Ajker Patrika

বাজেট ২০২৫-২৬

জমি-ফ্ল্যাটের নিবন্ধনে আসছে বড় সংস্কার

  • জমি ও ফ্ল্যাট নিবন্ধনে মৌজা মূল্য বাতিল হচ্ছে। বাধ্যতামূলক হচ্ছে বাজারমূল্য।
  • কর ও ফি কমছে প্রায় ৪০%। বন্ধ হচ্ছে গেইন ট্যাক্স ফাঁকির পথ।
বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ২২ মে ২০২৫, ১২: ৫৭
জমি-ফ্ল্যাটের নিবন্ধনে আসছে বড় সংস্কার

জমি ও ফ্ল্যাট কেনাবেচায় কালোটাকা ব্যবহার বন্ধের পথে এগোচ্ছে সরকার। আসছে অর্থবছরের বাজেট থেকেই জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনে (নিবন্ধন) কর ও ফি প্রায় ৪০ শতাংশ কমিয়ে আনা হচ্ছে। তবে আগের মতো ‘মৌজা মূল্য’ ধরে নয়, বরং বাস্তব বাজারদরের ভিত্তিতে হবে রেজিস্ট্রেশন। তার মানে দলিলে প্রকৃত মূল্য দেখাতে হবে বাধ্যতামূলকভাবে। সরকারের বিশ্বাস, এই নীতিগত বদল একদিকে যেমন কালোটাকার শক্তি ও রাজস্ব ফাঁকির প্রবণতা কমাবে, তেমনি রাজস্ব আদায়ে ফিরবে স্বচ্ছতা ও গতি।

বর্তমানে জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনে মোট কর ও ফি অঞ্চলভেদে ১৪-১৫ শতাংশ পর্যন্ত। আগামী অর্থবছর তা কমিয়ে ৮-৯ শতাংশে আনার প্রস্তাব নিয়ে সম্প্রতি বৈঠকে বসেন এনবিআর, অর্থ মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

সরকারের লক্ষ্য, দলিলে কম দাম দেখিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার দীর্ঘদিনের সুযোগ বন্ধ করা। কারণ, ‘মৌজা মূল্য’ অনেক ক্ষেত্রেই বাজারমূল্যের চেয়ে ৫ থেকে ১০ গুণ পর্যন্ত কম। ফলে জমি বা ফ্ল্যাট বিক্রির আসল মূল্য গোপন থেকে যায়, দলিল হয় কম দামে। অবশিষ্ট অর্থ চলে যায় অফিশিয়াল চ্যানেলের বাইরে। এতে তৈরি হয় কালোটাকার অবাধ প্রবাহ, রাজস্ব হারায় সরকার

২০২৩-২৪ অর্থবছরে জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ১২ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ এসেছে গেইন ট্যাক্স বাবদ—৬ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) হিসাব অনুযায়ী, দলিলে কম দাম দেখানোর কারণে বছরে গড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার মতো রাজস্ব হারায় সরকার।

সম্প্রতি এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, ‘গুলশানে এক কাঠা জমির মৌজা মূল্য ১৫ লাখ টাকা, অথচ বাজারমূল্য ৫ কোটি। এই ব্যবধানেই তৈরি হয় কালোটাকা। আমরা এখন সেটাই বদলাতে চাই। করহার কমালেও দলিল হবে বাস্তব দামে।’ তিনি জানান, এবারের বাজেটে কোনোভাবেই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হবে না।

আরেক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তাঁর মতে, দলিলমূল্য যদি বাজারমূল্যের কাছাকাছি না হয়, তাহলে লেনদেনের বড় অংশেই কালোটাকা ঢুকে পড়ে। বাজারদর অনুযায়ী দলিল বাধ্যতামূলক হলে একদিকে যেমন আবাসন বাজারে স্বচ্ছতা বাড়বে, তেমনি রাজস্ব আয়ও হবে সঠিকভাবে।’

তবে তাঁর সতর্ক বার্তার ফলে প্রথম দিকে আবাসন বাজারে কিছুটা মন্দা আসতে পারে। কারণ তখন ক্রেতাকে পুরো অর্থ সাদাটাকায় দিতে হবে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে এই পদ্ধতি দুর্নীতি কমাবে এবং বাজার হবে স্থিতিশীল ও বাস্তবমুখী।

দেশে আবাসন খাতের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) এই করহার কমানোর প্রস্তাবকে স্বস্তিকর বলে দাবি করলেও মৌজা মূল্য বাতিলের উদ্যোগে জানিয়েছে আপত্তি। সংগঠনটি স্পষ্টভাবে জানিয়েছে—তারা বাজারমূল্যে দলিল বাধ্যতামূলক করার পক্ষে নয়। রিহ্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া দাবি করেন, ‘দলিলে বাজারমূল্য বাধ্যতামূলক করা হলে সেক্টরে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আসতে পারে।’

তবে এনবিআর কর্মকর্তারা জানান, অতীতে অনেক সময় আবাসন খাতের দাবি অনুযায়ী কর কমানো হলেও এ খাত কর ফাঁকির সংস্কৃতি থেকে বের হতে পারেনি। বরং অনেকে জমি ও ফ্ল্যাট বিক্রি করেও রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে না।

২০১০ সালের ‘সর্বনিম্ন বাজারমূল্য নির্ধারণ বিধিমালা’ সংশোধনের মাধ্যমে এখন থেকে প্রতিটি মৌজায় শেষ দুই বছরে সম্পাদিত দলিলের গড় মূল্য বিশ্লেষণ করে—গণশুনানি বা গোপন তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত বাজারমূল্য নির্ধারণ করা হবে। প্রয়োজনে এক মৌজাকে ভেঙে একাধিক ক্লাস্টারে ভাগ করার সুযোগও থাকবে।

বাজারমূল্য নির্ধারণের কমিটিগুলোর নেতৃত্বে থাকবেন বিভাগীয় কমিশনার বা জেলা প্রশাসকেরা। তাঁরা আইন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে সর্বনিম্ন বাজারমূল্য নির্ধারণ করবেন, যা ভূমি মন্ত্রণালয়ের ডেটাবেইসে প্রকাশ করা হবে। প্রতিবছর এই তথ্য হালনাগাদ করার কথাও থাকছে।

এনবিআর সূত্র জানায়, আগামী বাজেটে রেজিস্ট্রেশন ফি ১ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকলেও স্ট্যাম্প ফি ১.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশে আনার প্রস্তাব আসছে। স্থানীয় সরকার কর ও গেইন ট্যাক্স নিয়েও ছাড়ের চিন্তা রয়েছে; যাতে সম্মিলিতভাবে কর ও ফি ৮ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে থাকে।

সংস্থাটির কর্মকর্তাদের মতে, এই সংস্কারের মাধ্যমে স্বল্প মেয়াদে কিছুটা চাপ সৃষ্টি হলেও দীর্ঘ মেয়াদে আবাসন বাজার আরও বাস্তবভিত্তিক, সুশৃঙ্খল এবং রাজস্ববান্ধব হয়ে উঠবে, যেখানে দলিল হবে বাস্তব দামে আর কালোটাকার দৌরাত্ম্য কমবে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সেই এনায়েত করিমের মামলায় সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে গ্রেপ্তার দেখাল ডিবি

খালেদা জিয়ার রিপোর্ট ভালো, চেষ্টা করছেন কথা বলার: চিকিৎসক

১০ ঘণ্টা পর বিটিআরসির অবরোধ তুলে নিলেন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীরা

দিনে ১৫০০ টন পেঁয়াজ আমদানি, ভারতের চাষিদের মুখে হাসি ফেরাল বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিরাপত্তা কৌশল নিয়ে রাশিয়ার উচ্ছ্বাস

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাংলাদেশের ‘অভ্যুদয় ঠেকাতে’ জাতিসংঘে ভোট পাস

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশের ‘অভ্যুদয় ঠেকাতে’ জাতিসংঘে ভোট পাস

১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহটি কাটল। অনিবার্য বিজয়ের পথে এগিয়ে চলেছে বাংলার মুক্তিবাহিনী। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় ডিসেম্বরের ৭ তারিখ রাতে (বিশ্বের এ প্রান্তে ততক্ষণে ৮ তারিখ) জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ পূর্ব পাকিস্তানে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং ভারত-পাকিস্তান উভয় পক্ষের সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে প্রস্তাব পাস করে। যুক্তরাষ্ট্রের আনা প্রস্তাবটি ১০৪-১১ ভোটে গৃহীত হয়।

জাতিসংঘে উপমহাদেশের রাজনীতির এই অত্যন্ত জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির আলোচনা তাড়াহুড়োর মধ্য দিয়েই এগিয়ে নেওয়া হয়েছিল। বলা হয়, সাধারণ পরিষদের অধিকাংশ সদস্য দেশই এ প্রস্তাবের মর্ম বুঝতে পারেনি। নয় মাস যুদ্ধের পর ওই সময় যুদ্ধবিরতি মানেই গণহত্যার শিকার হয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া বাঙালিদের স্বাধীনতার স্বপ্ন ভেঙে যাওয়া। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকানোর এই আন্তর্জাতিক কূটকৌশল ভোটে জিতে গেলেও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার মিত্র সমাজতন্ত্রী অন্য কয়েকটি দেশ এবং প্রতিবেশী ভারত ও ভুটান অটল থাকে। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ ১০টি দেশ ভোটদানে বিরত থেকেছিল।

৮ ডিসেম্বর ভারতীয় বাহিনী সকাল থেকেই ঢাকায় পাকিস্তানি সামরিক অবস্থানে কয়েকবার বিমান হামলা চালায়। এদিন পাকিস্তানি বিমানবাহিনী পাল্টা হামলা চালাতে পারেনি। পূর্ব পাকিস্তান সরকার অনির্দিষ্টকালের জন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। এদিন আবার সরকারি রেডিওতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিকেল ৫টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত কারফিউ এবং ব্ল্যাকআউটের (ঘরের আলো যাতে জ্বালানো না হয় বা বাইরে যায়) নির্দেশ প্রচার করা হলো। এ নির্দেশনা আগে থেকেই বহাল ছিল। সম্ভবত পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতির চাপে বিচলিত হয়ে নতুন করে আদেশটি জারি করে।

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এদিন দেশের সহকারী প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোকে জাতিসংঘে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন।

৮ ডিসেম্বর রণাঙ্গনে পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে পড়ে। পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন রণক্ষেত্রে ভারতের বাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের অগ্রগতি প্রায় থেমে যায়। যশোরের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকেও পাকিস্তানি সেনারা সরে যায়। কুমিল্লার এক অংশের পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে। অন্য অংশের পাশ কাটিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মিত্র বাহিনী এগোতে থাকে।

পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এহেন বেহাল সামরিক পরিস্থিতির মধ্যে নির্মম স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খান জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথিত ‘ওয়াদা’ বাস্তবায়ন করতে পূর্ব পাকিস্তান থেকে নুরুল আমিন ও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে জুলফিকার আলী ভুট্টোকে যথাক্রমে প্রধানমন্ত্রী ও উপপ্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন।

৮ তারিখ রাতেই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সংক্ষিপ্ত ভাষণ প্রচারিত হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এখন একেবারে শেষ পর্যায়ে। সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে চিরতরে আঘাত করার ডাক দেন তিনি। দুদিন আগে বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য তিনি ভুটান এবং ভারতের সরকার ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তাজউদ্দীন আহমদ আশা প্রকাশ করেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশও এখন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সেই এনায়েত করিমের মামলায় সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে গ্রেপ্তার দেখাল ডিবি

খালেদা জিয়ার রিপোর্ট ভালো, চেষ্টা করছেন কথা বলার: চিকিৎসক

১০ ঘণ্টা পর বিটিআরসির অবরোধ তুলে নিলেন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীরা

দিনে ১৫০০ টন পেঁয়াজ আমদানি, ভারতের চাষিদের মুখে হাসি ফেরাল বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিরাপত্তা কৌশল নিয়ে রাশিয়ার উচ্ছ্বাস

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভোটের আগে নেশার বাণিজ্য

শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা 
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭: ৫৯
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

দেশে ফেনসিডিলের পাশাপাশি নেশা-জাতীয় একই ধরনের নতুন তিনটি সিরাপের বিস্তার ঘটাতে চাইছে ভারতের মাদক কারবারিরা। বাংলাদেশের সীমান্তঘেঁষা ভারতের ১০ জেলার কারখানায় তৈরি এসব মাদক ঢুকছে দেশের আট সীমান্ত জেলা দিয়ে। ইতিমধ্যে ছোট কয়েকটি চালান আটকও হয়েছে। মাদক হিসেবে এখনো অপরিচিত নতুন এসব সিরাপ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যস্ততার সুযোগে নতুন এসব মাদকের বড় বড় চালান বাংলাদেশে পাঠানোর ছক কষছে ভারতের মাদক কারবারিরা। ফেনসিডিলের মতো এসব সিরাপও কোডিন ফসফেট মিশ্রিত। বোতলজাত এসব মাদকের দেশে প্রবেশ বন্ধে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের সূত্র বলছে, ফেনসিডিলের মতো নেশাজাতীয় নতুন এই সিরাপগুলো হলো ‘ব্রনোকফ সি’, ‘চকো প্লাস’ ও ‘উইন কোরেক্স’। এগুলোর মধ্যে ব্রনোকফ সি নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন অধিদপ্তর। নেশাজাতীয় উপাদান থাকায় কাশির এসব সিরাপ ইতিমধ্যে ভারতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নাম নতুন হলেও এই তিন সিরাপের নেশার মাত্রা ফেনসিডিলের সমান। ফেনসিডিলের বোতলে ভরে নতুন নামের মোড়ক লাগিয়ে পাঠানো হচ্ছে। এর আগে ভারত থেকে এস্কাফ নামের সিরাপও একইভাবে দেশে ঢুকেছিল।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশে মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৮৩ লাখ। তাদের বেশির ভাগ পুরুষ। নারী ও শিশুদের মধ্যেও মাদকাসক্তি রয়েছে। ৩ লাখ ৪৬ হাজারের বেশি মাদকসেবী ফেনসিডিল ও সমজাতীয় মাদকে আসক্ত।

অধিদপ্তরের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন অধিশাখা বলছে, এসব মাদক সেবনে গলা শুকিয়ে যাওয়া, ঝিমুনি, লিভার-কিডনি অকেজো হওয়া এবং দীর্ঘ মেয়াদে পুরুষের প্রজননক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো মারাত্মক ক্ষতি হয়।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ভারতের সীমান্তবর্তী ১০টি জেলায় কমপক্ষে ৬২টি কারখানায় নেশাজাতীয় নতুন তিন ধরনের সিরাপ তৈরি হচ্ছে। এসব কারখানা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা, নদীয়া, মালদা, মুর্শিদাবাদ, ত্রিপুরার পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চল, সিপাহীজলা, বিলোনিয়া, শান্তির বাজার ও মেঘালয় রাজ্যের একটি জেলায়। এসব কারখানাকেন্দ্রিক ৩৭৪ ভারতীয় মাদক কারবারি বাংলাদেশে মাদক চোরাচালান করে। এসব মাদক ঢুকছে সীমান্ত জেলা সাতক্ষীরা, যশোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া দিয়ে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র বলেছে, অধিদপ্তর ভারতে মাদক তৈরির এসব কারখানা ও কারবারিদের বিস্তারিত পরিচয়, ঠিকানা, পাঠানোর রুট এবং জিরো লাইন থেকে দূরত্ব পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে। এসব তথ্য ভারতকে রাষ্ট্রীয়ভাবে দিয়ে কারখানাগুলো বন্ধের সুপারিশ করবে বাংলাদেশ সরকার। পাশাপাশি এই মাদক দেশের যে আট সীমান্ত জেলা দিয়ে ঢুকছে, সেখানকার পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) সতর্ক করা হবে।

তবে অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ভারতীয় মাদক তৈরির কারখানার তালিকা করে কখনো খুব একটা ফল আসেনি। অভিযোগ দিলেও আগে ভারত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, নতুন তিনটি নেশাজাতীয় সিরাপের মধ্যে ‘ব্রনোকফ সি’ বেশি উদ্বেগের কারণ। রাজশাহীর চারঘাট ও দামকুড়া এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে নতুন এই সিরাপ বেশি ঢুকছে। সহজলভ্যতার কারণে এটি দ্রুত ওষুধজাত মাদকের বিকল্প হয়ে উঠেছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যস্ত হয়ে পড়লে এই মাদক পাচার বহুগুণ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

নতুন মাদকের বিষয়ে খোঁজখবর রাখা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বগুড়া কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহা. জিললুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, কোডিন ফসফেট মিশ্রিত সিরাপের বাণিজ্যিক নাম ফেনসিডিল, ব্রনোকফ সি, চকো প্লাস বা উইন কোরেক্স যা-ই হোক না কেন, এগুলোর দেশে প্রবেশ বন্ধে প্রথমে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সতর্কতা প্রয়োজন। সীমান্তে ঠেকাতে পারলে দেশে এসব মাদক নিয়ন্ত্রণ অনেক সহজ হবে। তিনি বলেন, ভারতের ল্যাবোরেট ফার্মাসিউটিক্যালস নামের প্রতিষ্ঠান সিরাপগুলো কাশির ওষুধ হিসেবে প্রস্তুত করে। নেশাজাতীয় উপাদান ব্যবহারের কারণে ভারতেই এগুলো নিষিদ্ধ; তবে উৎপাদন বন্ধ হয়নি। ফলে সেগুলো ভারতীয় বিভিন্ন রাজ্যে এবং সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ছড়াচ্ছে।

অধিদপ্তরের গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ইউসুফপুর ও দামকুড়া থানার মুরারীপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের কয়েকজন স্থানীয় ব্যবসায়ী ‘ব্রনোকফ সি’ আনা-নেওয়ার সঙ্গে জড়িত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক সদস্য নতুন মাদকের ধরনটি এখনো না চেনায় পাচারকারীরা সহজে সীমান্ত পার করতে পারছে। ব্রনোকফ সির প্রবেশ বন্ধে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছে অধিদপ্তর।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ সীমান্তে ৩ ডিসেম্বর ‘চকো প্লাস’ সিরাপের একটি চালান জব্দ করে বিজিবি। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিজিবির মহানন্দা ব্যাটালিয়ন সীমান্তে টহল জোরদার করে এবং ১৫০ বোতল চকো প্লাস উদ্ধার করে। গত এক মাসে একই ব্যাটালিয়ন প্রায় ২০০ বোতল চকো প্লাস জব্দ করেছে। চকো প্লাস নামের সিরাপ এই সীমান্তে এর আগে আটক হয়নি।

জানতে চাইলে বিজিবির মহানন্দা ব্যাটালিয়নের (৫৯ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘মাদক চোরাচালানের বিরুদ্ধে বিজিবি জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে। নতুন মাদক নিয়েও আমরা সতর্ক রয়েছি এবং মাদক প্রতিরোধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’

সূত্র জানায়, যশোরের শার্শা ও বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে বেশি আসছে ‘উইন কোরেক্স’ নামের নেশাজাতীয় সিরাপ। গত নভেম্বরের প্রথম ১০ দিনে বিজিবি ৮৫০ বোতল এই সিরাপ জব্দ করেছে। এক বোতল ফেনসিডিল বিক্রি হয় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায়, কিন্তু এক বোতল উইন কোরেক্স বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকায়। বোতলের আকারসহ সবকিছু ফেনসিডিলের মতো হওয়ায় তরুণদের মধ্যে নতুন এই সিরাপে আগ্রহ দ্রুত বাড়ছে। অভিযোগ রয়েছে, পাচারকারীরা নেশার মাত্রা বাড়াতে ছিপি খুলে সিরাপের সঙ্গে প্যাথেডিন মিশিয়ে দিচ্ছে। এতে এটি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হয়েও বাংলাদেশে নানা ধরনের মাদক ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ওষুধের আড়ালে ভিন্ন ভিন্ন নামে যদি নতুন মাদক প্রবেশ করে, তাহলে সেগুলোর বিষয়ে প্রতিটি সংস্থাকে নজরদারি জোরদার করতে হবে। তা না হলে দেশে মাদকাসক্ত তরুণের সংখ্যা আরও বাড়বে; যার পরিণতি দেশের জন্য ভয়াবহ হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সেই এনায়েত করিমের মামলায় সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে গ্রেপ্তার দেখাল ডিবি

খালেদা জিয়ার রিপোর্ট ভালো, চেষ্টা করছেন কথা বলার: চিকিৎসক

১০ ঘণ্টা পর বিটিআরসির অবরোধ তুলে নিলেন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীরা

দিনে ১৫০০ টন পেঁয়াজ আমদানি, ভারতের চাষিদের মুখে হাসি ফেরাল বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিরাপত্তা কৌশল নিয়ে রাশিয়ার উচ্ছ্বাস

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির পথ খুলল নতুন নীতিমালায়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩২
অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির পথ খুলল নতুন নীতিমালায়

বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল ও কলেজে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদ বিলুপ্ত করা, শিক্ষকদের বিএড স্কেল প্রাপ্তির বিধানে পরিবর্তন, অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সুযোগ সৃষ্টি করা, এমপিওভুক্তির সূচকে পরিবর্তনসহ নানা পরিবর্তন আনা হয়েছে নতুন এমপিও নীতিমালায়।

আজ রোববার সন্ধ্যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এ নীতিমালা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করে। এটি ৪ ডিসেম্বর জারি করা হয়েছিল বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) সাইয়েদ এ জেড মোরশেদ আলী রাতে আজকের পত্রিকাকে জানান, নতুন নীতিমালায় একাডেমিক স্বীকৃতি বা অধিভুক্তির জন্য আলাদা সূচক অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি শ্রেণিতে ৫৫ জন শিক্ষার্থী থাকার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে নীতিমালায়।

সাইয়েদ এ জেড মোরশেদ আলী আরও বলেন, শিক্ষকদের বিএড স্কেল প্রাপ্তির বিধানে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগে সরকারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট থেকে এবং কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বিএড করা শিক্ষকেরা এ সুবিধা পেতেন। এখন থেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বিএড করলেও শিক্ষকেরা বিএড স্কেল পাবেন, তবে এ ক্ষেত্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বা ইউজিসি থেকে ওই প্রতিষ্ঠানের অধিভুক্তি থাকতে হবে এবং ইউজিসি বা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে অধিভুক্তির ঘোষণা প্রকাশ থাকতে পারবে।

বেসরকারি কলেজে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদ গত অক্টোবরেই বিলুপ্ত করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়, নতুন নীতিমালায় সে বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা বলে জানান এ কর্মকর্তা।

অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সুযোগ নতুন নীতিমালায় দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে সাইয়েদ এ জেড মোরশেদ আলী আরও বলেন, অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সুযোগ দিয়ে তাঁদের প্যাটার্নভুক্ত করা হয়েছে। এমপিওভুক্ত যে কলেজগুলো অনার্স পড়ায়, তারা আগেই ডিগ্রি স্তরে এমপিও পেত, তারা অনার্স স্তরে এখন এমপিওভুক্তির সুযোগ পাবে।

এ ছাড়া বিভিন্ন সময় জারি করা আগের নীতিমালার সংশোধনী ও স্পষ্টীকরণগুলো নতুন নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এর আগে ২০২১ সালের ২৮ মার্চ সর্বশেষ এমপিও নীতিমালা জারি করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সেই এনায়েত করিমের মামলায় সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে গ্রেপ্তার দেখাল ডিবি

খালেদা জিয়ার রিপোর্ট ভালো, চেষ্টা করছেন কথা বলার: চিকিৎসক

১০ ঘণ্টা পর বিটিআরসির অবরোধ তুলে নিলেন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীরা

দিনে ১৫০০ টন পেঁয়াজ আমদানি, ভারতের চাষিদের মুখে হাসি ফেরাল বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিরাপত্তা কৌশল নিয়ে রাশিয়ার উচ্ছ্বাস

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতের বৈঠক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টার অফিসকক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: সংগৃহীত
সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টার অফিসকক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: সংগৃহীত

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত থিতিপর্ন চিরাসাওয়াদি। আজ রোববার বিকেলে সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টার অফিসকক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও সম্প্রসারণ ও নৌপরিবহন সুবিধা কার্যকরভাবে কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

বাংলাদেশ সরকার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, এ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের ওষুধ, চিংড়ি, ফার্নিচার ও পর্যটনশিল্পে বিনিয়োগ করতে পারে। এ ধরনের বিনিয়োগ উভয় দেশের জন্য লাভবান হওয়ার সুযোগ তৈরি করবে।

দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সমুদ্রপথ ও নৌপরিবহনের মাধ্যমে লজিস্টিক সংযোগ আরও শক্তিশালী করতে একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ভলিউম বাড়াতে সাহায্য করবে।

থাই রাষ্ট্রদূত থিতিপর্ন চিরাসাওয়াদি দেশটির রানং বন্দর এবং চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সামুদ্রিক বাণিজ্য রুট চালু করার পাশাপাশি থাইল্যান্ড-বাংলাদেশ মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

রাষ্ট্রদূত বলেন, থাইল্যান্ডের পশ্চিমাঞ্চলের রানং সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য হলে উভয় দেশের মধ্যবর্তী বাণিজ্য ব্যয় ও সময় হ্রাস করবে। থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে এ ধরনের অবকাঠামোগত সংযোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

থিতিপর্ন চিরাসাওয়াদি আরও বলেন, বিদ্যমান নৌপরিবহন ব্যবস্থায় থাইল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে পণ্য আসতে ১৪-১৫ দিন সময় লাগে। থাইল্যান্ডের পশ্চিমাঞ্চলের নৌরুট ব্যবহার করলে পণ্য ৪-৭ দিনে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাবে। একইভাবে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্যবাহী জাহাজ থাইল্যান্ডসহ পাশের দেশগুলোর বন্দরে পৌঁছাতে সক্ষম হবে।

বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. আব্দুর রহিম খান এবং থাই দূতাবাসের মিনিস্টার কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সেই এনায়েত করিমের মামলায় সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে গ্রেপ্তার দেখাল ডিবি

খালেদা জিয়ার রিপোর্ট ভালো, চেষ্টা করছেন কথা বলার: চিকিৎসক

১০ ঘণ্টা পর বিটিআরসির অবরোধ তুলে নিলেন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীরা

দিনে ১৫০০ টন পেঁয়াজ আমদানি, ভারতের চাষিদের মুখে হাসি ফেরাল বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিরাপত্তা কৌশল নিয়ে রাশিয়ার উচ্ছ্বাস

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত