করবে। সেই রাষ্ট্র এখনো আসেনি, তবে তার দিগন্ত দেখা গেছে। যদি নতুন প্রজন্ম এই স্বপ্নকে ধারণ করে, প্রতিরোধ গড়ে তোলে, তবে একদিন এই দেশ নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করবে।
আপনার জীবনের শুরু এবং রাজনীতিতে অংশগ্রহণের পেছনের প্রেরণা কী ছিল?
আমার বেড়ে ওঠা ঢাকায়। ষাটের দশকে যখন ছাত্ররাজনীতির পরিবেশ গড়ে উঠছিল, চিকিৎসাবিজ্ঞানে অধ্যয়নের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজে আমি ভর্তি হই ১৯৬৪ সালে। তখন চারদিকে উত্তাল সময়—ভাষা, স্বাধিকার, সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলন। সেই পরিবেশে রাজনৈতিক চেতনা জন্মানো খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়। বিশেষ করে আমার ছোট মামা ডাক্তার সৈয়দ খলিলউল্লাহ বাম রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি আমাকে ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করেন।
তৎকালীন পাকিস্তানে শিক্ষার ক্ষেত্রে বিরাজমান বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক ধরনের নৈতিক দায়বোধ থেকেই আমি রাজনীতিতে সক্রিয় হই। সময়ের পরিক্রমায় আমিও কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হই। এখন অবশ্য আমার কোনো রাজনৈতিক দলে সম্পৃক্ততা নাই।
আপনি বহু বছর ধরে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সঙ্গে যুক্ত আছেন। এই সময়কালে কী পরিবর্তন দেখেছেন?
হ্যাঁ, মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠার সময় থেকে আমি এর সঙ্গে যুক্ত। প্রথম দিকে আমাদের মূল লড়াই ছিল সাংবিধানিক অধিকার, নারী শিক্ষা, যৌতুকবিরোধী আইন, বাল্যবিবাহের অভিঘাত বিষয়ে নারী সমাজকে সচেতন করা ও সংগঠিত করা। পরের দশকে আমরা নারী নির্যাতনবিরোধী আইন, পারিবারিক আইন সংস্কার, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আন্দোলনে অগ্রসর হই। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নারীর অধিকার মানব অধিকার হিসেবে পরিচিতি পায়।
নারীর জীবনে পরিবর্তন অবশ্যই এসেছে। মূল পরিবর্তন ঘটেছে নারীর চিন্তা জগতে। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী প্রজন্মের নারীর মধ্যে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নারী মুক্তি অর্জনের আকাঙ্ক্ষা জন্মেছে এবং নারীর শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র, মিডিয়া ও সামাজিক ক্ষেত্রে দৃশ্যমানতা বেড়েছে। কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গে নারীর প্রতি সহিংসতাও বেড়েছে। যেমন এখন নারী শিক্ষা বাড়লেও কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকা কঠিন; আইন থাকলেও প্রয়োগ হয় না। সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা আগের তুলনায় সহিংস ও আরও নিষ্ঠুর রূপ নিচ্ছে, যা ঘটছে কখনো প্রকাশ্যে, কখনো আবার পরোক্ষভাবে। সাম্প্রতিক সময়ে নারী বিদ্বেষী গোষ্ঠী কর্তৃক সমাজের মধ্যে নারী বিদ্বেষ প্রচারের অপচেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশকে ঘিরে সাম্প্রতিক যে ধর্মীয় বিরোধিতা দেখা গেছে, আপনি সেটিকে কীভাবে দেখছেন?
এটি নতুন নয়। আমরা যখনই নারীর অধিকার নিয়ে কোনো আইনি সংস্কারের কথা বলি, তখন একটি গোষ্ঠী ধর্মের ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে নারী আন্দোলনকে আঘাত করার চেষ্টা করে। নারী সংস্কার কমিশন মূলত বিদ্যমান বৈষম্য দূর করে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সুপারিশ করেছে, বিশেষ করে নারীর পারিবারিক ও ব্যক্তিগত অধিকার বিষয়ে আইনের অসামঞ্জস্যতা দূর করে মানবিক ও সাংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে। যেমন: উত্তরাধিকার, বিবাহ ও তালাক, সন্তানের অভিভাবকত্ব ইত্যাদি। কিন্তু কিছু সংগঠন একে ‘ধর্মবিরোধী’ বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং অত্যন্ত অশোভন, অশ্লীল ও কুৎসিতভাবে তা প্রকাশ করছে যা কখনো রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ভাষা হতে পারে না। এইসব দলের বক্তব্য সংবিধানের সমতা ও মর্যাদার লক্ষ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
তাহলে আপনি বলছেন, ধর্মীয় গোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া কেবল মতভিন্নতা নয়, বরং সাংগঠনিকভাবে অধিকার হরণ?
সাংগঠনিক অধিকার হরণ এভাবে আমি বলতে চাই না, কিন্তু নাগরিক অধিকার ও ব্যক্তিগত অধিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। যারা নারী সংস্কার কমিশনের বিরোধিতা করছে তারা কেবল নারীর বিরুদ্ধে নয়, প্রগতিশীল সমাজের বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছে। আমরা বলি, ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে মানবাধিকারের বিরোধ নেই। আপনি যখন বলছেন, মেয়েরা সমান উত্তরাধিকার পাবে, কিংবা বিবাহে যৌক্তিক শর্ত থাকবে, তখন আপনি মূলত সামাজিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার কথা বলছেন। আপনি মুসলমান হিসেবে জীবন যাপন করুন, কিন্তু তার মানে এই নয় যে রাষ্ট্রীয় আইনে একজন নারী দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক থাকবে। সংবিধানও সমতার কথাই বলে। এই কথাটিই আমরা আবার প্রতিষ্ঠা করতে চাইছি।
কর্মক্ষেত্রে নারীরা এখনো বৈষম্যের মুখোমুখি হচ্ছে। এটা আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
প্রশ্নটি বর্তমান সময়োপযোগী। আজকে যে নারী বিভিন্ন অফিসে ব্যাংকে, স্কুলে, মেডিকেল বা আইটি সেক্টরে কাজ করছেন তাঁকে দেখে মনে হতে পারে যে ‘সব ঠিক আছে’। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তাঁকে প্রতিদিন প্রমাণ করতে হয় যে সে ‘পুরুষের সমান’ কাজ করতে পারে। এই প্রমাণের চাপ পুরুষদের ওপর থাকে না।
নারীরা সমান কাজে কম মজুরি পাওয়া বৈশ্বিক সমস্যা হলেও বাংলাদেশে তা আরও প্রকট। ২০২৩ সালের একটি জরিপ বলছে, বেসরকারি সেক্টরে নারীরা পুরুষদের তুলনায় গড়ে ২১% কম পারিশ্রমিক পান। এ ছাড়া কর্মস্থলে যৌন হয়রানির ভয়, মাতৃত্বকালীন ছুটিতে চাকরি হারানোর ঝুঁকি, পদোন্নতিতে বঞ্চনা ইত্যাদি তো আছেই।
যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে যে নীতিমালা আছে, তাও কি কার্যকরভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না?
২০০৯ সালে উচ্চ আদালত যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, সব প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ কমিটি গঠন করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে খুব কম প্রতিষ্ঠানে এই কমিটি গঠিত হয়েছে। তদুপরি কমিটি গঠিত হলেও পিতৃতান্ত্রিক প্রথা ও সংস্কৃতির কারণে সেগুলো নিরপেক্ষ ও যথাযথভাবে কাজ করতে পারছে না। এ ছাড়া হাইকোর্টের নীতিমালার ভিত্তিতে এখনো কোনো আইন প্রণয়ন করা হয় নাই। নারী আন্দোলন এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে তাগিদ দিয়ে আসছে। ফলে অনেক নারী অভিযোগ করেও বিচার পান না, বরং উল্টো হেনস্তার শিকার হন। এই অবস্থায় নারী আত্মরক্ষার ও চাকরির স্বার্থে চুপ করে থাকার সংস্কৃতি অনুসরণ করে। এটা ভীষণ ভয়ংকর পরিস্থিতি। আমরা চাই এই নীতিমালাকে আইন হিসেবে প্রণয়ন করা হোক এবং বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মনিটরিং সেল গঠিত হোক।
সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহে নারীকে পদায়ন করার মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায় না। গণতান্ত্রিক পরিবেশ, প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও ইতিবাচক নীতি-সক্ষমতা এগুলো সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের পূর্বশর্ত। নারী বলতে আমরা শুধু সংসদ সদস্য বা মন্ত্রী বুঝি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, ব্যাংকের বোর্ড, স্থানীয় সরকার, রাজনৈতিক দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতে কোথাও নারীর প্রকৃত অংশগ্রহণ নেই।
সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন আছে, কিন্তু সেটা মনোনয়ননির্ভর। রাজনৈতিক দলগুলো নারীদের মাঠে ব্যবহার করে, কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণে পুরুষদেরই আধিপত্য। আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করছি, দলীয় পদে ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। সংবিধানের ১৯ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এটি রাষ্ট্রের দায়।
নারীর চলাচলে, নিরাপত্তায় যে প্রতিবন্ধকতা, আপনি কি মনে করেন তা রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা?
খুব পরিষ্কারভাবে বলি হ্যাঁ, এটি রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা। আপনি যদি একটি মেয়ে হয়ে বাসে উঠে নিরাপদ না বোধ করেন, রাতের শহরে হাঁটতে ভয় পান, এতে নারীর ব্যক্তিগত মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় যা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাষ্ট্র সে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। বিচারহীনতার সংস্কৃতি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে প্রচলিত পিতৃতান্ত্রিক ধ্যানধারণার সংস্কৃতি এবং নারীর অভিযোগকে তুচ্ছ করার প্রবণতা এসব মিলে নারীর চলাচল, আত্মবিশ্বাস, কর্মপরিসর সংকুচিত করে ফেলেছে।
তাহলে ভবিষ্যৎটা আপনি কেমন দেখছেন?
আমি আশাবাদী। কারণ, তৃণমূল থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে এ প্রজন্মের নারী মানসিকভাবে অগ্রসর, শক্তিশালী। ধারাবাহিক নারী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নারীর মধ্যে যে শক্তি সঞ্চারিত হয়েছে তা নারীকে সাহসী করে তুলেছে। বর্তমান প্রজন্মের নারীরা সব কাজে অংশগ্রহণে আগ্রহী, দক্ষ। আর এখনকার মেয়েরা টেকনোলজি, ব্যবসা, সাংবাদিকতা, খেলাধুলা সব জায়গায় আত্মপ্রকাশ করছে। তবে আমাদের এই পথচলা এখনো ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা যদি রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার এই ত্রিপক্ষীয় কাঠামোয় সমতা না আনতে পারি, তাহলে ব্যক্তি অর্জন সমাজে প্রভাব ফেলবে না।
নারী শিক্ষা এখন অনেক এগিয়েছে। তাহলে শিক্ষার এই বিস্তৃত সুযোগ নারীর অবস্থানকে কতটা বদলাতে পেরেছে?
আমাদের সময়ে, বিশেষ করে ষাট-সত্তরের দশকে, মেয়েদের মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ালেখা করাটাই ছিল বিশেষ কিছু। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সাহস কিংবা সুযোগ অনেকেই পেত না। এখন গ্রামের মেয়েরাও কলেজে যায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। এটা নিঃসন্দেহে বড় অগ্রগতি।
কিন্তু শুধু শিক্ষার পরিসংখ্যান দিয়ে নারীর অবস্থান নির্ধারণ করা যায় না। আজকে আপনি একজন নারীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেষ্ঠ ছাত্রী হিসেবে দেখবেন, কিন্তু কর্মক্ষেত্রে সে যখন পদোন্নতির সময় নিজের যোগ্যতার বদলে ‘নারী হওয়া’কে বাধা হিসেবে পায়, তখন বুঝতে পারবেন, শিক্ষা সমাজের চেতনাকে কতটুকু বদলাতে পেরেছে। শিক্ষা মানেই ক্ষমতায়ন নয়, যদি সেই শিক্ষায় নারীর আত্মমর্যাদা, সমতা ও অধিকারবোধ না থাকে। আর এটিই হলো আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ।
তাহলে আপনি বলছেন, শিক্ষা সত্ত্বেও নারীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে না?
ঠিক সেটাই। আপনি মেয়েটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে গেলেন, সে পড়ালেখা করল কিন্তু তার কর্মস্থলে যেতে নিরাপত্তা নেই, বাসে উঠে হয়রানির শিকার হয়, পরিবারে সে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, তাহলে এই শিক্ষার সুফল কোথায়? দীর্ঘকালব্যাপী আমরা যে যে সামাজিক প্রথা কাঠামো গড়ে তুলেছি, আইন প্রণয়ন করেছি তা নারীর ক্ষমতায়নের অনুকূলে না। সুতরাং আমরা যখন ‘নারী উন্নয়ন’ বলি, তখন শুধু সংখ্যার উন্নয়ন দিয়ে কাজ হবে না, প্রয়োজন নারীবান্ধব সামাজিক কাঠামো, যা নারীর অধিকার।
বাংলাদেশের নগর জীবনে নারীর চলাচলের ওপর যেসব প্রতিবন্ধকতা, বিশেষত গণপরিবহনে, তা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
এটা আমাদের রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন চিন্তার বড় ত্রুটি। আপনি নগরায়ণের কথা বলছেন, কিন্তু নগরবাসীর চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন হয় না। সেখানে নারী আরও প্রান্তিক। নারীর নিরাপদ চলাচল এই মৌলিক বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয় না। আজকে একজন মেয়ে সকালে অফিসে যাবে, সন্ধ্যায় ফিরবে, সে জানে না সে কোন বাসে উঠলে নিরাপদ থাকবে।
গণপরিবহনে যৌন হয়রানি এখন একটি নিরন্তর বাস্তবতা। শুধু শারীরিক হেনস্তা নয়, মানসিক যন্ত্রণাও প্রচণ্ড। আমরা বহু মেয়েকে পেয়েছি যারা হয়রানির ভয়ে পড়ালেখা বা চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। এটা কেবল একজন ব্যক্তির ক্ষতি নয়, রাষ্ট্রের সম্পদের অপচয়।
এ ছাড়া, নারীর চলাচলের জন্য শহরে নারীবান্ধব অবকাঠামো নেই। না আছে নারীবান্ধব ফুটপাত, না পর্যাপ্ত আলো বা নিরাপত্তাব্যবস্থা। এটা রাষ্ট্রীয় অবহেলার নমুনা।
রাজনৈতিক দলগুলো নারীর প্রতিনিধিত্ব নিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দেয়, বাস্তবে তার প্রতিফলন কতটা দেখছেন?
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নারীর প্রশ্নে এখনো দায়বদ্ধতার নিদর্শন দেখা যায় না। নির্বাচনের আগে তারা নারী ভোটের কথা বলে, সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা নিয়ে গর্ব করে, কিন্তু বাস্তবে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিসরে নারীর ভূমিকা নেই।
দলীয় কাউন্সিল, সিদ্ধান্ত গ্রহণ কমিটি, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সাংগঠনিক পদে নারীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। শুধু পোস্টারে মুখ থাকলেই ‘উন্নয়ন’ হয় না। আমরা চাই রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রকৃত, নির্বাচিত, জবাবদিহিমূলক নারী নেতৃত্ব।
আর সংরক্ষিত আসনের নারী এমপিদের আমরা শ্রদ্ধা করি, কিন্তু তাঁরা যদি দলনির্ভর হন এবং জনগণের কাছে দায়বদ্ধ না থাকেন, তবে তাঁর রাজনৈতিক গুরুত্ব কমে যায়। এটা শুধু একটি প্রতীক হয়ে থাকে। সেই কারণে আমরা সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন চাই।
আপনি একাধিকবার বলেছেন, রাষ্ট্র নারীকে দয়া নয়, অধিকার দিক। এই বার্তাটা যদি আপনি সরাসরি রাষ্ট্রকে দিতে চান, কী বলবেন?
আমি রাষ্ট্রকে আহ্বান জানাব নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় দায়বদ্ধ হওয়ার জন্য। সংবিধানে সমতার যে কথা বলা হয়েছে, তা যেন কাগজে না থাকে, বাস্তবেও প্রতিফলিত হয়। একটি মেয়ে শিশুকে জন্মের পর থেকেই যেন রাষ্ট্রীয় সমান মর্যাদার আশ্বাস দিতে পারে—এই হোক রাষ্ট্রের নৈতিক দায়।
আমাদের নারীসুলভ কাজ বা ‘মা-বোন’ ভেবে সহানুভূতির দরকার নেই, আমাদের নাগরিক, সামাজিক ও পারিবারিক অধিকার চাই। একজন পুরুষের মতো একজন নারীও মানুষ হিসেবে পরিচিত হবে, রাষ্ট্রের নাগরিক হবে এবং সেই মর্যাদায় বাঁচবে এটাই রাষ্ট্রের নৈতিক ও সাংবিধানিক দায়িত্ব। নারী ও পুরুষ উভয়কে মানবিক সমান অধিকার দিতে হবে।
তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে তরুণ নারীরা এখন সোশ্যাল মিডিয়ায়, ফিল্ম, লেখালেখিতে, প্রতিবাদে অনেক দৃঢ় অবস্থানে আসছে। আপনি এটাকে কীভাবে দেখছেন?
আমি এটা অনেক ইতিবাচকভাবে দেখি। একসময় নারীরা সাহস করত না প্রতিবাদ করার, কিন্তু এখন তারা শুধু প্রতিবাদ করছে না, নিজের কণ্ঠও নির্মাণ করছে। তারা লিখছে, ছবি তুলছে, গান বানাচ্ছে, প্রতিবাদ করছে।
তবে এই চেতনার বিস্তার যেন শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে। গ্রাম, শ্রমজীবী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, সুবিধাবঞ্চিত মেয়েরা যেন এই আন্দোলনের আওতায় আসে, এই সংযোগটা আমাদের করতে হবে।
আপনি যে সংগ্রাম করেছেন, যে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, সেই অভিজ্ঞতা থেকে তরুণদের উদ্দেশে কোনো বার্তা দিতে চান?
আমরা যারা আগের প্রজন্ম, তারা শুধু একটা কাঠামো তৈরি করে দিয়েছি। নতুন প্রজন্মকে তার গঠন, নির্মাণ ও পুনর্গঠন করতে হবে। তাদের বলব, পিছিয়ে পড়া নারীকে খুঁজে নাও, তাকে সঙ্গে নাও। নিজের উন্নয়নে আত্মতুষ্ট না হয়ে, অন্য নারীর অনুপস্থিতি বা সমস্যা চিহ্নিত করে সেখানেই কাজ শুরু করো। আর রাষ্ট্রের কাছে দাবি করতে শেখো—দয়া নয়, অধিকার চাও। একই সঙ্গে নিজ দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়ে উঠতে হবে। অধিকার এবং দায়িত্ব একে অপরের সহযোগী। যথাযথ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে অধিকার হাতছাড়া হয়ে যায়।
আপনি দীর্ঘদিন কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সে অভিজ্ঞতা নারী প্রশ্নে কেমন ছিল?
কমিউনিস্ট রাজনীতি আমাকে শিখিয়েছে সংগ্রাম করতে, সংহতি গড়তে। কিন্তু সত্য বলতেই হয়, বাম রাজনীতির ভেতরেও নারীর প্রশ্ন সব সময় প্রাধান্য পায়নি। অনেক সময় ‘বৃহত্তর বিপ্লব’-এর কথা বলতে গিয়ে নারী বিষয়কে গৌণ করা হয়েছে। এখনো তাদের কমিটিগুলোতে ৩৩ শতাংশ নারী অন্তর্ভুক্ত হয় নাই।
তবুও বলব, সেখান থেকে আমি রাজনৈতিক চেতনা পেয়েছি, বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গি গড়েছি। পরবর্তী সময়ে যখন আমি মহিলা পরিষদে কাজ শুরু করি, তখন সেই চেতনা কাজে লেগেছে।
আপনি যখন মহিলা পরিষদে কাজ শুরু করেন, তখন কি ভেবেছিলেন এই পথটা এত দীর্ঘ ও কণ্টকাকীর্ণ হবে?
শুরুতে বুঝি নাই যে নারী মুক্তির পথ এতটাই দীর্ঘ, জটিল ও বন্ধুর। আমাদের মানব সভ্যতার আদিতে যখন শ্রমের বিভাজন এবং সম্পদের মালিকানা ছিল না, তখন সমাজ ছিল নারীপ্রধান। পরবর্তী সময়ে শ্রমের এবং সম্পদের মালিকানাকে ভিত্তি করে গড়ে উঠল পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা। নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য পিতৃতান্ত্রিক সামাজিক কাঠামোর মধ্যে প্রোথিত নারীবিরোধী আইন, কাঠামো, প্রথার অবসান ঘটিয়ে সমতাভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্যেই আছে নারী মুক্তির পথ। সেই পথে নারী ও পুরুষকে একসঙ্গে লড়াই করতে হবে। এই কাঠামো পুরুষে-পুরুষেও বৈষম্য সৃষ্টি করে। অতীতের আন্দোলন এবং বর্তমান আন্দোলনকে এক ধারায় গ্রথিত করতে হবে। তাই আজও আমি আশাবাদী। এই যে এত প্রতিবন্ধকতার মাঝেও মেয়েরা লড়ছে, নতুন প্রজন্ম এগিয়ে আসছে, তাদের দেখে মনে হয়, পথটা কণ্টকাকীর্ণ হলেও, হাঁটতে হবেই।
আপনি নিজে একজন চিকিৎসক, শিক্ষক, রাজনৈতিক কর্মী, সংগঠক। এত পরিচয়ের ভেতর নারী হিসেবে নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন?
খুব স্পষ্ট করে যদি বলি অবশ্যই আমার পরিচয় আমি একজন নারী, একজন চিকিৎসক, একজন শিক্ষক এবং একজন রাজনৈতিক কর্মী। তবে আমার কর্মজীবনের সব ক্ষেত্রে আমার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রতিফলন ঘটেছে। আমার কাজ লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একজন মানুষ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরা। আমার পরিবার এবং সহকর্মীরা আমার যাত্রায় যেভাবে সহায়তা করেছেন, তার জন্য আমি তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
আপনি কি মনে করেন, এই দেশ একদিন নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সত্যিকারের রাষ্ট্র হবে?
আমি স্বপ্ন দেখি সে স্বপ্ন ঘুমিয়ে নয়, জাগরণে, কর্মজগতে। আমি মনে করি, স্বপ্ন না থাকলে সংগ্রাম অর্থহীন হয়ে যায়। আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম একটা রাষ্ট্রের, যেখানে নারী স্বাধীনভাবে হাঁটবে, সিদ্ধান্ত নেবে এবং নিজের চাহিদা ও জীবনের অধিকার নিজেই স্থির করবে। সেই রাষ্ট্র এখনো আসেনি, তবে তার দিগন্ত দেখা গেছে। যদি নতুন প্রজন্ম এই স্বপ্নকে ধারণ করে, প্রতিরোধ গড়ে তোলে, তবে একদিন এই দেশ নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেছেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে—এ দাবি অবান্তর’ (সমকাল, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫)। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের...
১৭ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের কৃষি খাতে যে পরিবর্তন ঘটেছে, তা নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক অর্জন। লাখ লাখ ক্ষুদ্র কৃষক, কৃষিবিজ্ঞানী, গবেষক, কৃষি উদ্ভাবন এবং সরকারের ধারাবাহিক সহায়তায় বাংলাদেশ আজ খাদ্য উৎপাদনে একটি শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছে। তবে কৃষি আজ আর কেবল খাদ্য উৎপাদনের বিষয় নয়।
১৭ ঘণ্টা আগে
ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোয় যারা হামলা চালিয়েছিল, তাদের কয়েকজনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
১৭ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে বিজয়ের ৫৪তম বার্ষিকী উদ্যাপন যতটা স্বাচ্ছন্দ্যে ও মহাসমারোহে হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। বড় একটা ছন্দপতন ঘটে গেছে। অথচ বিজয়ের এই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই অর্থাৎ ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)।
২ দিন আগেদীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রাম ও সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণভিত্তিক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে দেশের জন্ম, সে দেশের ইতিহাসকে তথ্যবিকৃতি ও অসত্যাচার দিয়ে মুছে ফেলা কখনোই এবং কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। তার চেয়ে বরং সেটিকে মেনে নিয়ে পারস্পরিক মমতা, সৌহার্দ্য ও সমন্বয়ের ভিত্তিতে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়, তা নিয়ে ভাবাটাই হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য এই মুহূর্তের উত্তম কর্তব্য।
আবু তাহের খান

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেছেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে—এ দাবি অবান্তর’ (সমকাল, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫)। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। আলোচনা সভার বিষয়বস্তু এবং এ বিষয়ে তাঁর দেওয়া বক্তব্যের ধরন থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে এ ধরনের বক্তব্য উপস্থাপনের জন্যই বস্তুত পরিকল্পিত শিরোনামের আওতায় পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ওই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ‘মুক্তচিন্তা’র নামে যে চিন্তার প্রকাশ তিনি আলোচনা সভায় ঘটালেন, তা কি মুক্তচিন্তা নাকি বিকৃত মিথ্যাচার? একজন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষক হয়ে, তা তিনি যে রাজনৈতিক মতাদর্শের লোকই হোন না কেন, এ ধরনের বিকৃত মিথ্যাচারের আশ্রয় নেওয়া কি সঠিক হয়েছে?
একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড আজ বিশ্বস্বীকৃত ইতিহাসের অংশ। ১৯৭১ সালের ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এর বিস্তারিত ও সুনির্দিষ্ট উল্লেখ রয়েছে। প্রায় একই সময়ে বিবিসি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ‘পাকিস্তানিদের দৃষ্টিতে একাত্তর’ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত তৎকালীন পাকিস্তান পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের জিওসি জেনারেল এ এ খান নিয়াজি এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর বক্তব্য থেকেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। বস্তুত রাও ফরমান আলীই ছিলেন এ পরিকল্পনার মূল হোতা, যার বাস্তবায়নের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিল এ এ খান নিয়াজির সেনাসদস্য এবং আলবদর ও আলশামসের সদস্যরা। উল্লেখ্য, সে সময় রাও ফরমান আলীর কাছ থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের একটি তালিকাও পাওয়া গিয়েছিল। উল্লিখিত বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার লক্ষ্যে রাও ফরমান আলী অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় ধীরস্থিরভাবে ওই তালিকা প্রণয়ন করেছিলেন। আর ওই তালিকা অনুযায়ী বুদ্ধিজীবীদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে এসে হত্যা করার ব্যাপারে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করেছিল তৎকালীন ইসলামি ছাত্রসংঘের কর্মীদের নিয়ে গঠিত আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরা।
বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে বাংলাদেশের স্থানীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতেও সে সময় সবিস্তারে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। এ বিষয়ে ১৯৭১ সালের ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পৃষ্ঠার শীর্ষ সংবাদ ছিল ‘সোনার বাংলায় মানবেতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড’। আর ১৯ ডিসেম্বর দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায়ও এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়, যার শিরোনাম ছিল ‘রক্তস্নাত বাংলাদেশ কাঁদো’। উল্লেখ্য, সে সময় দেশের সব পত্রিকাই সাদাকালো রঙে ছাপা হলেও দৈনিক পূর্বদেশ সেদিন বড় অঙ্কের আর্থিক ত্যাগ স্বীকার করে প্রথম পৃষ্ঠায় ৮ কলামে রঙিন শিরোনাম করেছিল রক্তের রঙে—লাল কালিতে। অন্যদিকে এ বিষয়ে বেতার সম্প্রচার তো ছিলই। বাংলাদেশ বেতারের ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রচারিত প্রায় প্রতিটি সংবাদে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল, সে-সংক্রান্ত কিছু কিছু রেকর্ড এখনো বাংলাদেশ বেতারের আর্কাইভে পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা যায়। ভয় হয়, এ প্রবন্ধে উল্লিখিত তথ্যসূত্রের কথা শুনে হত্যাকারীদের অনুগামীরা না আবার এসব রেকর্ডপত্র বিনষ্ট করার উদ্যোগ নিয়ে নেয়, যেমনটি সাম্প্রতিক সময়ে দেশের নানা স্থানে নানা ক্ষেত্রে ঘটতে দেখা গেছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং এর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিবর্গের বিষয়ে দালিলিক প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং বিশেষত এর উপ-উপাচার্য ইতিহাসকে পাল্টে ফেলার ব্যাপারে এতটা লজ্জাবর্জিত ও বিবেকহীন হয়ে উঠলেন কেমন করে? চিন্তা ও মননে তিনি যত পশ্চাদমুখীই হোন না কেন, পেশাগত পরিচয়ে এখনো তো তিনি একজন শিক্ষক। আর একাত্তরের ওই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বড় অংশই তো শিক্ষক ছিলেন। তো সেই সুবাদেও কি এ রকম বিকৃত মিথ্যাচারের সঙ্গে যুক্ত হতে আপনার বিবেক আপনাকে এতটুকু বাধা দেয়নি! এ ক্ষেত্রে কষ্ট পাচ্ছি এই ভেবে যে একজন শিক্ষক যদি বিকৃতি ও অসত্যাচারে যুক্ত হন, তাহলে তাঁর কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা কী শিখবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় এ জাতির ভবিষ্যৎই-বা কী? প্রায় একই সময়ে (৯ ডিসেম্বর ২০২৫) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান ইতিহাসের অন্যতম মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়াকে বললেন ‘মুরতাদ কাফির’। আর তাঁর ওই বক্তব্যের মাত্র পাঁচ দিন পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডকে ইতিহাস থেকেই নিশ্চিহ্ন করে দিতে উদ্যোগী হলেন।
অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান ও খন্দকার মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসানের রাজনৈতিক অভিভাবকেরা অবশ্য বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডকে অস্বীকার করেননি। তাঁরা এটিকে বলেছেন ‘দিল্লির পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ বলে (প্রাগুক্ত)। ওবায়দুল কাদেরের নির্লজ্জ ভারত তোষণমূলক বক্তব্যের যেমন নিন্দা করেছি ও করছি, তেমনি প্রত্যাখ্যান করছি তাঁদের এ তথাকথিত দিল্লি ষড়যন্ত্রের স্লোগানকেও। উল্লেখ্য, উপ-উপাচার্যের সঙ্গে মিলে একই দিনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এ মন্তব্য করেন। আয়োজন ও মন্তব্যের ধরন থেকে মনে হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি ও অবলোপনের এ উদ্যোগটি তাঁরা পরিকল্পিতভাবেই গ্রহণ করেছেন। কিন্তু কেন? জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের কাছে বিনীতভাবে একটি প্রশ্ন রাখি, এ দেশকে কি আর কোনো দিন পাকিস্তানের অংশ করা সম্ভব? যদি সম্ভব না হয়, তাহলে অতীতের ভুলত্রুটি স্বীকার করে অনুতপ্ত হয়ে কেন আপনারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেনে নিতে পারছেন না? এ দেশে অশান্তি ও অস্থিরতা বিরাজ করলে তা থেকে শুধু আপনাদের কেন, কারও পক্ষেই কি লাভবান হওয়ার কিছু আছে? অথচ দেখুন তো, নানা দল, মত ও পথের রাজনীতিকদের সৃষ্ট নানাবিধ অস্থিরতার কারণে এ দেশের সাধারণ মানুষ আজ কত কষ্ট পাচ্ছে। তাদের জীবন আজ নানা দুর্ভোগ ও অশান্তিতে কত দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষের এসব কষ্ট কি আপনাদের এতটুকুও স্পর্শ করে না? যদি করে, তাহলে অতীতের সব রাগ, ক্ষোভ ও জিঘাংসার কথা ভুলে গিয়ে সব ধরনের ধর্মীয় উগ্রতা ও সাম্প্রদায়িকতাকে বিসর্জন দিয়ে বাংলাদেশের মূলধারার অসাম্প্রদায়িক সমাজ ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যান। দেখবেন আপনারা সবাই ভালো আছেন।
পরিশেষে বলি, দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রাম ও সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণভিত্তিক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে দেশের জন্ম, সে দেশের ইতিহাসকে তথ্যবিকৃতি ও অসত্যাচার দিয়ে মুছে ফেলা কখনোই এবং কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। তার চেয়ে বরং সেটিকে মেনে নিয়ে পারস্পরিক মমতা, সৌহার্দ্য ও সমন্বয়ের ভিত্তিতে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়, তা নিয়ে ভাবাটাই হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য এই মুহূর্তের উত্তম কর্তব্য। আর আশা করছি, বিবেকের তাড়নায় তৈরি এ লেখার জন্য মব বা অন্য কোনোরূপ পীড়নের শিকার হব না।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেছেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে—এ দাবি অবান্তর’ (সমকাল, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫)। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। আলোচনা সভার বিষয়বস্তু এবং এ বিষয়ে তাঁর দেওয়া বক্তব্যের ধরন থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে এ ধরনের বক্তব্য উপস্থাপনের জন্যই বস্তুত পরিকল্পিত শিরোনামের আওতায় পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ওই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ‘মুক্তচিন্তা’র নামে যে চিন্তার প্রকাশ তিনি আলোচনা সভায় ঘটালেন, তা কি মুক্তচিন্তা নাকি বিকৃত মিথ্যাচার? একজন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষক হয়ে, তা তিনি যে রাজনৈতিক মতাদর্শের লোকই হোন না কেন, এ ধরনের বিকৃত মিথ্যাচারের আশ্রয় নেওয়া কি সঠিক হয়েছে?
একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড আজ বিশ্বস্বীকৃত ইতিহাসের অংশ। ১৯৭১ সালের ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এর বিস্তারিত ও সুনির্দিষ্ট উল্লেখ রয়েছে। প্রায় একই সময়ে বিবিসি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ‘পাকিস্তানিদের দৃষ্টিতে একাত্তর’ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত তৎকালীন পাকিস্তান পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের জিওসি জেনারেল এ এ খান নিয়াজি এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর বক্তব্য থেকেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। বস্তুত রাও ফরমান আলীই ছিলেন এ পরিকল্পনার মূল হোতা, যার বাস্তবায়নের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিল এ এ খান নিয়াজির সেনাসদস্য এবং আলবদর ও আলশামসের সদস্যরা। উল্লেখ্য, সে সময় রাও ফরমান আলীর কাছ থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের একটি তালিকাও পাওয়া গিয়েছিল। উল্লিখিত বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার লক্ষ্যে রাও ফরমান আলী অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় ধীরস্থিরভাবে ওই তালিকা প্রণয়ন করেছিলেন। আর ওই তালিকা অনুযায়ী বুদ্ধিজীবীদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে এসে হত্যা করার ব্যাপারে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করেছিল তৎকালীন ইসলামি ছাত্রসংঘের কর্মীদের নিয়ে গঠিত আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরা।
বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে বাংলাদেশের স্থানীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতেও সে সময় সবিস্তারে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। এ বিষয়ে ১৯৭১ সালের ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পৃষ্ঠার শীর্ষ সংবাদ ছিল ‘সোনার বাংলায় মানবেতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড’। আর ১৯ ডিসেম্বর দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায়ও এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়, যার শিরোনাম ছিল ‘রক্তস্নাত বাংলাদেশ কাঁদো’। উল্লেখ্য, সে সময় দেশের সব পত্রিকাই সাদাকালো রঙে ছাপা হলেও দৈনিক পূর্বদেশ সেদিন বড় অঙ্কের আর্থিক ত্যাগ স্বীকার করে প্রথম পৃষ্ঠায় ৮ কলামে রঙিন শিরোনাম করেছিল রক্তের রঙে—লাল কালিতে। অন্যদিকে এ বিষয়ে বেতার সম্প্রচার তো ছিলই। বাংলাদেশ বেতারের ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রচারিত প্রায় প্রতিটি সংবাদে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল, সে-সংক্রান্ত কিছু কিছু রেকর্ড এখনো বাংলাদেশ বেতারের আর্কাইভে পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা যায়। ভয় হয়, এ প্রবন্ধে উল্লিখিত তথ্যসূত্রের কথা শুনে হত্যাকারীদের অনুগামীরা না আবার এসব রেকর্ডপত্র বিনষ্ট করার উদ্যোগ নিয়ে নেয়, যেমনটি সাম্প্রতিক সময়ে দেশের নানা স্থানে নানা ক্ষেত্রে ঘটতে দেখা গেছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং এর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিবর্গের বিষয়ে দালিলিক প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং বিশেষত এর উপ-উপাচার্য ইতিহাসকে পাল্টে ফেলার ব্যাপারে এতটা লজ্জাবর্জিত ও বিবেকহীন হয়ে উঠলেন কেমন করে? চিন্তা ও মননে তিনি যত পশ্চাদমুখীই হোন না কেন, পেশাগত পরিচয়ে এখনো তো তিনি একজন শিক্ষক। আর একাত্তরের ওই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বড় অংশই তো শিক্ষক ছিলেন। তো সেই সুবাদেও কি এ রকম বিকৃত মিথ্যাচারের সঙ্গে যুক্ত হতে আপনার বিবেক আপনাকে এতটুকু বাধা দেয়নি! এ ক্ষেত্রে কষ্ট পাচ্ছি এই ভেবে যে একজন শিক্ষক যদি বিকৃতি ও অসত্যাচারে যুক্ত হন, তাহলে তাঁর কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা কী শিখবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় এ জাতির ভবিষ্যৎই-বা কী? প্রায় একই সময়ে (৯ ডিসেম্বর ২০২৫) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান ইতিহাসের অন্যতম মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়াকে বললেন ‘মুরতাদ কাফির’। আর তাঁর ওই বক্তব্যের মাত্র পাঁচ দিন পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডকে ইতিহাস থেকেই নিশ্চিহ্ন করে দিতে উদ্যোগী হলেন।
অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান ও খন্দকার মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসানের রাজনৈতিক অভিভাবকেরা অবশ্য বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডকে অস্বীকার করেননি। তাঁরা এটিকে বলেছেন ‘দিল্লির পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ বলে (প্রাগুক্ত)। ওবায়দুল কাদেরের নির্লজ্জ ভারত তোষণমূলক বক্তব্যের যেমন নিন্দা করেছি ও করছি, তেমনি প্রত্যাখ্যান করছি তাঁদের এ তথাকথিত দিল্লি ষড়যন্ত্রের স্লোগানকেও। উল্লেখ্য, উপ-উপাচার্যের সঙ্গে মিলে একই দিনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এ মন্তব্য করেন। আয়োজন ও মন্তব্যের ধরন থেকে মনে হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি ও অবলোপনের এ উদ্যোগটি তাঁরা পরিকল্পিতভাবেই গ্রহণ করেছেন। কিন্তু কেন? জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের কাছে বিনীতভাবে একটি প্রশ্ন রাখি, এ দেশকে কি আর কোনো দিন পাকিস্তানের অংশ করা সম্ভব? যদি সম্ভব না হয়, তাহলে অতীতের ভুলত্রুটি স্বীকার করে অনুতপ্ত হয়ে কেন আপনারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেনে নিতে পারছেন না? এ দেশে অশান্তি ও অস্থিরতা বিরাজ করলে তা থেকে শুধু আপনাদের কেন, কারও পক্ষেই কি লাভবান হওয়ার কিছু আছে? অথচ দেখুন তো, নানা দল, মত ও পথের রাজনীতিকদের সৃষ্ট নানাবিধ অস্থিরতার কারণে এ দেশের সাধারণ মানুষ আজ কত কষ্ট পাচ্ছে। তাদের জীবন আজ নানা দুর্ভোগ ও অশান্তিতে কত দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষের এসব কষ্ট কি আপনাদের এতটুকুও স্পর্শ করে না? যদি করে, তাহলে অতীতের সব রাগ, ক্ষোভ ও জিঘাংসার কথা ভুলে গিয়ে সব ধরনের ধর্মীয় উগ্রতা ও সাম্প্রদায়িকতাকে বিসর্জন দিয়ে বাংলাদেশের মূলধারার অসাম্প্রদায়িক সমাজ ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যান। দেখবেন আপনারা সবাই ভালো আছেন।
পরিশেষে বলি, দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রাম ও সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণভিত্তিক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে দেশের জন্ম, সে দেশের ইতিহাসকে তথ্যবিকৃতি ও অসত্যাচার দিয়ে মুছে ফেলা কখনোই এবং কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। তার চেয়ে বরং সেটিকে মেনে নিয়ে পারস্পরিক মমতা, সৌহার্দ্য ও সমন্বয়ের ভিত্তিতে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়, তা নিয়ে ভাবাটাই হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য এই মুহূর্তের উত্তম কর্তব্য। আর আশা করছি, বিবেকের তাড়নায় তৈরি এ লেখার জন্য মব বা অন্য কোনোরূপ পীড়নের শিকার হব না।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়

ফওজিয়া মোসলেম বাংলাদেশের নারী মুক্তি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের একজন নিরলস যোদ্ধা। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি। পেশায় চিকিৎসক ছিলেন।’ ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধসহ প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক সব আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন।
২৫ মে ২০২৫
বাংলাদেশের কৃষি খাতে যে পরিবর্তন ঘটেছে, তা নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক অর্জন। লাখ লাখ ক্ষুদ্র কৃষক, কৃষিবিজ্ঞানী, গবেষক, কৃষি উদ্ভাবন এবং সরকারের ধারাবাহিক সহায়তায় বাংলাদেশ আজ খাদ্য উৎপাদনে একটি শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছে। তবে কৃষি আজ আর কেবল খাদ্য উৎপাদনের বিষয় নয়।
১৭ ঘণ্টা আগে
ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোয় যারা হামলা চালিয়েছিল, তাদের কয়েকজনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
১৭ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে বিজয়ের ৫৪তম বার্ষিকী উদ্যাপন যতটা স্বাচ্ছন্দ্যে ও মহাসমারোহে হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। বড় একটা ছন্দপতন ঘটে গেছে। অথচ বিজয়ের এই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই অর্থাৎ ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)।
২ দিন আগেশাইখ সিরাজ

বাংলাদেশের কৃষি খাতে যে পরিবর্তন ঘটেছে, তা নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক অর্জন। লাখ লাখ ক্ষুদ্র কৃষক, কৃষিবিজ্ঞানী, গবেষক, কৃষি উদ্ভাবন এবং সরকারের ধারাবাহিক সহায়তায় বাংলাদেশ আজ খাদ্য উৎপাদনে একটি শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছে। তবে কৃষি আজ আর কেবল খাদ্য উৎপাদনের বিষয় নয়। নগরায়ণ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যের চাহিদা কৃষিকে নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের কৃষি খাত ধীরে ধীরে রূপান্তরের পথে এগোচ্ছে। শস্য উৎপাদনের পাশাপাশি উদ্যানবিদ্যা, প্রাণিসম্পদ, মৎস্য, জলজ চাষ এবং ব্লু ইকোনমির মতো ক্ষেত্রগুলোতে বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে কৃষিপণ্যের মানসম্মত প্রক্রিয়াজাতকরণ, জলবায়ু সহনশীল ফসল উদ্ভাবন এবং উন্নত কৃষি অনুশীলনের গুরুত্ব আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে।
স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করতে হলে কৃষিকে অবশ্যই তথ্যনির্ভর ও প্রযুক্তিনির্ভর হতে হবে। ডেটা-ড্রিভেন সিদ্ধান্ত, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং জ্ঞানভিত্তিক সহযোগিতা ছাড়া ভবিষ্যতের কৃষি কল্পনা করা যায় না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ যে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তা মোকাবিলা করেই কৃষির পূর্ণ সক্ষমতাকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। কৃষিবৈচিত্র্যের সম্ভাবনা সীমাহীন হলেও এর জন্য প্রয়োজন সৎ প্রচেষ্টা, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং পর্যাপ্ত বিনিয়োগ। সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এবং দারিদ্র্য হ্রাসে কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও বাণিজ্যিকীকরণকে অগ্রাধিকার দেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের কৃষি খাত একাধিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজার ব্যবস্থাপনা ও কৃষকের জীবনযাত্রা পর্যন্ত বিস্তৃত। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অনিয়মিত বৃষ্টি, দীর্ঘ খরা, আকস্মিক বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় ফসলের ক্ষতি বাড়িয়ে দিচ্ছে, বিশেষ করে উপকূলীয় ও হাওর অঞ্চলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও জলাবদ্ধতা কৃষিকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। একই সঙ্গে আবাদযোগ্য জমি দ্রুত কমে হচ্ছে নগরায়ণ। শিল্পায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নের চাপের ফলে খাদ্য উৎপাদনের ওপর বাড়ছে চাপ। উৎপাদন পর্যায়ে কৃষককে ভোগাচ্ছে সার, বীজ, কীটনাশক ও সেচের উচ্চমূল্য, যেখানে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলেও ন্যায্যমূল্য পাওয়া অনিশ্চিতই থেকে যাচ্ছে। ফসল কাটার পর পর্যাপ্ত সংরক্ষণাগার, হিমাগার ও আধুনিক পরিবহনব্যবস্থার অভাবে বিপুল পরিমাণ পণ্য নষ্ট হচ্ছে, যা কৃষকের ক্ষতির পাশাপাশি বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। বাজার ব্যবস্থাপনায় মধ্যস্বত্বভোগীদের আধিপত্য কৃষক ও ভোক্তা উভয়কেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে, কারণ কৃষক কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হলেও ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। কৃষিবিমা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কৃষককে আরও অসহায় করে তোলে।
অন্যদিকে, গবেষণা ও সম্প্রসারণ সেবার সীমাবদ্ধতা, আধুনিক প্রযুক্তির ধীর গ্রহণযোগ্যতা এবং তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্তের ঘাটতি কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পাশাপাশি, রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণে কাঠামোগত দুর্বলতা থাকায় বৈশ্বিক বাজারে সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এসব সংকট সম্মিলিতভাবে কৃষিকে এক জটিল সন্ধিক্ষণে দাঁড় করিয়েছে, যেখানে টেকসই নীতি, প্রযুক্তিনির্ভর সমাধান ও সমন্বিত বাজার সংস্কার ছাড়া কৃষক ও কৃষি উভয়ের ভবিষ্যৎ নিরাপদ করা কঠিন হয়ে উঠছে।
আমরা খুব ভালোভাবেই জানি, জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি কৃষিতে উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়া, ফসল কাটার পর সংরক্ষণের অভাবে ক্ষতি, ন্যায্যমূল্য না পাওয়া এবং অপর্যাপ্ত খাদ্যগুদাম ব্যবস্থার মতো সমস্যাগুলো কৃষকের জীবনকে প্রতিনিয়ত কঠিন করে তুলছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি হতে পারে এক অনস্বীকার্য হাতিয়ার। পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশে আমি নিজ চোখে দেখেছি, কীভাবে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে কৃষি আরও লাভজনক, টেকসই এবং নিরাপদ হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ একটি বৃহৎ বদ্বীপ। বিস্তৃত নদীব্যবস্থা এই ভূখণ্ডকে করেছে উর্বর ও প্রাণবন্ত। নদীর জালের মতো বিস্তৃত নেটওয়ার্ক সহজ সেচসুবিধা নিশ্চিত করে এবং ফলায় সোনার ফসল। কিন্তু এই নদীমাতৃক ভূপ্রকৃতি যেমন আশীর্বাদ, তেমনি ঝুঁকিরও কারণ। বর্ষা মৌসুমে দেশের প্রায় ৫৫-৬০ শতাংশ জমি পানিতে তলিয়ে যায়, আবার শুষ্ক মৌসুমে অনেক এলাকায় পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। উপকূলীয় অঞ্চল ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ঝুঁকিতে রয়েছে।
এই বাস্তবতায় পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা পুরো কৃষি ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি নিষ্কাশন, সেচব্যবস্থা, নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা এখন সময়ের প্রধান চ্যালেঞ্জ।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের কৃষিখাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প ধীরে হলেও ধারাবাহিকভাবে বিকশিত হয়েছে। এই শিল্প মূলত দেশীয় কৃষিপণ্যের ওপর নির্ভরশীল। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কৃষিখাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খাত দেশের মোট প্রক্রিয়াজাত উৎপাদনের একটি বড় অংশ জুড়ে আছে এবং উল্লেখযোগ্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৭০০টি খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে ছোট, মাঝারি ও বড় ইউনিট অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে অন্তত ৩০টি প্রতিষ্ঠান ফল ও সবজি প্রক্রিয়াজাতকরণে বিশেষায়িত।
এই খাতের জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার যেমন বড়, তেমনি রপ্তানি বাজারেও ক্রমেই সম্ভাবনা বাড়ছে। বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কৃষি শিল্পজাত পণ্যের রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে। মাছ, কৃষিপণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে অগ্রাধিকার পাচ্ছে, যা দেশের বৈদেশিক আয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব কৃষিকে নতুন এক মাত্রা দিয়েছে। ইন্টারনেট অব থিংস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিকস এবং আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তি কৃষি উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাকে আরও দক্ষ করে তুলছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য গ্রামীণ অর্থনীতিকে রূপান্তরের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো। এই প্রক্রিয়ায় স্মার্ট কৃষি একটি প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। প্রযুক্তির ব্যবহারে শ্রম খরচ কমবে, উৎপাদনের গুণগত মান বজায় থাকবে এবং কৃষক সরাসরি বাজার ও তথ্যের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মাটি, পানি ও বনভূমির অবক্ষয় টেকসই কৃষির জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠছে। আবাদি জমি কমে যাচ্ছে, আবহাওয়া হয়ে উঠছে অনিশ্চিত। এই অবস্থায় প্রান্তিক ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এ জন্য টেকসই কৃষি পদ্ধতি গ্রহণ, গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং সময়োপযোগী নীতি বাস্তবায়ন অপরিহার্য। নিরাপদ ও টেকসই ভবিষ্যতের জন্য কৃষি উৎপাদনশীলতা ও পরিবেশ সংরক্ষণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
এই সময় কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ এখন অত্যন্ত জরুরি। কৃষককে আধুনিক কৃষিযন্ত্র ও কৌশলে দক্ষ করে তুলতে হবে। ফসল সংরক্ষণ, বাজার ব্যবস্থাপনা ও বিতরণ ব্যবস্থায় কাঠামোগত সংস্কার আনতে হবে। কৃষকের পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে এবং উৎপাদক হিসেবে তাঁদের অধিকার রক্ষা করতে হবে। শস্যবিমা, স্বাস্থ্যবিমা ও পেনশনব্যবস্থার মতো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি জোরদার করতে হবে। উন্নত কৃষি গবেষণা, বেসরকারি বিনিয়োগ, কৃষিজমি সুরক্ষা এবং কর প্রণোদনার মতো বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।
ষাটের দশকের সবুজবিপ্লব যেমন কৃষিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছিল, আজ তেমনি আরেকটি বিপ্লবের জন্য সময় এসেছে। এই বিপ্লব হবে স্মার্ট, দক্ষ এবং প্রযুক্তিনির্ভর। কৃষকের জন্য বাস্তবসম্মত ও সহজ ডিজিটাল প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা গেলে কৃষি খাত আরও শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াবে।
স্মার্ট কৃষি শুধু উৎপাদন বাড়াবে না, এটি আমাদের জীবনযাত্রার ধরন বদলে দেবে। এটি দারিদ্র্য ও বৈষম্য কমাতে সহায়তা করবে। কৃষক, সরকার, নীতিনির্ধারক, গবেষক এবং উন্নয়ন অংশীদার—সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কারণ, পরিবর্তন আসে দূরদৃষ্টি থেকে, আর ভবিষ্যতের কৃষি গড়ে ওঠে আজকের সিদ্ধান্তে। হাল ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই

বাংলাদেশের কৃষি খাতে যে পরিবর্তন ঘটেছে, তা নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক অর্জন। লাখ লাখ ক্ষুদ্র কৃষক, কৃষিবিজ্ঞানী, গবেষক, কৃষি উদ্ভাবন এবং সরকারের ধারাবাহিক সহায়তায় বাংলাদেশ আজ খাদ্য উৎপাদনে একটি শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছে। তবে কৃষি আজ আর কেবল খাদ্য উৎপাদনের বিষয় নয়। নগরায়ণ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যের চাহিদা কৃষিকে নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের কৃষি খাত ধীরে ধীরে রূপান্তরের পথে এগোচ্ছে। শস্য উৎপাদনের পাশাপাশি উদ্যানবিদ্যা, প্রাণিসম্পদ, মৎস্য, জলজ চাষ এবং ব্লু ইকোনমির মতো ক্ষেত্রগুলোতে বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে কৃষিপণ্যের মানসম্মত প্রক্রিয়াজাতকরণ, জলবায়ু সহনশীল ফসল উদ্ভাবন এবং উন্নত কৃষি অনুশীলনের গুরুত্ব আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে।
স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করতে হলে কৃষিকে অবশ্যই তথ্যনির্ভর ও প্রযুক্তিনির্ভর হতে হবে। ডেটা-ড্রিভেন সিদ্ধান্ত, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং জ্ঞানভিত্তিক সহযোগিতা ছাড়া ভবিষ্যতের কৃষি কল্পনা করা যায় না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ যে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তা মোকাবিলা করেই কৃষির পূর্ণ সক্ষমতাকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। কৃষিবৈচিত্র্যের সম্ভাবনা সীমাহীন হলেও এর জন্য প্রয়োজন সৎ প্রচেষ্টা, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং পর্যাপ্ত বিনিয়োগ। সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এবং দারিদ্র্য হ্রাসে কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও বাণিজ্যিকীকরণকে অগ্রাধিকার দেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের কৃষি খাত একাধিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজার ব্যবস্থাপনা ও কৃষকের জীবনযাত্রা পর্যন্ত বিস্তৃত। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অনিয়মিত বৃষ্টি, দীর্ঘ খরা, আকস্মিক বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় ফসলের ক্ষতি বাড়িয়ে দিচ্ছে, বিশেষ করে উপকূলীয় ও হাওর অঞ্চলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও জলাবদ্ধতা কৃষিকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। একই সঙ্গে আবাদযোগ্য জমি দ্রুত কমে হচ্ছে নগরায়ণ। শিল্পায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নের চাপের ফলে খাদ্য উৎপাদনের ওপর বাড়ছে চাপ। উৎপাদন পর্যায়ে কৃষককে ভোগাচ্ছে সার, বীজ, কীটনাশক ও সেচের উচ্চমূল্য, যেখানে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলেও ন্যায্যমূল্য পাওয়া অনিশ্চিতই থেকে যাচ্ছে। ফসল কাটার পর পর্যাপ্ত সংরক্ষণাগার, হিমাগার ও আধুনিক পরিবহনব্যবস্থার অভাবে বিপুল পরিমাণ পণ্য নষ্ট হচ্ছে, যা কৃষকের ক্ষতির পাশাপাশি বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। বাজার ব্যবস্থাপনায় মধ্যস্বত্বভোগীদের আধিপত্য কৃষক ও ভোক্তা উভয়কেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে, কারণ কৃষক কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হলেও ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। কৃষিবিমা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কৃষককে আরও অসহায় করে তোলে।
অন্যদিকে, গবেষণা ও সম্প্রসারণ সেবার সীমাবদ্ধতা, আধুনিক প্রযুক্তির ধীর গ্রহণযোগ্যতা এবং তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্তের ঘাটতি কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পাশাপাশি, রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণে কাঠামোগত দুর্বলতা থাকায় বৈশ্বিক বাজারে সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এসব সংকট সম্মিলিতভাবে কৃষিকে এক জটিল সন্ধিক্ষণে দাঁড় করিয়েছে, যেখানে টেকসই নীতি, প্রযুক্তিনির্ভর সমাধান ও সমন্বিত বাজার সংস্কার ছাড়া কৃষক ও কৃষি উভয়ের ভবিষ্যৎ নিরাপদ করা কঠিন হয়ে উঠছে।
আমরা খুব ভালোভাবেই জানি, জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি কৃষিতে উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়া, ফসল কাটার পর সংরক্ষণের অভাবে ক্ষতি, ন্যায্যমূল্য না পাওয়া এবং অপর্যাপ্ত খাদ্যগুদাম ব্যবস্থার মতো সমস্যাগুলো কৃষকের জীবনকে প্রতিনিয়ত কঠিন করে তুলছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি হতে পারে এক অনস্বীকার্য হাতিয়ার। পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশে আমি নিজ চোখে দেখেছি, কীভাবে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে কৃষি আরও লাভজনক, টেকসই এবং নিরাপদ হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ একটি বৃহৎ বদ্বীপ। বিস্তৃত নদীব্যবস্থা এই ভূখণ্ডকে করেছে উর্বর ও প্রাণবন্ত। নদীর জালের মতো বিস্তৃত নেটওয়ার্ক সহজ সেচসুবিধা নিশ্চিত করে এবং ফলায় সোনার ফসল। কিন্তু এই নদীমাতৃক ভূপ্রকৃতি যেমন আশীর্বাদ, তেমনি ঝুঁকিরও কারণ। বর্ষা মৌসুমে দেশের প্রায় ৫৫-৬০ শতাংশ জমি পানিতে তলিয়ে যায়, আবার শুষ্ক মৌসুমে অনেক এলাকায় পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। উপকূলীয় অঞ্চল ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ঝুঁকিতে রয়েছে।
এই বাস্তবতায় পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা পুরো কৃষি ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি নিষ্কাশন, সেচব্যবস্থা, নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা এখন সময়ের প্রধান চ্যালেঞ্জ।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের কৃষিখাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প ধীরে হলেও ধারাবাহিকভাবে বিকশিত হয়েছে। এই শিল্প মূলত দেশীয় কৃষিপণ্যের ওপর নির্ভরশীল। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কৃষিখাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খাত দেশের মোট প্রক্রিয়াজাত উৎপাদনের একটি বড় অংশ জুড়ে আছে এবং উল্লেখযোগ্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৭০০টি খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে ছোট, মাঝারি ও বড় ইউনিট অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে অন্তত ৩০টি প্রতিষ্ঠান ফল ও সবজি প্রক্রিয়াজাতকরণে বিশেষায়িত।
এই খাতের জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার যেমন বড়, তেমনি রপ্তানি বাজারেও ক্রমেই সম্ভাবনা বাড়ছে। বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কৃষি শিল্পজাত পণ্যের রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে। মাছ, কৃষিপণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে অগ্রাধিকার পাচ্ছে, যা দেশের বৈদেশিক আয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব কৃষিকে নতুন এক মাত্রা দিয়েছে। ইন্টারনেট অব থিংস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিকস এবং আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তি কৃষি উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাকে আরও দক্ষ করে তুলছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য গ্রামীণ অর্থনীতিকে রূপান্তরের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো। এই প্রক্রিয়ায় স্মার্ট কৃষি একটি প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। প্রযুক্তির ব্যবহারে শ্রম খরচ কমবে, উৎপাদনের গুণগত মান বজায় থাকবে এবং কৃষক সরাসরি বাজার ও তথ্যের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মাটি, পানি ও বনভূমির অবক্ষয় টেকসই কৃষির জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠছে। আবাদি জমি কমে যাচ্ছে, আবহাওয়া হয়ে উঠছে অনিশ্চিত। এই অবস্থায় প্রান্তিক ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এ জন্য টেকসই কৃষি পদ্ধতি গ্রহণ, গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং সময়োপযোগী নীতি বাস্তবায়ন অপরিহার্য। নিরাপদ ও টেকসই ভবিষ্যতের জন্য কৃষি উৎপাদনশীলতা ও পরিবেশ সংরক্ষণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
এই সময় কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ এখন অত্যন্ত জরুরি। কৃষককে আধুনিক কৃষিযন্ত্র ও কৌশলে দক্ষ করে তুলতে হবে। ফসল সংরক্ষণ, বাজার ব্যবস্থাপনা ও বিতরণ ব্যবস্থায় কাঠামোগত সংস্কার আনতে হবে। কৃষকের পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে এবং উৎপাদক হিসেবে তাঁদের অধিকার রক্ষা করতে হবে। শস্যবিমা, স্বাস্থ্যবিমা ও পেনশনব্যবস্থার মতো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি জোরদার করতে হবে। উন্নত কৃষি গবেষণা, বেসরকারি বিনিয়োগ, কৃষিজমি সুরক্ষা এবং কর প্রণোদনার মতো বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।
ষাটের দশকের সবুজবিপ্লব যেমন কৃষিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছিল, আজ তেমনি আরেকটি বিপ্লবের জন্য সময় এসেছে। এই বিপ্লব হবে স্মার্ট, দক্ষ এবং প্রযুক্তিনির্ভর। কৃষকের জন্য বাস্তবসম্মত ও সহজ ডিজিটাল প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা গেলে কৃষি খাত আরও শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াবে।
স্মার্ট কৃষি শুধু উৎপাদন বাড়াবে না, এটি আমাদের জীবনযাত্রার ধরন বদলে দেবে। এটি দারিদ্র্য ও বৈষম্য কমাতে সহায়তা করবে। কৃষক, সরকার, নীতিনির্ধারক, গবেষক এবং উন্নয়ন অংশীদার—সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কারণ, পরিবর্তন আসে দূরদৃষ্টি থেকে, আর ভবিষ্যতের কৃষি গড়ে ওঠে আজকের সিদ্ধান্তে। হাল ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই

ফওজিয়া মোসলেম বাংলাদেশের নারী মুক্তি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের একজন নিরলস যোদ্ধা। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি। পেশায় চিকিৎসক ছিলেন।’ ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধসহ প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক সব আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন।
২৫ মে ২০২৫
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেছেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে—এ দাবি অবান্তর’ (সমকাল, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫)। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের...
১৭ ঘণ্টা আগে
ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোয় যারা হামলা চালিয়েছিল, তাদের কয়েকজনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
১৭ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে বিজয়ের ৫৪তম বার্ষিকী উদ্যাপন যতটা স্বাচ্ছন্দ্যে ও মহাসমারোহে হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। বড় একটা ছন্দপতন ঘটে গেছে। অথচ বিজয়ের এই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই অর্থাৎ ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)।
২ দিন আগেসম্পাদকীয়

ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোয় যারা হামলা চালিয়েছিল, তাদের কয়েকজনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যার পর তাঁর লাশ পুড়িয়ে দেওয়া এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার বিষয়ে সরকার বদ্ধপরিকর। কথাগুলো তিনি বলেছেন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে।
যে জায়গাগুলোয় হামলা হয়েছে, যেখানে একজন মানুষকে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়েছে, সে জায়গাগুলোর অসংখ্য ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। ইন্টারনেটে যুক্ত হতে পারেন, এমন যে কেউ সেই ফুটেজগুলোতে এই দুর্বৃত্তদের চেহারা স্পষ্ট দেখতে পাবেন। এই হামলাবাজদের শনাক্ত করা মোটেই কঠিন কাজ নয়। ফুটেজ দেখে কাউকে কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বটে, কিন্তু তাদের শাস্তি নিশ্চিত না হলে হামলার ঘটনাগুলো ঘটতেই থাকবে। মনে রাখতে হবে, ওসমান হাদির মর্মান্তিক মৃত্যুর পর সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু লোক পরিকল্পিতভাবে এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে, যার সঙ্গে হাদি হত্যার কোনো সম্পর্ক নেই।
কোনো সন্দেহ হলেই ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে আঘাত করার রীতি চালু হয়ে গেলে কেউই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। তখন আইনকানুন বলে কিছু থাকবে না। সে সময় উচ্ছৃঙ্খল একদল মানুষের আক্রমণ থেকে জনগণকে বা জনগণের সম্পত্তি রক্ষা করতে হলে পাড়ায় পাড়ায় স্থানীয় জনগণকে তাঁর নিজ সম্পত্তি পাহারা দিতে হবে। সে হবে সামগ্রিকভাবে অন্য এক ব্যবস্থা। মতাদর্শগত পার্থক্য তখন পরিণত হবে সংঘাতে। প্রচলিত রাজনৈতিক আচরণ বদলে গিয়ে তখন একে অন্যের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রবণতাই চোখে পড়বে। আদালতের বিচারকেরা চাকরি হারাবেন, আইনজীবীদের পেশা বদলাতে হবে, পুলিশ বিভাগে কাজ করার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে না। নিজের মতের সঙ্গে না মিললে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালানোর সংবাদই হয়ে উঠবে পত্রিকার মূল সংবাদ।
ওসমান হাদির হন্তারককে গ্রেপ্তার করা যেমন জরুরি, তেমনি তাঁর মৃত্যুর পর পরিকল্পিতভাবে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের জন্য দায়ীদের গ্রেপ্তার করাও জরুরি। সিসি ক্যামেরায় হামলাকারীদের প্রত্যেকের চেহারাই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। গোয়েন্দা বিভাগ সক্রিয় হলে এত দিনে তাদের খোঁজে লেগে পড়তে পারত।
এ কথা সবাই বোঝে, পত্রিকা অফিস, সাংস্কৃতিক সংগঠনে হামলার ঘটনার আন্তর্জাতিক প্রভাব রয়েছে। ময়মনসিংহের ভালুকায় দীপু হত্যাকাণ্ডও কারও নজর এড়ায়নি। এই হামলাগুলোর সুষ্ঠু বিচার না হলে আন্তর্জাতিকভাবে বিপাকে পড়তে পারে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে এমন কোনো বার্তা আসা দরকার, যেকোনো আইনবিরোধী আচরণের জন্য সরকারের থাকবে জিরো টলারেন্স। পুলিশ বাহিনীর মনে সেই সাহস ফিরিয়ে আনতে হবে, যে সাহসের বলে আইনের শাসনের প্রতি তারা জনগণকে ফিরিয়ে আনতে পারে। সরকার যদি চায়, তাহলে সেটা সম্ভব। জনগণকেও এই ধরনের হামলার বিরুদ্ধে সচেতন করে তুলতে হবে। মানুষের জানমাল রক্ষা করার কাজটি সরকারের, সেটা যেন সরকার মনে রাখে।

ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোয় যারা হামলা চালিয়েছিল, তাদের কয়েকজনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যার পর তাঁর লাশ পুড়িয়ে দেওয়া এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার বিষয়ে সরকার বদ্ধপরিকর। কথাগুলো তিনি বলেছেন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে।
যে জায়গাগুলোয় হামলা হয়েছে, যেখানে একজন মানুষকে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়েছে, সে জায়গাগুলোর অসংখ্য ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। ইন্টারনেটে যুক্ত হতে পারেন, এমন যে কেউ সেই ফুটেজগুলোতে এই দুর্বৃত্তদের চেহারা স্পষ্ট দেখতে পাবেন। এই হামলাবাজদের শনাক্ত করা মোটেই কঠিন কাজ নয়। ফুটেজ দেখে কাউকে কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বটে, কিন্তু তাদের শাস্তি নিশ্চিত না হলে হামলার ঘটনাগুলো ঘটতেই থাকবে। মনে রাখতে হবে, ওসমান হাদির মর্মান্তিক মৃত্যুর পর সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু লোক পরিকল্পিতভাবে এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে, যার সঙ্গে হাদি হত্যার কোনো সম্পর্ক নেই।
কোনো সন্দেহ হলেই ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে আঘাত করার রীতি চালু হয়ে গেলে কেউই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। তখন আইনকানুন বলে কিছু থাকবে না। সে সময় উচ্ছৃঙ্খল একদল মানুষের আক্রমণ থেকে জনগণকে বা জনগণের সম্পত্তি রক্ষা করতে হলে পাড়ায় পাড়ায় স্থানীয় জনগণকে তাঁর নিজ সম্পত্তি পাহারা দিতে হবে। সে হবে সামগ্রিকভাবে অন্য এক ব্যবস্থা। মতাদর্শগত পার্থক্য তখন পরিণত হবে সংঘাতে। প্রচলিত রাজনৈতিক আচরণ বদলে গিয়ে তখন একে অন্যের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রবণতাই চোখে পড়বে। আদালতের বিচারকেরা চাকরি হারাবেন, আইনজীবীদের পেশা বদলাতে হবে, পুলিশ বিভাগে কাজ করার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে না। নিজের মতের সঙ্গে না মিললে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালানোর সংবাদই হয়ে উঠবে পত্রিকার মূল সংবাদ।
ওসমান হাদির হন্তারককে গ্রেপ্তার করা যেমন জরুরি, তেমনি তাঁর মৃত্যুর পর পরিকল্পিতভাবে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের জন্য দায়ীদের গ্রেপ্তার করাও জরুরি। সিসি ক্যামেরায় হামলাকারীদের প্রত্যেকের চেহারাই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। গোয়েন্দা বিভাগ সক্রিয় হলে এত দিনে তাদের খোঁজে লেগে পড়তে পারত।
এ কথা সবাই বোঝে, পত্রিকা অফিস, সাংস্কৃতিক সংগঠনে হামলার ঘটনার আন্তর্জাতিক প্রভাব রয়েছে। ময়মনসিংহের ভালুকায় দীপু হত্যাকাণ্ডও কারও নজর এড়ায়নি। এই হামলাগুলোর সুষ্ঠু বিচার না হলে আন্তর্জাতিকভাবে বিপাকে পড়তে পারে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে এমন কোনো বার্তা আসা দরকার, যেকোনো আইনবিরোধী আচরণের জন্য সরকারের থাকবে জিরো টলারেন্স। পুলিশ বাহিনীর মনে সেই সাহস ফিরিয়ে আনতে হবে, যে সাহসের বলে আইনের শাসনের প্রতি তারা জনগণকে ফিরিয়ে আনতে পারে। সরকার যদি চায়, তাহলে সেটা সম্ভব। জনগণকেও এই ধরনের হামলার বিরুদ্ধে সচেতন করে তুলতে হবে। মানুষের জানমাল রক্ষা করার কাজটি সরকারের, সেটা যেন সরকার মনে রাখে।

ফওজিয়া মোসলেম বাংলাদেশের নারী মুক্তি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের একজন নিরলস যোদ্ধা। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি। পেশায় চিকিৎসক ছিলেন।’ ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধসহ প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক সব আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন।
২৫ মে ২০২৫
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেছেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে—এ দাবি অবান্তর’ (সমকাল, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫)। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের...
১৭ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের কৃষি খাতে যে পরিবর্তন ঘটেছে, তা নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক অর্জন। লাখ লাখ ক্ষুদ্র কৃষক, কৃষিবিজ্ঞানী, গবেষক, কৃষি উদ্ভাবন এবং সরকারের ধারাবাহিক সহায়তায় বাংলাদেশ আজ খাদ্য উৎপাদনে একটি শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছে। তবে কৃষি আজ আর কেবল খাদ্য উৎপাদনের বিষয় নয়।
১৭ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে বিজয়ের ৫৪তম বার্ষিকী উদ্যাপন যতটা স্বাচ্ছন্দ্যে ও মহাসমারোহে হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। বড় একটা ছন্দপতন ঘটে গেছে। অথচ বিজয়ের এই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই অর্থাৎ ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)।
২ দিন আগেগণতন্ত্র, স্থিতিশীলতা ও শান্তিপ্রত্যাশী জনগণ চাইছে, দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সরকার আসুক। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণায় সেই জনপ্রত্যাশারই প্রতিফলন ঘটে।
আজাদুর রহমান চন্দন

বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে বিজয়ের ৫৪তম বার্ষিকী উদ্যাপন যতটা স্বাচ্ছন্দ্যে ও মহাসমারোহে হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। বড় একটা ছন্দপতন ঘটে গেছে। অথচ বিজয়ের এই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই অর্থাৎ ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। কিন্তু তফসিল ঘোষণার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই খোদ রাজধানীতে সম্ভাব্য এক তরুণ প্রার্থীকে গুলি করার ঘটনায় পুরোনো শঙ্কা-সংশয় আরও জেঁকে বসে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকা অন্যতম প্রধান শর্ত, তার ছিদ্রটা হাঁ হয়ে যায় ওই একটি ঘটনায়। শুধু তা-ই নয়, কয়েক দিনের মাথায় বিদেশে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই গুলিবিদ্ধ তরুণের মৃত্যুর খবরজনিত ক্ষোভ-উত্তেজনাকে কাজে লাগিয়ে সংবাদমাধ্যমের ওপর ন্যক্কারজনক আক্রমণ চালানো হয়। আক্রান্ত হয় বাঙালি সংস্কৃতিচর্চার ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের প্রধান কার্যালয়। রাজধানীর ধানমন্ডিতে ছায়ানট ভবনে পরিচালিত হয়ে আসছে ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তন এবং শিশু-কিশোরদের জন্য সংস্কৃতি-সমন্বিত ব্যতিক্রমধর্মী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নালন্দার কার্যক্রম। পরদিনই হামলা চালানো হয় দেশের ঐতিহ্যবাহী আরেক সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, ৫০-৬০ জনের একটি দল মিছিল নিয়ে গিয়ে ছায়ানট ভবনে হামলা করে। প্রথমে পার্কিং লটের দিকে আগুন দেওয়া হয়। পরে তারা ভবনের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকে। মিলনায়তনে হামলাকারীরা যা পেয়েছে তা-ই ভাঙচুর করে। তবলা, হারমোনিয়াম, তানপুরা থেকে শুরু করে কোনো বাদ্যযন্ত্রই অক্ষত রাখা হয়নি। ভাঙচুর করা ছাড়াও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তছনছ করা হয়েছে বই-কাগজপত্র। পুরো মনিটরিং সিস্টেম, ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা, স্পিকার, লাইট ও ফ্যান ভেঙে ফেলা হয়। ভেঙে ফেলা হয় সেখানে থাকা মাটির তৈরি চারুকর্ম ও শিল্পকর্ম, কক্ষ ও অফিস রুমের বেশির ভাগ আসবাব। ওই হামলার পর ছায়ানট ভবনে পরিচালিত ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তনের ক্লাসসহ সংগঠনের সব কার্যক্রম পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এসব ঘটনায় কারোরই বুঝতে বাকি থাকে না যে এর আসল উদ্দেশ্যটা কী! এরা আসন্ন নির্বাচন বানচাল করে দেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির হত্যাকে কেন্দ্র করে গণমাধ্যমে হামলার ঘটনা আগামী জাতীয় নির্বাচন তথা গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়াকে অনিশ্চিত করার ষড়যন্ত্র বলে মনে করছে দেশে ক্রিয়াশীল সবচেয়ে বড় দল বিএনপি। গত শুক্রবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানায় দলটি। ব্রিফিংয়ে বলা হয়, হাদি হত্যাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার মাঝরাতে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে একদল উচ্ছৃঙ্খল লোক অগ্নিসংযোগ করে। কর্মরত সাংবাদিকদের জীবন-মৃত্যুর ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেয়। একই সঙ্গে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নিউ এজের সম্পাদক দেশবরেণ্য সাংবাদিক নূরুল কবীরের ওপর আক্রমণ করা হয়। এ ছাড়া ছায়ানটসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ঘৃণা প্রকাশ করে বিএনপি বলেছে, এসব ঘটনা প্রমাণ করে একটি পুরোনো চিহ্নিত মহল দেশকে পরিকল্পিতভাবে নৈরাজ্যের পথে ধাবিত করতে চায়। অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গণতান্ত্রিক অধিকারকে তারা নস্যাৎ করে দেশে ফ্যাসিবাদের নতুন সংস্করণ তৈরি করতে চায়। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) মনে করে, এসব ঘটনা দেশকে অস্থিতিশীল করে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র। একই রকম বক্তব্য বাংলাদেশ জাসদসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলেরও।
সংবাদমাধ্যমে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তাঁর মতে, সরকারের দুর্বলতার কারণেই ‘মবতন্ত্র’ প্রশ্রয় পেয়েছে এবং এটি কঠোর হাতে দমন করা প্রয়োজন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস’ উপলক্ষে রোববার দুপুরে রাজধানীর র্যাডিসন ব্লু হোটেলে গণমাধ্যমের শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা তো চেয়েছিলাম ডেমোক্রেসি। কিন্তু কেন হয়ে যাবে মবোক্রেসি? তাকে কেন লালন করতে দেওয়া হবে?’ গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন রোববার ক্ষতিগ্রস্ত ডেইলি স্টার ভবন পরিদর্শনকালে বলেন, দুটি গণমাধ্যমে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালানো ব্যক্তিরা গণবিরোধী শক্তি, তারা দেশের মানুষের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, এ ধরনের সহিংসতা অগ্রহণযোগ্য এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও ভবিষ্যতের জন্য গুরুতর হুমকি।
অস্বীকার করার উপায় নেই যে ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড এবং শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থানজনিত পরিস্থিতি দেশের মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। সেই ন্যায্য ক্ষোভকে ভিত হিসেবে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সুপ্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে চরম ডানপন্থী অগণতান্ত্রিক শক্তি নিজেদের নীলনকশা বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত একটি বিকল্প রাজনৈতিক অবয়ব গড়ার চেষ্টাও তাদের আছে বলে মনে করা যেতে পারে। দেশে প্রতিবেশী বড় দেশের কূটনৈতিক কেন্দ্রগুলোতে হামলা মূলত সেই নীলনকশা বাস্তবায়নের পক্ষে জনমত ধরে রাখার কৌশল ছাড়া কিছু নয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কর্মরত এক প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিকের আশঙ্কা, ওসমান হাদির ভাবমূর্তি এবং তাঁর হত্যাজনিত ক্ষোভের পাটাতনে দাঁড়িয়ে অচিরেই একটি তথাকথিত বিপ্লবী সরকারের ধারণা উপস্থাপন করার তোড়জোড় চলছে।
দেশে এখন যে সরকার আছে তা গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী একটি অন্তর্বর্তী সরকার। গণতন্ত্র, স্থিতিশীলতা ও শান্তিপ্রত্যাশী জনগণ চাইছে, দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সরকার আসুক। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণায় সেই জনপ্রত্যাশারই প্রতিফলন ঘটে। এরই মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তনেরও প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরে। দেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষের কাছে তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তন অভাবনীয় আবেগ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি করছে। ব্যক্তিগতভাবে যাঁরা তারেক রহমানকে পছন্দ করেন না তাঁদেরও অনেকের মতে, দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য তারেক রহমানের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যাবে না। এমন পরিস্থিতিতে বিকল্প বিপ্লবী সরকারের ধারণা বেশ দুরভিসন্ধিমূলক।
কোনো রাষ্ট্রে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা অনেকাংশে নির্ভর করে সেই রাষ্ট্রে ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলের বৈশিষ্ট্য, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রচর্চার ওপর। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুশাসনের দুরবস্থার অন্যতম প্রধান কারণ রাজনৈতিক দলগুলোতে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র ও জবাবদিহির অভাব। বিএনপি জুলাই আন্দোলনের বছরখানেক আগেই ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব হাজির করলেও দলের ভেতরে গণতন্ত্রচর্চার প্রসার ঘটানোর কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় প্রস্তাবগুলো তেমন বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। ২০১১ থেকে ২০২২ সালের শেষ নাগাদ তখনকার সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার লক্ষ্যে এক দফা আন্দোলন শুরু করেছিল বিএনপি। সেই আন্দোলনের অংশ হিসেবে ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই বিএনপি তাদের ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব বা রূপরেখা উপস্থাপন করে। রূপরেখাটি মূলত দুই ভাগে বিভক্ত—প্রথম ভাগে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সংস্কারের প্রস্তাব এবং দ্বিতীয় ভাগে অর্থনীতি ও সমাজসংক্রান্ত নানা বিষয়ে নীতি-সংস্কারের প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত। সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন, সম্প্রীতিমূলক সমন্বিত রাষ্ট্রসত্তা প্রতিষ্ঠা ও ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠন, নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমা নির্ধারণ—এগুলো জনগণের যতটা নজর কাড়ার কথা ছিল, বাস্তবে তেমনটা দেখা যায়নি। এর প্রধান কারণ, প্রতিশ্রুতির বিষয়ে দলটির আন্তরিকতা নিয়ে সন্দেহ। এই সন্দেহ অনেকাংশে নিরসন করা যেত দলের ভেতরে সংস্কার শুরু করে।
অস্বীকার করা যাবে না, আন্দোলনের সময় বিএনপিকে মিত্রদের যতটা গুরুত্ব দিতে দেখা যেত, গণ-অভ্যুত্থানের পর তাতে অনেকটা ভাটা পড়েছে। এ নিয়ে হতাশাও ভর করছে মিত্র দলগুলোর নেতাদের মধ্যে। ঝড়ঝঞ্ঝার এই দেশের মানুষ সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পায়। রাজনীতিতেও বারবার জয় পেয়েও হারিয়ে ফেলার নজির আছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই ভয় কতটা দূর করতে পারবেন, তার ওপর দেশের মঙ্গলও অনেকখানি নির্ভরশীল।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক

বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে বিজয়ের ৫৪তম বার্ষিকী উদ্যাপন যতটা স্বাচ্ছন্দ্যে ও মহাসমারোহে হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। বড় একটা ছন্দপতন ঘটে গেছে। অথচ বিজয়ের এই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই অর্থাৎ ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। কিন্তু তফসিল ঘোষণার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই খোদ রাজধানীতে সম্ভাব্য এক তরুণ প্রার্থীকে গুলি করার ঘটনায় পুরোনো শঙ্কা-সংশয় আরও জেঁকে বসে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকা অন্যতম প্রধান শর্ত, তার ছিদ্রটা হাঁ হয়ে যায় ওই একটি ঘটনায়। শুধু তা-ই নয়, কয়েক দিনের মাথায় বিদেশে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই গুলিবিদ্ধ তরুণের মৃত্যুর খবরজনিত ক্ষোভ-উত্তেজনাকে কাজে লাগিয়ে সংবাদমাধ্যমের ওপর ন্যক্কারজনক আক্রমণ চালানো হয়। আক্রান্ত হয় বাঙালি সংস্কৃতিচর্চার ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের প্রধান কার্যালয়। রাজধানীর ধানমন্ডিতে ছায়ানট ভবনে পরিচালিত হয়ে আসছে ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তন এবং শিশু-কিশোরদের জন্য সংস্কৃতি-সমন্বিত ব্যতিক্রমধর্মী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নালন্দার কার্যক্রম। পরদিনই হামলা চালানো হয় দেশের ঐতিহ্যবাহী আরেক সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, ৫০-৬০ জনের একটি দল মিছিল নিয়ে গিয়ে ছায়ানট ভবনে হামলা করে। প্রথমে পার্কিং লটের দিকে আগুন দেওয়া হয়। পরে তারা ভবনের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকে। মিলনায়তনে হামলাকারীরা যা পেয়েছে তা-ই ভাঙচুর করে। তবলা, হারমোনিয়াম, তানপুরা থেকে শুরু করে কোনো বাদ্যযন্ত্রই অক্ষত রাখা হয়নি। ভাঙচুর করা ছাড়াও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তছনছ করা হয়েছে বই-কাগজপত্র। পুরো মনিটরিং সিস্টেম, ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা, স্পিকার, লাইট ও ফ্যান ভেঙে ফেলা হয়। ভেঙে ফেলা হয় সেখানে থাকা মাটির তৈরি চারুকর্ম ও শিল্পকর্ম, কক্ষ ও অফিস রুমের বেশির ভাগ আসবাব। ওই হামলার পর ছায়ানট ভবনে পরিচালিত ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তনের ক্লাসসহ সংগঠনের সব কার্যক্রম পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এসব ঘটনায় কারোরই বুঝতে বাকি থাকে না যে এর আসল উদ্দেশ্যটা কী! এরা আসন্ন নির্বাচন বানচাল করে দেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির হত্যাকে কেন্দ্র করে গণমাধ্যমে হামলার ঘটনা আগামী জাতীয় নির্বাচন তথা গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়াকে অনিশ্চিত করার ষড়যন্ত্র বলে মনে করছে দেশে ক্রিয়াশীল সবচেয়ে বড় দল বিএনপি। গত শুক্রবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানায় দলটি। ব্রিফিংয়ে বলা হয়, হাদি হত্যাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার মাঝরাতে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে একদল উচ্ছৃঙ্খল লোক অগ্নিসংযোগ করে। কর্মরত সাংবাদিকদের জীবন-মৃত্যুর ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেয়। একই সঙ্গে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নিউ এজের সম্পাদক দেশবরেণ্য সাংবাদিক নূরুল কবীরের ওপর আক্রমণ করা হয়। এ ছাড়া ছায়ানটসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ঘৃণা প্রকাশ করে বিএনপি বলেছে, এসব ঘটনা প্রমাণ করে একটি পুরোনো চিহ্নিত মহল দেশকে পরিকল্পিতভাবে নৈরাজ্যের পথে ধাবিত করতে চায়। অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গণতান্ত্রিক অধিকারকে তারা নস্যাৎ করে দেশে ফ্যাসিবাদের নতুন সংস্করণ তৈরি করতে চায়। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) মনে করে, এসব ঘটনা দেশকে অস্থিতিশীল করে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র। একই রকম বক্তব্য বাংলাদেশ জাসদসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলেরও।
সংবাদমাধ্যমে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তাঁর মতে, সরকারের দুর্বলতার কারণেই ‘মবতন্ত্র’ প্রশ্রয় পেয়েছে এবং এটি কঠোর হাতে দমন করা প্রয়োজন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস’ উপলক্ষে রোববার দুপুরে রাজধানীর র্যাডিসন ব্লু হোটেলে গণমাধ্যমের শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা তো চেয়েছিলাম ডেমোক্রেসি। কিন্তু কেন হয়ে যাবে মবোক্রেসি? তাকে কেন লালন করতে দেওয়া হবে?’ গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন রোববার ক্ষতিগ্রস্ত ডেইলি স্টার ভবন পরিদর্শনকালে বলেন, দুটি গণমাধ্যমে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালানো ব্যক্তিরা গণবিরোধী শক্তি, তারা দেশের মানুষের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, এ ধরনের সহিংসতা অগ্রহণযোগ্য এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও ভবিষ্যতের জন্য গুরুতর হুমকি।
অস্বীকার করার উপায় নেই যে ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড এবং শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থানজনিত পরিস্থিতি দেশের মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। সেই ন্যায্য ক্ষোভকে ভিত হিসেবে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সুপ্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে চরম ডানপন্থী অগণতান্ত্রিক শক্তি নিজেদের নীলনকশা বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত একটি বিকল্প রাজনৈতিক অবয়ব গড়ার চেষ্টাও তাদের আছে বলে মনে করা যেতে পারে। দেশে প্রতিবেশী বড় দেশের কূটনৈতিক কেন্দ্রগুলোতে হামলা মূলত সেই নীলনকশা বাস্তবায়নের পক্ষে জনমত ধরে রাখার কৌশল ছাড়া কিছু নয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কর্মরত এক প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিকের আশঙ্কা, ওসমান হাদির ভাবমূর্তি এবং তাঁর হত্যাজনিত ক্ষোভের পাটাতনে দাঁড়িয়ে অচিরেই একটি তথাকথিত বিপ্লবী সরকারের ধারণা উপস্থাপন করার তোড়জোড় চলছে।
দেশে এখন যে সরকার আছে তা গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী একটি অন্তর্বর্তী সরকার। গণতন্ত্র, স্থিতিশীলতা ও শান্তিপ্রত্যাশী জনগণ চাইছে, দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সরকার আসুক। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণায় সেই জনপ্রত্যাশারই প্রতিফলন ঘটে। এরই মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তনেরও প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরে। দেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষের কাছে তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তন অভাবনীয় আবেগ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি করছে। ব্যক্তিগতভাবে যাঁরা তারেক রহমানকে পছন্দ করেন না তাঁদেরও অনেকের মতে, দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য তারেক রহমানের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যাবে না। এমন পরিস্থিতিতে বিকল্প বিপ্লবী সরকারের ধারণা বেশ দুরভিসন্ধিমূলক।
কোনো রাষ্ট্রে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা অনেকাংশে নির্ভর করে সেই রাষ্ট্রে ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলের বৈশিষ্ট্য, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রচর্চার ওপর। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুশাসনের দুরবস্থার অন্যতম প্রধান কারণ রাজনৈতিক দলগুলোতে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র ও জবাবদিহির অভাব। বিএনপি জুলাই আন্দোলনের বছরখানেক আগেই ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব হাজির করলেও দলের ভেতরে গণতন্ত্রচর্চার প্রসার ঘটানোর কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় প্রস্তাবগুলো তেমন বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। ২০১১ থেকে ২০২২ সালের শেষ নাগাদ তখনকার সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার লক্ষ্যে এক দফা আন্দোলন শুরু করেছিল বিএনপি। সেই আন্দোলনের অংশ হিসেবে ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই বিএনপি তাদের ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব বা রূপরেখা উপস্থাপন করে। রূপরেখাটি মূলত দুই ভাগে বিভক্ত—প্রথম ভাগে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সংস্কারের প্রস্তাব এবং দ্বিতীয় ভাগে অর্থনীতি ও সমাজসংক্রান্ত নানা বিষয়ে নীতি-সংস্কারের প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত। সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন, সম্প্রীতিমূলক সমন্বিত রাষ্ট্রসত্তা প্রতিষ্ঠা ও ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠন, নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমা নির্ধারণ—এগুলো জনগণের যতটা নজর কাড়ার কথা ছিল, বাস্তবে তেমনটা দেখা যায়নি। এর প্রধান কারণ, প্রতিশ্রুতির বিষয়ে দলটির আন্তরিকতা নিয়ে সন্দেহ। এই সন্দেহ অনেকাংশে নিরসন করা যেত দলের ভেতরে সংস্কার শুরু করে।
অস্বীকার করা যাবে না, আন্দোলনের সময় বিএনপিকে মিত্রদের যতটা গুরুত্ব দিতে দেখা যেত, গণ-অভ্যুত্থানের পর তাতে অনেকটা ভাটা পড়েছে। এ নিয়ে হতাশাও ভর করছে মিত্র দলগুলোর নেতাদের মধ্যে। ঝড়ঝঞ্ঝার এই দেশের মানুষ সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পায়। রাজনীতিতেও বারবার জয় পেয়েও হারিয়ে ফেলার নজির আছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই ভয় কতটা দূর করতে পারবেন, তার ওপর দেশের মঙ্গলও অনেকখানি নির্ভরশীল।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক

ফওজিয়া মোসলেম বাংলাদেশের নারী মুক্তি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের একজন নিরলস যোদ্ধা। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি। পেশায় চিকিৎসক ছিলেন।’ ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধসহ প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক সব আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন।
২৫ মে ২০২৫
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেছেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে—এ দাবি অবান্তর’ (সমকাল, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫)। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের...
১৭ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের কৃষি খাতে যে পরিবর্তন ঘটেছে, তা নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক অর্জন। লাখ লাখ ক্ষুদ্র কৃষক, কৃষিবিজ্ঞানী, গবেষক, কৃষি উদ্ভাবন এবং সরকারের ধারাবাহিক সহায়তায় বাংলাদেশ আজ খাদ্য উৎপাদনে একটি শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছে। তবে কৃষি আজ আর কেবল খাদ্য উৎপাদনের বিষয় নয়।
১৭ ঘণ্টা আগে
ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোয় যারা হামলা চালিয়েছিল, তাদের কয়েকজনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
১৭ ঘণ্টা আগে