Ajker Patrika

ট্রাম্প যুদ্ধে জড়ালে মধ্যপ্রাচ্যে দোজখ নেমে আসবে, ইরানের হুঁশিয়ারি

আপডেট : ২০ জুন ২০২৫, ০৯: ২৯
বিবিসির সাক্ষাৎকারে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাঈদ খতিবজাদ। ছবি: বিবিসি
বিবিসির সাক্ষাৎকারে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাঈদ খতিবজাদ। ছবি: বিবিসি

ইরান-ইসরায়েল সরাসরি সংঘাতের এক অতি সংকটময় মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রকে কড়া বার্তা দিয়েছে ইরান। তেহরান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে জড়ালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘অপ্রত্যাশিত যুদ্ধের জনক’ হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত হবেন। এতে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ‘দোজখ’ নেবে আসবে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সাঈদ খতিবজাদে এই সতর্কবার্তা দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, এটি কোনোভাবেই আমেরিকার যুদ্ধ নয়। কিন্তু তারা যদি এতে ঢুকে পড়ে, তবে অপরের যুদ্ধে জড়ানোর জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে স্মরণ করা হবে। আর এ যুদ্ধ গোটা অঞ্চলের জন্য দোজখ নামিয়ে আনবে।’

গত সপ্তাহে ইসরায়েলের আকস্মিক হামলায় ইরানের একাধিক সামরিক কমান্ড পোস্ট, পরমাণু স্থাপনা এবং বেসামরিক এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি ঘটে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইরান ‘অপারেশন ট্রু প্রমিসের’ আওতায় ধারাবাহিক পাল্টা হামলা শুরু করে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, হামলার ১৫তম ধাপে একযোগে তেল আবিব ও হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে।

এই যুদ্ধ পরিস্থিতির মাঝেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভূমিকা ঘিরে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ট্রাম্প ইতিমধ্যে ইরানে হামলার পরিকল্পনায় সম্মতি জানালেও তা বাস্তবায়নে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি।

‘আলোচনার পথে আমরা প্রস্তুত ছিলাম’

বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী খতিবজাদে বলেন, ‘আমরা কূটনীতির পথে এগোচ্ছিলাম। অসলোতে আমরা যখন একত্রে বসেছিলাম, তখন ওমানে ষষ্ঠ দফার পরমাণু আলোচনা নির্ধারিত ছিল। আমরা চূড়ান্ত সমঝোতার দ্বারপ্রান্তে ছিলাম, এমন মুহূর্তেই ইসরায়েল হামলা চালিয়ে পুরো প্রক্রিয়াটি বানচাল করে দেয়।’

খতিবজাদে আরও জানান, ইসরায়েলের এই আগ্রাসনের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একাধিক মধ্যপ্রাচ্য নেতা ও দূত মারফত গোপন বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। বার্তাগুলোতে বলা হচ্ছে, ‘আমরা (যুক্তরাষ্ট্র) এই হামলার সঙ্গে জড়িত নই এবং এতে জড়াতে চাই না।’ তবে ট্রাম্পের প্রকাশ্য বক্তব্যগুলো এসব গোপন বার্তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেই মনে করছেন তেহরান।

হোয়াইট হাউসে আলোচনার গুঞ্জন উড়িয়ে দিল তেহরান

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্প্রতি দাবি করেন, ইরান আলোচনার জন্য হোয়াইট হাউসে আসতে চায়। এ বিষয়ে খতিবজাদে বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, এমন কোনো বার্তা আমরা দিইনি। বরং যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রথম ঘণ্টা থেকেই যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের দায়মুক্ত প্রমাণে ব্যস্ত। তারা চাইছে আলোচনার বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে নিজেদের শান্তিপ্রিয় হিসেবে তুলে ধরতে।’

খতিবজাদে আরও বলেন, ‘আমরা গোপনে কোনো দরজা ঠেলে হোয়াইট হাউসে যেতে চাই না। আলোচনার ক্ষেত্র তৈরির দায় প্রথমে সেই পক্ষের, যারা আগ্রাসন করেছে।’

পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে প্রশ্নের জবাব

আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা সম্প্রতি জানায়, ইরান ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুত করেছে, যা অস্ত্র-উপযোগী (৯০ শতাংশ) ইউরেনিয়ামে পৌঁছানোর এক ধাপ আগেই থেমে আছে। এই প্রসঙ্গে খতিবজাদে বলেন, ‘৬০% সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম থাকলেই কেউ পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে, এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর। শুধু সন্দেহ ও অনুমানের ওপর ভিত্তি করে যুদ্ধ শুরু করা যায় না।’

খতিবজাদে জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা কখনো পারমাণবিক বোমা তৈরি করিনি এবং করবও না। আমরা পরমাণু শক্তি ব্যবহার করি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে। যদি আমরা বোমা বানাতে চাইতাম, বহু আগেই বানিয়ে ফেলতাম।’

‘দখলদারদের অঘোষিত পরমাণু’ ও আন্তর্জাতিক নীরবতা

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ইরান বারবার বলেছে, যে রাষ্ট্র নিজেই শত শত পরমাণু অস্ত্রের গোপন ভান্ডার গড়ে তুলেছে এবং পরমাণু অস্ত্র বিস্তারের আন্তর্জাতিক চুক্তি এনএফটির সদস্য নয়, তারা কীভাবে অন্য রাষ্ট্রের বৈধ পরমাণু কার্যক্রমকে লক্ষ্যবস্তু বানায়?

খতিবজাদে বলেন, আজ ইসরায়েল যেভাবে আক্রমণ করেছে, তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। কারণ, এর মাধ্যমে একটি বিপজ্জনক নজির তৈরি হলো—এখন থেকে যে কেউ যে কারও পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালাতে পারে।

‘আমরা আত্মরক্ষায় লিপ্ত, আগ্রাসনে নয়’

ইরানের বিরুদ্ধে হাসপাতাল ও বেসামরিক স্থাপনায় হামলার অভিযোগ তুলেছে ইসরায়েল। এ প্রসঙ্গে খতিবজাদে বলেন, ‘আমরা কখনো বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাইনি। আমাদের প্রতিটি হামলা ছিল প্রতিরক্ষামূলক এবং সুনির্দিষ্ট সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েল আমাদের হাসপাতাল, আবাসিক ভবন, পরমাণুবিজ্ঞানী এবং সামরিক ঘাঁটিতে হামলা করেছে। এই অবস্থায় আলোচনার কথা বলা অন্যায়।’

‘যুদ্ধের আগুন নেভাতে হলে আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে’

জেনেভায় অনুষ্ঠেয় ‘E3 +1’ বৈঠক নিয়ে ইরানের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করে খতিবজাদে বলেন, ‘আমরা সব সময় কূটনীতি ও সংলাপের পক্ষে ছিলাম, আছি। কিন্তু যুদ্ধ থামানোর দায় প্রথমে সেই পক্ষের, যারা এই সংঘাতের সূচনা করেছে। যেহেতু ইসরায়েল আগ্রাসন অব্যাহত রেখেছে, তাই আত্মরক্ষাও অব্যাহত থাকবে।’

খতিবজাদে সতর্ক করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি এই যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে পড়ে, তবে এটি শুধু ইরান-ইসরায়েল নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে একটি বিস্ফোরক ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেবে।’

খতিবজাদের ভাষায়, ‘ট্রাম্প চাইলেই এখনো আলোচনার পথে ফিরতে পারেন, যদি ইসরায়েলকে থামানোর সাহস দেখান। কিন্তু তিনি যদি যুদ্ধকে অনুমোদন দেন, তবে ইতিহাসে এই যুদ্ধ তাঁর নামেই লেখা থাকবে—এমন এক যুদ্ধ, যা মধ্যপ্রাচ্যে দোজখ নামিয়ে আনবে।’

বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে একটিমাত্র ভুল সিদ্ধান্ত গোটা অঞ্চলে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। আর সে সিদ্ধান্তের কেন্দ্রে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এখন দেখার বিষয়, তিনি ‘দোজখের রাস্তায়’ হাঁটবেন, নাকি ফিরে আসবেন আলোচনার পথে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাপানে তুষারপাতে পিচ্ছিল রাস্তায় ৫০টি গাড়ির সংঘর্ষ, নিহত ২

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৫১
পরপর অনেকগুলো গাড়ির সংঘর্ষের অন্তত ১০টি গাড়িতে আগুন ধরে যায়। ছবি: সংগৃহীত
পরপর অনেকগুলো গাড়ির সংঘর্ষের অন্তত ১০টি গাড়িতে আগুন ধরে যায়। ছবি: সংগৃহীত

তীব্র তুষারপাত ও পিচ্ছিল রাস্তার কারণে জাপানের মধ্যাঞ্চলে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ২ জন নিহত এবং ২৬ জন আহত হয়েছেন। দেশটির কান-এৎসু এক্সপ্রেসওয়েতে অন্তত ৫০টি গাড়ির স্তূপ তৈরি হয়েছে। সংঘর্ষের ফলে বেশ কয়েকটি যানবাহনে আগুন ধরে যায়।

স্থানীয় পুলিশের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, ২৬ ডিসেম্বর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে টোকিও থেকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে গুনমা প্রিফেকচারের মিনাকামিতে এই দুর্ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে দুটি ট্রাকের মধ্যে সংঘর্ষ হলে পেছনে থাকা গাড়িগুলো একের পর এক ধাক্কা খেতে থাকে। এই চেইন রিঅ্যাকশনের ফলে অন্তত ১০টি গাড়িতে দাউ দাউ করে আগুন ধরে যায়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সাড়ে সাত ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে টোকিওর একজন ৭৭ বছর বয়সী নারী রয়েছেন। এ ছাড়া একটি পুড়ে যাওয়া ট্রাকের চালকের আসন থেকে আরও একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত ২৬ জনের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকি ২১ জন সামান্য আঘাত পেয়েছেন।

দুর্ঘটনার সময় ওই এলাকায় ভারী তুষারপাতের সতর্কতা জারি ছিল। পুলিশের ধারণা, রাস্তার ওপর বরফ জমে পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকগুলো পিছলে যায়। যার ফলে এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

ষাটোর্ধ্ব এক প্রত্যক্ষদর্শী জাপানি সংবাদমাধ্যম এনএইচকে-কে জানান, সংঘর্ষের সময় তিনি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনেন এবং দেখেন সামনের গাড়িগুলোতে আগুন ধরে গেছে। দ্রুত সেই আগুন অন্যান্য গাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি আরও জানান, তাঁকেসহ প্রায় ৫০ জনকে নিকটবর্তী একটি টোল প্লাজায় সরিয়ে নেওয়া হয় এবং সেখানে তাঁরা সারা রাত অবস্থান করেন।

দুর্ঘটনার পর এক্সপ্রেসওয়ের একটি অংশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুড়ে যাওয়া এবং ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িগুলো সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে। রাস্তা পরিচালনাকারী সংস্থা নেক্সকো জানিয়েছে, আগুনের তাপে রাস্তার কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সংস্থাটি আপাতত ওই রুট ব্যবহার না করার জন্য ভ্রমণকারীদের সতর্ক করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজা স্থিতিশীলতা বাহিনীতে যোগ দিতে প্রস্তুত পাকিস্তান, তবে আপত্তি হামাসকে নিরস্ত্র করার শর্তে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার। ছবি: সংগৃহীত

গাজায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক বাহিনীতে যোগ দিতে নীতিগতভাবে সম্মতি জানিয়েছে পাকিস্তান। তবে এই বাহিনীর ম্যান্ডেটে যদি ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে নিরস্ত্র করার শর্ত থাকে, তবে পাকিস্তান তাতে অংশ নেবে না। আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার এ কথা বলেছেন।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য এক্সপ্রেসের ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে পাকিস্তানের কূটনৈতিক সাফল্য পর্যালোচনা করতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়াজন করা হয়েছিল। সংবাদ সম্মেলনে ইশাক দার বলেন, গাজা শান্তি চুক্তির আওতায় ‘ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স’ (আইএসএফ) গঠন একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। পাকিস্তান যেকোনো আন্তর্জাতিক ফোরামে ‘পিস এনফোর্সমেন্ট’ (শান্তি বলবৎকরণ) নয়, বরং ‘পিসকিপিং’ (শান্তি রক্ষা) শব্দ ব্যবহারের ওপর জোর দিচ্ছে।

হামাসকে নিরস্ত্র করা প্রসঙ্গে ইশাক দার স্পষ্ট করে বলেন, ‘যদি এই বাহিনীর ম্যান্ডেটে হামাসকে নিরস্ত্র করার কোনো ভূমিকা থাকে, তবে আমরা তাতে অংশ নেব না। এটি আমাদের কাজ নয়। হামাসকে নিরস্ত্র করার দায়িত্ব ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বা সেখানকার স্থানীয় সরকারের।’

ইশাক দার আরও বলেন, ‘পাকিস্তানের ভূমিকা শুধু শান্তি বজায় রাখায় সহায়তা করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। বলপ্রয়োগের মাধ্যমে কাউকে নিরস্ত্র করার কোনো অভিযানে পাকিস্তান তার সৈন্যদের জড়াতে চায় না।’

ইশাক দার জানান, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ নীতিগতভাবে সৈন্য পাঠানোর বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতি দিলেও, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পাকিস্তান এই বাহিনীর ‘টার্মস অব রেফারেন্স’ (টিওআর) এবং ম্যান্ডেট পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করবে।

প্রসঙ্গত, গত নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনাকে সমর্থন করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি রেজল্যুশন পাস হয়। পাকিস্তানসহ ১৩টি দেশ এর পক্ষে ভোট দিলেও রাশিয়া ও চীন ভোটদানে বিরত ছিল। ওই পরিকল্পনারই একটি অন্যতম অংশ হলো এই ‘আইএসএফ’ গঠন। এখানে মূলত মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর সৈন্যদের প্রাধান্য থাকবে।

ইশাক দার জানান, ইন্দোনেশিয়া এই বাহিনীতে ২০ হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রস্তাব দিলেও তারাও হামাসকে নিরস্ত্র করার বিষয়ে পাকিস্তানের মতোই আপত্তি ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

পারমাণবিক শক্তিধর দেশ এবং অভিজ্ঞ সামরিক বাহিনীর অধিকারী হওয়ায় গাজা শান্তি মিশনে পাকিস্তানের অংশগ্রহণ ওয়াশিংটনের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে দেশের অভ্যন্তরে ধর্মীয় দলগুলোর প্রতিবাদ এবং হামাসের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি এড়াতে পাকিস্তান অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এই পথে এগোচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে ইশাক দার দাবি করেন, একসময় পাকিস্তান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন’ বলে বিবেচিত হলেও বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় দেশটি পুনরায় বিশ্বমঞ্চে শক্তিশালী অবস্থানে ফিরে এসেছে। তিনি জানান, প্রধান বৈশ্বিক ইস্যুগুলোতে পাকিস্তানের নীতিগত ও দৃঢ় অবস্থানের কারণে আন্তর্জাতিক মহলে ইসলামাবাদের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠকের আগে ইউক্রেনে রাশিয়ার ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রুশ হামলায় রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
রুশ হামলায় রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের ঠিক আগে রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ভাষ্য অনুযায়ী, শুক্রবার রাতভর চালানো এই হামলায় প্রায় ৫০০ ড্রোন ও ৪০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। এতে কিয়েভের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।

জেলেনস্কি এই হামলাকে ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতায় চলমান শান্তি প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে রাশিয়ার ‘সরাসরি জবাব’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর এটিই তাদের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাত, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নজিরবিহীন।’

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ শনিবার স্থানীয় সময় সকাল পর্যন্ত হামলা অব্যাহত ছিল। রাজধানী কিয়েভে প্রায় ১০ ঘণ্টা ধরে চলা বিমান হামলার সতর্কতা স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ২০ মিনিটে প্রত্যাহার করা হয়। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, কিয়েভ ও আশপাশের এলাকায় অন্তত দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে কমপক্ষে ৪৬ জন, যাদের মধ্যে দুটি শিশু রয়েছে।

তবে এ বিষয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা ইউক্রেনারগো জানায়, দেশজুড়ে জ্বালানি অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা হয়েছে। ফলে রাজধানী কিয়েভে জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়েছে।

এই হামলার প্রভাব ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ডেও পড়েছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে দক্ষিণ-পূর্ব পোল্যান্ডের রেশজো ও লুবলিন বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে বিমানবন্দর দুটি আবার চালু করা হয়।

ট্রাম্প-জেলেনস্কি আলোচনার টেবিলে কী আছে

জেলেনস্কি বর্তমানে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো রিসোর্টের উদ্দেশে বিমানে রয়েছেন। এক অডিও বার্তায় তিনি জানান, পথে কানাডায় থামবেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ফোনালাপ করবেন।

এর আগে শুক্রবার কিয়েভে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের যৌথ প্রচেষ্টায় তৈরি হওয়া ২০ দফার শান্তি পরিকল্পনার ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘রোববার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে যুদ্ধ শেষে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ও ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা হবে।’

জেলেনস্কির মতে, যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেবে, সেটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘এটা নির্ভর করবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কী দিতে প্রস্তুত, কখন দিতে প্রস্তুত এবং কত দিনের জন্য।’

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও বলেছেন, এই শান্তি প্রক্রিয়ায় মূল চালিকাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রই। পলিটিকোকে তিনি বলেন, ‘আমার অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত তাঁর (জেলেনস্কির) কিছুই চূড়ান্ত নয়। দেখা যাক, সে কী নিয়ে আসে।’ তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, রোববারের বৈঠক ভালো হবে। তিনি আরও জানান, খুব শিগগির তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও কথা বলতে চান।

দোনেৎস্কের ভবিষ্যৎই এখন মূল প্রশ্ন

মস্কো দাবি করছে, ইউক্রেনকে দোনেৎস্কের একটি বড় ও ঘনবসতিপূর্ণ অংশ থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। এই অঞ্চল রুশ বাহিনী প্রায় চার বছরের যুদ্ধেও পুরোপুরি দখল করতে পারেনি। অন্যদিকে কিয়েভ চায়, বর্তমান ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধ থামানো হোক।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত এক সমঝোতার আওতায়, ইউক্রেনীয় বাহিনী দোনেৎস্কের কিছু এলাকা থেকে সরে গেলে সেখানে একটি মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের কথা রয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনো বিস্তারিত ঠিক হয়নি।

জেলেনস্কি ইঙ্গিত দিয়েছেন, যদি চুক্তিতে বড় ধরনের আঞ্চলিক ছাড় দেওয়ার প্রশ্ন আসে, তবে তিনি তা গণভোটের মাধ্যমে জনগণের কাছে নিয়ে যেতে পারেন। তবে যুদ্ধের এমন পরিস্থিতিতে গণভোট আয়োজন অসম্ভব বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ জানিয়েছেন, কিয়েভের ২০ দফা পরিকল্পনা রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার চেয়ে কিছুটা ভিন্ন, তবে শান্তি প্রক্রিয়ায় একটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’ বা মোড় আসার বিষয়ে তিনি আশাবাদী। এখন সবার নজর রোববার ফ্লোরিডায় হতে যাওয়া ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠকের দিকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গুয়াতেমালায় বাস খাদে পড়ে নিহত অন্তত ১৫, আহত ১৯

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ধারণা করা হচ্ছে, কুয়াশা বা যান্ত্রিক ত্রুটি এ দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।  ছবি: সংগৃহীত
ধারণা করা হচ্ছে, কুয়াশা বা যান্ত্রিক ত্রুটি এ দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

মধ্য আমেরিকার দেশ গুয়াতেমালায় একটি যাত্রীবাহী বাস গভীর খাদে পড়ে অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় ইন্টার-আমেরিকান হাইওয়েতে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে আরও অন্তত ১৯ জন যাত্রী গুরুতর আহত হয়েছেন।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের মুখপাত্র লিয়ান্দ্রো আমাদোর বরাত দিয়ে জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১১ জন পুরুষ, ৩ জন নারী এবং ১টি শিশু রয়েছে।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাসটি গুয়াতেমালা সিটি থেকে মেক্সিকো সীমান্তবর্তী সান মার্কোস বিভাগের দিকে যাচ্ছিল। পথে টোটোনিকাপান বিভাগের ১৭২ থেকে ১৭৪ কিলোমিটারের মধ্যবর্তী এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় ৭৫ মিটার (২৫০ ফুট) গভীর একটি খাদে পড়ে যায়। দুর্ঘটনাস্থলটি ‘আলাস্কা পিক’ নামে পরিচিত। দুর্গম ভূখণ্ড এবং খাড়া ঢালের কারণে এলাকাটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

ধারণা করা হচ্ছে, কুয়াশা বা যান্ত্রিক ত্রুটি এ দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে, তবে সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি।

দেশটির ফায়ার সার্ভিস ডিপার্টমেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুর্ঘটনার কিছু ছবি শেয়ার করেছে। এতে দেখা যায়, দুমড়েমুচড়ে যাওয়া বাসটি থেকে হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করা হচ্ছে।

আহত ১৯ ব্যক্তিকে উদ্ধার করে কাছের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

এদিকে, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে প্রিয়জনদের খোঁজে ঘটনাস্থল ও হাসপাতালগুলোতে ভিড় করছেন স্বজনেরা।

উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের শুরুতেই গুয়াতেমালা সিটির বাইরে একটি বাস খাদে পড়ে ৫০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। বছরের শেষ দিকে এসে আবারও একই ধরনের বড় দুর্ঘটনায় দেশটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত