
ফওজিয়া মোসলেম বাংলাদেশের নারী মুক্তি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের একজন নিরলস যোদ্ধা। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি। পেশায় চিকিৎসক ছিলেন।’ ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধসহ প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক সব আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। একসময় সিপিবিতেও সক্রিয় ছিলেন। মৃদুভাষী, সদালাপি ফওজিয়া মোসলেমের সঙ্গে নারীর অবস্থা ও অবস্থান নিয়ে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার বিভুরঞ্জন সরকার।
বিভুরঞ্জন সরকার

আপনার জীবনের শুরু এবং রাজনীতিতে অংশগ্রহণের পেছনের প্রেরণা কী ছিল?
আমার বেড়ে ওঠা ঢাকায়। ষাটের দশকে যখন ছাত্ররাজনীতির পরিবেশ গড়ে উঠছিল, চিকিৎসাবিজ্ঞানে অধ্যয়নের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজে আমি ভর্তি হই ১৯৬৪ সালে। তখন চারদিকে উত্তাল সময়—ভাষা, স্বাধিকার, সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলন। সেই পরিবেশে রাজনৈতিক চেতনা জন্মানো খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়। বিশেষ করে আমার ছোট মামা ডাক্তার সৈয়দ খলিলউল্লাহ বাম রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি আমাকে ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করেন।
তৎকালীন পাকিস্তানে শিক্ষার ক্ষেত্রে বিরাজমান বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক ধরনের নৈতিক দায়বোধ থেকেই আমি রাজনীতিতে সক্রিয় হই। সময়ের পরিক্রমায় আমিও কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হই। এখন অবশ্য আমার কোনো রাজনৈতিক দলে সম্পৃক্ততা নাই।
আপনি বহু বছর ধরে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সঙ্গে যুক্ত আছেন। এই সময়কালে কী পরিবর্তন দেখেছেন?
হ্যাঁ, মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠার সময় থেকে আমি এর সঙ্গে যুক্ত। প্রথম দিকে আমাদের মূল লড়াই ছিল সাংবিধানিক অধিকার, নারী শিক্ষা, যৌতুকবিরোধী আইন, বাল্যবিবাহের অভিঘাত বিষয়ে নারী সমাজকে সচেতন করা ও সংগঠিত করা। পরের দশকে আমরা নারী নির্যাতনবিরোধী আইন, পারিবারিক আইন সংস্কার, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আন্দোলনে অগ্রসর হই। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নারীর অধিকার মানব অধিকার হিসেবে পরিচিতি পায়।
নারীর জীবনে পরিবর্তন অবশ্যই এসেছে। মূল পরিবর্তন ঘটেছে নারীর চিন্তা জগতে। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী প্রজন্মের নারীর মধ্যে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নারী মুক্তি অর্জনের আকাঙ্ক্ষা জন্মেছে এবং নারীর শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র, মিডিয়া ও সামাজিক ক্ষেত্রে দৃশ্যমানতা বেড়েছে। কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গে নারীর প্রতি সহিংসতাও বেড়েছে। যেমন এখন নারী শিক্ষা বাড়লেও কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকা কঠিন; আইন থাকলেও প্রয়োগ হয় না। সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা আগের তুলনায় সহিংস ও আরও নিষ্ঠুর রূপ নিচ্ছে, যা ঘটছে কখনো প্রকাশ্যে, কখনো আবার পরোক্ষভাবে। সাম্প্রতিক সময়ে নারী বিদ্বেষী গোষ্ঠী কর্তৃক সমাজের মধ্যে নারী বিদ্বেষ প্রচারের অপচেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশকে ঘিরে সাম্প্রতিক যে ধর্মীয় বিরোধিতা দেখা গেছে, আপনি সেটিকে কীভাবে দেখছেন?
এটি নতুন নয়। আমরা যখনই নারীর অধিকার নিয়ে কোনো আইনি সংস্কারের কথা বলি, তখন একটি গোষ্ঠী ধর্মের ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে নারী আন্দোলনকে আঘাত করার চেষ্টা করে। নারী সংস্কার কমিশন মূলত বিদ্যমান বৈষম্য দূর করে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সুপারিশ করেছে, বিশেষ করে নারীর পারিবারিক ও ব্যক্তিগত অধিকার বিষয়ে আইনের অসামঞ্জস্যতা দূর করে মানবিক ও সাংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে। যেমন: উত্তরাধিকার, বিবাহ ও তালাক, সন্তানের অভিভাবকত্ব ইত্যাদি। কিন্তু কিছু সংগঠন একে ‘ধর্মবিরোধী’ বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং অত্যন্ত অশোভন, অশ্লীল ও কুৎসিতভাবে তা প্রকাশ করছে যা কখনো রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ভাষা হতে পারে না। এইসব দলের বক্তব্য সংবিধানের সমতা ও মর্যাদার লক্ষ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
তাহলে আপনি বলছেন, ধর্মীয় গোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া কেবল মতভিন্নতা নয়, বরং সাংগঠনিকভাবে অধিকার হরণ?
সাংগঠনিক অধিকার হরণ এভাবে আমি বলতে চাই না, কিন্তু নাগরিক অধিকার ও ব্যক্তিগত অধিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। যারা নারী সংস্কার কমিশনের বিরোধিতা করছে তারা কেবল নারীর বিরুদ্ধে নয়, প্রগতিশীল সমাজের বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছে। আমরা বলি, ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে মানবাধিকারের বিরোধ নেই। আপনি যখন বলছেন, মেয়েরা সমান উত্তরাধিকার পাবে, কিংবা বিবাহে যৌক্তিক শর্ত থাকবে, তখন আপনি মূলত সামাজিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার কথা বলছেন। আপনি মুসলমান হিসেবে জীবন যাপন করুন, কিন্তু তার মানে এই নয় যে রাষ্ট্রীয় আইনে একজন নারী দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক থাকবে। সংবিধানও সমতার কথাই বলে। এই কথাটিই আমরা আবার প্রতিষ্ঠা করতে চাইছি।
কর্মক্ষেত্রে নারীরা এখনো বৈষম্যের মুখোমুখি হচ্ছে। এটা আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
প্রশ্নটি বর্তমান সময়োপযোগী। আজকে যে নারী বিভিন্ন অফিসে ব্যাংকে, স্কুলে, মেডিকেল বা আইটি সেক্টরে কাজ করছেন তাঁকে দেখে মনে হতে পারে যে ‘সব ঠিক আছে’। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তাঁকে প্রতিদিন প্রমাণ করতে হয় যে সে ‘পুরুষের সমান’ কাজ করতে পারে। এই প্রমাণের চাপ পুরুষদের ওপর থাকে না।
নারীরা সমান কাজে কম মজুরি পাওয়া বৈশ্বিক সমস্যা হলেও বাংলাদেশে তা আরও প্রকট। ২০২৩ সালের একটি জরিপ বলছে, বেসরকারি সেক্টরে নারীরা পুরুষদের তুলনায় গড়ে ২১% কম পারিশ্রমিক পান। এ ছাড়া কর্মস্থলে যৌন হয়রানির ভয়, মাতৃত্বকালীন ছুটিতে চাকরি হারানোর ঝুঁকি, পদোন্নতিতে বঞ্চনা ইত্যাদি তো আছেই।
যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে যে নীতিমালা আছে, তাও কি কার্যকরভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না?
২০০৯ সালে উচ্চ আদালত যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, সব প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ কমিটি গঠন করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে খুব কম প্রতিষ্ঠানে এই কমিটি গঠিত হয়েছে। তদুপরি কমিটি গঠিত হলেও পিতৃতান্ত্রিক প্রথা ও সংস্কৃতির কারণে সেগুলো নিরপেক্ষ ও যথাযথভাবে কাজ করতে পারছে না। এ ছাড়া হাইকোর্টের নীতিমালার ভিত্তিতে এখনো কোনো আইন প্রণয়ন করা হয় নাই। নারী আন্দোলন এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে তাগিদ দিয়ে আসছে। ফলে অনেক নারী অভিযোগ করেও বিচার পান না, বরং উল্টো হেনস্তার শিকার হন। এই অবস্থায় নারী আত্মরক্ষার ও চাকরির স্বার্থে চুপ করে থাকার সংস্কৃতি অনুসরণ করে। এটা ভীষণ ভয়ংকর পরিস্থিতি। আমরা চাই এই নীতিমালাকে আইন হিসেবে প্রণয়ন করা হোক এবং বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মনিটরিং সেল গঠিত হোক।
সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহে নারীকে পদায়ন করার মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায় না। গণতান্ত্রিক পরিবেশ, প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও ইতিবাচক নীতি-সক্ষমতা এগুলো সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের পূর্বশর্ত। নারী বলতে আমরা শুধু সংসদ সদস্য বা মন্ত্রী বুঝি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, ব্যাংকের বোর্ড, স্থানীয় সরকার, রাজনৈতিক দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতে কোথাও নারীর প্রকৃত অংশগ্রহণ নেই।
সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন আছে, কিন্তু সেটা মনোনয়ননির্ভর। রাজনৈতিক দলগুলো নারীদের মাঠে ব্যবহার করে, কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণে পুরুষদেরই আধিপত্য। আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করছি, দলীয় পদে ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। সংবিধানের ১৯ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এটি রাষ্ট্রের দায়।
নারীর চলাচলে, নিরাপত্তায় যে প্রতিবন্ধকতা, আপনি কি মনে করেন তা রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা?
খুব পরিষ্কারভাবে বলি হ্যাঁ, এটি রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা। আপনি যদি একটি মেয়ে হয়ে বাসে উঠে নিরাপদ না বোধ করেন, রাতের শহরে হাঁটতে ভয় পান, এতে নারীর ব্যক্তিগত মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় যা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাষ্ট্র সে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। বিচারহীনতার সংস্কৃতি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে প্রচলিত পিতৃতান্ত্রিক ধ্যানধারণার সংস্কৃতি এবং নারীর অভিযোগকে তুচ্ছ করার প্রবণতা এসব মিলে নারীর চলাচল, আত্মবিশ্বাস, কর্মপরিসর সংকুচিত করে ফেলেছে।
তাহলে ভবিষ্যৎটা আপনি কেমন দেখছেন?
আমি আশাবাদী। কারণ, তৃণমূল থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে এ প্রজন্মের নারী মানসিকভাবে অগ্রসর, শক্তিশালী। ধারাবাহিক নারী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নারীর মধ্যে যে শক্তি সঞ্চারিত হয়েছে তা নারীকে সাহসী করে তুলেছে। বর্তমান প্রজন্মের নারীরা সব কাজে অংশগ্রহণে আগ্রহী, দক্ষ। আর এখনকার মেয়েরা টেকনোলজি, ব্যবসা, সাংবাদিকতা, খেলাধুলা সব জায়গায় আত্মপ্রকাশ করছে। তবে আমাদের এই পথচলা এখনো ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা যদি রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার এই ত্রিপক্ষীয় কাঠামোয় সমতা না আনতে পারি, তাহলে ব্যক্তি অর্জন সমাজে প্রভাব ফেলবে না।
নারী শিক্ষা এখন অনেক এগিয়েছে। তাহলে শিক্ষার এই বিস্তৃত সুযোগ নারীর অবস্থানকে কতটা বদলাতে পেরেছে?
আমাদের সময়ে, বিশেষ করে ষাট-সত্তরের দশকে, মেয়েদের মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ালেখা করাটাই ছিল বিশেষ কিছু। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সাহস কিংবা সুযোগ অনেকেই পেত না। এখন গ্রামের মেয়েরাও কলেজে যায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। এটা নিঃসন্দেহে বড় অগ্রগতি।
কিন্তু শুধু শিক্ষার পরিসংখ্যান দিয়ে নারীর অবস্থান নির্ধারণ করা যায় না। আজকে আপনি একজন নারীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেষ্ঠ ছাত্রী হিসেবে দেখবেন, কিন্তু কর্মক্ষেত্রে সে যখন পদোন্নতির সময় নিজের যোগ্যতার বদলে ‘নারী হওয়া’কে বাধা হিসেবে পায়, তখন বুঝতে পারবেন, শিক্ষা সমাজের চেতনাকে কতটুকু বদলাতে পেরেছে। শিক্ষা মানেই ক্ষমতায়ন নয়, যদি সেই শিক্ষায় নারীর আত্মমর্যাদা, সমতা ও অধিকারবোধ না থাকে। আর এটিই হলো আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ।
তাহলে আপনি বলছেন, শিক্ষা সত্ত্বেও নারীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে না?
ঠিক সেটাই। আপনি মেয়েটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে গেলেন, সে পড়ালেখা করল কিন্তু তার কর্মস্থলে যেতে নিরাপত্তা নেই, বাসে উঠে হয়রানির শিকার হয়, পরিবারে সে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, তাহলে এই শিক্ষার সুফল কোথায়? দীর্ঘকালব্যাপী আমরা যে যে সামাজিক প্রথা কাঠামো গড়ে তুলেছি, আইন প্রণয়ন করেছি তা নারীর ক্ষমতায়নের অনুকূলে না। সুতরাং আমরা যখন ‘নারী উন্নয়ন’ বলি, তখন শুধু সংখ্যার উন্নয়ন দিয়ে কাজ হবে না, প্রয়োজন নারীবান্ধব সামাজিক কাঠামো, যা নারীর অধিকার।
বাংলাদেশের নগর জীবনে নারীর চলাচলের ওপর যেসব প্রতিবন্ধকতা, বিশেষত গণপরিবহনে, তা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
এটা আমাদের রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন চিন্তার বড় ত্রুটি। আপনি নগরায়ণের কথা বলছেন, কিন্তু নগরবাসীর চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন হয় না। সেখানে নারী আরও প্রান্তিক। নারীর নিরাপদ চলাচল এই মৌলিক বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয় না। আজকে একজন মেয়ে সকালে অফিসে যাবে, সন্ধ্যায় ফিরবে, সে জানে না সে কোন বাসে উঠলে নিরাপদ থাকবে।
গণপরিবহনে যৌন হয়রানি এখন একটি নিরন্তর বাস্তবতা। শুধু শারীরিক হেনস্তা নয়, মানসিক যন্ত্রণাও প্রচণ্ড। আমরা বহু মেয়েকে পেয়েছি যারা হয়রানির ভয়ে পড়ালেখা বা চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। এটা কেবল একজন ব্যক্তির ক্ষতি নয়, রাষ্ট্রের সম্পদের অপচয়।
এ ছাড়া, নারীর চলাচলের জন্য শহরে নারীবান্ধব অবকাঠামো নেই। না আছে নারীবান্ধব ফুটপাত, না পর্যাপ্ত আলো বা নিরাপত্তাব্যবস্থা। এটা রাষ্ট্রীয় অবহেলার নমুনা।
রাজনৈতিক দলগুলো নারীর প্রতিনিধিত্ব নিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দেয়, বাস্তবে তার প্রতিফলন কতটা দেখছেন?
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নারীর প্রশ্নে এখনো দায়বদ্ধতার নিদর্শন দেখা যায় না। নির্বাচনের আগে তারা নারী ভোটের কথা বলে, সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা নিয়ে গর্ব করে, কিন্তু বাস্তবে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিসরে নারীর ভূমিকা নেই।
দলীয় কাউন্সিল, সিদ্ধান্ত গ্রহণ কমিটি, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সাংগঠনিক পদে নারীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। শুধু পোস্টারে মুখ থাকলেই ‘উন্নয়ন’ হয় না। আমরা চাই রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রকৃত, নির্বাচিত, জবাবদিহিমূলক নারী নেতৃত্ব।
আর সংরক্ষিত আসনের নারী এমপিদের আমরা শ্রদ্ধা করি, কিন্তু তাঁরা যদি দলনির্ভর হন এবং জনগণের কাছে দায়বদ্ধ না থাকেন, তবে তাঁর রাজনৈতিক গুরুত্ব কমে যায়। এটা শুধু একটি প্রতীক হয়ে থাকে। সেই কারণে আমরা সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন চাই।
আপনি একাধিকবার বলেছেন, রাষ্ট্র নারীকে দয়া নয়, অধিকার দিক। এই বার্তাটা যদি আপনি সরাসরি রাষ্ট্রকে দিতে চান, কী বলবেন?
আমি রাষ্ট্রকে আহ্বান জানাব নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় দায়বদ্ধ হওয়ার জন্য। সংবিধানে সমতার যে কথা বলা হয়েছে, তা যেন কাগজে না থাকে, বাস্তবেও প্রতিফলিত হয়। একটি মেয়ে শিশুকে জন্মের পর থেকেই যেন রাষ্ট্রীয় সমান মর্যাদার আশ্বাস দিতে পারে—এই হোক রাষ্ট্রের নৈতিক দায়।
আমাদের নারীসুলভ কাজ বা ‘মা-বোন’ ভেবে সহানুভূতির দরকার নেই, আমাদের নাগরিক, সামাজিক ও পারিবারিক অধিকার চাই। একজন পুরুষের মতো একজন নারীও মানুষ হিসেবে পরিচিত হবে, রাষ্ট্রের নাগরিক হবে এবং সেই মর্যাদায় বাঁচবে এটাই রাষ্ট্রের নৈতিক ও সাংবিধানিক দায়িত্ব। নারী ও পুরুষ উভয়কে মানবিক সমান অধিকার দিতে হবে।
তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে তরুণ নারীরা এখন সোশ্যাল মিডিয়ায়, ফিল্ম, লেখালেখিতে, প্রতিবাদে অনেক দৃঢ় অবস্থানে আসছে। আপনি এটাকে কীভাবে দেখছেন?
আমি এটা অনেক ইতিবাচকভাবে দেখি। একসময় নারীরা সাহস করত না প্রতিবাদ করার, কিন্তু এখন তারা শুধু প্রতিবাদ করছে না, নিজের কণ্ঠও নির্মাণ করছে। তারা লিখছে, ছবি তুলছে, গান বানাচ্ছে, প্রতিবাদ করছে।
তবে এই চেতনার বিস্তার যেন শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে। গ্রাম, শ্রমজীবী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, সুবিধাবঞ্চিত মেয়েরা যেন এই আন্দোলনের আওতায় আসে, এই সংযোগটা আমাদের করতে হবে।
আপনি যে সংগ্রাম করেছেন, যে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, সেই অভিজ্ঞতা থেকে তরুণদের উদ্দেশে কোনো বার্তা দিতে চান?
আমরা যারা আগের প্রজন্ম, তারা শুধু একটা কাঠামো তৈরি করে দিয়েছি। নতুন প্রজন্মকে তার গঠন, নির্মাণ ও পুনর্গঠন করতে হবে। তাদের বলব, পিছিয়ে পড়া নারীকে খুঁজে নাও, তাকে সঙ্গে নাও। নিজের উন্নয়নে আত্মতুষ্ট না হয়ে, অন্য নারীর অনুপস্থিতি বা সমস্যা চিহ্নিত করে সেখানেই কাজ শুরু করো। আর রাষ্ট্রের কাছে দাবি করতে শেখো—দয়া নয়, অধিকার চাও। একই সঙ্গে নিজ দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়ে উঠতে হবে। অধিকার এবং দায়িত্ব একে অপরের সহযোগী। যথাযথ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে অধিকার হাতছাড়া হয়ে যায়।
আপনি দীর্ঘদিন কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সে অভিজ্ঞতা নারী প্রশ্নে কেমন ছিল?
কমিউনিস্ট রাজনীতি আমাকে শিখিয়েছে সংগ্রাম করতে, সংহতি গড়তে। কিন্তু সত্য বলতেই হয়, বাম রাজনীতির ভেতরেও নারীর প্রশ্ন সব সময় প্রাধান্য পায়নি। অনেক সময় ‘বৃহত্তর বিপ্লব’-এর কথা বলতে গিয়ে নারী বিষয়কে গৌণ করা হয়েছে। এখনো তাদের কমিটিগুলোতে ৩৩ শতাংশ নারী অন্তর্ভুক্ত হয় নাই।
তবুও বলব, সেখান থেকে আমি রাজনৈতিক চেতনা পেয়েছি, বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গি গড়েছি। পরবর্তী সময়ে যখন আমি মহিলা পরিষদে কাজ শুরু করি, তখন সেই চেতনা কাজে লেগেছে।
আপনি যখন মহিলা পরিষদে কাজ শুরু করেন, তখন কি ভেবেছিলেন এই পথটা এত দীর্ঘ ও কণ্টকাকীর্ণ হবে?
শুরুতে বুঝি নাই যে নারী মুক্তির পথ এতটাই দীর্ঘ, জটিল ও বন্ধুর। আমাদের মানব সভ্যতার আদিতে যখন শ্রমের বিভাজন এবং সম্পদের মালিকানা ছিল না, তখন সমাজ ছিল নারীপ্রধান। পরবর্তী সময়ে শ্রমের এবং সম্পদের মালিকানাকে ভিত্তি করে গড়ে উঠল পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা। নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য পিতৃতান্ত্রিক সামাজিক কাঠামোর মধ্যে প্রোথিত নারীবিরোধী আইন, কাঠামো, প্রথার অবসান ঘটিয়ে সমতাভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্যেই আছে নারী মুক্তির পথ। সেই পথে নারী ও পুরুষকে একসঙ্গে লড়াই করতে হবে। এই কাঠামো পুরুষে-পুরুষেও বৈষম্য সৃষ্টি করে। অতীতের আন্দোলন এবং বর্তমান আন্দোলনকে এক ধারায় গ্রথিত করতে হবে। তাই আজও আমি আশাবাদী। এই যে এত প্রতিবন্ধকতার মাঝেও মেয়েরা লড়ছে, নতুন প্রজন্ম এগিয়ে আসছে, তাদের দেখে মনে হয়, পথটা কণ্টকাকীর্ণ হলেও, হাঁটতে হবেই।
আপনি নিজে একজন চিকিৎসক, শিক্ষক, রাজনৈতিক কর্মী, সংগঠক। এত পরিচয়ের ভেতর নারী হিসেবে নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন?
খুব স্পষ্ট করে যদি বলি অবশ্যই আমার পরিচয় আমি একজন নারী, একজন চিকিৎসক, একজন শিক্ষক এবং একজন রাজনৈতিক কর্মী। তবে আমার কর্মজীবনের সব ক্ষেত্রে আমার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রতিফলন ঘটেছে। আমার কাজ লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একজন মানুষ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরা। আমার পরিবার এবং সহকর্মীরা আমার যাত্রায় যেভাবে সহায়তা করেছেন, তার জন্য আমি তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
আপনি কি মনে করেন, এই দেশ একদিন নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সত্যিকারের রাষ্ট্র হবে?
আমি স্বপ্ন দেখি সে স্বপ্ন ঘুমিয়ে নয়, জাগরণে, কর্মজগতে। আমি মনে করি, স্বপ্ন না থাকলে সংগ্রাম অর্থহীন হয়ে যায়। আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম একটা রাষ্ট্রের, যেখানে নারী স্বাধীনভাবে হাঁটবে, সিদ্ধান্ত নেবে এবং নিজের চাহিদা ও জীবনের অধিকার নিজেই স্থির করবে। সেই রাষ্ট্র এখনো আসেনি, তবে তার দিগন্ত দেখা গেছে। যদি নতুন প্রজন্ম এই স্বপ্নকে ধারণ করে, প্রতিরোধ গড়ে তোলে, তবে একদিন এই দেশ নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করবে।
আপনার জীবনের শুরু এবং রাজনীতিতে অংশগ্রহণের পেছনের প্রেরণা কী ছিল?
আমার বেড়ে ওঠা ঢাকায়। ষাটের দশকে যখন ছাত্ররাজনীতির পরিবেশ গড়ে উঠছিল, চিকিৎসাবিজ্ঞানে অধ্যয়নের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজে আমি ভর্তি হই ১৯৬৪ সালে। তখন চারদিকে উত্তাল সময়—ভাষা, স্বাধিকার, সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলন। সেই পরিবেশে রাজনৈতিক চেতনা জন্মানো খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়। বিশেষ করে আমার ছোট মামা ডাক্তার সৈয়দ খলিলউল্লাহ বাম রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি আমাকে ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করেন।
তৎকালীন পাকিস্তানে শিক্ষার ক্ষেত্রে বিরাজমান বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক ধরনের নৈতিক দায়বোধ থেকেই আমি রাজনীতিতে সক্রিয় হই। সময়ের পরিক্রমায় আমিও কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হই। এখন অবশ্য আমার কোনো রাজনৈতিক দলে সম্পৃক্ততা নাই।
আপনি বহু বছর ধরে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সঙ্গে যুক্ত আছেন। এই সময়কালে কী পরিবর্তন দেখেছেন?
হ্যাঁ, মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠার সময় থেকে আমি এর সঙ্গে যুক্ত। প্রথম দিকে আমাদের মূল লড়াই ছিল সাংবিধানিক অধিকার, নারী শিক্ষা, যৌতুকবিরোধী আইন, বাল্যবিবাহের অভিঘাত বিষয়ে নারী সমাজকে সচেতন করা ও সংগঠিত করা। পরের দশকে আমরা নারী নির্যাতনবিরোধী আইন, পারিবারিক আইন সংস্কার, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আন্দোলনে অগ্রসর হই। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নারীর অধিকার মানব অধিকার হিসেবে পরিচিতি পায়।
নারীর জীবনে পরিবর্তন অবশ্যই এসেছে। মূল পরিবর্তন ঘটেছে নারীর চিন্তা জগতে। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী প্রজন্মের নারীর মধ্যে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নারী মুক্তি অর্জনের আকাঙ্ক্ষা জন্মেছে এবং নারীর শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র, মিডিয়া ও সামাজিক ক্ষেত্রে দৃশ্যমানতা বেড়েছে। কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গে নারীর প্রতি সহিংসতাও বেড়েছে। যেমন এখন নারী শিক্ষা বাড়লেও কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকা কঠিন; আইন থাকলেও প্রয়োগ হয় না। সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা আগের তুলনায় সহিংস ও আরও নিষ্ঠুর রূপ নিচ্ছে, যা ঘটছে কখনো প্রকাশ্যে, কখনো আবার পরোক্ষভাবে। সাম্প্রতিক সময়ে নারী বিদ্বেষী গোষ্ঠী কর্তৃক সমাজের মধ্যে নারী বিদ্বেষ প্রচারের অপচেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশকে ঘিরে সাম্প্রতিক যে ধর্মীয় বিরোধিতা দেখা গেছে, আপনি সেটিকে কীভাবে দেখছেন?
এটি নতুন নয়। আমরা যখনই নারীর অধিকার নিয়ে কোনো আইনি সংস্কারের কথা বলি, তখন একটি গোষ্ঠী ধর্মের ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে নারী আন্দোলনকে আঘাত করার চেষ্টা করে। নারী সংস্কার কমিশন মূলত বিদ্যমান বৈষম্য দূর করে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সুপারিশ করেছে, বিশেষ করে নারীর পারিবারিক ও ব্যক্তিগত অধিকার বিষয়ে আইনের অসামঞ্জস্যতা দূর করে মানবিক ও সাংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে। যেমন: উত্তরাধিকার, বিবাহ ও তালাক, সন্তানের অভিভাবকত্ব ইত্যাদি। কিন্তু কিছু সংগঠন একে ‘ধর্মবিরোধী’ বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং অত্যন্ত অশোভন, অশ্লীল ও কুৎসিতভাবে তা প্রকাশ করছে যা কখনো রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ভাষা হতে পারে না। এইসব দলের বক্তব্য সংবিধানের সমতা ও মর্যাদার লক্ষ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
তাহলে আপনি বলছেন, ধর্মীয় গোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া কেবল মতভিন্নতা নয়, বরং সাংগঠনিকভাবে অধিকার হরণ?
সাংগঠনিক অধিকার হরণ এভাবে আমি বলতে চাই না, কিন্তু নাগরিক অধিকার ও ব্যক্তিগত অধিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। যারা নারী সংস্কার কমিশনের বিরোধিতা করছে তারা কেবল নারীর বিরুদ্ধে নয়, প্রগতিশীল সমাজের বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছে। আমরা বলি, ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে মানবাধিকারের বিরোধ নেই। আপনি যখন বলছেন, মেয়েরা সমান উত্তরাধিকার পাবে, কিংবা বিবাহে যৌক্তিক শর্ত থাকবে, তখন আপনি মূলত সামাজিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার কথা বলছেন। আপনি মুসলমান হিসেবে জীবন যাপন করুন, কিন্তু তার মানে এই নয় যে রাষ্ট্রীয় আইনে একজন নারী দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক থাকবে। সংবিধানও সমতার কথাই বলে। এই কথাটিই আমরা আবার প্রতিষ্ঠা করতে চাইছি।
কর্মক্ষেত্রে নারীরা এখনো বৈষম্যের মুখোমুখি হচ্ছে। এটা আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
প্রশ্নটি বর্তমান সময়োপযোগী। আজকে যে নারী বিভিন্ন অফিসে ব্যাংকে, স্কুলে, মেডিকেল বা আইটি সেক্টরে কাজ করছেন তাঁকে দেখে মনে হতে পারে যে ‘সব ঠিক আছে’। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তাঁকে প্রতিদিন প্রমাণ করতে হয় যে সে ‘পুরুষের সমান’ কাজ করতে পারে। এই প্রমাণের চাপ পুরুষদের ওপর থাকে না।
নারীরা সমান কাজে কম মজুরি পাওয়া বৈশ্বিক সমস্যা হলেও বাংলাদেশে তা আরও প্রকট। ২০২৩ সালের একটি জরিপ বলছে, বেসরকারি সেক্টরে নারীরা পুরুষদের তুলনায় গড়ে ২১% কম পারিশ্রমিক পান। এ ছাড়া কর্মস্থলে যৌন হয়রানির ভয়, মাতৃত্বকালীন ছুটিতে চাকরি হারানোর ঝুঁকি, পদোন্নতিতে বঞ্চনা ইত্যাদি তো আছেই।
যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে যে নীতিমালা আছে, তাও কি কার্যকরভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না?
২০০৯ সালে উচ্চ আদালত যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, সব প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ কমিটি গঠন করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে খুব কম প্রতিষ্ঠানে এই কমিটি গঠিত হয়েছে। তদুপরি কমিটি গঠিত হলেও পিতৃতান্ত্রিক প্রথা ও সংস্কৃতির কারণে সেগুলো নিরপেক্ষ ও যথাযথভাবে কাজ করতে পারছে না। এ ছাড়া হাইকোর্টের নীতিমালার ভিত্তিতে এখনো কোনো আইন প্রণয়ন করা হয় নাই। নারী আন্দোলন এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে তাগিদ দিয়ে আসছে। ফলে অনেক নারী অভিযোগ করেও বিচার পান না, বরং উল্টো হেনস্তার শিকার হন। এই অবস্থায় নারী আত্মরক্ষার ও চাকরির স্বার্থে চুপ করে থাকার সংস্কৃতি অনুসরণ করে। এটা ভীষণ ভয়ংকর পরিস্থিতি। আমরা চাই এই নীতিমালাকে আইন হিসেবে প্রণয়ন করা হোক এবং বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মনিটরিং সেল গঠিত হোক।
সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহে নারীকে পদায়ন করার মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায় না। গণতান্ত্রিক পরিবেশ, প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও ইতিবাচক নীতি-সক্ষমতা এগুলো সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের পূর্বশর্ত। নারী বলতে আমরা শুধু সংসদ সদস্য বা মন্ত্রী বুঝি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, ব্যাংকের বোর্ড, স্থানীয় সরকার, রাজনৈতিক দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতে কোথাও নারীর প্রকৃত অংশগ্রহণ নেই।
সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন আছে, কিন্তু সেটা মনোনয়ননির্ভর। রাজনৈতিক দলগুলো নারীদের মাঠে ব্যবহার করে, কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণে পুরুষদেরই আধিপত্য। আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করছি, দলীয় পদে ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। সংবিধানের ১৯ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এটি রাষ্ট্রের দায়।
নারীর চলাচলে, নিরাপত্তায় যে প্রতিবন্ধকতা, আপনি কি মনে করেন তা রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা?
খুব পরিষ্কারভাবে বলি হ্যাঁ, এটি রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা। আপনি যদি একটি মেয়ে হয়ে বাসে উঠে নিরাপদ না বোধ করেন, রাতের শহরে হাঁটতে ভয় পান, এতে নারীর ব্যক্তিগত মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় যা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাষ্ট্র সে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। বিচারহীনতার সংস্কৃতি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে প্রচলিত পিতৃতান্ত্রিক ধ্যানধারণার সংস্কৃতি এবং নারীর অভিযোগকে তুচ্ছ করার প্রবণতা এসব মিলে নারীর চলাচল, আত্মবিশ্বাস, কর্মপরিসর সংকুচিত করে ফেলেছে।
তাহলে ভবিষ্যৎটা আপনি কেমন দেখছেন?
আমি আশাবাদী। কারণ, তৃণমূল থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে এ প্রজন্মের নারী মানসিকভাবে অগ্রসর, শক্তিশালী। ধারাবাহিক নারী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নারীর মধ্যে যে শক্তি সঞ্চারিত হয়েছে তা নারীকে সাহসী করে তুলেছে। বর্তমান প্রজন্মের নারীরা সব কাজে অংশগ্রহণে আগ্রহী, দক্ষ। আর এখনকার মেয়েরা টেকনোলজি, ব্যবসা, সাংবাদিকতা, খেলাধুলা সব জায়গায় আত্মপ্রকাশ করছে। তবে আমাদের এই পথচলা এখনো ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা যদি রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার এই ত্রিপক্ষীয় কাঠামোয় সমতা না আনতে পারি, তাহলে ব্যক্তি অর্জন সমাজে প্রভাব ফেলবে না।
নারী শিক্ষা এখন অনেক এগিয়েছে। তাহলে শিক্ষার এই বিস্তৃত সুযোগ নারীর অবস্থানকে কতটা বদলাতে পেরেছে?
আমাদের সময়ে, বিশেষ করে ষাট-সত্তরের দশকে, মেয়েদের মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ালেখা করাটাই ছিল বিশেষ কিছু। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সাহস কিংবা সুযোগ অনেকেই পেত না। এখন গ্রামের মেয়েরাও কলেজে যায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। এটা নিঃসন্দেহে বড় অগ্রগতি।
কিন্তু শুধু শিক্ষার পরিসংখ্যান দিয়ে নারীর অবস্থান নির্ধারণ করা যায় না। আজকে আপনি একজন নারীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেষ্ঠ ছাত্রী হিসেবে দেখবেন, কিন্তু কর্মক্ষেত্রে সে যখন পদোন্নতির সময় নিজের যোগ্যতার বদলে ‘নারী হওয়া’কে বাধা হিসেবে পায়, তখন বুঝতে পারবেন, শিক্ষা সমাজের চেতনাকে কতটুকু বদলাতে পেরেছে। শিক্ষা মানেই ক্ষমতায়ন নয়, যদি সেই শিক্ষায় নারীর আত্মমর্যাদা, সমতা ও অধিকারবোধ না থাকে। আর এটিই হলো আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ।
তাহলে আপনি বলছেন, শিক্ষা সত্ত্বেও নারীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে না?
ঠিক সেটাই। আপনি মেয়েটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে গেলেন, সে পড়ালেখা করল কিন্তু তার কর্মস্থলে যেতে নিরাপত্তা নেই, বাসে উঠে হয়রানির শিকার হয়, পরিবারে সে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, তাহলে এই শিক্ষার সুফল কোথায়? দীর্ঘকালব্যাপী আমরা যে যে সামাজিক প্রথা কাঠামো গড়ে তুলেছি, আইন প্রণয়ন করেছি তা নারীর ক্ষমতায়নের অনুকূলে না। সুতরাং আমরা যখন ‘নারী উন্নয়ন’ বলি, তখন শুধু সংখ্যার উন্নয়ন দিয়ে কাজ হবে না, প্রয়োজন নারীবান্ধব সামাজিক কাঠামো, যা নারীর অধিকার।
বাংলাদেশের নগর জীবনে নারীর চলাচলের ওপর যেসব প্রতিবন্ধকতা, বিশেষত গণপরিবহনে, তা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
এটা আমাদের রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন চিন্তার বড় ত্রুটি। আপনি নগরায়ণের কথা বলছেন, কিন্তু নগরবাসীর চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন হয় না। সেখানে নারী আরও প্রান্তিক। নারীর নিরাপদ চলাচল এই মৌলিক বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয় না। আজকে একজন মেয়ে সকালে অফিসে যাবে, সন্ধ্যায় ফিরবে, সে জানে না সে কোন বাসে উঠলে নিরাপদ থাকবে।
গণপরিবহনে যৌন হয়রানি এখন একটি নিরন্তর বাস্তবতা। শুধু শারীরিক হেনস্তা নয়, মানসিক যন্ত্রণাও প্রচণ্ড। আমরা বহু মেয়েকে পেয়েছি যারা হয়রানির ভয়ে পড়ালেখা বা চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। এটা কেবল একজন ব্যক্তির ক্ষতি নয়, রাষ্ট্রের সম্পদের অপচয়।
এ ছাড়া, নারীর চলাচলের জন্য শহরে নারীবান্ধব অবকাঠামো নেই। না আছে নারীবান্ধব ফুটপাত, না পর্যাপ্ত আলো বা নিরাপত্তাব্যবস্থা। এটা রাষ্ট্রীয় অবহেলার নমুনা।
রাজনৈতিক দলগুলো নারীর প্রতিনিধিত্ব নিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দেয়, বাস্তবে তার প্রতিফলন কতটা দেখছেন?
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নারীর প্রশ্নে এখনো দায়বদ্ধতার নিদর্শন দেখা যায় না। নির্বাচনের আগে তারা নারী ভোটের কথা বলে, সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা নিয়ে গর্ব করে, কিন্তু বাস্তবে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিসরে নারীর ভূমিকা নেই।
দলীয় কাউন্সিল, সিদ্ধান্ত গ্রহণ কমিটি, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সাংগঠনিক পদে নারীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। শুধু পোস্টারে মুখ থাকলেই ‘উন্নয়ন’ হয় না। আমরা চাই রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রকৃত, নির্বাচিত, জবাবদিহিমূলক নারী নেতৃত্ব।
আর সংরক্ষিত আসনের নারী এমপিদের আমরা শ্রদ্ধা করি, কিন্তু তাঁরা যদি দলনির্ভর হন এবং জনগণের কাছে দায়বদ্ধ না থাকেন, তবে তাঁর রাজনৈতিক গুরুত্ব কমে যায়। এটা শুধু একটি প্রতীক হয়ে থাকে। সেই কারণে আমরা সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন চাই।
আপনি একাধিকবার বলেছেন, রাষ্ট্র নারীকে দয়া নয়, অধিকার দিক। এই বার্তাটা যদি আপনি সরাসরি রাষ্ট্রকে দিতে চান, কী বলবেন?
আমি রাষ্ট্রকে আহ্বান জানাব নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় দায়বদ্ধ হওয়ার জন্য। সংবিধানে সমতার যে কথা বলা হয়েছে, তা যেন কাগজে না থাকে, বাস্তবেও প্রতিফলিত হয়। একটি মেয়ে শিশুকে জন্মের পর থেকেই যেন রাষ্ট্রীয় সমান মর্যাদার আশ্বাস দিতে পারে—এই হোক রাষ্ট্রের নৈতিক দায়।
আমাদের নারীসুলভ কাজ বা ‘মা-বোন’ ভেবে সহানুভূতির দরকার নেই, আমাদের নাগরিক, সামাজিক ও পারিবারিক অধিকার চাই। একজন পুরুষের মতো একজন নারীও মানুষ হিসেবে পরিচিত হবে, রাষ্ট্রের নাগরিক হবে এবং সেই মর্যাদায় বাঁচবে এটাই রাষ্ট্রের নৈতিক ও সাংবিধানিক দায়িত্ব। নারী ও পুরুষ উভয়কে মানবিক সমান অধিকার দিতে হবে।
তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে তরুণ নারীরা এখন সোশ্যাল মিডিয়ায়, ফিল্ম, লেখালেখিতে, প্রতিবাদে অনেক দৃঢ় অবস্থানে আসছে। আপনি এটাকে কীভাবে দেখছেন?
আমি এটা অনেক ইতিবাচকভাবে দেখি। একসময় নারীরা সাহস করত না প্রতিবাদ করার, কিন্তু এখন তারা শুধু প্রতিবাদ করছে না, নিজের কণ্ঠও নির্মাণ করছে। তারা লিখছে, ছবি তুলছে, গান বানাচ্ছে, প্রতিবাদ করছে।
তবে এই চেতনার বিস্তার যেন শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে। গ্রাম, শ্রমজীবী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, সুবিধাবঞ্চিত মেয়েরা যেন এই আন্দোলনের আওতায় আসে, এই সংযোগটা আমাদের করতে হবে।
আপনি যে সংগ্রাম করেছেন, যে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, সেই অভিজ্ঞতা থেকে তরুণদের উদ্দেশে কোনো বার্তা দিতে চান?
আমরা যারা আগের প্রজন্ম, তারা শুধু একটা কাঠামো তৈরি করে দিয়েছি। নতুন প্রজন্মকে তার গঠন, নির্মাণ ও পুনর্গঠন করতে হবে। তাদের বলব, পিছিয়ে পড়া নারীকে খুঁজে নাও, তাকে সঙ্গে নাও। নিজের উন্নয়নে আত্মতুষ্ট না হয়ে, অন্য নারীর অনুপস্থিতি বা সমস্যা চিহ্নিত করে সেখানেই কাজ শুরু করো। আর রাষ্ট্রের কাছে দাবি করতে শেখো—দয়া নয়, অধিকার চাও। একই সঙ্গে নিজ দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়ে উঠতে হবে। অধিকার এবং দায়িত্ব একে অপরের সহযোগী। যথাযথ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে অধিকার হাতছাড়া হয়ে যায়।
আপনি দীর্ঘদিন কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সে অভিজ্ঞতা নারী প্রশ্নে কেমন ছিল?
কমিউনিস্ট রাজনীতি আমাকে শিখিয়েছে সংগ্রাম করতে, সংহতি গড়তে। কিন্তু সত্য বলতেই হয়, বাম রাজনীতির ভেতরেও নারীর প্রশ্ন সব সময় প্রাধান্য পায়নি। অনেক সময় ‘বৃহত্তর বিপ্লব’-এর কথা বলতে গিয়ে নারী বিষয়কে গৌণ করা হয়েছে। এখনো তাদের কমিটিগুলোতে ৩৩ শতাংশ নারী অন্তর্ভুক্ত হয় নাই।
তবুও বলব, সেখান থেকে আমি রাজনৈতিক চেতনা পেয়েছি, বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গি গড়েছি। পরবর্তী সময়ে যখন আমি মহিলা পরিষদে কাজ শুরু করি, তখন সেই চেতনা কাজে লেগেছে।
আপনি যখন মহিলা পরিষদে কাজ শুরু করেন, তখন কি ভেবেছিলেন এই পথটা এত দীর্ঘ ও কণ্টকাকীর্ণ হবে?
শুরুতে বুঝি নাই যে নারী মুক্তির পথ এতটাই দীর্ঘ, জটিল ও বন্ধুর। আমাদের মানব সভ্যতার আদিতে যখন শ্রমের বিভাজন এবং সম্পদের মালিকানা ছিল না, তখন সমাজ ছিল নারীপ্রধান। পরবর্তী সময়ে শ্রমের এবং সম্পদের মালিকানাকে ভিত্তি করে গড়ে উঠল পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা। নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য পিতৃতান্ত্রিক সামাজিক কাঠামোর মধ্যে প্রোথিত নারীবিরোধী আইন, কাঠামো, প্রথার অবসান ঘটিয়ে সমতাভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্যেই আছে নারী মুক্তির পথ। সেই পথে নারী ও পুরুষকে একসঙ্গে লড়াই করতে হবে। এই কাঠামো পুরুষে-পুরুষেও বৈষম্য সৃষ্টি করে। অতীতের আন্দোলন এবং বর্তমান আন্দোলনকে এক ধারায় গ্রথিত করতে হবে। তাই আজও আমি আশাবাদী। এই যে এত প্রতিবন্ধকতার মাঝেও মেয়েরা লড়ছে, নতুন প্রজন্ম এগিয়ে আসছে, তাদের দেখে মনে হয়, পথটা কণ্টকাকীর্ণ হলেও, হাঁটতে হবেই।
আপনি নিজে একজন চিকিৎসক, শিক্ষক, রাজনৈতিক কর্মী, সংগঠক। এত পরিচয়ের ভেতর নারী হিসেবে নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন?
খুব স্পষ্ট করে যদি বলি অবশ্যই আমার পরিচয় আমি একজন নারী, একজন চিকিৎসক, একজন শিক্ষক এবং একজন রাজনৈতিক কর্মী। তবে আমার কর্মজীবনের সব ক্ষেত্রে আমার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রতিফলন ঘটেছে। আমার কাজ লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একজন মানুষ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরা। আমার পরিবার এবং সহকর্মীরা আমার যাত্রায় যেভাবে সহায়তা করেছেন, তার জন্য আমি তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
আপনি কি মনে করেন, এই দেশ একদিন নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সত্যিকারের রাষ্ট্র হবে?
আমি স্বপ্ন দেখি সে স্বপ্ন ঘুমিয়ে নয়, জাগরণে, কর্মজগতে। আমি মনে করি, স্বপ্ন না থাকলে সংগ্রাম অর্থহীন হয়ে যায়। আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম একটা রাষ্ট্রের, যেখানে নারী স্বাধীনভাবে হাঁটবে, সিদ্ধান্ত নেবে এবং নিজের চাহিদা ও জীবনের অধিকার নিজেই স্থির করবে। সেই রাষ্ট্র এখনো আসেনি, তবে তার দিগন্ত দেখা গেছে। যদি নতুন প্রজন্ম এই স্বপ্নকে ধারণ করে, প্রতিরোধ গড়ে তোলে, তবে একদিন এই দেশ নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করবে।

পাকিস্তানের বিচারপতি কায়ানির নামে একটা রসিকতা চালু আছে। তিনি নাকি বলেছিলেন, সব দেশের একটি সেনাবাহিনী আছে, আর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রয়েছে একটি দেশ। পাকিস্তানের ইতিহাসের দিকে নজর রাখলেই একের পর এক জেনারেল বেরিয়ে আসবে। গণতন্ত্র সেখানে সোনার হরিণ হিসেবেই রয়ে গেছে, বাস্তবজীবনে তার দেখা মেলা ভার।
৩ ঘণ্টা আগে
‘ক্রেইনস আর ফ্লাইং’, ‘ব্যালাড অব এ সোলজার’, ‘গানস অব নাভারন’, ‘সোফিস চয়েজ’-এর মতো চলচ্চিত্র হয়তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তৈরি হয়নি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই। শুরুর দিকের সিনেমাগুলোয় স্থূলতার সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যিক উপাদান যুক্ত হয়েছে খুব দ্রুত।
৩ ঘণ্টা আগে
কুকুর ও বিড়াল মানুষের সংস্পর্শ ছাড়া থাকতে পারে না। বনজঙ্গলে রেখে এলেও তারা লোকালয়ে চলে আসে। কুকুর ও বিড়ালের লোকালয়ে চলে আসার কারণ হিসেবে বলা হয় যে তারা মানুষের খাবার খেয়ে, ভালোবাসায় বেঁচে থাকে। ফলে মানুষের থেকে দূরে থাকতে তারা পারে না।
৩ ঘণ্টা আগে
ঠিক কোথা থেকে শুরু করব বুঝে উঠতে পারছি না। ভেতরের তোলপাড়ের কারণেই লিখি লিখি করে লেখা হয়ে উঠছিল না লেখাটা। গত মাসের কথা, মানে নভেম্বর; ফেসবুকের নিউজফিডে একটি খবর ভেসে আসে। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের জারুল্লাপুর গ্রামের ধানখেত থেকে একটি নবজাত শিশুকে উদ্ধার করা হয়।
৩ ঘণ্টা আগেসম্পাদকীয়

পাকিস্তানের বিচারপতি কায়ানির নামে একটা রসিকতা চালু আছে। তিনি নাকি বলেছিলেন, সব দেশের একটি সেনাবাহিনী আছে, আর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রয়েছে একটি দেশ। পাকিস্তানের ইতিহাসের দিকে নজর রাখলেই একের পর এক জেনারেল বেরিয়ে আসবে। গণতন্ত্র সেখানে সোনার হরিণ হিসেবেই রয়ে গেছে, বাস্তবজীবনে তার দেখা মেলা ভার।
সম্প্রতি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জেলে বন্দী অবস্থায় মারা গেছেন বলে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই ২০২৩ সাল থেকে পাকিস্তান ক্রিকেটের কিংবদন্তি এবং রাজনীতিবিদ ইমরান খান কারাবন্দী রয়েছেন। দীর্ঘদিন রাজনীতির মাঠে সক্রিয় থেকে একসময় তাঁর দল নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল, সরকার গঠন করেছিল। এরপর কীভাবে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল, তা নতুন করে বলার দরকার পড়ে না। কারাগারে তিনি সুস্থ আছেন, এই সংবাদ প্রকাশিত হলে ইমরান খানকে নিয়ে সংশয় কেটে যায়।
পাকিস্তানের ইতিহাস ঘাঁটলে নির্বাচিত সরকারের পরিবর্তন কীভাবে হয়, তা যে কেউ জেনে নিতে পারবে। নির্বাচিত সরকারপ্রধানকে সরিয়ে হয় একটা পুতুল সরকার বসানো হয় অথবা সরাসরি ক্ষমতার মঞ্চে আবির্ভূত হন কোনো জেনারেল। ইস্কান্দার মির্জা, আইয়ুব খান হয়ে আসিম মুনিরে এসে ঠেকেছে পাকিস্তানের বিধিলিপি। ফলে পাকিস্তানকে জেনারেলদের দুনিয়া বলা হলেও সত্যের অপলাপ হবে না। সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণহীন হতে চাইলেই সে সরকারের ওপর নেমে আসে বিভীষিকা। অরাজকতা যেন সেখানকার ঐতিহ্য হয়ে উঠেছে।
ইমরান খান জনপ্রিয় নেতা। বিগত নির্বাচনে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু দলটির স্বতন্ত্র সদস্যরা জিতে নেন অনেকগুলো আসন। পাকিস্তানি রাজনীতিতে দলটির একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থান রয়েছে। জেলখানায় বন্দী ইমরান খান পাকিস্তানে এখনো খুবই জনপ্রিয়। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তিনি জেনারেলদের বিরোধের মধ্যে পড়ে নিজের প্রধানমন্ত্রিত্বকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেন। এ ছাড়াও দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু দুর্বলতা দেখা দেওয়ায় তিনি বিরোধী দলগুলোর রোষানলে পড়েন। যার ফলে তিনি ক্ষমতা ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে ইমরান খানের একটি বক্তব্য স্মর্তব্য। তিনি তাঁর দলের সঙ্গে জুলুম হচ্ছে জানিয়ে বলেছিলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে কী হয়েছিল? সবচেয়ে বড় যে রাজনৈতিক দল নির্বাচনে জিতেছিল, তাদের ওপর দমনপীড়ন চালিয়েছিল সামরিক বাহিনী। তাদের যে অধিকার ছিল, তা দেওয়া হয়নি।’ ইমরান আরও বলেছিলেন, ‘আমার জানা ছিল না, সেখানকার মানুষের ভেতরে কী পরিমাণ ঘৃণা জমেছিল। কেন ঘৃণা জমেছিল? তারা নির্বাচনে জিতেছিল আর আমরা তাদের সেই অধিকার দিচ্ছিলাম না। প্রধানমন্ত্রী তাদের হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা এখানে (পশ্চিম পাকিস্তানে) বসে সিদ্ধান্ত নিলাম, আমরা তাদের প্রধানমন্ত্রী হতে দেব না।’
পাকিস্তানের রাজনীতিতে গণতন্ত্র আসবে কি না, সেটা নির্ভর করবে দেশটি আইনের শাসনের প্রতি কতটা অনুগত, তার ওপর। আপাতত সেই পরিবেশের উন্নতি হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আর সেই অন্ধকারই নিয়ন্ত্রণ করছে ইমরান খানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ।

পাকিস্তানের বিচারপতি কায়ানির নামে একটা রসিকতা চালু আছে। তিনি নাকি বলেছিলেন, সব দেশের একটি সেনাবাহিনী আছে, আর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রয়েছে একটি দেশ। পাকিস্তানের ইতিহাসের দিকে নজর রাখলেই একের পর এক জেনারেল বেরিয়ে আসবে। গণতন্ত্র সেখানে সোনার হরিণ হিসেবেই রয়ে গেছে, বাস্তবজীবনে তার দেখা মেলা ভার।
সম্প্রতি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জেলে বন্দী অবস্থায় মারা গেছেন বলে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই ২০২৩ সাল থেকে পাকিস্তান ক্রিকেটের কিংবদন্তি এবং রাজনীতিবিদ ইমরান খান কারাবন্দী রয়েছেন। দীর্ঘদিন রাজনীতির মাঠে সক্রিয় থেকে একসময় তাঁর দল নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল, সরকার গঠন করেছিল। এরপর কীভাবে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল, তা নতুন করে বলার দরকার পড়ে না। কারাগারে তিনি সুস্থ আছেন, এই সংবাদ প্রকাশিত হলে ইমরান খানকে নিয়ে সংশয় কেটে যায়।
পাকিস্তানের ইতিহাস ঘাঁটলে নির্বাচিত সরকারের পরিবর্তন কীভাবে হয়, তা যে কেউ জেনে নিতে পারবে। নির্বাচিত সরকারপ্রধানকে সরিয়ে হয় একটা পুতুল সরকার বসানো হয় অথবা সরাসরি ক্ষমতার মঞ্চে আবির্ভূত হন কোনো জেনারেল। ইস্কান্দার মির্জা, আইয়ুব খান হয়ে আসিম মুনিরে এসে ঠেকেছে পাকিস্তানের বিধিলিপি। ফলে পাকিস্তানকে জেনারেলদের দুনিয়া বলা হলেও সত্যের অপলাপ হবে না। সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণহীন হতে চাইলেই সে সরকারের ওপর নেমে আসে বিভীষিকা। অরাজকতা যেন সেখানকার ঐতিহ্য হয়ে উঠেছে।
ইমরান খান জনপ্রিয় নেতা। বিগত নির্বাচনে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু দলটির স্বতন্ত্র সদস্যরা জিতে নেন অনেকগুলো আসন। পাকিস্তানি রাজনীতিতে দলটির একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থান রয়েছে। জেলখানায় বন্দী ইমরান খান পাকিস্তানে এখনো খুবই জনপ্রিয়। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তিনি জেনারেলদের বিরোধের মধ্যে পড়ে নিজের প্রধানমন্ত্রিত্বকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেন। এ ছাড়াও দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু দুর্বলতা দেখা দেওয়ায় তিনি বিরোধী দলগুলোর রোষানলে পড়েন। যার ফলে তিনি ক্ষমতা ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে ইমরান খানের একটি বক্তব্য স্মর্তব্য। তিনি তাঁর দলের সঙ্গে জুলুম হচ্ছে জানিয়ে বলেছিলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে কী হয়েছিল? সবচেয়ে বড় যে রাজনৈতিক দল নির্বাচনে জিতেছিল, তাদের ওপর দমনপীড়ন চালিয়েছিল সামরিক বাহিনী। তাদের যে অধিকার ছিল, তা দেওয়া হয়নি।’ ইমরান আরও বলেছিলেন, ‘আমার জানা ছিল না, সেখানকার মানুষের ভেতরে কী পরিমাণ ঘৃণা জমেছিল। কেন ঘৃণা জমেছিল? তারা নির্বাচনে জিতেছিল আর আমরা তাদের সেই অধিকার দিচ্ছিলাম না। প্রধানমন্ত্রী তাদের হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা এখানে (পশ্চিম পাকিস্তানে) বসে সিদ্ধান্ত নিলাম, আমরা তাদের প্রধানমন্ত্রী হতে দেব না।’
পাকিস্তানের রাজনীতিতে গণতন্ত্র আসবে কি না, সেটা নির্ভর করবে দেশটি আইনের শাসনের প্রতি কতটা অনুগত, তার ওপর। আপাতত সেই পরিবেশের উন্নতি হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আর সেই অন্ধকারই নিয়ন্ত্রণ করছে ইমরান খানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ।

ফওজিয়া মোসলেম বাংলাদেশের নারী মুক্তি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের একজন নিরলস যোদ্ধা। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি। পেশায় চিকিৎসক ছিলেন।’ ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধসহ প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক সব আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন।
২৫ মে ২০২৫
‘ক্রেইনস আর ফ্লাইং’, ‘ব্যালাড অব এ সোলজার’, ‘গানস অব নাভারন’, ‘সোফিস চয়েজ’-এর মতো চলচ্চিত্র হয়তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তৈরি হয়নি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই। শুরুর দিকের সিনেমাগুলোয় স্থূলতার সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যিক উপাদান যুক্ত হয়েছে খুব দ্রুত।
৩ ঘণ্টা আগে
কুকুর ও বিড়াল মানুষের সংস্পর্শ ছাড়া থাকতে পারে না। বনজঙ্গলে রেখে এলেও তারা লোকালয়ে চলে আসে। কুকুর ও বিড়ালের লোকালয়ে চলে আসার কারণ হিসেবে বলা হয় যে তারা মানুষের খাবার খেয়ে, ভালোবাসায় বেঁচে থাকে। ফলে মানুষের থেকে দূরে থাকতে তারা পারে না।
৩ ঘণ্টা আগে
ঠিক কোথা থেকে শুরু করব বুঝে উঠতে পারছি না। ভেতরের তোলপাড়ের কারণেই লিখি লিখি করে লেখা হয়ে উঠছিল না লেখাটা। গত মাসের কথা, মানে নভেম্বর; ফেসবুকের নিউজফিডে একটি খবর ভেসে আসে। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের জারুল্লাপুর গ্রামের ধানখেত থেকে একটি নবজাত শিশুকে উদ্ধার করা হয়।
৩ ঘণ্টা আগেজাহীদ রেজা নূর

‘ক্রেইনস আর ফ্লাইং’, ‘ব্যালাড অব এ সোলজার’, ‘গানস অব নাভারন’, ‘সোফিস চয়েজ’-এর মতো চলচ্চিত্র হয়তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তৈরি হয়নি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই। শুরুর দিকের সিনেমাগুলোয় স্থূলতার সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যিক উপাদান যুক্ত হয়েছে খুব দ্রুত। নারীকে সেখানে লালসার শিকার হিসেবে তুলে ধরে বাণিজ্যিক লাভালাভের খোঁজ করেছেন পরিচালকেরা। এরপর ১৯৭৫ সালের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজটাই তো থমকে দাঁড়াল। এমনভাবে সাংস্কৃতিক জগৎটা নির্মাণ করা হলো, যেন মুক্তিযুদ্ধ বলে কিছুই ঘটেনি এ দেশে। এই মতলবি রাজনীতি চলেছিল অনেক দিন ধরেই। বাংলাদেশ বেতারকে রেডিও বাংলাদেশে পরিণত করেছিল যারা, তাদের খায়েশ ছিল পাকিস্তানের সঙ্গে আবার আঁতাত করার। যে রক্ত ঝরেছিল একাত্তরে, তাকে অগ্রাহ্য করা হয়েছিল দম্ভ ভরে। কিন্তু সে সময় তাদের সে খায়েশ পূরণ হয়নি। একের পর এক সামরিক শাসক দেশের শাসনভার হাতে নিয়ে সবচেয়ে যে বিষয়টিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, তা হলো দেশের সাংস্কৃতিক পরিচয়।
কিছুটা সামাল দিয়ে আশির দশকে আবার শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ। কিন্তু মূলধারার চলচ্চিত্রে উল্লেখ করার মতো চলচ্চিত্র হয়নি বললে খুব একটা ভুল বলা হবে না। কোনো কোনো চলচ্চিত্রে মানবিক আবেদন আছে বটে, কিন্তু তা শিল্পের দাবির সঙ্গে একীভূত হতে পারেনি।
২. আজ আমরা এমন কয়েকটি চলচ্চিত্র নিয়ে কথা বলব, যেগুলো নির্মিত হয়েছে স্বাধীনতার পরে। এই চলচ্চিত্রগুলো পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি নয়, স্বল্পদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবিও নয়। এগুলো তথ্যচিত্র।
ছবিগুলোর মধ্যে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ নেই। কিন্তু এর মধ্যে কয়েকটি প্রামাণ্যচিত্র যুদ্ধ ও যুদ্ধ-পরবর্তী বাস্তবতাকে তুলে ধরে। ভাবায়।
অনেকেরই মনে পড়ে যাবে, নব্বইয়ের দশকে যখন ‘মুক্তির গান’ নিয়ে এলেন তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ, তখন কীভাবে আলোড়িত হয়েছিল দেশের তরুণ সমাজ। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সরাসরি এই সংযোগ একটা জাগরণী মন্ত্রের মতো কাজ করেছিল। মার্কিন চলচ্চিত্রকার লিয়ার লেভিন যে ফুটেজগুলো ধারণ করেছিলেন একাত্তরে এবং যেগুলো অলসভাবে পড়ে ছিল তাঁর বেজমেন্টে, সেগুলো উদ্ধার করে এনে তারেক-ক্যাথরিন জুটি যা করলেন, তা আমাদের সত্যিকারের ইতিহাসের অংশ হয়ে রইল।
হ্যাঁ, সে ছবিতে মুক্তিযোদ্ধাদেরও দেখা গেছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় হয়ে যা উঠে এসেছে, তা হলো স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কীভাবে যুক্ত হওয়া যায় এই যুদ্ধে। বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে যাওয়া শিল্পীরাই সংগঠিত হয়ে তৈরি করেছিলেন গানের দলটি। উদ্বাস্তু শিবিরে, মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে তাঁরা শুনিয়েছেন জাগরণী গান। ব্যক্তিগতভাবে এই শিল্পীদের কারও কারও সঙ্গে কথা বলার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। তাঁদের কাছ থেকেই জেনেছি, খেয়ে-না খেয়ে কীভাবে তাঁরা কাজ করেছেন। আবার উদ্বাস্তুদের কেউ কেউ গানের শেষে জোর করে তাঁদের আপ্যায়ন করেছেন। খুবই সাধারণ খাবার, কিন্তু আন্তরিকতা? যুদ্ধে এই আন্তরিকতার প্রকাশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যুদ্ধ তো মনস্তাত্ত্বিক খেলা। প্রচারণার খেলা। সেই খেলায় জয়ী হয় তারাই, যাদের পেছনে দেশের মানুষের সমর্থন থাকে। ১৯৭১ সালে এই দেশের মানুষ কীভাবে যোদ্ধাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, সে ইতিহাস তুলে ধরার জন্য মাটির গান ছবিটি গুরুত্বপূর্ণ। আরও অনেক কারণেই তা গুরুত্বপূর্ণ। একটি কারণের কথা তো উল্লেখ করতেই হবে—যারা একাত্তর নিয়ে এখন নতুন মিথ তৈরি করার মতো চালাকি করছে, তারা যেসব কারণে হালে পানি পাবে না, তার একটি হচ্ছে তথ্যভিত্তিক ইতিহাস। এই ইতিহাসকে অগ্রাহ্য করে নতুন বয়ান তৈরি করার চেষ্টা একসময় হাসির খোরাকে পরিণত হবে।
৩. ইদানীং দেখা যায়, অনেকেই একাত্তরে ধর্ষিতা নারীদের নিয়ে কটাক্ষ করেন। অনেকে তো বলেই থাকেন, এই নারীরা নিজের স্বাধীন ইচ্ছায় পাকিস্তানি হানাদারদের বাহুলগ্না হয়েছেন। এই অরুচিকর মন্তব্য কারা করতে পারেন, সে বিষয়ে নিশ্চয়ই সচেতন, সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের ধারণা আছে। মুশকিল হলো, তরুণ প্রজন্ম ইতিহাসের কোন শিক্ষাটি নেবে? মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে অনেকেই অনেক রকম ফায়দা তুলে নিয়েছেন। ফলে, যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি কিংবা যাদের পরিবারে কোনো মুক্তিযোদ্ধা নেই, অথবা যাদের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শোনার সৌভাগ্য হয়নি, তারা তো মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হতেই পারে। তাদের সামনে প্রামাণ্য উদাহরণ থাকলে তারা মাথা খাটিয়ে নিজেই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবে। তরুণদের দোষারোপ করার কোনো কারণ নেই। তাদের কাছে সত্য ইতিহাস তুলে ধরতে না পারলে তারা অজায়গা-কুজায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। সেখানেই বিপদ। তাই মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য ইতিহাস খুঁজে নিতে হবে। তেমনই একটি তথ্যভান্ডার হতে পারে ইয়াসমিন কবিরের ‘এ সার্টেইন লিবারেশন।’
‘স্বাধীনতা’ বা ‘এ সার্টেইন লিবারেশন’ ছবিটি দেখতে বসলে প্রথমে বোঝাই যাবে না, এ ছবির প্রাণ কতটা গভীরে। গুরুদাসী মণ্ডলকে উন্মাদ মনে হতে পারে। খুলনার কপিলমুনির রাস্তাঘাটে যে পাগলিকে দেখা যায়, তার জীবনে একটা কাহিনি আছে। কাউকে তোয়াক্কা না করে ঘুরে বেড়াচ্ছে যে নারী, তাকে স্বাধীন বলা হবে নাকি পরাধীন—এই প্রশ্ন তো স্বভাবতই জেগে উঠতে পারে মনে। কাহিনি যত এগিয়ে যেতে থাকে, ততই মানুষ একটু একটু করে অনুভব করতে পারে আপাত এই স্বাধীনতা মোটেই মুক্তি নয়। বেঁচে থাকার অমোঘ নিয়মেই গুরুদাসীর এই পাগল বেশ।
এই ছবিতে অসাধারণ কিছু সংলাপ আছে। তার একটি এখানে বলা যেতে পারে। এক মুসলিম পরিবারের ঘরেই খাওয়াদাওয়া করে গুরুদাসী। এ কারণেই সেই পরিবারে গরুর মাংস রান্না হয় না। এই বাড়ির গৃহকর্ত্রী যখন ধর্মের বিষয়ে তার সরল স্বীকারোক্তি করে, বলে, সবার রক্তই লাল। তখন বড় বড় দার্শনিকের নানা আবিষ্কারও সেই সংলাপের কাছে ম্লান হয়ে যায়। এই নারী কথাগুলো শিখেছে জীবনে চলতে গিয়ে। তাই তা প্রগাঢ় সত্য হিসেবেই প্রতিভাত হয়।
একটা সময় গুরুদাসীকে নিয়ে দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ পড়ে শোনানো হয়। তার স্বামী এবং সন্তানদের কীভাবে তার সামনে হত্যা করা হয়েছে এবং কীভাবে তাকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করা হয়েছে, সে বিষয়টিও মূর্ত হয়ে ওঠে ছবিতে।
একজন বীরাঙ্গনার জীবনকাহিনি ছবির ভাষায় বর্ণনা করে ইতিহাসের একটি অধ্যায়কে যেভাবে এনেছেন ইয়াসমিন কবীর, তাতে তাঁকে সাধুবাদ দিতে হয়।
৪. একেবারে অন্য ধরনের একটি ছবি ‘নট এ পেনি, নট এ গান’। মকবুল চৌধুরী নির্মাণ করেছেন ছবিটি। নিজের বাবাকে নিয়ে তৈরি এ ছবিটি। যে বিষয় নিয়ে ছবিটি তৈরি হয়েছে, সেদিকে সাধারণভাবে চোখ যায় না।
মকবুল চৌধুরীর বাবা মোহাম্মদ আজিজুল হক ভুইয়া ছিলেন স্টিয়ারিং কমিটি অব দ্য অ্যাকশন কমিটি ফর দ্য পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ ইউকের কনভেনর বা আহ্বায়ক। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ব্রিটেনের বার্মিংহামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতেই তিনি ফিরে আসেন ঢাকায়। আর কখনো ব্রিটেনে ফিরে যাননি। ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসে যখন তিনি মারা যান, তখন তাঁর পরিবার আশা করেছিল, মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে সমাধিস্থ করা হবে। কিন্তু সে রকম কিছু ঘটেনি।
এরপর মকবুল চৌধুরী বার্মিংহামে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে বার্মিংহামের বাঙালিদের সংগ্রাম এবং তাঁর নিজের বাবা মোহাম্মদ আজিজুল হক ভুঁইয়ার অবদানের কথা। সেই সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলেন যাঁরা, তাঁরা এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ, কিন্তু তাঁরা তাঁদের সেই স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। রেখে দিয়েছেন সেই সংগ্রাম নিয়ে প্রকাশিত পত্র-পত্রিকার কাটিং।
সেই ছবিতে পরিষ্কার হয়ে যায়, বার্মিংহাম তথা ব্রিটেনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনের জন্য কত আত্মত্যাগ করেছেন কত মানুষ!
শুধু অস্ত্র হাতেই যুদ্ধ হয়নি, যুদ্ধ হয়েছে কতভাবে, সেটা জানা দরকার।
৫. আরও অনেক তথ্যচিত্রের কথা আলোচনায় আনতে হবে। নির্মোহ দৃষ্টিতে দেখতে হবে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাগুলোকে। এবং সে সঙ্গে এ কথাও মনে রাখতে হবে, এই জনযুদ্ধের একজন জননায়ক ছিলেন। এই জনযুদ্ধ একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে হয়েছে। সেটা মেনে নিয়েই মুক্তিযুদ্ধের নানা দিক তুলে ধরা আজ আরও বেশি প্রয়োজন। যে তিনটি ছবির কথা উল্লেখ করা হলো, সেখানেও নির্মোহভাবে এই বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধকে হৃদয়ে ধারণ করেই নতুন পরিবর্তনগুলো আসবে। অন্যভাবে নয়।

‘ক্রেইনস আর ফ্লাইং’, ‘ব্যালাড অব এ সোলজার’, ‘গানস অব নাভারন’, ‘সোফিস চয়েজ’-এর মতো চলচ্চিত্র হয়তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তৈরি হয়নি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই। শুরুর দিকের সিনেমাগুলোয় স্থূলতার সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যিক উপাদান যুক্ত হয়েছে খুব দ্রুত। নারীকে সেখানে লালসার শিকার হিসেবে তুলে ধরে বাণিজ্যিক লাভালাভের খোঁজ করেছেন পরিচালকেরা। এরপর ১৯৭৫ সালের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজটাই তো থমকে দাঁড়াল। এমনভাবে সাংস্কৃতিক জগৎটা নির্মাণ করা হলো, যেন মুক্তিযুদ্ধ বলে কিছুই ঘটেনি এ দেশে। এই মতলবি রাজনীতি চলেছিল অনেক দিন ধরেই। বাংলাদেশ বেতারকে রেডিও বাংলাদেশে পরিণত করেছিল যারা, তাদের খায়েশ ছিল পাকিস্তানের সঙ্গে আবার আঁতাত করার। যে রক্ত ঝরেছিল একাত্তরে, তাকে অগ্রাহ্য করা হয়েছিল দম্ভ ভরে। কিন্তু সে সময় তাদের সে খায়েশ পূরণ হয়নি। একের পর এক সামরিক শাসক দেশের শাসনভার হাতে নিয়ে সবচেয়ে যে বিষয়টিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, তা হলো দেশের সাংস্কৃতিক পরিচয়।
কিছুটা সামাল দিয়ে আশির দশকে আবার শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ। কিন্তু মূলধারার চলচ্চিত্রে উল্লেখ করার মতো চলচ্চিত্র হয়নি বললে খুব একটা ভুল বলা হবে না। কোনো কোনো চলচ্চিত্রে মানবিক আবেদন আছে বটে, কিন্তু তা শিল্পের দাবির সঙ্গে একীভূত হতে পারেনি।
২. আজ আমরা এমন কয়েকটি চলচ্চিত্র নিয়ে কথা বলব, যেগুলো নির্মিত হয়েছে স্বাধীনতার পরে। এই চলচ্চিত্রগুলো পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি নয়, স্বল্পদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবিও নয়। এগুলো তথ্যচিত্র।
ছবিগুলোর মধ্যে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ নেই। কিন্তু এর মধ্যে কয়েকটি প্রামাণ্যচিত্র যুদ্ধ ও যুদ্ধ-পরবর্তী বাস্তবতাকে তুলে ধরে। ভাবায়।
অনেকেরই মনে পড়ে যাবে, নব্বইয়ের দশকে যখন ‘মুক্তির গান’ নিয়ে এলেন তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ, তখন কীভাবে আলোড়িত হয়েছিল দেশের তরুণ সমাজ। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সরাসরি এই সংযোগ একটা জাগরণী মন্ত্রের মতো কাজ করেছিল। মার্কিন চলচ্চিত্রকার লিয়ার লেভিন যে ফুটেজগুলো ধারণ করেছিলেন একাত্তরে এবং যেগুলো অলসভাবে পড়ে ছিল তাঁর বেজমেন্টে, সেগুলো উদ্ধার করে এনে তারেক-ক্যাথরিন জুটি যা করলেন, তা আমাদের সত্যিকারের ইতিহাসের অংশ হয়ে রইল।
হ্যাঁ, সে ছবিতে মুক্তিযোদ্ধাদেরও দেখা গেছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় হয়ে যা উঠে এসেছে, তা হলো স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কীভাবে যুক্ত হওয়া যায় এই যুদ্ধে। বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে যাওয়া শিল্পীরাই সংগঠিত হয়ে তৈরি করেছিলেন গানের দলটি। উদ্বাস্তু শিবিরে, মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে তাঁরা শুনিয়েছেন জাগরণী গান। ব্যক্তিগতভাবে এই শিল্পীদের কারও কারও সঙ্গে কথা বলার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। তাঁদের কাছ থেকেই জেনেছি, খেয়ে-না খেয়ে কীভাবে তাঁরা কাজ করেছেন। আবার উদ্বাস্তুদের কেউ কেউ গানের শেষে জোর করে তাঁদের আপ্যায়ন করেছেন। খুবই সাধারণ খাবার, কিন্তু আন্তরিকতা? যুদ্ধে এই আন্তরিকতার প্রকাশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যুদ্ধ তো মনস্তাত্ত্বিক খেলা। প্রচারণার খেলা। সেই খেলায় জয়ী হয় তারাই, যাদের পেছনে দেশের মানুষের সমর্থন থাকে। ১৯৭১ সালে এই দেশের মানুষ কীভাবে যোদ্ধাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, সে ইতিহাস তুলে ধরার জন্য মাটির গান ছবিটি গুরুত্বপূর্ণ। আরও অনেক কারণেই তা গুরুত্বপূর্ণ। একটি কারণের কথা তো উল্লেখ করতেই হবে—যারা একাত্তর নিয়ে এখন নতুন মিথ তৈরি করার মতো চালাকি করছে, তারা যেসব কারণে হালে পানি পাবে না, তার একটি হচ্ছে তথ্যভিত্তিক ইতিহাস। এই ইতিহাসকে অগ্রাহ্য করে নতুন বয়ান তৈরি করার চেষ্টা একসময় হাসির খোরাকে পরিণত হবে।
৩. ইদানীং দেখা যায়, অনেকেই একাত্তরে ধর্ষিতা নারীদের নিয়ে কটাক্ষ করেন। অনেকে তো বলেই থাকেন, এই নারীরা নিজের স্বাধীন ইচ্ছায় পাকিস্তানি হানাদারদের বাহুলগ্না হয়েছেন। এই অরুচিকর মন্তব্য কারা করতে পারেন, সে বিষয়ে নিশ্চয়ই সচেতন, সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের ধারণা আছে। মুশকিল হলো, তরুণ প্রজন্ম ইতিহাসের কোন শিক্ষাটি নেবে? মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে অনেকেই অনেক রকম ফায়দা তুলে নিয়েছেন। ফলে, যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি কিংবা যাদের পরিবারে কোনো মুক্তিযোদ্ধা নেই, অথবা যাদের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শোনার সৌভাগ্য হয়নি, তারা তো মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হতেই পারে। তাদের সামনে প্রামাণ্য উদাহরণ থাকলে তারা মাথা খাটিয়ে নিজেই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবে। তরুণদের দোষারোপ করার কোনো কারণ নেই। তাদের কাছে সত্য ইতিহাস তুলে ধরতে না পারলে তারা অজায়গা-কুজায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। সেখানেই বিপদ। তাই মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য ইতিহাস খুঁজে নিতে হবে। তেমনই একটি তথ্যভান্ডার হতে পারে ইয়াসমিন কবিরের ‘এ সার্টেইন লিবারেশন।’
‘স্বাধীনতা’ বা ‘এ সার্টেইন লিবারেশন’ ছবিটি দেখতে বসলে প্রথমে বোঝাই যাবে না, এ ছবির প্রাণ কতটা গভীরে। গুরুদাসী মণ্ডলকে উন্মাদ মনে হতে পারে। খুলনার কপিলমুনির রাস্তাঘাটে যে পাগলিকে দেখা যায়, তার জীবনে একটা কাহিনি আছে। কাউকে তোয়াক্কা না করে ঘুরে বেড়াচ্ছে যে নারী, তাকে স্বাধীন বলা হবে নাকি পরাধীন—এই প্রশ্ন তো স্বভাবতই জেগে উঠতে পারে মনে। কাহিনি যত এগিয়ে যেতে থাকে, ততই মানুষ একটু একটু করে অনুভব করতে পারে আপাত এই স্বাধীনতা মোটেই মুক্তি নয়। বেঁচে থাকার অমোঘ নিয়মেই গুরুদাসীর এই পাগল বেশ।
এই ছবিতে অসাধারণ কিছু সংলাপ আছে। তার একটি এখানে বলা যেতে পারে। এক মুসলিম পরিবারের ঘরেই খাওয়াদাওয়া করে গুরুদাসী। এ কারণেই সেই পরিবারে গরুর মাংস রান্না হয় না। এই বাড়ির গৃহকর্ত্রী যখন ধর্মের বিষয়ে তার সরল স্বীকারোক্তি করে, বলে, সবার রক্তই লাল। তখন বড় বড় দার্শনিকের নানা আবিষ্কারও সেই সংলাপের কাছে ম্লান হয়ে যায়। এই নারী কথাগুলো শিখেছে জীবনে চলতে গিয়ে। তাই তা প্রগাঢ় সত্য হিসেবেই প্রতিভাত হয়।
একটা সময় গুরুদাসীকে নিয়ে দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ পড়ে শোনানো হয়। তার স্বামী এবং সন্তানদের কীভাবে তার সামনে হত্যা করা হয়েছে এবং কীভাবে তাকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করা হয়েছে, সে বিষয়টিও মূর্ত হয়ে ওঠে ছবিতে।
একজন বীরাঙ্গনার জীবনকাহিনি ছবির ভাষায় বর্ণনা করে ইতিহাসের একটি অধ্যায়কে যেভাবে এনেছেন ইয়াসমিন কবীর, তাতে তাঁকে সাধুবাদ দিতে হয়।
৪. একেবারে অন্য ধরনের একটি ছবি ‘নট এ পেনি, নট এ গান’। মকবুল চৌধুরী নির্মাণ করেছেন ছবিটি। নিজের বাবাকে নিয়ে তৈরি এ ছবিটি। যে বিষয় নিয়ে ছবিটি তৈরি হয়েছে, সেদিকে সাধারণভাবে চোখ যায় না।
মকবুল চৌধুরীর বাবা মোহাম্মদ আজিজুল হক ভুইয়া ছিলেন স্টিয়ারিং কমিটি অব দ্য অ্যাকশন কমিটি ফর দ্য পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ ইউকের কনভেনর বা আহ্বায়ক। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ব্রিটেনের বার্মিংহামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতেই তিনি ফিরে আসেন ঢাকায়। আর কখনো ব্রিটেনে ফিরে যাননি। ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসে যখন তিনি মারা যান, তখন তাঁর পরিবার আশা করেছিল, মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে সমাধিস্থ করা হবে। কিন্তু সে রকম কিছু ঘটেনি।
এরপর মকবুল চৌধুরী বার্মিংহামে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে বার্মিংহামের বাঙালিদের সংগ্রাম এবং তাঁর নিজের বাবা মোহাম্মদ আজিজুল হক ভুঁইয়ার অবদানের কথা। সেই সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলেন যাঁরা, তাঁরা এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ, কিন্তু তাঁরা তাঁদের সেই স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। রেখে দিয়েছেন সেই সংগ্রাম নিয়ে প্রকাশিত পত্র-পত্রিকার কাটিং।
সেই ছবিতে পরিষ্কার হয়ে যায়, বার্মিংহাম তথা ব্রিটেনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনের জন্য কত আত্মত্যাগ করেছেন কত মানুষ!
শুধু অস্ত্র হাতেই যুদ্ধ হয়নি, যুদ্ধ হয়েছে কতভাবে, সেটা জানা দরকার।
৫. আরও অনেক তথ্যচিত্রের কথা আলোচনায় আনতে হবে। নির্মোহ দৃষ্টিতে দেখতে হবে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাগুলোকে। এবং সে সঙ্গে এ কথাও মনে রাখতে হবে, এই জনযুদ্ধের একজন জননায়ক ছিলেন। এই জনযুদ্ধ একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে হয়েছে। সেটা মেনে নিয়েই মুক্তিযুদ্ধের নানা দিক তুলে ধরা আজ আরও বেশি প্রয়োজন। যে তিনটি ছবির কথা উল্লেখ করা হলো, সেখানেও নির্মোহভাবে এই বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধকে হৃদয়ে ধারণ করেই নতুন পরিবর্তনগুলো আসবে। অন্যভাবে নয়।

ফওজিয়া মোসলেম বাংলাদেশের নারী মুক্তি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের একজন নিরলস যোদ্ধা। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি। পেশায় চিকিৎসক ছিলেন।’ ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধসহ প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক সব আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন।
২৫ মে ২০২৫
পাকিস্তানের বিচারপতি কায়ানির নামে একটা রসিকতা চালু আছে। তিনি নাকি বলেছিলেন, সব দেশের একটি সেনাবাহিনী আছে, আর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রয়েছে একটি দেশ। পাকিস্তানের ইতিহাসের দিকে নজর রাখলেই একের পর এক জেনারেল বেরিয়ে আসবে। গণতন্ত্র সেখানে সোনার হরিণ হিসেবেই রয়ে গেছে, বাস্তবজীবনে তার দেখা মেলা ভার।
৩ ঘণ্টা আগে
কুকুর ও বিড়াল মানুষের সংস্পর্শ ছাড়া থাকতে পারে না। বনজঙ্গলে রেখে এলেও তারা লোকালয়ে চলে আসে। কুকুর ও বিড়ালের লোকালয়ে চলে আসার কারণ হিসেবে বলা হয় যে তারা মানুষের খাবার খেয়ে, ভালোবাসায় বেঁচে থাকে। ফলে মানুষের থেকে দূরে থাকতে তারা পারে না।
৩ ঘণ্টা আগে
ঠিক কোথা থেকে শুরু করব বুঝে উঠতে পারছি না। ভেতরের তোলপাড়ের কারণেই লিখি লিখি করে লেখা হয়ে উঠছিল না লেখাটা। গত মাসের কথা, মানে নভেম্বর; ফেসবুকের নিউজফিডে একটি খবর ভেসে আসে। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের জারুল্লাপুর গ্রামের ধানখেত থেকে একটি নবজাত শিশুকে উদ্ধার করা হয়।
৩ ঘণ্টা আগেস্বপ্না রেজা

কুকুর ও বিড়াল মানুষের সংস্পর্শ ছাড়া থাকতে পারে না। বনজঙ্গলে রেখে এলেও তারা লোকালয়ে চলে আসে। কুকুর ও বিড়ালের লোকালয়ে চলে আসার কারণ হিসেবে বলা হয় যে তারা মানুষের খাবার খেয়ে, ভালোবাসায় বেঁচে থাকে। ফলে মানুষের থেকে দূরে থাকতে তারা পারে না। প্রকৃতির বিধানে মানবজাতির সঙ্গে কুকুর ও বিড়ালের এক অভূতপূর্ব সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। বিশ্বস্ততা ও আস্থার প্রতীক হিসেবে এই দুটি প্রাণীর অবস্থান মানবজাতির সঙ্গে। এটাও যেন সৃষ্টিকর্তার বিধিভুক্ত। কুকুর, বিড়ালের মানুষের সঙ্গে অবস্থানের রহস্য সহনশীলতা, পছন্দ-অপছন্দ, ভালোবাসা—সবকিছুর পেছনে কারণ নিশ্চয়ই আছে, যা দৃশ্যমান হয় না। যেটুকু বুঝতে পারা যায় তা হলো, কুকুর-বিড়াল ভালোবেসে কেউ কেউ ঘরে পোষা প্রাণী হিসেবে রাখে, যত্ন করে। এদের সংখ্যা খুব বেশি নয় সমাজে।
সম্প্রতি বাংলাদেশে একটা দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গেছে। বিশেষ করে যাদের কুকুর-বিড়ালের মতো প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা কাজ করে এবং সর্বোপরি যারা প্রকৃতার্থে মানবিক, তারা এমন মর্মান্তিক ঘটনায় দুঃখ পেয়েছে। মূলধারার মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রকাশ পেয়েছে। শুধু তাই নয়, স্থানীয় অন্য প্রাণীপ্রিয় মানুষকে ভীষণভাবে ব্যথিত করেছে। ঘটনাটি হলো পাবনার ঈশ্বরদী এলাকায় একজন নারী আটটি কুকুরের ছানাকে বস্তাবন্দি করে মেরে ফেলেছেন। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, কুকুরের ডাকে তিনি অতিষ্ঠ হয়ে এমন নির্মম কাজ করেছেন। তাঁর শিশুপুত্র বলেছে, তার মা বস্তায় ভরে কুকুরের ছানাগুলোকে পানিতে ফেলে দিয়েছে। মা কুকুর তার ছানাদের না পেয়ে পুরো এলাকায় কান্না করে বেড়িয়েছে, অসহায় হয়ে ঘুরে ফিরেছে। তার স্তনে ছিল সন্তানদের জন্য সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত আহার। সন্তানদের এই দুগ্ধপান করাতে না পারায় অসহনীয় যন্ত্রণা নিয়ে মা কুকুর তার ছানাদের খুঁজে ফিরেছে। তার কণ্ঠে তার মতোই ভাষা ছিল। চোখে ছিল অশ্রু। শরীরের ভেতর নিদারুণ অসহায়ত্ব। একজন মা মানুষের মতোই তার আর্তনাদ ছিল। যিনি হত্যা করেছেন তিনি মা হয়েও বোঝেননি সন্তান হারানোর যন্ত্রণা। স্থানীয় বাসিন্দাদের চোখে বিষয়টি পড়েছে। তাঁরা মর্মাহত হয়েছেন, প্রতিবাদ করেছেন। স্থানীয় প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে চারপাশের প্রতিবাদে। জানা গেছে, যিনি হত্যা করেছেন তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী এবং ফলাও করে সেটা প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু এটা তাঁর বড় পরিচয় নয়। বড় পরিচয় হচ্ছে, তিনি একজন মা মানুষ হয়ে একজন মা কুকুরকে নিঃসন্তান করেছেন, আটটি সন্তানকে নির্মমভাবে হত্যা করেছেন।
যে মা কুকুর তার আটটি সন্তান হারিয়েছে তাকে স্থানীয় লোকজন ভালোবেসে নাম দিয়েছিলেন টমি। তাঁদের ভালোবাসায় সিক্ত টমি তার সন্তানদের আশ্রয় হিসেবে জায়গাটিকে সুরক্ষিত মনে করেছিল। কিন্তু সবকিছুকে অর্থহীন করে দিল একজন নিশি খাতুন, যিনি মা আর সন্তানের মধ্যকার গভীর টান, অনিবার্য সান্নিধ্যটুকু বুঝতে পারেন না। কিংবা স্বার্থপরের মতো কেবল নিজেরটা বুঝতে শিখেছেন। সমাজে একটা বোধ বেশ প্রচলন আছে, সেটা হলো, শিশু ও ফুলকে যে ভালোবাসে না সে আদতে ভালো মানুষ নয়। মানুষসহ সব জীবের কথাই এখানে প্রযোজ্য। আমাদের সমাজে প্রায়ই একজন আরেকজনকে নির্মমভাবে হত্যা করে, নিঃস্ব করে, ধ্বংস করে এবং এর পেছনে থাকে রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা, লোভ-লালসা ইত্যাদির স্পৃহা। অনেক ক্ষেত্রেই এসব বিচারহীনতার বেষ্টনীতে থেকে যায়, থেকে যাচ্ছে। যার পেছনেও থাকে হীন উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। অপরাধ করে মুক্ত জীবনে বসবাস—এই এক ধরনের সংস্কৃতির প্রচলন ঘটেছে আমাদের সমাজে। এই সংস্কৃতির চর্চা সর্বত্র এবং ব্যক্তি-গোষ্ঠীকে সুবিধাবাদী করতে যথেষ্ট সহায়ক। আমাদের সমাজে শিশুদের যেভাবে হত্যা করা হয়, যেভাবে ধর্ষণ করা হয়, তার পাশে আটটি কুকুরছানাকে বস্তায় ভরে হত্যার ঘটনাটি কিন্তু বেমানান নয়, বরং বেশ মিলে যায়। কিছুদিন আগেও দেখা গেছে যে কুকুর প্রাণীদের ধরে ধরে হত্যা করা হয়েছে। একজন প্রবীণ ব্যক্তি বলছিলেন, এই সমাজে কোনো প্রাণীই আর নিরাপদ নয়। হত্যার বিষয়টি প্রত্যেকের নাগালের মধ্যে পৌঁছে গেছে। যেভাবে মানুষ হত্যা হচ্ছে, সেভাবে অন্য জীব হত্যা হচ্ছে। হত্যা করাই যেন সহজতর কাজ। এতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। সরকারি ও বেসরকারি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হরিণ মেরে খাওয়ার প্রবণতা ও স্পর্ধার তো অপ্রচলন ঘটেনি কখনো, বরং তা রয়েই গেছে।
পত্রিকান্তরে জানা গেছে, কুকুরছানা হত্যাকারী নিশি রহমান ধরা পড়েছেন। যদিও তিনি দাবি করেছেন, তিনি বস্তায় ভরে রেখে এসেছেন কিন্তু পানিতে চুবিয়ে হত্যা করেননি। কিন্তু নিশি রহমানের শিশুপুত্র বলেছে, কুকুরছানাদের বস্তায় ভরে পানিতে ফেলেছে। সব শিশুর ভেতরেই শিশুসুলভ সরলতা কাজ করে যা সত্য বলতে সহায়ক হয়। নিশি তাঁর অপরাধকে লুকাতে পারেননি নিজের শিশুপুত্রের সরলতার কারণেই। প্রকৃতির হিসাব কখনো ভুল হয়নি, ভুল হয় না। মিডিয়ায় দেখা গেল, মা কুকুরকে স্বস্তি ও শান্তি দেওয়ার জন্য দুটি কুকুরছানা এনে তার দুগ্ধপান করানো হচ্ছে। কাজটি করছেন স্থানীয় তরুণরা এবং বিষয়টি অবলোকন করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। মা কুকুরের সঙ্গে কুকুরছানা দুটিকে অভ্যস্ত করা হচ্ছে, টিভির পর্দায় দেখা গেল। মা কুকুর তার দুগ্ধপানে বেশ সহায়তা করছে ছানা দুটিকে। মুহূর্তের মধ্যে মনে হলো, এই হিংস্র, হিংসাবিদ্বেষের জগতে ভিন্নতর ও সবচেয়ে মধুর ও অকৃত্রিম সৌন্দর্য উপভোগ করছি যেন। ভীষণ ভালো লাগল। সেই সঙ্গে প্রত্যাশা জাগল, জগতের সব প্রাণীর স্বস্তি ও শান্তি নিশ্চিত করার চেতনা জাগ্রত হোক সর্বত্র।
একজন বলছিলেন, নিশি রহমানকে গ্রেপ্তার করা ঠিক হয়েছে। প্রাণিসম্পদ রক্ষার আইনে তাঁর বিচার হলে মানুষের ভেতর সচেতনতা বাড়বে। এ ধরনের অপরাধ আর কেউ করবে না। ঠিক কথা। কিন্তু শেষ অবধি কী হয় বা হবে ? যেমন আমরা দেখি, মানবসন্তানকে হত্যা করেও অনেক অপরাধী বিচারবহির্ভূত জীবনযাপন করছে, আবার যেকোনো প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসায় শিশুরাই কেবল বলি হয় বা হচ্ছে, সেখানে কঠিন বিচারহীনতার সংস্কৃতি কাজ করে এবং অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়, যাচ্ছে।
যেকোনো অপরাধ আইনের আওতায় আনা জরুরি এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে বিচার করতে হবে। গোটা প্রক্রিয়া হতে হবে সংবিধান অনুসারে এবং দলীয় রাজনীতিমুক্ত। মিডিয়ায় প্রচারনির্ভর কর্মকাণ্ড নয়, বরং লক্ষ্য হতে হবে প্রতিটি প্রাণীর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা। তাতেই সচেতনতা বাড়বে, মায়েদের শান্তি ফিরবে। দেশ হবে সবার বসবাসের উপযোগী।

কুকুর ও বিড়াল মানুষের সংস্পর্শ ছাড়া থাকতে পারে না। বনজঙ্গলে রেখে এলেও তারা লোকালয়ে চলে আসে। কুকুর ও বিড়ালের লোকালয়ে চলে আসার কারণ হিসেবে বলা হয় যে তারা মানুষের খাবার খেয়ে, ভালোবাসায় বেঁচে থাকে। ফলে মানুষের থেকে দূরে থাকতে তারা পারে না। প্রকৃতির বিধানে মানবজাতির সঙ্গে কুকুর ও বিড়ালের এক অভূতপূর্ব সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। বিশ্বস্ততা ও আস্থার প্রতীক হিসেবে এই দুটি প্রাণীর অবস্থান মানবজাতির সঙ্গে। এটাও যেন সৃষ্টিকর্তার বিধিভুক্ত। কুকুর, বিড়ালের মানুষের সঙ্গে অবস্থানের রহস্য সহনশীলতা, পছন্দ-অপছন্দ, ভালোবাসা—সবকিছুর পেছনে কারণ নিশ্চয়ই আছে, যা দৃশ্যমান হয় না। যেটুকু বুঝতে পারা যায় তা হলো, কুকুর-বিড়াল ভালোবেসে কেউ কেউ ঘরে পোষা প্রাণী হিসেবে রাখে, যত্ন করে। এদের সংখ্যা খুব বেশি নয় সমাজে।
সম্প্রতি বাংলাদেশে একটা দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গেছে। বিশেষ করে যাদের কুকুর-বিড়ালের মতো প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা কাজ করে এবং সর্বোপরি যারা প্রকৃতার্থে মানবিক, তারা এমন মর্মান্তিক ঘটনায় দুঃখ পেয়েছে। মূলধারার মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রকাশ পেয়েছে। শুধু তাই নয়, স্থানীয় অন্য প্রাণীপ্রিয় মানুষকে ভীষণভাবে ব্যথিত করেছে। ঘটনাটি হলো পাবনার ঈশ্বরদী এলাকায় একজন নারী আটটি কুকুরের ছানাকে বস্তাবন্দি করে মেরে ফেলেছেন। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, কুকুরের ডাকে তিনি অতিষ্ঠ হয়ে এমন নির্মম কাজ করেছেন। তাঁর শিশুপুত্র বলেছে, তার মা বস্তায় ভরে কুকুরের ছানাগুলোকে পানিতে ফেলে দিয়েছে। মা কুকুর তার ছানাদের না পেয়ে পুরো এলাকায় কান্না করে বেড়িয়েছে, অসহায় হয়ে ঘুরে ফিরেছে। তার স্তনে ছিল সন্তানদের জন্য সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত আহার। সন্তানদের এই দুগ্ধপান করাতে না পারায় অসহনীয় যন্ত্রণা নিয়ে মা কুকুর তার ছানাদের খুঁজে ফিরেছে। তার কণ্ঠে তার মতোই ভাষা ছিল। চোখে ছিল অশ্রু। শরীরের ভেতর নিদারুণ অসহায়ত্ব। একজন মা মানুষের মতোই তার আর্তনাদ ছিল। যিনি হত্যা করেছেন তিনি মা হয়েও বোঝেননি সন্তান হারানোর যন্ত্রণা। স্থানীয় বাসিন্দাদের চোখে বিষয়টি পড়েছে। তাঁরা মর্মাহত হয়েছেন, প্রতিবাদ করেছেন। স্থানীয় প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে চারপাশের প্রতিবাদে। জানা গেছে, যিনি হত্যা করেছেন তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী এবং ফলাও করে সেটা প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু এটা তাঁর বড় পরিচয় নয়। বড় পরিচয় হচ্ছে, তিনি একজন মা মানুষ হয়ে একজন মা কুকুরকে নিঃসন্তান করেছেন, আটটি সন্তানকে নির্মমভাবে হত্যা করেছেন।
যে মা কুকুর তার আটটি সন্তান হারিয়েছে তাকে স্থানীয় লোকজন ভালোবেসে নাম দিয়েছিলেন টমি। তাঁদের ভালোবাসায় সিক্ত টমি তার সন্তানদের আশ্রয় হিসেবে জায়গাটিকে সুরক্ষিত মনে করেছিল। কিন্তু সবকিছুকে অর্থহীন করে দিল একজন নিশি খাতুন, যিনি মা আর সন্তানের মধ্যকার গভীর টান, অনিবার্য সান্নিধ্যটুকু বুঝতে পারেন না। কিংবা স্বার্থপরের মতো কেবল নিজেরটা বুঝতে শিখেছেন। সমাজে একটা বোধ বেশ প্রচলন আছে, সেটা হলো, শিশু ও ফুলকে যে ভালোবাসে না সে আদতে ভালো মানুষ নয়। মানুষসহ সব জীবের কথাই এখানে প্রযোজ্য। আমাদের সমাজে প্রায়ই একজন আরেকজনকে নির্মমভাবে হত্যা করে, নিঃস্ব করে, ধ্বংস করে এবং এর পেছনে থাকে রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা, লোভ-লালসা ইত্যাদির স্পৃহা। অনেক ক্ষেত্রেই এসব বিচারহীনতার বেষ্টনীতে থেকে যায়, থেকে যাচ্ছে। যার পেছনেও থাকে হীন উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। অপরাধ করে মুক্ত জীবনে বসবাস—এই এক ধরনের সংস্কৃতির প্রচলন ঘটেছে আমাদের সমাজে। এই সংস্কৃতির চর্চা সর্বত্র এবং ব্যক্তি-গোষ্ঠীকে সুবিধাবাদী করতে যথেষ্ট সহায়ক। আমাদের সমাজে শিশুদের যেভাবে হত্যা করা হয়, যেভাবে ধর্ষণ করা হয়, তার পাশে আটটি কুকুরছানাকে বস্তায় ভরে হত্যার ঘটনাটি কিন্তু বেমানান নয়, বরং বেশ মিলে যায়। কিছুদিন আগেও দেখা গেছে যে কুকুর প্রাণীদের ধরে ধরে হত্যা করা হয়েছে। একজন প্রবীণ ব্যক্তি বলছিলেন, এই সমাজে কোনো প্রাণীই আর নিরাপদ নয়। হত্যার বিষয়টি প্রত্যেকের নাগালের মধ্যে পৌঁছে গেছে। যেভাবে মানুষ হত্যা হচ্ছে, সেভাবে অন্য জীব হত্যা হচ্ছে। হত্যা করাই যেন সহজতর কাজ। এতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। সরকারি ও বেসরকারি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হরিণ মেরে খাওয়ার প্রবণতা ও স্পর্ধার তো অপ্রচলন ঘটেনি কখনো, বরং তা রয়েই গেছে।
পত্রিকান্তরে জানা গেছে, কুকুরছানা হত্যাকারী নিশি রহমান ধরা পড়েছেন। যদিও তিনি দাবি করেছেন, তিনি বস্তায় ভরে রেখে এসেছেন কিন্তু পানিতে চুবিয়ে হত্যা করেননি। কিন্তু নিশি রহমানের শিশুপুত্র বলেছে, কুকুরছানাদের বস্তায় ভরে পানিতে ফেলেছে। সব শিশুর ভেতরেই শিশুসুলভ সরলতা কাজ করে যা সত্য বলতে সহায়ক হয়। নিশি তাঁর অপরাধকে লুকাতে পারেননি নিজের শিশুপুত্রের সরলতার কারণেই। প্রকৃতির হিসাব কখনো ভুল হয়নি, ভুল হয় না। মিডিয়ায় দেখা গেল, মা কুকুরকে স্বস্তি ও শান্তি দেওয়ার জন্য দুটি কুকুরছানা এনে তার দুগ্ধপান করানো হচ্ছে। কাজটি করছেন স্থানীয় তরুণরা এবং বিষয়টি অবলোকন করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। মা কুকুরের সঙ্গে কুকুরছানা দুটিকে অভ্যস্ত করা হচ্ছে, টিভির পর্দায় দেখা গেল। মা কুকুর তার দুগ্ধপানে বেশ সহায়তা করছে ছানা দুটিকে। মুহূর্তের মধ্যে মনে হলো, এই হিংস্র, হিংসাবিদ্বেষের জগতে ভিন্নতর ও সবচেয়ে মধুর ও অকৃত্রিম সৌন্দর্য উপভোগ করছি যেন। ভীষণ ভালো লাগল। সেই সঙ্গে প্রত্যাশা জাগল, জগতের সব প্রাণীর স্বস্তি ও শান্তি নিশ্চিত করার চেতনা জাগ্রত হোক সর্বত্র।
একজন বলছিলেন, নিশি রহমানকে গ্রেপ্তার করা ঠিক হয়েছে। প্রাণিসম্পদ রক্ষার আইনে তাঁর বিচার হলে মানুষের ভেতর সচেতনতা বাড়বে। এ ধরনের অপরাধ আর কেউ করবে না। ঠিক কথা। কিন্তু শেষ অবধি কী হয় বা হবে ? যেমন আমরা দেখি, মানবসন্তানকে হত্যা করেও অনেক অপরাধী বিচারবহির্ভূত জীবনযাপন করছে, আবার যেকোনো প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসায় শিশুরাই কেবল বলি হয় বা হচ্ছে, সেখানে কঠিন বিচারহীনতার সংস্কৃতি কাজ করে এবং অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়, যাচ্ছে।
যেকোনো অপরাধ আইনের আওতায় আনা জরুরি এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে বিচার করতে হবে। গোটা প্রক্রিয়া হতে হবে সংবিধান অনুসারে এবং দলীয় রাজনীতিমুক্ত। মিডিয়ায় প্রচারনির্ভর কর্মকাণ্ড নয়, বরং লক্ষ্য হতে হবে প্রতিটি প্রাণীর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা। তাতেই সচেতনতা বাড়বে, মায়েদের শান্তি ফিরবে। দেশ হবে সবার বসবাসের উপযোগী।

ফওজিয়া মোসলেম বাংলাদেশের নারী মুক্তি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের একজন নিরলস যোদ্ধা। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি। পেশায় চিকিৎসক ছিলেন।’ ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধসহ প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক সব আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন।
২৫ মে ২০২৫
পাকিস্তানের বিচারপতি কায়ানির নামে একটা রসিকতা চালু আছে। তিনি নাকি বলেছিলেন, সব দেশের একটি সেনাবাহিনী আছে, আর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রয়েছে একটি দেশ। পাকিস্তানের ইতিহাসের দিকে নজর রাখলেই একের পর এক জেনারেল বেরিয়ে আসবে। গণতন্ত্র সেখানে সোনার হরিণ হিসেবেই রয়ে গেছে, বাস্তবজীবনে তার দেখা মেলা ভার।
৩ ঘণ্টা আগে
‘ক্রেইনস আর ফ্লাইং’, ‘ব্যালাড অব এ সোলজার’, ‘গানস অব নাভারন’, ‘সোফিস চয়েজ’-এর মতো চলচ্চিত্র হয়তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তৈরি হয়নি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই। শুরুর দিকের সিনেমাগুলোয় স্থূলতার সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যিক উপাদান যুক্ত হয়েছে খুব দ্রুত।
৩ ঘণ্টা আগে
ঠিক কোথা থেকে শুরু করব বুঝে উঠতে পারছি না। ভেতরের তোলপাড়ের কারণেই লিখি লিখি করে লেখা হয়ে উঠছিল না লেখাটা। গত মাসের কথা, মানে নভেম্বর; ফেসবুকের নিউজফিডে একটি খবর ভেসে আসে। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের জারুল্লাপুর গ্রামের ধানখেত থেকে একটি নবজাত শিশুকে উদ্ধার করা হয়।
৩ ঘণ্টা আগেসানজিদা সামরিন

ঠিক কোথা থেকে শুরু করব বুঝে উঠতে পারছি না। ভেতরের তোলপাড়ের কারণেই লিখি লিখি করে লেখা হয়ে উঠছিল না লেখাটা। গত মাসের কথা, মানে নভেম্বর; ফেসবুকের নিউজফিডে একটি খবর ভেসে আসে। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের জারুল্লাপুর গ্রামের ধানখেত থেকে একটি নবজাত শিশুকে উদ্ধার করা হয়। শিশুটির কান্না শুনে একজন কৃষক তাকে উদ্ধার করেন। পরে এলাকাবাসীর সহায়তা নিয়ে দ্রুত শিশুটিকে প্রাথমিক সেবা দিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। শিশুটির পরিচয় জানা যায়নি।
গত এক মাসের কথাই যদি ধরি, এ রকম আরও কতগুলো খবর পড়তে হয়েছে তার হিসাব নেই। সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানকে পলিব্যাগে ভরে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে সন্তানের জন্মের পর মা নিজেই পালিয়ে গেছেন। একজন ডাক্তার ফেসবুক পোস্টের মাধ্য়মে জানিয়েছেন, এক নবজাতকের জন্মের পর একটি কঠিন অসুখ দেখা দেয়। বাবা-মা চিকিৎসা করাতে চাননি। সন্তানটিকে হাসপাতালে ফেলে বাড়ি চলে যান। হাসপাতাল নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চেষ্টা করেছে শিশুটিকে বাঁচাতে, কিন্তু সম্ভব হয়নি। সে মৃত্য়ুর কোলে ঢলে পড়ে। নবজাতকের মৃতদেহ নেওয়ার জন্য তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাঁরা কেউ আসতে রাজি হননি। কী বীভৎস তাই না? ভাবতেই গায়ে শীতকাঁটা দিচ্ছে আমার, হয়তো আপনাদেরও। আবার এমন জানা যায়, হাসপাতালের টয়লেটের ওয়াটার ট্যাংকে নবজাতককে ডুবিয়ে রেখে পালিয়ে গেছেন তারই নিজের মা।
ওপরের প্রতিটি ঘটনা বা খবরই চিরাচরিত সেই কথাটিকে মিথ্য়ে করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট, ‘মা’র মতো আপন আর কেউ হয় না।’ যদি তাই হয়, তাহলে যে শিশুটি আজ বা গতকাল পৃথিবীর আলো দেখল, তার স্থান ধানখেতে কেন। কেন সেখানে শিয়াল, কুকুর এসে আঁচড় কাটছে তার ফুলের মতো শরীরে? ময়লার স্তূপে পড়ে কাঁদছে কেন সে? কেন মা নিজেই চান তাঁর সন্তানটি মরে যাক!
অনেকেই হয়তো এর উত্তরে বলবেন, ‘উপায় ছিল না, তাই হয়তো’, অথবা ‘সেই নারী পরিস্থিতির শিকার’। যদি আমি আমার সাধারণ জ্ঞানবুদ্ধি নিয়ে উল্টোপথে হাঁটি, যদি বলি, এই শিশুগুলোর জীবন কোনো পরিস্থিতি নয়, বরং কারও ইচ্ছের ফল। সোজাসাপ্টাভাবে বললে, কোনো নারী, তিনি বিবাহিত হোন বা অবিবাহিত; স্বেচ্ছায় শারীরিক সম্পর্কে জড়ান বা ধর্ষণের শিকার হন; ঘটনা যাই হোক, তিনি যদি গর্ভকাল এড়াতে চান তাহলে আগে থেকেই তো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব ছিল। ২০২৫-এ এসে কোনো শিশু জন্মের পরে গিয়ে পরিত্যক্ত হবে, এ ঘটনা মেনে নেওয়া কঠিন। বাজারে বিভিন্ন রকমের জন্মনিরোধক পাওয়া যায়, অপরিকল্পিত গর্ভধারণের পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্য়ে অ্যাবরশনও কিন্তু করা যায়। ফলে যে নারী বা যে দম্পতি সন্তান চাইবেন না, তিনি কেন এসব উপায় বেছে নেন না? আর যদি সেই গর্ভস্থ সন্তান অনাকাঙ্ক্ষিতই হয়, সমাজের ভয়েই যদি জন্মের পর সন্তানকে ডাস্টবিনে, ওয়াটার ট্যাংকে ফেলে দিতে হয়, তাহলে ৯ মাস ১০ দিন ধরে তাকে গর্ভে রেখেছেনই কীভাবে, এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাই না। যে নারী সবার চোখের সামনে নিজের গর্ভকাল পার করে ফেলতে পারেন, তিনি কিনা সমাজের দোহাই দিয়ে সদ্য় জন্মানো সন্তানকে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছেন? কথা এখানেই শেষ নয়, আরও আছে।
নিজের সন্তানকে হত্য়া করার আরও একটি কারণ পাওয়া যায়। হয়তো সেই নারী নতুন আরেকটি সম্পর্কে জড়িয়েছেন। আর সেই সম্পর্ক সফল করতে হলে সন্তান নামের বাহুল্য না থাকাই হয়তো শ্রেয় বলে ভাবেন তিনি। আমার মতে, সেখানেও তো উপায় রয়েছে। এমন অনেক নিঃসন্তান মা রয়েছেন যাঁরা দিনের পর দিন মা ডাকটি শুনতে চান। এমন নিরাপদ কোনো পরিবার খুঁজে সন্তানকে দত্তক দিয়ে দিলেই তো হয়। হত্য়ার দায় না নিয়ে জীবনসঙ্গীকে ডিভোর্স ও সন্তানকে দত্তক দিলে নিজের জীবনটাও নির্বিঘ্নে কাটানো যায়। ওই জীবনগুলোও বেঁচে থাকার নতুন কারণ খুঁজে পায়।
একজন মা নিজের সন্তানের জীবননাশকারী আরও একটি কারণে হয়ে ওঠেন। এই কারণটি ২০২৫ সালে এসেও অনেকের কাছে হাস্য়রসের বিষয়। তা হলো–পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন। চিকিৎসকদের মতে, বিশ্বজুড়ে সন্তান প্রসবের পর প্রতি ১০০ জনে ৮৫ জন এই জটিলতায় ভোগেন। আবার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক হয়ে যান অনেকে। কিন্তু যাঁরা স্বাভাবিক হতে পারেন না, তাঁদের ক্ষেত্রেই ঘটে অঘটন। বেবি ব্লু থেকে সৃষ্টি হয় তীব্র হতাশার, তারপর তা রূপ নেয় পোস্টপার্টাম সাইকোসিসে। এসব ক্ষেত্রে মা নিজের সন্তানকে হত্য়া পর্যন্ত করতে পারেন। এমনিতেও খেয়াল করলে দেখবেন, একজন মা তাঁর সন্তানের সঙ্গে যত ধরনের বিরূপ আচরণ করেন, তার অন্যতম মূল কারণ পারিবারিক অসহযোগিতা। আমাদের দেশে এই সংকট আরও প্রবল। বেশির ভাগ পরিবারেই দেখা যায়, বাড়ির সব কাজ ও সন্তান লালন-পালনের প্রতিটি বিষয় মায়ের কাঁধে চেপে বসে আছে। ফলে দিন শেষে, তিনিও ভারসাম্য় হারাচ্ছেন। চোটপাট করছেন অবুঝ শিশুটির ওপর।
তবে যে কথা দিয়ে এই লেখার শুরু, তাতে একটা কথাই বলতে ইচ্ছা হচ্ছে; নিজেদের কাছে একটা আশা রাখতে ইচ্ছা হচ্ছে, তা হলো–যদি কেউ সন্তান না চান, তাকে সুন্দর একটা জীবন দেওয়ার ইচ্ছা না থাকে বা বুঝে থাকেন পৃথিবীতে এলে তাকে অবহেলাই পেতে হবে; তাহলে তাকে পৃথিবীতে আসার পথ না দেখানোই ভালো। যে শিশু নিজের ইচ্ছায় পৃথিবীতে আসে না, তাকে আপনি তো আপনার ইচ্ছাতে হত্য়া করতে পারেন না। হাওয়ায় ভেসে আসা নবজাতকের কান্না, শিয়ালের আঁচড়ে কেঁপে ওঠা তার শরীর, জলের বুদ্বুদে মিশে যাওয়া তার বুকের মৃদু ধুকপুক শব্দ প্রকৃতিতে যে অভিশাপ ঢেলে দেয়। প্রকৃতি সব মনে রাখে। সেও তো সব কড়ায়-গন্ডায় ফিরিয়ে দেয়। কী, দেয় না?

ঠিক কোথা থেকে শুরু করব বুঝে উঠতে পারছি না। ভেতরের তোলপাড়ের কারণেই লিখি লিখি করে লেখা হয়ে উঠছিল না লেখাটা। গত মাসের কথা, মানে নভেম্বর; ফেসবুকের নিউজফিডে একটি খবর ভেসে আসে। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের জারুল্লাপুর গ্রামের ধানখেত থেকে একটি নবজাত শিশুকে উদ্ধার করা হয়। শিশুটির কান্না শুনে একজন কৃষক তাকে উদ্ধার করেন। পরে এলাকাবাসীর সহায়তা নিয়ে দ্রুত শিশুটিকে প্রাথমিক সেবা দিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। শিশুটির পরিচয় জানা যায়নি।
গত এক মাসের কথাই যদি ধরি, এ রকম আরও কতগুলো খবর পড়তে হয়েছে তার হিসাব নেই। সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানকে পলিব্যাগে ভরে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে সন্তানের জন্মের পর মা নিজেই পালিয়ে গেছেন। একজন ডাক্তার ফেসবুক পোস্টের মাধ্য়মে জানিয়েছেন, এক নবজাতকের জন্মের পর একটি কঠিন অসুখ দেখা দেয়। বাবা-মা চিকিৎসা করাতে চাননি। সন্তানটিকে হাসপাতালে ফেলে বাড়ি চলে যান। হাসপাতাল নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চেষ্টা করেছে শিশুটিকে বাঁচাতে, কিন্তু সম্ভব হয়নি। সে মৃত্য়ুর কোলে ঢলে পড়ে। নবজাতকের মৃতদেহ নেওয়ার জন্য তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাঁরা কেউ আসতে রাজি হননি। কী বীভৎস তাই না? ভাবতেই গায়ে শীতকাঁটা দিচ্ছে আমার, হয়তো আপনাদেরও। আবার এমন জানা যায়, হাসপাতালের টয়লেটের ওয়াটার ট্যাংকে নবজাতককে ডুবিয়ে রেখে পালিয়ে গেছেন তারই নিজের মা।
ওপরের প্রতিটি ঘটনা বা খবরই চিরাচরিত সেই কথাটিকে মিথ্য়ে করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট, ‘মা’র মতো আপন আর কেউ হয় না।’ যদি তাই হয়, তাহলে যে শিশুটি আজ বা গতকাল পৃথিবীর আলো দেখল, তার স্থান ধানখেতে কেন। কেন সেখানে শিয়াল, কুকুর এসে আঁচড় কাটছে তার ফুলের মতো শরীরে? ময়লার স্তূপে পড়ে কাঁদছে কেন সে? কেন মা নিজেই চান তাঁর সন্তানটি মরে যাক!
অনেকেই হয়তো এর উত্তরে বলবেন, ‘উপায় ছিল না, তাই হয়তো’, অথবা ‘সেই নারী পরিস্থিতির শিকার’। যদি আমি আমার সাধারণ জ্ঞানবুদ্ধি নিয়ে উল্টোপথে হাঁটি, যদি বলি, এই শিশুগুলোর জীবন কোনো পরিস্থিতি নয়, বরং কারও ইচ্ছের ফল। সোজাসাপ্টাভাবে বললে, কোনো নারী, তিনি বিবাহিত হোন বা অবিবাহিত; স্বেচ্ছায় শারীরিক সম্পর্কে জড়ান বা ধর্ষণের শিকার হন; ঘটনা যাই হোক, তিনি যদি গর্ভকাল এড়াতে চান তাহলে আগে থেকেই তো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব ছিল। ২০২৫-এ এসে কোনো শিশু জন্মের পরে গিয়ে পরিত্যক্ত হবে, এ ঘটনা মেনে নেওয়া কঠিন। বাজারে বিভিন্ন রকমের জন্মনিরোধক পাওয়া যায়, অপরিকল্পিত গর্ভধারণের পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্য়ে অ্যাবরশনও কিন্তু করা যায়। ফলে যে নারী বা যে দম্পতি সন্তান চাইবেন না, তিনি কেন এসব উপায় বেছে নেন না? আর যদি সেই গর্ভস্থ সন্তান অনাকাঙ্ক্ষিতই হয়, সমাজের ভয়েই যদি জন্মের পর সন্তানকে ডাস্টবিনে, ওয়াটার ট্যাংকে ফেলে দিতে হয়, তাহলে ৯ মাস ১০ দিন ধরে তাকে গর্ভে রেখেছেনই কীভাবে, এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাই না। যে নারী সবার চোখের সামনে নিজের গর্ভকাল পার করে ফেলতে পারেন, তিনি কিনা সমাজের দোহাই দিয়ে সদ্য় জন্মানো সন্তানকে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছেন? কথা এখানেই শেষ নয়, আরও আছে।
নিজের সন্তানকে হত্য়া করার আরও একটি কারণ পাওয়া যায়। হয়তো সেই নারী নতুন আরেকটি সম্পর্কে জড়িয়েছেন। আর সেই সম্পর্ক সফল করতে হলে সন্তান নামের বাহুল্য না থাকাই হয়তো শ্রেয় বলে ভাবেন তিনি। আমার মতে, সেখানেও তো উপায় রয়েছে। এমন অনেক নিঃসন্তান মা রয়েছেন যাঁরা দিনের পর দিন মা ডাকটি শুনতে চান। এমন নিরাপদ কোনো পরিবার খুঁজে সন্তানকে দত্তক দিয়ে দিলেই তো হয়। হত্য়ার দায় না নিয়ে জীবনসঙ্গীকে ডিভোর্স ও সন্তানকে দত্তক দিলে নিজের জীবনটাও নির্বিঘ্নে কাটানো যায়। ওই জীবনগুলোও বেঁচে থাকার নতুন কারণ খুঁজে পায়।
একজন মা নিজের সন্তানের জীবননাশকারী আরও একটি কারণে হয়ে ওঠেন। এই কারণটি ২০২৫ সালে এসেও অনেকের কাছে হাস্য়রসের বিষয়। তা হলো–পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন। চিকিৎসকদের মতে, বিশ্বজুড়ে সন্তান প্রসবের পর প্রতি ১০০ জনে ৮৫ জন এই জটিলতায় ভোগেন। আবার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক হয়ে যান অনেকে। কিন্তু যাঁরা স্বাভাবিক হতে পারেন না, তাঁদের ক্ষেত্রেই ঘটে অঘটন। বেবি ব্লু থেকে সৃষ্টি হয় তীব্র হতাশার, তারপর তা রূপ নেয় পোস্টপার্টাম সাইকোসিসে। এসব ক্ষেত্রে মা নিজের সন্তানকে হত্য়া পর্যন্ত করতে পারেন। এমনিতেও খেয়াল করলে দেখবেন, একজন মা তাঁর সন্তানের সঙ্গে যত ধরনের বিরূপ আচরণ করেন, তার অন্যতম মূল কারণ পারিবারিক অসহযোগিতা। আমাদের দেশে এই সংকট আরও প্রবল। বেশির ভাগ পরিবারেই দেখা যায়, বাড়ির সব কাজ ও সন্তান লালন-পালনের প্রতিটি বিষয় মায়ের কাঁধে চেপে বসে আছে। ফলে দিন শেষে, তিনিও ভারসাম্য় হারাচ্ছেন। চোটপাট করছেন অবুঝ শিশুটির ওপর।
তবে যে কথা দিয়ে এই লেখার শুরু, তাতে একটা কথাই বলতে ইচ্ছা হচ্ছে; নিজেদের কাছে একটা আশা রাখতে ইচ্ছা হচ্ছে, তা হলো–যদি কেউ সন্তান না চান, তাকে সুন্দর একটা জীবন দেওয়ার ইচ্ছা না থাকে বা বুঝে থাকেন পৃথিবীতে এলে তাকে অবহেলাই পেতে হবে; তাহলে তাকে পৃথিবীতে আসার পথ না দেখানোই ভালো। যে শিশু নিজের ইচ্ছায় পৃথিবীতে আসে না, তাকে আপনি তো আপনার ইচ্ছাতে হত্য়া করতে পারেন না। হাওয়ায় ভেসে আসা নবজাতকের কান্না, শিয়ালের আঁচড়ে কেঁপে ওঠা তার শরীর, জলের বুদ্বুদে মিশে যাওয়া তার বুকের মৃদু ধুকপুক শব্দ প্রকৃতিতে যে অভিশাপ ঢেলে দেয়। প্রকৃতি সব মনে রাখে। সেও তো সব কড়ায়-গন্ডায় ফিরিয়ে দেয়। কী, দেয় না?

ফওজিয়া মোসলেম বাংলাদেশের নারী মুক্তি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের একজন নিরলস যোদ্ধা। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি। পেশায় চিকিৎসক ছিলেন।’ ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধসহ প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক সব আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন।
২৫ মে ২০২৫
পাকিস্তানের বিচারপতি কায়ানির নামে একটা রসিকতা চালু আছে। তিনি নাকি বলেছিলেন, সব দেশের একটি সেনাবাহিনী আছে, আর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রয়েছে একটি দেশ। পাকিস্তানের ইতিহাসের দিকে নজর রাখলেই একের পর এক জেনারেল বেরিয়ে আসবে। গণতন্ত্র সেখানে সোনার হরিণ হিসেবেই রয়ে গেছে, বাস্তবজীবনে তার দেখা মেলা ভার।
৩ ঘণ্টা আগে
‘ক্রেইনস আর ফ্লাইং’, ‘ব্যালাড অব এ সোলজার’, ‘গানস অব নাভারন’, ‘সোফিস চয়েজ’-এর মতো চলচ্চিত্র হয়তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তৈরি হয়নি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই। শুরুর দিকের সিনেমাগুলোয় স্থূলতার সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যিক উপাদান যুক্ত হয়েছে খুব দ্রুত।
৩ ঘণ্টা আগে
কুকুর ও বিড়াল মানুষের সংস্পর্শ ছাড়া থাকতে পারে না। বনজঙ্গলে রেখে এলেও তারা লোকালয়ে চলে আসে। কুকুর ও বিড়ালের লোকালয়ে চলে আসার কারণ হিসেবে বলা হয় যে তারা মানুষের খাবার খেয়ে, ভালোবাসায় বেঁচে থাকে। ফলে মানুষের থেকে দূরে থাকতে তারা পারে না।
৩ ঘণ্টা আগে