Ajker Patrika

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কী, এর ইতিহাস ও কার্যাবলি

আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৪, ১৫: ১৩
সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কী, এর ইতিহাস ও কার্যাবলি

বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফেরাতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১১ সালে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান অপরিবর্তিত রেখে জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। ২০১৪ সালে ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা আবারও সংসদের হাতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে তা অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। 

ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। একই বছরের ৩ জুলাই তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সর্বসম্মতিতে আপিলটি খারিজ করে রায় দেন। 

২০১৭ সালের ১ আগস্ট আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। পরে একই বছরের ২৪ ডিসেম্বর ওই রায় রিভিউ চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। 

আজ রোববার রিভিউ আবেদন পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই রায় দেন। এর ফলে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতেই ফিরে এল বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। 

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতেই ছিল। ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা চালু হলে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছ থেকে সরিয়ে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির হাতে নেওয়া হয়। 

তবে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনকালে সংবিধানে পঞ্চম সংশোধনী এনে সেই ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে দেওয়া, যার প্রধান হবেন প্রধান বিচারপতি। 

উচ্চ আদালতের কোনো বিচারপতি যদি সংবিধান লঙ্ঘন করেন কিংবা অসদাচরণের দায়ে অভিযুক্ত হন, তাহলে তাঁকে কীভাবে অপসারণ করা হবে এ বিষয়ে ২০১৪ সালে আবার সংবিধান সংশোধন করে আওয়ামী লীগ। ষোড়শ সংশোধনীতে বলা হয়, বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে থাকবে। 

সংবিধানের এই সংশোধনীর তীব্র বিরোধিতা করে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং আইনজীবীদের বিভিন্ন সংগঠন। সরকার এর মাধ্যমে বিচার বিভাগের ওপর রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে বলে তারা অভিযোগ করে। 

যদিও তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে গেলেও তাঁরা কোনো বিচারকের রায় পছন্দ না হলেই তাঁকে সরিয়ে দিতে পারবেন, ব্যাপারটা সেরকম নয়। বিচারকের বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও অযোগ্যতার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকতে হবে। আর এই অভিযোগ যাচাই করবে একটি পৃথক স্বাধীন সংস্থা। সুতরাং এখানে এই ক্ষমতার অপপ্রয়োগের সুযোগ নেই। 

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কী? 

বাংলাদেশের সাংবিধানিক ইতিহাস নানা উত্থান-পতনের ঘটনায় ভরপুর। উচ্চ আদালত সামরিক শাসনের সব চিহ্ন মুছে দিলেও সামরিক ফরমানবলে প্রতিষ্ঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান সব সময় অটুট রেখেছেন। 

বিখ্যাত মাসদার হোসেন মামলায়, ৫২ ডিএলআর (এডি) ৮২, সুপ্রিম কোর্ট বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতার ওপর দীর্ঘ রায়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ভূমিকা উল্লেখ করা হয়। 

বিচারকেরা যদি সংবিধান লঙ্ঘন করেন কিংবা গুরুতর অসদাচরণের দায়ে অভিযুক্ত হন, সে ক্ষেত্রে তাদের অপসারণের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কর্তৃক তদন্ত করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান ও জ্যেষ্ঠ বিচারকদের সমন্বয়ে গঠিত এ কাউন্সিল বিচারকদের আচরণবিধিও নির্ধারণের কাজ করবে। বাংলাদেশ সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ৩ নম্বর দফায় বলা আছে, একটি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল থাকবে, যা এই অনুচ্ছেদে ‘কাউন্সিল’ বলে উল্লিখিত হবে এবং বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারকের মধ্যে পরবর্তী যে দুজন কর্মে প্রবীণ তাঁদের নিয়ে গঠিত হবে। 

এই পদ্ধতিতে শর্ত থাকে যে, কাউন্সিল যদি কোনো সময় কাউন্সিলের সদস্য এ রকম কোনো বিচারকের সামর্থ্য বা আচরণ সম্পর্কে তদন্ত করেন অথবা কাউন্সিলের কোনো সদস্য যদি অনুপস্থিত থাকেন, অথবা অসুস্থতা কিংবা অন্য কোনো কারণে কাজ করতে অসমর্থ হন, তাহলে কাউন্সিলের যাঁরা সদস্য আছেন, তাঁদের মধ্যে পরবর্তী যে বিচারক কর্মে প্রবীণ তিনিই অনুরূপ সদস্য হিসেবে কাজ করবেন। 

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাজ

সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৬ (৪) অনুসারে, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের দুই ধরনের দায়িত্ব রয়েছে:

১. বিচারকদের জন্য আচরণবিধি (Code of Conduct) প্রণয়ন এবং

২. বিচারকগণের আচরণ ও সামর্থ্য সংক্রান্তে তদন্ত করা

বিগত ৭ই মে ২০০০ তারিখে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি জনাব লতিফুর রহমান, বিচারপতি বি বি রায় চৌধুরী ও বিচারপতি জনাব এ এম মাহমুদুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল প্রথমবারের মতো আচরণবিধি প্রণয়ন করেন। এ ছাড়া, আপিল বিভাগ ষোড়শ সংশোধনী মামলায় ৩৯টি এবং মো. ইদ্রিসুর রহমান বনাম সৈয়দ শাহিদুর রহমান, ৬৮ ডিএলআর (এডি) ২৫৮, মামলায় ৪০টি আচরণবিধি নির্ধারণ করেন। ইদ্রিসুর রহমান মামলায় আদালত উল্লেখ করে যে, প্রদত্ত আচরণবিধিসমূহ চূড়ান্ত নয় বরং ব্যাখ্যামূলক ও উদাহরণ স্বরূপ। একজন বিচারককে শত বছরের প্রতিষ্ঠিত নিয়মকানুন ও নীতি-নৈতিকতা দ্বারা পরিচালিত হতে হবে। 

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের ইতিহাস

১৯৭২ সালে প্রণীত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৬-এ অসদাচরণ ও অক্ষমতার কারণে একজন বিচারপতিকে অপসারণের বিধান রাখা হয়। সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতির ওপর অপসারণের ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয়। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী পাস করা হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের সর্বময় ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত করা হয়। 

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সামরিক শাসন জারি হয়। সংবিধানের কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়। The Second Proclamation (Tenth Amendment) Order, ১৯৭৭ জারি করে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ’৯৬-এ প্রথমবারের মতো সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান সন্নিবেশ করা হয়। এরপর সংসদ অধিবেশনে ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে আগে জারি করা সব আইনের বৈধতা দেওয়া হয়। ১৯৮২ সালে আবারও সামরিক শাসন জারি হয়। The Martial Law Proclamation (First Amendment) Order, ১৯৮২ প্রণয়ন করে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসককে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া হয়। ১৯৮৬ সালে সংসদ আবার সংসদ অধিবেশন বসে এবং The Constitution Final Revival Order, ১৯৮৬-এর মাধ্যমে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়। 

২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগ খন্দকার দেলোয়ার হোসেন বনাম ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস, ৬২ ডিএলআর (এডি) ২৯৮, মামলায় সংবিধানের ৫ম সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করেন। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আপিল বিভাগ ওই সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। তবে অধিকতর স্বচ্ছতা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার রক্ষাকবচ বিবেচনায় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান আদালত বলবৎ রাখেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ রিভিউ আবেদন করে। আপিল বিভাগ রিভিউ নিষ্পত্তি করে সামরিক ফরমানে জারিকৃত আইন–কানুনগুলোতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে সংসদকে ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। ২০১১ সালের ৩০ জুন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান অপরিবর্তিত রেখে জাতীয় সংসদ পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে। 

তিন বছর পর ২০১৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস হয়। বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা আবার সংসদের ওপর ন্যস্ত করা হয়। ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের কিছু আইনজীবী এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন। ২০১৬ সালের ৫ মে হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করেন। ওই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সরকার আপিল করে। ২০১৭ সালের ৩ জুলাই আদালত সর্বসম্মতি ক্রমে আপিলটি খারিজ করেন এবং ষোড়শ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করেন। 

সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে যা বলছেন আইনজীবীরা

আজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও রিট আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ শুনানিতে অংশ নেন। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস আদালতের অনুমতি নিয়ে শুনানিতে অংশ নেন। 

এই রায়ের ফলে কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে অসমর্থতা ও পেশাগত অসদাচরণের কোনো অভিযোগ উঠলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। 

আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস সাংবাদিকদের বলেন, সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ২ থেকে ৮ পর্যন্ত বিধান ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যম বাতিল করা হয়েছিল। এগুলো পুনর্বহাল করেছেন আপিল বিভাগ। 

এই রায় ঐতিহাসিক বলে প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার আপসহীন ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে: রাষ্ট্রপতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

আজ মঙ্গলবার এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেছেন, গণতন্ত্র এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তাঁর আপসহীন ভূমিকা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। জাতির এই অপূরণীয় ক্ষতির মুহূর্তে আমি মরহুমার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গ ও অনুসারীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

দেশবাসীকে মরহুমার স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে তাঁর জন্য দোয়া ও প্রার্থনা করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জিয়াউর রহমানের সমাধির পাশেই হতে পারে খালেদা জিয়ার দাফন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২২
জিয়াউর রহমানের সমাধির পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন খালেদা জিয়া। ছবি: উইকিপিডিয়া
জিয়াউর রহমানের সমাধির পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন খালেদা জিয়া। ছবি: উইকিপিডিয়া

বিএনপির চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশের রাজনীতির ‘আপসহীন’ নেত্রী খালেদা জিয়া আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

বর্ষীয়ান এই নেত্রীর প্রয়াণে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর দাফন রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জিয়া উদ্যানে তাঁর স্বামী, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে হতে পারে। এটি দল ও পরিবারের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত।

এ ছাড়া আগামীকাল বুধবার রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে খালেদা জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। জানাজা ও দাফনপ্রক্রিয়ার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য বিএনপি বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষার চেষ্টা করছে।

খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন জটিলতাসহ নানা রোগে ভুগছিলেন। চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। চিকিৎসা শেষে ৬ মে তিনি দেশে ফেরেন। সে সময় স্বাস্থ্যের কিছুটা উন্নতিও দেখা গিয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিনের শারীরিক জটিলতা এবং মানসিক ধকলের কারণে তিনি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন।

গত ২৩ নভেম্বর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে পুনরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে এক মাসের বেশি সময় চিকিৎসাধীন থাকার পর আজ ভোরে তিনি চিকিৎসায় সাড়া দেওয়া বন্ধ করে দেন এবং চিরবিদায় নেন।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে নেতৃত্ব দেওয়া খালেদা জিয়া ‘দেশনেত্রী’ হিসেবে জনগণের কাছে সমাদৃত ছিলেন। সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তাঁর অটল ভূমিকার কারণে তাঁকে ‘আপসহীন’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে একটি যুগের অবসান ঘটল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে তাঁর মরদেহ হিমঘরে রাখা হয়েছে এবং আনুষ্ঠানিকতা শেষে তা পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। দলের পক্ষ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি বিস্তারিতভাবে ঘোষণা করার প্রক্রিয়া চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে নির্বাচন কমিশনের শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন।

আজ মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের পরিচালক (জনসংযোগ) মো. রুহুল আমিন মল্লিক স্বাক্ষরিত এক শোকবার্তায় জানানো হয়, বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে একজন প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ১৯৯১ সালে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে আরও দুই দফা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র, সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থা ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি দীর্ঘদিন বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবেও সংসদীয় রাজনীতিতে সক্রিয় থেকে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আপসহীন ভূমিকা পালন করেন।

নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের বিকাশে তাঁর রাজনৈতিক ভূমিকা বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

নির্বাচন কমিশন মরহুমার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছে এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন, স্বজন ও সহকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি ঠিক করতে উপদেষ্টাদের বৈঠক, দুপুরে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১৫
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক স্মরণীয় অধ্যায়ের অবসান ঘটিয়ে চিরবিদায় নিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর মৃত্যু-পরবর্তী রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি ও শোক পালনের রূপরেখা নির্ধারণে জরুরি বৈঠকে বসেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বিশেষ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও উপস্থিত আছেন।

সরকারি সূত্র জানিয়েছে, দুপুর ১২টার পর প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। এই ভাষণেই রাষ্ট্রীয় শোক এবং সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর শেষ বিদায়ের রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা রয়েছে।

অন্যদিকে দলের চেয়ারপারসনের মৃত্যুতে পরবর্তী করণীয় ও জানাজার সময়সূচি নির্ধারণে স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা ডেকেছে বিএনপি। দুপুর সাড়ে ১২টায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

জাতীয় নির্বাচনের দিন জুলাই সনদের বিষয়ে প্রস্তাবিত গণভোটের সরকারি প্রচার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। গণভোট বিষয়ে জনসচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রমের মুখ্য সমন্বয়ক ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের প্রচার বন্ধ থাকবে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই এই গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

১৯৪৫ সালে জন্ম নেওয়া খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন। তিন মেয়াদে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এই নেত্রী মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং নারী শিক্ষার প্রসারে আমৃত্যু কাজ করে গেছেন। দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা এবং রাজনৈতিক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ২০২৪ সালের আগস্ট বিপ্লবের পর তিনি পূর্ণ মুক্তি পেলেও শারীরিক জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন হাসপাতালেই কাটছিল তাঁর সময়।

তাঁর মৃত্যুতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা গভীর শোক প্রকাশ করছেন। হাসপাতালের সামনে এবং নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ভিড় করছেন হাজার হাজার শোকাতুর নেতা-কর্মী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত