Ajker Patrika

যুদ্ধে কী অস্ত্র ব্যবহার করছে রাশিয়া, ইউক্রেনের শক্তি কীসে

আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২২, ২১: ৩৭
যুদ্ধে কী অস্ত্র ব্যবহার করছে রাশিয়া, ইউক্রেনের শক্তি কীসে

রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযানে’ পতনের মুখে ইউক্রেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে বড় সংঘাতের ঘটনা এটি। ইউক্রেনের বিভিন্ন দিক থেকে তিন ফ্রন্টে আক্রমণ পরিচালনা করছে রাশিয়া। 

রাশিয়ান সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের বিস্তীর্ণ এলাকায় বিমান হামলা চালিয়েছে। বড় ধরনের রকেট ও ভারী গোলা বর্ষণ চলছে। উভয় পক্ষে দেড় সহস্রাধিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এর মধ্যে বেসামরিক নাগরিকেরাও রয়েছে। তবে হতাহতের সঠিক সংখ্যা কোনো পক্ষ থেকেই নিশ্চিত করা হচ্ছে না। 

এই সংঘাতে কোন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে সেটি গুরুত্বপূর্ণ। এটি জানা থাকলে হতাহত ও ধ্বংসযজ্ঞের একটা ধারণা পাওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রের একটি তালিকা দিয়েছে। 

যুদ্ধবিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্র
রুশ সামরিক বাহিনী যুদ্ধবিমান এবং ক্যালিবার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। মূলত ইউক্রেনের বিশেষ করে সামরিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে আঘাত হানার জন্য এই দুই সমরাস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। 

ক্যালিবার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সক্ষমতা আছে। ইউক্রেনীয় সামরিক স্থাপনা এবং সরকারি ভবনগুলো রাজধানী কিয়েভ এবং দ্বিতীয় প্রধান শহর খারকিভে আবাসিক এলাকার কাছাকাছি অবস্থিত। ক্যালিবার ক্ষেপণাস্ত্রের লক্ষ্যবস্তু এসব এলাকায় থাকার কারণে কিছু বেসামরিক লোকজন হতাহতের ঘটনা ঘটছে। 

একই কথা প্রযোজ্য রুশ যুদ্ধবিমান থেকে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষেত্রেও। আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপ করা এসব ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সামরিক অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করা হলেও আশপাশের অবকাঠামোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। 

মূল লক্ষ্যগুলোতে আঘাত করার জন্য রুশ সামরিক বাহিনী ‘ইস্কান্দার’ ক্ষেপণাস্ত্রও ব্যবহার করেছে। এ ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ৫০০ কিলোমিটার (প্রায় ৩০০ মাইল) পর্যন্ত। এটি অনেক বেশি শক্তিশালী ওয়্যারহেড বহন করতে পারে। ফলে বৃহৎ ভবন এবং কিছু সুরক্ষিত স্থাপনা ধ্বংস করতে সক্ষম। কিছু ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার মিত্র বেলারুশের সীমানা থেকে ছোড়া হয়েছিল বলে জানা গেছে। বেলারুশের ভূমি এখন রুশ হামলার মঞ্চে হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। 

রাশিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইস্কান্দাররকেট এবং আর্টিলারি (ভারী গোলা) 
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং অন্য কর্মকর্তারা রুশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে আবাসিক ভবন, স্কুল এবং হাসপাতালে নির্বিচারে গোলাবর্ষণের অভিযোগ করছেন। 

ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের ছবিগুলোতে তেমন দৃশ্যই প্রতীয়মান হচ্ছে। এপি ছবিগুলো যাচাই করে দেখেছে, আবাসিক ভবনগুলোতে রুশ রকেট হামলা হয়েছে। এতে বহু বেসামরিক নাগরিক হতাহতের আশঙ্কা রয়েছে। 

সোভিয়েত আমলের গ্রাদ (হেইল), স্মার্চ (টর্নেডো) এবং উরাগান (হারিকেন) নামের রকেট লাঞ্চারগুলো ডিজাইনই করা হয়েছে সৈন্য সমাবেশ বা একস্থানে জড়ো করা সামরিক সরঞ্জাম ধ্বংস করার জন্য শক্তিশালী রকেটের ঝাঁক নিক্ষেপ করার জন্য। জনবহুল এলাকায় এসব অস্ত্রের ব্যবহার অনিবার্যভাবে ব্যাপক প্রাণহানি এবং বেসামরিক অবকাঠামোর বড় ক্ষতির কারণ হয়। 

রুশ সামরিক বাহিনীতে সোভিয়েত আমলে ডিজাইন করা শক্তিশালী আর্টিলারি ইউনিটের সংখ্যাও কম নয়। মজার ব্যাপার হলো—এগুলো ফুলের নামে নামকরণ করা হয়েছে। যেমন স্ব-চালিত ২০৩-মিমি পিওনি এবং ১৫২-মিমি হাইসিন্থ এবং অ্যাকাসিয়া স্ব-চালিত ছোট কামান। 

মস্কো দাবি করছে, তারা শুধু সামরিক ঘাঁটি এবং অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করছে। কিয়েভ, খারকিভ এবং ইউক্রেনজুড়ে অন্যান্য শহরে বেসামরিক অবকাঠামো এবং আবাসিক এলাকার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার তথ্য আসছে। রুশ কর্মকর্তারা অভিযোগ করছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনী বেসামরিক লোকদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার কারণে আবাসিক এলাকায় ভারী অস্ত্র মোতায়েন করেছে। 

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান মিশেল ব্যাচেলেট গতকাল বৃহস্পতিবার জেনেভায় মানবাধিকার কাউন্সিলে বক্তৃতায় বলেন, ‘বেশির ভাগ বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে ভারী কামান, মাল্টি-লঞ্চ রকেট সিস্টেম এবং জনবহুল এলাকায় বিমান হামলার কারণে। বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে গুচ্ছ গোলাবারুদের ব্যবহার হচ্ছে।’ তবে কোন পক্ষ থেকে এমন অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে সেটি তিনি উল্লেখ করেননি। 

রুশ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি ট্যাংক পরীক্ষা করছেন ইউক্রেনের সেনা সদস্যক্লাস্টার মিউনিশন (গুচ্ছ যুদ্ধাস্ত্র) এবং থার্মোবারিক অস্ত্র
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ক্লাস্টার মিউনিশন ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন। অবশ্য ক্রেমলিন সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। 

এ ধরনের অস্ত্র একটি বিস্তৃত এলাকায় শত্রু সৈন্য এবং যুদ্ধাস্ত্র লক্ষ্য করে হামলার জন্য ডিজাইন করা হয়। জনবহুল এলাকায় এসব অস্ত্র ব্যবহার করলে অনিবার্যভাবে ব্যাপকভাবে বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটবে। 

ক্লাস্টার বোমা, রকেট এবং আর্টিলারি শেলগুলো ছোড়ারা পর বাতাসে উন্মুক্ত হয়। এরপর এগুলো থেকে বেরিয়ে যায় আরও ছোট ছোট অনেকগুলো বিস্ফোরক বা বোমা। একটি বিশাল এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এগুলো। একসঙ্গে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে এসব অস্ত্র। 

এই ক্ষুদ্র বোমাগুলোর অবিস্ফোরিত থাকার হার উচ্চ। ফলে যুদ্ধ পরবর্তীতে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত মানুষের প্রাণহানি বা পঙ্গুত্ব বরণের ঝুঁকি থাকে। 

থার্মোবারিক অস্ত্রে থাকে একটি জ্বালানি ধারক এবং দুটি পৃথক বিস্ফোরক চার্জ থাকে। প্রথম বিস্ফোরণে জ্বালানি ছড়িয়ে যায়। দ্বিতীয় বিস্ফোরণে বাতাসে বিচ্ছুরিত জ্বালানি এবং অক্সিজেনের সমন্বয়ে চরম চাপ এবং তাপ উৎপাদী একটি বিস্ফোরণ তরঙ্গ তৈরি করে। এতে বিস্ফোরণস্থলে আংশিক শূন্যতা তৈরি হয়। একটি শ্বাসরুদ্ধ কর পরিবেশ সৃষ্টি করে এ অস্ত্র। ফলে বিস্ফোরণের স্থলের কাছাকাছি মানুষের বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। 

পেন্টাগন বলছে, থার্মোবারিক অস্ত্র উৎক্ষেপণের জন্য রাশিয়ার বহনযোগ্য লাঞ্চারগুলো ইউক্রেনের ভেতরে দেখা গেছে। তবে সেগুলো ব্যবহার করা হয়েছে কি না সেটি নিশ্চিত হতে পারেনি মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর। 

রাশিয়ার ভয়ংকর অস্ত্র থারমোবারিক বোম্বইউক্রেনের অস্ত্রভান্ডার
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর হাতেও সোভিয়েত আমলের একাধিক রকেট লাঞ্চার এবং ছোট আকারের কামানের ভান্ডার রয়েছে। অর্থাৎ উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া অস্ত্রেরও ওপর নির্ভর করছে তারা। এদিক থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন বাহিনী কিছু ক্ষেত্রে সমান সক্ষমতা নিয়ে লড়ছে। 

তবে রাশিয়ার ইস্কান্দার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ক্যালিবার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের মতো অত্যাধুনিক দূরপাল্লার ও নিখুঁতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারা কোনো অস্ত্র ইউক্রেনের হাতে নেই। 

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীতে সোভিয়েত যুগের তোচকা-ইউ স্বল্প-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। এটির শক্তিশালী ওয়্যারহেড আছে। কিন্তু রাশিয়ার আধুনিক অস্ত্রের তুলনায় নির্ভুলভাবে লক্ষ্যে আঘাত হানার সক্ষমতার দিকে থেকে অতীব দুর্বল। 

পুরোনো সোভিয়েত-নির্মিত অস্ত্রাগার ছাড়াও, ইউক্রেন পশ্চিমা অস্ত্রের বড় চালান পেয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি জ্যাভলিন ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র এবং কাঁধে বহনযোগ্য বিমান বিধ্বংসী স্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্র অন্যতম। 

সংঘাত শুরুর আগে আগে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী তুরস্কের কাছ থেকে পাওয়া বায়রাক্টার ড্রোন ব্যবহার করেছে। রাশিয়ার একটি সামরিক কনভয়ের বিরুদ্ধে বায়রাক্টার ড্রোন হামলার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে ইউক্রেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দক্ষিণ কোরিয়ার পারমাণবিক সাবমেরিন প্রকল্প: এশিয়ায় উসকে দেবে সমুদ্রতলে অস্ত্র প্রতিযোগিতা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
দক্ষিণ কোরিয়ার এ উদ্যোগ পানির নিচে অস্ত্র প্রতিযোগিতা উসকে দিতে পারে। ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ কোরিয়ার এ উদ্যোগ পানির নিচে অস্ত্র প্রতিযোগিতা উসকে দিতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনের পর দক্ষিণ কোরিয়ার পরমাণুচালিত সাবমেরিন প্রকল্প নতুন গতি পেয়েছে। দীর্ঘদিনের মার্কিন আপত্তি দূর হওয়ায় এই উদ্যোগ এখন এশিয়ার নিরাপত্তাকাঠামো পাল্টে দিতে পারে এবং পানির নিচে নতুন এক অস্ত্র প্রতিযোগিতা উসকে দিতে পারে।

উত্তর কোরিয়াকে মোকাবিলায় বহুদিন ধরে পরমাণুচালিত সাবমেরিনের অভিজাত ক্লাবে যোগ দিতে চেয়েছে সিউল। ট্রাম্পের সম্মতি পাওয়ায় দুই দেশের পারমাণবিক চুক্তির আওতায় জ্বালানির প্রবেশাধিকার মিলেছে, যা এত দিন ছিল বড় বাধা।

তবে বিশ্লেষক ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তারা বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার দ্রুত অগ্রসরমাণ এই কর্মসূচি চীনকে বিরক্ত করতে পারে এবং জাপানকেও একই ধরনের সক্ষমতা অর্জনের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

দক্ষিণ কোরিয়ার নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সাবমেরিন ক্যাপ্টেন চোই ইল বলেন, সাবমেরিন অত্যন্ত কার্যকর আক্রমণাত্মক অস্ত্র। তাই এই অঞ্চলে অস্ত্র প্রতিযোগিতা অনিবার্য।

সিউলের যুক্তি, উত্তর কোরিয়ার পানির নিচে থাকা হুমকি, বিশেষ করে সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবিলায় পরমাণুচালিত সাবমেরিন অপরিহার্য।

দক্ষিণ কোরিয়া অবশ্য বারবার বলছে, পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করবে না তারা।

গত বুধবার ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক থেকে পাওয়া এই চুক্তিকে ‘বড় ধরনের সাফল্য’ হিসেবে অভিহিত করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিউং।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, এটি দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষাব্যবস্থার নমনীয়তা বাড়াবে।

এদিকে উত্তর কোরিয়া দাবি করেছে, তারাও একই ধরনের সক্ষমতা বিকাশে মনোনিবেশ করেছে। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গত মার্চে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখায়, কিম জং-উন একটি তথাকথিত পরমাণুচালিত সাবমেরিন পরিদর্শন করেছেন।

উত্তর কোরিয়ার কর্মসূচি কতটা এগিয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। তবে কিছু বিশ্লেষকের সন্দেহ, পিয়ংইয়ং হয়তো রাশিয়ার সহায়তা পাচ্ছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া জানিয়েছে, তারা প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করছে, তবে প্রযুক্তিগত সহযোগিতার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২০ বছর অন্ধকারে বন্দী, মৃত্যুর হুমকিতে থেমে যাওয়া শৈশব-কৈশোর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: এনডিটিভি
ছবি: এনডিটিভি

পৃথিবী যখন খেলায় মত্ত, তখন তিনি বন্দী ছিলেন অন্ধকারে। ছয় বছর বয়সে ঘরবন্দী হওয়া লিসা ২০ বছর পর সেই দরজা পেরিয়ে বাইরে এলেও আলো দেখার ক্ষমতা প্রায় হারিয়ে ফেলেছেন।

কিছু গল্প ক্ষতের মতো করে উন্মোচিত হয়। কিছু শৈশব যেন কোনোদিনই শুরু হয় না। লিসার জীবন তেমনই এক গল্প। নিঃশব্দে হারিয়ে যাওয়া এক শৈশবের, পরিস্থিতিতে মুছে যাওয়া এক শিশুর এবং এক নারীর।

যে বয়সে শিশুরা বর্ণমালা শেখে, ছত্তিশগড়ের বাস্তার জেলার বাকাওয়ান্দ গ্রামের বাসিন্দা লিসা তখন ভয়কে জানছিলেন। ছয় বছর বয়সেই তাঁর কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয় বাইরের জগতের সব শব্দ। বাড়ির দরজা শুধু খাবারের জন্য খুলত, জীবনের জন্য নয়। ২০ বছর পর কর্তৃপক্ষ যখন তাঁকে খুঁজে পায়, তখন তাঁর চোখে নয়, স্মৃতিতেও ছিল শুধু অন্ধকার।

ছায়াই ছিল তাঁর পরিচয়। কথোপকথন বলতে ছিল শুধু দরজার নিচ দিয়ে ঠেলে দেওয়া থালাবাটির শব্দ। দুই দশক ধরে বন্দিদশার পর এখন তিনি নিজের নামে সাড়া দিতেও হিমশিম খান।

লিসার বন্দিত্ব শুরু হয়েছিল না লোহার শিক দিয়ে, না শিকল দিয়ে—শুরু হয়েছিল আতঙ্ক দিয়ে।

২০০০ সালে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় গ্রামের এক ব্যক্তি তাঁকে হত্যার হুমকি দেন। সেই কথায় আতঙ্ক এত গভীর হয়, তিনি নিজেকে গুটিয়ে ফেলেন নীরবতায়। এরই মধ্যে মারা যান তাঁর মা। কৃষক বাবা হয়ে পড়েন দুর্বল ও আতঙ্কিত। কোনো সহায়তা নেই, নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেই, কারও কাছে ভরসা চাওয়ার নেই। তাই তিনি এমন এক সিদ্ধান্ত নেন, যা মেয়ের জীবনের পরবর্তী ২০ বছর নির্ধারণ করে দেয়।

তিনি মেয়েকে মাটির ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখেন। বলেন, অন্ধকারই তাঁকে বিপদ থেকে রক্ষা করবে। জানালাবিহীন একটি ঘরই হয়ে ওঠে তাঁর পৃথিবী। না সূর্যের আলো। না কোনো কথা। না কোনো মানুষের স্পর্শ।

শুধু দরজায় রেখে যাওয়া এক প্লেট খাবার আর প্রতিদিন একটু একটু করে সংকুচিত হয়ে যাওয়া জীবনের প্রতিধ্বনি।

যে ব্যবস্থা তাঁকে রক্ষা করবে ভাবা হয়েছিল, তা-ই শেষমেশ তাঁকে সম্পূর্ণ গ্রাস করে নেয়।

সমাজকল্যাণ দপ্তরের দল যখন কুঁড়েঘরে প্রবেশ করে, তারা দেখতে পায় এক নারীকে, যাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব।

চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘদিন প্রাকৃতিক আলো থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে লিসার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। তাঁর মানসিক বিকাশও গুরুতরভাবে ব্যাহত হয়েছে। আচরণ বয়সের তুলনায় অনেক কম বয়সী শিশুর মতো। প্রতিটি শব্দে ভয় পান। যেকোনো স্পর্শে চমকে ওঠেন।

উদ্ধারের পর লিসাকে নিয়ে যাওয়া হয় জগদলপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, যেখানে তাঁর শারীরিক ও মানসিক অবস্থার বিস্তারিত পরীক্ষা শুরু হয়। প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, লিসার শৈশব থেমে যায় প্রবল ট্রমায় আর প্রাপ্তবয়স্ক জীবন গঠিত হয়েছে ইন্দ্রিয়ের বঞ্চনায়।

সমাজকল্যাণ দপ্তর পুরো ঘটনায় এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে।

কর্তৃপক্ষ লিসার পরিবার ও প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে—কেন তিনি ২০ বছর ধরে বন্দী ছিলেন এবং এই বন্দিত্ব আইনবহির্ভূত আটক হিসেবে বিবেচিত হবে কি না।

জেলার প্রশাসন কর্মকর্তারা বলেন, ‘তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়লে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

এ ছাড়া কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখছে, লিসার বাবা কি ভয়ে ও অজ্ঞতার কারণে স্কুল, পঞ্চায়েত বা স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে কোনো সাহায্য চাননি?

লিসা বর্তমানে মধ্যপ্রদেশের এক আশ্রমে আছেন, যেখানে সেবাকর্মী ও কাউন্সেলররা তাঁকে নতুন করে জীবন খুঁজে পেতে সহায়তা করছেন।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইন্ডিগোর ফ্লাইট বিপর্যয়: পানি–খাবারহীন অবস্থায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা হাজারো যাত্রী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইন্ডিগো এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বিপর্যয়ের কারণে ভোগান্তির শিকার হন হাজারো যাত্রী। ছবি: সংগৃহীত
ইন্ডিগো এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বিপর্যয়ের কারণে ভোগান্তির শিকার হন হাজারো যাত্রী। ছবি: সংগৃহীত

প্রায় বারো ঘণ্টা ধরে যাত্রীরা নিজেদের মালপত্র হাতে পেতে রীতিমতো সংগ্রাম করছেন। খাবার–পানির কোনো ব্যবস্থা নেই, আর ইন্ডিগোর কাউন্টারগুলি ফাঁকা। ভারতের অন্যতম বৃহত্তম বিমান সংস্থা সংস্থা ইন্ডিগোর পরিচালনগত ত্রুটির কারণে পাঁচ শতাধিক ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় ভারতের বিমানবন্দরগুলোতে এমন বিশৃঙ্খল দৃশ্য দেখা গেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি সরেজমিনে গিয়ে দেখেছে, দিল্লি বিমানবন্দরের টার্মিনালে হাজার হাজার স্যুটকেস পড়ে আছে। বহু যাত্রী মেঝেতে ঘুমিয়ে পড়েছেন, আর কেউ কেউ ক্ষোভে ফেটে পড়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন।

এক যাত্রী ইন্ডিগোর এই ব্যর্থতাকে ‘মানসিক অত্যাচার’ বলে অভিহিত করে এনডিটিভিকে জানান, বারো ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও তিনি বিমান সংস্থাটির কাছ থেকে কোনো স্পষ্ট জবাব পাচ্ছেন না। তাঁর কথায়, ‘আমি বারো ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এখানে। প্রতিবার তারা বলছেন এক ঘণ্টা দেরি, দু–ঘণ্টা দেরি। আমরা একটা বিয়েতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু আমাদের মালপত্র পর্যন্ত হাতে নেই। ইন্ডিগোর কর্মীরা আমাদের কিছু বলছেন না। এই মুহূর্তে এটি সবচেয়ে খারাপ বিমান সংস্থা। আমি বুঝি না কেন তারা নতুন যাত্রী নিচ্ছে আর মালপত্র জমিয়ে রাখছেন।’

আরেক যাত্রী জানালেন যে তিনি গতকাল দুপুর থেকে বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, ‘তারা বারবার ফ্লাইট পিছিয়ে দিচ্ছে। ইন্ডিগোর তরফ থেকে আমরা কোনো স্পষ্ট খবর পাচ্ছি না।’ আরেক যাত্রী বলেন, ‘খুবই মানসিক চাপের বিষয় এটা। চৌদ্দ ঘণ্টা ধরে আমি বিমানবন্দরে বসে আছি। খাবার বা অন্য কিছুর জন্য কোনো কুপন নেই। আমার কানেকটিং ফ্লাইটটি বাতিল হয়েছে। যাত্রীরা চিৎকার-চেঁচামেচি করছেন, কিন্তু কর্মীরা কোনো স্পষ্ট জবাব দিচ্ছেন না। এমন জরুরি পরিস্থিতি সামলানোর জন্য কর্মীদের বিন্দুমাত্র প্রশিক্ষণ নেই।’

হায়দরাবাদ বিমানবন্দরসহ অন্যান্য বিমানবন্দরেও একই ধরনের দৃশ্য দেখা গেছে। আটকা পড়া যাত্রীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ছিলেন। কারণ তাদের কোনো খাবার বা থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়নি। একদল যাত্রী প্রতিবাদস্বরূপ একটি এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট পর্যন্ত আটকে দিয়েছিলেন।

হায়দরাবাদ বিমানবন্দরের এক যাত্রী বলেন, ‘আমার ফ্লাইট গতকাল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ছাড়ার কথা ছিল। আমি আমার সহকর্মীকে নিয়ে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বিমানবন্দরে পৌঁছাই। আমাদের বলা হয়েছিল যে ফ্লাইট সময়মতো চলবে। এখন আমরা এখানে বারো ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আছি। ইন্ডিগো আমাদের কোনো স্পষ্ট ধারণা দেয়নি। তারা শুধু বলে চলেছে, অনির্দিষ্টকালের জন্য দেরি হচ্ছে। আমাদের কোনো স্পষ্ট খবর, খাবার বা পানি দেওয়া হয়নি। ইন্ডিগোর সাড়া একেবারেই যাচ্ছেতাই। এখানে বয়স্ক মানুষ আছেন, যাদের বিশেষ দায়বদ্ধতা আছে, তাদের জন্য কোনো সমাধান নেই। এটা খুবই হাস্যকর।’

গোয়া বিমানবন্দরে একদল যাত্রী হতাশায় ভেঙে পড়েন। এক ভিডিওতে দেখা যায় তারা ইন্ডিগোর কর্মীদের লক্ষ্য করে চিৎকার করছেন। পরিস্থিতি সামলাতে বহু পুলিশ কর্মীকেও সেখানে দেখা যায়। চেন্নাই বিমানবন্দরে শত শত যাত্রী আটকা পড়েছেন। সেখানে সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স (সিআইএসএফ) ইন্ডিগোর যাত্রীদের প্রবেশ করতে বাধা দিয়েছে। বিশাখাপত্তম বিমানবন্দরে কমপক্ষে ঊনপঞ্চাশটি বহির্গমন ও তেতাল্লিশটি ইনকামিং ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।

ইন্ডিগোর এই পরিচালনগত ত্রুটি আজ চতুর্থ দিনের মতো চলছে। কুড়ি বছরের পুরোনো এই বিমান সংস্থাটি ক্রু-সংকট ও প্রযুক্তিগত সমস্যাসহ একাধিক কারণে পাঁচ শ পঞ্চাশটিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করার রেকর্ড তৈরি করেছে। এর মধ্যে মুম্বাই বিমানবন্দরে এক শ চারটি, দিল্লি বিমানবন্দরে দু শ পঁচিশটি, বেঙ্গালুরুতে এক শ দু'টি এবং হায়দরাবাদে বিরানব্বইটি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। ভূপাল বিমানবন্দরেও কমপক্ষে পাঁচটি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।

ইন্ডিগো স্বীকার করেছে যে তারা নতুন নিয়ম অনুযায়ী ক্রু-এর প্রয়োজনীয়তা ভুলভাবে আন্দাজ করেছিল এবং পরিকল্পনায় ঘাটতি ছিল, যার ফলস্বরূপ শীতকালীন আবহাওয়া ও যানজটের সময়ে পর্যাপ্ত ক্রু-এর অভাব দেখা দিয়েছে। বিমান সংস্থাটি সতর্ক করেছে, সময়সূচি স্বাভাবিক করার চেষ্টার অংশ হিসেবে আগামী দুই থেকে তিন দিন পর্যন্ত ফ্লাইট বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারা জানিয়েছে, আগামী ৮ ডিসেম্বর থেকে তারা আরও বিঘ্ন এড়াতে ফ্লাইট পরিচালন কমিয়ে দেবে।

অন্যদিকে, ইন্ডিগোর সিইও পিটার এলবার্স কর্মীদের বলেছেন যে পরিচালন স্বাভাবিক করা এবং সময়ানুবর্তিতা ফিরিয়ে আনা ‘সহজ লক্ষ্য হবে না।’ বিমান সংস্থাটি গত রাতে তাদের গ্রাহক ও স্টেকহোল্ডারদের কাছে নতুন করে দুঃখ প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘গত দুই দিন ধরে ইন্ডিগোর নেটওয়ার্ক এবং পরিচালন ব্যবস্থায় ব্যাপক বিঘ্ন দেখা দিয়েছে। এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত আমাদের সব গ্রাহক এবং শিল্প স্টেকহোল্ডারদের কাছে আমরা আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’ তারা আরও যোগ করেছে, ‘ইন্ডিগো এই বিলম্বের প্রভাব কমাতে এবং স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে নিরলসভাবে ও সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়ার পক্ষে খেলবেন ইউক্রেনীয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন সোফিয়া, বাতিল হচ্ছে সব পুরস্কার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ২১
২০২০ টোকিও এবং ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকসে ইউক্রেনের হয়ে খেলেন সোফিয়া লাইসকুন।
২০২০ টোকিও এবং ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকসে ইউক্রেনের হয়ে খেলেন সোফিয়া লাইসকুন।

গত বছর রোমে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় অ্যাকুয়াটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ১০ মিটার সিঙ্ক্রো ইভেন্টে সোনা জেতেন ইউক্রেনীয় ডাইভার সোফিয়া লাইসকুন (২৩)। তবে সম্প্রতি আকস্মিকভাবে রাশিয়ার প্রতি আনুগত্য দেখানোর পর তাঁকে চরম শাস্তির মুখে পড়তে হলো। ইউক্রেনীয় ডাইভিং ফেডারেশন (ইউডিএফ) ফেডারেশনের অধীনে পাওয়া তাঁর সমস্ত খেতাব, পদক ও পুরস্কার প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে।

ইউডিএফ জানিয়েছে, লাইসকুন দেশের ক্রীড়া মহলের কোনো পক্ষকেই তাঁর এই সিদ্ধান্তের কথা জানাননি। তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ দলবদলের বিষয়ে ফেডারেশন, কোচিং স্টাফ এমনকি ইউক্রেনের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কেও অবগত করেননি। তাঁর এই অপ্রত্যাশিত দলবদলের ঘটনায় ফেডারেশন ‘তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা’ জানিয়েছে।

ফেডারেশনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় বলা হয়েছে: ‘এই ধরনের পদক্ষেপ শুধু চূড়ান্তভাবে অগ্রহণযোগ্যই নয়, এগুলো জাতীয় দল এবং ইউক্রেনের মর্যাদার ওপর সরাসরি আঘাত। যে মুহূর্তে পুরো ইউক্রেনীয় দল আন্তর্জাতিক মঞ্চে আমাদের দেশের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকারের জন্য নিঃস্বার্থভাবে লড়াই করছে, ঠিক তখনই একজন চ্যাম্পিয়নের এমন পদক্ষেপ পুরো প্রচেষ্টাকেই হেয় করে।’

ইউক্রেনীয় ফেডারেশনের এই সমালোচনার বিপরীতে লাইসকুন তাঁর সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। রাশিয়ার সংবাদপত্র ইজভেস্তিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি অভিযোগ করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউক্রেনে তিনি তাঁর কোচদের অধীনে আর পেশাদারভাবে ‘উন্নতি’ করতে পারছিলেন না।

লাইসকুন অভিযোগ করেন, তাঁর ইউক্রেনীয় কোচিং স্টাফে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা ‘সবাই জিমন্যাস্ট বা ট্রাম্পোলিন ক্রীড়াবিদ ছিলেন’, এটি আন্তর্জাতিক ডাইভিং-এর মতো বিশেষায়িত খেলার জন্য অনুকূল ছিল না। তাঁর মতে, উপযুক্ত বিশেষজ্ঞের অভাবই তাঁকে দলবদলে উৎসাহিত করেছে।

লাইসকুনের দলবদলের পর ইউক্রেনীয় ডাইভিং ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির এক জরুরি বৈঠক বসে। সেখানে সর্বসম্মতিক্রমে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে ইউক্রেন জাতীয় দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর পাশাপাশি, ফেডারেশনের অধীনে সোফিয়া লাইসকুনের অর্জিত সমস্ত খেতাব ও পুরস্কার বাতিল করার মতো কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ফেডারেশন জানিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থাগুলোর কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন জানাবে, যাতে বর্তমান আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এই ক্রীড়াবিদের ওপর ‘স্পোর্টস কোয়ারেন্টাইন’ আরোপ করা হয়। এর অর্থ হলো, ইউক্রেন চাচ্ছে, লাইসকুন যেন কিছু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে না পারে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর রাশিয়া এবং বেলারুশের ক্রীড়াবিদদের ওয়ার্ল্ড অ্যাকুয়াটিক্স ইভেন্টগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নিষিদ্ধ ছিল। তবে সেই বিধিনিষেধগুলো সম্প্রতি শিথিল করা হয়েছে। বর্তমানে রুশ এবং বেলারুশীয় ক্রীড়াবিদদের তাঁদের জাতীয় পতাকা বা প্রতীক ছাড়াই নিরপেক্ষ ক্রীড়াবিদ হিসেবে ব্যক্তিগত ইভেন্টগুলোতে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। আগামী জানুয়ারি থেকে তাঁরা দলগত ইভেন্টেও নিরপেক্ষ ক্রীড়াবিদ হিসেবে অংশ নিতে পারবেন। লাইসকুন-এর এই দলবদল এমন এক সময়ে ঘটল, যখন রাশিয়ার ক্রীড়াবিদেরা ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া মঞ্চে ফেরার সুযোগ পাচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত