Ajker Patrika

বিশ্বজুড়ে যুদ্ধের দামামা: সমরাস্ত্র শিল্পের মুনাফা বেড়ে ৬৭৮ বিলিয়ন ডলার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ১১
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছে মার্কিন কোম্পানি লকহিড মার্টিনের তৈরি এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান আছে। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছে মার্কিন কোম্পানি লকহিড মার্টিনের তৈরি এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান আছে। ছবি: এএফপি

বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে বড় ধরনের যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ায় অস্ত্র বিক্রি ও সামরিক সেবা শিল্প খাতের শীর্ষ ১০০ কোম্পানি ২০২৪ সালে ৬৭৮ বিলিয়ন ডলার মুনাফা করেছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

আজ সোমবার এসআইপিআরআইয়ের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা ও ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে বিশ্বজুড়ে অস্ত্র বিক্রি ও সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আর মূলত এ কারণেই বৈশ্বিক অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানিগুলোর মুনাফা বেড়ে গেছে। ২০২৩ সালের তুলনায় গত বছর সামরিক অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানিগুলোর মুনাফা ৫ দশমিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এই মুনাফা বৃদ্ধির বেশির ভাগই নিয়ে গেছে মার্কিন ও ইউরোপীয় কোম্পানি। তবে এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলের কিছু কোম্পানিও সাম্প্রতিক সময়ে ভালো মুনাফা অর্জন করেছে। তবে এই অঞ্চলের বেশির ভাগই মুনাফাই আবার নিয়েছে চীনা কোম্পানিগুলো। যুক্তরাষ্ট্রে মুনাফা অর্জনের ক্ষেত্রে লকহিড মার্টিন, নরথ্রপ গ্রুম্যান এবং জেনারেল ডায়নামিক্স শীর্ষে ছিল। শীর্ষ ১০০-এর তালিকায় থাকা মার্কিন অস্ত্র কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত অস্ত্র রাজস্ব ২০২৪ সালে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৩৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। তালিকাভুক্ত ৩৯টি মার্কিন কোম্পানির মধ্যে ৩০টিরই রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।

তবে এসআইপিআরআই বলছে, এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, কলাম্বিয়া ও ভার্জিনিয়া-ক্লাস সাবমেরিন এবং সেন্টিনেল আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোতে ব্যাপক বিলম্ব ও বাজেট অতিরিক্ত ব্যয় চলমান। ইলন মাস্কের স্পেসএক্স প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক সামরিক প্রস্তুতকারকের শীর্ষ তালিকায় উঠে এসেছে। কারণ, কোম্পানিটির অস্ত্র রাজস্ব ২০২৩ সালের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

রাশিয়াকে বাদ দিয়ে, ইউরোপে শীর্ষ ১০০ তালিকায় ২৬টি অস্ত্র কোম্পানি ছিল এবং তাদের মধ্যে ২৩টি অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি থেকে আয় বৃদ্ধি করেছে। তাদের সম্মিলিত অস্ত্র রাজস্ব ১৩ শতাংশ বেড়ে ১৫১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ইউক্রেনের জন্য গোলাবারুদ তৈরির মাধ্যমে রাজস্ব ১৯৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার পর চেক প্রজাতন্ত্রের কোম্পানি চেকোস্লোভাক গ্রুপ ২০২৪ সালে শীর্ষ ১০০-এর যেকোনো প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বোচ্চ শতাংশ বৃদ্ধির রেকর্ড করেছে।

পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার লাগাতার আক্রমণের মুখে থাকা ইউক্রেনের জেএসসি ইউক্রেনীয় ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি তাদের অস্ত্র রাজস্ব ৪১ শতাংশ বাড়িয়ে তিন বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে। ইউরোপীয় অস্ত্র কোম্পানিগুলো রাশিয়ার মোকাবিলায় নতুন উৎপাদন সক্ষমতায় বিনিয়োগ করছে বলে এসআইপিআরআই তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে। তবে সতর্ক করেছে, কাঁচামাল সংগ্রহ—বিশেষত গুরুত্বপূর্ণ খনিজের ওপর নির্ভরশীলতার ক্ষেত্রে একটি ‘ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ’ হয়ে উঠতে পারে। কারণ, চীনও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কঠোর করছে।

রোস্টেক এবং ইউনাইটেড শিপবিল্ডিং করপোরেশন হলো র‍্যাঙ্কিংয়ে থাকা দুই রুশ অস্ত্র কোম্পানি। তারা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখেও তাদের সম্মিলিত অস্ত্র রাজস্ব ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৩১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে।

গত বছর এশিয়া ও ওশেনিয়ার অস্ত্র প্রস্তুতকারীরা ২০২৩ সালের তুলনায় ১ দশমিক ২ শতাংশ পতনের পরও ১৩০ বিলিয়ন ডলারের রাজস্ব অর্জন করেছে। এই আঞ্চলিক পতন মূলত তালিকাভুক্ত আটটি চীনা অস্ত্র কোম্পানির ১০ শতাংশ সম্মিলিত রাজস্ব হ্রাসের কারণে হয়েছিল। যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল নোরিনকোর অস্ত্র রাজস্বের ৩১ শতাংশ কমে যাওয়া। কিন্তু জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার অস্ত্র প্রস্তুতকারীদের বিক্রি ইউরোপীয় ও দেশীয় উভয় বাজারের শক্তিশালী চাহিদার কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান ও উত্তর কোরিয়া নিয়ে উত্তেজনা চলমান থাকা অবস্থায়।

তালিকায় থাকা পাঁচটি জাপানি কোম্পানি তাদের সম্মিলিত অস্ত্র রাজস্ব ৪০ শতাংশ বাড়িয়ে ১৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে, আর চারটি দক্ষিণ কোরিয়ান কোম্পানি ৩১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে রাজস্ব ১৪ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সর্ববৃহৎ অস্ত্র কোম্পানি হানহা গ্রুপ ২০২৪ সালে ৪২ শতাংশ রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে, যার অর্ধেকের বেশি এসেছে অস্ত্র রপ্তানি থেকে।

প্রথমবারের মতো শীর্ষ ১০০-এর তালিকায় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক কোম্পানির সংখ্যা ছিল ৯টি। ২০২৪ সালে এই ৯টি কোম্পানি সম্মিলিতভাবে ৩১ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব অর্জন করেছে, যা আঞ্চলিকভাবে ১৪ শতাংশ বৃদ্ধিকে নির্দেশ করে। সুদানের বিধ্বংসী যুদ্ধে অস্ত্র জোগানোর আন্তর্জাতিক অভিযোগের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও, প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে যে আমিরাতভিত্তিক এজ গ্রুপের ২০২৩ সালের রাজস্ব তথ্যের অভাবে তাদের আঞ্চলিক হিসাব এজ-কে অন্তর্ভুক্ত করেনি। সংযুক্ত আরব আমিরাত এসব অভিযোগ অস্বীকার করে।

গাজায় চলমান গণহত্যামূলক যুদ্ধের মধ্যে তালিকাভুক্ত তিনটি ইসরায়েলি অস্ত্র কোম্পানি তাদের সম্মিলিত অস্ত্র রাজস্ব ১৬ শতাংশ বাড়িয়ে ১৬ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে, যেখানে প্রায় ৭০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং অবরুদ্ধ উপত্যকার বেশির ভাগ অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। এলবিট সিস্টেমস ৬ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার মুনাফা করেছে, এরপর ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ ৫ দশমিক ১৯ বিলিয়ন এবং রাফায়েল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেমস ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে।

এসআইপিআরআই জানিয়েছে, ইসরায়েলি মানববিহীন আকাশযান ও অ্যান্টি-ড্রোন প্রযুক্তি নিয়ে আন্তর্জাতিক আগ্রহ বেড়েছে। তালিকায় থাকা পাঁচটি তুর্কি কোম্পানি—যা রেকর্ড—সম্মিলিতভাবে ১০ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার অস্ত্র রাজস্ব অর্জন করেছে, যা ১১ শতাংশ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। ড্রোন উৎপাদক বায়কারের ২০২৪ সালের ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রাজস্বের ৯৫ শতাংশই এসেছে বিদেশে রপ্তানি থেকে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, ভারত, তাইওয়ান, নরওয়ে, কানাডা, স্পেন, পোল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার সামরিক কোম্পানিও এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সহিংসতা ও প্রত্যাখ্যানের মধ্যে মিয়ানমারে চলছে ‘প্রহসনের’ নির্বাচন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত মিয়ানমারে শুরু হয়েছে এক বিতর্কিত নির্বাচন, যা দেশ-বিদেশে ‘প্রহসন’ হিসেবে প্রত্যাখ্যাত। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অনুপস্থিতি, শীর্ষ নেতাদের কারাবাস এবং চলমান সংঘাতের কারণে প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীর ভোটাধিকারবঞ্চিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে এই নির্বাচন হচ্ছে।

সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের প্রায় পাঁচ বছর পর তিন ধাপে নির্বাচনের আয়োজন করেছে সামরিক জান্তা সরকার। ওই অভ্যুত্থান দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছিল, যা পরে গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়।

পর্যবেক্ষকদের মতে, চীনের সমর্থনে জান্তা সরকার তাদের ক্ষমতাকে বৈধতা দিতে চাইছে, তা সুসংহত করতে চাইছে, যাতে তারা চলমান অস্থিতিশীলতা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পায়।

বিবিসি জানিয়েছে, মিয়ানমারে আজ রোববার শুরু হওয়া ভোট গ্রহণের মধ্যে দেশটির একাধিক অঞ্চলে বিস্ফোরণ ও বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে।

মান্দালয় অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রী বিবিসিকে নিশ্চিত করেন, আজ ভোরে ওই অঞ্চলের একটি জনশূন্য বাড়িতে রকেট হামলার পর তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এর আগে গতকাল রাতে থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছে মায়াওয়াদ্দি শহরে ধারাবাহিক বিস্ফোরণে ১০টির বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্থানীয় এক বাসিন্দা বিবিসিকে জানান, ওই হামলায় এক শিশু নিহত হয়েছে এবং তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।

তবে কিছু ভোটার বিবিসির কাছে দাবি করেছেন, এবারের নির্বাচন আগের চেয়ে অনেক বেশি ‘সুশৃঙ্খল’।

মান্দালয় অঞ্চলের বাসিন্দা মা সু জারচি বলেন, ‘ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা এবার অনেক বদলে গেছে। ভোট দেওয়ার আগে আমি ভয়ে ছিলাম। এখন ভোট দিয়ে স্বস্তি পাচ্ছি। দেশের জন্য নিজের সেরাটা দিতে চেষ্টা করেছি—এমন একজন নাগরিক হিসেবে আমি আমার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছি।’

২২ বছর বয়সে প্রথমবার ভোট দিয়ে পেয়ি ফিয়ো মাউং বিবিসিকে জানান, তিনি ভোট দিয়েছেন। কারণ, তিনি বিশ্বাস করেন ভোট দেওয়া ‘প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব’।

মাউং বলেন, ‘আমার প্রত্যাশা নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য। নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী। আমি এমন কাউকে সমর্থন করতে চাই, যিনি লড়াই করা এসব মানুষের জন্য নিত্যপণ্যের দাম কমিয়ে আনতে পারবেন। আমি এমন একজন প্রেসিডেন্ট চাই, যিনি সব মানুষের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করবেন।’

এদিকে মিয়ানমারের জান্তা সরকার এই নির্বাচন ঘিরে সব সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করে দাবি করেছে, তাদের লক্ষ্য দেশকে ‘বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনা’।

রাজধানী নেপিডোর এক কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টিত ভোটকেন্দ্রে আজ ভোট দিয়ে জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং বিবিসিকে বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।

জান্তাপ্রধান জোর দিয়ে বলেন, ‘আমি সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান। একজন সরকারি চাকরিজীবী। আমি চাইলেই বলতে পারি না, আমি প্রেসিডেন্ট হতে চাই।’

এর আগে চলতি সপ্তাহের শুরুতে তিনি বলেছিলেন, যারা ভোট প্রত্যাখ্যান করছে, তারা আসলে ‘গণতন্ত্রের পথে অগ্রগতিকে’ প্রত্যাখ্যান করছে।

মিয়ানমারে নতুন এক আইনের অধীনে নির্বাচনে বাধা দেওয়া বা বিরোধিতা করার অভিযোগে দুই শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এই আইনে মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ধর্ষণের শিকার নারীকে বিজেপি নেত্রীর স্বামী বললেন, ‘আমার কিছুই হবে না’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম অশোক সিং। ছবি: এনডিটিভি
অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম অশোক সিং। ছবি: এনডিটিভি

এক নারীকে ছুরির মুখে ধর্ষণ, সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে পরে বারবার যৌন সম্পর্কে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে ভারতের মধ্যপ্রদেশের সাতনা জেলার এক বিজেপি কাউন্সিলরের স্বামীর বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ওই নারী যখন ক্যামেরার সামনে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন এবং তাঁদের কথোপকথনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের কথা বলেন তখন ওই ব্যক্তি হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমার কিছুই হবে না।’

অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম অশোক সিং। তিনি রামপুর বাঘেলান নগর পরিষদের এক বিজেপি কাউন্সিলরের স্বামী। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে অশোক সিংকে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে গালিগালাজ করতে এবং ভুক্তভোগী নারীকে হুমকি দিতে দেখা যায়। এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ভাইরাল হওয়া ওই ক্লিপটিতে অভিযুক্তকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার কী হবে? কিছুই হবে না। যেখানে খুশি অভিযোগ করো, আমার কিছুই হবে না।’ ভিডিওর নেপথ্যে ভুক্তভোগী নারীকে কাঁদতে কাঁদতে অভিযোগ দায়েরের কথা বলতে শোনা যায়।

গত সোমবার সাতনার পুলিশ সুপার (এসপি) হংসরাজ সিংয়ের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই নারী। অভিযোগে তিনি বলেন, প্রায় ছয় মাস আগে ওই ঘটনা ঘটেছে। নিজের ও পরিবারের প্রাণনাশের হুমকির কারণে এতদিন তিনি মুখ খোলেননি। অভিযোগ পাওয়ার পরপরই এসপি তদন্তের দায়িত্ব ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ (ডিএসপি) মনোজ ত্রিবেদীর কাছে হস্তান্তর করেন।

ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ অনুযায়ী, কারহি এলাকার বাসিন্দা অশোক সিং তাঁর বাড়িতে ঢুকে ছুরির মুখে তাঁকে ধর্ষণ করে। মোবাইল ফোনে সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে এবং এই বিষয়ে মুখ খুললে নারী ও তাঁর পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকি দেন।

ওই নারী অভিযোগে আরও বলেন, গত ২০ ডিসেম্বর অশোক সিং আবার তাঁর কাছে আসেন, তাঁর শ্লীলতাহানি করেন এবং আবারও ভিডিওটি প্রকাশ করে দেওয়ার হুমকি দেন। বলেন, তাঁর কথামতো না চললে ওই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

ভুক্তভোগীর দাবি, অশোক সিংয়ের বিরুদ্ধে আগেও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ছিল এবং একসময় তাঁকে জেলা থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল। এই কারণেই সে নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে মনে করে প্রকাশ্যে তাঁকে হুমকি দিতে সাহস পেয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

ভুক্তভোগী নারী জানান, অশোক সিং নিয়মিত তাঁর দোকানে এসে তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং বারবার হুমকি দেন। এতে তিনি ও তাঁর পরিবার ভীতি ও হয়রানির মধ্যে রয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।

ওই নারী আরও অভিযোগ করেছেন, পাঁচ দিন আগে পুলিশের কাছে যাওয়ার পরও এখনো পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত তিনি। তিনি বলেন, তাঁর বা তাঁর পরিবারের কোনো ক্ষতি হলে এর জন্য পুলিশই দায়ী থাকবে।

এদিকে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে এবং সব প্রমাণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এখনো পর্যন্ত কোনো গ্রেপ্তারের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাপানে তুষারপাতে পিচ্ছিল রাস্তায় ৫০টি গাড়ির সংঘর্ষ, নিহত ২

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৫১
পরপর অনেকগুলো গাড়ির সংঘর্ষের অন্তত ১০টি গাড়িতে আগুন ধরে যায়। ছবি: সংগৃহীত
পরপর অনেকগুলো গাড়ির সংঘর্ষের অন্তত ১০টি গাড়িতে আগুন ধরে যায়। ছবি: সংগৃহীত

তীব্র তুষারপাত ও পিচ্ছিল রাস্তার কারণে জাপানের মধ্যাঞ্চলে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ২ জন নিহত এবং ২৬ জন আহত হয়েছেন। দেশটির কান-এৎসু এক্সপ্রেসওয়েতে অন্তত ৫০টি গাড়ির স্তূপ তৈরি হয়েছে। সংঘর্ষের ফলে বেশ কয়েকটি যানবাহনে আগুন ধরে যায়।

স্থানীয় পুলিশের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, ২৬ ডিসেম্বর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে টোকিও থেকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে গুনমা প্রিফেকচারের মিনাকামিতে এই দুর্ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে দুটি ট্রাকের মধ্যে সংঘর্ষ হলে পেছনে থাকা গাড়িগুলো একের পর এক ধাক্কা খেতে থাকে। এই চেইন রিঅ্যাকশনের ফলে অন্তত ১০টি গাড়িতে দাউ দাউ করে আগুন ধরে যায়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সাড়ে সাত ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে টোকিওর একজন ৭৭ বছর বয়সী নারী রয়েছেন। এ ছাড়া একটি পুড়ে যাওয়া ট্রাকের চালকের আসন থেকে আরও একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত ২৬ জনের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকি ২১ জন সামান্য আঘাত পেয়েছেন।

দুর্ঘটনার সময় ওই এলাকায় ভারী তুষারপাতের সতর্কতা জারি ছিল। পুলিশের ধারণা, রাস্তার ওপর বরফ জমে পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকগুলো পিছলে যায়। যার ফলে এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

ষাটোর্ধ্ব এক প্রত্যক্ষদর্শী জাপানি সংবাদমাধ্যম এনএইচকে-কে জানান, সংঘর্ষের সময় তিনি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনেন এবং দেখেন সামনের গাড়িগুলোতে আগুন ধরে গেছে। দ্রুত সেই আগুন অন্যান্য গাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি আরও জানান, তাঁকেসহ প্রায় ৫০ জনকে নিকটবর্তী একটি টোল প্লাজায় সরিয়ে নেওয়া হয় এবং সেখানে তাঁরা সারা রাত অবস্থান করেন।

দুর্ঘটনার পর এক্সপ্রেসওয়ের একটি অংশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুড়ে যাওয়া এবং ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িগুলো সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে। রাস্তা পরিচালনাকারী সংস্থা নেক্সকো জানিয়েছে, আগুনের তাপে রাস্তার কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সংস্থাটি আপাতত ওই রুট ব্যবহার না করার জন্য ভ্রমণকারীদের সতর্ক করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজা স্থিতিশীলতা বাহিনীতে যোগ দিতে প্রস্তুত পাকিস্তান, তবে আপত্তি হামাসকে নিরস্ত্র করার শর্তে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার। ছবি: সংগৃহীত

গাজায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক বাহিনীতে যোগ দিতে নীতিগতভাবে সম্মতি জানিয়েছে পাকিস্তান। তবে এই বাহিনীর ম্যান্ডেটে যদি ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে নিরস্ত্র করার শর্ত থাকে, তবে পাকিস্তান তাতে অংশ নেবে না। আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার এ কথা বলেছেন।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য এক্সপ্রেসের ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে পাকিস্তানের কূটনৈতিক সাফল্য পর্যালোচনা করতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়াজন করা হয়েছিল। সংবাদ সম্মেলনে ইশাক দার বলেন, গাজা শান্তি চুক্তির আওতায় ‘ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স’ (আইএসএফ) গঠন একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। পাকিস্তান যেকোনো আন্তর্জাতিক ফোরামে ‘পিস এনফোর্সমেন্ট’ (শান্তি বলবৎকরণ) নয়, বরং ‘পিসকিপিং’ (শান্তি রক্ষা) শব্দ ব্যবহারের ওপর জোর দিচ্ছে।

হামাসকে নিরস্ত্র করা প্রসঙ্গে ইশাক দার স্পষ্ট করে বলেন, ‘যদি এই বাহিনীর ম্যান্ডেটে হামাসকে নিরস্ত্র করার কোনো ভূমিকা থাকে, তবে আমরা তাতে অংশ নেব না। এটি আমাদের কাজ নয়। হামাসকে নিরস্ত্র করার দায়িত্ব ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বা সেখানকার স্থানীয় সরকারের।’

ইশাক দার আরও বলেন, ‘পাকিস্তানের ভূমিকা শুধু শান্তি বজায় রাখায় সহায়তা করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। বলপ্রয়োগের মাধ্যমে কাউকে নিরস্ত্র করার কোনো অভিযানে পাকিস্তান তার সৈন্যদের জড়াতে চায় না।’

ইশাক দার জানান, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ নীতিগতভাবে সৈন্য পাঠানোর বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতি দিলেও, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পাকিস্তান এই বাহিনীর ‘টার্মস অব রেফারেন্স’ (টিওআর) এবং ম্যান্ডেট পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করবে।

প্রসঙ্গত, গত নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনাকে সমর্থন করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি রেজল্যুশন পাস হয়। পাকিস্তানসহ ১৩টি দেশ এর পক্ষে ভোট দিলেও রাশিয়া ও চীন ভোটদানে বিরত ছিল। ওই পরিকল্পনারই একটি অন্যতম অংশ হলো এই ‘আইএসএফ’ গঠন। এখানে মূলত মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর সৈন্যদের প্রাধান্য থাকবে।

ইশাক দার জানান, ইন্দোনেশিয়া এই বাহিনীতে ২০ হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রস্তাব দিলেও তারাও হামাসকে নিরস্ত্র করার বিষয়ে পাকিস্তানের মতোই আপত্তি ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

পারমাণবিক শক্তিধর দেশ এবং অভিজ্ঞ সামরিক বাহিনীর অধিকারী হওয়ায় গাজা শান্তি মিশনে পাকিস্তানের অংশগ্রহণ ওয়াশিংটনের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে দেশের অভ্যন্তরে ধর্মীয় দলগুলোর প্রতিবাদ এবং হামাসের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি এড়াতে পাকিস্তান অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এই পথে এগোচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে ইশাক দার দাবি করেন, একসময় পাকিস্তান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন’ বলে বিবেচিত হলেও বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় দেশটি পুনরায় বিশ্বমঞ্চে শক্তিশালী অবস্থানে ফিরে এসেছে। তিনি জানান, প্রধান বৈশ্বিক ইস্যুগুলোতে পাকিস্তানের নীতিগত ও দৃঢ় অবস্থানের কারণে আন্তর্জাতিক মহলে ইসলামাবাদের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত