Ajker Patrika

৪২৫ টাকায় কেনা টিকা খরচ ৩০০০ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১১ জুলাই ২০২১, ১১: ৪৩
৪২৫ টাকায় কেনা টিকা খরচ ৩০০০ টাকা

করোনার টিকার প্রতি ডোজের জন্য খরচ হয়েছে ৩ হাজার টাকা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সম্প্রতি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে। তবে গত জুন পর্যন্ত ব্যবহৃত করোনার টিকার একটা বড় অংশ এসেছে উপহার হিসেবে। আর কেনা টিকার প্রায় পুরোটাই এসেছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরই জানিয়েছিল, সেরামের টিকার প্রতি ডোজ কেনা, পরিবহন ও আনুষঙ্গিক সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ৫ ডলার বা ৪২৫ টাকা।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাই এখন প্রতি ডোজে ৩ হাজার টাকা খরচ নিয়ে বিভ্রান্ত। তাঁরা বলছেন, টিকা কেনার জন্য বিভিন্ন দেশ বা সংস্থাকে অগ্রিম যে অর্থ দেওয়া হয়েছে, তা–ও হয়তো এই হিসাবের মধ্যে চলে এসেছে। না হলে এত বেশি খরচ কীভাবে হলো, তা তারা মেলাতে পারছেন না।

জানতে চাইলে চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, ‘হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আর মন্ত্রণালয়ের লোকজন অঙ্ক জানে না, নয়তো তারা মনে করেছেন যে দেশে সব মানুষ অশিক্ষিত, কেউ অঙ্ক কষতে জানে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে বিজ্ঞাপনটা দিয়েছে এটার কোনো প্রয়োজন ছিল না। এটা হচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ।’

বিভিন্ন দৈনিকে ৯ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া বিজ্ঞাপন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ১ কোটি ১ লাখ ৫০ হাজার ডোজ করোনার টিকা কিনেছে। এতে বাংলাদেশের খরচ হয়েছে ৩ হাজার ৪৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি ডোজ ৩ হাজার টাকা। যদিও চলতি বছরের ১০ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ টিকা কিনেছে মোট ৯০ লাখ।

 স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ১ কোটি ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮২ ডোজ করোনার টিকা ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ভারতের অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১ কোটি ১ লাখ ৫ হাজার ৯৪৯টি, চীনের সিনোফার্মের ৪৬ হাজার ৮৯৩টি এবং কোভ্যাক্সের আওতায় আসা ফাইজারের ২৪০টি টিকা ব্যবহার করা হয়েছে। 
গত বছরের নভেম্বরে ৩ কোটি টিকা কিনতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার ও বেক্সিমকোর ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়। সে অনুযায়ী প্রতি মাসে সেরামের ৫০ লাখ ডোজ করে সরবরাহের প্রতিশ্রুতি ছিল। তবে সেরাম দুই দফায় ৭০ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে। যা কিনতে খরচ হয়েছে ২৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ ছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের উপহারসহ বিভিন্নভাবে এসেছে ৩৩ লাখ ডোজ টিকা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে সেরাম ইনস্টিটিউটের কোভিশিল্ড টিকা এসেছে ১ কোটি ৩ লাখ ডোজ।

এর বাইরে কোভ্যাক্স থেকে বিনা মূল্যে ফাইজারের ১ লাখ ৬২০ ডোজ টিকা এসেছে। সেই সঙ্গে চলতি মাসে কোভ্যাক্স থেকে এসেছে মডার্নার ২৫ লাখ টিকা। আর চীন থেকে দুই দফায় সিনোফার্মের ১১ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে এসেছে। চলতি বছরের জুলাই মাসে চীনের সিনোফার্ম থেকে কেনা ২০ লাখ টিকা বাংলাদেশে এসেছে। এর দাম প্রতি ডোজ ১০ ডলার বলে জানিয়েছিলেন এক সরকারি কর্মকর্তা। পরে অবশ্য চীন এই দামের বিষয়টি অস্বীকার করে। এরপর থেকে চীন বা রাশিয়া থেকে কত দামে টিকা কেনা হচ্ছে, তা সরকারিভাবে প্রকাশ করা হয়নি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কেনা টিকার যে হিসাব দিয়েছে, তার মধ্যে উপহারের টিকাও আছে। টিকার পরিমাণ ও দাম নিয়ে ৩০ জুন সংসদে দেওয়া স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হিসাবের ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিভিন্ন দেশ থেকে আগের কিছু টিকা কেনা রয়েছে। আরও টিকা কেনার জন্য অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। এখানে সেই হিসাবটি দেখানো হয়েছে।’

টিকার পরিমাণ ও দামের এ ব্যাখ্যা জানতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বেশির ভাগ কর্মকর্তা টিকার প্রসঙ্গ শুনে ফোন কেটে দেন। তবে নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন বলেন, টিকা তো ভারতের সেরাম থেকেও অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করে ৩ কোটি কেনা হয়েছে। আর চীন থেকেও দেড় কোটি টিকা কেনা হয়েছে। সেই সঙ্গে কোভ্যাক্সেও অগ্রিম টাকা দিয়ে রাখা হয়েছে। সেই টিকা কেন হিসাবে আনা হলো না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ওই কর্মকর্তা। 
নাম না প্রকাশ করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, চীনের টিকা নিয়ে আসার জন্য বিমানবাহিনীর উড়োজাহাজ পাঠানো হয়েছিল। ফলে চীনের উপহার দেওয়া টিকাতেও কিছু অর্থ খরচ হয়েছে। তাই বলে প্রতি ডোজে ৩ হাজার টাকা হওয়ার কোনো কারণ নেই। বাকি টিকার দাম কী কারণে এ রকম নির্ধারণ করা হলো, তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ই ভালো বলতে পারবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে করোনাভাইরাসের যে টিকা কিনছে, তাতে প্রতিটি ডোজের দাম পড়বে ৪ ডলার বা ৩৪০ টাকার মতো। তবে টিকা পরিবহনসহ সব মিলিয়ে খরচ পড়বে ৫ ডলার। খরচ প্রসঙ্গে আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, ‘ওরা ডোজপ্রতি চার ডলার করে নিচ্ছে আর টিকা আনার খরচ, শুল্ক, ভ্যাট ইত্যাদির খরচের জন্য বেক্সিমকো নেবে ডোজপ্রতি এক ডলার করে।’ 
ফলে গত ৩০ জুনের হিসাব পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যবহার করা টিকার মধ্যে ৭০ লাখ টিকা বাংলাদেশ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে প্রতি ডোজ কিনেছে ৪ ডলার বা ৩৪০ টাকা (ডলার মূল্য ৮৫ টাকা ধরে) করে। আর এর পরিবহন ও সংরক্ষণে ১ ডলার ধরে টিকার মোট দাম হওয়ার কথা ৫ ডলার বা ৪২৫ টাকা। আর ৫ ডলার হিসাবে ৭০ লাখ টিকা কিনতে বাংলাদেশের খরচ হওয়ার কথা ২৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

টিকার দাম নিয়ে জানতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক বে–নজির আহমেদ বলেন, ‘এই খরচটা অস্বাভাবিক। যদিও আমরা ধরে নিই যে টিকাদানকর্মী, টিকা পরিবহন, অবকাঠামোসহ এই খরচ হয়েছে, তবু এটা অস্বাভাবিক। এত খরচ হওয়ার কথা নয়। কারণ, টিকাদানে জড়িত স্বেচ্ছাসেবক বা অন্যদের যে টাকাটা দেওয়া হয়, সেটা অতি নগণ্য। আমরা যদি টিকার দামের সঙ্গে পরিবহন এবং আনুষঙ্গিক খরচ যোগ করে চিন্তা করি, তবু ডোজপ্রতি এত খরচ হওয়াটা খুবই অস্বাভাবিক। জাতির সামনে এর ব্যাখ্যা তাদের তুলে ধরা উচিত।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার আপসহীন ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে: রাষ্ট্রপতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

আজ মঙ্গলবার এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেছেন, গণতন্ত্র এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তাঁর আপসহীন ভূমিকা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। জাতির এই অপূরণীয় ক্ষতির মুহূর্তে আমি মরহুমার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গ ও অনুসারীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

দেশবাসীকে মরহুমার স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে তাঁর জন্য দোয়া ও প্রার্থনা করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জিয়াউর রহমানের সমাধির পাশেই হতে পারে খালেদা জিয়ার দাফন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২২
জিয়াউর রহমানের সমাধির পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন খালেদা জিয়া। ছবি: উইকিপিডিয়া
জিয়াউর রহমানের সমাধির পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন খালেদা জিয়া। ছবি: উইকিপিডিয়া

বিএনপির চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশের রাজনীতির ‘আপসহীন’ নেত্রী খালেদা জিয়া আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

বর্ষীয়ান এই নেত্রীর প্রয়াণে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর দাফন রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জিয়া উদ্যানে তাঁর স্বামী, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে হতে পারে। এটি দল ও পরিবারের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত।

এ ছাড়া আগামীকাল বুধবার রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে খালেদা জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। জানাজা ও দাফনপ্রক্রিয়ার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য বিএনপি বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষার চেষ্টা করছে।

খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন জটিলতাসহ নানা রোগে ভুগছিলেন। চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। চিকিৎসা শেষে ৬ মে তিনি দেশে ফেরেন। সে সময় স্বাস্থ্যের কিছুটা উন্নতিও দেখা গিয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিনের শারীরিক জটিলতা এবং মানসিক ধকলের কারণে তিনি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন।

গত ২৩ নভেম্বর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে পুনরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে এক মাসের বেশি সময় চিকিৎসাধীন থাকার পর আজ ভোরে তিনি চিকিৎসায় সাড়া দেওয়া বন্ধ করে দেন এবং চিরবিদায় নেন।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে নেতৃত্ব দেওয়া খালেদা জিয়া ‘দেশনেত্রী’ হিসেবে জনগণের কাছে সমাদৃত ছিলেন। সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তাঁর অটল ভূমিকার কারণে তাঁকে ‘আপসহীন’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে একটি যুগের অবসান ঘটল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে তাঁর মরদেহ হিমঘরে রাখা হয়েছে এবং আনুষ্ঠানিকতা শেষে তা পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। দলের পক্ষ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি বিস্তারিতভাবে ঘোষণা করার প্রক্রিয়া চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে নির্বাচন কমিশনের শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন।

আজ মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের পরিচালক (জনসংযোগ) মো. রুহুল আমিন মল্লিক স্বাক্ষরিত এক শোকবার্তায় জানানো হয়, বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে একজন প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ১৯৯১ সালে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে আরও দুই দফা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র, সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থা ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি দীর্ঘদিন বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবেও সংসদীয় রাজনীতিতে সক্রিয় থেকে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আপসহীন ভূমিকা পালন করেন।

নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের বিকাশে তাঁর রাজনৈতিক ভূমিকা বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

নির্বাচন কমিশন মরহুমার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছে এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন, স্বজন ও সহকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি ঠিক করতে উপদেষ্টাদের বৈঠক, দুপুরে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১৫
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক স্মরণীয় অধ্যায়ের অবসান ঘটিয়ে চিরবিদায় নিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর মৃত্যু-পরবর্তী রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি ও শোক পালনের রূপরেখা নির্ধারণে জরুরি বৈঠকে বসেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বিশেষ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও উপস্থিত আছেন।

সরকারি সূত্র জানিয়েছে, দুপুর ১২টার পর প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। এই ভাষণেই রাষ্ট্রীয় শোক এবং সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর শেষ বিদায়ের রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা রয়েছে।

অন্যদিকে দলের চেয়ারপারসনের মৃত্যুতে পরবর্তী করণীয় ও জানাজার সময়সূচি নির্ধারণে স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা ডেকেছে বিএনপি। দুপুর সাড়ে ১২টায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

জাতীয় নির্বাচনের দিন জুলাই সনদের বিষয়ে প্রস্তাবিত গণভোটের সরকারি প্রচার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। গণভোট বিষয়ে জনসচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রমের মুখ্য সমন্বয়ক ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের প্রচার বন্ধ থাকবে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই এই গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

১৯৪৫ সালে জন্ম নেওয়া খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন। তিন মেয়াদে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এই নেত্রী মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং নারী শিক্ষার প্রসারে আমৃত্যু কাজ করে গেছেন। দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা এবং রাজনৈতিক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ২০২৪ সালের আগস্ট বিপ্লবের পর তিনি পূর্ণ মুক্তি পেলেও শারীরিক জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন হাসপাতালেই কাটছিল তাঁর সময়।

তাঁর মৃত্যুতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা গভীর শোক প্রকাশ করছেন। হাসপাতালের সামনে এবং নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ভিড় করছেন হাজার হাজার শোকাতুর নেতা-কর্মী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত