Ajker Patrika

নির্বাচনে জিততে ‘সব আয়োজন’ সম্পন্ন সরকারের, ভোট দিতে অনীহা কম্বোডিয়ার মানুষের

নির্বাচনে জিততে ‘সব আয়োজন’ সম্পন্ন সরকারের, ভোট দিতে অনীহা কম্বোডিয়ার মানুষের

কম্বোডিয়া ক্রমেই একদলীয় শাসনের পথে হাঁটছে। নির্বাচনের ঠিক আগে দেশটির জনগণের কাছে একমাত্র আস্থাভাজন বিরোধী দলের ওপর দমনপীড়ন চালিয়ে একপ্রকার নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়েছে। নানা কৌশলে দলটিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য বলেও ঘোষণা করা হয়েছে। 

বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ দেশটির নাগরিকেরা। সোভানি নামে এক নাগরিক বলেন, ‘আমি ভোটই দেব না। কেন আমি ভোট দিতে যাব, যেখানে নির্বাচনে একটিমাত্র দলই অংশ নিয়েছে? ভোট দিতে যাওয়া তো স্রেফ সময়ের অপচয়।’ সোভানি বলেন, ‘খেলার মাঠে অন্তত দুজন প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রয়োজন।’ কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী একজন হলে সেই খেলার আর কোনো অর্থ থাকে...—প্রশ্ন সোভানির। 
 
রোববার (২৩ জুলাই) কম্বোডিয়ার সপ্তম জাতীয় নির্বাচন। এতে ক্ষমতাসীন কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টিসহ (সিপিপি) সব মিলিয়ে ১৮টি দল অংশ নেবে। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল ‘ক্যান্ডেল লাইট পার্টিকে’ নির্বাচনে অনুপস্থিত থাকতে বাধ্য করায় এবারও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হুন সেনই ক্ষমতার মসনদ নিশ্চিত করতে যাচ্ছেন। 

এর আগেও ২০১৮ সালে হুন সেন যখন প্রধানমন্ত্রী হন তখনো বিরোধী দলকে দমনের একই খেলা মঞ্চায়িত হয়েছিল। সে সময়কার জনপ্রিয় প্রধান বিরোধী দল কম্বোডিয়া ন্যাশনাল রেসকিউ পার্টিকেও আদালতের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ফলে গতবারের মতো এবারও ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ করে নিয়েছেন হুন সেন। যদিও তিনি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। 
 
হুন সেনের সরকার কেবল প্রধান বিরোধী দলকে দমন করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা সরকারের সমালোচক সব মুখ বন্ধ করতেও উঠেপড়ে লেগেছে। এইতো, গত ২৩ জুন কম্বোডিয়ার পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ সিপিপি দেশটির নির্বাচন আইন সংশোধন করেছে। যেখানে বলা হয়েছে—কোনো কেউ নাগরিকদের ভোট না দিতে উৎসাহিত করে তবে তা অপরাধমূলক ‘উসকানি’ বলে বিবেচিত হবে। সরকার সতর্ক করে বলেছে, যারা এমনটা করবে তাদের জেল-জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে। 
 
তবে হুন সেনের দাবি, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে এবং যারা মানুষকে ভোটদানে বিরত রাখার ‘অপচেষ্টা’ চালায় তাদের রুখতেই এই আইন সংশোধন। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এর মাধ্যমে মূলত কম্বোডিয়ার বিগত ৩০ বছরে বহুদলীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কম অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন নিশ্চিত করা হয়েছে। 
 
এরই মধ্যে সংশোধিত আইনের প্রথম ‘বলি’ যূপকাষ্ঠে উঠে গেছে। গত সপ্তাহেই ক্যান্ডেল লাইট পার্টির দুই কর্মীকে এই আইনের আওতায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তাঁরা জনগণকে ভোট না দিতে ‘উসকে’ দিচ্ছিলেন। এরপর একই আইনে ক্যান্ডেল লাইট পার্টির আরও দুজন কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া বিদেশে থাকা ১৭ জন বিরোধী রাজনীতিবিদকে এ আইনের আওতায় ২০ থেকে ২৫ বছরের জন্য রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

কেবল তাই নয়, সরকারি নিয়ন্ত্রণের খড়্গ গিয়ে পড়েছে সংবাদমাধ্যমের ওপরও। সরকার বেশ কয়েকটি স্বাধীন সংবাদমাধ্যম এবং ডেটাবেইস সংস্থার ওয়েবসাইট ব্লক করার নির্দেশ দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তারা জনমনে ‘বিভ্রান্তি’ ছড়াচ্ছে এবং ‘সরকারের মর্যাদাকে’ আক্রমণ করছে।

কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন। ছবি: এএফপি 

সংবাদমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া, নির্বাচন নিয়ে নতুন আইন করার ফলে সাধারণ কম্বোডীয়রা ভাবছেন, তাঁদের সামনে এখন একটাই বিকল্প রয়েছে—তা হলো, ভোটের দিন চুপচাপ বাড়িতে বসে থাকা। এমন মনোভাবই দেখা গেল লি মিঙ নামে ২৩ বছর বয়সী এক তরুণের মধ্যে। তিনি দেশটির একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। মিঙ বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে, ৩০০ কিলোমিটার ভ্রমণ করে শহর থেকে গ্রামে গিয়ে ভোট দেওয়ার কোনো মানেই হয় না। কারণ আমি জানি, কী ঘটতে যাচ্ছে।’ 
 
তবে লি মিঙকে বেশ সতর্ক মনে হলো। তিনি জানালেন, তাঁর ভোট না দেওয়ার বিষয়টি কাউকে জানাতে চান না। পরিবার কিংবা বন্ধু-স্বজন; কাউকেই না। যদিও সরকারের সঙ্গে তাঁর পরিবার বা বন্ধুবান্ধবদের সামান্যতম কোনো সংযোগ নেই, এরপরও তিনি বিষয়টি গোপন রাখতে চান। তাঁর কাছে, বর্তমান কম্বোডিয়ায় চুপ থাকা এবং ভোট দিতে না যাওয়াটাই নিরাপদ থাকার সবচেয়ে বড় উপায়। 

কেবল সাধারণ জনগণ কিংবা বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরাই নয়, ক্ষমতাসীন দলেরও অনেকেই বিশ্বাস করেন যে—যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তা স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা। তাঁদের মতে, এটি কম্বোডিয়ার সরকারব্যবস্থার জন্য ভালো তো নয়ই, এটি কম্বোডিয়ার আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকেও ভীষণভাবে ক্ষুণ্ন করবে। 

এমনটাই জানালেন, পিসেই নামে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা। ৩৫ বছর বয়সী এই কর্মকর্তার মতে, নির্বাচনে বিরোধী দলকে নিষিদ্ধ করার ফলে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে কম্বোডিয়ার নাম খারাপ হবে। তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক দেশে সব সময়ই বিরোধী দল থাকবে।’ তাঁর মতে, সরকার কী করছে, তা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারার জন্য বিরোধী দলের উপস্থিতি জরুরি। তবে পিসেই ভোট দেবেন কিনা এমন প্রশ্নে বলেন, ‘আমাকে মন্ত্রণালয় যা করতে বলবে আমি তা–ই করব।’ 

আইনের শিক্ষার্থী কুশল জানান, তাঁর বাবা-মা সরকারের একটি মন্ত্রণালয়ে চাকরি করেন এবং তাঁরা সব সময়ই সরকারের দুর্নীতির সমালোচনা করে থাকেন। কুশল জানালেন, ২০১৩ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় তাঁর বয়স ছিল ১৯ বছর। সে বছর নির্বাচনে বিরোধীরা হুন সেনের কাছ থেকে বিজয় প্রায় ছিনিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু ব্যাপক ধর-পাকড় এবং নানা কারণেই বিরোধীরা শেষ পর্যন্ত আর সরকারি দলের সঙ্গে পেরে ওঠেনি। ফলে দেশটির রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কোনো পরিবর্তনও আসেনি। তাঁর মতে, বিরোধীদের ওপর নির্যাতন স্রেফ হাস্যকর। কুশলের মতে, এমন দমন-পীড়ন যতই চলতে থাকবে সমাজে এসব বিষয় ততই স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। 

কুশল বলেন, ‘আপনি যখন প্রতিনিয়ত একই বিষয় বারবার ঘটতে দেখবেন তখন আপনি দ্রুত বিষয়টির সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে উঠবেন। তাই আসলে নির্বাচন নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। কারণ আমি জানি, কোনো কিছুই বদলাবে না।’ তিনি বলেন, ‘যেহেতু ভোট দেওয়া এখন আইন করে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে তাই আমি কেন্দ্রে যাব এবং ভোট দিয়ে বাড়িতে চলে আসব।’
 
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে, আদালতের আদেশে তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল কম্বোডিয়া ন্যাশনাল রেসকিউ পার্টিকে নিষিদ্ধ করার পর দেশটির নির্বাসিত রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং অধিকারকর্মীরা জনগণকে নির্বাচন বয়কট করার আহ্বান জানান। তাঁরা ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান, যদি তাঁরা ভোট দিতে বাধ্য হন তবে যেন ভোট কেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে ব্যালট নষ্ট করে ফেলেন কিংবা খালি রেখে আসেন। এই আহ্বান বেশ কাজে দিয়েছিল। সে বছর কাস্ট হওয়া মোট ভোটের দশ ভাগের এক ভাগই বাতিল হয়েছিল।

কম্বোডিয়ায় সরকার বিরোধী বিক্ষোভে দেশটির সাধারণ জনতা। ছবি: এএফপি ২৩ জুলাইয়ের নির্বাচনে ২০১৮ সালের নির্বাচনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে— এই আশঙ্কায় অগ্রিম হুমকি দিয়েছেন হুন সেন। তিনি বিরোধীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনারা কী করছেন তা আমার অজানা নয় এবং আপনারা কী বলছেন তাও আমার কানে পৌঁছায়।’ 

সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইস্ট অ্যান্ড সাউথ-ইস্ট এশিয়ান স্টাডিজের সিনিয়র লেকচারার এবং কম্বোডিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অ্যাস্ট্রিড নরেন-নিলসেন বলেন, ‘সম্ভবত এবারের নির্বাচনে গতবারের চেয়ে প্রতিরোধ কমই হতে যাচ্ছে।’ তাঁর মতে, এর পেছনে বড় কারণ হলো, সরকার ভিন্নমত দমন করার পরও ২০২২ সালে সাউথ-ইস্ট এশিয়ান গেমসের মতো বড় ইভেন্ট এবং একই বছরে অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ-ইস্ট এশিয়ান নেশনসে (আসিয়ান) হুন সেন সভাপতিত্ব করেন। এটা তাঁর বড় বিজয়। এসব বিষয় নির্দেশ করে, সরকার দেশের বাইরে বেশ কিছু সমর্থন অর্জন করতে পেরেছে। 

নিলসেন বলেন, ‘পাঁচ বছর আগের তুলনায় বর্তমান নির্বাচন সরকারের জন্য অনেক কম বিপজ্জনক। তবে এর মানে এই নয় যে, মানুষ প্রধান বৈধ বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ছাড়াই অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে মেনে নেবে। তবে আমি মনে করি, এর মাধ্যমে জনগণের মনোযোগ নির্বাচন থেকে অন্যদিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।’ 

তবে বিরোধীরা জানেন, মানুষের ক্ষোভ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি বরং তা এক ধরনের ‘শীতনিদ্রা’ বা ‘শীতল পর্যায়ে’ প্রবেশ করেছে। এ বিষয়ে, ক্যান্ডেল লাইট পার্টির নেতা ফন সোফিয়া বলেন, ‘এর মানে এই নয় যে, কম্বোডিয়ার তরুণেরা রাজনীতি সচেতন নয়। তারা অবশ্যই সচেতন, তবে আশা হারিয়ে ফেলেছে।’

সোফিয়ার মতে, ‘কম্বোডিয়ার তরুণেরা স্মার্ট। তারা জানে, কীভাবে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। কম্বোডিয়ার তরুণেরা যদি দেখে, কোনো একটি দল সত্যিকার অর্থেই গণতন্ত্রের জন্য কাজ করছে তবে তারা আবার ফিরে আসবে।’

আল-জাজিরা থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইয়েমেন সংঘাতে মুখোমুখি অবস্থানে সৌদি ও আরব আমিরাত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আমিরাত সমর্থিত ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’-এর সৈন্যরা। ছবি: দ্য টাইমস
আমিরাত সমর্থিত ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’-এর সৈন্যরা। ছবি: দ্য টাইমস

ইয়েমেনের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে এবার নতুন মাত্রার উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এক সময় একই জোটে থাকা সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এখন কার্যত বিপরীত অবস্থানে। সাম্প্রতিক বিমান হামলা ও কূটনৈতিক বক্তব্যে এই বিভাজন প্রকাশ্যে এসেছে, যা ওই অঞ্চলের যুদ্ধকে আরও জটিল করে তুলছে।

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোরে সৌদি আরব ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলে বিমান হামলা চালায়। এই হামলার লক্ষ্য ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত–সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’ (এসটিসি)।

সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের দাবি—হাদরামাউতের বন্দরনগরী মুকাল্লায় এসটিসির জন্য অস্ত্র ও সাঁজোয়া যান নামানো হচ্ছিল, যা তাদের ‘সীমারেখা’ অতিক্রমের সমান। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, জাহাজগুলোর ট্র্যাকিং সিস্টেম বন্ধ ছিল এবং এসব অস্ত্র তাৎক্ষণিক নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করছিল।

অন্যদিকে, এসটিসি এই হামলা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের দাবি, হামলায় হাদরামাউতে মোতায়েন এসটিসির অভিজাত ইউনিটগুলোকে লক্ষ্য করা হয়েছে। যদিও সৌদি কর্তৃপক্ষ বলছে, রাতের আঁধারে হামলা চালানো হয়েছে যাতে বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি না হয়।

এই সংঘর্ষ সৌদি আরব ও ইউএইর মধ্যে বাড়তে থাকা মতবিরোধকে প্রকাশ্যে এনেছে। হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন একসঙ্গে লড়াই করলেও, ইয়েমেনের ভেতরে দুই দেশ ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে আসছে। সৌদি আরবের অভিযোগ, এসটিসিকে আমিরাতের সমর্থন ইয়েমেন ও পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। রিয়াদ একে নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি হিসেবেও উল্লেখ করেছে।

এই উত্তেজনার মধ্যেই ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের প্রেসিডেনশিয়াল লিডারশিপ কাউন্সিলের প্রধান রাশাদ আল-আলিমি আরব আমিরাতের সঙ্গে যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি বাতিল করেন এবং দেশটি থেকে আমিরাতের সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনি সাময়িক সময়ের জন্য আকাশ ও নৌ অবরোধও ঘোষণা করেন।

বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ ইয়েমেনে এসটিসির দ্রুত সম্প্রসারণ দেশটিকে কার্যত বিভক্ত করার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। দক্ষিণে গুরুত্বপূর্ণ তেলসমৃদ্ধ অঞ্চল ও বন্দর, আর উত্তরে রাজধানী সানাসহ হুতিদের শক্ত ঘাঁটি—এই বাস্তবতায় ইয়েমেন আবারও এক গভীর ও বহুমাত্রিক সংকটের দিকে এগোচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘২০২৫’ নিয়ে ১৯৯৮ সালে করা আমেরিকানদের ভবিষ্যদ্বাণী কতটুকু মিলেছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ৫৭
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই বছর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন, অস্কারে রাজত্ব করেছিল টাইটানিক, আর অধিকাংশ আমেরিকানের ঘরে ছিল ল্যান্ডলাইন ফোন। ঠিক সেই সময়েই গ্যালাপ ও ইউএসএ টুডে এক ব্যতিক্রমী জরিপ চালায়। ল্যান্ডলাইন ফোনে ১ হাজার ৫৫ জন আমেরিকানের সঙ্গে কথা বলে জানতে চাওয়া হয়—দূর ভবিষ্যৎ ‘২০২৫ সাল’ কেমন হবে বলে তাঁরা মনে করেন।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সিএনএন জানিয়েছে, ২০২৫ সাল নিয়ে সে সময় মার্কিনরা যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করেছিল, সেগুলো সংরক্ষিত আছে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রোপার সেন্টারের জরিপ আর্কাইভে। ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে এসে এখন দেখা যাচ্ছে—সেই সব অনুমানের কোনোটা মিলেছে, আর কোনোটা মেলেনি।

এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সেই সময়ের অনেক পূর্বাভাসই ছিল বিস্ময়করভাবে সঠিক। অধিকাংশ আমেরিকান তখনই ধারণা করেছিলেন, আগামী ২৭ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন, সমকামী বিবাহ বৈধ ও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে এবং একটি ‘মারাত্মক নতুন রোগ’ বিশ্বকে নাড়িয়ে দেবে। বাস্তবে বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট হওয়া, সমকামী বিবাহের আইনি স্বীকৃতি এবং করোনা মহামারি সেই অনুমানগুলোকে সত্য প্রমাণ করেছে।

একইভাবে অনেকেই সেই সময় সঠিকভাবে ধারণা করেছিলেন, সাধারণ মানুষের জন্য মহাকাশ ভ্রমণ খুব সাধারণ বিষয় হয়ে উঠবে না এবং ভিনগ্রহের প্রাণীর সঙ্গে মানুষের সরাসরি যোগাযোগ ঘটবে না।

তবে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবতার সঙ্গে মেলেনি। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেছিলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একজন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে—যা এখনো ঘটেনি। অর্ধেকের বেশি মানুষ আশা করেছিলেন ক্যানসারের নিরাময় আবিষ্কৃত হবে এবং ৬১ শতাংশ মনে করেছিলেন মানুষ নিয়মিতভাবে ১০০ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচবে। বাস্তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অগ্রগতি হলেও এসব প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ হয়নি।

জরিপে দেশের সামগ্রিক দিকনির্দেশনা নিয়েও প্রশ্ন ছিল। সেখানে ফুটে উঠেছিল প্রবল হতাশা। ৭০ শতাংশ মনে করেছিলেন ধনীদের জীবনমান উন্নত হবে, কিন্তু মধ্যবিত্তদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভক্ত মতামত ছিল। দরিদ্রদের জীবন আরও কঠিন হবে—এমনটাই ভাবতেন বেশির ভাগ। প্রায় ৮০ শতাংশ ধারণা করেছিলেন ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কমবে, আর ৫৭ শতাংশ মনে করেছিলেন ব্যক্তিগত স্বাধীনতাও হ্রাস পাবে। অপরাধ বৃদ্ধি, পরিবেশের অবনতি এবং নৈতিক মূল্যবোধের পতনের আশঙ্কাও ছিল প্রবল। ৭১ শতাংশ মত দিয়েছিলেন, সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে বড় করা আরও কঠিন হবে।

তবে কিছু আশাবাদী দিকও ছিল। অধিকাংশ আমেরিকান বিশ্বাস করতেন, জাতিগত সম্পর্কের উন্নতি হবে এবং চিকিৎসাসেবা আরও সহজলভ্য হবে—যদিও তা হবে ব্যয়বহুল।

গ্যালাপ আজও জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও এখন ল্যান্ডলাইনের ওপর নির্ভরতা কম। এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে জনমতও নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। ১৯৯৮ সালে যেখানে প্রায় ৬০ শতাংশ আমেরিকান দেশের গতিপথ নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন, বর্তমানে সেই হার নেমে এসেছে মাত্র ২৪ শতাংশে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুতিনের বাসভবনে ড্রোন হামলার অভিযোগ—‘মিথ্যা’ বলছে ইউক্রেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ২৭
ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন—এমন অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে পুরোপুরি ‘মিথ্যা ও সাজানো’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই হামলার কারণে চলমান শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার অবস্থানের ‘পরিবর্তন বা পুনর্বিবেচনা’ করা হতে পারে। তবে মস্কো এখনই আলোচনা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে না।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন সের্গেই লাভরভের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, গতকাল রোববার রাত থেকে আজ সোমবার ভোর পর্যন্ত পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ৯১টি দূরপাল্লার ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন। রুশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সবকটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। তবে এতে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।

লাভরভ হুমকি দিয়ে বলেন, ইউক্রেনের এমন হঠকারী কর্মকাণ্ডের জবাব দেওয়া হবে। রুশ সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যে পাল্টা হামলার জন্য লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করে ফেলেছে। তবে হামলার সময় প্রেসিডেন্ট পুতিন নোভগোরোদের ওই বাসভবনে ছিলেন কি না, তা স্পষ্ট করা হয়নি।

ফ্লোরিডায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক শেষ করে ইউরোপে ফেরার পথে জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া আবারও ভয়ংকর সব মিথ্যা বিবৃতি দিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক অগ্রগতির সাফল্য নষ্ট করতেই এমন নাটক সাজানো হচ্ছে। তারা মূলত কিয়েভের সরকারি ভবনগুলোতে বড় ধরনের হামলার ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য এই অজুহাত দিচ্ছে।’

জেলেনস্কি জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রায় ৯০ শতাংশ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, যা রাশিয়াকে বিচলিত করে তুলেছে।

এদিকে ক্রেমলিন বলছে, আজ প্রেসিডেন্ট পুতিন টেলিফোনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই ড্রোন হামলার বিষয়টি জানিয়েছেন। পুতিন ট্রাম্পকে বলেছেন, এই হামলার পর রাশিয়া তাদের শান্তি আলোচনার শর্তগুলো পুনরায় খতিয়ে দেখবে।

রুশ গণমাধ্যমগুলো ক্রেমলিনের সহকারী ইউরি উশাকভের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এই খবর শুনে ট্রাম্প ‘বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ’ হয়েছেন। তবে হোয়াইট হাউস থেকে এই ফোনালাপকে কেবল ‘ইতিবাচক’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে, বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তাইওয়ানকে ঘিরে ধরেছে চীনের যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান ও ড্রোন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মহড়ায় সরাসরি গুলির অনুশীলনও করা হচ্ছে। ছবি: চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড
মহড়ায় সরাসরি গুলির অনুশীলনও করা হচ্ছে। ছবি: চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড

তাইওয়ানকে ঘিরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। সোমবার শুরু হওয়া এই মহড়ায় যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও সরাসরি গোলাবর্ষণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ নামের এই অভিযানে তাইওয়ানকে চারদিক থেকে ঘিরে সাতটি সামুদ্রিক অঞ্চলে সমন্বিত স্থল, নৌ ও আকাশ মহড়া চালানো হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি এখন পর্যন্ত তাইওয়ানকে লক্ষ্য করে চীনের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে আক্রমণাত্মক সামরিক প্রদর্শন।

চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড জানিয়েছে—মহড়ায় স্থল ও সমুদ্রের লক্ষ্যবস্তুর ওপর সিমুলেটেড হামলা, পাশাপাশি তাইওয়ানের প্রধান বন্দরগুলো অবরোধ করার অনুশীলন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্ন করতে বা চাপের মুখে ফেলতে এই ধরনের অবরোধ ব্যবহৃত হতে পারে বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকেরা। সরাসরি গোলাবর্ষণের মহড়া মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) পর্যন্ত চলবে এবং আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এবার তাইওয়ানের আরও কাছাকাছি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে।

এই মহড়ার ফলে বেসামরিক বিমান ও নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন তাদের ফ্লাইটের রুট পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে এবং তাইওয়ানের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বিকল্প আকাশপথ ব্যবহারের প্রস্তুতি নিয়েছে। চীনা সামরিক কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এই মহড়া ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী শক্তি’ ও ‘বিদেশি হস্তক্ষেপের’ বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবার্তা।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি তাইওয়ানের কাছে ১১.১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যা ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্যাকেজ। এতে রয়েছে ৮২টি হিমার্স রকেট লঞ্চার, ৪২০টি দূরপাল্লার এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র, স্বচালিত হাউইটজার, উন্নত ড্রোন ব্যবস্থা ও অ্যান্টি-আর্মার অস্ত্র। বেইজিং এই অস্ত্রচুক্তিকে তীব্রভাবে নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এতে তাইওয়ান একটি ‘বারুদের স্তূপে’ পরিণত হচ্ছে।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মহড়া চলাকালে তাদের দ্বীপভূমির চারপাশে ৮৯টি চীনা সামরিক বিমান, ১৪টি নৌজাহাজ ও ১৪টি কোস্ট গার্ড জাহাজ শনাক্ত করা হয়েছে। কিছু চীনা জাহাজ তাইওয়ানের উপকূলের খুব কাছাকাছি অবস্থানে এসে চোখ রাঙাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রেখেছে তাইওয়ান।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, মহড়ার মূল লক্ষ্য তাইওয়ানের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর—উত্তরের কিলুং ও দক্ষিণের কাওশিয়ুং বন্ধ করে দেওয়ার সক্ষমতা পরীক্ষা। চীন তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ড দাবি করলেও তাইওয়ান বলছে, দ্বীপটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার শুধু সেখানকার জনগণেরই আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত