Ajker Patrika

পশু–পাখির মুখ দেওয়া খাবার খাওয়া কি জায়েজ

ইসলাম ডেস্ক
আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ২০: ০৪
পশু–পাখির মুখ দেওয়া খাবার খাওয়া কি জায়েজ

কুকুর, বিড়ালসহ আমাদের চারপাশে বাস করা জীবজন্তু ও পশুপাখির মুখ দেওয়া খাবার খাওয়া ও পানি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক হতে হবে। কারণ এর সঙ্গে পবিত্রতা-অপবিত্রতার বিষয় জড়িত। সব ধরনের প্রাণীর উচ্ছিষ্ট পবিত্র নয়। কোন প্রাণীর উচ্ছিষ্ট পবিত্র এবং কোন প্রাণীর উচ্ছিষ্ট অপবিত্র—তা ফিকহের কিতাবে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো—

মানুষের উচ্ছিষ্ট
মানুষের মুখ দেওয়া সব ধরনের পানাহারের উপকরণ ও পানি পবিত্র এবং তা খেতে এবং ব্যবহার করতে শরিয়তের দৃষ্টিতে কোনো অসুবিধা নেই। মানুষটি মুসলমান হোক বা অমুসলিম, পবিত্র হোক বা অপবিত্র, ঋতুস্রাবের সময়ে হোক বা অন্য সময়ে—সব সময় মানুষের উচ্ছিষ্ট পবিত্র এবং খাওয়ার যোগ্য। 

হাদিসে এসেছে, আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি ঋতুস্রাবের সময় পানি পান করে (বাকি অংশটুকু) মহানবী (সা.)-কে দিতাম। তিনি আমার মুখ রাখা স্থানে মুখ রেখেই তা পান করতেন। কখনো আমি ঋতুস্রাব চলাকালে হাড়যুক্ত মাংস খেতাম; (কিছুটা খেয়ে বাকি অংশ) মহানবী (সা.)-কে দিতাম। তিনি আমার মুখ রাখা স্থানে মুখ রেখেই খেতেন।’ (মুসলিম) 

হালাল পশুপাখির উচ্ছিষ্ট
যেসব পশুপাখির মাংস খাওয়া হালাল, সেসব পশুপাখির মুখ দেওয়া খাবার ও পানীয় পবিত্র। তা খাওয়া ও ব্যবহার করা জায়েজ। কারণ মৌলিকভাবে কোনো বস্তুর অপবিত্র হওয়ার কোনো দলিল না থাকলে তা পবিত্রই বিবেচনা করা হয়। তবে যেসব মুরগি সবখানে বিচরণ করার সুযোগ পায়, সেগুলোর মুখ দেওয়া খাবার খাওয়া বা পানি পান অথবা ব্যবহার করা অনুচিত। কারণ এসব মুরগি নাপাক বস্তু খেয়ে বেড়ায়। 

শিকারী পাখির উচ্ছিষ্ট
যেসব পাখি শিকারী ও হিংস্র হওয়ার কারণে খাওয়া নাজায়েজ যেমন— ইগল, শকুন, কাক ইত্যাদি—সেসবের উচ্ছিষ্ট অপবিত্র। কারণ এসব পাখিও অপবিত্র জিনিস খেয়ে বেড়ায়। তবে এ ধরনের পাখি খাঁচায় বন্দী থাকলে এবং এগুলোর অপবিত্র বস্তু এড়িয়ে চলার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেলে, তা খাওয়া বা ব্যবহার করা মাকরুহ হবে না। 

কুকুর, শূকর ও হিংস্র পশুর উচ্ছিষ্ট
শূকরের উচ্ছিষ্ট অপবিত্র। পবিত্র কোরআনে শূকরের সবকিছুই অপবিত্র বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই তা অপবিত্র।’ (সুরা আনআম: ১৪৫) 

একইভাবে কুকুরের উচ্ছিষ্টও অপবিত্র। কুকুর কোনো পাত্রে মুখ দিলে তা ধুয়ে ফেলতে হবে। কোনো কোনো হাদিসে তিনবার এবং কোনো হাদিসে পাঁচবার ধুয়ে ফেলার কথা এসেছে। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘কুকুর মুখ দেওয়ার কারণে পাত্র তিনবার ধুতে হবে।’ (দারকুতনি) অন্য হাদিসে বলেছেন, ‘পাত্রে কুকুর মুখ দিলে তা সাতবার ধুয়ে নাও, প্রথমবার মাটি দিয়ে।’ (বুখারি ও মুসলিম) 

উল্লেখ্য, ইসলামে শখের বশে কুকুর পোষা বৈধ নয়। কারণ ইসলামে শখ করে কুকুর পালন করা নিষেধ। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ঘরে কুকুর আছে, সে ঘরে রহমতের ফেরেশতারা প্রবেশ করেন না।’ (বুখারি) তবে শিকার করা, ফসলের সুরক্ষা, পশুপাখির নিরাপত্তা, ঘরবাড়ি, দোকান ও অফিস পাহারা দেওয়া এবং অপরাধী চিহ্নিত করার জন্য কুকুর পোষা বৈধ। (মুসলিম, তিরমিজি, ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ৪ / ২৪২)

অন্যান্য হিংস্র পশুর উচ্ছিষ্টও অপবিত্র। তবে বন-জঙ্গলে বড় জলাধারের পানি পবিত্র। হাদিসে এসেছে, ইবনে ওমর (রা.) বলেন, একবার রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘মাঠে-ঘাটে জমে থাকা পানি থেকে বিভিন্ন ধরনের বন্য জীবজন্তু ও হিংস্র পশু পান করে। (এসবের হুকুম কী)। তিনি বললেন, পানি দুই কুল্লা (এক কুল্লা ২২৭ লিটারের সমান) পরিমাণ হলে তা অপবিত্র হবে না।’ (মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ)

বিড়ালের উচ্ছিষ্ট
বিড়াল হিংস্র পশুর অন্তর্ভুক্ত হলেও মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে এটির উচ্ছিষ্টের বিধানে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে। সুতরাং বিড়ালের মাংস খাওয়া জায়েজ না হলেও উচ্ছিষ্ট পবিত্র। তবে তা খাওয়া বা ব্যবহার করা মাকরুহ। ব্যবহার না করাই উত্তম। 

হাদিসে এসেছে, কাবশা বিনতে কাব ইবনে মালিক (রহ.) থেকে বর্ণিত, একদিন (তাঁর শ্বশুর) আবু কাতাদা তাঁর কাছে এলেন। কাবশা তাঁকে অজুর পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন। তখন একটি বিড়াল এসে সেই পানি থেকে পান করতে শুরু করল। পান করা শেষ হওয়া পর্যন্ত তিনি পাত্রটি বিড়ালটির জন্য কাত করে ধরলেন। কাবশা বলেন, আবু কাতাদা খেয়াল করলেন—আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে আছি। তখন তিনি বললেন, ‘ভাতিজি, তুমি কি আশ্চর্য হচ্ছ?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’ তখন তিনি বললেন, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, বিড়াল নাপাক নয়। তা তোমাদের আশপাশে ঘন-ঘন বিচরণ করে। (সুতরাং এর উচ্ছিষ্ট নাপাক নয়)।’ (আবু দাউদ) 

তবে যদি বিড়াল ইঁদুর বা অন্য কোনো অপবিত্র বস্তু খাওয়ার পরপরই পানিতে মুখ দেয়, তাহলে সেই পানি অপবিত্র হয়ে যাবে। অবশ্য কিছুক্ষণ পরে মুখ দিলে অপবিত্র হবে না। 

অন্যান্য জীবজন্তুর উচ্ছিষ্ট
গাধা ও খচ্চরের উচ্ছিষ্ট সন্দেহযুক্ত। অর্থাৎ তা পবিত্র নাকি অপবিত্র—এ নিয়ে স্ববিরোধী দলিল থাকায় ফকিহদের কাছে বিষয়টি সন্দেহযুক্ত। অনেকেই পবিত্র বলেছেন, অনেকে বলেছেন অপবিত্র। সুতরাং তা ব্যবহার না করাই উত্তম। তবে ঘোড়ার উচ্ছিষ্ট পবিত্র।

এ ছাড়া সাপ, ইঁদুর ইত্যাদি ঘরের ভেতর বিচরণ করা প্রাণীর উচ্ছিষ্ট অপবিত্র এবং তা খাওয়া বা ব্যবহার করা নাজায়েজ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত।

প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বাংলা, ১০ রজব ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৫: ১৯ মিনিট
ফজর০৫: ২০ মিনিট০৬: ৩৯ মিনিট
জোহর১২: ০২ মিনিট০৩: ৪৫ মিনিট
আসর০৩: ৪৬ মিনিট০৫: ২১ মিনিট
মাগরিব০৫: ২৩ মিনিট০৬: ৪২ মিনিট
এশা০৬: ৪৩ মিনিট০৫: ১৯ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজা পড়াবেন বায়তুল মোকাররমের খতিব

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বাদ জোহর বেলা ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এই জানাজায় ইমামতি করবেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক।

মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

মির্জা ফখরুল জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বুধবার বেলা ২টায় পার্লামেন্ট ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এলাকায় জানাজা সম্পন্ন হবে। জানাজা শেষে শেরেবাংলা নগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই তাঁকে সমাহিত করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোক পালনে ইসলামের নির্দেশনা

ইসলাম ডেস্ক 
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত

জীবনে প্রিয়জন হারানো এক অপূরণীয় বেদনা। এই কঠিন মুহূর্তে মানুষ কীভাবে আচরণ করবে, কেমনভাবে শোক প্রকাশ করবে—সেই বিষয়ে ইসলাম দিয়েছে পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো—শোক প্রকাশে ভারসাম্য রাখা, কষ্টকে অস্বীকার না করা, আবার সীমালঙ্ঘনও না করা।

ইসলাম এ বিপদে ধৈর্য ও আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকার শিক্ষা দেয়। তবে কান্না করাকে নিষেধ করেনি, বরং তা স্বাভাবিক ও মানবিক অনুভূতির প্রকাশ হিসেবে বিবেচিত। রাসুলুল্লাহও (সা.) কেঁদেছেন তাঁর সন্তান ইবরাহিম (রা.)-এর মৃত্যুর সময়।

সাহাবি আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) বিস্ময় প্রকাশ করলে নবীজি (সা.) বলেন, ‘এ কান্না স্নেহ-ভালোবাসার প্রকাশ। আমার হৃদয় বেদনাহত, চোখ দুটো সিক্ত, তবে আমি বলছি সেই কথাই, যা আমার রবকে সন্তুষ্ট করে। ইবরাহিম, তোমার বিচ্ছেদে আমরা শোকাহত।’ (সহিহ বুখারি)

ইসলাম কান্নাকে মানবিক বললেও অতিরিক্ত বিলাপ, উচ্চ স্বরে চিৎকার, গায়ে চপেটাঘাত, জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলা বা আকুতি-মিনতি করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মৃতের জন্য বিলাপ করা জাহিলি যুগের প্রথা। বিলাপকারী যদি মৃত্যুর আগে তওবা না করে, তবে কিয়ামতের দিন তাকে আগুনের পোশাক ও আলকাতরার চাদর পরানো হবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থরক্ষায় খালেদা জিয়ার অনন্য কিছু উদ্যোগ

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ২৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আজ মঙ্গলবার ভোরে যখন কুয়াশাভেজা প্রকৃতিতে ফজরের আজান ধ্বনিত হচ্ছিল, এর ঠিক কিছু পরেই চিরদিনের জন্য চোখ বুজলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব খালেদা জিয়া। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি শুধু একজন সফল প্রধানমন্ত্রীই ছিলেন না, বরং মুসলিম উম্মাহর স্বার্থরক্ষা এবং ইসলামি মূল্যবোধকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার অন্যতম এক বাতিঘর ছিলেন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কজন রাজনৈতিক নেতৃত্ব ধর্মীয় চেতনা ও মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় আপসহীন ভূমিকা রেখেছেন, খালেদা জিয়ার নাম সেখানে অনেকটা অগ্রভাগেই থাকবে।

খালেদা জিয়া শুধু রাজনীতির ময়দানেই বিচরণ করেননি, তিনি অন্তরে লালন করতেন বাংলাদেশি মুসলিম জাতীয়তাবাদের আদর্শ। গৃহবধূ থেকে দেশের শীর্ষ নেতৃত্বে উঠে আসার দীর্ঘ লড়াইয়ে তিনি সব সময় আলেমসমাজকে পরম মমতায় কাছে টেনে নিয়েছেন।

সংবিধানে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও রাষ্ট্রধর্মের সুরক্ষা

১৯৯১ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর যখন নানামুখী রাজনৈতিক চাপ ছিল, তখন খালেদা জিয়া দৃঢ়তার সঙ্গে সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ এবং ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বজায় রাখার পক্ষে অবস্থান নেন। ২০০৫ সালের সংসদীয় কার্যবিবরণী সাক্ষ্য দেয়, তিনি বারবার সংসদে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের মর্যাদা রক্ষার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন।

কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসার যুগান্তকারী সংস্কার

আলেমসমাজ ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের হৃদয়ে খালেদা জিয়া অমর হয়ে থাকবেন তাঁর শিক্ষা সংস্কারের জন্য।

  • ফাজিল ও কামিলের স্বীকৃতি: ২০০১-০৬ মেয়াদে ফাজিলকে ডিগ্রি এবং কামিলকে মাস্টার্সের সমমান দিয়ে তিনি মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের মূলধারার সঙ্গে প্রতিযোগিতার সুযোগ করে দেন।
  • কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি: ২০০৫ সালে আলেমদের সঙ্গে বৈঠকের পর ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দেওয়ার ঐতিহাসিক গেজেট প্রকাশ করেন। সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বাস্তবায়ন অসম্পূর্ণ থাকলেও এটিই ছিল কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির মাইলফলক।
  • ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইসলামিক স্টাডিজ অ্যান্ড দাওয়াহ’ অনুষদসহ নতুন নতুন বিভাগ অনুমোদনের মাধ্যমে উচ্চতর ইসলামি শিক্ষার প্রসারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

ধর্মীয় স্থাপনা ও হজ ব্যবস্থাপনায় সংস্কার

বায়তুল মোকাররম মসজিদের সংস্কার, জাতীয় ঈদগাহের আধুনিকায়ন এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম-মুয়াজ্জিন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো ছিল তাঁর নিয়মিত কাজের অংশ। আল্লাহর ওলিদের মাজার রক্ষণাবেক্ষণেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক। পাশাপাশি হজযাত্রীদের যাতায়াত সহজ করতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে শক্তিশালী করা এবং সৌদি সরকারের সঙ্গে সফল কূটনীতির মাধ্যমে ভিসা সমস্যার সমাধান করেছিলেন তিনি।

ইসলামি অর্থনীতি ও বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব

খালেদা জিয়ার শাসনামলেই বাংলাদেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং ও ইসলামি আর্থিক ব্যবস্থা দ্রুত বিস্তৃত হয়। মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে ইসলামি ব্যাংকিংকে আস্থার জায়গায় নিয়ে যেতে তাঁর সরকার নীতিগত সহায়তা প্রদান করে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ওআইসিসহ সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাইয়ের মতো মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছিল।

২০০৫ সালে ইউরোপে নবীজি (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর কার্টুন প্রকাশিত হলে তাঁর সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর নিন্দা জানিয়েছিল।

আজ ফজরের পর তিনি যখন মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন, তখন পেছনে রেখে গেছেন এমন এক কর্মময় জীবন, যা এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামের মর্যাদা রক্ষা এবং ইসলামি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার যে বীজ তিনি বপন করেছিলেন, তা আজ এক বিশাল মহিরুহে পরিণত হয়েছে।

আল্লাহ তাঁকে তাঁর সকল নেক আমল কবুল করে এবং ভুলত্রুটি ক্ষমা করে জান্নাতুল ফিরদাউসের উচ্চ মাকাম দান করুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত