Ajker Patrika

নির্বাচনী সমঝোতা: জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা নিয়ে টালমাটাল এনসিপি

  • জারার দল থেকে পদত্যাগ, স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা
  • নাহিদকে এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির ৩০ সদস্যের স্মারকলিপি
  • নির্বাচনী সমঝোতার ঘোষণা আসতে পারে আজই
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
তাসনিম জারা। ছবি: সংগৃহীত
তাসনিম জারা। ছবি: সংগৃহীত

জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার সিদ্ধান্তকে ঘিরে জুলাই অভ্যুত্থানের তরুণ যোদ্ধাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে অস্থিরতা তুঙ্গে উঠেছে। দলটির ভেতরের একটি বড় অংশের অভিযোগ, এত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত শুধু নির্বাহী কাউন্সিলের বৈঠকের মাধ্যমে না নিয়ে সাধারণ সভায়ও আলোচনা করার দরকার ছিল। ‘মতামত উপেক্ষিত হওয়ার’ প্রতিবাদে অনেক নেতা-কর্মী পদত্যাগের কথাও ভাবছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

এরই মধ্যে গতকাল ফেসবুক পোস্টে পদত্যাগের কথা জানিয়ে ঢাকা-৯ আসন থেকে স্বতন্ত্র নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা। একই দিন এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির ৩০ জন সদস্য জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচন না করার দাবি জানিয়ে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের কাছে ‘স্মারকলিপি’ দিয়েছেন।

তাসনিম জারার দল থেকে পদত্যাগ

ঢাকা-৯ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের কাছে পদত্যাগপত্রও পাঠিয়েছেন তাসনিম জারা। এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব ও মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উশ সালেহিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তাসনিম জারা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পদত্যাগের কথা জানিয়ে টেক্সট করেছেন। তিনি আহবায়কের কাছে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন।’

নাহিদকে ৩০ নেতার স্মারকলিপি

২৫ ডিসেম্বর দলের নির্বাহী কাউন্সিলের বৈঠকে জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার সিদ্ধান্ত নেয় এনসিপি।

পরদিন গত শুক্রবার রাতে জামায়াত ও এনসিপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বৈঠকে দুই দল একসঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেবে বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে আজ রোববারই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে। তবে এনসিপির পক্ষে এই সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হয়নি বলে অভিযোগ দলের অনেকের। তাঁরা বলছেন, নির্বাহী কাউন্সিলের বৈঠকেও সদস্যদের বড় একটি অংশ অনুপস্থিত ছিলেন। সেখানে অনেকের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে। এতে দলের ভেতরে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে।

গতকাল এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির ৩০ জন সদস্য জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচন না করার দাবি জানিয়ে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। এতে অভিযোগ করা হয়েছে, দলের নির্বাহী কমিটি ও তৃণমূল পর্যায়ে যথেষ্ট আলোচনা ছাড়াই সমঝোতার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা দলীয় গণতন্ত্রের পরিপন্থী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, ২৫ ডিসেম্বর মাত্র কয়েক ঘণ্টার নোটিশে নির্বাহী কাউন্সিলের মিটিং ডাকা হয়। অনেকেই সেদিন ঢাকার বাইরে ছিলেন। অনেকে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে ছিলেন। সব মিলিয়ে ওই বৈঠকে উল্লেখযোগ্য একটি অংশ উপস্থিত থাকতে পারেননি। একটি দলের সঙ্গে নির্বাচনী জোট বা সমঝোতার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত এভাবে নেওয়া যথাযথ নয়।

এনসিপির মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উশ সালেহীন বলেন, জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে দলের ভেতরে অনেকের মতভিন্নতা রয়েছে। সেই ভিন্নমতের কথা দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে জানানো হয়েছে।

এনসিপির নারীনেত্রীদের একটি বড় অংশের মধ্যে জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচন করার বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে। দলের নির্বাহী কাউন্সিলের অন্তত ছয়জন নারী সদস্য আহ্বায়ককে জানিয়েছিলেন, জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ হলে তাঁরা এনসিপির হয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তবে পরে তাঁদের মধ্যে কয়েকজন ‘দলীয় স্বার্থে’ সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছেন বলে জানা গেছে। দলের নারীদের কেউ কেউ আবার জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার পক্ষেও।

দলীয় সূত্র জানায়, এনসিপির নেতা-কর্মীদের বড় একটি অংশ শুরু থেকেই এককভাবে নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে ছিলেন। তবে একটি অংশ সংসদে আসন পাওয়া নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জের বাস্তবতা বিবেচনায় প্রতিষ্ঠিত পুরোনো দল জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এই দুই অবস্থানের টানাপোড়েনেই বর্তমানে দলটিতে এই অস্থিরতা।

মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য দায় স্বীকার করে ক্ষমাপ্রার্থনা এবং নারী বিষয়ে কিছু উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, মূলত এই দুই ইস্যুতে এনসিপির একাংশের মধ্যে জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা নিয়ে দ্বিধা রয়েছে।

এনসিপির শীর্ষ নেতৃত্বের দাবি, দলের বৃহত্তর স্বার্থ এবং সংস্কার বাস্তবায়নের লক্ষ্য সামনে রেখেই জামায়াতের সঙ্গে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তৃণমূল ও মধ্যম সারির নেতাদের একটি অংশ এখনো এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নন।

দলের যুগ্ম সদস্যসচিব আরিফ সোহেল বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থান থেকে উদ্ভূত রাজনৈতিক দল হিসেবে এনসিপির উচিত গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা ও জুলাইয়ে প্রকাশিত নতুন রাজনীতি এবং নতুন বন্দোবস্তের দাবিকে সামনে রেখে এগিয়ে যাওয়া। শুরুতে কিছু সংগ্রাম থাকলেও একসময় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সফল হওয়া সম্ভব হবে। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখেই দলের শীর্ষ নেতৃত্ব চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশা করি।’

জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিকভাবে না হওয়ার অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিকভাবেই নেওয়া হয়েছে। নির্বাহী কাউন্সিলে কোরাম পূর্ণ করে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

‘মাত্র কয়েক ঘণ্টার নোটিশ’ দিয়ে বৈঠকের অভিযোগ বিষয়ে রাসিন বলেন, নির্বাহী কাউন্সিল গঠনের সময় যে নীতি ছিল, সেখানেই বলা হয়েছে, যেকোনো সময় জরুরি সভা ডাকা যাবে।

জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার সিদ্ধান্ত দৃশ্যত চূড়ান্ত হলেও আসনসংখ্যা নিয়ে সমঝোতা চূড়ান্ত নয়। এ বিষয়ে এনসিপির নেতারা বলছেন, সংখ্যাটি এখনো চূড়ান্ত নয়। ৩০টি আসন নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা চলছে। এটা আরও বাড়তেও পারে। এই আসনগুলোতে জামায়াত তাদের প্রার্থী তুলে নেবে।

তাসনিম জারার পদত্যাগ

এমন প্রেক্ষাপটে দল থেকে বেরিয়ে গিয়ে ঢাকা-৯ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা। গতকাল সন্ধ্যায় এক ফেসবুক পোস্টে এসব কথা জানান তিনি।

ফেসবুক পোস্টে তাসনিম জারা ঢাকা-৯-এর আওতাভুক্ত খিলগাঁও, সবুজবাগ ও মুগদাবাসীর সমর্থন কামনা করেছেন। নিজেকে এলাকার মেয়ে হিসেবে উল্লেখ করে তিনি পোস্টে বলেন, ‘আমার স্বপ্ন ছিল একটি রাজনৈতিক দলের প্ল্যাটফর্ম থেকে সংসদে গিয়ে আমার এলাকার মানুষের ও দেশের সেবা করা। তবে বাস্তবিক প্রেক্ষাপটের কারণে আমি কোনো নির্দিষ্ট দল বা জোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

জারা আরও লেখেন, ‘একটা দলের প্রার্থী হলে সেই দলের স্থানীয় অফিস থাকে, সুসংগঠিত কর্মী বাহিনী থাকে। সরকার ও প্রশাসনের সাথে নিরাপত্তা বা অন্যান্য বিষয়ে আপত্তি ও শঙ্কা নিয়ে কথা বলার সুযোগ থাকে। তবে আমি যেহেতু কোনো দলের সাথে থাকছি না, তাই আমার সেসব কিছুই থাকবে না। আমার একমাত্র ভরসা আপনারা।’

জারার পদত্যাগ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, ‘তাসনিম জারা একক সিদ্ধান্তে পদত্যাগ করেছেন। এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য আমার কাছে নেই।’

জামায়াতের কারণে জোটও চাপে

জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতাকে কেন্দ্র করে এনসিপির নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটও ভাঙনের মুখে বলে আভাস পাওয়া গেছে। জোটের তিন দলের অন্যতম রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন বলেছে, তারা কোনো অবস্থাতেই জামায়াতকে নিয়ে নির্বাচন করবে না। দলটির সভাপতি হাসনাত কাইয়ূমসহ নেতারা গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বিএনপি বা জামায়াত কারও সঙ্গেই না গিয়ে তৃতীয় শক্তি গড়ে তোলা ছিল তাদের জোট গঠনের লক্ষ্য। অন্যদিকে এ সমঝোতার খবরে মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র ও অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি হিসেবে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অবস্থান নিয়ে শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।

তবে দলীয় সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, আরেক জোট সদস্য এবি পার্টির জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতায় আপত্তি নেই।

জোটসঙ্গী এবি পার্টি জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার আলোচনায় আছে কি না জানতে চাইলে এনসিপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘আলোচনাটা দলীয়ভাবে হচ্ছে, জোটগতভাবে নয়। এবি পার্টির সঙ্গে জামায়াতের আলাদা আলোচনা চলছে। এবি পার্টি আমাদের আলোচনার অংশীদার নয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খেলাপির তালিকায় নাম: হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আজ আপিল করবেন মান্না

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। ফাইল ছবি
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। ফাইল ছবি

ইসলামী ব্যাংকের ঋণখেলাপির তালিকা থেকে নাম কাটাতে করা রিট আবেদন খারিজের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে আজ রোববার আপিল করবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। নাগরিক ঐক্যের কার্যালয়ে গতকাল শনিবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের বাধা কেটে যাবে।

মান্না বলেন, ২০১০ সালে বগুড়ার শিবগঞ্জে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম নাজমুল কাদির চৌধুরীর সঙ্গে অংশীদারত্বে তিনি ‘আকাফু কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেড’ করেন। ওই বছর তাঁরা ইসলামী ব্যাংকের বড়গোলা শাখা থেকে ২২ কোটি টাকা ঋণ নেন। ২০১২ সাল নাগাদ প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম শুরু করে। এ সময় আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কারণে তৎকালীন সরকারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতি হয়। এই সুযোগে ২০১৪ সাল নাগাদ নাজমুল কাদির ব্যবসার পুরো নিয়ন্ত্রণ নেন। ২০১৫ সালে শেখ হাসিনা সরকার তাঁকে গ্রেপ্তার করে ২২ মাস কারাগারে রাখে।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতির দাবি, নাজমুল কাদির ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করে ব্যবসার আয় দিয়ে আরেকটি কোল্ড স্টোরেজ করেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত তাঁকে শিবগঞ্জে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এরপর নাজমুল কাদির পালিয়ে যান। তিনি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পান। কিন্তু এ সময়ে ঋণের পরিমাণ সুদ-বিলম্বসহ প্রায় ৩৮ কোটি টাকা দাঁড়ায়। তিনি বলেন, কাগজ-কলমে প্রতিষ্ঠানের ৫০ শতাংশ মালিকানা থাকায় ঋণের বোঝা তাঁর ওপর পড়ে। তিনি গত এক বছরে প্রায় ২ কোটি টাকা পরিশোধ করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ইসলামী ব্যাংক ১০ ডিসেম্বর ঋণ পুনঃ তফসিল অনুমোদন করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দিনভর ব্যস্ততা, বিকেলে শ্বশুরবাড়িতে তারেক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

১৭ বছর পর দেশে ফিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল শনিবার তিনি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি, নিজের ছোট ভাই আরাফাত রহমানসহ আরও কয়েকজনের কবর জিয়ারত ও ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির কাজে ব্যস্ত ছিলেন। এসব কাজ শেষে বিকেলে তিনি শ্বশুরের বাসায় যান।

গত বৃহস্পতিবার দেশে এসে রাজধানীর পূর্বাচলে সংবর্ধনা নেন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেখতে যান। পরদিন শুক্রবার বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করেন এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে যান।

গতকাল সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে বের হন তারেক রহমান। এ দিন লাল-সবুজ রঙে সাজানো বাসের পরিবর্তে সাদা রঙের একটি গাড়িতে চেপে প্রথমে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। সেখানে আততায়ীর গুলিতে নিহত জুলাই যোদ্ধা ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির কবর জিয়ারত করেন। হাদির কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে দোয়া ও মোনাজাত করেন। এ সময় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরও কবর জিয়ারত করেন এবং শ্রদ্ধা জানান তারেক রহমান।

সেখান থেকে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনে যান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। সেখানে মেয়ে জাইমা রহমান ও নিজের ভোটার নিবন্ধনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। নির্বাচন কমিশনও আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। নির্বাচন ভবনের পেছনে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ভবনের নিচতলায় একটি কক্ষে গিয়ে ছবি তোলা, দশ আঙুলের ছাপ দেওয়া, আইরিশ (চোখের মণির ছাপ) ও স্বাক্ষর করার কাজ করেন তারেক রহমান। এ সময় নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

তারেক রহমান ও জাইমাকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি আজ রোববার নির্বাচন কমিশনে উপস্থাপন করা হবে। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছেন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। তিনি বলেন, তারেক ও জাইমা ঢাকা-১৭ আসনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছেন।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক (এনআইডি) এ এস এম হুমায়ুন কবীর জানান, তারেক ও জাইমা আগেই অনলাইনে ফরম পূরণ করে রেখেছিলেন। গতকাল কমিশনে উপস্থিত হয়ে বায়োমেট্রিক দিয়েছেন।

ভোটার নিবন্ধনের কাজ শেষ করে বেলা দেড়টার দিকে নির্বাচন কমিশন ভবন ত্যাগ করেন তারেক রহমান। গতকাল ইসির কাজ শেষে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের দেখতে জাতীয় অর্থোপেডিক ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) যাওয়ার কথা ছিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের। তবে বিএনপির মিডিয়া সেল থেকে জানানো হয়, তারেক রহমান পঙ্গু হাসপাতালে যাবেন না।

নির্বাচন কমিশনের কাজ শেষ করে বনানী কবরস্থানে যান তারেক রহমান। সেখানে ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকো ও শ্বশুর সাবেক নৌপ্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের কবর জিয়ারত করেন তিনি। এরপর ঢাকার পিলখানায় হত্যার শিকার সেনা কর্মকর্তাদের কবর জিয়ারত করে গুলশানের বাড়িতে ফিরে যান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। বিকেলে তিনি ধানমন্ডিতে শ্বশুরের বাড়ি মাহবুব ভবনে যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভোটের রাজনীতি: বড় দলে বিলীন ছোটরা

  • দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে তিনটি দলের প্রধান
  • আরও তিন নেতা গেছেন দলের শীর্ষ পদ ছেড়ে
  • রাজনীতিতে মতাদর্শ ফাঁকা বুলি: ইফতেখারুজ্জামান
তানিম আহমেদ, ঢাকা 
ভোটের রাজনীতি: বড় দলে বিলীন ছোটরা

নির্বাচন কমিশনের ভোটের হুইসেল বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে রাজনীতির নানান হিসাবনিকাশ। আসন ছাড়ের নিশ্চয়তা ও জয়ের সম্ভাবনা বাড়াতে কেউ কেউ দল বিলুপ্ত করে, আবার কেউ দলের শীর্ষ পদ ছেড়ে যোগ দিচ্ছেন বড় দলে।

রাজনীতিবিদদের এমন আচরণকে ক্ষমতার দৌড়ে টিকে থাকার অভিনব পন্থা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। অন্যদিকে যোগ দেওয়া নেতারা বলছেন, আদর্শগত মিল ও ভোটের কৌশল বিবেচনায় বড় দলের প্রতীকে নির্বাচন করার জন্যই যোগ দিচ্ছেন তাঁরা।

দেশে ভোটের রাজনীতিতে দলবদল নতুন নয়। নানান সমীকরণে বড় দলগুলো আসন ছাড় দিলেও মাঠপর্যায়ের সাংগঠনিক দুর্বলতা, সীমিত ভোটব্যাংকের কারণে তাঁরা নির্বাচনে কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়েন। অন্যদিকে আগামী সংসদ নির্বাচনের পরে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) ভিত্তিতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে। সে কারণে বড় দলগুলোও আসন ছাড়তে নানান হিসাব কষছে। এ পরিস্থিতিতে বড় দলের ছায়াতলে গিয়ে নির্বাচনী সমীকরণে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার কৌশল বেছে নিচ্ছেন ছোট দলের নেতারা। কিন্তু এটা করতে গিয়ে বিলীন হচ্ছে তাঁদের নিজেদের দলগুলোই।

সম্প্রতি তিনটি অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রধান দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। তাঁরা হলেন, বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ।

আর এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। সর্বশেষ গতকাল শনিবার বিএনপিতে যোগ দেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।

দল বিলুপ্ত করে অন্য দলে যোগদানকে ‘অভিনব’ বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা তো অভিনব। তোরা যে যা বলিস ভাই, আমাদের এমপি হওয়া চাই। যেকোনো মূল্যে, যেকোনো শর্তে। কারণ এমপি হওয়ার সঙ্গে মধু যুক্ত আছে। ক্ষমতার সঙ্গে জাদুর কাঠি যুক্ত।’

যদিও কৌশলগত কারণেই দল থেকে পদত্যাগ করে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন ববি হাজ্জাজ। আজকের পত্রিকাকে তিনি জানান, দুটো কারণে জোটের শরিকেরা ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘নতুন বা ছোট দলের জন্য নিজস্ব প্রতীক পরিচিত করার সময় কম থাকায় ধানের শীষে নির্বাচন করলে জয়ের সম্ভাবনা বাড়ে।

পাশাপাশি নির্বাচনের পর পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম পাঁচ শতাংশ ভোটের শর্ত থাকায় এক বা দুই আসনে নির্বাচন করা দলগুলোর সেই সুযোগ পাওয়া কঠিন।’

ভোটের রাজনীতিতে এত দিন বড় দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিত জোটের ছোট দলের প্রার্থীরা। কিন্তু ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করেছে নির্বাচন কমিশন। সে অনুযায়ী, অন্য দলের সঙ্গে জোট করলেও নিজের দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে প্রার্থীকে।

পুরোনো সুযোগ বহাল রাখার জন্য ইসিতে চিঠি দিয়েছিল বিএনপিসহ তাদের শরিকেরা। কিন্তু কাজ হয়নি। অনড় থাকে ইসি। ফলে ছাড় দেওয়া আসনে ধানের শীষ না থাকলে বিরোধীদের বিজয়ের সম্ভাবনা থাকায় শরিকদের আসন ছাড়ে অনমনীয় হয় বিএনপি। এ কারণে আসন ছাড়ের নিশ্চয়তার জন্যই বিএনপিতে যোগ দিয়ে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন ছোট দলের নেতারা।

কিন্তু এভাবে নিজের দল বিলুপ্ত করে বড় দলে যোগ দেওয়াকে নিন্দনীয় বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আল মাসুদ হাসানুজ্জামান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, জনগণের কাছে তাঁদের যে একটা অঙ্গীকার ছিল, মতাদর্শ ছিল, সেগুলোকে উপেক্ষা করে তাঁরা এমনটা করছেন। তাঁদের সাংগঠনিক দৃঢ়তার অভাবে এমনটা হতে পারে। আবার একধরনের জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন বলেই এ ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন। জনগণ এসব উদ্যোগ পছন্দ করবে না।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সৈয়দ সিরাজুল হুদা জাতীয় দল গঠন করেছিলেন। ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনও করেছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর পরে দলের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন ছেলে সৈয়দ এহসানুল হুদা। তিনি দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে ছাত্রদলের রাজনীতি করতেন। এহসানুল হুদা বলেন, ‘আমার রাজনীতি শুরু বিএনপি থেকে। এখন ঘরের ছেলে ঘরেই ফিরে এলাম। মাঝখানে কিছুটা দিন আমি বাবার দলটা করেছি।’

বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিমের দাবি, নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেই দল বিলুপ্ত করে তিনি বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নেতা-কর্মীরা বলছেন, আমি বিএনপিতে যোগ দিলে তাঁরাও যোগ দেবেন। সবাই আগ্রহ প্রকাশ করায়, আর দলে বিকল্প নেতৃত্ব না থাকায় বিলুপ্ত করেছি।’

জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এসব ঘটনায় অবাক হওয়ার মতো কিছু দেখি না। আমাদের রাজনীতিতে রাজনৈতিক দর্শন বা মতাদর্শ কখনো কাগুজে ফাঁকা বুলির ঊর্ধ্বে উঠতে পারেনি।’

সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের ছয়টি আসনে ছাড় দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদ তিনটি, ওয়ার্কার্স পার্টি দুটি এবং জাতীয় পার্টি (জেপি) একটি আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেছিল। কিন্তু সেখানে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেও হাসানুল হক ইনু, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ফজলে হোসেন বাদশা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। নৌকা নিয়ে রাশেদ খান মেনন ও জাসদের রেজাউল করিম তানসেন বিজয়ী হয়েছিলেন। বাকিটাতেও নৌকা নিয়ে হেরেছিলেন জাসদের প্রার্থী। গত চারটি জাতীয় সংসদে দলগুলোর প্রতিনিধি থাকলেও সাংগঠনিকভাবে শক্তি অর্জন করতে পারেনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার যে ব্যাখ্যা দিলেন আখতার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আখতার হোসেন। ফাইল ছবি
আখতার হোসেন। ফাইল ছবি

জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা বা জোটে যাওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। আজ শনিবার দিবাগত রাতে এনসিপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে আখতারের বক্তব্য তুলে ধরা হয়।

জামায়াতের সঙ্গে জোট বা সমঝোতার ব্যাখ্যা দিয়ে আখতার বলেছেন, ঐকমত্য কমিশনে সংস্কার প্রশ্নে বিএনপির সাথেই অন্য দলগুলোর মতভিন্নতা পরিলক্ষিত হতো। সেখানে সংস্কারের পয়েন্টগুলোতে ন্যাচারালি (স্বাভাবিকভাবেই) এনসিপি, জামায়াত এবং অন্য দলগুলো একমত হয়েছে।

সে ক্ষেত্রে সংস্কারের বিষয়, দেশটাকে নতুন করে গড়া, নতুনভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোকে গড়ে তোলার জন্য যে রাজনীতি, সে রাজনীতির প্রতি যে কমিটমেন্ট সেটাকেই নির্বাচনী রাজনীতিতে জোটের বা সমঝোতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রধানতম বিবেচ্য বিষয় হিসেবে এটাকে মূল্যায়ন করছি।

প্রসঙ্গত, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা নিয়ে এনসিপির অনেক নেতা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। শনিবার কেন্দ্রীয় কমিটির ৩০ নেতা এই জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতায় আপত্তি জানিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে স্মারকলিপি দিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত