Ajker Patrika

ন্যাশনাল ইন্টারেস্টের নিবন্ধ

মুসলিম ব্রাদারহুড নিষিদ্ধের নির্দেশ ট্রাম্পের, নেপথ্যে সুদানকেন্দ্রিক আরব বিশ্বের নয়া ভূরাজনীতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন যে আমেরিকায় মুসলিম ব্রাদারহুডের কিছু চ্যাপটার বা শাখাকে নিষিদ্ধ করবেন এবং সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের অনুরোধে সুদানের গৃহযুদ্ধও শেষ করবেন। এক অদ্ভুত বাক্যে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে সুদান নামে একটা জায়গা আছে।’ সুদান, সন্ত্রাসবাদ আর আমেরিকার ইতিহাস একে অন্যকে ছুঁয়ে আছে নানাভাবেই।

নব্বইয়ের দশকে সুদান ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দেয় এবং সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণ শিবির গড়ে তুলতে সহায়তা করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের প্রশাসন তখন বিন লাদেনকে গ্রেপ্তার বা আঘাত করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়, এর পরপরই তিনি আফগানিস্তানে চলে যান। পাঁচ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তাঁর অনুসারীরা টুইন টাওয়ার ও পেন্টাগনে হামলা চালায়। তিন হাজার নিরপরাধ মানুষ নিহত হয়। পরবর্তী সময়ে এই হামলার জের ধরে ওয়ার অন টেরর বা সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের মূল্য চুকাতে প্রাণ দিতে হয় প্রায় ১০ লাখ মানুষকে।

মুসলিম ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধ করা এবং সুদানের যুদ্ধ বন্ধ করার ঘোষণা দেওয়ার মাধ্যমে মূলত ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র ও তাঁর মিত্রদের নিরাপদ করতে চাইছেন। তিনি সন্ত্রাসবাদের মূল শিকড়েই হাত দিতে যাচ্ছেন। আজকের সুদান আবারও পশ্চিমাবিরোধী শক্তিকে আশ্রয় দিচ্ছে। সুদানের তিনটি বড় ঝুঁকি—অ্যালাইনমেন্ট, অ্যানাইহিলেশন, অ্যালায়েন্স—বোঝার মাধ্যমে ট্রাম্প যুদ্ধ থামাতে পারবেন, আমেরিকাকে নিরাপদ করতে পারবেন, আর আরব ও ইসরায়েলি মিত্রদের জন্য আঞ্চলিক স্থিতি গড়ে তুলতে পারবেন।

প্রায় পাঁচ কোটি মানুষের দেশ সুদানের সীমানা ছুঁয়ে আছে সাতটি দেশ। এর মধ্যে মিসরের সঙ্গে সুদানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সম্পর্ক বিদ্যমান। মিসর থেকেই পঞ্চাশের দশকে মুসলিম ব্রাদারহুডের মতাদর্শ সুদানে ছড়িয়ে পড়ে—যে মতাদর্শ স্থায়ী ধর্মকেন্দ্রিক যুদ্ধ, ইসরায়েলের ধ্বংস এবং রাষ্ট্রে ইসলামি রাজনৈতিক শাসন বাস্তবায়ন করতে চায়।

১৯৮৯ সালে ইসলামি মতাদর্শের সেনা কর্মকর্তা ওমর আল-বশির অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সুদানে ইসলামি সরকার প্রতিষ্ঠা করেন। বশির দেশকে আমেরিকাবিরোধী এক পথে নিয়ে যান। বিন লাদেনকে আশ্রয় দেওয়া ছিল সেই মনোভাবেরই অংশ। বশির ও ব্রাদারহুডের আদর্শবাদীরা নারীদের ওপর কঠোর শরিয়াভিত্তিক আইন চাপিয়ে দেন, যেখানে শাস্তির মধ্যে হাত কেটে দেওয়া বা পাথর ছুড়ে হত্যার মতো বর্বর পদ্ধতিও ছিল। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বশিরের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার পাঁচটি অভিযোগ গঠন করেছে। এই আমেরিকাবিরোধী সরকারকে দুর্বল করতে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তার ফলও মেলে।

২০১৯ সালে বশিরবিরোধী গণ-আন্দোলনের পর আবদাল্লা হামদকের নেতৃত্বে নতুন বেসামরিক সরকার ক্ষমতায় আসে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুদানের সম্পর্ক ঠিক করা এবং বশিরযুগের গভীর রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রভাব শেষ করতে হামদক তিনটি পদক্ষেপ নেন—পুরোনো দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কারাগারে পাঠানো, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য আমেরিকাপন্থী আঞ্চলিক অর্থনৈতিক কেন্দ্র বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলা।

হামদক সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির সবচেয়ে শক্ত প্রমাণ ছিল—বশিরযুগের ইসরায়েলবিরোধী, আমেরিকাবিরোধী আদর্শকে প্রত্যাখ্যান করে ট্রাম্প-উদ্যোগে চালু হওয়া আব্রাহাম অ্যাকর্ডে যোগ দেওয়া। মরক্কো, বাহরাইন ও ইউএই–এর সঙ্গে সুদান ছিল চুক্তির চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ দেশ, যারা ইসরায়েলকে ঘিরে আঞ্চলিক বাস্তবতাকে বদলে দেয়।

কিন্তু পুরোনো ইসলামি ঘাঁটি পাল্টা আঘাত হানে। ২০২১ সালে হামদকের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে এবং তিনি নির্বাসিত হন। সুদান আব্রাহাম অ্যাকর্ড বাস্তবায়ন স্থগিত করে, আর বিন লাদেন-ধারার পুরোনো মতাদর্শ আবার মাথা তোলে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অ্যালাইনমেন্ট ছিল সামরিক বাহিনীর ভেতরে ব্রাদারহুডের শক্ত ঘাঁটির অপছন্দের। অ্যানাইহিলেশন, অর্থাৎ সম্পূর্ণ ধ্বংসের সংস্কৃতি প্রাধান্য পায়।

২০২১ সালের এই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে ছিলেন বর্তমান সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। তিনি নিজেকে সুদানের একক নেতা বলে দাবি করেছিলেন, কিন্তু অনেকেই তাঁকে বশিরের নেটওয়ার্কের খুব কাছের মানুষ হিসেবে দেখতেন। এই বৈধতা-সংকটের সময় মোহাম্মদ দাগালো, যিনি ‘হেমেদতি’ নামে পরিচিত, সুদানি সেনাবাহিনী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) নেতৃত্ব নেন। দুই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আছে। তারা দুজনই অসংখ্য নাগরিক হত্যার দায় বহন করছেন এবং উভয়ই অপর পক্ষকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে চায়। ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনায় এই ধ্বংসাত্মক অভিপ্রায়কে নিষ্ক্রিয় করে যুদ্ধবিরতি আনাই মূল লক্ষ্য। আরএসএফ আগে সহিংসতা থামাতে রাজি হয়েছিল, কিন্তু সুদানের সেনাবাহিনী তথা এসএএফ রাজি হয়নি।

এই ধ্বংসাত্মক মানসিকতা সুদান থেকে ইসরায়েলেও পৌঁছে গেছে। উদাহরণ হিসেবে—সুদানের সঙ্গে ৭ অক্টোবরের হামাস হামলার সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে। হামলার কয়েক দিনের মধ্যেই বাইডেন প্রশাসন সুদানি ব্যবসায়ী আবদেলবাসিত হামজাকে স্পেশালি ডিজাইনেটেড গ্লোবাল টেররিস্ট ঘোষণা করে। কারণ তিনি হামাসের সামরিক কাঠামোর আর্থিক জোগানদাতা ছিলেন। বিস্ময়করভাবে ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর বুরহান তাঁকে কেবল মুক্তই করেননি, বরং পুনর্বাসিতও করেন। তিনি প্রকাশ্যে হামাসের সামরিক শাখা ক্বাসাম ব্রিগেডকে সমর্থন করেন। এই ইউনিটই ৭ অক্টোবরের হামলা চালায়।

আরেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি খলিল আল–হাইয়া, যিনি এখন হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা এবং যিনি দোহায় ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তু। তিনি ৭ অক্টোবর হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ছাত্র এবং উত্তরসূরি। নব্বইয়ের দশকে হাইয়া খার্তুমে পড়াশোনা করেন এবং তখনই আরও ‘উগ্র’ হয়ে ওঠেন। সে সময় সুদান ছিল অঞ্চলের সবচেয়ে শক্তিশালী ইসলামি কেন্দ্রগুলোর একটি। সুদানে কাটানো সময় তাঁকে সেই পুরোনো নেটওয়ার্কের ভেতরের প্রবেশাধিকার দেয়, যা ব্রাদারহুড, বিন লাদেন, হামাস ও সন্ত্রাসী অর্থায়নকে এক সুতোয় গেঁথেছিল। হামাস নেতা খালেদ মেশালও সুদানি পাসপোর্ট পেয়েছিলেন। ২০২১ সালের পর আব্রাহাম অ্যাকর্ড বাস্তবায়ন থমকে যাওয়া মোটেও কাকতালীয় ছিল না। পচন অনেক গভীর।

ইরানের লজিস্টিক ও কূটনৈতিক চ্যানেল এসএএফ–কে সমর্থন দিয়েছে এবং ইয়েমেন থেকে হুতি যোদ্ধাদের সুদানে নিয়ে এসেছে। হুতিরা আমেরিকান জাহাজে হামলা চালিয়েছে, ইসরায়েল ও আমেরিকা ধ্বংসের শপথ নিয়েছে, আর এখন তারা লোহিত সাগরের আরও ওপরের দিকের রুটেও উপস্থিত—যেখানে দিয়ে বিশ্বের ১৫ শতাংশ সামুদ্রিক বাণিজ্য প্রবাহিত হয়।

সুদানের এই অস্থিরতা ইরানের নতুন উর্বর ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে। এই সর্বনাশা মানসিকতা—দেশীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক—এখনই উপড়ে ফেলতে হবে। ট্রাম্পের বিশেষ উপদেষ্টা মাসাদ বুলোস শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন। কিন্তু জেনারেল বুরহান ও সুদানি সেনাবাহিনী যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বুলোসকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে আক্রমণ করছে। কারণ তিনি সুদান থেকে ব্রাদারহুডের প্রভাব সরাতে চাইছেন।

হামদক ইউএই, মরক্কো, বাহরাইন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিলেন আব্রাহাম অ্যাকর্ডকে সমর্থন করতে এবং বশির শাসনব্যবস্থার বিরোধিতা করতে। সুদানের বেসামরিক সরকার পতনের পর শান্তির প্রতি তাঁর আনুগত্যের জন্য ইউএই প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ তাকে আবুধাবিতে সম্মানিত করেন। আনুগত্য গুরুত্বপূর্ণ। ২০২১ সালের অভ্যুত্থান এবং এসএএফ ও আরএসএফ দুপক্ষের ধ্বংসাত্মক মানসিকতা থামিয়ে তাদের অস্ত্রসমর্পণ করতে হবে এবং বেসামরিক সরকারের অধীনে আনতে হবে।

এ ক্ষেত্রে ট্রাম্পের পাশে আছেন হামদক, যিনি সম্প্রতি দুই পক্ষকে অস্ত্র পরিত্যাগ করে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বন্ধুদের সহায়তা চেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্ব দিলে আব্রাহাম অ্যাকর্ডভুক্ত দেশগুলো এবং আরও অনেকে সুদানের পাশে দাঁড়াতে পারে।

ইতিহাসের হুবহু পুনরাবৃত্তি হয় না, কিন্তু ছন্দ মিলিয়ে ফিরে আসে। তিরিশ বছর পর সুদান আবারও সেই প্রাক-৯ / ১১ পরিবেশের ছায়া দেখাচ্ছে, যেখানে হামাস, হুতি এবং তাদের অর্থদাতারা আশ্রয় পায়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ক্লিনটন-যুগের ভুল এড়িয়ে চলছেন। সুদানকে অবিলম্বে বেসামরিক শাসনে ফিরতে হবে, আবদেলবাসিত হামজাকে হস্তান্তর করতে হবে, মুসলিম ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধ করতে হবে এবং অন্য সন্ত্রাসী অর্থদাতাদের হয় দেশ থেকে বহিষ্কার, নয়তো আবার কারাগারে ফেরত পাঠাতে হবে।

যে সুদানি প্রধানমন্ত্রী আমেরিকার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, সমৃদ্ধি চাইতেন এবং আমেরিকা ও ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছিলেন, তিনি আমেরিকা ও আরব মিত্রদের সমর্থন পাওয়ার যোগ্য। এই রোডম্যাপ সুদানকে, আমেরিকাকে, আরব বন্ধুদের এবং ইসরায়েলকে সামনে এগোতে সাহায্য করতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপির আপত্তি তোলা দুই অধ্যাদেশে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন

লন্ডনে চিকিৎসা যাত্রায় খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী ১৪ জন, তালিকায় ছয় চিকিৎসক ও দুই এসএসএফ

ভারতে পা রাখলেন পুতিন, নিয়ম ভেঙে ‘কোলাকুলি’ করলেন মোদি

ঢাকার তিনটিসহ আরও ২৮ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা বাকি থাকল

মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ইউক্রেনে সন্তান এখন আশার প্রতীক। ছবি: রয়টার্স
ইউক্রেনে সন্তান এখন আশার প্রতীক। ছবি: রয়টার্স

দীর্ঘ যুদ্ধ ও ব্যাপক অভিবাসনের কারণে ইউক্রেন ভয়াবহ জনসংখ্যার সংকটে পড়েছে। দেশটির সামনে এখন বড় প্রশ্ন—মানুষই যদি না থাকে, তাহলে যুদ্ধ শেষ হলে দেশ পুনর্গঠনের দায়িত্ব নেবে কারা?

বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে, ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় হশচা শহরের মাতৃত্ব বিভাগ যেন থমকে গেছে। ২০১২ সালেও এই শহরে বছরে চার শতাধিক শিশু জন্ম নিত। অথচ চলতি বছরে মাত্র ১৩৯টি জন্ম রেকর্ড হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে শহরের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ইয়েভহেন হেকেল বলেন, ‘অনেক তরুণ মারা গেছেন, যাঁরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অংশ হওয়ার কথা ছিল।’

২০২২ সালে রাশিয়ার আক্রমণের আগে ইউক্রেনের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৪ কোটি ২০ লাখ। বর্তমানে তা কমে ৩ কোটি ৬০ লাখের নিচে নেমে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে ২০৫১ সালে দেশটির জনসংখ্যা মাত্র আড়াই কোটিতে নেমে আসতে পারে।

এদিকে বিভিন্ন জরিপে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুকের তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেনে এখন একেকটি জন্মের বিপরীতে মৃত্যু হচ্ছে তিনটি। এই মুহূর্তে এটি বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ অনুপাত। যুদ্ধের কারণে দেশটির পুরুষদের গড় আয়ু এখন কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫৭.৩ বছর। নারীদের ক্ষেত্রেও তা ৭৪.৪ থেকে নেমে ৭০.৯ বছরে এসেছে।

হশচা অঞ্চলে এখন স্মৃতি হয়ে আছে বহু তরুণ ও পুরুষের ছবি, যাঁরা যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সাল থেকে এই অঞ্চলের ১৪১ জন যুদ্ধে নিহত হয়েছেন।

এদিকে যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে অনেক পরিবার তাদের সন্তানদের বিদেশে পাঠাচ্ছে। স্কুলগুলো খালি হয়ে যাচ্ছে। হশচার কাছাকাছি সাদোভে গ্রামে শিক্ষার্থী সংখ্যা মাত্র ৯ জনে নেমে আসায় স্কুল বন্ধ করতে হয়েছে।

যুদ্ধের পর দেশ পুনর্গঠন ও প্রতিরক্ষার জন্য ইউক্রেনের লাখো কর্মীর প্রয়োজন হবে। তাই সরকার ২০৪০ সাল পর্যন্ত একটি জনসংখ্যা পুনর্গঠন পরিকল্পনা করেছে। এতে অভিবাসন কমানো, বিদেশে থাকা নাগরিকদের ফিরিয়ে আনা এবং প্রয়োজনে বিদেশি শ্রমিক আকৃষ্ট করার কথা বলা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন—যদি বর্তমান অবস্থা চলতে থাকে তবে ২০৪০ সালেও জনসংখ্যা ২ কোটি ৯০ লাখের নিচে নেমে আসতে পারে।

সারি সারি করে সাজানো ইউক্রেনের হশচা শহরের নিহতদের ছবি: রয়টার্স
সারি সারি করে সাজানো ইউক্রেনের হশচা শহরের নিহতদের ছবি: রয়টার্স

অস্থিতিশীলতা ও ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তাই এখন ইউক্রেনে পরিবার গঠনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হশচার ২১ বছর বয়সী আনাস্তাসিয়া বলেন, ‘এখন পরিবার শুরু করা মানে অস্থির ভবিষ্যৎ। ঘরবাড়ির খরচ বেড়েছে, পরিকল্পনা করা অসম্ভব হয়ে গেছে।’

তবুও সন্তান এক ধরনের আশার প্রতীক। স্থানীয় কর্মকর্তা আনাস্তাসিয়া তাবেকোভা স্বামী যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা অবস্থায়ই সন্তান জন্ম দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যখন জানতে পারলাম, আমি গর্ভবতী, তার কয়েক দিন পরই আমার স্বামীকে ডাকা হয়েছিল।’

আনাস্তাসিয়া আরও বলেন, ‘আমি অনেক স্ত্রীকে জানি যাদের স্বামীরা লড়াই করছে। আমি এমন স্ত্রীদের জানি যাদের স্বামীরা দুর্ভাগ্যবশত আর আমাদের মাঝে নেই। তাদের কেউ কেউ এখন থেরাপিতে আছে, কারও কারও কাছে তাদের সন্তানেরাই আনন্দের মুহূর্ত, হাল না ছাড়ার কারণ।’

ইউক্রেনের এই জনসংখ্যা সংকট এখন শুধু পরিসংখ্যান নয়—এটি যুদ্ধের দীর্ঘ ছায়া, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও তাড়া করে ফিরবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপির আপত্তি তোলা দুই অধ্যাদেশে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন

লন্ডনে চিকিৎসা যাত্রায় খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী ১৪ জন, তালিকায় ছয় চিকিৎসক ও দুই এসএসএফ

ভারতে পা রাখলেন পুতিন, নিয়ম ভেঙে ‘কোলাকুলি’ করলেন মোদি

ঢাকার তিনটিসহ আরও ২৮ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা বাকি থাকল

মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস
ছবি: ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস

যুক্তরাজ্যের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি পাকিস্তান ও বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়ায় সীমাবদ্ধতা আরোপ বা স্থগিত করেছে। ভিসা জটিলতা এবং অভিবাসন নীতির কঠোরতার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।

বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, শিক্ষার্থী ভিসা ব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র দপ্তর। গত সেপ্টেম্বরে কার্যকর হয় যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নতুন ভিসা কমপ্লায়েন্স নীতি। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভিসা স্পনসর করতে হলে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিবছর ‘বেসিক কমপ্লায়েন্স অ্যাসেসমেন্ট’ (বিসিএ) নামের একটি মূল্যায়নে উত্তীর্ণ হতে হয়। এই মূল্যায়নে তিনটি সূচক দেখা হয়। আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার, যুক্তরাজ্যে এসে কোর্সে উপস্থিত না হওয়া এবং মাঝপথে কোর্স ত্যাগের হার।

স্বরাষ্ট্র দপ্তরের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যেন মোট ভিসা আবেদনকারীর ৫ শতাংশের বেশি প্রত্যাখ্যাত না হয়। ইতিপূর্বে এই হার ছিল ১০ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, পাকিস্তানি শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার ১৮ শতাংশ এবং বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে তা ২২ শতাংশ, যা নতুন সীমা থেকে অনেক বেশি।

এই কারণে অন্তত ৯টি বিশ্ববিদ্যালয় এই দুই দেশ থেকে শিক্ষার্থী নিয়োগ স্থগিত বা কমিয়ে দিয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব চেস্টার পাকিস্তান থেকে ভর্তি ২০২৬ সালের শরৎকাল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে। ওভারহ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় পাকিস্তান ও বাংলাদেশ—দুই দেশ থেকেই স্নাতক পর্যায়ের আবেদন বন্ধ করেছে। সান্ডারল্যান্ড এবং কোভেন্ট্রি বিশ্ববিদ্যালয়ও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, এটি শিক্ষার্থী ভিসা ব্যবস্থার ‘বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ’।

গ্লাসগো ক্যালেডোনিয়ান, অক্সফোর্ড ব্রুকস, ইউনিভার্সিটি অব হার্টফোর্ডশায়ারসহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী নিয়োগ নীতিতে সাময়িক পরিবর্তন এনেছে। বেশির ভাগের দাবি, ভিসা প্রক্রিয়ার দীর্ঘ সময়, ভুয়া আবেদন ও নিয়ম লঙ্ঘনের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেতেই এই সিদ্ধান্ত।

যুক্তরাজ্যের অভিবাসন ব্যবস্থায় সাম্প্রতিক সংস্কারের লক্ষ্য হলো ভুয়া আবেদন প্রতিরোধ এবং মোট অভিবাসন কমানো। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে আসা শিক্ষার্থী ভিসাধারীদের মধ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদন বেড়েছে, যা উদ্বেগ তৈরি করেছে।

বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। দেশটির শিক্ষা উপদেষ্টা মরিয়ম আব্বাস এই সিদ্ধান্তকে ‘হৃদয়বিদারক’ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর দাবি, প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থীরা শেষ সময়ে আবেদন বাতিলের কারণে বিপাকে পড়ছেন। তিনি অভিযোগ করেন, কিছু বিদেশি শিক্ষা এজেন্ট শুধু কমিশনের ভিত্তিতে ভর্তি করাতে আগ্রহী, যা ভুয়া আবেদন বাড়াচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নিম্ন টিউশন ফি নির্ভর অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ছাড়া টিকে থাকতে পারবে না। ফলে এই নীতির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব হতে পারে গুরুতর।

ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র অফিস জানিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের গুরুত্ব বোঝে। তবে একই সঙ্গে নিশ্চিত করতে চায়, যারা যুক্তরাজ্যে যাবে—তারা যেন প্রকৃত ও যোগ্য শিক্ষার্থী হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপির আপত্তি তোলা দুই অধ্যাদেশে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন

লন্ডনে চিকিৎসা যাত্রায় খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী ১৪ জন, তালিকায় ছয় চিকিৎসক ও দুই এসএসএফ

ভারতে পা রাখলেন পুতিন, নিয়ম ভেঙে ‘কোলাকুলি’ করলেন মোদি

ঢাকার তিনটিসহ আরও ২৮ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা বাকি থাকল

মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতে পা রাখলেন পুতিন, নিয়ম ভেঙে ‘কোলাকুলি’ করলেন মোদি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: ফাইল ছবি
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: ফাইল ছবি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লি পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে স্বাগত জানান। দুই নেতা করমর্দন, আলিঙ্গন ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এরপর তাঁরা একই গাড়িতে বিমানবন্দর ছাড়েন।

রুশ রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম স্পুটনিক জানিয়েছে, পুতিনকে ব্যক্তিগতভাবে স্বাগত জানিয়ে মোদি প্রটোকল ভেঙেছেন এবং এই আচরণ রুশ পক্ষকে বিস্মিত করেছে। রিপোর্টে বলা হয়, মোদির এই পদক্ষেপ সম্পর্কে রাশিয়াকে আগে জানানো হয়নি। ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপিও এক্সে পোস্ট করে জানিয়েছে, নিয়মের বাইরে গিয়ে মোদি নিজেই বিমানবন্দরে পুতিনকে বরণ করেছেন।

দুই দিনব্যাপী ভারত সফরে পুতিন দশম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নেবেন। আজ রাতেই প্রধানমন্ত্রী মোদির সরকারি বাসভবনে দুই নেতার মধ্যে ব্যক্তিগত ডিনার অনুষ্ঠিত হবে। ডিনার সম্পর্কে অফিশিয়াল তথ্য প্রকাশ না হলেও এটি ঘনিষ্ঠ আলোচনার পরিবেশ তৈরির উদ্দেশ্যে আয়োজন করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আজ সন্ধ্যায় দিল্লি পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে স্বাগত জানান। দুই নেতা করমর্দন, আলিঙ্গন ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আজ সন্ধ্যায় দিল্লি পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে স্বাগত জানান। দুই নেতা করমর্দন, আলিঙ্গন ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

বিমানবন্দর থেকে মোদি ও পুতিন একটি টয়োটা ফর্চুনার গাড়িতে চড়ে রওনা দেন। গাড়িটি মোদি ব্যবহার করেন। উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বরে চীনে অনুষ্ঠিত সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে পুতিন তাঁর সরকারি গাড়িতে মোদিকে যাত্রাসঙ্গী করেছিলেন। সেই সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানির দায়ে দেশটির পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

আগামীকাল শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) পুতিন ও মোদির মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই বৈঠকের কেন্দ্রবিন্দু হবে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিস্তার।

বর্তমানে ভারত ও রাশিয়ার বাণিজ্য সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত রপ্তানি বাড়াতে চাইছে—বিশেষত সামুদ্রিক পণ্য, আলু, ডালিম, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ভোক্তাসামগ্রী ও ওষুধ খাতে।

অন্যদিকে ভারত এখনো রুশ সার আমদানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। প্রতিবছর দেশটি রাশিয়া থেকে তিন থেকে পাঁচ মিলিয়ন টন সার আমদানি করে এবং ভবিষ্যতে এই সহযোগিতা আরও গভীর করার পরিকল্পনা রয়েছে।

এই সফরকে দুই দেশের কৌশলগত সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপির আপত্তি তোলা দুই অধ্যাদেশে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন

লন্ডনে চিকিৎসা যাত্রায় খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী ১৪ জন, তালিকায় ছয় চিকিৎসক ও দুই এসএসএফ

ভারতে পা রাখলেন পুতিন, নিয়ম ভেঙে ‘কোলাকুলি’ করলেন মোদি

ঢাকার তিনটিসহ আরও ২৮ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা বাকি থাকল

মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাশিয়ার ক্ষমতা দেখাতেই গুপ্তচর স্ক্রিপালকে বিষ প্রয়োগে হত্যার নির্দেশ দেন পুতিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কন্যার সঙ্গে গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল। ছবি: দ্য টাইমস
কন্যার সঙ্গে গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল। ছবি: দ্য টাইমস

রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপালকে বিষপ্রয়োগে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন—এমনই বিস্ফোরক তথ্য উঠে এসেছে যুক্তরাজ্যের এক তদন্তে। এতে বলা হয়েছে, এই হামলা ছিল আন্তর্জাতিক মহলে রাশিয়ার ক্ষমতা প্রদর্শনের একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা।

স্ক্রিপাল রুশ সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা জিআরইউ-এর কর্মকর্তা ছিলেন। পরে তিনি গোপনে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থাকে (এমআই-৬) তথ্য সরবরাহ করেন। রাশিয়া বিষয়টি জানতে পারলে ২০০৬ সালে তাঁকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এদিকে ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ধরা পড়া কয়েকজন রুশ গুপ্তচরের বিনিময়ে রাশিয়া পশ্চিমা গোয়েন্দাদের ছেড়ে দেয়। ওই সময়ই একটি উচ্চপর্যায়ের বন্দী বিনিময় চুক্তিতে স্ক্রিপালকে চারজনের সঙ্গে বিনিময় করা হয়।

সেই চুক্তির আওতায় স্ক্রিপালকে সাধারণ ক্ষমা করেন ভ্লাদিমির পুতিন। এরপর তাঁকে যুক্তরাজ্যে স্থানান্তর করা হয় এবং যুক্তরাজ্য তাঁকে নিরাপত্তা, বাসস্থান ও নাগরিক সুরক্ষা প্রদান করে। যুক্তরাজ্যের স্যালিসবেরিতেই তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন।

বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য টাইমস’ জানিয়েছে, ২০১৮ সালের মার্চে যুক্তরাজ্যের স্যালিসবেরিতে সাবেক রুশ গুপ্তচর স্ক্রিপাল ও তাঁর মেয়ে ইউলিয়াকে সামরিক মানের নার্ভ এজেন্ট ‘নোভিচক’ দিয়ে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। এই হামলার চার মাস পর স্থানীয় বাসিন্দা ও ডন স্টারজেস নামে এক নারী ওই জৈব রাসায়নিকের সংস্পর্শে এসে মৃত্যু বরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর তদন্তেই উঠে এসেছে পরিকল্পিত হত্যাচেষ্টার তথ্য।

তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান লর্ড হিউজ অব ওমবার্সলে জানান, এমন ঝুঁকিপূর্ণ আন্তর্জাতিক হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই রাশিয়ার সর্বোচ্চ পর্যায়ের অনুমতি ছাড়া ঘটতে পারে না। তাঁর ভাষায়, এটি ছিল ‘অস্বাভাবিকভাবে বেপরোয়া’ একটি অপারেশন এবং ‘এটির অনুমোদন প্রেসিডেন্ট পুতিনই দিয়েছেন।’

পুতিন স্ক্রিপালকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করায় স্ক্রিপাল নিজে এবং ব্রিটিশ গোয়েন্দারা ভেবেছিলেন তিনি আর লক্ষ্যবস্তু হবেন না। কিন্তু তদন্তে উঠে এসেছে, পুতিন তাঁর পূর্ব প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছিলেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়—এই আক্রমণ ছিল শুধু প্রতিশোধ নয়, বরং আন্তর্জাতিক ও দেশীয়ভাবে এই বার্তা দেওয়ার জন্য যে, রুশ রাষ্ট্র তাদের স্বার্থে কঠোর ও চরম সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

স্ক্রিপালও তদন্তে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে বলেছেন, ‘পুতিনই সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন এবং আমি বিশ্বাস করি তিনিই এই হামলার অনুমতি দিয়েছেন।’

এই হামলার ঘটনায় ব্রিটিশ নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ থাকলেও চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তাদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়, স্ক্রিপালকে সম্পূর্ণ লুকিয়ে নতুন পরিচয় দেওয়া ছাড়া এই হামলা ঠেকানো সম্ভব ছিল না এবং সেই সময়টিতে ঝুঁকি এতটা গুরুতর বলে বিবেচিত হয়নি।

তদন্ত শেষে প্রতিবেদনে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, প্রমাণগুলো অত্যন্ত স্পষ্ট। এই হামলা রুশ রাষ্ট্রের নির্দেশে পরিচালিত হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপির আপত্তি তোলা দুই অধ্যাদেশে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন

লন্ডনে চিকিৎসা যাত্রায় খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী ১৪ জন, তালিকায় ছয় চিকিৎসক ও দুই এসএসএফ

ভারতে পা রাখলেন পুতিন, নিয়ম ভেঙে ‘কোলাকুলি’ করলেন মোদি

ঢাকার তিনটিসহ আরও ২৮ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা বাকি থাকল

মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত