Ajker Patrika

নতুন দল গঠন, পুরোনো অভিজ্ঞতা

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০২১, ১৪: ০৭
নতুন দল গঠন, পুরোনো অভিজ্ঞতা

জামায়াত-বিএনপির সমর্থন, অর্থ ও নেতাকর্মীদের নিয়ে যে দলের আবির্ভাব, সেটি দ্বারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ইত্যাদি কতটা অর্জিত হবে, তা ২০০১-০৬ শাসনকালে অনেকটাই দেখা গেছে। 

২৬ অক্টোবর, মঙ্গলবার দুপুরে পুরানা পল্টনের প্রিতম টাওয়ারে ‘গণ অধিকার পরিষদ’ নামে একটি নতুন দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। কদিন আগ থেকেই শোনা যাচ্ছিল ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছেন। অবশেষে সেটির আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। তবে সংগঠনের আহ্বায়কের দায়িত্ব নিয়েছেন রেজা কিবরিয়া। রেজা কিবরিয়ার অতীত রাজনৈতিক ভূমিকা তেমন নেই। তিনি সাবেক সফল অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে।

রেজা কিবরিয়া দীর্ঘকাল বিদেশে ছিলেন। দেশেও তাঁর আসা-যাওয়া ছিল। ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি শাহ এ এম এস কিবরিয়া তাঁর নির্বাচনী এলাকা হবিগঞ্জের বৈদ্যেরবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক সভা শেষে জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন। তৎকালীন জোট সরকার তাঁকে জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় আনার ব্যাপারে হেলিকপ্টার দিয়ে সহযোগিতা না করায় অ্যাম্বুলেন্সযোগে হবিগঞ্জ থেকে শাহ কিবরিয়াকে ঢাকায় আনার পথে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। রেজা কিবরিয়া সেই সময় পিতা হত্যার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ সভায় অংশ নেওয়ার মাধ্যমে পরিচিত হন। তিনি তখন সব মহলের ব্যাপক সহানুভূতি লাভ করেছিলেন।

সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া ছিলেন একজন মেধাবী ছাত্র, সফল কূটনীতিবিদ ও এসকাপের (ESCAP) প্রধান নির্বাহী। ২০০৬ সালের নির্বাচনে শাহ এ এম এস কিবরিয়ার আসনে তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও সে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ১/১১-এর সরকারের সময় তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। সম্ভবত সে কারণে রেজা কিবরিয়ার সঙ্গে আওয়ামী লীগের বনিবনা আর সেভাবে হয়নি।

তারপর তাঁকে দেশে খুব একটা দেখা যায়নি। ২০১৮ সালে আকস্মিকভাবে তিনি গণফোরামে যোগ দেন। ড. কামাল হোসেনের বদান্যতায় তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন। এ নিয়ে গণফোরামে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ড. রেজা কিবরিয়া পিতার পরিচয়ে সহানুভূতি পেলেও পরবর্তী সময়ে নানা কারণে তিনি বিতর্কিত হয়েছেন। এমনকি গণফোরামেও বেশি দিন টিকতে পারেননি। অবশেষে গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক হলেন। তবে রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ, পদ-পদবি পেতে আগ্রহী রেজা কিবরিয়ার এই অবস্থান কত দিন থাকবে, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না। নতুন দল গঠনে যেসব নেপথ্য শক্তি রয়েছে, তারা তাঁকে কত দিন রাখবে, সেটি নিশ্চিত নয়।

২০১৯ সালে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ও কোটাবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত কেউ কেউ ছাত্র অধিকার আন্দোলনের নেতা নামে পরিচিতি পান। নুরুল হক নুর সেই আন্দোলনে তরুণদের কাছে ‘হিরো’ হয়ে ওঠেন। তবে তাঁর বক্তব্য ও আচার-আচরণ নিয়ে তরুণদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও ছিল। ওই আন্দোলনের ভাবমূর্তি নিয়েই নুরুল হক নুর ডাকসুর নির্বাচনে ভিপি পদে দাঁড়ান। ওই পদে ছাত্রশিবির ও ছাত্রদল তাঁকে গোপনে সমর্থন করে। নিরাপদ সড়ক ও কোটাবিরোধী আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপান্তরিত করার গোপন চেষ্টা ছাত্রশিবির ও ছাত্রদল করেছিল। নুরুল হক তার পুরস্কার হিসেবেই ডাকসুর ভিপি হওয়ার সুযোগ পান।

নুরুল হক একসময় ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন বলে শোনা যায়। কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তাঁর উত্থান ভিন্নভাবে হতে থাকে। তিনি তখন বিএনপি, জামায়াত, নাগরিক ঐক্যসহ আওয়ামী লীগবিরোধী বিভিন্ন দলের আনুকূল্য লাভ করতে থাকেন।

আমাদের দেশে একটি ধারণা প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়ে থাকে যে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়মিত না হওয়ার কারণে নতুন নেতা তৈরি হতে পারছে না। জাতীয় রাজনীতিতেও সে কারণে যোগ্য নেতার আবির্ভাব ঘটছে না। এটি একটি সহজ-সরল মত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং আমাদের দেশের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় যে জাতীয় রাজনীতির নেতা তৈরি হওয়ার জন্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনই একমাত্র উপায় নয়। এভাবে আকস্মিকভাবে নেতা তৈরি হওয়ার নজিরও খুব বেশি নেই। সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রসংগঠনের নেতার পরিচয়ে যাঁরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করছেন, তাঁদের বেশির ভাগের সঙ্গেই লেখাপড়ার সংযোগ নেই। ব্যতিক্রম খুবই কম। ফলে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নেতা হলেই যে কেউ দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ নেতা হবেন, এমন নিশ্চয়তা দেওয়া খুবই কঠিন। তা ছাড়া, আন্দোলন-সংগ্রাম, দলের রাজনীতির নানা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় ছাড়া কেউ হঠাৎ করে ছাত্র সংসদের নেতা নির্বাচিত হলেই তিনি পরবর্তীকালে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বিকশিত হওয়ার ধৈর্য ধারণ করবেন—এমন অভিজ্ঞতাও খুব বেশি দেখা যায় না। ছাত্র সংসদে নেতা নির্বাচিত হয়ে পরে রাজনীতি থেকে হারিয়ে যাওয়ার অনেক উদাহরণ দেওয়া যাবে।

নুরুল হক ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হওয়ার পর রাজনৈতিক আদর্শচর্চা, লেখাপড়ার পাশাপাশি দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য যে নিষ্ঠা, ত্যাগ ও সততার প্রমাণ রাখা প্রয়োজন ছিল, সেটি তাঁর ক্ষেত্রে খুব একটা দেখা যায়নি। উল্টো তাঁর পেছনে ছাত্রশিবির, ছাত্রদল এবং অতি বাম, অতি ডানেরা সমবেত হয়ে তাঁকে সঠিক পথচলায় বিভ্রান্ত করেছে। ডাকসুর ভিপি পদটি নুরুলের জন্য ব্যক্তিগতভাবে এটি ছিল বড় পাওয়া। কিন্তু দেশ ও জাতির আদর্শ তাঁর কাছে যতটা বিবেচিত হওয়া জরুরি ছিল, সেটা বোঝার অবস্থানে সম্ভবত নুরুলের ছিল না। তিনি অন্যের ওপরে ওঠার সিঁড়ি হিসেবেই ব্যাবহৃত হলেন কি না, সেটা ভবিষ্যৎই প্রমাণ করবে। তাঁর জন্যও একটি সিঁড়ি তৈরি হয়েছিল, যার যথাযথ ব্যবহারে তিনি সক্ষমতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন।

নুরুলের বক্তব্য এবং আদর্শেও কোনো সামঞ্জস্য কখনোই সেভাবে ছিল না। ছাত্রশিবির সম্পর্কেও তাঁর কোনো নেতিবাচক অবস্থান ছিল না। আবার ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে তাঁর পা ছুঁয়ে সালাম করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারও করেছিলেন। আগাগোড়াই তিনি দোদুল্যমান চরিত্রের একজন ‘ছাত্রনেতা’ হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। এর পেছনে ছিল তাঁর ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা, আদর্শের কোনো ভিত্তি এর মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে না।

নুরুল হক নতুন সংগঠন গড়ে তোলার ব্যাপারে জামায়াত ও বিএনপির সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ করছিলেন বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। বিদেশে অবস্থানরত জামায়াতের নেতারাই মূলত তাঁর দল গঠনে অর্থ সহায়তা করছেন বলেও খবর বেরিয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে যেহেতু জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তাই জামায়াত ও বিএনপি ছাত্র-যুবকদের সমর্থন লাভের জন্য নুরুল হকের উদ্যোগকে সমর্থন দিয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে, পরবর্তী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জামায়াত-বিএনপিসহ আওয়ামীবিরোধী শক্তি নানা কৌশলে মাঠে থাকবে। সে ক্ষেত্রে রেজা কিবরিয়াকে সঙ্গে পাওয়ায় নুরুলকে নিয়ে অগ্রসর হওয়ার হিসাবটি জামায়াত-বিএনপির দিক থেকে বেশ সহজতর হয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন জেলায় গণ অধিকার পরিষদের ব্যানারে ছাত্রশিবির এবং ছাত্রদলের নেতাদের নিয়ে যেসব কমিটি গঠিত হয়েছে, সেগুলোকেই এখন একত্র করে গণ অধিকার পরিষদ নামে একটি কেন্দ্রীয় সংগঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রামে ২১ অক্টোবর যুব অধিকার পরিষদের নেতৃত্বে পূজামণ্ডপে আক্রমণ করার খবর পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। সেখানে ধরা পড়া যুবকেরা নিজেদের পরিচয় এবং তাঁদের দলের সঙ্গে জামায়াত ও বিএনপির সম্পৃক্ততার কথা জানিয়েছেন। যে ৮৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠিত হয়েছে, এঁদের প্রায় সবাই বয়সে অত্যন্ত তরুণ, তাঁদের তেমন কোনো রাজনৈতিক পরিচয় জানা না গেলেও ছাত্রশিবির এবং ছাত্রদলের পদবঞ্চিতদের দিয়েই এই সংগঠনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাখা হবে— এমন কথা রাজনৈতিক মহলে আলোচনায় আছে।

নতুন দলের আত্মপ্রকাশের দিন প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তাঁকে নাকি দলীয় প্রধান হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। তিনি বয়সের অজুহাতে তাতে সম্মত হননি। গণতন্ত্র, অধিকার, ন্যায়বিচার ও জাতীয় স্বার্থকে নতুন দলের আদর্শ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিক্রিয়াশীল মতাদর্শের অনেক সংগঠন অতীতে এ ধরনের প্রগতিশীল মতাদর্শের কথা বলেই জনগণের কাছে হাজির হয়েছে। কিন্তু তাদের আদর্শ বোঝা গেছে যখন তারা ক্ষমতা লাভ করেছিল। ইতালির ফ্যাসিস্ট এবং জার্মানির নাৎসিবাদী পার্টি এর উদাহরণ। উভয় দলই সমাজতন্ত্রের নামে আত্মপ্রকাশ করেছিল। সুতরাং নামে কী হবে, কাজেই এই দলের পরিচয় কোথায় নির্ধারিত হবে, সেটি তার পূর্বপ্রস্তুতি থেকে এখনই বোঝা যাচ্ছে।

গণ অধিকার পরিষদ আসলে নামে নতুন হলেও অতীত অভিজ্ঞতা বলে যে প্রতিক্রিয়াশীলরা নানা কৌশলে গণতন্ত্রের সুযোগ গ্রহণ করলেও তাদের হাতে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, অধিকার ও জাতীয় স্বার্থ কখনো কোনো দেশে নিরাপদ থাকেনি। অভিজ্ঞতাবিহীন কিছু ব্যক্তি একটি দল গঠনে ঘোষণা দিলেই দেশের মানুষ সেই দলের পেছনে কাতারবন্দী হবে, তেমন আশা করা যায় না। অতীতে কেউ কেউ নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নিয়ে সফল হতে পারেননি। এমনকি একসময়ের জনপ্রিয় ছাত্রনেতাও দল গঠন করে জনগণের সমর্থন না পেয়ে হাঁটুভাঙা ‘দ’- এর অবস্থায় আছেন। নুরুলের কপালে কী জোটে, তা-ই এখন দেখার অপেক্ষা।

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী, অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত