Ajker Patrika

ভারতে লাফিয়ে বাড়ছে বেসরকারি স্কুলের ফি, অভিভাবকদের নাভিশ্বাস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৭ জুন ২০২৫, ১৫: ২৫
ভারতে স্কুলের ফি বাড়ানোর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন অনেক অভিভাবক। ছবি: সংগৃহীত
ভারতে স্কুলের ফি বাড়ানোর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন অনেক অভিভাবক। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের রাজধানী দিল্লিসহ বেশ কিছু শহরে বেসরকারি স্কুলের অস্বাভাবিক বেতন বৃদ্ধির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেছেন অভিভাবকেরা। তাঁদের অভিযোগ, এই বেতন বৃদ্ধি পরিবারের বাজেটের ওপর মারাত্মক চাপ ফেলছে। যার প্রভাব পড়ছে সন্তানদের ওপরও।

দিল্লির বাসিন্দা ১৪ বছরের আদিত্য মাত্তের ঘটনা এই সংকটকে আরও প্রকট করে তুলেছে। গত ৯ মে ইংরেজি পরীক্ষার দিন আদিত্য আত্মবিশ্বাস নিয়েই স্কুলে যায়। তার বাবা তাকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে চলে যান। কিন্তু আদিত্য আর পরীক্ষা দিতে পারেনি।

আদিত্য বলেছে, ‘দু-তিন মিনিটের মধ্যেই নিরাপত্তাকর্মী আর বাউন্সার এসে আমাকে ক্লাস থেকে বেরিয়ে যেতে বলে।’ তার বাবা তখনো স্কুলের বাইরে ছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই আদিত্যসহ আরও কয়েকজন ছাত্রকে স্কুলবাসে তুলে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

আদিত্যর নাম ‘দিল্লি পাবলিক স্কুল, দ্বারকার’ তালিকা থেকে কেটে দেওয়া হয়। কারণ, তার বাবা স্কুলের নতুন বেতন কাঠামোকে অবৈধ ও অন্যায্য বলে বেতন পরিশোধ করেননি। এ ঘটনায় দিল্লি পাবলিক স্কুল বা তাদের পরিচালনাকারী দিল্লি পাবলিক স্কুল সোসাইটি কোনো মন্তব্য করেনি বলে জানিয়েছে বিবিসি।

আদিত্যর ঘটনা অবশ্য বিচ্ছিন্ন নয়। দিল্লি, পুনে, হায়দরাবাদসহ ভারতের বিভিন্ন শহরে গত দুই মাস ধরে বেসরকারি স্কুলের অতিরিক্ত বেতন বৃদ্ধির বিরুদ্ধে অভিভাবকেরা বিক্ষোভ করছেন। বিশেষ করে দিল্লিতে আন্দোলন তীব্র হয়েছে। অভিযোগ, দিল্লি পাবলিক স্কুল, দ্বারকা বকেয়া বেতনের কারণে ছাত্রদের শ্রেণিকক্ষে ঢুকতে দেয়নি, লাইব্রেরিতে আটকে রেখেছে এবং শেষ পর্যন্ত বহিষ্কারও করেছে। অভিভাবকেরা বলছেন, পরিবারের আর্থিক সিদ্ধান্তের জন্য শিশুদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।

সরকারি স্কুল থাকলেও সেগুলোর মান ভালো না হওয়ায় নিম্নআয়ের পরিবারও বেসরকারি স্কুলে সন্তানদের ভর্তি করান। দিল্লিতে নিয়ম রয়েছে, যারা সরকারি জমিতে স্কুল চালায়, তাদের বেতন বাড়াতে হলে শিক্ষা দপ্তরের অনুমোদন নিতে হয়। পাশাপাশি, ২৫ শতাংশ আসন আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবারের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হয়।

স্কুলগুলো বেতন বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি দিচ্ছে। তারা বলছে, মুদ্রাস্ফীতি, শিক্ষক-শিক্ষিকার বেতন বৃদ্ধি, সরকার প্রদত্ত ভর্তুকি বিলম্বে পাওয়া এবং পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য বেতন বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই।

আদিত্যর বাবা দিব্য মাত্তে বলেন, ২০২০ সালে আদিত্যর বার্ষিক বেতন ছিল ৯৩ হাজার ৪০০ রুপি, যা ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৬ রুপি। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ভাবিনি, এমন মর্যাদাসম্পন্ন স্কুল এভাবে ছাত্রদের সঙ্গে আচরণ করবে—শ্রেণিকক্ষে ঢুকতে দেবে না, বাউন্সার লেলিয়ে দেবে, দিনের পর দিন লাইব্রেরিতে বসিয়ে রাখবে।’

বিবিসির প্রশ্নের উত্তর না দিলেও আদালতে স্কুল কর্তৃপক্ষ বলেছে, বেতন না দিলে ছাত্রদের ধরে রাখার কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা তাদের নেই। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, স্কুলটি দাবি করেছে, তারা গত বছর ৪৯ কোটি টাকার লোকসান দিয়েছে। স্কুলের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক নোটিশে ‘একটি ছোট অভিভাবক গোষ্ঠীকে’ অভিযুক্ত করে বলা হয়েছে, তারা ‘মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য’ ছড়িয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করছে।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভারতের ৮০ শতাংশের বেশি অভিভাবক জানিয়েছেন, এ বছর বেসরকারি স্কুলের বেতন ১০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। দিল্লি, মুম্বাই, বেঙ্গালুরুতে কোথাও কোথাও বৃদ্ধির হার ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। দেশে বেসরকারি স্কুলের ওপর কেন্দ্রীয় কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব নিয়ম রয়েছে। মহারাষ্ট্রে প্রতি দুই বছরে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বেতন বাড়ানো যায়, তবে ২৫ শতাংশ অভিভাবক আপত্তি তুললে তা পর্যালোচনা হয়। কর্ণাটকে বছরে ১০ শতাংশ বাড়ানোর অনুমতি রয়েছে, তবে তার জন্য নিরীক্ষার কাগজ দেখাতে হয়। বাস্তবে এসব নিয়মের প্রয়োগ দুর্বল। ফলে আইনি লড়াই বছরের পর বছর চলে, কিন্তু সমস্যার সমাধান হয় না।

পশ্চিম দিল্লির মীরা মডেল স্কুলের এক ছাত্রের বাবা গগনদীপ সিং জানান, গত বছর তাঁর সন্তানের স্কুলের বেতন ৪৫ শতাংশ বেড়েছে, এ বছরও ১০ শতাংশ বেড়েছে। তিনি আগের অনুমোদিত বেতন দিতে রাজি ছিলেন। কিন্তু স্কুল নতুন সেশনের জন্য তাঁর চেক গ্রহণ করেনি। তিনি বলেন, ‘স্কুল নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের কাজ নয়। সেটা সরকারের দায়িত্ব।’

অনেক অভিভাবক দিল্লি পাবলিক স্কুলের ঘটনার পুনরাবৃত্তি নিয়ে শঙ্কিত। দিল্লির মহারাজা আগরসেন পাবলিক স্কুলের অভিভাবক পঙ্কজ গুপ্ত জানান, তাঁদের স্কুল এ বছর কোনো নোটিশ ছাড়াই ২৫ শতাংশ বেতন বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বাধ্য হয়ে বেতন দিয়েছি।’

পঙ্কজ গুপ্তর ছোট দোকান রয়েছে। মহামারির পর ব্যবসা খারাপ। অনলাইন শপিংয়ের কারণে আরও বিপদে পড়েছেন। এখন স্কুলের বেতন তাঁদের পরিবারকে বিপদে ফেলছে। আরেক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে ছোটবেলা থেকে যে স্কুলে পড়ে, সেখান থেকে হয়তো বের করতে হবে। কারণ এ বছর ৩০ শতাংশ বেতন বেড়েছে, যা টানা সম্ভব নয়। তবে স্কুল বদল করাও নিরাপদ নয়। সব জায়গায় একই অবস্থা।’

এই পরিস্থিতিতে দিল্লি সরকার ১০ জুন ‘দিল্লি স্কুল এডুকেশন (ফি নির্ধারণে স্বচ্ছতা ও নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ ২০২৫’ অনুমোদন করেছে। এটি কার্যকর হতে রাজ্যপালের অনুমোদন প্রয়োজন। রাজ্য শিক্ষামন্ত্রী আশিস সূদ জানিয়েছেন, নতুন আইনে বেসরকারি স্কুলের বেতন নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর হবে। তবে অভিভাবকেরা বলছেন, তাঁদের মতামত নিয়েই আইন তৈরি করতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিখা শর্মা বাগ্গা বলেন, ‘প্রতি বছর শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগে স্কুলের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষা করা উচিত। তাহলে অভিভাবকেরা বুঝবেন, তাঁরা কী কারণে টাকা দিচ্ছেন।’

এদিকে, দ্বারকায় আদিত্য এখনো স্কুলে ফেরার অপেক্ষায়। যদিও খবরে বলা হয়েছে, দিল্লি পাবলিক স্কুল বহিষ্কৃত ছাত্রদের ফিরিয়ে নেবে। তবে আদিত্যর বাবা দিব্য মাত্তে বলেন, ‘স্কুল কিছুটা ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। কিন্তু এখনো আমার ছেলের নাম তালিকায় ওঠেনি। কোনো অ্যাসাইনমেন্টও দেয়নি।’

তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে মাত্র ১৪ বছরের। তার এখন শুধু পড়াশোনার চিন্তা করার কথা। কিন্তু ওকে ভাবতে হচ্ছে, কাল ক্লাসে বসতে পারবে কি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সহিংসতা ও প্রত্যাখ্যানের মধ্যে মিয়ানমারে চলছে ‘প্রহসনের’ নির্বাচন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত মিয়ানমারে শুরু হয়েছে এক বিতর্কিত নির্বাচন, যা দেশ-বিদেশে ‘প্রহসন’ হিসেবে প্রত্যাখ্যাত। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অনুপস্থিতি, শীর্ষ নেতাদের কারাবাস এবং চলমান সংঘাতের কারণে প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীর ভোটাধিকারবঞ্চিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে এই নির্বাচন হচ্ছে।

সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের প্রায় পাঁচ বছর পর তিন ধাপে নির্বাচনের আয়োজন করেছে সামরিক জান্তা সরকার। ওই অভ্যুত্থান দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছিল, যা পরে গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়।

পর্যবেক্ষকদের মতে, চীনের সমর্থনে জান্তা সরকার তাদের ক্ষমতাকে বৈধতা দিতে চাইছে, তা সুসংহত করতে চাইছে, যাতে তারা চলমান অস্থিতিশীলতা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পায়।

বিবিসি জানিয়েছে, মিয়ানমারে আজ রোববার শুরু হওয়া ভোট গ্রহণের মধ্যে দেশটির একাধিক অঞ্চলে বিস্ফোরণ ও বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে।

মান্দালয় অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রী বিবিসিকে নিশ্চিত করেন, আজ ভোরে ওই অঞ্চলের একটি জনশূন্য বাড়িতে রকেট হামলার পর তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এর আগে গতকাল রাতে থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছে মায়াওয়াদ্দি শহরে ধারাবাহিক বিস্ফোরণে ১০টির বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্থানীয় এক বাসিন্দা বিবিসিকে জানান, ওই হামলায় এক শিশু নিহত হয়েছে এবং তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।

তবে কিছু ভোটার বিবিসির কাছে দাবি করেছেন, এবারের নির্বাচন আগের চেয়ে অনেক বেশি ‘সুশৃঙ্খল’।

মান্দালয় অঞ্চলের বাসিন্দা মা সু জারচি বলেন, ‘ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা এবার অনেক বদলে গেছে। ভোট দেওয়ার আগে আমি ভয়ে ছিলাম। এখন ভোট দিয়ে স্বস্তি পাচ্ছি। দেশের জন্য নিজের সেরাটা দিতে চেষ্টা করেছি—এমন একজন নাগরিক হিসেবে আমি আমার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছি।’

২২ বছর বয়সে প্রথমবার ভোট দিয়ে পেয়ি ফিয়ো মাউং বিবিসিকে জানান, তিনি ভোট দিয়েছেন। কারণ, তিনি বিশ্বাস করেন ভোট দেওয়া ‘প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব’।

মাউং বলেন, ‘আমার প্রত্যাশা নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য। নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী। আমি এমন কাউকে সমর্থন করতে চাই, যিনি লড়াই করা এসব মানুষের জন্য নিত্যপণ্যের দাম কমিয়ে আনতে পারবেন। আমি এমন একজন প্রেসিডেন্ট চাই, যিনি সব মানুষের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করবেন।’

এদিকে মিয়ানমারের জান্তা সরকার এই নির্বাচন ঘিরে সব সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করে দাবি করেছে, তাদের লক্ষ্য দেশকে ‘বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনা’।

রাজধানী নেপিডোর এক কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টিত ভোটকেন্দ্রে আজ ভোট দিয়ে জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং বিবিসিকে বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।

জান্তাপ্রধান জোর দিয়ে বলেন, ‘আমি সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান। একজন সরকারি চাকরিজীবী। আমি চাইলেই বলতে পারি না, আমি প্রেসিডেন্ট হতে চাই।’

এর আগে চলতি সপ্তাহের শুরুতে তিনি বলেছিলেন, যারা ভোট প্রত্যাখ্যান করছে, তারা আসলে ‘গণতন্ত্রের পথে অগ্রগতিকে’ প্রত্যাখ্যান করছে।

মিয়ানমারে নতুন এক আইনের অধীনে নির্বাচনে বাধা দেওয়া বা বিরোধিতা করার অভিযোগে দুই শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এই আইনে মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ধর্ষণের শিকার নারীকে বিজেপি নেত্রীর স্বামী বললেন, ‘আমার কিছুই হবে না’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম অশোক সিং। ছবি: এনডিটিভি
অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম অশোক সিং। ছবি: এনডিটিভি

এক নারীকে ছুরির মুখে ধর্ষণ, সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে পরে বারবার যৌন সম্পর্কে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে ভারতের মধ্যপ্রদেশের সাতনা জেলার এক বিজেপি কাউন্সিলরের স্বামীর বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ওই নারী যখন ক্যামেরার সামনে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন এবং তাঁদের কথোপকথনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের কথা বলেন তখন ওই ব্যক্তি হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমার কিছুই হবে না।’

অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম অশোক সিং। তিনি রামপুর বাঘেলান নগর পরিষদের এক বিজেপি কাউন্সিলরের স্বামী। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে অশোক সিংকে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে গালিগালাজ করতে এবং ভুক্তভোগী নারীকে হুমকি দিতে দেখা যায়। এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ভাইরাল হওয়া ওই ক্লিপটিতে অভিযুক্তকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার কী হবে? কিছুই হবে না। যেখানে খুশি অভিযোগ করো, আমার কিছুই হবে না।’ ভিডিওর নেপথ্যে ভুক্তভোগী নারীকে কাঁদতে কাঁদতে অভিযোগ দায়েরের কথা বলতে শোনা যায়।

গত সোমবার সাতনার পুলিশ সুপার (এসপি) হংসরাজ সিংয়ের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই নারী। অভিযোগে তিনি বলেন, প্রায় ছয় মাস আগে ওই ঘটনা ঘটেছে। নিজের ও পরিবারের প্রাণনাশের হুমকির কারণে এতদিন তিনি মুখ খোলেননি। অভিযোগ পাওয়ার পরপরই এসপি তদন্তের দায়িত্ব ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ (ডিএসপি) মনোজ ত্রিবেদীর কাছে হস্তান্তর করেন।

ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ অনুযায়ী, কারহি এলাকার বাসিন্দা অশোক সিং তাঁর বাড়িতে ঢুকে ছুরির মুখে তাঁকে ধর্ষণ করে। মোবাইল ফোনে সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে এবং এই বিষয়ে মুখ খুললে নারী ও তাঁর পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকি দেন।

ওই নারী অভিযোগে আরও বলেন, গত ২০ ডিসেম্বর অশোক সিং আবার তাঁর কাছে আসেন, তাঁর শ্লীলতাহানি করেন এবং আবারও ভিডিওটি প্রকাশ করে দেওয়ার হুমকি দেন। বলেন, তাঁর কথামতো না চললে ওই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

ভুক্তভোগীর দাবি, অশোক সিংয়ের বিরুদ্ধে আগেও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ছিল এবং একসময় তাঁকে জেলা থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল। এই কারণেই সে নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে মনে করে প্রকাশ্যে তাঁকে হুমকি দিতে সাহস পেয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

ভুক্তভোগী নারী জানান, অশোক সিং নিয়মিত তাঁর দোকানে এসে তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং বারবার হুমকি দেন। এতে তিনি ও তাঁর পরিবার ভীতি ও হয়রানির মধ্যে রয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।

ওই নারী আরও অভিযোগ করেছেন, পাঁচ দিন আগে পুলিশের কাছে যাওয়ার পরও এখনো পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত তিনি। তিনি বলেন, তাঁর বা তাঁর পরিবারের কোনো ক্ষতি হলে এর জন্য পুলিশই দায়ী থাকবে।

এদিকে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে এবং সব প্রমাণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এখনো পর্যন্ত কোনো গ্রেপ্তারের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাপানে তুষারপাতে পিচ্ছিল রাস্তায় ৫০টি গাড়ির সংঘর্ষ, নিহত ২

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৫১
পরপর অনেকগুলো গাড়ির সংঘর্ষের অন্তত ১০টি গাড়িতে আগুন ধরে যায়। ছবি: সংগৃহীত
পরপর অনেকগুলো গাড়ির সংঘর্ষের অন্তত ১০টি গাড়িতে আগুন ধরে যায়। ছবি: সংগৃহীত

তীব্র তুষারপাত ও পিচ্ছিল রাস্তার কারণে জাপানের মধ্যাঞ্চলে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ২ জন নিহত এবং ২৬ জন আহত হয়েছেন। দেশটির কান-এৎসু এক্সপ্রেসওয়েতে অন্তত ৫০টি গাড়ির স্তূপ তৈরি হয়েছে। সংঘর্ষের ফলে বেশ কয়েকটি যানবাহনে আগুন ধরে যায়।

স্থানীয় পুলিশের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, ২৬ ডিসেম্বর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে টোকিও থেকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে গুনমা প্রিফেকচারের মিনাকামিতে এই দুর্ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে দুটি ট্রাকের মধ্যে সংঘর্ষ হলে পেছনে থাকা গাড়িগুলো একের পর এক ধাক্কা খেতে থাকে। এই চেইন রিঅ্যাকশনের ফলে অন্তত ১০টি গাড়িতে দাউ দাউ করে আগুন ধরে যায়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সাড়ে সাত ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে টোকিওর একজন ৭৭ বছর বয়সী নারী রয়েছেন। এ ছাড়া একটি পুড়ে যাওয়া ট্রাকের চালকের আসন থেকে আরও একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত ২৬ জনের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকি ২১ জন সামান্য আঘাত পেয়েছেন।

দুর্ঘটনার সময় ওই এলাকায় ভারী তুষারপাতের সতর্কতা জারি ছিল। পুলিশের ধারণা, রাস্তার ওপর বরফ জমে পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকগুলো পিছলে যায়। যার ফলে এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

ষাটোর্ধ্ব এক প্রত্যক্ষদর্শী জাপানি সংবাদমাধ্যম এনএইচকে-কে জানান, সংঘর্ষের সময় তিনি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনেন এবং দেখেন সামনের গাড়িগুলোতে আগুন ধরে গেছে। দ্রুত সেই আগুন অন্যান্য গাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি আরও জানান, তাঁকেসহ প্রায় ৫০ জনকে নিকটবর্তী একটি টোল প্লাজায় সরিয়ে নেওয়া হয় এবং সেখানে তাঁরা সারা রাত অবস্থান করেন।

দুর্ঘটনার পর এক্সপ্রেসওয়ের একটি অংশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুড়ে যাওয়া এবং ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িগুলো সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে। রাস্তা পরিচালনাকারী সংস্থা নেক্সকো জানিয়েছে, আগুনের তাপে রাস্তার কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সংস্থাটি আপাতত ওই রুট ব্যবহার না করার জন্য ভ্রমণকারীদের সতর্ক করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজা স্থিতিশীলতা বাহিনীতে যোগ দিতে প্রস্তুত পাকিস্তান, তবে আপত্তি হামাসকে নিরস্ত্র করার শর্তে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার। ছবি: সংগৃহীত

গাজায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক বাহিনীতে যোগ দিতে নীতিগতভাবে সম্মতি জানিয়েছে পাকিস্তান। তবে এই বাহিনীর ম্যান্ডেটে যদি ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে নিরস্ত্র করার শর্ত থাকে, তবে পাকিস্তান তাতে অংশ নেবে না। আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার এ কথা বলেছেন।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য এক্সপ্রেসের ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে পাকিস্তানের কূটনৈতিক সাফল্য পর্যালোচনা করতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়াজন করা হয়েছিল। সংবাদ সম্মেলনে ইশাক দার বলেন, গাজা শান্তি চুক্তির আওতায় ‘ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স’ (আইএসএফ) গঠন একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। পাকিস্তান যেকোনো আন্তর্জাতিক ফোরামে ‘পিস এনফোর্সমেন্ট’ (শান্তি বলবৎকরণ) নয়, বরং ‘পিসকিপিং’ (শান্তি রক্ষা) শব্দ ব্যবহারের ওপর জোর দিচ্ছে।

হামাসকে নিরস্ত্র করা প্রসঙ্গে ইশাক দার স্পষ্ট করে বলেন, ‘যদি এই বাহিনীর ম্যান্ডেটে হামাসকে নিরস্ত্র করার কোনো ভূমিকা থাকে, তবে আমরা তাতে অংশ নেব না। এটি আমাদের কাজ নয়। হামাসকে নিরস্ত্র করার দায়িত্ব ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বা সেখানকার স্থানীয় সরকারের।’

ইশাক দার আরও বলেন, ‘পাকিস্তানের ভূমিকা শুধু শান্তি বজায় রাখায় সহায়তা করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। বলপ্রয়োগের মাধ্যমে কাউকে নিরস্ত্র করার কোনো অভিযানে পাকিস্তান তার সৈন্যদের জড়াতে চায় না।’

ইশাক দার জানান, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ নীতিগতভাবে সৈন্য পাঠানোর বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতি দিলেও, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পাকিস্তান এই বাহিনীর ‘টার্মস অব রেফারেন্স’ (টিওআর) এবং ম্যান্ডেট পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করবে।

প্রসঙ্গত, গত নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনাকে সমর্থন করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি রেজল্যুশন পাস হয়। পাকিস্তানসহ ১৩টি দেশ এর পক্ষে ভোট দিলেও রাশিয়া ও চীন ভোটদানে বিরত ছিল। ওই পরিকল্পনারই একটি অন্যতম অংশ হলো এই ‘আইএসএফ’ গঠন। এখানে মূলত মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর সৈন্যদের প্রাধান্য থাকবে।

ইশাক দার জানান, ইন্দোনেশিয়া এই বাহিনীতে ২০ হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রস্তাব দিলেও তারাও হামাসকে নিরস্ত্র করার বিষয়ে পাকিস্তানের মতোই আপত্তি ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

পারমাণবিক শক্তিধর দেশ এবং অভিজ্ঞ সামরিক বাহিনীর অধিকারী হওয়ায় গাজা শান্তি মিশনে পাকিস্তানের অংশগ্রহণ ওয়াশিংটনের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে দেশের অভ্যন্তরে ধর্মীয় দলগুলোর প্রতিবাদ এবং হামাসের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি এড়াতে পাকিস্তান অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এই পথে এগোচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে ইশাক দার দাবি করেন, একসময় পাকিস্তান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন’ বলে বিবেচিত হলেও বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় দেশটি পুনরায় বিশ্বমঞ্চে শক্তিশালী অবস্থানে ফিরে এসেছে। তিনি জানান, প্রধান বৈশ্বিক ইস্যুগুলোতে পাকিস্তানের নীতিগত ও দৃঢ় অবস্থানের কারণে আন্তর্জাতিক মহলে ইসলামাবাদের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত