Ajker Patrika

এমপি আনোয়ারুল হত্যা: সেই ফ্ল্যাট থেকে ট্রলি ও ব্যাগ নিয়ে বের হন দুজন, সিসিটিভি ফুটেজ

কলকাতা সংবাদদাতা
আপডেট : ২৪ মে ২০২৪, ২২: ১৮
এমপি আনোয়ারুল হত্যা: সেই ফ্ল্যাট থেকে ট্রলি ও ব্যাগ নিয়ে বের হন দুজন, সিসিটিভি ফুটেজ

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে কলকাতার নিউ টাউনে ফ্ল্যাটে হত্যা করা হয়েছে, সেখানকার একটি সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করেছে পুলিশ। তাতে দেখা যায়, ১৪ মে সকাল ৫টা ৫ সেকেন্ডে ফ্ল্যাটের দরজা দিয়ে বের হচ্ছেন দুজন। তাঁদের একজনের হাতে একটা হালকা সবুজ রঙের ট্রলি ব্যাগ। আরেকজনের হাতে কয়েকটা পলিথিন ব্যাগ। তাঁরা লিফটে উঠছিলেন। 

পুলিশ বলছে, ১৩ মে কলকাতার নিউ টাউনের অ্যাকুইটিকা একটি ডুপ্লেক্স বাড়িতে এমপি আনোয়ারুলকে হত্যা করা হয়। ওই বাড়ির মালিক রাজ্য শুল্ক বিভাগের কর্মচারী সঞ্জীব ঘোষ। তিনি মার্কিন নাগরিক আক্তারুজ্জামান শাহীনের কাছে বাড়িটি ভাড়া দিয়েছেন। সেই বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে রক্তের দাগ ছাড়া আর কিছু পায়নি পুলিশ। পরে জানা যায়, তাঁর মৃতদেহ টুকরা টুকরা করে এবং হাড় ও মাংস বিচ্ছিন্ন করে বাইরে ফেলা হয়। 

আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার জন্য ভারতের মুম্বাই থেকে ‘কসাই’ খ্যাত জিহাদ হাওলাদারকে কলকাতায় আনা হয়। তাঁকে গতকাল গ্রেপ্তারের পর আজ ১২ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। আনোয়ারুলকে হত্যার পর কীভাবে তাঁর মরদেহ টুকরা টুকরা করা হয় এরই মধ্যে তার রোমহর্ষক বর্ণনা মিলেছে। 

তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের পর কাল রাতেই কলকাতা পুলিশ এলাকার পোলেরহাট থানার কৃষ্ণবাটি সেতুর কাছে বাগজোলা খালে তল্লাশি চালায়। নিউ টাউন এলাকার যে ফ্ল্যাটে আনোয়ারুলকে খুন করা হয়, তার সামনে দিয়েই বয়ে গেছে এই খাল। তবে এখনো মরদেহের সন্ধান কোনো সন্ধান মেলেনি।

পুলিশ বলছে, আক্তারুজ্জামান শাহীন সীমান্তপথে ভারতে সোনা পাচার করতেন। চোরাই সোনা সীমান্ত পার করতে সহায়তা করতেন সংসদ সদস্য আনোয়ারুলের ঘনিষ্ঠ লোকজন। বিনিময়ে তাঁরা কমিশন পেতেন। গত ছয় মাসে সোনার একাধিক বড় চালান মেরে দেওয়া হয়। এসব চালানে প্রায় ২০০ কোটি টাকার সোনা ছিল। এতে ক্ষিপ্ত শাহীন সোনা ফিরে পেতে সংসদ সদস্যকে বারবার চাপ দেন এবং বিকল্প মাধ্যমে চোরাচালান করতে থাকেন। এ নিয়েই দ্বন্দ্ব। দ্বন্দ্ব নিরসনে কয়েক মাস ধরে তাঁরা বসতেও চেয়েছিলেন। শেষ সময়ে পরিকল্পনা বদলে আনোয়ারুলকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন শাহীন।

দু-তিন মাস আগে রাজধানীর গুলশান-২ নম্বর ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আক্তারুজ্জামান শাহীনের বাসায় আনোয়ারুলকে খুনের পরিকল্পনা হয়। তাঁরা চেয়েছিল বাংলাদেশেই হত্যা করতে। কিন্তু পুলিশের তৎপরতার কারণে বিদেশে খুনের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মতো এমপি আনোয়ারুল আজীম কলকাতায় কখন যাবেন, সেটা দেখে বাসাভাড়া নেওয়া হয়।

ঝিনাইদহ-৪ আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। প্রথমে ওঠেন কলকাতার বরাহনগরে বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে। ১৩ মে চিকিৎসক দেখানোর কথা বলে সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি নিখোঁজ হন। ১৮ মে স্থানীয় থানায় জিডি করেন গোপাল। তদন্ত শুরু হয় দুই দেশে। 

গত বুধবার সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, নিউ টাউনের অভিজাত এলাকা সঞ্জীবা গার্ডেনসের এক ফ্ল্যাটে খুন হয়েছেন সংসদ সদস্য আনোয়ারুল। পরে তাঁর মরদেহ টুকরা টুকরা করা হয়।

পুলিশ বলছে, আনোয়ারুল আজীমের হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী শাহীনের বান্ধবী এক তরুণীকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাঁকে নিয়েই কলকাতার বিধাননগরের নিউ টাউনে ওই ভাড়া ফ্ল্যাটে উঠেছিলেন খুনিরা। আনোয়ারুলকে ওই ফ্ল্যাটে ডেকে নিতে ওই তরুণীকে ব্যবহার করা হয়। আনোয়ারুলকে ওই তরুণী ও আরেকজনের সঙ্গে একটি লাল গাড়ি থেকে নামতে দেখা যায়। সেটি জব্দ করা হয়েছে। 

জিহাদের বর্ণনা অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ডের সময় তাঁরা চারজন ছিলেন। আনোয়ারুলকে হত্যার পর তাঁরা আধা ঘণ্টার মধ্যে সব কাজ সম্পন্ন করেন। হত্যার পর একজন এমপি আনোয়ারুলের মোবাইল ফোন নিয়ে বাইরে চলে যান। আর বাকিরা মরদেহ টুকরা টুকরা করেন। এরপর লাশের হাড় থেকে মাংস বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। মাংসের মধ্যে হলুদ ছিটিয়ে দেন, যাতে পথে কেউ ধরলে বলতে পারে, বাজার থেকে কেনা। হাড়গুলো ট্রলি ব্যাগে বাইরে নিয়ে যান। 

এ ঘটনায় ঢাকার পুলিশ ঢাকার মোহাম্মদপুর ও সাভার থেকে শীলাস্তি রহমান নামে ওই তরুণীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে। এদিকে কলকাতায় কসাই জিহাদকে ১২ দিনের জন্য রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ