Ajker Patrika

জীবন বিলিয়ে দিয়ে উত্তরার মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীদের বাঁচালেন, কে এই মাহরীন চৌধুরী

­­ জসিম উদ্দিন, নীলফামারী
আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২৫, ১৪: ৩৭
মাহরীন চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
মাহরীন চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষার্থীদের প্রতি মমত্ববোধ ও দায়িত্ববোধের অসাধারণ উদাহরণ তৈরি করে গেলেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাহসী শিক্ষক মাহরীন চৌধুরী। গতকাল সোমবার (২১ জুলাই) বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমানটি তাঁর প্রতিষ্ঠানে বিধ্বস্ত হয়, তখনো তিনি অক্ষত ও সুস্থ ছিলেন। কিন্তু বিপদের মুখেই তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন নিজের সন্তানের মতো ছাত্রছাত্রীদের বাঁচাতে। বিনিময়ে নিজের প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছেন।

ঢাকার জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় গতকাল রাতে মারা যান মাহরীন চৌধুরী। তাঁর শরীরের ১০০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল বলে আবাসিক সার্জন শাওন বিন রহমান জানান। লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার আগে স্বামী মনছুর হেলালের সঙ্গে তাঁর শেষ কথা হয়েছিল।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে নীলফামারীর জলঢাকা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বগুলাগাড়ী এলাকার রাজারহাট চৌধুরীপাড়ায় নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের সামনে সেসব কথা তুলে ধরেন তিনি।

‘মাঝরাতে হাসপাতালের আইসিইউতে মাহরীনের সাথে আমার শেষ কথা হয়। এ সময় আমার হাত তার নিজের বুকের সঙ্গে চেপে ধরে বলেছিল, তোমার সাথে আর বুঝি দেখা হবে না!’, চাপা কান্নার সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন মনছুর হেলাল।

মনছুর হেলাল জানান, ক্লাস শেষে মাহরীন চৌধুরী শিক্ষার্থীদের নিয়ে বের হওয়ার সময় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এ সময় তিনি সামান্য আঘাত পান। কিন্তু চোখের সামনে দেখতে পান, ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী ভেতরে আটকা পড়ে গেছে। তাদের উদ্ধারে তিনি ভেতরে ঢুকে পড়েন এবং বেশ কয়েকজনকে উদ্ধার করেন। এমন সময় আবার বিধ্বস্ত বিমানে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

মাহরীন চৌধুরী নীলফামারীর জলঢাকার মৃত মহিতুর রহমান চৌধুরীর মেয়ে ও জলঢাকা বগুলাগাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি। দুই মাস আগে এই দায়িত্ব নেন। তিনি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানেই বড় হয়েছেন। তবে বাবার জন্মস্থানে তিনি বারবার এসেছেন এবং দাদুবাড়িতে রাত কাটিয়েছেন। এ সময় গ্রামের মানুষদের সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়িয়েছেন।

মাহরীন চৌধুরীর খালাতো ভাই ঢাকায় দৈনিক জনকণ্ঠে কর্মরত সংবাদকর্মী রুমি চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মাহরীনের বাবা মহিতুর রহমান চৌধুরী ছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আপন খালাতো ভাই। জলঢাকার এ বাড়িতে জিয়াউর রহমান বেশ কয়েকবার এসেছিলেন।’

মাহরীন চৌধুরী সব সময় এলাকার গরিব মানুষদের খোঁজখবর নিতেন, সামর্থ্য অনুয়ায়ী আর্থিক সহযোগিতা করতেন।

তাঁদের প্রতিবেশী আব্দুস সামাদ আজকের পত্রিকা'কে বলেন, দুই ঈদ ছাড়াও মাঝেমধ্যে গ্রামে আসতেন মাহরীন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কালভার্ট নির্মাণে সহযোগিতা করেছেন। ফলে শিক্ষানুরাগী হিসেবে বগুলাগাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে তাঁকে মনোনীত করেছে এলাকাবাসী।

মাহরীন চৌধুরীকে নিয়ে ফেসবুকে স্মৃতিচারণা করেন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী আলী আহমেদ মাবরুর। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মাহরীন আপা আমার মানারাতের সহপাঠী ছিলেন। আমরা একই সাথে মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে মাস্টার্স করেছিলাম। বয়সে আমার একটু সিনিয়র হবেন। বনেদি ঘরের মানুষ, তবে একদম সাদামাটাভাবে চলাফেরা করতেন। আমাকে ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করতেন। তিনি উত্তরায় থাকতেন, সে হিসেবে আমার প্রতিবেশীও। উত্তরায় যখন হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ ছিল, বেশির ভাগ অংশই যখন জলাভূমি ও গাছগাছালিতে পরিপূর্ণ, তখন থেকে এই এলাকায় তাঁদের বসতি।’

গত কয়েক বছরের মধ্যে মা-বাবাকে হারান মাহরীন চৌধুরী। সেই তথ্য তুলে ধরে মাবরুর লিখেছেন, ‘পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে সকল ভাই-বোন বরাবরই তাঁকে অভিভাবক হিসেবে গণ্য করতেন। তাঁর দুই ছেলে। ওরাও বড় হয়ে গেছে।’

আলী আহমেদ মাবরুর আরও লেখেন, ‘মাহরীন আপা অনেক বছর যাবৎ মাইলস্টোন প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত। তাঁকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শাখায় তারা কাজে লাগিয়েছে। আপা এখন সিনিয়র টিচার। সেই হিসেবে বাড়তি কিছু দায়িত্বও ছিল তাঁর দিয়াবাড়ি শাখায়। গতকাল যখন স্কুলের ওপর বিমানটি আছড়ে পড়ে, তিনি তাঁর স্বভাবসুলভ মায়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। নিশ্চিত আগুনে পুড়ে যাওয়া থেকে ২০ জনের বেশি ছাত্রছাত্রীকে তিনি সেভ করেছেন। কিন্তু এই সাহসী ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে গিয়ে কখন নিজের জীবনকেই বিপন্ন করে ফেলেছেন, তা হয়তো তিনি বুঝতেও পারেননি। দুর্ঘটনার পরই তাঁর সঙ্গে পরিবারের সবার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। মধ্যরাতে তাঁর লাশ যখন বাসায় আনা হয়, আমি দেখতে গিয়েছিলাম। তাঁর স্বামী আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন। বললেন, জানিস, তোর আপা পরশু রাতেও তোর কথা বলেছিল।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার আপসহীন ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে: রাষ্ট্রপতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

আজ মঙ্গলবার এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেছেন, গণতন্ত্র এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তাঁর আপসহীন ভূমিকা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। জাতির এই অপূরণীয় ক্ষতির মুহূর্তে আমি মরহুমার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গ ও অনুসারীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

দেশবাসীকে মরহুমার স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে তাঁর জন্য দোয়া ও প্রার্থনা করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জিয়াউর রহমানের সমাধির পাশেই হতে পারে খালেদা জিয়ার দাফন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২২
জিয়াউর রহমানের সমাধির পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন খালেদা জিয়া। ছবি: উইকিপিডিয়া
জিয়াউর রহমানের সমাধির পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন খালেদা জিয়া। ছবি: উইকিপিডিয়া

বিএনপির চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশের রাজনীতির ‘আপসহীন’ নেত্রী খালেদা জিয়া আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

বর্ষীয়ান এই নেত্রীর প্রয়াণে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর দাফন রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জিয়া উদ্যানে তাঁর স্বামী, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে হতে পারে। এটি দল ও পরিবারের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত।

এ ছাড়া আগামীকাল বুধবার রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে খালেদা জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। জানাজা ও দাফনপ্রক্রিয়ার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য বিএনপি বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষার চেষ্টা করছে।

খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন জটিলতাসহ নানা রোগে ভুগছিলেন। চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। চিকিৎসা শেষে ৬ মে তিনি দেশে ফেরেন। সে সময় স্বাস্থ্যের কিছুটা উন্নতিও দেখা গিয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিনের শারীরিক জটিলতা এবং মানসিক ধকলের কারণে তিনি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন।

গত ২৩ নভেম্বর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে পুনরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে এক মাসের বেশি সময় চিকিৎসাধীন থাকার পর আজ ভোরে তিনি চিকিৎসায় সাড়া দেওয়া বন্ধ করে দেন এবং চিরবিদায় নেন।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে নেতৃত্ব দেওয়া খালেদা জিয়া ‘দেশনেত্রী’ হিসেবে জনগণের কাছে সমাদৃত ছিলেন। সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তাঁর অটল ভূমিকার কারণে তাঁকে ‘আপসহীন’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে একটি যুগের অবসান ঘটল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে তাঁর মরদেহ হিমঘরে রাখা হয়েছে এবং আনুষ্ঠানিকতা শেষে তা পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। দলের পক্ষ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি বিস্তারিতভাবে ঘোষণা করার প্রক্রিয়া চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে নির্বাচন কমিশনের শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন।

আজ মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের পরিচালক (জনসংযোগ) মো. রুহুল আমিন মল্লিক স্বাক্ষরিত এক শোকবার্তায় জানানো হয়, বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে একজন প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ১৯৯১ সালে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে আরও দুই দফা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র, সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থা ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি দীর্ঘদিন বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবেও সংসদীয় রাজনীতিতে সক্রিয় থেকে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আপসহীন ভূমিকা পালন করেন।

নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের বিকাশে তাঁর রাজনৈতিক ভূমিকা বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

নির্বাচন কমিশন মরহুমার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছে এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন, স্বজন ও সহকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি ঠিক করতে উপদেষ্টাদের বৈঠক, দুপুরে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১৫
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক স্মরণীয় অধ্যায়ের অবসান ঘটিয়ে চিরবিদায় নিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর মৃত্যু-পরবর্তী রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি ও শোক পালনের রূপরেখা নির্ধারণে জরুরি বৈঠকে বসেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বিশেষ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও উপস্থিত আছেন।

সরকারি সূত্র জানিয়েছে, দুপুর ১২টার পর প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। এই ভাষণেই রাষ্ট্রীয় শোক এবং সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর শেষ বিদায়ের রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা রয়েছে।

অন্যদিকে দলের চেয়ারপারসনের মৃত্যুতে পরবর্তী করণীয় ও জানাজার সময়সূচি নির্ধারণে স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা ডেকেছে বিএনপি। দুপুর সাড়ে ১২টায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

জাতীয় নির্বাচনের দিন জুলাই সনদের বিষয়ে প্রস্তাবিত গণভোটের সরকারি প্রচার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। গণভোট বিষয়ে জনসচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রমের মুখ্য সমন্বয়ক ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের প্রচার বন্ধ থাকবে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই এই গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

১৯৪৫ সালে জন্ম নেওয়া খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন। তিন মেয়াদে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এই নেত্রী মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং নারী শিক্ষার প্রসারে আমৃত্যু কাজ করে গেছেন। দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা এবং রাজনৈতিক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ২০২৪ সালের আগস্ট বিপ্লবের পর তিনি পূর্ণ মুক্তি পেলেও শারীরিক জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন হাসপাতালেই কাটছিল তাঁর সময়।

তাঁর মৃত্যুতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা গভীর শোক প্রকাশ করছেন। হাসপাতালের সামনে এবং নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ভিড় করছেন হাজার হাজার শোকাতুর নেতা-কর্মী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত