মৃত্যুঞ্জয় রায়

ঢাকা শহরে পাঁচতলা ভবনের একটি বাসায় থাকি। কয়েক দিন আগে ভূমিকম্পের একটা প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেয়ে বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। তাৎক্ষণিকভাবে মনে হলো, এক্ষুনি ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে যাওয়া উচিত। পরক্ষণেই মনে হলো, নিচে যাব ঠিক আছে, কিন্তু নিচে গিয়ে দাঁড়াব কোথায়? গায়ে গায়ে দালানগুলো দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তায় নামলে যদি সেগুলো ভেঙে পড়ে! ভেঙে না পড়লেও যদি একটা ছাদের রেলিং ভেঙে মাথায় পড়ে! রাস্তায় থাকা তো সেই ঝুঁকিরই ব্যাপার। মুহূর্তের মধ্যে চিন্তা করলাম, আশপাশে ফাঁকা বড় মাঠ কোথায়? কাছাকাছি তার একটিও নেই। তার চেয়ে ঘরে কোনো মজবুত বিমের নিচে থাকাটাই নিরাপদ ভেবে সেখানে দাঁড়িয়ে রইলাম একটি কলাম ধরে। কাঁপাকাঁপি করে ফ্রিজ সরল, আলমারি নড়ল। আর একটু জোরে হলে রক্ষে ছিল না। ঢাকা শহর থেকে লাশ উদ্ধারের মানুষ পাওয়া যেত না। এই হলো আমাদের প্রিয় ঢাকা শহর।
একটু খালি জায়গাও আমরা আমাদের রক্ষার জন্য ছেড়ে দিইনি। নিজেদের জন্য যখন ছাড়িনি, তখন গাছপালার জন্য কেন আর ছাড়ব? মহল্লায় মহল্লায় কোনো বড় মাঠ নেই। যে রাস্তা দিয়েই হেঁটে যাই, সে রাস্তাতেই কেবল দালানকোঠার জঞ্জাল, পাকা রাস্তা আর ফুটপাত। যেসব রাস্তার ধারেও যে গাছপালা আছে, সেগুলোরও গোড়া পর্যন্ত পাকা করে দেওয়া হয়েছে। এ যেন একটি গাছকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে বলে তার গলা টিপে হত্যার সব আয়োজন আমরা সেরে রেখেছি। গাছটা যে আকাশের দিকে বাড়বে তারও জো নেই। রাস্তার ধারে বিদ্যুতের খুঁটি ও তার গাছপালার সে সাধকেও খুন করেছে। বৃষ্টি হলে সে বৃষ্টির পানিতে যে মাটি ভিজবে, চারদিকে কংক্রিটে চাপা পড়া মাটির সে সুযোগও নেই। গাছগুলো তো দিনের পর দিন পানির পিপাসায় ধুঁকছে। রাস্তায় বা সরকারি জায়গাগুলোয় লাগানো গাছগুলোতে কেউ পানি দেয় না, খাবার দেয় না। মানুষ গাছকে না দেখলেও গাছ তো মানুষকে না দেখে পারে না। তাই সে তার সব শক্তি দিয়ে পৃথিবীকে সবুজ ও বাসযোগ্য রাখতে সব সময় চেষ্টা করে যাচ্ছে। অথচ সেই উপকারী বন্ধুদেরই আমরা জায়গা না দিয়ে জায়গা করে দিচ্ছি দালানকোঠাদের। দিন দিন সংকুচিত হয়ে পড়ছে ঢাকাসহ সব শহরের সবুজ এলাকা। কেবল কংক্রিট আর কঠিন মমতাহীনতার গল্পই যেন রোজ আমরা লিখে যাচ্ছি। অথচ একটি শহরকে ভালো রাখতে হলে, শহরের মানুষকে সুস্থ রাখতে হলে প্রতিটি শহরেই পরিমিত পরিমাণে খোলা জায়গা থাকা দরকার।
শহরে মানুষ বাড়লে সে অনুপাতে তাদের জন্য খোলা জায়গার পরিমাণও বাড়া উচিত। কিন্তু হচ্ছে ঠিক তার উল্টোটা। শহরে মানুষ যত বাড়ছে, খালি বা খোলা জায়গা তত কমছে, জলাশয়গুলো ভরাট হচ্ছে, খাল সরু হতে হতে একসময় মানচিত্রে থাকলেও বাস্তবে থাকছে না। অথচ প্রতিটি শহর ও শহরের মানুষকে ভালো রাখতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে সবুজ ও উন্মুক্ত পাবলিক স্পেস থাকা দরকার। এসব খোলা জায়গা নগরবাসীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া এগুলো নগরবাসীকে সামাজিক সংহতি গড়ে তুলতেও সাহায্য করে। এমনকি এরূপ খোলা জায়গা ও সবুজ অঞ্চল থাকলে তা নগরের বায়ুদূষণ কমায় ও মানুষকে নানা রকম আর্থিক সুবিধা দেয়। কেননা, মানুষ সুস্থ থাকলে স্বভাবতই সে চিকিৎসকের কাছে যাবে না। ফলে নগরবাসী প্রতিবছর যে বিপুল পরিমাণ টাকা চিকিৎসার পেছনে ব্যয় করছে তা সাশ্রয় হবে, যা তাদের জীবনমান বাড়াতে সাহায্য করবে।
বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ এখন বাস করে শহরে। এই সংখ্যা ২০৩০ সালে হবে ৬০ শতাংশ ও ২০৫০ সালে হবে ৭০ শতাংশ। শহর এলাকার অবস্থা ও মান তাই বিশ্বের অনেক মানুষের সুস্থতার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। স্বাস্থ্য সচেতন নগর গড়তে না পারলে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই অসুস্থ থাকবে। শহর কেবল শুধু মানুষের থাকার স্থানই না, বরং সেটি উদ্ভাবন, বিজ্ঞান, বাণিজ্য, রাজনীতি, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি চর্চারও কেন্দ্রস্থল। তাই শহরের মানুষেরা ভালো না থাকলে এসব বিষয়ও বিকশিত হবে না, সভ্যতার বিকাশও রুদ্ধ হবে। তাই প্রতিটি শহরেই প্রয়োজনীয় পরিমাণে পাবলিক স্পেস থাকতে হবে।
পাবলিক স্পেস হলো যেখানে জনসাধারণের প্রবেশ উন্মুক্ত এবং সে জায়গাকে উপভোগ করার জন্য জনগণকে কোনো মূল্য দিতে হয় না। এসব স্থান হলো জনসাধারণের বিভিন্ন কার্যকলাপ ও বিনোদনের একটি কেন্দ্র। ঢাকা শহরের প্রধান পাবলিক স্পেসগুলো হলো রমনা, সোহরাওয়ার্দী, ওসমানী, চন্দ্রিমা, বলধা ও উদ্ভিদ উদ্যান এবং ধানমন্ডি লেক, হাতিরঝিল ও গুলশান লেক। দুটি সিটি করপোরেশনের আওতায় ৩০৬ বর্গকিলোমিটারের ঢাকা শহরে বাস করে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ। তার মানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ঢাকা শহরে বাস করে প্রায় ৭৫ হাজার মানুষ। অথচ এ শহরে খেলার মাঠ আছে মাত্র ৩৩২ একরে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১০টি ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৫টি ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ তথা খোলা জায়গা নেই। শহরে একজন মানুষকে সুস্থভাবে বাঁচতে হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে জনপ্রতি ৯ বর্গমিটার খোলা জায়গার প্রয়োজন। ঢাকা শহরে যা আছে ১ বর্গমিটারেরও কম। ঢাকা শহরে প্রতি বর্গফুটের হিসাবে যেখানে জমি বেচাকেনা হয় সেখানে বর্গকিলোমিটারের হিসাবে ফাঁকা জায়গা বা পাবলিক স্পেস থাকা দুরাশা।
জাতিসংঘের ইউএন-হ্যাবিটেটের তথ্য অনুযায়ী একটি শহরে মোট আয়তনের ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ জায়গা পাবলিক স্পেস হিসেবে থাকা উচিত, যার মধ্যে ৩০-৩৫ শতাংশ থাকবে রাস্তাঘাট ও ফুটপাত এবং ১৫-২০ শতাংশ জায়গা থাকবে পাবলিক স্পেস। প্রাচীনকালে ঢাকা শহরের পাবলিক স্পেস ছিল অবারিত, ধানখেতও ছিল। মোগল আমলের আগে পুরান ঢাকা একটি সহজাত পদ্ধতিতে বিকশিত হয়েছিল। ঐতিহ্যগতভাবে ঢাকাবাসী খোলামেলা জায়গায় সামাজিকীকরণের অভ্যাস পেয়েছিল। এর ফলে একটি ঐতিহ্যবাহী সামাজিক স্থানবিন্যাস গড়ে উঠেছিল। গলি (রাস্তা), মোড় (নোড), মহল্লা (পাড়া) ও চক (বাজার)। রাস্তার ধারে মহল্লাগুলো রৈখিকভাবে তৈরি করা হয়েছিল। রাস্তাগুলো ছিল মহল্লার কেন্দ্রবিন্দু। এগুলো ছিল আঁকাবাঁকা, অনিয়ত এক জটিল নেটওয়ার্ক, যেগুলো গিয়ে মিশেছিল চকে। ঢাকা একসময় প্রশান্তির শহর হিসেবে পরিচিত ছিল। সে শহরে ছিল মনোরম উদ্যান, পরিষ্কার রাস্তা ও সবুজের সমারোহ। এখন তা হয়েছে ইট ও কংক্রিটের জঙ্গল। শহরের পুরোনো অংশে ৫ শতাংশেরও কম খোলা জায়গা রয়েছে, নতুন অংশে রয়েছে ১২ শতাংশ। মোট খোলা জায়গার পরিমাণ ৫ হাজার একরের বেশি হবে না।
এখানে দুটি বিষয়, একটি হলো খোলা জায়গা বাড়ানো বা রাখা, অন্যটি হলো খোলা জায়গার সদ্ব্যবহার ও সঠিক ব্যবস্থাপনা। একটি সুস্থ শহর গড়ে তুলতে হলে একটি আদর্শ স্বাস্থ্যবান শহরের প্রায় অর্ধেকটায় থাকবে মানুষ, বাকি অর্ধেকে থাকবে রাস্তাঘাট, উদ্যান, জলাশয়, খেলার মাঠ ইত্যাদি। বর্তমান বাস্তবতায় ঢাকা শহরে যা অসম্ভব। তাই নজর দিতে হবে যতটুকু খোলা জায়গা আছে সেটুকুও যেন সংকুচিত না হয় এবং সেসব জায়গা যেন প্রকৃত পাবলিক স্পেস হয়ে ওঠে, যেখানে থাকবে সবার সহজ প্রবেশাধিকার, নিরাপত্তা ও সৌন্দর্য। বিশেষজ্ঞজনেরা ঢাকা শহরের পাবলিক স্পেস নিশ্চিত করতে চারটি মুখ্য পরামর্শ দিয়েছেন, এগুলো হলো, বিদ্যমান উন্মুক্ত স্থান পুনরুদ্ধার, উদ্যানগুলোর উন্নয়ন, রাস্তাগুলোকে নাগরিক স্থান হিসেবে তৈরি করা এবং জলাশয়গুলোকে পুনরুজ্জীবিত করা। নগরবিদেরা বিষয়টি ভেবে দেখবেন কি?
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও পরিবেশবিষয়ক লেখক

ঢাকা শহরে পাঁচতলা ভবনের একটি বাসায় থাকি। কয়েক দিন আগে ভূমিকম্পের একটা প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেয়ে বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। তাৎক্ষণিকভাবে মনে হলো, এক্ষুনি ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে যাওয়া উচিত। পরক্ষণেই মনে হলো, নিচে যাব ঠিক আছে, কিন্তু নিচে গিয়ে দাঁড়াব কোথায়? গায়ে গায়ে দালানগুলো দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তায় নামলে যদি সেগুলো ভেঙে পড়ে! ভেঙে না পড়লেও যদি একটা ছাদের রেলিং ভেঙে মাথায় পড়ে! রাস্তায় থাকা তো সেই ঝুঁকিরই ব্যাপার। মুহূর্তের মধ্যে চিন্তা করলাম, আশপাশে ফাঁকা বড় মাঠ কোথায়? কাছাকাছি তার একটিও নেই। তার চেয়ে ঘরে কোনো মজবুত বিমের নিচে থাকাটাই নিরাপদ ভেবে সেখানে দাঁড়িয়ে রইলাম একটি কলাম ধরে। কাঁপাকাঁপি করে ফ্রিজ সরল, আলমারি নড়ল। আর একটু জোরে হলে রক্ষে ছিল না। ঢাকা শহর থেকে লাশ উদ্ধারের মানুষ পাওয়া যেত না। এই হলো আমাদের প্রিয় ঢাকা শহর।
একটু খালি জায়গাও আমরা আমাদের রক্ষার জন্য ছেড়ে দিইনি। নিজেদের জন্য যখন ছাড়িনি, তখন গাছপালার জন্য কেন আর ছাড়ব? মহল্লায় মহল্লায় কোনো বড় মাঠ নেই। যে রাস্তা দিয়েই হেঁটে যাই, সে রাস্তাতেই কেবল দালানকোঠার জঞ্জাল, পাকা রাস্তা আর ফুটপাত। যেসব রাস্তার ধারেও যে গাছপালা আছে, সেগুলোরও গোড়া পর্যন্ত পাকা করে দেওয়া হয়েছে। এ যেন একটি গাছকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে বলে তার গলা টিপে হত্যার সব আয়োজন আমরা সেরে রেখেছি। গাছটা যে আকাশের দিকে বাড়বে তারও জো নেই। রাস্তার ধারে বিদ্যুতের খুঁটি ও তার গাছপালার সে সাধকেও খুন করেছে। বৃষ্টি হলে সে বৃষ্টির পানিতে যে মাটি ভিজবে, চারদিকে কংক্রিটে চাপা পড়া মাটির সে সুযোগও নেই। গাছগুলো তো দিনের পর দিন পানির পিপাসায় ধুঁকছে। রাস্তায় বা সরকারি জায়গাগুলোয় লাগানো গাছগুলোতে কেউ পানি দেয় না, খাবার দেয় না। মানুষ গাছকে না দেখলেও গাছ তো মানুষকে না দেখে পারে না। তাই সে তার সব শক্তি দিয়ে পৃথিবীকে সবুজ ও বাসযোগ্য রাখতে সব সময় চেষ্টা করে যাচ্ছে। অথচ সেই উপকারী বন্ধুদেরই আমরা জায়গা না দিয়ে জায়গা করে দিচ্ছি দালানকোঠাদের। দিন দিন সংকুচিত হয়ে পড়ছে ঢাকাসহ সব শহরের সবুজ এলাকা। কেবল কংক্রিট আর কঠিন মমতাহীনতার গল্পই যেন রোজ আমরা লিখে যাচ্ছি। অথচ একটি শহরকে ভালো রাখতে হলে, শহরের মানুষকে সুস্থ রাখতে হলে প্রতিটি শহরেই পরিমিত পরিমাণে খোলা জায়গা থাকা দরকার।
শহরে মানুষ বাড়লে সে অনুপাতে তাদের জন্য খোলা জায়গার পরিমাণও বাড়া উচিত। কিন্তু হচ্ছে ঠিক তার উল্টোটা। শহরে মানুষ যত বাড়ছে, খালি বা খোলা জায়গা তত কমছে, জলাশয়গুলো ভরাট হচ্ছে, খাল সরু হতে হতে একসময় মানচিত্রে থাকলেও বাস্তবে থাকছে না। অথচ প্রতিটি শহর ও শহরের মানুষকে ভালো রাখতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে সবুজ ও উন্মুক্ত পাবলিক স্পেস থাকা দরকার। এসব খোলা জায়গা নগরবাসীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া এগুলো নগরবাসীকে সামাজিক সংহতি গড়ে তুলতেও সাহায্য করে। এমনকি এরূপ খোলা জায়গা ও সবুজ অঞ্চল থাকলে তা নগরের বায়ুদূষণ কমায় ও মানুষকে নানা রকম আর্থিক সুবিধা দেয়। কেননা, মানুষ সুস্থ থাকলে স্বভাবতই সে চিকিৎসকের কাছে যাবে না। ফলে নগরবাসী প্রতিবছর যে বিপুল পরিমাণ টাকা চিকিৎসার পেছনে ব্যয় করছে তা সাশ্রয় হবে, যা তাদের জীবনমান বাড়াতে সাহায্য করবে।
বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ এখন বাস করে শহরে। এই সংখ্যা ২০৩০ সালে হবে ৬০ শতাংশ ও ২০৫০ সালে হবে ৭০ শতাংশ। শহর এলাকার অবস্থা ও মান তাই বিশ্বের অনেক মানুষের সুস্থতার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। স্বাস্থ্য সচেতন নগর গড়তে না পারলে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই অসুস্থ থাকবে। শহর কেবল শুধু মানুষের থাকার স্থানই না, বরং সেটি উদ্ভাবন, বিজ্ঞান, বাণিজ্য, রাজনীতি, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি চর্চারও কেন্দ্রস্থল। তাই শহরের মানুষেরা ভালো না থাকলে এসব বিষয়ও বিকশিত হবে না, সভ্যতার বিকাশও রুদ্ধ হবে। তাই প্রতিটি শহরেই প্রয়োজনীয় পরিমাণে পাবলিক স্পেস থাকতে হবে।
পাবলিক স্পেস হলো যেখানে জনসাধারণের প্রবেশ উন্মুক্ত এবং সে জায়গাকে উপভোগ করার জন্য জনগণকে কোনো মূল্য দিতে হয় না। এসব স্থান হলো জনসাধারণের বিভিন্ন কার্যকলাপ ও বিনোদনের একটি কেন্দ্র। ঢাকা শহরের প্রধান পাবলিক স্পেসগুলো হলো রমনা, সোহরাওয়ার্দী, ওসমানী, চন্দ্রিমা, বলধা ও উদ্ভিদ উদ্যান এবং ধানমন্ডি লেক, হাতিরঝিল ও গুলশান লেক। দুটি সিটি করপোরেশনের আওতায় ৩০৬ বর্গকিলোমিটারের ঢাকা শহরে বাস করে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ। তার মানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ঢাকা শহরে বাস করে প্রায় ৭৫ হাজার মানুষ। অথচ এ শহরে খেলার মাঠ আছে মাত্র ৩৩২ একরে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১০টি ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৫টি ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ তথা খোলা জায়গা নেই। শহরে একজন মানুষকে সুস্থভাবে বাঁচতে হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে জনপ্রতি ৯ বর্গমিটার খোলা জায়গার প্রয়োজন। ঢাকা শহরে যা আছে ১ বর্গমিটারেরও কম। ঢাকা শহরে প্রতি বর্গফুটের হিসাবে যেখানে জমি বেচাকেনা হয় সেখানে বর্গকিলোমিটারের হিসাবে ফাঁকা জায়গা বা পাবলিক স্পেস থাকা দুরাশা।
জাতিসংঘের ইউএন-হ্যাবিটেটের তথ্য অনুযায়ী একটি শহরে মোট আয়তনের ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ জায়গা পাবলিক স্পেস হিসেবে থাকা উচিত, যার মধ্যে ৩০-৩৫ শতাংশ থাকবে রাস্তাঘাট ও ফুটপাত এবং ১৫-২০ শতাংশ জায়গা থাকবে পাবলিক স্পেস। প্রাচীনকালে ঢাকা শহরের পাবলিক স্পেস ছিল অবারিত, ধানখেতও ছিল। মোগল আমলের আগে পুরান ঢাকা একটি সহজাত পদ্ধতিতে বিকশিত হয়েছিল। ঐতিহ্যগতভাবে ঢাকাবাসী খোলামেলা জায়গায় সামাজিকীকরণের অভ্যাস পেয়েছিল। এর ফলে একটি ঐতিহ্যবাহী সামাজিক স্থানবিন্যাস গড়ে উঠেছিল। গলি (রাস্তা), মোড় (নোড), মহল্লা (পাড়া) ও চক (বাজার)। রাস্তার ধারে মহল্লাগুলো রৈখিকভাবে তৈরি করা হয়েছিল। রাস্তাগুলো ছিল মহল্লার কেন্দ্রবিন্দু। এগুলো ছিল আঁকাবাঁকা, অনিয়ত এক জটিল নেটওয়ার্ক, যেগুলো গিয়ে মিশেছিল চকে। ঢাকা একসময় প্রশান্তির শহর হিসেবে পরিচিত ছিল। সে শহরে ছিল মনোরম উদ্যান, পরিষ্কার রাস্তা ও সবুজের সমারোহ। এখন তা হয়েছে ইট ও কংক্রিটের জঙ্গল। শহরের পুরোনো অংশে ৫ শতাংশেরও কম খোলা জায়গা রয়েছে, নতুন অংশে রয়েছে ১২ শতাংশ। মোট খোলা জায়গার পরিমাণ ৫ হাজার একরের বেশি হবে না।
এখানে দুটি বিষয়, একটি হলো খোলা জায়গা বাড়ানো বা রাখা, অন্যটি হলো খোলা জায়গার সদ্ব্যবহার ও সঠিক ব্যবস্থাপনা। একটি সুস্থ শহর গড়ে তুলতে হলে একটি আদর্শ স্বাস্থ্যবান শহরের প্রায় অর্ধেকটায় থাকবে মানুষ, বাকি অর্ধেকে থাকবে রাস্তাঘাট, উদ্যান, জলাশয়, খেলার মাঠ ইত্যাদি। বর্তমান বাস্তবতায় ঢাকা শহরে যা অসম্ভব। তাই নজর দিতে হবে যতটুকু খোলা জায়গা আছে সেটুকুও যেন সংকুচিত না হয় এবং সেসব জায়গা যেন প্রকৃত পাবলিক স্পেস হয়ে ওঠে, যেখানে থাকবে সবার সহজ প্রবেশাধিকার, নিরাপত্তা ও সৌন্দর্য। বিশেষজ্ঞজনেরা ঢাকা শহরের পাবলিক স্পেস নিশ্চিত করতে চারটি মুখ্য পরামর্শ দিয়েছেন, এগুলো হলো, বিদ্যমান উন্মুক্ত স্থান পুনরুদ্ধার, উদ্যানগুলোর উন্নয়ন, রাস্তাগুলোকে নাগরিক স্থান হিসেবে তৈরি করা এবং জলাশয়গুলোকে পুনরুজ্জীবিত করা। নগরবিদেরা বিষয়টি ভেবে দেখবেন কি?
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও পরিবেশবিষয়ক লেখক
মৃত্যুঞ্জয় রায়

ঢাকা শহরে পাঁচতলা ভবনের একটি বাসায় থাকি। কয়েক দিন আগে ভূমিকম্পের একটা প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেয়ে বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। তাৎক্ষণিকভাবে মনে হলো, এক্ষুনি ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে যাওয়া উচিত। পরক্ষণেই মনে হলো, নিচে যাব ঠিক আছে, কিন্তু নিচে গিয়ে দাঁড়াব কোথায়? গায়ে গায়ে দালানগুলো দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তায় নামলে যদি সেগুলো ভেঙে পড়ে! ভেঙে না পড়লেও যদি একটা ছাদের রেলিং ভেঙে মাথায় পড়ে! রাস্তায় থাকা তো সেই ঝুঁকিরই ব্যাপার। মুহূর্তের মধ্যে চিন্তা করলাম, আশপাশে ফাঁকা বড় মাঠ কোথায়? কাছাকাছি তার একটিও নেই। তার চেয়ে ঘরে কোনো মজবুত বিমের নিচে থাকাটাই নিরাপদ ভেবে সেখানে দাঁড়িয়ে রইলাম একটি কলাম ধরে। কাঁপাকাঁপি করে ফ্রিজ সরল, আলমারি নড়ল। আর একটু জোরে হলে রক্ষে ছিল না। ঢাকা শহর থেকে লাশ উদ্ধারের মানুষ পাওয়া যেত না। এই হলো আমাদের প্রিয় ঢাকা শহর।
একটু খালি জায়গাও আমরা আমাদের রক্ষার জন্য ছেড়ে দিইনি। নিজেদের জন্য যখন ছাড়িনি, তখন গাছপালার জন্য কেন আর ছাড়ব? মহল্লায় মহল্লায় কোনো বড় মাঠ নেই। যে রাস্তা দিয়েই হেঁটে যাই, সে রাস্তাতেই কেবল দালানকোঠার জঞ্জাল, পাকা রাস্তা আর ফুটপাত। যেসব রাস্তার ধারেও যে গাছপালা আছে, সেগুলোরও গোড়া পর্যন্ত পাকা করে দেওয়া হয়েছে। এ যেন একটি গাছকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে বলে তার গলা টিপে হত্যার সব আয়োজন আমরা সেরে রেখেছি। গাছটা যে আকাশের দিকে বাড়বে তারও জো নেই। রাস্তার ধারে বিদ্যুতের খুঁটি ও তার গাছপালার সে সাধকেও খুন করেছে। বৃষ্টি হলে সে বৃষ্টির পানিতে যে মাটি ভিজবে, চারদিকে কংক্রিটে চাপা পড়া মাটির সে সুযোগও নেই। গাছগুলো তো দিনের পর দিন পানির পিপাসায় ধুঁকছে। রাস্তায় বা সরকারি জায়গাগুলোয় লাগানো গাছগুলোতে কেউ পানি দেয় না, খাবার দেয় না। মানুষ গাছকে না দেখলেও গাছ তো মানুষকে না দেখে পারে না। তাই সে তার সব শক্তি দিয়ে পৃথিবীকে সবুজ ও বাসযোগ্য রাখতে সব সময় চেষ্টা করে যাচ্ছে। অথচ সেই উপকারী বন্ধুদেরই আমরা জায়গা না দিয়ে জায়গা করে দিচ্ছি দালানকোঠাদের। দিন দিন সংকুচিত হয়ে পড়ছে ঢাকাসহ সব শহরের সবুজ এলাকা। কেবল কংক্রিট আর কঠিন মমতাহীনতার গল্পই যেন রোজ আমরা লিখে যাচ্ছি। অথচ একটি শহরকে ভালো রাখতে হলে, শহরের মানুষকে সুস্থ রাখতে হলে প্রতিটি শহরেই পরিমিত পরিমাণে খোলা জায়গা থাকা দরকার।
শহরে মানুষ বাড়লে সে অনুপাতে তাদের জন্য খোলা জায়গার পরিমাণও বাড়া উচিত। কিন্তু হচ্ছে ঠিক তার উল্টোটা। শহরে মানুষ যত বাড়ছে, খালি বা খোলা জায়গা তত কমছে, জলাশয়গুলো ভরাট হচ্ছে, খাল সরু হতে হতে একসময় মানচিত্রে থাকলেও বাস্তবে থাকছে না। অথচ প্রতিটি শহর ও শহরের মানুষকে ভালো রাখতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে সবুজ ও উন্মুক্ত পাবলিক স্পেস থাকা দরকার। এসব খোলা জায়গা নগরবাসীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া এগুলো নগরবাসীকে সামাজিক সংহতি গড়ে তুলতেও সাহায্য করে। এমনকি এরূপ খোলা জায়গা ও সবুজ অঞ্চল থাকলে তা নগরের বায়ুদূষণ কমায় ও মানুষকে নানা রকম আর্থিক সুবিধা দেয়। কেননা, মানুষ সুস্থ থাকলে স্বভাবতই সে চিকিৎসকের কাছে যাবে না। ফলে নগরবাসী প্রতিবছর যে বিপুল পরিমাণ টাকা চিকিৎসার পেছনে ব্যয় করছে তা সাশ্রয় হবে, যা তাদের জীবনমান বাড়াতে সাহায্য করবে।
বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ এখন বাস করে শহরে। এই সংখ্যা ২০৩০ সালে হবে ৬০ শতাংশ ও ২০৫০ সালে হবে ৭০ শতাংশ। শহর এলাকার অবস্থা ও মান তাই বিশ্বের অনেক মানুষের সুস্থতার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। স্বাস্থ্য সচেতন নগর গড়তে না পারলে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই অসুস্থ থাকবে। শহর কেবল শুধু মানুষের থাকার স্থানই না, বরং সেটি উদ্ভাবন, বিজ্ঞান, বাণিজ্য, রাজনীতি, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি চর্চারও কেন্দ্রস্থল। তাই শহরের মানুষেরা ভালো না থাকলে এসব বিষয়ও বিকশিত হবে না, সভ্যতার বিকাশও রুদ্ধ হবে। তাই প্রতিটি শহরেই প্রয়োজনীয় পরিমাণে পাবলিক স্পেস থাকতে হবে।
পাবলিক স্পেস হলো যেখানে জনসাধারণের প্রবেশ উন্মুক্ত এবং সে জায়গাকে উপভোগ করার জন্য জনগণকে কোনো মূল্য দিতে হয় না। এসব স্থান হলো জনসাধারণের বিভিন্ন কার্যকলাপ ও বিনোদনের একটি কেন্দ্র। ঢাকা শহরের প্রধান পাবলিক স্পেসগুলো হলো রমনা, সোহরাওয়ার্দী, ওসমানী, চন্দ্রিমা, বলধা ও উদ্ভিদ উদ্যান এবং ধানমন্ডি লেক, হাতিরঝিল ও গুলশান লেক। দুটি সিটি করপোরেশনের আওতায় ৩০৬ বর্গকিলোমিটারের ঢাকা শহরে বাস করে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ। তার মানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ঢাকা শহরে বাস করে প্রায় ৭৫ হাজার মানুষ। অথচ এ শহরে খেলার মাঠ আছে মাত্র ৩৩২ একরে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১০টি ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৫টি ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ তথা খোলা জায়গা নেই। শহরে একজন মানুষকে সুস্থভাবে বাঁচতে হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে জনপ্রতি ৯ বর্গমিটার খোলা জায়গার প্রয়োজন। ঢাকা শহরে যা আছে ১ বর্গমিটারেরও কম। ঢাকা শহরে প্রতি বর্গফুটের হিসাবে যেখানে জমি বেচাকেনা হয় সেখানে বর্গকিলোমিটারের হিসাবে ফাঁকা জায়গা বা পাবলিক স্পেস থাকা দুরাশা।
জাতিসংঘের ইউএন-হ্যাবিটেটের তথ্য অনুযায়ী একটি শহরে মোট আয়তনের ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ জায়গা পাবলিক স্পেস হিসেবে থাকা উচিত, যার মধ্যে ৩০-৩৫ শতাংশ থাকবে রাস্তাঘাট ও ফুটপাত এবং ১৫-২০ শতাংশ জায়গা থাকবে পাবলিক স্পেস। প্রাচীনকালে ঢাকা শহরের পাবলিক স্পেস ছিল অবারিত, ধানখেতও ছিল। মোগল আমলের আগে পুরান ঢাকা একটি সহজাত পদ্ধতিতে বিকশিত হয়েছিল। ঐতিহ্যগতভাবে ঢাকাবাসী খোলামেলা জায়গায় সামাজিকীকরণের অভ্যাস পেয়েছিল। এর ফলে একটি ঐতিহ্যবাহী সামাজিক স্থানবিন্যাস গড়ে উঠেছিল। গলি (রাস্তা), মোড় (নোড), মহল্লা (পাড়া) ও চক (বাজার)। রাস্তার ধারে মহল্লাগুলো রৈখিকভাবে তৈরি করা হয়েছিল। রাস্তাগুলো ছিল মহল্লার কেন্দ্রবিন্দু। এগুলো ছিল আঁকাবাঁকা, অনিয়ত এক জটিল নেটওয়ার্ক, যেগুলো গিয়ে মিশেছিল চকে। ঢাকা একসময় প্রশান্তির শহর হিসেবে পরিচিত ছিল। সে শহরে ছিল মনোরম উদ্যান, পরিষ্কার রাস্তা ও সবুজের সমারোহ। এখন তা হয়েছে ইট ও কংক্রিটের জঙ্গল। শহরের পুরোনো অংশে ৫ শতাংশেরও কম খোলা জায়গা রয়েছে, নতুন অংশে রয়েছে ১২ শতাংশ। মোট খোলা জায়গার পরিমাণ ৫ হাজার একরের বেশি হবে না।
এখানে দুটি বিষয়, একটি হলো খোলা জায়গা বাড়ানো বা রাখা, অন্যটি হলো খোলা জায়গার সদ্ব্যবহার ও সঠিক ব্যবস্থাপনা। একটি সুস্থ শহর গড়ে তুলতে হলে একটি আদর্শ স্বাস্থ্যবান শহরের প্রায় অর্ধেকটায় থাকবে মানুষ, বাকি অর্ধেকে থাকবে রাস্তাঘাট, উদ্যান, জলাশয়, খেলার মাঠ ইত্যাদি। বর্তমান বাস্তবতায় ঢাকা শহরে যা অসম্ভব। তাই নজর দিতে হবে যতটুকু খোলা জায়গা আছে সেটুকুও যেন সংকুচিত না হয় এবং সেসব জায়গা যেন প্রকৃত পাবলিক স্পেস হয়ে ওঠে, যেখানে থাকবে সবার সহজ প্রবেশাধিকার, নিরাপত্তা ও সৌন্দর্য। বিশেষজ্ঞজনেরা ঢাকা শহরের পাবলিক স্পেস নিশ্চিত করতে চারটি মুখ্য পরামর্শ দিয়েছেন, এগুলো হলো, বিদ্যমান উন্মুক্ত স্থান পুনরুদ্ধার, উদ্যানগুলোর উন্নয়ন, রাস্তাগুলোকে নাগরিক স্থান হিসেবে তৈরি করা এবং জলাশয়গুলোকে পুনরুজ্জীবিত করা। নগরবিদেরা বিষয়টি ভেবে দেখবেন কি?
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও পরিবেশবিষয়ক লেখক

ঢাকা শহরে পাঁচতলা ভবনের একটি বাসায় থাকি। কয়েক দিন আগে ভূমিকম্পের একটা প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেয়ে বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। তাৎক্ষণিকভাবে মনে হলো, এক্ষুনি ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে যাওয়া উচিত। পরক্ষণেই মনে হলো, নিচে যাব ঠিক আছে, কিন্তু নিচে গিয়ে দাঁড়াব কোথায়? গায়ে গায়ে দালানগুলো দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তায় নামলে যদি সেগুলো ভেঙে পড়ে! ভেঙে না পড়লেও যদি একটা ছাদের রেলিং ভেঙে মাথায় পড়ে! রাস্তায় থাকা তো সেই ঝুঁকিরই ব্যাপার। মুহূর্তের মধ্যে চিন্তা করলাম, আশপাশে ফাঁকা বড় মাঠ কোথায়? কাছাকাছি তার একটিও নেই। তার চেয়ে ঘরে কোনো মজবুত বিমের নিচে থাকাটাই নিরাপদ ভেবে সেখানে দাঁড়িয়ে রইলাম একটি কলাম ধরে। কাঁপাকাঁপি করে ফ্রিজ সরল, আলমারি নড়ল। আর একটু জোরে হলে রক্ষে ছিল না। ঢাকা শহর থেকে লাশ উদ্ধারের মানুষ পাওয়া যেত না। এই হলো আমাদের প্রিয় ঢাকা শহর।
একটু খালি জায়গাও আমরা আমাদের রক্ষার জন্য ছেড়ে দিইনি। নিজেদের জন্য যখন ছাড়িনি, তখন গাছপালার জন্য কেন আর ছাড়ব? মহল্লায় মহল্লায় কোনো বড় মাঠ নেই। যে রাস্তা দিয়েই হেঁটে যাই, সে রাস্তাতেই কেবল দালানকোঠার জঞ্জাল, পাকা রাস্তা আর ফুটপাত। যেসব রাস্তার ধারেও যে গাছপালা আছে, সেগুলোরও গোড়া পর্যন্ত পাকা করে দেওয়া হয়েছে। এ যেন একটি গাছকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে বলে তার গলা টিপে হত্যার সব আয়োজন আমরা সেরে রেখেছি। গাছটা যে আকাশের দিকে বাড়বে তারও জো নেই। রাস্তার ধারে বিদ্যুতের খুঁটি ও তার গাছপালার সে সাধকেও খুন করেছে। বৃষ্টি হলে সে বৃষ্টির পানিতে যে মাটি ভিজবে, চারদিকে কংক্রিটে চাপা পড়া মাটির সে সুযোগও নেই। গাছগুলো তো দিনের পর দিন পানির পিপাসায় ধুঁকছে। রাস্তায় বা সরকারি জায়গাগুলোয় লাগানো গাছগুলোতে কেউ পানি দেয় না, খাবার দেয় না। মানুষ গাছকে না দেখলেও গাছ তো মানুষকে না দেখে পারে না। তাই সে তার সব শক্তি দিয়ে পৃথিবীকে সবুজ ও বাসযোগ্য রাখতে সব সময় চেষ্টা করে যাচ্ছে। অথচ সেই উপকারী বন্ধুদেরই আমরা জায়গা না দিয়ে জায়গা করে দিচ্ছি দালানকোঠাদের। দিন দিন সংকুচিত হয়ে পড়ছে ঢাকাসহ সব শহরের সবুজ এলাকা। কেবল কংক্রিট আর কঠিন মমতাহীনতার গল্পই যেন রোজ আমরা লিখে যাচ্ছি। অথচ একটি শহরকে ভালো রাখতে হলে, শহরের মানুষকে সুস্থ রাখতে হলে প্রতিটি শহরেই পরিমিত পরিমাণে খোলা জায়গা থাকা দরকার।
শহরে মানুষ বাড়লে সে অনুপাতে তাদের জন্য খোলা জায়গার পরিমাণও বাড়া উচিত। কিন্তু হচ্ছে ঠিক তার উল্টোটা। শহরে মানুষ যত বাড়ছে, খালি বা খোলা জায়গা তত কমছে, জলাশয়গুলো ভরাট হচ্ছে, খাল সরু হতে হতে একসময় মানচিত্রে থাকলেও বাস্তবে থাকছে না। অথচ প্রতিটি শহর ও শহরের মানুষকে ভালো রাখতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে সবুজ ও উন্মুক্ত পাবলিক স্পেস থাকা দরকার। এসব খোলা জায়গা নগরবাসীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া এগুলো নগরবাসীকে সামাজিক সংহতি গড়ে তুলতেও সাহায্য করে। এমনকি এরূপ খোলা জায়গা ও সবুজ অঞ্চল থাকলে তা নগরের বায়ুদূষণ কমায় ও মানুষকে নানা রকম আর্থিক সুবিধা দেয়। কেননা, মানুষ সুস্থ থাকলে স্বভাবতই সে চিকিৎসকের কাছে যাবে না। ফলে নগরবাসী প্রতিবছর যে বিপুল পরিমাণ টাকা চিকিৎসার পেছনে ব্যয় করছে তা সাশ্রয় হবে, যা তাদের জীবনমান বাড়াতে সাহায্য করবে।
বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ এখন বাস করে শহরে। এই সংখ্যা ২০৩০ সালে হবে ৬০ শতাংশ ও ২০৫০ সালে হবে ৭০ শতাংশ। শহর এলাকার অবস্থা ও মান তাই বিশ্বের অনেক মানুষের সুস্থতার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। স্বাস্থ্য সচেতন নগর গড়তে না পারলে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই অসুস্থ থাকবে। শহর কেবল শুধু মানুষের থাকার স্থানই না, বরং সেটি উদ্ভাবন, বিজ্ঞান, বাণিজ্য, রাজনীতি, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি চর্চারও কেন্দ্রস্থল। তাই শহরের মানুষেরা ভালো না থাকলে এসব বিষয়ও বিকশিত হবে না, সভ্যতার বিকাশও রুদ্ধ হবে। তাই প্রতিটি শহরেই প্রয়োজনীয় পরিমাণে পাবলিক স্পেস থাকতে হবে।
পাবলিক স্পেস হলো যেখানে জনসাধারণের প্রবেশ উন্মুক্ত এবং সে জায়গাকে উপভোগ করার জন্য জনগণকে কোনো মূল্য দিতে হয় না। এসব স্থান হলো জনসাধারণের বিভিন্ন কার্যকলাপ ও বিনোদনের একটি কেন্দ্র। ঢাকা শহরের প্রধান পাবলিক স্পেসগুলো হলো রমনা, সোহরাওয়ার্দী, ওসমানী, চন্দ্রিমা, বলধা ও উদ্ভিদ উদ্যান এবং ধানমন্ডি লেক, হাতিরঝিল ও গুলশান লেক। দুটি সিটি করপোরেশনের আওতায় ৩০৬ বর্গকিলোমিটারের ঢাকা শহরে বাস করে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ। তার মানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ঢাকা শহরে বাস করে প্রায় ৭৫ হাজার মানুষ। অথচ এ শহরে খেলার মাঠ আছে মাত্র ৩৩২ একরে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১০টি ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৫টি ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ তথা খোলা জায়গা নেই। শহরে একজন মানুষকে সুস্থভাবে বাঁচতে হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে জনপ্রতি ৯ বর্গমিটার খোলা জায়গার প্রয়োজন। ঢাকা শহরে যা আছে ১ বর্গমিটারেরও কম। ঢাকা শহরে প্রতি বর্গফুটের হিসাবে যেখানে জমি বেচাকেনা হয় সেখানে বর্গকিলোমিটারের হিসাবে ফাঁকা জায়গা বা পাবলিক স্পেস থাকা দুরাশা।
জাতিসংঘের ইউএন-হ্যাবিটেটের তথ্য অনুযায়ী একটি শহরে মোট আয়তনের ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ জায়গা পাবলিক স্পেস হিসেবে থাকা উচিত, যার মধ্যে ৩০-৩৫ শতাংশ থাকবে রাস্তাঘাট ও ফুটপাত এবং ১৫-২০ শতাংশ জায়গা থাকবে পাবলিক স্পেস। প্রাচীনকালে ঢাকা শহরের পাবলিক স্পেস ছিল অবারিত, ধানখেতও ছিল। মোগল আমলের আগে পুরান ঢাকা একটি সহজাত পদ্ধতিতে বিকশিত হয়েছিল। ঐতিহ্যগতভাবে ঢাকাবাসী খোলামেলা জায়গায় সামাজিকীকরণের অভ্যাস পেয়েছিল। এর ফলে একটি ঐতিহ্যবাহী সামাজিক স্থানবিন্যাস গড়ে উঠেছিল। গলি (রাস্তা), মোড় (নোড), মহল্লা (পাড়া) ও চক (বাজার)। রাস্তার ধারে মহল্লাগুলো রৈখিকভাবে তৈরি করা হয়েছিল। রাস্তাগুলো ছিল মহল্লার কেন্দ্রবিন্দু। এগুলো ছিল আঁকাবাঁকা, অনিয়ত এক জটিল নেটওয়ার্ক, যেগুলো গিয়ে মিশেছিল চকে। ঢাকা একসময় প্রশান্তির শহর হিসেবে পরিচিত ছিল। সে শহরে ছিল মনোরম উদ্যান, পরিষ্কার রাস্তা ও সবুজের সমারোহ। এখন তা হয়েছে ইট ও কংক্রিটের জঙ্গল। শহরের পুরোনো অংশে ৫ শতাংশেরও কম খোলা জায়গা রয়েছে, নতুন অংশে রয়েছে ১২ শতাংশ। মোট খোলা জায়গার পরিমাণ ৫ হাজার একরের বেশি হবে না।
এখানে দুটি বিষয়, একটি হলো খোলা জায়গা বাড়ানো বা রাখা, অন্যটি হলো খোলা জায়গার সদ্ব্যবহার ও সঠিক ব্যবস্থাপনা। একটি সুস্থ শহর গড়ে তুলতে হলে একটি আদর্শ স্বাস্থ্যবান শহরের প্রায় অর্ধেকটায় থাকবে মানুষ, বাকি অর্ধেকে থাকবে রাস্তাঘাট, উদ্যান, জলাশয়, খেলার মাঠ ইত্যাদি। বর্তমান বাস্তবতায় ঢাকা শহরে যা অসম্ভব। তাই নজর দিতে হবে যতটুকু খোলা জায়গা আছে সেটুকুও যেন সংকুচিত না হয় এবং সেসব জায়গা যেন প্রকৃত পাবলিক স্পেস হয়ে ওঠে, যেখানে থাকবে সবার সহজ প্রবেশাধিকার, নিরাপত্তা ও সৌন্দর্য। বিশেষজ্ঞজনেরা ঢাকা শহরের পাবলিক স্পেস নিশ্চিত করতে চারটি মুখ্য পরামর্শ দিয়েছেন, এগুলো হলো, বিদ্যমান উন্মুক্ত স্থান পুনরুদ্ধার, উদ্যানগুলোর উন্নয়ন, রাস্তাগুলোকে নাগরিক স্থান হিসেবে তৈরি করা এবং জলাশয়গুলোকে পুনরুজ্জীবিত করা। নগরবিদেরা বিষয়টি ভেবে দেখবেন কি?
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও পরিবেশবিষয়ক লেখক

‘আপনা মাংসে হরিণা বৈরী’ খুবই পরিচিত একটি উক্তি। উক্তিটি কবি ভুসুকুপার, যেটা চর্যাপদের। কারও সৌন্দর্য যখন তার জন্য ক্ষতিকর কিছু হয়, তখন উক্তিটি ব্যবহার করি আমরা। যেমন সুন্দরবনের হরিণ আর বাঘের ক্ষেত্রেও বিষয়টা প্রযোজ্য। এই দুটি প্রাণীর প্রাণ বিসর্জন দিতে হচ্ছে শুধু দৈহিক সৌন্দর্যের কারণে।
৪ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সমাগত। কথায় আছে, ঠেলাঠেলির ঘর খোদায় রক্ষা কর। বহু মত আর পথের অনুসারীদের এক মঞ্চে অবস্থান মানে কখনো কখনো টানাপোড়েনকেও মেনে নেওয়া। নানা রকমের দ্বিধা-সংকোচ, শর্তের বেড়াজাল, নিন্দা-অপবাদ, সমালোচনা; তাও ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ একতাবদ্ধ হওয়া।
৬ ঘণ্টা আগে
রাজধানী ঢাকায় বসবাস যেন দিন দিন একধরনের ‘রাশিয়ান রুলেট’ খেলার মতো হয়ে উঠছে। কখন, কোথা থেকে মৃত্যু আসবে—কেউ জানে না। একটি বৈদ্যুতিক খুঁটি, কোনো ভবনের অবৈধ অংশ, নড়বড়ে বিল্ডিং, খোলা ড্রেন কিংবা গ্যাসলাইনের সামান্য ফাঁক, সড়ক দুর্ঘটনা, এমনকি ছিনতাইকারীদের হাত যেকোনো মুহূর্তে কেড়ে নিতে পারে জীবন।
৭ ঘণ্টা আগে
নির্বাচন সময়মতো হচ্ছে কি না, তা নিয়ে সংশয় এখনো কাটেনি। আদালতে রিট কিংবা কোনো কোনো দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার আহ্বান ইত্যাদি নির্বাচনের পরিস্থিতি কোন দিকে নিয়ে যাবে, সেটা বলা মুশকিল। তবে দেশের মানুষ একটি সুস্থ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন চায়।
৭ ঘণ্টা আগেআলম শাইন

‘আপনা মাংসে হরিণা বৈরী’ খুবই পরিচিত একটি উক্তি। উক্তিটি কবি ভুসুকুপার, যেটা চর্যাপদের। কারও সৌন্দর্য যখন তার জন্য ক্ষতিকর কিছু হয়, তখন উক্তিটি ব্যবহার করি আমরা। যেমন সুন্দরবনের হরিণ আর বাঘের ক্ষেত্রেও বিষয়টা প্রযোজ্য। এই দুটি প্রাণীর প্রাণ বিসর্জন দিতে হচ্ছে শুধু দৈহিক সৌন্দর্যের কারণে। আবার কিছু পাখিদেরও জীবন বিসর্জন দিতে হয় সৌন্দর্যের কারণে। শুধু সুন্দরবন নয়, সুন্দরবনের বাইরের বন্য প্রাণীদেরও প্রাণ হারাতে হয় একই কারণে। তবে ঘটনাটা বেশি ঘটছে সুন্দরবন, চলনবিল ও হাওর এলাকায়।
সুন্দরবনের তিন শতাধিক প্রজাতির প্রাণিকুলের মধ্যে অধিকসংখ্যক প্রাণীই হচ্ছে চিত্রল হরিণ। এই ম্যানগ্রোভ অরণ্যের আকর্ষণীয় প্রাণীদের মধ্যে বাঘ এবং চিত্রল হরিণই অন্যতম। বাঘের সংখ্যা অপ্রতুল হলেও হরিণের সংখ্যা দেড় লাখের বেশি। অধিক সংখ্যক হরিণ বিচরণের ফলে সুন্দরবনের যত্রতত্রে এই প্রাণীদের সঙ্গে পেশাজীবীদের সাক্ষাৎ ঘটে। অন্যদিকে বাঘের দেখা না পেলেও হরিণের দেখা পেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন পর্যটকেরা। মূলত সুন্দরবনে পর্যটকদের আগমন ঘটে এই দুই প্রজাতির প্রাণীর সাক্ষাৎকে কেন্দ্র করেই। অথচ এই দুই প্রজাতির প্রাণীই বেশি নির্যাতিত হচ্ছে সুন্দরবনে।
আরও পড়ুন-
বাঘের সংখ্যা অপ্রতুল বিধায় দু-একটি বাঘ শিকার অথবা নির্যাতিত হলে হইচই পড়ে যায়। অপরদিকে হরিণের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিপরীত। ডজন ডজন হরিণ শিকার হলেও তা নিয়ে খুব বেশি হইচই হতে দেখা যায় না। বিষয়টি নিয়ে প্রচারমাধ্যমগুলো সরব থাকলেও, তাদের রক্ষা করতে তেমন উদ্যোগ দেখা যায় না। সম্প্রতি হরিণ শিকার নিয়ে তেমনি একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল গণমাধ্যমে। সংবাদপাঠে পরিবেশবিদদের মধ্যে উদ্যোগের সৃষ্টি হয়েছিল। সংবাদমাধ্যমে জানা যায়, সুন্দরবনের হরিণ শিকারিরা দুই সপ্তাহের পৃথক ঘটনায় কয়েকটি হরিণ নিধন করেছে। শিকারিদের কবল থেকে বনরক্ষীরা হরিণের মাংস, চামড়া, হরিণ ধরা ফাঁদ ও বন্দুকের গুলি উদ্ধার করেছেন। কয়েকজন হরিণ শিকারিকে আটকও করেছে বনরক্ষীরা। সংবাদমাধ্যমে আরও জানা যায়, সুন্দরবনে হরিণ শিকারের জন্য বরগুনার পাথরঘাটার চরদুয়ানী, জ্ঞানপাড়া, শরণখোলার সোনাতলা, পানিরঘাট, মোংলার চাঁদপাই ও খুলনার কয়রা এলাকায় গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী শিকারিচক্র। এই স্থানগুলো ছাড়াও হিরণ পয়েন্ট, দুবলারচর, কটকা, তালপট্টি, কচিখালি, দুবলা চান্দেরশ্বর, বগি, চরখালি এলাকায় শিকারিদের দৌরাত্ম্য লক্ষ করা যায়।
বিশেষ করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে চোরা শিকারিদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে যায় এসব এলাকায়। দেখা গেছে, রাসমেলার মৌসুমে শিকারিরা বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তখন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটে, সে সুযোগে শিকারিরা চড়া দামে তাদের কাছে হরিণের মাংস বিক্রি করে। বিগত বছরের রাসমেলা চলাকালে বন বিভাগের লোকজনের হাতে অসংখ্য গুপ্ত শিকারি আটকের ঘটনাও ঘটেছিল। হরিণ শিকারের সরঞ্জামাদিসহ হাতেনাতে আটক করতে সক্ষম হয়েছিল বনরক্ষীরা। এই চক্রের শিকারিরা বিভিন্নভাবে এই হরিণ শিকার করে। সুন্দরবনের যেসব এলাকায় হরিণের বিচরণ বেশি, সেসব এলাকায় নাইলনের জাল পেতে, বিষ মাখিয়ে, স্প্রিং বসানো ফাঁদ পেতে, কলার মধ্যে বড়শি ঝুলিয়ে, চেতনানাশক ওষুধ দিয়ে, তির অথবা গুলি ছুড়ে হরিণ শিকার করা হয়। আবার কেউ কেউ জেলের বেশে মাছ ধরার পাস নিয়ে সুন্দরবনের গহিনে রশি দিয়ে তৈরি ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করছে। পরে হরিণগুলোকে জবাই করে মাংস বস্তায় ভরে বরফচাপা দিয়ে রাতের আঁধারে বন থেকে ফিরে এসে লোকালয়ের কাছাকাছি ৮০০-১০০০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করে। কিন্তু এই মাংস যখন লোকালয় ছেড়ে শহরমুখী হয় তখন এর দাম হয়ে যায় আকাশচুম্বী। কোনো কোনো জায়গায় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হতেও শোনা যায়।
এ ছাড়া হরিণের চামড়া-শিং অভিজাত শ্রেণির মানুষজন সংগ্রহ করে ড্রয়িংরুম সাজিয়ে রাখতে। বনাঞ্চল এলাকার ধনী ব্যক্তিরা হরিণের মাংস খাইয়ে উৎসবাদিও পালন করতেন একসময়। সেটি বেশি দিন আগের কথাও নয়; ২০০০ সালের দিকেও কমবেশি দেখা গেছে। তবে ৯০ দশকের দিকেও প্রকাশ্যে অত্রাঞ্চলের ধনী ব্যক্তিরা হরিণের মাংস খাইয়ে তাদের উৎসবাদি পালন করার বিষয়টি প্রত্যক্ষ দেখার সুযোগ হয়েছে।
এ ছাড়া দেখা গেছে, বড় ধরনের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কর্তাব্যক্তিদের খুশি করতে গোপনে হরিণের মাংস সরবরাহ করেন; এমন তথ্যও আমরা জানতে পেরেছি। হরিণ নিধন সম্পর্কে লন্ডনের একটি সংস্থা, ‘ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশ ও জু-লজিক্যাল সোসাইটি’ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে বিষয়টি অবহিতও করেছে আমাদের। সেই তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছিল, সুন্দরবনের দুই অংশে বছরে ১০ হাজার চিত্রল হরিণ নিধন করা হচ্ছে। উদ্বেগজনক এই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, বন বিভাগকে শিকারিদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা দরকার। পাশাপাশি বন্য প্রাণী নিধন আইনের যথাযথ প্রয়োগ ঘটানোর। আইনের প্রয়োগ ঘটানোর পরে যে বিষয়টি নজরদারিতে রাখতে হবে, তা হচ্ছে, জেল-জরিমানা ভোগ করার পর মুক্তি পেয়ে যেন শিকারিরা আরও বেপরোয়া না হয়ে ওঠে। সে জন্য জনপ্রতিনিধিদের শরণাপন্ন হয়ে মোটিভেশনের মাধ্যমে শিকারিদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। বনদস্যুদের মতো বাঘ কিংবা হরিণ শিকারিদের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে বনের হরিণগুলো নিরাপদে থাকতে পারবে। বিষয়টির তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নিতে না পারলে সুন্দরবনের চিত্রল হরিণের অস্তিত্ব রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে। এ জন্য আমাদের ‘ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশ ও জু-লজিক্যাল সোসাইটি’র তথ্যটিকে খারাপভাবে না নিয়ে বরং গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে। তাহলে অবশ্যই হরিণ প্রজাতি সুন্দরবনে নির্বিঘ্নে বিচরণের সুযোগ পাবে।
আরও পড়ুন-
পাথরঘাটায় হরিণের দুটি মাথাসহ ৪০ কেজি মাংস জব্দ
পাশাপাশি আরেকটি কাজ করা যেতে পারে; যারা শৌখিনভাবে হরিণ পালন করতে ইচ্ছুক, তাদেরকে সহজ শর্তে খামার গড়ার অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে। অবশ্য দেশে এখন বেশ কিছু হরিণের খামার গড়েও উঠেছে। তবে এর বিস্তৃতি আরও বাড়িয়ে তোলা উচিত। লালন-পালনের মাধ্যমে প্রজনন ঘটিয়ে বংশ বৃদ্ধি করে সহজেই শৌখিনদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব। তাতে হরিণ সম্পর্কে সর্বসাধারণের মানুষের কৌতূহল খানিকটা কমে যাবে। খামারের শর্ত মেনে বিকিকিনি হলে সুন্দরবনের হরিণগুলো নিরাপদ, নির্বিঘ্নে কাটাতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস আছে। এতে চোরা শিকারিদের কাছে মাংস, চামড়া ও শিংয়ের চাহিদায় ভাটা পড়বে। এই বিষয়টা বিবেচনায় নিলে আমাদের গর্বের ধন সুন্দরবনের চিত্রল হরিণ প্রজাতিকে টিকিয়ে রাখতে সহায়ক হবে।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও জলবায়ুবিষয়ক কলামিস্ট

‘আপনা মাংসে হরিণা বৈরী’ খুবই পরিচিত একটি উক্তি। উক্তিটি কবি ভুসুকুপার, যেটা চর্যাপদের। কারও সৌন্দর্য যখন তার জন্য ক্ষতিকর কিছু হয়, তখন উক্তিটি ব্যবহার করি আমরা। যেমন সুন্দরবনের হরিণ আর বাঘের ক্ষেত্রেও বিষয়টা প্রযোজ্য। এই দুটি প্রাণীর প্রাণ বিসর্জন দিতে হচ্ছে শুধু দৈহিক সৌন্দর্যের কারণে। আবার কিছু পাখিদেরও জীবন বিসর্জন দিতে হয় সৌন্দর্যের কারণে। শুধু সুন্দরবন নয়, সুন্দরবনের বাইরের বন্য প্রাণীদেরও প্রাণ হারাতে হয় একই কারণে। তবে ঘটনাটা বেশি ঘটছে সুন্দরবন, চলনবিল ও হাওর এলাকায়।
সুন্দরবনের তিন শতাধিক প্রজাতির প্রাণিকুলের মধ্যে অধিকসংখ্যক প্রাণীই হচ্ছে চিত্রল হরিণ। এই ম্যানগ্রোভ অরণ্যের আকর্ষণীয় প্রাণীদের মধ্যে বাঘ এবং চিত্রল হরিণই অন্যতম। বাঘের সংখ্যা অপ্রতুল হলেও হরিণের সংখ্যা দেড় লাখের বেশি। অধিক সংখ্যক হরিণ বিচরণের ফলে সুন্দরবনের যত্রতত্রে এই প্রাণীদের সঙ্গে পেশাজীবীদের সাক্ষাৎ ঘটে। অন্যদিকে বাঘের দেখা না পেলেও হরিণের দেখা পেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন পর্যটকেরা। মূলত সুন্দরবনে পর্যটকদের আগমন ঘটে এই দুই প্রজাতির প্রাণীর সাক্ষাৎকে কেন্দ্র করেই। অথচ এই দুই প্রজাতির প্রাণীই বেশি নির্যাতিত হচ্ছে সুন্দরবনে।
আরও পড়ুন-
বাঘের সংখ্যা অপ্রতুল বিধায় দু-একটি বাঘ শিকার অথবা নির্যাতিত হলে হইচই পড়ে যায়। অপরদিকে হরিণের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিপরীত। ডজন ডজন হরিণ শিকার হলেও তা নিয়ে খুব বেশি হইচই হতে দেখা যায় না। বিষয়টি নিয়ে প্রচারমাধ্যমগুলো সরব থাকলেও, তাদের রক্ষা করতে তেমন উদ্যোগ দেখা যায় না। সম্প্রতি হরিণ শিকার নিয়ে তেমনি একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল গণমাধ্যমে। সংবাদপাঠে পরিবেশবিদদের মধ্যে উদ্যোগের সৃষ্টি হয়েছিল। সংবাদমাধ্যমে জানা যায়, সুন্দরবনের হরিণ শিকারিরা দুই সপ্তাহের পৃথক ঘটনায় কয়েকটি হরিণ নিধন করেছে। শিকারিদের কবল থেকে বনরক্ষীরা হরিণের মাংস, চামড়া, হরিণ ধরা ফাঁদ ও বন্দুকের গুলি উদ্ধার করেছেন। কয়েকজন হরিণ শিকারিকে আটকও করেছে বনরক্ষীরা। সংবাদমাধ্যমে আরও জানা যায়, সুন্দরবনে হরিণ শিকারের জন্য বরগুনার পাথরঘাটার চরদুয়ানী, জ্ঞানপাড়া, শরণখোলার সোনাতলা, পানিরঘাট, মোংলার চাঁদপাই ও খুলনার কয়রা এলাকায় গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী শিকারিচক্র। এই স্থানগুলো ছাড়াও হিরণ পয়েন্ট, দুবলারচর, কটকা, তালপট্টি, কচিখালি, দুবলা চান্দেরশ্বর, বগি, চরখালি এলাকায় শিকারিদের দৌরাত্ম্য লক্ষ করা যায়।
বিশেষ করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে চোরা শিকারিদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে যায় এসব এলাকায়। দেখা গেছে, রাসমেলার মৌসুমে শিকারিরা বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তখন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটে, সে সুযোগে শিকারিরা চড়া দামে তাদের কাছে হরিণের মাংস বিক্রি করে। বিগত বছরের রাসমেলা চলাকালে বন বিভাগের লোকজনের হাতে অসংখ্য গুপ্ত শিকারি আটকের ঘটনাও ঘটেছিল। হরিণ শিকারের সরঞ্জামাদিসহ হাতেনাতে আটক করতে সক্ষম হয়েছিল বনরক্ষীরা। এই চক্রের শিকারিরা বিভিন্নভাবে এই হরিণ শিকার করে। সুন্দরবনের যেসব এলাকায় হরিণের বিচরণ বেশি, সেসব এলাকায় নাইলনের জাল পেতে, বিষ মাখিয়ে, স্প্রিং বসানো ফাঁদ পেতে, কলার মধ্যে বড়শি ঝুলিয়ে, চেতনানাশক ওষুধ দিয়ে, তির অথবা গুলি ছুড়ে হরিণ শিকার করা হয়। আবার কেউ কেউ জেলের বেশে মাছ ধরার পাস নিয়ে সুন্দরবনের গহিনে রশি দিয়ে তৈরি ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করছে। পরে হরিণগুলোকে জবাই করে মাংস বস্তায় ভরে বরফচাপা দিয়ে রাতের আঁধারে বন থেকে ফিরে এসে লোকালয়ের কাছাকাছি ৮০০-১০০০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করে। কিন্তু এই মাংস যখন লোকালয় ছেড়ে শহরমুখী হয় তখন এর দাম হয়ে যায় আকাশচুম্বী। কোনো কোনো জায়গায় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হতেও শোনা যায়।
এ ছাড়া হরিণের চামড়া-শিং অভিজাত শ্রেণির মানুষজন সংগ্রহ করে ড্রয়িংরুম সাজিয়ে রাখতে। বনাঞ্চল এলাকার ধনী ব্যক্তিরা হরিণের মাংস খাইয়ে উৎসবাদিও পালন করতেন একসময়। সেটি বেশি দিন আগের কথাও নয়; ২০০০ সালের দিকেও কমবেশি দেখা গেছে। তবে ৯০ দশকের দিকেও প্রকাশ্যে অত্রাঞ্চলের ধনী ব্যক্তিরা হরিণের মাংস খাইয়ে তাদের উৎসবাদি পালন করার বিষয়টি প্রত্যক্ষ দেখার সুযোগ হয়েছে।
এ ছাড়া দেখা গেছে, বড় ধরনের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কর্তাব্যক্তিদের খুশি করতে গোপনে হরিণের মাংস সরবরাহ করেন; এমন তথ্যও আমরা জানতে পেরেছি। হরিণ নিধন সম্পর্কে লন্ডনের একটি সংস্থা, ‘ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশ ও জু-লজিক্যাল সোসাইটি’ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে বিষয়টি অবহিতও করেছে আমাদের। সেই তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছিল, সুন্দরবনের দুই অংশে বছরে ১০ হাজার চিত্রল হরিণ নিধন করা হচ্ছে। উদ্বেগজনক এই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, বন বিভাগকে শিকারিদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা দরকার। পাশাপাশি বন্য প্রাণী নিধন আইনের যথাযথ প্রয়োগ ঘটানোর। আইনের প্রয়োগ ঘটানোর পরে যে বিষয়টি নজরদারিতে রাখতে হবে, তা হচ্ছে, জেল-জরিমানা ভোগ করার পর মুক্তি পেয়ে যেন শিকারিরা আরও বেপরোয়া না হয়ে ওঠে। সে জন্য জনপ্রতিনিধিদের শরণাপন্ন হয়ে মোটিভেশনের মাধ্যমে শিকারিদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। বনদস্যুদের মতো বাঘ কিংবা হরিণ শিকারিদের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে বনের হরিণগুলো নিরাপদে থাকতে পারবে। বিষয়টির তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নিতে না পারলে সুন্দরবনের চিত্রল হরিণের অস্তিত্ব রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে। এ জন্য আমাদের ‘ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশ ও জু-লজিক্যাল সোসাইটি’র তথ্যটিকে খারাপভাবে না নিয়ে বরং গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে। তাহলে অবশ্যই হরিণ প্রজাতি সুন্দরবনে নির্বিঘ্নে বিচরণের সুযোগ পাবে।
আরও পড়ুন-
পাথরঘাটায় হরিণের দুটি মাথাসহ ৪০ কেজি মাংস জব্দ
পাশাপাশি আরেকটি কাজ করা যেতে পারে; যারা শৌখিনভাবে হরিণ পালন করতে ইচ্ছুক, তাদেরকে সহজ শর্তে খামার গড়ার অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে। অবশ্য দেশে এখন বেশ কিছু হরিণের খামার গড়েও উঠেছে। তবে এর বিস্তৃতি আরও বাড়িয়ে তোলা উচিত। লালন-পালনের মাধ্যমে প্রজনন ঘটিয়ে বংশ বৃদ্ধি করে সহজেই শৌখিনদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব। তাতে হরিণ সম্পর্কে সর্বসাধারণের মানুষের কৌতূহল খানিকটা কমে যাবে। খামারের শর্ত মেনে বিকিকিনি হলে সুন্দরবনের হরিণগুলো নিরাপদ, নির্বিঘ্নে কাটাতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস আছে। এতে চোরা শিকারিদের কাছে মাংস, চামড়া ও শিংয়ের চাহিদায় ভাটা পড়বে। এই বিষয়টা বিবেচনায় নিলে আমাদের গর্বের ধন সুন্দরবনের চিত্রল হরিণ প্রজাতিকে টিকিয়ে রাখতে সহায়ক হবে।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও জলবায়ুবিষয়ক কলামিস্ট

ঢাকা শহরে পাঁচতলা ভবনের একটি বাসায় থাকি। কয়েক দিন আগে ভূমিকম্পের একটা প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেয়ে বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। তাৎক্ষণিকভাবে মনে হলো, এক্ষুনি ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে যাওয়া উচিত। পরক্ষণেই মনে হলো, নিচে যাব ঠিক আছে, কিন্তু নিচে গিয়ে দাঁড়াব কোথায়? গায়ে গায়ে দালানগুলো দাঁড়িয়ে আছে।
১ দিন আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সমাগত। কথায় আছে, ঠেলাঠেলির ঘর খোদায় রক্ষা কর। বহু মত আর পথের অনুসারীদের এক মঞ্চে অবস্থান মানে কখনো কখনো টানাপোড়েনকেও মেনে নেওয়া। নানা রকমের দ্বিধা-সংকোচ, শর্তের বেড়াজাল, নিন্দা-অপবাদ, সমালোচনা; তাও ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ একতাবদ্ধ হওয়া।
৬ ঘণ্টা আগে
রাজধানী ঢাকায় বসবাস যেন দিন দিন একধরনের ‘রাশিয়ান রুলেট’ খেলার মতো হয়ে উঠছে। কখন, কোথা থেকে মৃত্যু আসবে—কেউ জানে না। একটি বৈদ্যুতিক খুঁটি, কোনো ভবনের অবৈধ অংশ, নড়বড়ে বিল্ডিং, খোলা ড্রেন কিংবা গ্যাসলাইনের সামান্য ফাঁক, সড়ক দুর্ঘটনা, এমনকি ছিনতাইকারীদের হাত যেকোনো মুহূর্তে কেড়ে নিতে পারে জীবন।
৭ ঘণ্টা আগে
নির্বাচন সময়মতো হচ্ছে কি না, তা নিয়ে সংশয় এখনো কাটেনি। আদালতে রিট কিংবা কোনো কোনো দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার আহ্বান ইত্যাদি নির্বাচনের পরিস্থিতি কোন দিকে নিয়ে যাবে, সেটা বলা মুশকিল। তবে দেশের মানুষ একটি সুস্থ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন চায়।
৭ ঘণ্টা আগেবিমল সরকার

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সমাগত। কথায় আছে, ঠেলাঠেলির ঘর খোদায় রক্ষা কর। বহু মত আর পথের অনুসারীদের এক মঞ্চে অবস্থান মানে কখনো কখনো টানাপোড়েনকেও মেনে নেওয়া। নানা রকমের দ্বিধা-সংকোচ, শর্তের বেড়াজাল, নিন্দা-অপবাদ, সমালোচনা; তাও ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ একতাবদ্ধ হওয়া। বিরাজমান পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে, দেশে রাজনৈতিক ‘মোর্চা’ ছাড়া এককভাবে নির্বাচন করে কোনো রাজনৈতিক দলই এখন আর খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না। দলের প্রতিষ্ঠা কবে, কে বা কারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন; কিংবা কী পরিমাণে কর্মী-সমর্থক রয়েছে; সর্বোপরি ভোট হলে ভোটারদের কেমন টানতে পারবে সে সবও আজকাল বড় কথা নয়। ‘মোর্চা গঠন করা চাই, মোর্চাভুক্ত করতে চাই, মোর্চাভুক্ত হতে চাই’—নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে তথা রাজনৈতিক অভিলাষ চরিতার্থ করতে এটিই যেন রাজনীতিকদের ধ্যান-জ্ঞানে পরিণত হয়েছে।
আমাদের দেশে জোট, ফ্রন্ট বা এমন সব নামের রাজনৈতিক মোর্চার সঙ্গে দেশবাসী অনেক আগে থেকেই পরিচিত। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ক্ষমতাসীন মুসলিম লিগ সরকারের বিপক্ষে ১৯৫৩ সালে আওয়ামী লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি, নেজামে ইসলাম, গণতন্ত্রী দল মিলে যুক্ত ফ্রন্ট গঠন করে। ১৯৫৪ সালে যুক্ত ফ্রন্ট তথা প্রাদেশিক আইন পরিষদ নির্বাচন ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে রয়েছে; জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন। পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে ১৯৬৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে গঠিত হয় সম্মিলিত বিরোধী দল (কপ)। আওয়ামী লীগসহ কপভুক্ত বিরোধী দলগুলোর নেতারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করান ফাতেমা জিন্নাহকে।
৩ জুন ১৯৭৮ সালে অনুষ্ঠিত হয় স্বাধীন দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। চারদিকে ভোটযুদ্ধের দামামা, দেশব্যাপী উৎসবের আমেজ তো ছিলই। এই নির্বাচনে মোট ১০ জন প্রার্থী মুখোমুখি হলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় দুই জেনারেলের মধ্যে। তাঁরা উভয়েই ছিলেন ছয়টি করে দলের সমন্বয়ে গঠিত পৃথক দুটি জোট বা মোর্চার প্রার্থী। একজন হলেন ‘জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট’ মনোনীত প্রার্থী গদিনসীন রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং অন্যজন ‘গণতান্ত্রিক ঐক্য জোট’ মনোনীত প্রার্থী জেনারেল (অব.) এম এ জি ওসমানী। ওসমানী মুক্তিযুদ্ধে সেনাপতি আর জিয়াউর রহমান একজন সেক্টর কমান্ডার হিসেবে গুরুদায়িত্ব পালন করেন। সুদীর্ঘ ৯ মাস বাঙালির মরণপণ লড়াইয়ে উভয়েই অসম সাহসিকতার পরিচয় দেন।
জিয়াউর রহমানকে সমর্থনকারী ফ্রন্ট ভুক্ত দল ৬টি হলো:
উপরাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারের নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল, মশিউর রহমান যাদু মিয়ার নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী), কাজী জাফরের নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস পার্টি, শাহ আজিজুর রহমানের নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগ, মাওলানা আব্দুল মতিনের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি ও রসরাজ মন্ডলের নেতৃত্বাধীন তপসিলী ফেডারেশন।
অন্যদিকে এম এ জি ওসমানীকে সমর্থনকারী জোটভুক্ত দল ৬টি ছিল:
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (মোজাফ্ফর), জাতীয় জনতা পার্টি, বাংলাদেশ পিপলস লীগ (আলীম আল রাজী), গণ আজাদী লীগ (তর্কবাগীশ) ও মণি সিংহের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি (বেআইনি ঘোষিত)।
১৯৭৮ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন মানে ফ্রন্ট ও জোট প্রার্থীর প্রতিদ্ধন্দ্বিতা। সরাসরি ভোটে এটিই দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। নির্বাচনে ফ্রন্ট প্রার্থী জিয়াউর রহমান বিজয়ী এবং জোট প্রার্থী এম এ জি ওসমানী পরাজিত হন।
দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মোট ৩ কোটি ৮৪ লাখ ৮৬ হাজার ২৪৭টি ভোটের মধ্যে জেনারেল জিয়া পান ১ কোটি ৫৮ লাখ ১৪ হাজার ৭২ ভোট, আর জেনারেল ওসমানী পান ৪৪ লাখ ৭০ হাজার ৬৭০ ভোট। জিয়া ও ওসমানী ছাড়া ভোটের হিসাবে বাকি ৮ জন প্রার্থীর কেউই লাখের ঘর ছুঁতে পারেননি। একজন সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার ৮৯০ ভোট এবং অন্যজন ২৪ হাজার ২৩২ ভোট (সর্বনিম্ন) পান।
অবশ্য এই নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। সেই সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি গঠিত না হলেও পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জেনারেল জিয়াউর রহমান তখন খুবই জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে ৬ জুন, ১৯৭৮ সালে সংবাদ সম্মেলনে পরাজিত জোট প্রার্থী জেনারেল ওসমানী বলেন, ‘নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয় নাই, তবে আমি পুনর্নির্বাচন চাই না’ (৭ জুন ১৯৭৮ দৈনিক ইত্তেফাক)।
দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় ‘মোর্চা’ ছিল রাজনৈতিক অঙ্গনে বহুল আলোচিত একটি বিষয়। পরবর্তী সময়ে এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ৮ দল, বিএনপি নেতৃত্ত্বাধীন ৭ দল, বামপন্থী ৫ দল একতাবদ্ধ হয়ে যুগপৎ আন্দোলন সংঘটিত হয়। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ (সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় (বিএনপি জোটের বর্জন) ও চতুর্থ (বিএনপি ও আওয়ামী লীগ জোটের বর্জন) জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় মূলত জোটের ভিত্তিতে।
এরপর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যজোট আর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট গঠন তো সেদিনের কথা। বিগত এক-দেড় যুগের রাজনীতি, এ সময়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো এবং ‘জোট-ফ্রন্ট-মোর্চা-ঐক্য’ নিয়ে এখানে আর কিছু বলতে চাই না, সবারই মনে থাকার কথা।
সব ভালো, যার শেষ ভালো। জোট-মহাজোট আর মিলন-মহামিলন যা-ই হোক না কেন, জনগণের চেয়ে উৎকৃষ্ট আর কেউ হয় না। জনগণের কল্যাণ করার চেয়ে মহৎ কাজও জগতে নেই। নির্বাচনকে সামনে রেখে উল্লিখিত কথাগুলো যেন সবার সব সময় মনে থাকে।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সমাগত। কথায় আছে, ঠেলাঠেলির ঘর খোদায় রক্ষা কর। বহু মত আর পথের অনুসারীদের এক মঞ্চে অবস্থান মানে কখনো কখনো টানাপোড়েনকেও মেনে নেওয়া। নানা রকমের দ্বিধা-সংকোচ, শর্তের বেড়াজাল, নিন্দা-অপবাদ, সমালোচনা; তাও ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ একতাবদ্ধ হওয়া। বিরাজমান পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে, দেশে রাজনৈতিক ‘মোর্চা’ ছাড়া এককভাবে নির্বাচন করে কোনো রাজনৈতিক দলই এখন আর খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না। দলের প্রতিষ্ঠা কবে, কে বা কারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন; কিংবা কী পরিমাণে কর্মী-সমর্থক রয়েছে; সর্বোপরি ভোট হলে ভোটারদের কেমন টানতে পারবে সে সবও আজকাল বড় কথা নয়। ‘মোর্চা গঠন করা চাই, মোর্চাভুক্ত করতে চাই, মোর্চাভুক্ত হতে চাই’—নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে তথা রাজনৈতিক অভিলাষ চরিতার্থ করতে এটিই যেন রাজনীতিকদের ধ্যান-জ্ঞানে পরিণত হয়েছে।
আমাদের দেশে জোট, ফ্রন্ট বা এমন সব নামের রাজনৈতিক মোর্চার সঙ্গে দেশবাসী অনেক আগে থেকেই পরিচিত। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ক্ষমতাসীন মুসলিম লিগ সরকারের বিপক্ষে ১৯৫৩ সালে আওয়ামী লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি, নেজামে ইসলাম, গণতন্ত্রী দল মিলে যুক্ত ফ্রন্ট গঠন করে। ১৯৫৪ সালে যুক্ত ফ্রন্ট তথা প্রাদেশিক আইন পরিষদ নির্বাচন ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে রয়েছে; জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন। পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে ১৯৬৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে গঠিত হয় সম্মিলিত বিরোধী দল (কপ)। আওয়ামী লীগসহ কপভুক্ত বিরোধী দলগুলোর নেতারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করান ফাতেমা জিন্নাহকে।
৩ জুন ১৯৭৮ সালে অনুষ্ঠিত হয় স্বাধীন দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। চারদিকে ভোটযুদ্ধের দামামা, দেশব্যাপী উৎসবের আমেজ তো ছিলই। এই নির্বাচনে মোট ১০ জন প্রার্থী মুখোমুখি হলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় দুই জেনারেলের মধ্যে। তাঁরা উভয়েই ছিলেন ছয়টি করে দলের সমন্বয়ে গঠিত পৃথক দুটি জোট বা মোর্চার প্রার্থী। একজন হলেন ‘জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট’ মনোনীত প্রার্থী গদিনসীন রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং অন্যজন ‘গণতান্ত্রিক ঐক্য জোট’ মনোনীত প্রার্থী জেনারেল (অব.) এম এ জি ওসমানী। ওসমানী মুক্তিযুদ্ধে সেনাপতি আর জিয়াউর রহমান একজন সেক্টর কমান্ডার হিসেবে গুরুদায়িত্ব পালন করেন। সুদীর্ঘ ৯ মাস বাঙালির মরণপণ লড়াইয়ে উভয়েই অসম সাহসিকতার পরিচয় দেন।
জিয়াউর রহমানকে সমর্থনকারী ফ্রন্ট ভুক্ত দল ৬টি হলো:
উপরাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারের নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল, মশিউর রহমান যাদু মিয়ার নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী), কাজী জাফরের নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস পার্টি, শাহ আজিজুর রহমানের নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগ, মাওলানা আব্দুল মতিনের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি ও রসরাজ মন্ডলের নেতৃত্বাধীন তপসিলী ফেডারেশন।
অন্যদিকে এম এ জি ওসমানীকে সমর্থনকারী জোটভুক্ত দল ৬টি ছিল:
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (মোজাফ্ফর), জাতীয় জনতা পার্টি, বাংলাদেশ পিপলস লীগ (আলীম আল রাজী), গণ আজাদী লীগ (তর্কবাগীশ) ও মণি সিংহের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি (বেআইনি ঘোষিত)।
১৯৭৮ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন মানে ফ্রন্ট ও জোট প্রার্থীর প্রতিদ্ধন্দ্বিতা। সরাসরি ভোটে এটিই দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। নির্বাচনে ফ্রন্ট প্রার্থী জিয়াউর রহমান বিজয়ী এবং জোট প্রার্থী এম এ জি ওসমানী পরাজিত হন।
দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মোট ৩ কোটি ৮৪ লাখ ৮৬ হাজার ২৪৭টি ভোটের মধ্যে জেনারেল জিয়া পান ১ কোটি ৫৮ লাখ ১৪ হাজার ৭২ ভোট, আর জেনারেল ওসমানী পান ৪৪ লাখ ৭০ হাজার ৬৭০ ভোট। জিয়া ও ওসমানী ছাড়া ভোটের হিসাবে বাকি ৮ জন প্রার্থীর কেউই লাখের ঘর ছুঁতে পারেননি। একজন সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার ৮৯০ ভোট এবং অন্যজন ২৪ হাজার ২৩২ ভোট (সর্বনিম্ন) পান।
অবশ্য এই নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। সেই সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি গঠিত না হলেও পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জেনারেল জিয়াউর রহমান তখন খুবই জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে ৬ জুন, ১৯৭৮ সালে সংবাদ সম্মেলনে পরাজিত জোট প্রার্থী জেনারেল ওসমানী বলেন, ‘নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয় নাই, তবে আমি পুনর্নির্বাচন চাই না’ (৭ জুন ১৯৭৮ দৈনিক ইত্তেফাক)।
দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় ‘মোর্চা’ ছিল রাজনৈতিক অঙ্গনে বহুল আলোচিত একটি বিষয়। পরবর্তী সময়ে এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ৮ দল, বিএনপি নেতৃত্ত্বাধীন ৭ দল, বামপন্থী ৫ দল একতাবদ্ধ হয়ে যুগপৎ আন্দোলন সংঘটিত হয়। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ (সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় (বিএনপি জোটের বর্জন) ও চতুর্থ (বিএনপি ও আওয়ামী লীগ জোটের বর্জন) জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় মূলত জোটের ভিত্তিতে।
এরপর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যজোট আর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট গঠন তো সেদিনের কথা। বিগত এক-দেড় যুগের রাজনীতি, এ সময়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো এবং ‘জোট-ফ্রন্ট-মোর্চা-ঐক্য’ নিয়ে এখানে আর কিছু বলতে চাই না, সবারই মনে থাকার কথা।
সব ভালো, যার শেষ ভালো। জোট-মহাজোট আর মিলন-মহামিলন যা-ই হোক না কেন, জনগণের চেয়ে উৎকৃষ্ট আর কেউ হয় না। জনগণের কল্যাণ করার চেয়ে মহৎ কাজও জগতে নেই। নির্বাচনকে সামনে রেখে উল্লিখিত কথাগুলো যেন সবার সব সময় মনে থাকে।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক

ঢাকা শহরে পাঁচতলা ভবনের একটি বাসায় থাকি। কয়েক দিন আগে ভূমিকম্পের একটা প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেয়ে বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। তাৎক্ষণিকভাবে মনে হলো, এক্ষুনি ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে যাওয়া উচিত। পরক্ষণেই মনে হলো, নিচে যাব ঠিক আছে, কিন্তু নিচে গিয়ে দাঁড়াব কোথায়? গায়ে গায়ে দালানগুলো দাঁড়িয়ে আছে।
১ দিন আগে
‘আপনা মাংসে হরিণা বৈরী’ খুবই পরিচিত একটি উক্তি। উক্তিটি কবি ভুসুকুপার, যেটা চর্যাপদের। কারও সৌন্দর্য যখন তার জন্য ক্ষতিকর কিছু হয়, তখন উক্তিটি ব্যবহার করি আমরা। যেমন সুন্দরবনের হরিণ আর বাঘের ক্ষেত্রেও বিষয়টা প্রযোজ্য। এই দুটি প্রাণীর প্রাণ বিসর্জন দিতে হচ্ছে শুধু দৈহিক সৌন্দর্যের কারণে।
৪ ঘণ্টা আগে
রাজধানী ঢাকায় বসবাস যেন দিন দিন একধরনের ‘রাশিয়ান রুলেট’ খেলার মতো হয়ে উঠছে। কখন, কোথা থেকে মৃত্যু আসবে—কেউ জানে না। একটি বৈদ্যুতিক খুঁটি, কোনো ভবনের অবৈধ অংশ, নড়বড়ে বিল্ডিং, খোলা ড্রেন কিংবা গ্যাসলাইনের সামান্য ফাঁক, সড়ক দুর্ঘটনা, এমনকি ছিনতাইকারীদের হাত যেকোনো মুহূর্তে কেড়ে নিতে পারে জীবন।
৭ ঘণ্টা আগে
নির্বাচন সময়মতো হচ্ছে কি না, তা নিয়ে সংশয় এখনো কাটেনি। আদালতে রিট কিংবা কোনো কোনো দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার আহ্বান ইত্যাদি নির্বাচনের পরিস্থিতি কোন দিকে নিয়ে যাবে, সেটা বলা মুশকিল। তবে দেশের মানুষ একটি সুস্থ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন চায়।
৭ ঘণ্টা আগেমো. সাইদুর রহমান

রাজধানী ঢাকায় বসবাস যেন দিন দিন একধরনের ‘রাশিয়ান রুলেট’ খেলার মতো হয়ে উঠছে। কখন, কোথা থেকে মৃত্যু আসবে—কেউ জানে না। একটি বৈদ্যুতিক খুঁটি, কোনো ভবনের অবৈধ অংশ, নড়বড়ে বিল্ডিং, খোলা ড্রেন কিংবা গ্যাসলাইনের সামান্য ফাঁক, সড়ক দুর্ঘটনা, এমনকি ছিনতাইকারীদের হাত যেকোনো মুহূর্তে কেড়ে নিতে পারে জীবন।
পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে মৃত্যু আর মৃত্যু। আর এ মৃত্যুর কারণ যেন স্বয়ং ঢাকা শহর। এখানে সামান্য বৃষ্টি হলে তৈরি হয় মৃত্যুর ফাঁদ। এ বছরের ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বংশালের নাজিরাবাজার এলাকায় সড়কে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে পড়ে আমিন হোসেন নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। পরে জানা যায়, পানিতে বিদ্যুতের তার ছিল, ফলে তিনি বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান। চা খেতে বসলেও যেন মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।
এ বছরের ২৬ অক্টোবর চা খেতে বসা এক ব্যক্তি মেট্রোরেলের ৩৫ কেজির একটি ‘বিয়ারিং প্যাড’-এর আঘাতে প্রাণ হারান। ২০২৪ সালে শুধু ঢাকা বিভাগেই সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১,৮৪০ জনের। ‘সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবছর বাংলাদেশে ৫,২৫৮ শিশুসহ মোট ১০২,৪৫৬ জন মানুষ বায়ুদূষণের প্রভাবে অকাল মৃত্যুবরণ করে, যার ৪৮ শতাংশের মৃত্যু হয় ঢাকা ও চট্টগ্রামে। গত ১০ মাসে শুধু ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনেই ১৯৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
ঢাকা শহরের গড় শব্দমাত্রা ৮০-৯০ ডেসিবেল, যা ‘ডব্লিউএইচও’ নির্ধারিত নিরাপদ সীমা দিনে ৫৫ ডেসিবেল এবং রাতে ৪৫ ডেসিবেল থেকে অনেক বেশি। এই অতিরিক্ত শব্দ দীর্ঘ মেয়াদে বধিরতা, কানের রোগ, মানসিক চাপ, উচ্চ রক্তচাপ, ঘুমের ব্যাঘাত ও হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ায়; এমনকি গর্ভস্থ শিশু ও শিশু-কিশোরদের শেখার ক্ষমতার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যদিও সরাসরি শব্দদূষণে মৃত্যুর আলাদা কোনো রেকর্ড করা হয় না। তবে ‘ডব্লিউএইচও’ শব্দজনিত হৃদ্রোগ ও স্ট্রোককে অকালমৃত্যুর ঝুঁকির কারণ হিসেবে বিবেচনা করে।
২০২৪ সালে সারা দেশে মোট ২৬ হাজার ৬৫৯টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সে হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ৭৩টি অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এসব অগ্নিকাণ্ডে ১৪০ জন নিহত ও ৩৪১ জন আহত হয়েছেন, যার অধিকাংশই ঢাকা শহরে।
এরপর ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ নগরগুলোর একটি, কারণ এটি বঙ্গোপসাগরীয় প্লেটের সীমানা, সক্রিয় ফল্ট লাইন এবং দুর্বল ভবন কাঠামোর মধ্যে অবস্থান করছে। সাম্প্রতিক রিখটার স্কেলে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মানুষ কেঁপে ওঠে এবং ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি মাত্রা ৭ কিংবা তার আশপাশে হয়, তাহলে ঢাকা শহরে মৃত্যুর মহাপ্রলয় ঘটে যাবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের প্রথম ৬ মাসে রাজধানীতে কমপক্ষে ৭০টি মুক্তিপণের মামলা করা হয়েছে। একই সময়ে ৫০টি থানা থেকে অন্তত ৩৩টি ডাকাতি, ২৪৮টি ছিনতাই, ১২১টি খুন এবং ১,০৬৮টি চুরির মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এসব অপরাধের সময় অনেক অপরাধী খুনসহ নরহত্যা ঘটিয়ে থাকে। গ্লোবাল সেন্টার ফর ডেমোক্রেটিকের রিপোর্ট অনুযায়ী, আগস্ট ২০২৪ থেকে জুলাই ২০২৫—এক বছরে দেশে ৬৩৭ জনকে মব লিঞ্চিংয়ে হত্যা করা হয়েছে। এর অধিকাংশ ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। ২০২৫ সালের ২১ জুলাই ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল প্রাঙ্গণে একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়। তাতে প্রায় ৩৫ জনের মৃত্যু ঘটে। এসবের বাইরে রয়েছে ঢাকার হোটেল-রেস্টুরেন্টের অস্বাস্থ্যকর খাবার, যা ধীরে ধীরে বিভিন্ন ধরনের মরণব্যাধি তৈরি করে যাচ্ছে।
ঢাকার এই ক্রমবর্ধমান মৃত্যু ও জীবনের অনিশ্চয়তার মূল কারণ হলো, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও অতিমাত্রায় কেন্দ্রীয়করণ, যা শহরের জনসংখ্যা, অবকাঠামো ও সেবা খাতের ওপর এমন চাপ সৃষ্টি করেছে, যে কারণে প্রতিটি মৌলিক ব্যবস্থাপনা ঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। ঢাকায় প্রায় সব অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত ও প্রশাসনিক সুযোগ কেন্দ্রীভূত থাকায় কোটি মানুষ এখানে ভিড় করে; কিন্তু সেই অনুপাতে রাস্তা, ড্রেনেজ, গ্যাস-বিদ্যুৎ, বর্জ্য, পরিবহন, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কাঠামো উন্নয়ন হয়নি। ফলে অতিরিক্ত জনঘনত্বের মধ্যে সীমিত অবকাঠামোর ওপর চাপ পড়ে। খোলা ড্রেন, পুরোনো বিদ্যুৎ-লাইনে শর্টসার্কিট, ফুটপাত দখল, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, অবৈধ নির্মাণ—প্রতিটি দৈনন্দিন বাস্তবতা সরাসরি প্রাণহানির উৎসে পরিণত হয়েছে। একইভাবে অতিরিক্ত যানবাহন ও অপরিকল্পিত সড়ক ব্যবস্থায় দুর্ঘটনা বাড়ছে। নগরের গাছপালা ধ্বংস হওয়ায় বায়ুদূষণ প্রাণঘাতী হয়েছে। মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যর্থতায় ডেঙ্গু-মহামারি। বিপুল আবাসনের কারণে রয়েছে অগ্নিঝুঁকি। অপরাধ দমন দুর্বল হওয়ায় ছিনতাই ও সহিংসতা বৃদ্ধি। এমনকি দুর্বল ভবন কাঠামো ও গাদাগাদি বসবাস ঢাকাকে ভূমিকম্পের সম্ভাব্য মৃত্যুকূপে পরিণত করেছে। অর্থাৎ সমস্যা একটি ঘটনা নয়—অপরিকল্পিত, অসংগঠিত শহরচিন্তা ও ব্যবস্থাপনার কারণে নগরের প্রতিটি উপাদানই এমনভাবে ব্যর্থ হয় যে, তা একটি প্রাণঘাতী ঘটনাকে অনিবার্য করে তোলে, আর সে ব্যর্থতার সামগ্রিক ফলই হলো ঢাকায় প্রতিদিনকার মৃত্যু।
এখনই ঢাকার এই মৃত্যুঝুঁকি কমাতে না পারলে, অদূর ভবিষ্যতে ঢাকার এই মৃত্যুর মিছিল আরও দীর্ঘ হবে। তাই ঢাকার এই মৃত্যুঝুঁকি কমাতে প্রয়োজন সুপরিকল্পিত নগরায়ণ ও প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ, যাতে রাজধানীর ওপর মানুষের অস্বাভাবিক চাপ কমে। জরুরি অবকাঠামো যেমন ড্রেনেজ, গ্যাস-বিদ্যুৎ, রাস্তা, ফুটপাত ও ভবনগুলো নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও কঠোর মানদণ্ডে নির্মাণ নিশ্চিত করতে হবে। বায়ু ও শব্দদূষণ কমাতে গণপরিবহন সম্প্রসারণ, শিল্পকারখানার নির্গমন নিয়ন্ত্রণ, সবুজায়ন বৃদ্ধি ও সাইলেন্স জোন বাস্তবায়ন জরুরি। ডেঙ্গু ও জনস্বাস্থ্যের জন্য স্থায়ী মশক নিয়ন্ত্রণ, হাসপাতালের সক্ষমতা বাড়ানো ও খাদ্যনিরাপত্তা তদারকি করা দরকার। সড়ক নিরাপত্তায় ট্রাফিক ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন, নিবন্ধন-ফিটনেস কঠোর করা ও পথচারী সুবিধার উন্নয়ন। অপরাধ দমনে আধুনিক নজরদারি ও দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করা। আগুন ও ভূমিকম্পের ঝুঁকি কমাতে পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নবায়ন, জরুরি মহড়া, নিরাপত্তা আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং নির্মাণের প্রতিটি ধাপে জবাবদিহি নিশ্চিত করাই হবে টেকসই সমাধান।
লেখক: শিক্ষার্থী পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

রাজধানী ঢাকায় বসবাস যেন দিন দিন একধরনের ‘রাশিয়ান রুলেট’ খেলার মতো হয়ে উঠছে। কখন, কোথা থেকে মৃত্যু আসবে—কেউ জানে না। একটি বৈদ্যুতিক খুঁটি, কোনো ভবনের অবৈধ অংশ, নড়বড়ে বিল্ডিং, খোলা ড্রেন কিংবা গ্যাসলাইনের সামান্য ফাঁক, সড়ক দুর্ঘটনা, এমনকি ছিনতাইকারীদের হাত যেকোনো মুহূর্তে কেড়ে নিতে পারে জীবন।
পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে মৃত্যু আর মৃত্যু। আর এ মৃত্যুর কারণ যেন স্বয়ং ঢাকা শহর। এখানে সামান্য বৃষ্টি হলে তৈরি হয় মৃত্যুর ফাঁদ। এ বছরের ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বংশালের নাজিরাবাজার এলাকায় সড়কে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে পড়ে আমিন হোসেন নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। পরে জানা যায়, পানিতে বিদ্যুতের তার ছিল, ফলে তিনি বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান। চা খেতে বসলেও যেন মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।
এ বছরের ২৬ অক্টোবর চা খেতে বসা এক ব্যক্তি মেট্রোরেলের ৩৫ কেজির একটি ‘বিয়ারিং প্যাড’-এর আঘাতে প্রাণ হারান। ২০২৪ সালে শুধু ঢাকা বিভাগেই সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১,৮৪০ জনের। ‘সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবছর বাংলাদেশে ৫,২৫৮ শিশুসহ মোট ১০২,৪৫৬ জন মানুষ বায়ুদূষণের প্রভাবে অকাল মৃত্যুবরণ করে, যার ৪৮ শতাংশের মৃত্যু হয় ঢাকা ও চট্টগ্রামে। গত ১০ মাসে শুধু ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনেই ১৯৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
ঢাকা শহরের গড় শব্দমাত্রা ৮০-৯০ ডেসিবেল, যা ‘ডব্লিউএইচও’ নির্ধারিত নিরাপদ সীমা দিনে ৫৫ ডেসিবেল এবং রাতে ৪৫ ডেসিবেল থেকে অনেক বেশি। এই অতিরিক্ত শব্দ দীর্ঘ মেয়াদে বধিরতা, কানের রোগ, মানসিক চাপ, উচ্চ রক্তচাপ, ঘুমের ব্যাঘাত ও হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ায়; এমনকি গর্ভস্থ শিশু ও শিশু-কিশোরদের শেখার ক্ষমতার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যদিও সরাসরি শব্দদূষণে মৃত্যুর আলাদা কোনো রেকর্ড করা হয় না। তবে ‘ডব্লিউএইচও’ শব্দজনিত হৃদ্রোগ ও স্ট্রোককে অকালমৃত্যুর ঝুঁকির কারণ হিসেবে বিবেচনা করে।
২০২৪ সালে সারা দেশে মোট ২৬ হাজার ৬৫৯টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সে হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ৭৩টি অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এসব অগ্নিকাণ্ডে ১৪০ জন নিহত ও ৩৪১ জন আহত হয়েছেন, যার অধিকাংশই ঢাকা শহরে।
এরপর ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ নগরগুলোর একটি, কারণ এটি বঙ্গোপসাগরীয় প্লেটের সীমানা, সক্রিয় ফল্ট লাইন এবং দুর্বল ভবন কাঠামোর মধ্যে অবস্থান করছে। সাম্প্রতিক রিখটার স্কেলে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মানুষ কেঁপে ওঠে এবং ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি মাত্রা ৭ কিংবা তার আশপাশে হয়, তাহলে ঢাকা শহরে মৃত্যুর মহাপ্রলয় ঘটে যাবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের প্রথম ৬ মাসে রাজধানীতে কমপক্ষে ৭০টি মুক্তিপণের মামলা করা হয়েছে। একই সময়ে ৫০টি থানা থেকে অন্তত ৩৩টি ডাকাতি, ২৪৮টি ছিনতাই, ১২১টি খুন এবং ১,০৬৮টি চুরির মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এসব অপরাধের সময় অনেক অপরাধী খুনসহ নরহত্যা ঘটিয়ে থাকে। গ্লোবাল সেন্টার ফর ডেমোক্রেটিকের রিপোর্ট অনুযায়ী, আগস্ট ২০২৪ থেকে জুলাই ২০২৫—এক বছরে দেশে ৬৩৭ জনকে মব লিঞ্চিংয়ে হত্যা করা হয়েছে। এর অধিকাংশ ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। ২০২৫ সালের ২১ জুলাই ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল প্রাঙ্গণে একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়। তাতে প্রায় ৩৫ জনের মৃত্যু ঘটে। এসবের বাইরে রয়েছে ঢাকার হোটেল-রেস্টুরেন্টের অস্বাস্থ্যকর খাবার, যা ধীরে ধীরে বিভিন্ন ধরনের মরণব্যাধি তৈরি করে যাচ্ছে।
ঢাকার এই ক্রমবর্ধমান মৃত্যু ও জীবনের অনিশ্চয়তার মূল কারণ হলো, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও অতিমাত্রায় কেন্দ্রীয়করণ, যা শহরের জনসংখ্যা, অবকাঠামো ও সেবা খাতের ওপর এমন চাপ সৃষ্টি করেছে, যে কারণে প্রতিটি মৌলিক ব্যবস্থাপনা ঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। ঢাকায় প্রায় সব অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত ও প্রশাসনিক সুযোগ কেন্দ্রীভূত থাকায় কোটি মানুষ এখানে ভিড় করে; কিন্তু সেই অনুপাতে রাস্তা, ড্রেনেজ, গ্যাস-বিদ্যুৎ, বর্জ্য, পরিবহন, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কাঠামো উন্নয়ন হয়নি। ফলে অতিরিক্ত জনঘনত্বের মধ্যে সীমিত অবকাঠামোর ওপর চাপ পড়ে। খোলা ড্রেন, পুরোনো বিদ্যুৎ-লাইনে শর্টসার্কিট, ফুটপাত দখল, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, অবৈধ নির্মাণ—প্রতিটি দৈনন্দিন বাস্তবতা সরাসরি প্রাণহানির উৎসে পরিণত হয়েছে। একইভাবে অতিরিক্ত যানবাহন ও অপরিকল্পিত সড়ক ব্যবস্থায় দুর্ঘটনা বাড়ছে। নগরের গাছপালা ধ্বংস হওয়ায় বায়ুদূষণ প্রাণঘাতী হয়েছে। মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যর্থতায় ডেঙ্গু-মহামারি। বিপুল আবাসনের কারণে রয়েছে অগ্নিঝুঁকি। অপরাধ দমন দুর্বল হওয়ায় ছিনতাই ও সহিংসতা বৃদ্ধি। এমনকি দুর্বল ভবন কাঠামো ও গাদাগাদি বসবাস ঢাকাকে ভূমিকম্পের সম্ভাব্য মৃত্যুকূপে পরিণত করেছে। অর্থাৎ সমস্যা একটি ঘটনা নয়—অপরিকল্পিত, অসংগঠিত শহরচিন্তা ও ব্যবস্থাপনার কারণে নগরের প্রতিটি উপাদানই এমনভাবে ব্যর্থ হয় যে, তা একটি প্রাণঘাতী ঘটনাকে অনিবার্য করে তোলে, আর সে ব্যর্থতার সামগ্রিক ফলই হলো ঢাকায় প্রতিদিনকার মৃত্যু।
এখনই ঢাকার এই মৃত্যুঝুঁকি কমাতে না পারলে, অদূর ভবিষ্যতে ঢাকার এই মৃত্যুর মিছিল আরও দীর্ঘ হবে। তাই ঢাকার এই মৃত্যুঝুঁকি কমাতে প্রয়োজন সুপরিকল্পিত নগরায়ণ ও প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ, যাতে রাজধানীর ওপর মানুষের অস্বাভাবিক চাপ কমে। জরুরি অবকাঠামো যেমন ড্রেনেজ, গ্যাস-বিদ্যুৎ, রাস্তা, ফুটপাত ও ভবনগুলো নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও কঠোর মানদণ্ডে নির্মাণ নিশ্চিত করতে হবে। বায়ু ও শব্দদূষণ কমাতে গণপরিবহন সম্প্রসারণ, শিল্পকারখানার নির্গমন নিয়ন্ত্রণ, সবুজায়ন বৃদ্ধি ও সাইলেন্স জোন বাস্তবায়ন জরুরি। ডেঙ্গু ও জনস্বাস্থ্যের জন্য স্থায়ী মশক নিয়ন্ত্রণ, হাসপাতালের সক্ষমতা বাড়ানো ও খাদ্যনিরাপত্তা তদারকি করা দরকার। সড়ক নিরাপত্তায় ট্রাফিক ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন, নিবন্ধন-ফিটনেস কঠোর করা ও পথচারী সুবিধার উন্নয়ন। অপরাধ দমনে আধুনিক নজরদারি ও দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করা। আগুন ও ভূমিকম্পের ঝুঁকি কমাতে পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নবায়ন, জরুরি মহড়া, নিরাপত্তা আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং নির্মাণের প্রতিটি ধাপে জবাবদিহি নিশ্চিত করাই হবে টেকসই সমাধান।
লেখক: শিক্ষার্থী পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা শহরে পাঁচতলা ভবনের একটি বাসায় থাকি। কয়েক দিন আগে ভূমিকম্পের একটা প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেয়ে বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। তাৎক্ষণিকভাবে মনে হলো, এক্ষুনি ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে যাওয়া উচিত। পরক্ষণেই মনে হলো, নিচে যাব ঠিক আছে, কিন্তু নিচে গিয়ে দাঁড়াব কোথায়? গায়ে গায়ে দালানগুলো দাঁড়িয়ে আছে।
১ দিন আগে
‘আপনা মাংসে হরিণা বৈরী’ খুবই পরিচিত একটি উক্তি। উক্তিটি কবি ভুসুকুপার, যেটা চর্যাপদের। কারও সৌন্দর্য যখন তার জন্য ক্ষতিকর কিছু হয়, তখন উক্তিটি ব্যবহার করি আমরা। যেমন সুন্দরবনের হরিণ আর বাঘের ক্ষেত্রেও বিষয়টা প্রযোজ্য। এই দুটি প্রাণীর প্রাণ বিসর্জন দিতে হচ্ছে শুধু দৈহিক সৌন্দর্যের কারণে।
৪ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সমাগত। কথায় আছে, ঠেলাঠেলির ঘর খোদায় রক্ষা কর। বহু মত আর পথের অনুসারীদের এক মঞ্চে অবস্থান মানে কখনো কখনো টানাপোড়েনকেও মেনে নেওয়া। নানা রকমের দ্বিধা-সংকোচ, শর্তের বেড়াজাল, নিন্দা-অপবাদ, সমালোচনা; তাও ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ একতাবদ্ধ হওয়া।
৬ ঘণ্টা আগে
নির্বাচন সময়মতো হচ্ছে কি না, তা নিয়ে সংশয় এখনো কাটেনি। আদালতে রিট কিংবা কোনো কোনো দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার আহ্বান ইত্যাদি নির্বাচনের পরিস্থিতি কোন দিকে নিয়ে যাবে, সেটা বলা মুশকিল। তবে দেশের মানুষ একটি সুস্থ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন চায়।
৭ ঘণ্টা আগেসম্পাদকীয়

নির্বাচন সময়মতো হচ্ছে কি না, তা নিয়ে সংশয় এখনো কাটেনি। আদালতে রিট কিংবা কোনো কোনো দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার আহ্বান ইত্যাদি নির্বাচনের পরিস্থিতি কোন দিকে নিয়ে যাবে, সেটা বলা মুশকিল। তবে দেশের মানুষ একটি সুস্থ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন চায়। প্রতিটি দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন উৎসবমুখর হয়ে উঠুক, এটাই জনতার অভিপ্রায়।
মুশকিল হলো, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মত জনতার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। প্রতিটি রাজনৈতিক দলই ‘জনগণ যা চায়’ বলে যখন নিজেদের কথাই বলতে থাকে, তখন ধীরে ধীরে জনগণ সে কৌশল বুঝে উঠতে শুরু করে। শুকনো কথায় তখন চিড়ে ভেজানো কঠিন হয়ে পড়ে।
এই নির্বাচনে যে তরুণেরা ভোট দেবেন, তাঁদের অনেকেই এর আগে ভোট দিতে পারেননি। এর আগেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হয়নি। কিছু দলকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করা হয়েছিল। এবারও যদি কিছু দলকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করা হয়, তাহলে তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাবে।
তরুণেরা ভোট দেওয়ার সময় যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন বলে মনে হয়, তা হলো—ভবিষ্যতে স্বৈরাচারী ব্যবস্থা কায়েম হতে পারে, এ রকম যেকোনো পদক্ষেপ রুখে দেওয়া। একাত্তর প্রশ্নে তরুণেরা বিভ্রান্ত হবেন না বলেই মনে হয়। কেন গণ-আন্দোলনপরবর্তী সময়টিতে নানা জায়গা থেকে একাত্তরবিরোধী বক্তব্য উঠে আসছে, তা নিয়েও তাঁরা ভাববেন নিশ্চয়। তরুণেরা নিজেরাই যাচাই করে নিতে পারবেন, কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা। তাঁরা যখন চুকনগর হত্যাকাণ্ডের কথা পড়বেন, তখন জেনে যাবেন এক দিনেই কীভাবে ১০ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনের মূল চেহারা নিয়েও তাঁরা নিশ্চয়ই নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেবেন। ইতিহাসকে আড়ালে রেখে যে কৌশলী নতুন বয়ান সৃষ্টি করতে চাইছে কোনো কোনো মহল, তরুণেরা তাদের সেই ষড়যন্ত্রে পা দেবেন কি না, সেটাও সময় বলে দেবে।
হতাশ হওয়ার মতো ব্যাপার হলো, যাঁদের দায়িত্ব ছিল মুক্তিযুদ্ধের মহান ইতিহাস ঠিকভাবে রচনার মাধ্যমে আমাদের অর্জন স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা করা, তাঁরা নানা সময় ব্যর্থ হয়েছেন এবং নিজেরাই ফায়দা লোটায় নিয়োজিত হয়েছেন।
কোনো জাতি তার ইতিহাসকে ভুল পথে পরিচালনা করে না। সবাই তার ইতিহাস নিয়ে গর্ব করে। বিজয়ের এই মাসে তরুণদের সে কথা মনে রাখতে হবে।
বুঝতে হবে, রাজনৈতিক দলের বয়ান আর মানুষের জন্য কাজ করা রাজনীতি সব সময় এক জায়গায় এসে মেলে না। জনগণ পাঁচ বছরের মধ্যে একটি দিনই তাদের মতামত প্রকাশের সুযোগ পায়। এরপর যে দল ক্ষমতায় আসে, সে দল তার মতো করেই দেশ শাসন করতে থাকে। অভিজ্ঞতা বলে, সেই শাসনের সঙ্গে তাদের প্রতিশ্রুতি এবং অঙ্গীকারের মিল কম থাকে।
এবার নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সময় তরুণেরা সে দিকটা নিশ্চয়ই বিবেচনা করবেন।

নির্বাচন সময়মতো হচ্ছে কি না, তা নিয়ে সংশয় এখনো কাটেনি। আদালতে রিট কিংবা কোনো কোনো দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার আহ্বান ইত্যাদি নির্বাচনের পরিস্থিতি কোন দিকে নিয়ে যাবে, সেটা বলা মুশকিল। তবে দেশের মানুষ একটি সুস্থ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন চায়। প্রতিটি দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন উৎসবমুখর হয়ে উঠুক, এটাই জনতার অভিপ্রায়।
মুশকিল হলো, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মত জনতার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। প্রতিটি রাজনৈতিক দলই ‘জনগণ যা চায়’ বলে যখন নিজেদের কথাই বলতে থাকে, তখন ধীরে ধীরে জনগণ সে কৌশল বুঝে উঠতে শুরু করে। শুকনো কথায় তখন চিড়ে ভেজানো কঠিন হয়ে পড়ে।
এই নির্বাচনে যে তরুণেরা ভোট দেবেন, তাঁদের অনেকেই এর আগে ভোট দিতে পারেননি। এর আগেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হয়নি। কিছু দলকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করা হয়েছিল। এবারও যদি কিছু দলকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করা হয়, তাহলে তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাবে।
তরুণেরা ভোট দেওয়ার সময় যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন বলে মনে হয়, তা হলো—ভবিষ্যতে স্বৈরাচারী ব্যবস্থা কায়েম হতে পারে, এ রকম যেকোনো পদক্ষেপ রুখে দেওয়া। একাত্তর প্রশ্নে তরুণেরা বিভ্রান্ত হবেন না বলেই মনে হয়। কেন গণ-আন্দোলনপরবর্তী সময়টিতে নানা জায়গা থেকে একাত্তরবিরোধী বক্তব্য উঠে আসছে, তা নিয়েও তাঁরা ভাববেন নিশ্চয়। তরুণেরা নিজেরাই যাচাই করে নিতে পারবেন, কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা। তাঁরা যখন চুকনগর হত্যাকাণ্ডের কথা পড়বেন, তখন জেনে যাবেন এক দিনেই কীভাবে ১০ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনের মূল চেহারা নিয়েও তাঁরা নিশ্চয়ই নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেবেন। ইতিহাসকে আড়ালে রেখে যে কৌশলী নতুন বয়ান সৃষ্টি করতে চাইছে কোনো কোনো মহল, তরুণেরা তাদের সেই ষড়যন্ত্রে পা দেবেন কি না, সেটাও সময় বলে দেবে।
হতাশ হওয়ার মতো ব্যাপার হলো, যাঁদের দায়িত্ব ছিল মুক্তিযুদ্ধের মহান ইতিহাস ঠিকভাবে রচনার মাধ্যমে আমাদের অর্জন স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা করা, তাঁরা নানা সময় ব্যর্থ হয়েছেন এবং নিজেরাই ফায়দা লোটায় নিয়োজিত হয়েছেন।
কোনো জাতি তার ইতিহাসকে ভুল পথে পরিচালনা করে না। সবাই তার ইতিহাস নিয়ে গর্ব করে। বিজয়ের এই মাসে তরুণদের সে কথা মনে রাখতে হবে।
বুঝতে হবে, রাজনৈতিক দলের বয়ান আর মানুষের জন্য কাজ করা রাজনীতি সব সময় এক জায়গায় এসে মেলে না। জনগণ পাঁচ বছরের মধ্যে একটি দিনই তাদের মতামত প্রকাশের সুযোগ পায়। এরপর যে দল ক্ষমতায় আসে, সে দল তার মতো করেই দেশ শাসন করতে থাকে। অভিজ্ঞতা বলে, সেই শাসনের সঙ্গে তাদের প্রতিশ্রুতি এবং অঙ্গীকারের মিল কম থাকে।
এবার নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সময় তরুণেরা সে দিকটা নিশ্চয়ই বিবেচনা করবেন।

ঢাকা শহরে পাঁচতলা ভবনের একটি বাসায় থাকি। কয়েক দিন আগে ভূমিকম্পের একটা প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেয়ে বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। তাৎক্ষণিকভাবে মনে হলো, এক্ষুনি ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে যাওয়া উচিত। পরক্ষণেই মনে হলো, নিচে যাব ঠিক আছে, কিন্তু নিচে গিয়ে দাঁড়াব কোথায়? গায়ে গায়ে দালানগুলো দাঁড়িয়ে আছে।
১ দিন আগে
‘আপনা মাংসে হরিণা বৈরী’ খুবই পরিচিত একটি উক্তি। উক্তিটি কবি ভুসুকুপার, যেটা চর্যাপদের। কারও সৌন্দর্য যখন তার জন্য ক্ষতিকর কিছু হয়, তখন উক্তিটি ব্যবহার করি আমরা। যেমন সুন্দরবনের হরিণ আর বাঘের ক্ষেত্রেও বিষয়টা প্রযোজ্য। এই দুটি প্রাণীর প্রাণ বিসর্জন দিতে হচ্ছে শুধু দৈহিক সৌন্দর্যের কারণে।
৪ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সমাগত। কথায় আছে, ঠেলাঠেলির ঘর খোদায় রক্ষা কর। বহু মত আর পথের অনুসারীদের এক মঞ্চে অবস্থান মানে কখনো কখনো টানাপোড়েনকেও মেনে নেওয়া। নানা রকমের দ্বিধা-সংকোচ, শর্তের বেড়াজাল, নিন্দা-অপবাদ, সমালোচনা; তাও ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ একতাবদ্ধ হওয়া।
৬ ঘণ্টা আগে
রাজধানী ঢাকায় বসবাস যেন দিন দিন একধরনের ‘রাশিয়ান রুলেট’ খেলার মতো হয়ে উঠছে। কখন, কোথা থেকে মৃত্যু আসবে—কেউ জানে না। একটি বৈদ্যুতিক খুঁটি, কোনো ভবনের অবৈধ অংশ, নড়বড়ে বিল্ডিং, খোলা ড্রেন কিংবা গ্যাসলাইনের সামান্য ফাঁক, সড়ক দুর্ঘটনা, এমনকি ছিনতাইকারীদের হাত যেকোনো মুহূর্তে কেড়ে নিতে পারে জীবন।
৭ ঘণ্টা আগে