Ajker Patrika

খলিফা ওমরের মানবিকতা ও সহাবস্থান নীতি

মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ
খলিফা ওমরের মানবিকতা ও সহাবস্থান নীতি

পৃথিবীবাসীকে দীর্ঘদিন ধরে শাসন করে যাওয়া শোষণমূলক সমাজব্যবস্থাকে পরাজিত করে আল্লাহ প্রদত্ত ইনসাফপূর্ণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার যে মিশন মহানবী (সা.) শুরু করেছিলেন, তাঁর পরবর্তী খলিফাগণ তা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশ্বব্যাপী সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় খলিফা ওমর (রা.) রোমানদের শাসনাধীন থাকা নবী-রাসুলদের স্মৃতিবিজড়িত পবিত্র ভূমি জেরুজালেম ইসলামি সাম্রাজ্যের অধীনে নিয়ে আসেন। 
 
যেভাবে এল বিজয়
ঐতিহাসিকদের বর্ণনা অনুসারে, খলিফা ওমর (রা.) জর্ডান ও ফিলিস্তিন অঞ্চলে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য বিশিষ্ট সাহাবি আমর ইবনুল আস (রা.)কে সেনাপতি নিযুক্ত করেন। তাঁর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী জর্ডান জয় করে ফিলিস্তিনের দিকে রওনা হয়। আমর দেখলেন, রোমান সেনারা গাজা থেকে কায়সারিয়া, আজনাদাইন থেকে জেরুজালেম—সবখানে ছড়িয়ে আছে। তাই পরামর্শ চেয়ে খলিফাকে চিঠি লেখেন। চিঠি পেয়ে ওমর (রা.) মুআবিয়া (রা.)কে কায়সারিয়া অবরোধের নির্দেশ দেন এবং আলকামা ইবনে মাজ্জারকে গাজা ঘেরাও করে রাখতে বলেন। এই সুযোগে আমর আজনাদাইন জয় করে নেন। রোমান সেনাপতি আরতাবুন আজনাদাইন জেরুজালেমে প্রতিরোধ গড়ে তুললে আমর (রা.) একে একে লড, নাবলুস, জাফা, আমওয়াস, বায়তজিবরিন, গাজা প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নেন। তবু জেরুজালেম বিজয় করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই সহযোগিতা চেয়ে খলিফার কাছে আবার চিঠি লেখেন। চিঠি পেয়ে খলিফা ওমর (রা.) মদিনার শীর্ষ সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে জেরুজালেম বিজয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। খলিফার আগমনের খবর পেয়ে জেরুজালেমবাসী যুদ্ধের চিন্তা বাদ দিয়ে সন্ধির জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। আরতাবুন জেরুজালেমবাসীর মনোভাব বুঝতে পেরে সেখান থেকে পালিয়ে গেলেন। ওমর (রা.) জেরুজালেম পৌঁছানোর আগেই সেখানকার প্রতিনিধিদল সন্ধির আবেদন নিয়ে চলে আসে। ওমর প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং একটি ঐতিহাসিক চুক্তিনামা লিপিবদ্ধ করেন। 
 
চুক্তিনামায় যা লেখা ছিল
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। এই মর্মে ঘোষণা করা হচ্ছে যে, আল্লাহর বান্দা, ইমানদারদের সেনাপতি ওমর ইবনুল খাত্তাব জেরুজালেমের জনগণের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান করছেন। নিরাপত্তা দিচ্ছেন তাদের জান, মাল, গির্জা ও আচার-অনুষ্ঠানাদির। মুসলিমরা তাদের গির্জা দখল বা ধ্বংস করবে না। তাদের জীবন, সম্পদ, আবাসভূমি, ক্রুশ—সবকিছুই নিরাপদ থাকবে। জোর করে কাউকে ধর্মান্তর করা হবে না। জেরুজালেমের অধিবাসীদের অন্যান্য শহরের লোকজনের মতো কর প্রদান করতে হবে এবং অবশ্যই রোমান ও লুটেরাদের বিতাড়িত করতে হবে। জেরুজালেমের যেসব অধিবাসী গির্জা ও ক্রুশ ছেড়ে রোমানদের সঙ্গে নিজেদের সম্পদ নিয়ে চলে যেতে ইচ্ছুক, আশ্রয়স্থলে পৌঁছানো পর্যন্ত তারা নিরাপদ থাকবে। গ্রামের লোকজন চাইলে শহরে বসবাস করতে পারে, তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই শহরের বাকি নাগরিকদের মতো তাদেরও কর প্রদান করতে হবে। সুতরাং কেউ চাইলে রোমানদের কাছে যেতে পারে, চাইলে পরিবার-পরিজনের কাছে থাকতে পারে। ফসল কাটার সময় না আসা পর্যন্ত কারও থেকে কিছুই নেওয়া হবে না। যদি তারা চুক্তি অনুযায়ী কর প্রদান করে, তাহলে এই চুক্তির অধীন শর্তাবলি আল্লাহর কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ। এই চুক্তিনামার পক্ষে সাক্ষী হিসেবে আছেন খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ, আমর ইবনুল আস, আবদুর রাহমান ইবনে আওফ ও মুআবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান (রা.)।
 
যদিও তাবারির বর্ণনামতে, ওমর (রা.) ইহুদিদের জেরুজালেমে থাকতে নিষেধ করেছিলেন, তবে সেই বর্ণনার কোনো সূত্র উল্লেখ না করায় ইতিহাস গবেষকেরা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তদুপরি মুসলিম শাসনাধীন জেরুজালেমে ইহুদিদের স্বাধীন জীবনযাপনও সেই বর্ণনাকে ভুল হিসেবে চিহ্নিত করে। 
 
সহাবস্থান ও মানবিকতার নীতি
জেরুজালেমের ইহুদি-খ্রিষ্টানদের প্রতি বিজয়ী মুসলিম বাহিনী যে মানবিক আচরণ করেছিল, ইতিহাসে তার উদাহরণ বিরল। এর আগে যারাই কুদস বিজয় করেছিল, সবাই ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের গণহারে হত্যা করেছিল অথবা জোরপূর্বক তাদের ধর্ম মেনে নিতে বাধ্য করেছিল। ইহুদিদের কর্তৃত্বে যখন ছিল, তখন তারা খ্রিষ্টানদের পবিত্র স্থাপনাসমূহের প্রতি চরম অসম্মান প্রদর্শন করেছিল। ইসা (আ.)-এর সমাধির পাশে নির্মিত গির্জাটি আবর্জনার স্তূপে পরিণত করে তার নাম দিয়েছিল কুমামা বা আবর্জনার গির্জা। পরে খ্রিষ্টানরা যখন তার দখল পায়, তখন ইহুদিদের কেবলা সাখরার এমন নিকৃষ্ট পরিণতি করে যে দূর-দূরান্ত থেকে নারীরা তাদের ঋতুস্রাবের ন্যাকড়া এখানে ফেলতে পাঠিয়ে দিত। 
 
ওমর (রা.) বায়তুল মাকদিসে যখন প্রবেশ করেন, তখন ময়লার স্তূপ মিহরাবে দাউদ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। তিনি নিজ হাতে তা পরিষ্কার করতে শুরু করেন। তাঁর দেখাদেখি উপস্থিত মুসলমানরা সেই কাজে অংশ নেন। ওমর (রা.)-এর এই কাজ গভীরভাবে প্রমাণ করে যে, ইসলাম অন্য সব ধর্মের প্রতি সতত শ্রদ্ধাশীল। 
 
খ্রিষ্টানদের সঙ্গে আরও বিস্ময় ও বিমুগ্ধ আচরণ করেন তিনি। তাদের বিশ্বাসের স্বাধীনতা দিয়েছেন। ক্রুশ ও গির্জায় তাদের বাধাহীন করেছেন। এরপর তিনি কিয়ামা গির্জায় যান। নামাজের সময় হলে যাজক গির্জার ভেতরে তাঁকে নামাজ আদায় করতে বলেন। কিন্তু তিনি এই বলে সেখানে নামাজ আদায় থেকে বিরত থাকলেন যে, পরবর্তী সময়ে মুসলমানরা একে দলিল হিসেবে নিয়ে তা মসজিদে রূপান্তর করতে চাইবে। অবশ্য বেথেলহামের একটি গির্জার ভেতরে তিনি নামাজ আদায় করেছিলেন। তখন ওই শঙ্কার কারণে তিনি সেই গির্জার জন্য আলাদা অঙ্গীকারপত্র লেখান এবং দল বেঁধে মুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন। 
 
পরবর্তী সময়ে যত দিন জেরুজালেম মুসলমানদের অধিকারে ছিল, তত দিন খলিফা ওমরের চুক্তিনামা অনুসারে মুসলিম, ইহুদি, খ্রিষ্টান—সবার স্বাধীনভাবে বসবাস এবং নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা ছিল। 
 
সূত্র: ১. তারিখুত তাবারি। 
২. ফুতুহুল বুলদান। 
৩. চার খলিফা: জীবন, শাসন, যুদ্ধ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোক পালনে ইসলামের নির্দেশনা

ইসলাম ডেস্ক 
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত

জীবনে প্রিয়জন হারানো এক অপূরণীয় বেদনা। এই কঠিন মুহূর্তে মানুষ কীভাবে আচরণ করবে, কেমনভাবে শোক প্রকাশ করবে—সেই বিষয়ে ইসলাম দিয়েছে পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো—শোক প্রকাশে ভারসাম্য রাখা, কষ্টকে অস্বীকার না করা, আবার সীমালঙ্ঘনও না করা।

ইসলাম এ বিপদে ধৈর্য ও আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকার শিক্ষা দেয়। তবে কান্না করাকে নিষেধ করেনি, বরং তা স্বাভাবিক ও মানবিক অনুভূতির প্রকাশ হিসেবে বিবেচিত। রাসুলুল্লাহও (সা.) কেঁদেছেন তাঁর সন্তান ইবরাহিম (রা.)-এর মৃত্যুর সময়।

সাহাবি আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) বিস্ময় প্রকাশ করলে নবীজি (সা.) বলেন, ‘এ কান্না স্নেহ-ভালোবাসার প্রকাশ। আমার হৃদয় বেদনাহত, চোখ দুটো সিক্ত, তবে আমি বলছি সেই কথাই, যা আমার রবকে সন্তুষ্ট করে। ইবরাহিম, তোমার বিচ্ছেদে আমরা শোকাহত।’ (সহিহ বুখারি)

ইসলাম কান্নাকে মানবিক বললেও অতিরিক্ত বিলাপ, উচ্চ স্বরে চিৎকার, গায়ে চপেটাঘাত, জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলা বা আকুতি-মিনতি করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মৃতের জন্য বিলাপ করা জাহিলি যুগের প্রথা। বিলাপকারী যদি মৃত্যুর আগে তওবা না করে, তবে কিয়ামতের দিন তাকে আগুনের পোশাক ও আলকাতরার চাদর পরানো হবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থরক্ষায় খালেদা জিয়ার অনন্য কিছু উদ্যোগ

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ২৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আজ মঙ্গলবার ভোরে যখন কুয়াশাভেজা প্রকৃতিতে ফজরের আজান ধ্বনিত হচ্ছিল, এর ঠিক কিছু পরেই চিরদিনের জন্য চোখ বুজলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব খালেদা জিয়া। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি শুধু একজন সফল প্রধানমন্ত্রীই ছিলেন না, বরং মুসলিম উম্মাহর স্বার্থরক্ষা এবং ইসলামি মূল্যবোধকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার অন্যতম এক বাতিঘর ছিলেন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কজন রাজনৈতিক নেতৃত্ব ধর্মীয় চেতনা ও মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় আপসহীন ভূমিকা রেখেছেন, খালেদা জিয়ার নাম সেখানে অনেকটা অগ্রভাগেই থাকবে।

খালেদা জিয়া শুধু রাজনীতির ময়দানেই বিচরণ করেননি, তিনি অন্তরে লালন করতেন বাংলাদেশি মুসলিম জাতীয়তাবাদের আদর্শ। গৃহবধূ থেকে দেশের শীর্ষ নেতৃত্বে উঠে আসার দীর্ঘ লড়াইয়ে তিনি সব সময় আলেমসমাজকে পরম মমতায় কাছে টেনে নিয়েছেন।

সংবিধানে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও রাষ্ট্রধর্মের সুরক্ষা

১৯৯১ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর যখন নানামুখী রাজনৈতিক চাপ ছিল, তখন খালেদা জিয়া দৃঢ়তার সঙ্গে সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ এবং ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বজায় রাখার পক্ষে অবস্থান নেন। ২০০৫ সালের সংসদীয় কার্যবিবরণী সাক্ষ্য দেয়, তিনি বারবার সংসদে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের মর্যাদা রক্ষার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন।

কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসার যুগান্তকারী সংস্কার

আলেমসমাজ ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের হৃদয়ে খালেদা জিয়া অমর হয়ে থাকবেন তাঁর শিক্ষা সংস্কারের জন্য।

  • ফাজিল ও কামিলের স্বীকৃতি: ২০০১-০৬ মেয়াদে ফাজিলকে ডিগ্রি এবং কামিলকে মাস্টার্সের সমমান দিয়ে তিনি মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের মূলধারার সঙ্গে প্রতিযোগিতার সুযোগ করে দেন।
  • কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি: ২০০৫ সালে আলেমদের সঙ্গে বৈঠকের পর ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দেওয়ার ঐতিহাসিক গেজেট প্রকাশ করেন। সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বাস্তবায়ন অসম্পূর্ণ থাকলেও এটিই ছিল কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির মাইলফলক।
  • ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইসলামিক স্টাডিজ অ্যান্ড দাওয়াহ’ অনুষদসহ নতুন নতুন বিভাগ অনুমোদনের মাধ্যমে উচ্চতর ইসলামি শিক্ষার প্রসারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

ধর্মীয় স্থাপনা ও হজ ব্যবস্থাপনায় সংস্কার

বায়তুল মোকাররম মসজিদের সংস্কার, জাতীয় ঈদগাহের আধুনিকায়ন এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম-মুয়াজ্জিন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো ছিল তাঁর নিয়মিত কাজের অংশ। আল্লাহর ওলিদের মাজার রক্ষণাবেক্ষণেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক। পাশাপাশি হজযাত্রীদের যাতায়াত সহজ করতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে শক্তিশালী করা এবং সৌদি সরকারের সঙ্গে সফল কূটনীতির মাধ্যমে ভিসা সমস্যার সমাধান করেছিলেন তিনি।

ইসলামি অর্থনীতি ও বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব

খালেদা জিয়ার শাসনামলেই বাংলাদেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং ও ইসলামি আর্থিক ব্যবস্থা দ্রুত বিস্তৃত হয়। মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে ইসলামি ব্যাংকিংকে আস্থার জায়গায় নিয়ে যেতে তাঁর সরকার নীতিগত সহায়তা প্রদান করে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ওআইসিসহ সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাইয়ের মতো মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছিল।

২০০৫ সালে ইউরোপে নবীজি (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর কার্টুন প্রকাশিত হলে তাঁর সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর নিন্দা জানিয়েছিল।

আজ ফজরের পর তিনি যখন মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন, তখন পেছনে রেখে গেছেন এমন এক কর্মময় জীবন, যা এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামের মর্যাদা রক্ষা এবং ইসলামি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার যে বীজ তিনি বপন করেছিলেন, তা আজ এক বিশাল মহিরুহে পরিণত হয়েছে।

আল্লাহ তাঁকে তাঁর সকল নেক আমল কবুল করে এবং ভুলত্রুটি ক্ষমা করে জান্নাতুল ফিরদাউসের উচ্চ মাকাম দান করুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কারও মৃত্যুর সংবাদ শুনলে যে দোয়া পড়বেন

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মানুষের জন্ম যেমন অবশ্যম্ভাবী, তেমনি তার মৃত্যুও পৃথিবীর এক অমোঘ সত্য। জীবনে চলার পথে যত সাফল্য, ব্যস্ততা বা আকাঙ্ক্ষা থাকুক; মৃত্যুর মুহূর্তে সবকিছু থেমে যায়। ইসলাম এই বাস্তবতাকে অত্যন্ত গভীরভাবে তুলে ধরেছে এবং আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে যে প্রতিটি প্রাণী একদিন তার প্রভুর কাছে ফিরে যাবে।

মৃত্যু অবধারিত ‎সত্য। তা থেকে পালানোর কোনো পথ নেই। কোনো বস্তু জীবনের অস্তিত্ব লাভ করলে তার মৃত্যু সুনিশ্চিত। কোরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে।

কেউ যখন মারা যায়, তার মৃত্যুর খবর শুনলে একটি দোয়া পড়তে হয়, দোয়াটি বর্ণিত হয়েছে পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ১৫৬ নম্বর আয়াতে।

দোয়াটি হলো: ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি; ওয়া আখলিফ-লি খাইরাম মিনহা।’

দোয়ার অর্থ: ‘আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই ফিরে যাব। হে আল্লাহ, আমাকে আমার এই বিপদে বিনিময় দান করুন এবং আমার জন্য এর চেয়ে উত্তম ব্যবস্থা করে দিন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতকালে কখন তায়াম্মুম করা যাবে, কখন যাবে না

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৩৮
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ইসলামি শরিয়তে পানি না থাকলে অথবা পানি ব্যবহারে অক্ষম হলে অজু ও গোসলের বিকল্প হিসেবে তায়াম্মুম করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা যদি পীড়িত হও বা সফরে থাকো বা তোমাদের কেউ শৌচালয় থেকে আসে বা তোমরা স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হও এবং পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে; অর্থাৎ তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ করবে। আল্লাহ তোমাদের কষ্ট দিতে চান না; তিনি শুধু তোমাদের পবিত্র করতে এবং তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো।’ (সুরা মায়িদা: ৬)

পবিত্র কোরআনের এই আয়াত এবং সংশ্লিষ্ট হাদিসগুলোর আলোকে ফকিহরা শীতকালে তায়াম্মুমের বিধান সম্পর্কে যে সমাধান দিয়েছেন, তার সারমর্ম নিচে তুলে ধরা হলো:

তায়াম্মুম কখন বৈধ?

যদি প্রচণ্ড ঠান্ডায় পানি ব্যবহার করলে মৃত্যুঝুঁকি থাকে অথবা শরীরের কোনো অঙ্গ অকার্যকর হয়ে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে, তবে তায়াম্মুম করা যাবে। অসুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে পানি ব্যবহারে রোগ বৃদ্ধি পাওয়ার বা সুস্থ হতে দীর্ঘ সময় লাগার অকাট্য প্রমাণ বা প্রবল ধারণা থাকলে তায়াম্মুম বৈধ।

তায়াম্মুম কখন বৈধ নয়?

ক্ষতি হওয়ার নিশ্চিত বা প্রবল আশঙ্কা না থেকে কেবল সাধারণ ঠান্ডার ভয় বা অলসতাবশত তায়াম্মুম করা জায়েজ নয়। (আল বাহরুর রায়েক: ১/১৪৮, ফাতাওয়া কাজিখান: ১/৫৮)

প্রতিকূলতায় অজুর সওয়াব

আমাদের দেশে সাধারণত যে মাত্রার শীত পড়ে, তাতে পানি ব্যবহার করলে মৃত্যু বা গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি খুব একটা থাকে না। সামান্য কষ্ট হলেও তা সহ্য করে অজু করা ইমানি দৃঢ়তার পরিচয়। এই কষ্টের বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা দ্বিগুণ সওয়াব দান করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রচণ্ড ঠান্ডার মৌসুমে যে ব্যক্তি পূর্ণরূপে অজু করবে, তাকে দ্বিগুণ সওয়াব দেওয়া হবে।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়িদ)

অন্য এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিকূল পরিবেশে পূর্ণরূপে অজু করাকে পাপ মোচন এবং মর্যাদা বৃদ্ধির অন্যতম আমল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। (জামে তিরমিজি)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত