
১৯৮২ সাল। ভারতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে কুষ্ঠরোগ। সে সময় পশ্চিমবঙ্গে কলকাতার স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ক্ষিতীশ চন্দ্র সাহা দুজন রোগীর চিকিৎসা করছিলেন। তাঁদের ত্বকে কালো ছোপ ছোপ ক্ষত দেখা গিয়েছিল। প্রথমে সাহা ধারণা করেছিলেন, এটি কুষ্ঠরোগ। তবে পরে নানা পর্যবেক্ষণে তিনি ভিন্ন এক স্বাস্থ্য সমস্যা আবিষ্কার করেন। তাঁর মতে, এটি ছিল আর্সেনিকোসিস বা আর্সেনিক বিষক্রিয়ার ফল।
ক্ষিতীশ চন্দ্র সাহার এই আবিষ্কার পশ্চিমবঙ্গে ভূগর্ভস্থ পানিতে ব্যাপক আর্সেনিক দূষণ সন্ধানের পথ খুলে দেয়। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) আর্সেনিকোসিসকে ‘মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিষক্রিয়ার ঘটনা’ বলে উল্লেখ করে।
সেই আবিষ্কারের চার দশক পরও, ভারতে আনুমানিক ৯ কোটি এবং বাংলাদেশে আরও ৪ কোটি মানুষ উচ্চমাত্রার আর্সেনিকে দূষিত পানি পান করছে। এত দিনেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি, বরং কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমস্যা আরও প্রকট হতে পারে।
ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে প্রথমবারের মতো ২০০৪ সালে ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়। ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকার সমভূমিতে এই ধাতব উপাদান স্বাভাবিকভাবেই বেশি পাওয়া যায়। কারণ, হিমালয় থেকে নদীটি এই ধাতব পদার্থ বয়ে আনে।
বিজ্ঞানীদের অনুমান, আসামের ৩০টি জেলার মধ্যে ২০ টিতেই ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা প্রতি লিটারে ৫০ মাইক্রোগ্রামের বেশি। যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত সর্বোচ্চ নিরাপদ সীমা ১০ মাইক্রোগ্রাম। অর্থাৎ, প্রতি লিটার পানিতে সর্বোচ্চ এই পরিমাণ আর্সেনিক থাকলে তা সহনীয় বা তুলনামূলক নিরাপদ বলে ধরে নেওয়া হয়।
ব্রিটেনের ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞানী জগন্নাথ বিশ্বকর্মা বলেন, ‘আমরা লাখ লাখ মানুষের কথা বলছি, যারা হিমালয়ের দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে বসবাস করে এবং এই সমস্যার সম্মুখীন।’ তাঁর ব্যাখ্যা অনুসারে, পানি আর্সেনিক দূষণমুক্ত করতে খুব উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজন হয় না। সাধারণ বালু ও লোহার পেরেক দিয়ে তৈরি ফিল্টার ব্যবহার করলেই এটি পানি থেকে সরানো সম্ভব।
ব্রিটিশ এই গবেষক আরও বলেন, ‘তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এ ধরনের ফিল্টার সরবরাহ করা কঠিন। একই সঙ্গে, পর্যাপ্ত সম্পদের অভাবে আসামের ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিক বিস্তারের পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা করা সম্ভব হয়নি, ফলে দূষণের সঠিক মানচিত্র তৈরি করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।’
তবে ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকর্মা ও তাঁর সহকর্মীদের গবেষণার ফলে বিজ্ঞানীরা এখন আরও ভালোভাবে বুঝতে পারছেন, কোথায় এবং কীভাবে বিভিন্ন মাত্রায় ও রূপে আর্সেনিকের বিস্তার ঘটে। পরিবেশে আর্সেনিক প্রধানত দুটি রাসায়নিক যৌগ অবস্থায় থাকে—আর্সেনাইট এবং আর্সেনেট।
বিশ্বকর্মার মেন্টর ও মার্কিন জৈব–রসায়নবিদ জ্যানেট হারিং ২০০৩ সালে প্রথম এই আবিষ্কার করেন। বিশ্বকর্মা বলেন, ‘এটি জানার পর মানুষ বিভিন্ন ধরনের আর্সেনিক দিয়ে দূষিত পানির জন্য ভিন্নভাবে পরিশোধন পদ্ধতি ব্যবহার করতে শুরু করে। এক পদ্ধতি সব জায়গার জন্য কার্যকর নয়, তাই প্রথমে সঠিকভাবে এলাকাভিত্তিক পরীক্ষার মাধ্যমে সমস্যাটি চিহ্নিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
এই গবেষণা আর্সেনিক দূষণ রোধে নতুন কৌশল বিকাশের পথ সুগম করছে, পাশাপাশি এর ভৌগোলিক বিস্তৃতি সম্পর্কে আরও গভীর ধারণা দিচ্ছে। ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকায় অবস্থিত আসামের মতো বাংলাদেশও একই ধরনের ঝুঁকিতে আছে। কারণ, বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র থেকে দুটি নদী—পুরোনো ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা—বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সত্তরের দশকে বাংলাদেশ ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগে প্রচুর শিশুর মৃত্যু হতো। ওই সময় সরকারি উদ্যোগে ইউনিসেফ এবং আরও কিছু সংস্থার সহায়তায় দুই দশকের মধ্যে দেশজুড়ে লাখ লাখ নলকূপ বসানো হয়। এতে দ্রুতই শিশু মৃত্যুর হার কমে। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে এসে জানা যায়, এসব নলকূপের পানিতে বিপুল পরিমাণে আর্সেনিক রয়েছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর আর্সেনিকের বিষক্রিয়া থেকে সৃষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যায় মারা যান অন্তত ৪৩ হাজার মানুষ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আর্সেনিককে মানবদেহের জন্য কার্সিনোজেনিক বা ক্যানসার সৃষ্টিকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং দীর্ঘমেয়াদি সংস্পর্শে থাকার ফলে ক্যানসার, ত্বকের ক্ষত, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের মতো নানা অসংক্রামক রোগ হতে পারে বলে উল্লেখ করেছে।
আসামে জন্মগ্রহণ করা বিশ্বকর্মা বলেন, ‘আমি নিজ চোখে দেখেছি কীভাবে মানুষ প্রতিদিন নিরাপদ পানির জন্য লড়াই করছে। সম্ভবত এ কারণেই আমি পরিবেশ বিজ্ঞানের দিকে ঝুঁকেছি—এটি ছিল আমার খুবই সচেতন একটি সিদ্ধান্ত, কারণ আমি এ বিষয়ে কিছু করতে চেয়েছিলাম।’
বিশ্বকর্মা শিগগির আসামে ফিরে যাচ্ছেন একটি বড় পরিসরের মাঠ গবেষণার জন্য। যেখানে তিনি মাটি থেকে জীবাণু এবং অন্যান্য উপাদানের নমুনা সংগ্রহ করবেন, যা সঠিক পরিশোধন কৌশল ও নীতিমালা নির্ধারণে সহায়তা করতে পারে। তাঁর গবেষণা দূষিত ভূগর্ভস্থ পানির সমস্যায় ভুগতে থাকা অন্যান্য দেশগুলোর ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় আর্সেনিক দূষণ সবচেয়ে প্রকট হলেও, এটি পৃথিবীর বায়ু, পানি এবং ভূমির প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে রয়েছে। ৭০ টিরও বেশি দেশে পানীয় জলে আর্সেনিক দূষণের উপস্থিতি নথিভুক্ত করা হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫০ কোটি মানুষের জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে। চীন, আর্জেন্টিনা, চিলি, মেক্সিকো এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোর পানীয় জলে আর্সেনিকের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে উচ্চ।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) পানি বিশেষজ্ঞ জো আয়ট এবং তাঁর সহকর্মীদের সাম্প্রতিক গবেষণা অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডের ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষ গৃহস্থালির কূপ থেকে পানি ব্যবহার করে, যা আর্সেনিক দ্বারা দূষিত হওয়ার সমূহ শঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশে ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিক শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই ইউনিসেফ কাজ করছে। নিয়মিত নলকূপ পরীক্ষার কাজ চলছে। এ নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডও রয়েছে। তবে পানি থেকে আর্সেনিক আলাদা করার কোনো প্রযুক্তিই এখনো পর্যন্ত তেমন একটা কার্যকরী নয়।
এর একটাই সমাধান, তা হলো গভীর নলকূপ স্থাপন। কিন্তু সবার সামর্থ্যে কুলায় না। ফলে আর্সেনিক ঝুঁকি থাকছেই।
তথ্যসূত্র: ব্রিটিশ বিজ্ঞান সাময়িকী জিওগ্রাফিকাল ইউকে

১৯৮২ সাল। ভারতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে কুষ্ঠরোগ। সে সময় পশ্চিমবঙ্গে কলকাতার স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ক্ষিতীশ চন্দ্র সাহা দুজন রোগীর চিকিৎসা করছিলেন। তাঁদের ত্বকে কালো ছোপ ছোপ ক্ষত দেখা গিয়েছিল। প্রথমে সাহা ধারণা করেছিলেন, এটি কুষ্ঠরোগ। তবে পরে নানা পর্যবেক্ষণে তিনি ভিন্ন এক স্বাস্থ্য সমস্যা আবিষ্কার করেন। তাঁর মতে, এটি ছিল আর্সেনিকোসিস বা আর্সেনিক বিষক্রিয়ার ফল।
ক্ষিতীশ চন্দ্র সাহার এই আবিষ্কার পশ্চিমবঙ্গে ভূগর্ভস্থ পানিতে ব্যাপক আর্সেনিক দূষণ সন্ধানের পথ খুলে দেয়। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) আর্সেনিকোসিসকে ‘মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিষক্রিয়ার ঘটনা’ বলে উল্লেখ করে।
সেই আবিষ্কারের চার দশক পরও, ভারতে আনুমানিক ৯ কোটি এবং বাংলাদেশে আরও ৪ কোটি মানুষ উচ্চমাত্রার আর্সেনিকে দূষিত পানি পান করছে। এত দিনেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি, বরং কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমস্যা আরও প্রকট হতে পারে।
ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে প্রথমবারের মতো ২০০৪ সালে ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়। ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকার সমভূমিতে এই ধাতব উপাদান স্বাভাবিকভাবেই বেশি পাওয়া যায়। কারণ, হিমালয় থেকে নদীটি এই ধাতব পদার্থ বয়ে আনে।
বিজ্ঞানীদের অনুমান, আসামের ৩০টি জেলার মধ্যে ২০ টিতেই ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা প্রতি লিটারে ৫০ মাইক্রোগ্রামের বেশি। যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত সর্বোচ্চ নিরাপদ সীমা ১০ মাইক্রোগ্রাম। অর্থাৎ, প্রতি লিটার পানিতে সর্বোচ্চ এই পরিমাণ আর্সেনিক থাকলে তা সহনীয় বা তুলনামূলক নিরাপদ বলে ধরে নেওয়া হয়।
ব্রিটেনের ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞানী জগন্নাথ বিশ্বকর্মা বলেন, ‘আমরা লাখ লাখ মানুষের কথা বলছি, যারা হিমালয়ের দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে বসবাস করে এবং এই সমস্যার সম্মুখীন।’ তাঁর ব্যাখ্যা অনুসারে, পানি আর্সেনিক দূষণমুক্ত করতে খুব উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজন হয় না। সাধারণ বালু ও লোহার পেরেক দিয়ে তৈরি ফিল্টার ব্যবহার করলেই এটি পানি থেকে সরানো সম্ভব।
ব্রিটিশ এই গবেষক আরও বলেন, ‘তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এ ধরনের ফিল্টার সরবরাহ করা কঠিন। একই সঙ্গে, পর্যাপ্ত সম্পদের অভাবে আসামের ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিক বিস্তারের পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা করা সম্ভব হয়নি, ফলে দূষণের সঠিক মানচিত্র তৈরি করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।’
তবে ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকর্মা ও তাঁর সহকর্মীদের গবেষণার ফলে বিজ্ঞানীরা এখন আরও ভালোভাবে বুঝতে পারছেন, কোথায় এবং কীভাবে বিভিন্ন মাত্রায় ও রূপে আর্সেনিকের বিস্তার ঘটে। পরিবেশে আর্সেনিক প্রধানত দুটি রাসায়নিক যৌগ অবস্থায় থাকে—আর্সেনাইট এবং আর্সেনেট।
বিশ্বকর্মার মেন্টর ও মার্কিন জৈব–রসায়নবিদ জ্যানেট হারিং ২০০৩ সালে প্রথম এই আবিষ্কার করেন। বিশ্বকর্মা বলেন, ‘এটি জানার পর মানুষ বিভিন্ন ধরনের আর্সেনিক দিয়ে দূষিত পানির জন্য ভিন্নভাবে পরিশোধন পদ্ধতি ব্যবহার করতে শুরু করে। এক পদ্ধতি সব জায়গার জন্য কার্যকর নয়, তাই প্রথমে সঠিকভাবে এলাকাভিত্তিক পরীক্ষার মাধ্যমে সমস্যাটি চিহ্নিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
এই গবেষণা আর্সেনিক দূষণ রোধে নতুন কৌশল বিকাশের পথ সুগম করছে, পাশাপাশি এর ভৌগোলিক বিস্তৃতি সম্পর্কে আরও গভীর ধারণা দিচ্ছে। ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকায় অবস্থিত আসামের মতো বাংলাদেশও একই ধরনের ঝুঁকিতে আছে। কারণ, বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র থেকে দুটি নদী—পুরোনো ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা—বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সত্তরের দশকে বাংলাদেশ ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগে প্রচুর শিশুর মৃত্যু হতো। ওই সময় সরকারি উদ্যোগে ইউনিসেফ এবং আরও কিছু সংস্থার সহায়তায় দুই দশকের মধ্যে দেশজুড়ে লাখ লাখ নলকূপ বসানো হয়। এতে দ্রুতই শিশু মৃত্যুর হার কমে। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে এসে জানা যায়, এসব নলকূপের পানিতে বিপুল পরিমাণে আর্সেনিক রয়েছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর আর্সেনিকের বিষক্রিয়া থেকে সৃষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যায় মারা যান অন্তত ৪৩ হাজার মানুষ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আর্সেনিককে মানবদেহের জন্য কার্সিনোজেনিক বা ক্যানসার সৃষ্টিকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং দীর্ঘমেয়াদি সংস্পর্শে থাকার ফলে ক্যানসার, ত্বকের ক্ষত, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের মতো নানা অসংক্রামক রোগ হতে পারে বলে উল্লেখ করেছে।
আসামে জন্মগ্রহণ করা বিশ্বকর্মা বলেন, ‘আমি নিজ চোখে দেখেছি কীভাবে মানুষ প্রতিদিন নিরাপদ পানির জন্য লড়াই করছে। সম্ভবত এ কারণেই আমি পরিবেশ বিজ্ঞানের দিকে ঝুঁকেছি—এটি ছিল আমার খুবই সচেতন একটি সিদ্ধান্ত, কারণ আমি এ বিষয়ে কিছু করতে চেয়েছিলাম।’
বিশ্বকর্মা শিগগির আসামে ফিরে যাচ্ছেন একটি বড় পরিসরের মাঠ গবেষণার জন্য। যেখানে তিনি মাটি থেকে জীবাণু এবং অন্যান্য উপাদানের নমুনা সংগ্রহ করবেন, যা সঠিক পরিশোধন কৌশল ও নীতিমালা নির্ধারণে সহায়তা করতে পারে। তাঁর গবেষণা দূষিত ভূগর্ভস্থ পানির সমস্যায় ভুগতে থাকা অন্যান্য দেশগুলোর ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় আর্সেনিক দূষণ সবচেয়ে প্রকট হলেও, এটি পৃথিবীর বায়ু, পানি এবং ভূমির প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে রয়েছে। ৭০ টিরও বেশি দেশে পানীয় জলে আর্সেনিক দূষণের উপস্থিতি নথিভুক্ত করা হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫০ কোটি মানুষের জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে। চীন, আর্জেন্টিনা, চিলি, মেক্সিকো এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোর পানীয় জলে আর্সেনিকের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে উচ্চ।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) পানি বিশেষজ্ঞ জো আয়ট এবং তাঁর সহকর্মীদের সাম্প্রতিক গবেষণা অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডের ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষ গৃহস্থালির কূপ থেকে পানি ব্যবহার করে, যা আর্সেনিক দ্বারা দূষিত হওয়ার সমূহ শঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশে ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিক শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই ইউনিসেফ কাজ করছে। নিয়মিত নলকূপ পরীক্ষার কাজ চলছে। এ নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডও রয়েছে। তবে পানি থেকে আর্সেনিক আলাদা করার কোনো প্রযুক্তিই এখনো পর্যন্ত তেমন একটা কার্যকরী নয়।
এর একটাই সমাধান, তা হলো গভীর নলকূপ স্থাপন। কিন্তু সবার সামর্থ্যে কুলায় না। ফলে আর্সেনিক ঝুঁকি থাকছেই।
তথ্যসূত্র: ব্রিটিশ বিজ্ঞান সাময়িকী জিওগ্রাফিকাল ইউকে

১৯৮২ সাল। ভারতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে কুষ্ঠরোগ। সে সময় পশ্চিমবঙ্গে কলকাতার স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ক্ষিতীশ চন্দ্র সাহা দুজন রোগীর চিকিৎসা করছিলেন। তাঁদের ত্বকে কালো ছোপ ছোপ ক্ষত দেখা গিয়েছিল। প্রথমে সাহা ধারণা করেছিলেন, এটি কুষ্ঠরোগ। তবে পরে নানা পর্যবেক্ষণে তিনি ভিন্ন এক স্বাস্থ্য সমস্যা আবিষ্কার করেন। তাঁর মতে, এটি ছিল আর্সেনিকোসিস বা আর্সেনিক বিষক্রিয়ার ফল।
ক্ষিতীশ চন্দ্র সাহার এই আবিষ্কার পশ্চিমবঙ্গে ভূগর্ভস্থ পানিতে ব্যাপক আর্সেনিক দূষণ সন্ধানের পথ খুলে দেয়। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) আর্সেনিকোসিসকে ‘মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিষক্রিয়ার ঘটনা’ বলে উল্লেখ করে।
সেই আবিষ্কারের চার দশক পরও, ভারতে আনুমানিক ৯ কোটি এবং বাংলাদেশে আরও ৪ কোটি মানুষ উচ্চমাত্রার আর্সেনিকে দূষিত পানি পান করছে। এত দিনেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি, বরং কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমস্যা আরও প্রকট হতে পারে।
ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে প্রথমবারের মতো ২০০৪ সালে ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়। ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকার সমভূমিতে এই ধাতব উপাদান স্বাভাবিকভাবেই বেশি পাওয়া যায়। কারণ, হিমালয় থেকে নদীটি এই ধাতব পদার্থ বয়ে আনে।
বিজ্ঞানীদের অনুমান, আসামের ৩০টি জেলার মধ্যে ২০ টিতেই ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা প্রতি লিটারে ৫০ মাইক্রোগ্রামের বেশি। যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত সর্বোচ্চ নিরাপদ সীমা ১০ মাইক্রোগ্রাম। অর্থাৎ, প্রতি লিটার পানিতে সর্বোচ্চ এই পরিমাণ আর্সেনিক থাকলে তা সহনীয় বা তুলনামূলক নিরাপদ বলে ধরে নেওয়া হয়।
ব্রিটেনের ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞানী জগন্নাথ বিশ্বকর্মা বলেন, ‘আমরা লাখ লাখ মানুষের কথা বলছি, যারা হিমালয়ের দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে বসবাস করে এবং এই সমস্যার সম্মুখীন।’ তাঁর ব্যাখ্যা অনুসারে, পানি আর্সেনিক দূষণমুক্ত করতে খুব উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজন হয় না। সাধারণ বালু ও লোহার পেরেক দিয়ে তৈরি ফিল্টার ব্যবহার করলেই এটি পানি থেকে সরানো সম্ভব।
ব্রিটিশ এই গবেষক আরও বলেন, ‘তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এ ধরনের ফিল্টার সরবরাহ করা কঠিন। একই সঙ্গে, পর্যাপ্ত সম্পদের অভাবে আসামের ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিক বিস্তারের পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা করা সম্ভব হয়নি, ফলে দূষণের সঠিক মানচিত্র তৈরি করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।’
তবে ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকর্মা ও তাঁর সহকর্মীদের গবেষণার ফলে বিজ্ঞানীরা এখন আরও ভালোভাবে বুঝতে পারছেন, কোথায় এবং কীভাবে বিভিন্ন মাত্রায় ও রূপে আর্সেনিকের বিস্তার ঘটে। পরিবেশে আর্সেনিক প্রধানত দুটি রাসায়নিক যৌগ অবস্থায় থাকে—আর্সেনাইট এবং আর্সেনেট।
বিশ্বকর্মার মেন্টর ও মার্কিন জৈব–রসায়নবিদ জ্যানেট হারিং ২০০৩ সালে প্রথম এই আবিষ্কার করেন। বিশ্বকর্মা বলেন, ‘এটি জানার পর মানুষ বিভিন্ন ধরনের আর্সেনিক দিয়ে দূষিত পানির জন্য ভিন্নভাবে পরিশোধন পদ্ধতি ব্যবহার করতে শুরু করে। এক পদ্ধতি সব জায়গার জন্য কার্যকর নয়, তাই প্রথমে সঠিকভাবে এলাকাভিত্তিক পরীক্ষার মাধ্যমে সমস্যাটি চিহ্নিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
এই গবেষণা আর্সেনিক দূষণ রোধে নতুন কৌশল বিকাশের পথ সুগম করছে, পাশাপাশি এর ভৌগোলিক বিস্তৃতি সম্পর্কে আরও গভীর ধারণা দিচ্ছে। ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকায় অবস্থিত আসামের মতো বাংলাদেশও একই ধরনের ঝুঁকিতে আছে। কারণ, বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র থেকে দুটি নদী—পুরোনো ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা—বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সত্তরের দশকে বাংলাদেশ ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগে প্রচুর শিশুর মৃত্যু হতো। ওই সময় সরকারি উদ্যোগে ইউনিসেফ এবং আরও কিছু সংস্থার সহায়তায় দুই দশকের মধ্যে দেশজুড়ে লাখ লাখ নলকূপ বসানো হয়। এতে দ্রুতই শিশু মৃত্যুর হার কমে। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে এসে জানা যায়, এসব নলকূপের পানিতে বিপুল পরিমাণে আর্সেনিক রয়েছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর আর্সেনিকের বিষক্রিয়া থেকে সৃষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যায় মারা যান অন্তত ৪৩ হাজার মানুষ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আর্সেনিককে মানবদেহের জন্য কার্সিনোজেনিক বা ক্যানসার সৃষ্টিকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং দীর্ঘমেয়াদি সংস্পর্শে থাকার ফলে ক্যানসার, ত্বকের ক্ষত, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের মতো নানা অসংক্রামক রোগ হতে পারে বলে উল্লেখ করেছে।
আসামে জন্মগ্রহণ করা বিশ্বকর্মা বলেন, ‘আমি নিজ চোখে দেখেছি কীভাবে মানুষ প্রতিদিন নিরাপদ পানির জন্য লড়াই করছে। সম্ভবত এ কারণেই আমি পরিবেশ বিজ্ঞানের দিকে ঝুঁকেছি—এটি ছিল আমার খুবই সচেতন একটি সিদ্ধান্ত, কারণ আমি এ বিষয়ে কিছু করতে চেয়েছিলাম।’
বিশ্বকর্মা শিগগির আসামে ফিরে যাচ্ছেন একটি বড় পরিসরের মাঠ গবেষণার জন্য। যেখানে তিনি মাটি থেকে জীবাণু এবং অন্যান্য উপাদানের নমুনা সংগ্রহ করবেন, যা সঠিক পরিশোধন কৌশল ও নীতিমালা নির্ধারণে সহায়তা করতে পারে। তাঁর গবেষণা দূষিত ভূগর্ভস্থ পানির সমস্যায় ভুগতে থাকা অন্যান্য দেশগুলোর ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় আর্সেনিক দূষণ সবচেয়ে প্রকট হলেও, এটি পৃথিবীর বায়ু, পানি এবং ভূমির প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে রয়েছে। ৭০ টিরও বেশি দেশে পানীয় জলে আর্সেনিক দূষণের উপস্থিতি নথিভুক্ত করা হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫০ কোটি মানুষের জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে। চীন, আর্জেন্টিনা, চিলি, মেক্সিকো এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোর পানীয় জলে আর্সেনিকের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে উচ্চ।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) পানি বিশেষজ্ঞ জো আয়ট এবং তাঁর সহকর্মীদের সাম্প্রতিক গবেষণা অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডের ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষ গৃহস্থালির কূপ থেকে পানি ব্যবহার করে, যা আর্সেনিক দ্বারা দূষিত হওয়ার সমূহ শঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশে ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিক শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই ইউনিসেফ কাজ করছে। নিয়মিত নলকূপ পরীক্ষার কাজ চলছে। এ নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডও রয়েছে। তবে পানি থেকে আর্সেনিক আলাদা করার কোনো প্রযুক্তিই এখনো পর্যন্ত তেমন একটা কার্যকরী নয়।
এর একটাই সমাধান, তা হলো গভীর নলকূপ স্থাপন। কিন্তু সবার সামর্থ্যে কুলায় না। ফলে আর্সেনিক ঝুঁকি থাকছেই।
তথ্যসূত্র: ব্রিটিশ বিজ্ঞান সাময়িকী জিওগ্রাফিকাল ইউকে

১৯৮২ সাল। ভারতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে কুষ্ঠরোগ। সে সময় পশ্চিমবঙ্গে কলকাতার স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ক্ষিতীশ চন্দ্র সাহা দুজন রোগীর চিকিৎসা করছিলেন। তাঁদের ত্বকে কালো ছোপ ছোপ ক্ষত দেখা গিয়েছিল। প্রথমে সাহা ধারণা করেছিলেন, এটি কুষ্ঠরোগ। তবে পরে নানা পর্যবেক্ষণে তিনি ভিন্ন এক স্বাস্থ্য সমস্যা আবিষ্কার করেন। তাঁর মতে, এটি ছিল আর্সেনিকোসিস বা আর্সেনিক বিষক্রিয়ার ফল।
ক্ষিতীশ চন্দ্র সাহার এই আবিষ্কার পশ্চিমবঙ্গে ভূগর্ভস্থ পানিতে ব্যাপক আর্সেনিক দূষণ সন্ধানের পথ খুলে দেয়। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) আর্সেনিকোসিসকে ‘মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিষক্রিয়ার ঘটনা’ বলে উল্লেখ করে।
সেই আবিষ্কারের চার দশক পরও, ভারতে আনুমানিক ৯ কোটি এবং বাংলাদেশে আরও ৪ কোটি মানুষ উচ্চমাত্রার আর্সেনিকে দূষিত পানি পান করছে। এত দিনেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি, বরং কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমস্যা আরও প্রকট হতে পারে।
ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে প্রথমবারের মতো ২০০৪ সালে ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়। ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকার সমভূমিতে এই ধাতব উপাদান স্বাভাবিকভাবেই বেশি পাওয়া যায়। কারণ, হিমালয় থেকে নদীটি এই ধাতব পদার্থ বয়ে আনে।
বিজ্ঞানীদের অনুমান, আসামের ৩০টি জেলার মধ্যে ২০ টিতেই ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা প্রতি লিটারে ৫০ মাইক্রোগ্রামের বেশি। যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত সর্বোচ্চ নিরাপদ সীমা ১০ মাইক্রোগ্রাম। অর্থাৎ, প্রতি লিটার পানিতে সর্বোচ্চ এই পরিমাণ আর্সেনিক থাকলে তা সহনীয় বা তুলনামূলক নিরাপদ বলে ধরে নেওয়া হয়।
ব্রিটেনের ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞানী জগন্নাথ বিশ্বকর্মা বলেন, ‘আমরা লাখ লাখ মানুষের কথা বলছি, যারা হিমালয়ের দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে বসবাস করে এবং এই সমস্যার সম্মুখীন।’ তাঁর ব্যাখ্যা অনুসারে, পানি আর্সেনিক দূষণমুক্ত করতে খুব উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজন হয় না। সাধারণ বালু ও লোহার পেরেক দিয়ে তৈরি ফিল্টার ব্যবহার করলেই এটি পানি থেকে সরানো সম্ভব।
ব্রিটিশ এই গবেষক আরও বলেন, ‘তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এ ধরনের ফিল্টার সরবরাহ করা কঠিন। একই সঙ্গে, পর্যাপ্ত সম্পদের অভাবে আসামের ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিক বিস্তারের পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা করা সম্ভব হয়নি, ফলে দূষণের সঠিক মানচিত্র তৈরি করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।’
তবে ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকর্মা ও তাঁর সহকর্মীদের গবেষণার ফলে বিজ্ঞানীরা এখন আরও ভালোভাবে বুঝতে পারছেন, কোথায় এবং কীভাবে বিভিন্ন মাত্রায় ও রূপে আর্সেনিকের বিস্তার ঘটে। পরিবেশে আর্সেনিক প্রধানত দুটি রাসায়নিক যৌগ অবস্থায় থাকে—আর্সেনাইট এবং আর্সেনেট।
বিশ্বকর্মার মেন্টর ও মার্কিন জৈব–রসায়নবিদ জ্যানেট হারিং ২০০৩ সালে প্রথম এই আবিষ্কার করেন। বিশ্বকর্মা বলেন, ‘এটি জানার পর মানুষ বিভিন্ন ধরনের আর্সেনিক দিয়ে দূষিত পানির জন্য ভিন্নভাবে পরিশোধন পদ্ধতি ব্যবহার করতে শুরু করে। এক পদ্ধতি সব জায়গার জন্য কার্যকর নয়, তাই প্রথমে সঠিকভাবে এলাকাভিত্তিক পরীক্ষার মাধ্যমে সমস্যাটি চিহ্নিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
এই গবেষণা আর্সেনিক দূষণ রোধে নতুন কৌশল বিকাশের পথ সুগম করছে, পাশাপাশি এর ভৌগোলিক বিস্তৃতি সম্পর্কে আরও গভীর ধারণা দিচ্ছে। ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকায় অবস্থিত আসামের মতো বাংলাদেশও একই ধরনের ঝুঁকিতে আছে। কারণ, বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র থেকে দুটি নদী—পুরোনো ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা—বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সত্তরের দশকে বাংলাদেশ ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগে প্রচুর শিশুর মৃত্যু হতো। ওই সময় সরকারি উদ্যোগে ইউনিসেফ এবং আরও কিছু সংস্থার সহায়তায় দুই দশকের মধ্যে দেশজুড়ে লাখ লাখ নলকূপ বসানো হয়। এতে দ্রুতই শিশু মৃত্যুর হার কমে। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে এসে জানা যায়, এসব নলকূপের পানিতে বিপুল পরিমাণে আর্সেনিক রয়েছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর আর্সেনিকের বিষক্রিয়া থেকে সৃষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যায় মারা যান অন্তত ৪৩ হাজার মানুষ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আর্সেনিককে মানবদেহের জন্য কার্সিনোজেনিক বা ক্যানসার সৃষ্টিকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং দীর্ঘমেয়াদি সংস্পর্শে থাকার ফলে ক্যানসার, ত্বকের ক্ষত, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের মতো নানা অসংক্রামক রোগ হতে পারে বলে উল্লেখ করেছে।
আসামে জন্মগ্রহণ করা বিশ্বকর্মা বলেন, ‘আমি নিজ চোখে দেখেছি কীভাবে মানুষ প্রতিদিন নিরাপদ পানির জন্য লড়াই করছে। সম্ভবত এ কারণেই আমি পরিবেশ বিজ্ঞানের দিকে ঝুঁকেছি—এটি ছিল আমার খুবই সচেতন একটি সিদ্ধান্ত, কারণ আমি এ বিষয়ে কিছু করতে চেয়েছিলাম।’
বিশ্বকর্মা শিগগির আসামে ফিরে যাচ্ছেন একটি বড় পরিসরের মাঠ গবেষণার জন্য। যেখানে তিনি মাটি থেকে জীবাণু এবং অন্যান্য উপাদানের নমুনা সংগ্রহ করবেন, যা সঠিক পরিশোধন কৌশল ও নীতিমালা নির্ধারণে সহায়তা করতে পারে। তাঁর গবেষণা দূষিত ভূগর্ভস্থ পানির সমস্যায় ভুগতে থাকা অন্যান্য দেশগুলোর ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় আর্সেনিক দূষণ সবচেয়ে প্রকট হলেও, এটি পৃথিবীর বায়ু, পানি এবং ভূমির প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে রয়েছে। ৭০ টিরও বেশি দেশে পানীয় জলে আর্সেনিক দূষণের উপস্থিতি নথিভুক্ত করা হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫০ কোটি মানুষের জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে। চীন, আর্জেন্টিনা, চিলি, মেক্সিকো এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোর পানীয় জলে আর্সেনিকের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে উচ্চ।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) পানি বিশেষজ্ঞ জো আয়ট এবং তাঁর সহকর্মীদের সাম্প্রতিক গবেষণা অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডের ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষ গৃহস্থালির কূপ থেকে পানি ব্যবহার করে, যা আর্সেনিক দ্বারা দূষিত হওয়ার সমূহ শঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশে ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিক শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই ইউনিসেফ কাজ করছে। নিয়মিত নলকূপ পরীক্ষার কাজ চলছে। এ নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডও রয়েছে। তবে পানি থেকে আর্সেনিক আলাদা করার কোনো প্রযুক্তিই এখনো পর্যন্ত তেমন একটা কার্যকরী নয়।
এর একটাই সমাধান, তা হলো গভীর নলকূপ স্থাপন। কিন্তু সবার সামর্থ্যে কুলায় না। ফলে আর্সেনিক ঝুঁকি থাকছেই।
তথ্যসূত্র: ব্রিটিশ বিজ্ঞান সাময়িকী জিওগ্রাফিকাল ইউকে

শীতের সকাল কিংবা সন্ধ্যায় ধোঁয়া ওঠা এক বাটি খিচুড়ির চেয়ে আরামদায়ক আর কী হতে পারে। খিচুড়ি শুধু একটি খাবার নয়। শীতকাল মানে আরাম করে হরেক রকমের সবজি দিয়ে রান্না করা খিচুড়ি খাওয়া। এতে যেমন মন ভরে, তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর এ খাবার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
১৪ ঘণ্টা আগে
তেজপাতা ও লবঙ্গ—উভয়ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এতে রয়েছে শক্তিশালী প্রদাহবিরোধী ও ব্যাকটেরিয়ারোধী গুণাবলি, যা শরীরের ভেতরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম। তবে এই চা সাধারণত সবার জন্য নিরাপদ হলেও গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের এটি পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
১৫ ঘণ্টা আগে
ঘুমের ঘোরে হাঁটার কথা আমরা অনেকে শুনেছি। কিন্তু ঘুমের ঘোরে খাওয়ার কথা কি শুনেছেন? চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় স্লিপ-রিলেটেড ইটিং ডিসঅর্ডার। এই উড়িয়ে দেওয়ার মতো ছোট ঘটনা একটি জটিল স্বাস্থ্যগত সমস্যা। এটি আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তার পরিবারের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
১৬ ঘণ্টা আগে
দীর্ঘদিনের শুকনো কাশি একটি বিরক্তিকর সমস্যা। অনেক সময় সাধারণ সর্দি-জ্বরের পরেও সপ্তাহের পর সপ্তাহ কিংবা কখনো মাসের পর মাস স্থায়ী হতে পারে এ ধরনের কাশি। ফলে দৈনন্দিন কাজে অস্বস্তি, ঘুমের ব্যাঘাত, মানসিক চাপ ও কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি দেখা দেয়।
১৬ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক

শীতের সকাল কিংবা সন্ধ্যায় ধোঁয়া ওঠা এক বাটি খিচুড়ির চেয়ে আরামদায়ক আর কী হতে পারে। খিচুড়ি শুধু একটি খাবার নয়। শীতকাল মানে আরাম করে হরেক রকমের সবজি দিয়ে রান্না করা খিচুড়ি খাওয়া। এতে যেমন মন ভরে, তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর এ খাবার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। এ ছাড়া এটি শরীরে বিভিন্ন উপাদানের ভারসাম্য বজায় রাখতেও সহায়ক। শীতকালীন ক্লান্তি দূর করতে এবং ঋতু পরিবর্তনের অসুস্থতা থেকে বাঁচতে খিচুড়ি একটি আদর্শ খাবার। এটি সহজে হজম হয়।
পুষ্টিবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী, খিচুড়ির প্রতিটি উপাদান আমাদের শরীরের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। এতে থাকা চাল থেকে পাওয়া যায় পর্যাপ্ত শর্করা ও শক্তি। ডাল জোগায় প্রোটিন ও আঁশ, যা হজমে বিশেষভাবে সাহায্য করে। ঘি শরীরের তাপমাত্রা ধরে রাখতে এবং পুষ্টি শোষণে সহায়ক। হলুদে থাকা কারকিউমিন ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে এবং আদা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীর উষ্ণ রাখে। খিচুড়িতে সবজি যোগ করলে আঁশের মাত্রা বাড়ে। গোলমরিচ ও জিরার মতো মসলা বিপাক প্রক্রিয়া উন্নত করে। এ ছাড়া সাবুদানার খিচুড়ি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এ ছাড়া এটি তাৎক্ষণিক শক্তি জোগাতে কার্যকর।

চাল ও মুগ ডালের মিশেলে তৈরি এই খিচুড়ি যেমন সহজপাচ্য, তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। এর বিশেষত্বের চাবিকাঠি লুকিয়ে রয়েছে মসলায়। একেবারে হলুদ, লবণ, জিরা অথবা ধনেগুঁড়ার মতো সাধারণ কিছু মসলা দিয়ে এটি রান্না করা হয়। এটা রান্নার সময় মুগ ডালের সঙ্গে চালও ভেজে নিতে পারেন। এতে মুগ ডালের একটা ভিন্ন গন্ধ পাওয়া যাবে। হলুদের পরিবর্তে এতে ব্যবহার করতে পারেন সবুজ মুগডাল।
উপকারিতা: শরীর উষ্ণ রাখে এবং দীর্ঘক্ষণ শক্তি জোগায়।

গাজর, মটরশুঁটি, ফুলকপি, আলু, টমেটো ইত্যাদি শীতের সবজি দিয়ে তৈরি রান্না করা সবজি খিচুড়ি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। এর সঙ্গে শীতে পাওয়া যায় এমন প্রায় সব শাক ও সবজি যোগ করতে হবে। সবজিগুলো ছোট টুকরা করে কেটে নিতে হবে।
যে সবজিগুলো সেদ্ধ হতে বেশি সময় নেয়, সেগুলো আগে ভেজে নিন অথবা প্রেশার কুকারে দিন। এরপর তেল বা ঘিতে জিরা, তেজপাতা ও অন্যান্য মসলা দিয়ে পেঁয়াজ, আদা, রসুন ভাজার পর সবজিগুলো হালকা ভেজে নিন। ভেজে রাখা সবজি, চাল, ডাল ও পানি দিয়ে প্রেশার কুকারে বা হাঁড়িতে রান্না করুন। নরম খিচুড়ি চাইলে পানি বেশি দিতে পারেন। শেষ মুহূর্তে পালংসহ অন্য নরম শাক এতে যোগ করতে পারেন।
উপকারিতা: এটি অন্যান্য উপকারের সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং দ্রুত শক্তি পুনরুদ্ধার করে।

ঠান্ডা পাহাড়ি অঞ্চলে শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে এই খিচুড়ি অত্যন্ত জনপ্রিয়। চাল, মাষকলাইয়ের ডাল এবং তিল এর প্রধান উপকরণ। রান্নার আগে চাল ও ডাল ভিজিয়ে রাখা হয়। তিল হালকা ভেজে গুঁড়া করে নেওয়া হয়। তিল থেকে পাওয়া স্বাস্থ্যকর চর্বি ও খনিজ উপাদান শীতের দিনে শরীরের জন্য খুবই উপকারী। জিরা, হিং, হলুদ এবং লাল মরিচ গুঁড়ার সুগন্ধি মিশ্রণ এতে অনন্য স্বাদ যোগ করে। খাঁটি ঘি অথবা তেল-মসলার ফোড়ন দিয়ে এটি রান্না করা হয়। প্রোটিন, চর্বি এবং মিনারেলসমৃদ্ধ এই খাবার শীত জয়ের এক অমোঘ হাতিয়ার হতে পারে।
উপকারিতা: এটি শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি জোগানোর পাশাপাশি দীর্ঘক্ষণ শরীর গরম রাখতে সাহায্য করে।

সচরাচর খাওয়া হয় এমন কোনো খিচুড়ি খেতে না চাইলে রান্না করতে পারেন আমলকী খিচুড়ি। এটি কোনো সাধারণ খাবার নয়। এ খিচুড়ি রান্না করা হয় চাল, খোসা ছাড়ানো কালো মাষকলাইয়ের ডাল এবং তাজা আমলকী দিয়ে। নরম ধরনের এ খিচুড়ির স্বাদ ও সুগন্ধ বাড়াতে রান্নায় জিরা, হিং, হলুদ ও লাল মরিচের গুঁড়া ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো এতে রাজকীয় স্বাদ যোগ করবে। সবশেষে ঘি বা তেলের সুগন্ধি ফোড়ন এই খিচুড়িকে করে তোলে আরও সুস্বাদু। কেউ চাইলে এই খিচুড়ির পুষ্টিমান আরও বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের ঋতুভিত্তিক সবজি যোগ করতে পারেন। শীতের এই উৎসবের দিনগুলোতে শরীর সতেজ রাখতে এবং রসনা তৃপ্তিতে আমলকী খিচুড়ি হতে পারে আপনার সেরা পছন্দ।
উপকারিতা: এটি শরীরে শক্তি জোগানোর পাশাপাশি হজমশক্তি এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। এ ছাড়া শরীর ডিটক্সে সহায়তা করে, হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয়, গ্যাস্ট্রিক কমায়, কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায় এবং ওজন কমাতে সহায়ক।

শীতের সকাল কিংবা সন্ধ্যায় ধোঁয়া ওঠা এক বাটি খিচুড়ির চেয়ে আরামদায়ক আর কী হতে পারে। খিচুড়ি শুধু একটি খাবার নয়। শীতকাল মানে আরাম করে হরেক রকমের সবজি দিয়ে রান্না করা খিচুড়ি খাওয়া। এতে যেমন মন ভরে, তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর এ খাবার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। এ ছাড়া এটি শরীরে বিভিন্ন উপাদানের ভারসাম্য বজায় রাখতেও সহায়ক। শীতকালীন ক্লান্তি দূর করতে এবং ঋতু পরিবর্তনের অসুস্থতা থেকে বাঁচতে খিচুড়ি একটি আদর্শ খাবার। এটি সহজে হজম হয়।
পুষ্টিবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী, খিচুড়ির প্রতিটি উপাদান আমাদের শরীরের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। এতে থাকা চাল থেকে পাওয়া যায় পর্যাপ্ত শর্করা ও শক্তি। ডাল জোগায় প্রোটিন ও আঁশ, যা হজমে বিশেষভাবে সাহায্য করে। ঘি শরীরের তাপমাত্রা ধরে রাখতে এবং পুষ্টি শোষণে সহায়ক। হলুদে থাকা কারকিউমিন ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে এবং আদা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীর উষ্ণ রাখে। খিচুড়িতে সবজি যোগ করলে আঁশের মাত্রা বাড়ে। গোলমরিচ ও জিরার মতো মসলা বিপাক প্রক্রিয়া উন্নত করে। এ ছাড়া সাবুদানার খিচুড়ি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এ ছাড়া এটি তাৎক্ষণিক শক্তি জোগাতে কার্যকর।

চাল ও মুগ ডালের মিশেলে তৈরি এই খিচুড়ি যেমন সহজপাচ্য, তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। এর বিশেষত্বের চাবিকাঠি লুকিয়ে রয়েছে মসলায়। একেবারে হলুদ, লবণ, জিরা অথবা ধনেগুঁড়ার মতো সাধারণ কিছু মসলা দিয়ে এটি রান্না করা হয়। এটা রান্নার সময় মুগ ডালের সঙ্গে চালও ভেজে নিতে পারেন। এতে মুগ ডালের একটা ভিন্ন গন্ধ পাওয়া যাবে। হলুদের পরিবর্তে এতে ব্যবহার করতে পারেন সবুজ মুগডাল।
উপকারিতা: শরীর উষ্ণ রাখে এবং দীর্ঘক্ষণ শক্তি জোগায়।

গাজর, মটরশুঁটি, ফুলকপি, আলু, টমেটো ইত্যাদি শীতের সবজি দিয়ে তৈরি রান্না করা সবজি খিচুড়ি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। এর সঙ্গে শীতে পাওয়া যায় এমন প্রায় সব শাক ও সবজি যোগ করতে হবে। সবজিগুলো ছোট টুকরা করে কেটে নিতে হবে।
যে সবজিগুলো সেদ্ধ হতে বেশি সময় নেয়, সেগুলো আগে ভেজে নিন অথবা প্রেশার কুকারে দিন। এরপর তেল বা ঘিতে জিরা, তেজপাতা ও অন্যান্য মসলা দিয়ে পেঁয়াজ, আদা, রসুন ভাজার পর সবজিগুলো হালকা ভেজে নিন। ভেজে রাখা সবজি, চাল, ডাল ও পানি দিয়ে প্রেশার কুকারে বা হাঁড়িতে রান্না করুন। নরম খিচুড়ি চাইলে পানি বেশি দিতে পারেন। শেষ মুহূর্তে পালংসহ অন্য নরম শাক এতে যোগ করতে পারেন।
উপকারিতা: এটি অন্যান্য উপকারের সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং দ্রুত শক্তি পুনরুদ্ধার করে।

ঠান্ডা পাহাড়ি অঞ্চলে শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে এই খিচুড়ি অত্যন্ত জনপ্রিয়। চাল, মাষকলাইয়ের ডাল এবং তিল এর প্রধান উপকরণ। রান্নার আগে চাল ও ডাল ভিজিয়ে রাখা হয়। তিল হালকা ভেজে গুঁড়া করে নেওয়া হয়। তিল থেকে পাওয়া স্বাস্থ্যকর চর্বি ও খনিজ উপাদান শীতের দিনে শরীরের জন্য খুবই উপকারী। জিরা, হিং, হলুদ এবং লাল মরিচ গুঁড়ার সুগন্ধি মিশ্রণ এতে অনন্য স্বাদ যোগ করে। খাঁটি ঘি অথবা তেল-মসলার ফোড়ন দিয়ে এটি রান্না করা হয়। প্রোটিন, চর্বি এবং মিনারেলসমৃদ্ধ এই খাবার শীত জয়ের এক অমোঘ হাতিয়ার হতে পারে।
উপকারিতা: এটি শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি জোগানোর পাশাপাশি দীর্ঘক্ষণ শরীর গরম রাখতে সাহায্য করে।

সচরাচর খাওয়া হয় এমন কোনো খিচুড়ি খেতে না চাইলে রান্না করতে পারেন আমলকী খিচুড়ি। এটি কোনো সাধারণ খাবার নয়। এ খিচুড়ি রান্না করা হয় চাল, খোসা ছাড়ানো কালো মাষকলাইয়ের ডাল এবং তাজা আমলকী দিয়ে। নরম ধরনের এ খিচুড়ির স্বাদ ও সুগন্ধ বাড়াতে রান্নায় জিরা, হিং, হলুদ ও লাল মরিচের গুঁড়া ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো এতে রাজকীয় স্বাদ যোগ করবে। সবশেষে ঘি বা তেলের সুগন্ধি ফোড়ন এই খিচুড়িকে করে তোলে আরও সুস্বাদু। কেউ চাইলে এই খিচুড়ির পুষ্টিমান আরও বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের ঋতুভিত্তিক সবজি যোগ করতে পারেন। শীতের এই উৎসবের দিনগুলোতে শরীর সতেজ রাখতে এবং রসনা তৃপ্তিতে আমলকী খিচুড়ি হতে পারে আপনার সেরা পছন্দ।
উপকারিতা: এটি শরীরে শক্তি জোগানোর পাশাপাশি হজমশক্তি এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। এ ছাড়া শরীর ডিটক্সে সহায়তা করে, হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয়, গ্যাস্ট্রিক কমায়, কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায় এবং ওজন কমাতে সহায়ক।

ক্ষিতীশ চন্দ্র সাহার এই আবিষ্কার পশ্চিমবঙ্গে ভূগর্ভস্থ পানিতে ব্যাপক আর্সেনিক দূষণ সন্ধানের পথ খুলে দেয়। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) আর্সেনিকোসিসকে ‘মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিষক্রিয়ার ঘটনা’ বলে উল্লেখ করে।
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
তেজপাতা ও লবঙ্গ—উভয়ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এতে রয়েছে শক্তিশালী প্রদাহবিরোধী ও ব্যাকটেরিয়ারোধী গুণাবলি, যা শরীরের ভেতরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম। তবে এই চা সাধারণত সবার জন্য নিরাপদ হলেও গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের এটি পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
১৫ ঘণ্টা আগে
ঘুমের ঘোরে হাঁটার কথা আমরা অনেকে শুনেছি। কিন্তু ঘুমের ঘোরে খাওয়ার কথা কি শুনেছেন? চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় স্লিপ-রিলেটেড ইটিং ডিসঅর্ডার। এই উড়িয়ে দেওয়ার মতো ছোট ঘটনা একটি জটিল স্বাস্থ্যগত সমস্যা। এটি আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তার পরিবারের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
১৬ ঘণ্টা আগে
দীর্ঘদিনের শুকনো কাশি একটি বিরক্তিকর সমস্যা। অনেক সময় সাধারণ সর্দি-জ্বরের পরেও সপ্তাহের পর সপ্তাহ কিংবা কখনো মাসের পর মাস স্থায়ী হতে পারে এ ধরনের কাশি। ফলে দৈনন্দিন কাজে অস্বস্তি, ঘুমের ব্যাঘাত, মানসিক চাপ ও কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি দেখা দেয়।
১৬ ঘণ্টা আগেআলমগীর আলম

তেজপাতা ও লবঙ্গ—উভয়ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এতে রয়েছে শক্তিশালী প্রদাহবিরোধী ও ব্যাকটেরিয়ারোধী গুণাবলি, যা শরীরের ভেতরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম। তবে এই চা সাধারণত সবার জন্য নিরাপদ হলেও গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের এটি পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
১. হজমশক্তি বৃদ্ধিতে: বদহজমের সমস্যায় ভুগলে তেজপাতা দারুণ মুক্তি দিতে পারে। অন্যদিকে, লবঙ্গ এনজাইম নিঃসরণ বাড়িয়ে হজমপ্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত এবং পেটের অস্বস্তি দূর করে।
২. ব্যথা ও প্রদাহ উপশমে: আর্থ্রাইটিসের মতো রোগে যাঁরা ভোগেন, তাঁদের জন্য এই চা অত্যন্ত উপকারী। ইউরিক অ্যাসিডের ব্যথা কমাতে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশের প্রদাহ বা ফোলা ভাব রোধে তেজপাতা ও লবঙ্গ লড়তে সাহায্য করে।
৩. রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে: লবঙ্গে থাকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া
ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে। এর সঙ্গে তেজপাতা যুক্ত হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বহুগুণ বেড়ে যায়, যা বিশেষ করে ঠান্ডা ও ফ্লু মৌসুমে সুরক্ষা দেয়।
৪. দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে: এই চা শরীরে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়। ফলে হৃদ্রোগ এবং নির্দিষ্ট কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি কমে পায়।
৫. দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষায়: লবঙ্গ তেল দাঁতের জন্য উপকারী হিসেবে স্বীকৃত। নিয়মিত লবঙ্গ চা পান করলে মাড়ি ও দাঁত সুস্থ রাখা সম্ভব।
উপকরণ সংগ্রহ করা এবং এই চা তৈরি করার প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ—
উপকরণ: ৩-৪টি শুকনো তেজপাতা, ৫-৬টি আস্ত লবঙ্গ এবং ৪ কাপ পানি। স্বাদ বাড়াতে মধু বা লেবু ব্যবহার করতে পারেন।
প্রণালি: প্রথমে একটি পাত্রে পানি ফুটিয়ে নিতে হবে। তাতে তেজপাতা ও লবঙ্গ দিয়ে চুলার আঁচ কমিয়ে দিন। ১৫ মিনিট মিশ্রণটি সেদ্ধ করার পর চুলা নিভিয়ে আরও ৫ মিনিট পাত্রটি ঢেকে রেখে দিন। এরপর ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে তেজপাতা ও লবঙ্গ ফেলে দিয়ে পানি আলাদা করে নিন। স্বাদ অনুযায়ী মধু কিংবা লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন।
ভালো ফল পেতে প্রতিদিন এক কাপ এই চা-পান করা ভালো; বিশেষ করে খাবারের পর এটি পান করলে হজমশক্তি বাড়াতে সবচেয়ে ভালো কাজ করে।
লেখক: খাদ্য পথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ, প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র

তেজপাতা ও লবঙ্গ—উভয়ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এতে রয়েছে শক্তিশালী প্রদাহবিরোধী ও ব্যাকটেরিয়ারোধী গুণাবলি, যা শরীরের ভেতরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম। তবে এই চা সাধারণত সবার জন্য নিরাপদ হলেও গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের এটি পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
১. হজমশক্তি বৃদ্ধিতে: বদহজমের সমস্যায় ভুগলে তেজপাতা দারুণ মুক্তি দিতে পারে। অন্যদিকে, লবঙ্গ এনজাইম নিঃসরণ বাড়িয়ে হজমপ্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত এবং পেটের অস্বস্তি দূর করে।
২. ব্যথা ও প্রদাহ উপশমে: আর্থ্রাইটিসের মতো রোগে যাঁরা ভোগেন, তাঁদের জন্য এই চা অত্যন্ত উপকারী। ইউরিক অ্যাসিডের ব্যথা কমাতে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশের প্রদাহ বা ফোলা ভাব রোধে তেজপাতা ও লবঙ্গ লড়তে সাহায্য করে।
৩. রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে: লবঙ্গে থাকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া
ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে। এর সঙ্গে তেজপাতা যুক্ত হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বহুগুণ বেড়ে যায়, যা বিশেষ করে ঠান্ডা ও ফ্লু মৌসুমে সুরক্ষা দেয়।
৪. দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে: এই চা শরীরে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়। ফলে হৃদ্রোগ এবং নির্দিষ্ট কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি কমে পায়।
৫. দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষায়: লবঙ্গ তেল দাঁতের জন্য উপকারী হিসেবে স্বীকৃত। নিয়মিত লবঙ্গ চা পান করলে মাড়ি ও দাঁত সুস্থ রাখা সম্ভব।
উপকরণ সংগ্রহ করা এবং এই চা তৈরি করার প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ—
উপকরণ: ৩-৪টি শুকনো তেজপাতা, ৫-৬টি আস্ত লবঙ্গ এবং ৪ কাপ পানি। স্বাদ বাড়াতে মধু বা লেবু ব্যবহার করতে পারেন।
প্রণালি: প্রথমে একটি পাত্রে পানি ফুটিয়ে নিতে হবে। তাতে তেজপাতা ও লবঙ্গ দিয়ে চুলার আঁচ কমিয়ে দিন। ১৫ মিনিট মিশ্রণটি সেদ্ধ করার পর চুলা নিভিয়ে আরও ৫ মিনিট পাত্রটি ঢেকে রেখে দিন। এরপর ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে তেজপাতা ও লবঙ্গ ফেলে দিয়ে পানি আলাদা করে নিন। স্বাদ অনুযায়ী মধু কিংবা লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন।
ভালো ফল পেতে প্রতিদিন এক কাপ এই চা-পান করা ভালো; বিশেষ করে খাবারের পর এটি পান করলে হজমশক্তি বাড়াতে সবচেয়ে ভালো কাজ করে।
লেখক: খাদ্য পথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ, প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র

ক্ষিতীশ চন্দ্র সাহার এই আবিষ্কার পশ্চিমবঙ্গে ভূগর্ভস্থ পানিতে ব্যাপক আর্সেনিক দূষণ সন্ধানের পথ খুলে দেয়। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) আর্সেনিকোসিসকে ‘মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিষক্রিয়ার ঘটনা’ বলে উল্লেখ করে।
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
শীতের সকাল কিংবা সন্ধ্যায় ধোঁয়া ওঠা এক বাটি খিচুড়ির চেয়ে আরামদায়ক আর কী হতে পারে। খিচুড়ি শুধু একটি খাবার নয়। শীতকাল মানে আরাম করে হরেক রকমের সবজি দিয়ে রান্না করা খিচুড়ি খাওয়া। এতে যেমন মন ভরে, তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর এ খাবার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
১৪ ঘণ্টা আগে
ঘুমের ঘোরে হাঁটার কথা আমরা অনেকে শুনেছি। কিন্তু ঘুমের ঘোরে খাওয়ার কথা কি শুনেছেন? চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় স্লিপ-রিলেটেড ইটিং ডিসঅর্ডার। এই উড়িয়ে দেওয়ার মতো ছোট ঘটনা একটি জটিল স্বাস্থ্যগত সমস্যা। এটি আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তার পরিবারের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
১৬ ঘণ্টা আগে
দীর্ঘদিনের শুকনো কাশি একটি বিরক্তিকর সমস্যা। অনেক সময় সাধারণ সর্দি-জ্বরের পরেও সপ্তাহের পর সপ্তাহ কিংবা কখনো মাসের পর মাস স্থায়ী হতে পারে এ ধরনের কাশি। ফলে দৈনন্দিন কাজে অস্বস্তি, ঘুমের ব্যাঘাত, মানসিক চাপ ও কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি দেখা দেয়।
১৬ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক

ঘুমের ঘোরে হাঁটার কথা আমরা অনেকে শুনেছি। কিন্তু ঘুমের ঘোরে খাওয়ার কথা কি শুনেছেন? চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় স্লিপ-রিলেটেড ইটিং ডিসঅর্ডার। এই উড়িয়ে দেওয়ার মতো ছোট ঘটনা একটি জটিল স্বাস্থ্যগত সমস্যা। এটি আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তার পরিবারের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
স্লিপ-রিলেটেড ইটিং ডিসঅর্ডার এমন এক সমস্যা, যেখানে আক্রান্ত ব্যক্তি ঘুমের মধ্যে অবচেতন অবস্থায় রান্নাঘরে চলে যায় এবং খাবার খেতে শুরু করে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, পরদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর তার এই ঘটনা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র স্মৃতি থাকে না। সাধারণত এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায় প্রতি রাতেই এমনটা করে। এক রাতে একাধিকবারও ঘুমের ঘোরে খাওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে।
খাদ্যাভ্যাসের বিচিত্র রূপ
এই অবস্থায় আক্রান্ত ব্যক্তির খাওয়ার ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণত ঘুমের ঘোরে খাওয়ার সময় তিন ধরনের ঘটনা ঘটে।
উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়া: আক্রান্ত হওয়া মানুষ সাধারণত ক্যান্ডি, চিপস অথবা কেকের মতো প্রক্রিয়াজাত খাবারের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ে।
অস্বাভাবিক সংমিশ্রণের খাবার খাওয়া: অনেক সময় তারা অত্যন্ত অদ্ভুত ও অস্বাস্থ্যকর খাবারের সংমিশ্রণ তৈরি করে। যেমন সিগারেটে মাখন মাখিয়ে খাওয়া কিংবা অন্য কোনো অখাদ্য বস্তু খাওয়া।
দ্রুততম সময়ে খাবার খাওয়া: বিছানা থেকে রান্নাঘর হয়ে পুনরায় বিছানায় ফিরে আসার পুরো প্রক্রিয়াটি মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে শেষ হতে পারে। ফলে তারা খুব দ্রুত খাবার খেয়ে ফেলে।
ঝুঁকি ও স্বাস্থ্যগত প্রভাব
এসআরইডির প্রভাব কেবল ঘুমের ব্যাঘাতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি দীর্ঘ মেয়াদে শরীরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করতে পারে। এসব প্রভাবের মধ্যে আছে—
কেন এমন হয়
এসআরইডির নির্দিষ্ট কোনো একক কারণ না থাকলেও বেশ কিছু বিষয় লক্ষণীয়। যেমন—
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: বিষণ্নতা বা ঘুমের সমস্যার জন্য ব্যবহৃত কিছু নির্দিষ্ট ওষুধের প্রভাবে এটি হতে পারে।
অন্যান্য রোগ: রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম বা অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতো সমস্যা এর পেছনে থাকতে পারে।
জীবনযাত্রা: অতিরিক্ত মানসিক চাপ, অনিয়মিত ঘুম এবং অ্যালকোহল অথবা মাদক ত্যাগের পরবর্তী সময়ে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
প্রতিকার ও ব্যবস্থাপনা
এই রহস্যময় সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সচেতনতা এবং সঠিক চিকিৎসা জরুরি। এর প্রতিকারে যা করা যেতে পারে—
সূত্র: সিএনএন হেলথ, এএসএসএম

ঘুমের ঘোরে হাঁটার কথা আমরা অনেকে শুনেছি। কিন্তু ঘুমের ঘোরে খাওয়ার কথা কি শুনেছেন? চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় স্লিপ-রিলেটেড ইটিং ডিসঅর্ডার। এই উড়িয়ে দেওয়ার মতো ছোট ঘটনা একটি জটিল স্বাস্থ্যগত সমস্যা। এটি আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তার পরিবারের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
স্লিপ-রিলেটেড ইটিং ডিসঅর্ডার এমন এক সমস্যা, যেখানে আক্রান্ত ব্যক্তি ঘুমের মধ্যে অবচেতন অবস্থায় রান্নাঘরে চলে যায় এবং খাবার খেতে শুরু করে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, পরদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর তার এই ঘটনা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র স্মৃতি থাকে না। সাধারণত এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায় প্রতি রাতেই এমনটা করে। এক রাতে একাধিকবারও ঘুমের ঘোরে খাওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে।
খাদ্যাভ্যাসের বিচিত্র রূপ
এই অবস্থায় আক্রান্ত ব্যক্তির খাওয়ার ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণত ঘুমের ঘোরে খাওয়ার সময় তিন ধরনের ঘটনা ঘটে।
উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়া: আক্রান্ত হওয়া মানুষ সাধারণত ক্যান্ডি, চিপস অথবা কেকের মতো প্রক্রিয়াজাত খাবারের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ে।
অস্বাভাবিক সংমিশ্রণের খাবার খাওয়া: অনেক সময় তারা অত্যন্ত অদ্ভুত ও অস্বাস্থ্যকর খাবারের সংমিশ্রণ তৈরি করে। যেমন সিগারেটে মাখন মাখিয়ে খাওয়া কিংবা অন্য কোনো অখাদ্য বস্তু খাওয়া।
দ্রুততম সময়ে খাবার খাওয়া: বিছানা থেকে রান্নাঘর হয়ে পুনরায় বিছানায় ফিরে আসার পুরো প্রক্রিয়াটি মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে শেষ হতে পারে। ফলে তারা খুব দ্রুত খাবার খেয়ে ফেলে।
ঝুঁকি ও স্বাস্থ্যগত প্রভাব
এসআরইডির প্রভাব কেবল ঘুমের ব্যাঘাতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি দীর্ঘ মেয়াদে শরীরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করতে পারে। এসব প্রভাবের মধ্যে আছে—
কেন এমন হয়
এসআরইডির নির্দিষ্ট কোনো একক কারণ না থাকলেও বেশ কিছু বিষয় লক্ষণীয়। যেমন—
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: বিষণ্নতা বা ঘুমের সমস্যার জন্য ব্যবহৃত কিছু নির্দিষ্ট ওষুধের প্রভাবে এটি হতে পারে।
অন্যান্য রোগ: রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম বা অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতো সমস্যা এর পেছনে থাকতে পারে।
জীবনযাত্রা: অতিরিক্ত মানসিক চাপ, অনিয়মিত ঘুম এবং অ্যালকোহল অথবা মাদক ত্যাগের পরবর্তী সময়ে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
প্রতিকার ও ব্যবস্থাপনা
এই রহস্যময় সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সচেতনতা এবং সঠিক চিকিৎসা জরুরি। এর প্রতিকারে যা করা যেতে পারে—
সূত্র: সিএনএন হেলথ, এএসএসএম

ক্ষিতীশ চন্দ্র সাহার এই আবিষ্কার পশ্চিমবঙ্গে ভূগর্ভস্থ পানিতে ব্যাপক আর্সেনিক দূষণ সন্ধানের পথ খুলে দেয়। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) আর্সেনিকোসিসকে ‘মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিষক্রিয়ার ঘটনা’ বলে উল্লেখ করে।
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
শীতের সকাল কিংবা সন্ধ্যায় ধোঁয়া ওঠা এক বাটি খিচুড়ির চেয়ে আরামদায়ক আর কী হতে পারে। খিচুড়ি শুধু একটি খাবার নয়। শীতকাল মানে আরাম করে হরেক রকমের সবজি দিয়ে রান্না করা খিচুড়ি খাওয়া। এতে যেমন মন ভরে, তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর এ খাবার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
১৪ ঘণ্টা আগে
তেজপাতা ও লবঙ্গ—উভয়ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এতে রয়েছে শক্তিশালী প্রদাহবিরোধী ও ব্যাকটেরিয়ারোধী গুণাবলি, যা শরীরের ভেতরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম। তবে এই চা সাধারণত সবার জন্য নিরাপদ হলেও গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের এটি পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
১৫ ঘণ্টা আগে
দীর্ঘদিনের শুকনো কাশি একটি বিরক্তিকর সমস্যা। অনেক সময় সাধারণ সর্দি-জ্বরের পরেও সপ্তাহের পর সপ্তাহ কিংবা কখনো মাসের পর মাস স্থায়ী হতে পারে এ ধরনের কাশি। ফলে দৈনন্দিন কাজে অস্বস্তি, ঘুমের ব্যাঘাত, মানসিক চাপ ও কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি দেখা দেয়।
১৬ ঘণ্টা আগেডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফী

দীর্ঘদিনের শুকনো কাশি একটি বিরক্তিকর সমস্যা। অনেক সময় সাধারণ সর্দি-জ্বরের পরেও সপ্তাহের পর সপ্তাহ কিংবা কখনো মাসের পর মাস স্থায়ী হতে পারে এ ধরনের কাশি। ফলে দৈনন্দিন কাজে অস্বস্তি, ঘুমের ব্যাঘাত, মানসিক চাপ ও কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি দেখা দেয়। কাশি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার পেছনে নির্দিষ্ট এবং চিকিৎসাযোগ্য ছয়টি কারণ থাকে।
কফ ভ্যারিয়েন্ট অ্যাজমা
অ্যাজমার একটি বিশেষ ধরন এটি। এতে সাধারণ অ্যাজমার মতো শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ বা সাঁ সাঁ শব্দ না-ও থাকতে পারে; বরং অবিরাম শুকনো কাশিই এর প্রধান এবং অন্যতম উপসর্গ হয়ে দেখা দেয়। এই ধরনের কাশি সাধারণত রাতে বেশি হয় এবং ধুলাবালি, ঠান্ডা বাতাস, ঘরবাড়ির অ্যালার্জেন, এমনকি ঋতু পরিবর্তনের সময় শীতের শুরুতেও উপসর্গ তীব্র হয়ে উঠতে পারে।
উপসর্গ বারবার দেখা দিলে চিকিৎসক শ্বাসক্রিয়া পরীক্ষার মাধ্যমে কারণ নির্ণয় করতে পারেন। স্পাইরোমেট্রি ফুসফুসের ক্ষমতা এবং বায়ুপ্রবাহ পরিমাপ করে, যা হাঁপানি বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজের (সিওপিডি) মতো অবস্থা নির্ণয় করতে সাহায্য করতে পারে। প্রয়োজন হলে রোগ নিয়ন্ত্রণে উপযোগী ইনহেলার সাময়িক ব্যবহারের পরামর্শও দেওয়া হয়। সঠিক সময়ে এ রোগ শনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণ করা গেলে দীর্ঘ মেয়াদে জটিলতার ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়।
পোস্টন্যাসাল ড্রিপ
নাক কিংবা সাইনাসে অতিরিক্ত মিউকাস তৈরি হলে তা ধীরে ধীরে গলার পেছন দিকে গড়িয়ে যায়। এই মিউকাস গলার সংবেদনশীল নার্ভগুলো উত্তেজিত করে। ফলে শুকনো ও বিরক্তিকর কাশি হয়। শোয়ার সময় মিউকাস গলায় জমে বলে এটি রাত ও ভোরে বেশি হয়। তবে ঘুম থেকে ওঠার পরও কাশি দেখা যায়। অ্যালার্জিজনিত হাঁচি-সর্দি, সাইনোসাইটিস, নাকের হাড় বাঁকা হওয়ার সমস্যা, নাক বন্ধ বা ধুলাবালিতে সংবেদনশীলতা যাঁদের আছে, তাঁদের এই সমস্যা বেশি হয়। দীর্ঘস্থায়ী শুকনো কাশির অন্যতম প্রচলিত উৎস এই পোস্টন্যাসাল ড্রিপ।
জিইআরডি
পাকস্থলীর অ্যাসিড ওপরের দিকে উঠে এলে টক ঢেকুর, বুকজ্বালা, গলায় জ্বালাপোড়া এবং সঙ্গে ধারাবাহিক কাশি দেখা দিতে পারে। মসলাদার খাবার, ভাজাপোড়া, চকলেট, কফি, টক খাবার—এসব জিইআরডি বাড়িয়ে তোলে। পাশাপাশি অতিরিক্ত ওজন, ধূমপান বা অতিরিক্ত খাবার খাওয়াও ঝুঁকির মাত্রা বাড়ায়। জিইআরডি নিয়ন্ত্রণে আনলে অনেক ক্ষেত্রে কাশি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
ভাইরাল সংক্রমণের পর দীর্ঘস্থায়ী কাশি
অনেক সময় সর্দি-জ্বরের উপসর্গ সেরে গেলেও শ্বাসনালি কিছুদিন অতি সংবেদনশীল থাকে। এর ফলে কাশি স্থায়ী হতে পারে। ঋতু পরিবর্তনের সময় এ সমস্যা বেশি দেখা যায়। সাধারণত বিশেষ চিকিৎসা ছাড়াই ধীরে ধীরে এর উপসর্গ কমে আসে। হালকা গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করা এবং আদা, লেবু, মধু, লবঙ্গ বা দারুচিনিযুক্ত গরম চা উপসর্গ কমাতে সহায়তা করে।
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত এসিই ইনহিবিটর শ্রেণির ওষুধ অনেক রোগীর ক্ষেত্রে শুকনো কাশির কারণ হতে পারে। নিয়মিত কাশির কারণ খুঁজেনা পেলে ওষুধের ইতিহাস পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনে চিকিৎসক বিকল্প ওষুধ বেছে নেন।
ধূমপান
দীর্ঘদিন ধূমপান, বিশেষত প্রতিদিন ২০টি সিগারেট বা ২০ বছর অথবা তার বেশি সময় ধরে ধূমপান ক্রনিক ব্রংকাইটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। এতে বছরের বিভিন্ন সময়ে ক্রনিক কাশি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে এটি গুরুতর অবস্থায় রূপ নিতে পারে। ধূমপান সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণের মূল উপায়।
দীর্ঘস্থায়ী বা অবিরাম কাশি সব সময় গুরুতর রোগের লক্ষণ না হলেও উপেক্ষা করা উচিত নয়। উপসর্গ যদি কয়েক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে কারণ নির্ণয় করার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
সহকারী অধ্যাপক (ইএনটি), সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

দীর্ঘদিনের শুকনো কাশি একটি বিরক্তিকর সমস্যা। অনেক সময় সাধারণ সর্দি-জ্বরের পরেও সপ্তাহের পর সপ্তাহ কিংবা কখনো মাসের পর মাস স্থায়ী হতে পারে এ ধরনের কাশি। ফলে দৈনন্দিন কাজে অস্বস্তি, ঘুমের ব্যাঘাত, মানসিক চাপ ও কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি দেখা দেয়। কাশি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার পেছনে নির্দিষ্ট এবং চিকিৎসাযোগ্য ছয়টি কারণ থাকে।
কফ ভ্যারিয়েন্ট অ্যাজমা
অ্যাজমার একটি বিশেষ ধরন এটি। এতে সাধারণ অ্যাজমার মতো শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ বা সাঁ সাঁ শব্দ না-ও থাকতে পারে; বরং অবিরাম শুকনো কাশিই এর প্রধান এবং অন্যতম উপসর্গ হয়ে দেখা দেয়। এই ধরনের কাশি সাধারণত রাতে বেশি হয় এবং ধুলাবালি, ঠান্ডা বাতাস, ঘরবাড়ির অ্যালার্জেন, এমনকি ঋতু পরিবর্তনের সময় শীতের শুরুতেও উপসর্গ তীব্র হয়ে উঠতে পারে।
উপসর্গ বারবার দেখা দিলে চিকিৎসক শ্বাসক্রিয়া পরীক্ষার মাধ্যমে কারণ নির্ণয় করতে পারেন। স্পাইরোমেট্রি ফুসফুসের ক্ষমতা এবং বায়ুপ্রবাহ পরিমাপ করে, যা হাঁপানি বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজের (সিওপিডি) মতো অবস্থা নির্ণয় করতে সাহায্য করতে পারে। প্রয়োজন হলে রোগ নিয়ন্ত্রণে উপযোগী ইনহেলার সাময়িক ব্যবহারের পরামর্শও দেওয়া হয়। সঠিক সময়ে এ রোগ শনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণ করা গেলে দীর্ঘ মেয়াদে জটিলতার ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়।
পোস্টন্যাসাল ড্রিপ
নাক কিংবা সাইনাসে অতিরিক্ত মিউকাস তৈরি হলে তা ধীরে ধীরে গলার পেছন দিকে গড়িয়ে যায়। এই মিউকাস গলার সংবেদনশীল নার্ভগুলো উত্তেজিত করে। ফলে শুকনো ও বিরক্তিকর কাশি হয়। শোয়ার সময় মিউকাস গলায় জমে বলে এটি রাত ও ভোরে বেশি হয়। তবে ঘুম থেকে ওঠার পরও কাশি দেখা যায়। অ্যালার্জিজনিত হাঁচি-সর্দি, সাইনোসাইটিস, নাকের হাড় বাঁকা হওয়ার সমস্যা, নাক বন্ধ বা ধুলাবালিতে সংবেদনশীলতা যাঁদের আছে, তাঁদের এই সমস্যা বেশি হয়। দীর্ঘস্থায়ী শুকনো কাশির অন্যতম প্রচলিত উৎস এই পোস্টন্যাসাল ড্রিপ।
জিইআরডি
পাকস্থলীর অ্যাসিড ওপরের দিকে উঠে এলে টক ঢেকুর, বুকজ্বালা, গলায় জ্বালাপোড়া এবং সঙ্গে ধারাবাহিক কাশি দেখা দিতে পারে। মসলাদার খাবার, ভাজাপোড়া, চকলেট, কফি, টক খাবার—এসব জিইআরডি বাড়িয়ে তোলে। পাশাপাশি অতিরিক্ত ওজন, ধূমপান বা অতিরিক্ত খাবার খাওয়াও ঝুঁকির মাত্রা বাড়ায়। জিইআরডি নিয়ন্ত্রণে আনলে অনেক ক্ষেত্রে কাশি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
ভাইরাল সংক্রমণের পর দীর্ঘস্থায়ী কাশি
অনেক সময় সর্দি-জ্বরের উপসর্গ সেরে গেলেও শ্বাসনালি কিছুদিন অতি সংবেদনশীল থাকে। এর ফলে কাশি স্থায়ী হতে পারে। ঋতু পরিবর্তনের সময় এ সমস্যা বেশি দেখা যায়। সাধারণত বিশেষ চিকিৎসা ছাড়াই ধীরে ধীরে এর উপসর্গ কমে আসে। হালকা গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করা এবং আদা, লেবু, মধু, লবঙ্গ বা দারুচিনিযুক্ত গরম চা উপসর্গ কমাতে সহায়তা করে।
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত এসিই ইনহিবিটর শ্রেণির ওষুধ অনেক রোগীর ক্ষেত্রে শুকনো কাশির কারণ হতে পারে। নিয়মিত কাশির কারণ খুঁজেনা পেলে ওষুধের ইতিহাস পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনে চিকিৎসক বিকল্প ওষুধ বেছে নেন।
ধূমপান
দীর্ঘদিন ধূমপান, বিশেষত প্রতিদিন ২০টি সিগারেট বা ২০ বছর অথবা তার বেশি সময় ধরে ধূমপান ক্রনিক ব্রংকাইটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। এতে বছরের বিভিন্ন সময়ে ক্রনিক কাশি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে এটি গুরুতর অবস্থায় রূপ নিতে পারে। ধূমপান সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণের মূল উপায়।
দীর্ঘস্থায়ী বা অবিরাম কাশি সব সময় গুরুতর রোগের লক্ষণ না হলেও উপেক্ষা করা উচিত নয়। উপসর্গ যদি কয়েক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে কারণ নির্ণয় করার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
সহকারী অধ্যাপক (ইএনটি), সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

ক্ষিতীশ চন্দ্র সাহার এই আবিষ্কার পশ্চিমবঙ্গে ভূগর্ভস্থ পানিতে ব্যাপক আর্সেনিক দূষণ সন্ধানের পথ খুলে দেয়। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) আর্সেনিকোসিসকে ‘মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিষক্রিয়ার ঘটনা’ বলে উল্লেখ করে।
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
শীতের সকাল কিংবা সন্ধ্যায় ধোঁয়া ওঠা এক বাটি খিচুড়ির চেয়ে আরামদায়ক আর কী হতে পারে। খিচুড়ি শুধু একটি খাবার নয়। শীতকাল মানে আরাম করে হরেক রকমের সবজি দিয়ে রান্না করা খিচুড়ি খাওয়া। এতে যেমন মন ভরে, তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর এ খাবার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
১৪ ঘণ্টা আগে
তেজপাতা ও লবঙ্গ—উভয়ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এতে রয়েছে শক্তিশালী প্রদাহবিরোধী ও ব্যাকটেরিয়ারোধী গুণাবলি, যা শরীরের ভেতরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম। তবে এই চা সাধারণত সবার জন্য নিরাপদ হলেও গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের এটি পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
১৫ ঘণ্টা আগে
ঘুমের ঘোরে হাঁটার কথা আমরা অনেকে শুনেছি। কিন্তু ঘুমের ঘোরে খাওয়ার কথা কি শুনেছেন? চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় স্লিপ-রিলেটেড ইটিং ডিসঅর্ডার। এই উড়িয়ে দেওয়ার মতো ছোট ঘটনা একটি জটিল স্বাস্থ্যগত সমস্যা। এটি আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তার পরিবারের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
১৬ ঘণ্টা আগে