Ajker Patrika

হাবিবের হিসাব মিলছে না

ফারুক মেহেদী, ঢাকা
আপডেট : ১০ জুন ২০২২, ০৮: ৪৯
হাবিবের হিসাব মিলছে না

মধ্যবয়সী হাবিব সাহেব একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষক। গতকাল বৃহস্পতিবার একটু আগেই বাসায় ফিরেছেন। মতিঝিলের অফিস থেকে দীর্ঘ সময় যানজটে কাটিয়ে শরীরে একরাশ ক্লান্তি। মিরপুরে বাসায় ফিরে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে টিভিটা চালু করতেই ভেসে উঠল, ব্রেকিং নিউজ: ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট। একের পর এক তথ্য আসছে। লক্ষকোটির অঙ্ক। কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে না। বলা হচ্ছে বিরাট বাজেট। হিসাববিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে জাতীয় বাজেট নিয়ে তাঁর আগ্রহ আছে। আরেকটু বাড়তি আগ্রহ রোববার অফিসের আলোচনায় বিশেষজ্ঞ মত দেওয়ার জন্য।

এরই মধ্যে ভেসে আসছে, ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা। ঘাটতি ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। পুরো বাজেটের টাকার সংস্থান না থাকায় ঋণ করে খরচ মেটানো হবে। আবার দুর্মূল্যের বাজারে বেশি খরচ হলেও মূল্যস্ফীতি কমিয়ে রাখার ইচ্ছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে। এ রকম আরও কিছু খটমটে শব্দ হাবিবের মাথার এক পাশে যেন হাতুড়িপেটা করছে! হিসাববিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি থাকার পরও নিত্য টানাটানি সংসারে হিসাব মেলাতে পারলেন না। সংসারের চাল, ডাল, তেল, চিনির হিসাব করতে করতেই চোখে শর্ষে ফুল দেখছেন!

এরই মধ্যে হন্তদন্ত হয়ে স্ত্রী সোমা হাতে এক কাপ গরম চা আর বাজেটে দাম বাড়ার আগেই বেশ কিছু কেনাকাটার ফর্দ ধরিয়ে দিয়ে গেলেন।

টিভি দেখতে দেখতে, চায়ে চুমুক দিয়ে ঝরঝরে হওয়ার বদলে হাবিব ঘামতে থাকেন। মাথার মধ্যে কাজ করছে নিজের বাজেট বাস্তবায়নের হতাশা। মাসে বেতন ৫৫ হাজার টাকা। সংসারে খরচ ৭০ হাজারের ওপরে। প্রতি মাসে আত্মীয়-বন্ধুদের কাছে আর কত হাত পাতবেন। হাবিবের চিন্তা, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের বাজেট না তাঁর ওপর ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে যায়। এখন সোমার তালিকা নিয়ে বাজারে গেলেই দেখা যাবে, বাজেটের দোহাই দিয়ে গড়পড়তা সব জিনিসের দাম আরেক দফা বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা। অনেক পণ্যে শুল্ক-কর ছাড় দিলেও দোকানদারেরা এসবের ধার ধারেন না।

টিভির স্ক্রিনে চোখ রেখে ত্যক্তবিরক্ত হাবিব বাজারে যাবেন না-যাবেন না—এই নিয়ে আকাশ-পাতাল ভাবছেন। তাঁর অভিজ্ঞতা বলছে, বাজেটের পর বাজারে যাওয়া মানেই কোনো কারণ ছাড়া অনেকগুলো বাড়তি টাকা পকেট থেকে চলে যাওয়া। মাসটা তো পার করতে হবে। হতে পারে, মোটা অঙ্কের বাজেটে সরকার তুষ্ট, বিরোধী দল রুষ্ট। কিন্তু মাঝে পড়ে তাঁর মতো মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত পিষ্ট।

করোনার প্রভাবে হাবিবের চাকরিটা চলে যেতে যেতেও টিকে আছে। বেতন বাড়ার কোনো প্রশ্ন নেই। প্রশ্ন তোলার সাহস নেই। অথচ খরচ যাচ্ছে বেড়ে। বাড়িভাড়া, সংসার খরচ, বাচ্চার স্কুলের বেতন, প্রাইভেট শিক্ষকের খরচ, গ্রামে মা-বাবাকে টাকা পাঠানোসহ অন্যান্য খরচ তো আছেই। তাঁর ধারণা, এর মধ্যে কোনোভাবে টিকে আছে তাঁর মতো মানুষেরা।

অর্থমন্ত্রীর বাজেটের আশাজাগানিয়া সব ঘোষণার খবর একে একে হাবিবের চোখ ছুঁয়ে যাচ্ছে। কিন্তু স্বস্তি নেই। এরই মধ্যে টিভি স্ক্রলে জানিয়ে দেওয়া হলো ভোজ্যতেলের দাম লিটারে ৫-৭ টাকা বাড়ছে। কোথায় যাবেন। গত কয়েক মাসে ভোজ্যতেলের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। ভরা মৌসুমেও চালের দামে রকেট গতি। বাড়ছে রান্নার গ্যাসের দাম।

হাবিব ভাবছেন, মধ্যবিত্তের এই কষ্টের জীবনে বড় বাজেট কী যোগ করবে। করোনার পর ব্যবসায় লোকসানের ক্ষত, চাকরি নেই, কাজ নেই, উদ্যোগ-বিনিয়োগে স্থবিরতা, বিপুল রাজস্ব ঘাটতির মতো বিশেষ পরিস্থিতিতেও বেশি খরচের উচ্চাশা অর্থমন্ত্রীর। সরকার নতুন উন্নয়ন বাজেটে যে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা খরচ করবে বলছে, তাতে হয়তো মানুষের কাজের সুযোগ হবে, আয় বাড়বে। তবে এ কারণে দ্রব্যমূল্য বাড়বে এর চেয়েও বেশি হারে। অথচ অর্থমন্ত্রী কীভাবে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে ঠেকিয়ে রাখবেন–এটা তাঁর ছোট মাথায় ঢুকছে না। কারণ তিনি এত দিন জেনে এসেছেন, বাজারে টাকা বেশি এলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে—এটা চিরায়ত রীতি। ফলে সরকার কাগজে-কলমে ঠেকিয়ে রাখলেও বাস্তবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়তো পারবে না।

হাবিবের ভয়, সরকার বাজেটের প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ ঘাটতি পূরণে মরিয়া হবে। রাজস্ব আয় ঠিকমতো না হলে এ ঘাটতি আরও বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। টিভি স্ক্রলে তিনি দেখছেন, সরকার ৯৮ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা বিদেশ থেকে আর ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা দেশের ভেতর থেকে ঋণ নেবে। এর মধ্যে ব্যাংক থেকেই নেবে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। এ বড় বড় অঙ্ক দেখে সব তালগোল পাকিয়ে যায় তাঁর। তিনি এতটুকু জানেন, সরকার যদি এভাবে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে খরচ করে, তাহলে বেসরকারি খাত বিনিয়োগের জন্য ঠিকমতো ঋণ পাবে কি না সন্দেহ রয়েছে। আর তাতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হলে, মানুষের কাজের সুযোগ কমবে। এর ফলে কোম্পানি, ব্যক্তি বা সরকারের আয়ও কমে যেতে পারে।

নিঃসঙ্গ হাবিব টিভির পর্দায় অর্থমন্ত্রীর রঙিন স্কেচে আঁকা বাজেট বক্তৃতায় আশাজাগানিয়া বাংলাদেশের ছবি তুলে ধরা দেখছেন। শুনতে ভালোই লাগছে। কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন–অর্থমন্ত্রীর বাজেটের এ স্লোগানের মর্মবাণীর পুরো পাঠোদ্ধার করতে পারেন না। তবে সাড়ে ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রতিশ্রুতি সত্য হলে অনেক বেকারের চাকরি হবে, অনেকে হয়তো দারিদ্র্যসীমার বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসবে। দুই বছরের বেশি কষ্ট করার ইতিবাচক ছবিটা তাঁর চোখে কেন জানি ভাসছে না।

বাজেট বক্তৃতা চলছে, হাবিব উসখুস করছেন। কখনো চেয়ারে বসছেন, কখনো চেয়ার ছেড়ে বিছানায়। ভাবছেন, তাঁর মতো মধ্যবিত্তের বাস্তবজীবনে বাজেটের সরাসরি প্রভাব নেতিবাচক। তারপরও রীতি মেনে বাজেট করে সরকার। বাস্তবায়ন না হলেও বরাদ্দ আর অঙ্কের বড় বড় হিসাব ঠিকই মিলিয়ে দেন অর্থমন্ত্রী। তাঁর মন্ত্রণালয় এবারও ঠিক করেছে নতুন অর্থবছরে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা খরচ করে দেশ চালানোর ব্যয় মেটাবে, করোনার ক্ষতি পুষিয়ে উঠে মানুষের চাকরি দেবে, দারিদ্র্য কমাবে, অসহায় মানুষের জন্য সুলভ মূল্যে খাবার তুলে দেবে, নতুন নতুন রাস্তাঘাট, সেতু, অবকাঠামো বানাবে। ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফেরাবে, সবার ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবে, শিক্ষা, স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাবে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ শেষ এটি উদ্বোধনের অপেক্ষা, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেলের কাজ শেষ করে মানুষকে উন্নত জীবনের স্বাদ দেবে। এ সময় তাঁর বাসার কাছ দিয়ে যাওয়া নির্মাণাধীন মেট্রোরেলের কথা মনে পড়ে। আহা…কী যে ভালো লাগছে। তাঁর এত দিনের চলাচলের ভোগান্তির একটা হিল্লে হবে। আশায় আছেন, বাকি কটা দিন একটু আরামে অফিসে যেতে পারবেন। ভাবতেই ভালো লাগার আবেশ তৈরি মনে।

কিন্তু তার স্থায়িত্বই বা কতক্ষণ। কারণ এবারের বাজেটে যে ২ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে। তাতে না জানি কত অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কত টাকা অপচয় হবে। এসব ভাবতেই ভেতরে একটা কেউকেটা ভাব আসে। পরক্ষণেই মনে হয়, ‘আদার ব্যাপারী’র এসবের খোঁজ না রাখলেও চলবে।

হাবিবের ভালো লাগছে, বাজেটে এবার ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে বিপুল কর ছাড় দেওয়া হয়েছে, বহু পণ্যের শুল্ক-কর-ভ্যাট কমানো হয়েছে, কখনো প্রত্যাহার করা হয়েছে। আমদানিনির্ভরতা কমাতে এবং দেশীয় শিল্পের প্রসারে বিলাসবহুল পণ্য বিশেষ করে গাড়ি, ফ্রিজ, এয়ারকন্ডিশন, বিদেশি পাখি, বিদেশি ল্যাপটপ, বিদেশি ফলমূল, ফুল আমদানিতে শুল্ক-কর বাড়ানো হয়েছে। মতিঝিল ব্যাংকপাড়ায় অফিস হওয়ায় গেল কিছুদিন ধরে তিনি ডলার সংকট লক্ষ্য করেছে। তাঁরও মনে হয়েছে, দেশে উৎপাদিত পণ্য বাঁচাতে আমদানি নিরুৎসাহিত করা দরকার। তাহলে তাঁর মতো মানুষের চাকরির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। তবে দেশে উৎপাদিত মোবাইল ফোনসেটে ভ্যাট বাড়ানোয় কিছুটা হতাশ তিনি। ভেবেছিলেন, সামনে বোনাস-টোনাস পেলে একো দেশি ভালো স্মার্টফোন কিনবেন। কারণ, দুদিন পর বাচ্চার পড়াশোনার কাজেই হয়তো লাগবে। হতাশার আরও একটা কারণ এবারও ব্যক্তির করমুক্ত আয়ের সীমা না বাড়ানো। ধনীদের না ধরে কেন ছাপোষাদের দিকে সরকারের এত কড়া নজর, তা তিনি বুঝতে পারেন না।

টিভিতে দেখাচ্ছে, ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছায় অর্থমন্ত্রী দেশি শিল্পের জন্য বেশ শুল্ক-কর সুবিধা দিয়েছেন। ব্যবসা সম্প্রসারণে বিভিন্ন স্তরের করপোরেট কর কমানোর কথা বলেছেন। এতে তাঁর মতো সাধারণ ভোক্তা বা গ্রাহকের কী লাভ হবে, তা জানা নেই। কারণ অভিজ্ঞতা বলে, শুল্ক-করের সুবিধা শেষমেশ ব্যবসায়ীদের পকেটেই যায়। তাঁরা জিনিসপত্রের দাম খুব কমান এমন নজির নেই। ফলে শুল্ক-কর সুবিধা দেওয়ার সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়।

বাজেটে বিদেশে পাচার করা কালোটাকা ফিরিয়ে আনলে বিশেষ কর সুবিধা দেওয়ার খবর দেখে অবাক হাবিব। যদিও কিছুদিন ধরে পত্র-পত্রিকা, টিভিতে এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। এরা কম কর দিয়ে টাকা বৈধ করবেন, তাঁদের সরকারের কোনো সংস্থা প্রশ্ন করবে না বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়। তিনি বুঝতে পারছেন না, দেশের টাকা অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করে নামমাত্র কর দিয়ে বিনা প্রশ্নে বৈধ করার সুযোগ মিলবে–এটা কেমন বিচার? মন খারাপ হয়। পরক্ষণেই মনে হয়, এত জটিল বিষয় তাঁর না ভাবলেও চলবে। কারণ কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দীর্ঘ দিন বহাল থাকলেও তাতে বিরাট কোনো লাভ হয়েছে, এমন কেউ বলতে পারবে না।

অনেকক্ষণ ধরে বাজেট নিয়ে আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতে হাবিবের চা জুড়িয়ে পানি। সঙ্গে স্ত্রীর গরমাগরম বাণী, ‘চা ঠান্ডা হলো, আবারও বাজারেও যাচ্ছ না, কী হয়েছেটা কী?’ হতাশ হাবিব থেকে টিভি স্ক্রলে চোখ পড়ে সোমার। অর্থমন্ত্রীর বরাতে বলা হচ্ছে–নতুন অর্থবছরে স্পট অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে নতুন করদাতা ধরা হবে। বুঝতে পারেন না, এ কোন নতুন আপদ। হাবিব বোঝালেও আতঙ্কিত সোমার ভাবনা, রাস্তাঘাটে তাঁর মতো গৃহিণীর এ নিয়ে বিপদে পড়তে হবে। সোমার মনে হয়, দেশে প্রায় লাখের ওপরে কোটিপতি রয়েছেন। তাঁদের না ধরে এ কোন ব্যবস্থা।

অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, নতুন অর্থবছরে করের পরিধি বাড়াতে বিশেষ পদক্ষেপ থাকবে কর বিভাগের। তাতে অবশ্য খুব একটা আশাবাদী হতে পারেননি হাবিব। কারণ প্রতিবছরই এ ঘোষণা থাকে, বাস্তবায়ন হয় না। বর্তমানে ৭৫ লাখের বেশি টিআইএনধারী করদাতা থাকলেও কর দেন মাত্র ২৯ লাখ করদাতা। যদিও আসছে বাজেটে রিটার্নের সঙ্গে আগের বছরের কর দেওয়ার প্রত্যয়নপত্র দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাতে পরিস্থিতির খুব একটা হেরফের হবে—এমনটা মনে হচ্ছে না তাঁর।

টিভি চলছে, ইতিমধ্যে বাজেট বিশ্লেষণে চলে এসেছেন বিশেষজ্ঞরা। নানাজনের নানা মত। চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত বাড়ছে। বাজারে আর যাওয়া হয় না। এশার আজান হয়ে গেছে। ক্লান্ত হাবিব ফ্রেশ হয়ে নামাজের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। কিন্তু বুঝতে পারছেন না, জীবনের হিসাব মেলানোর ফরিয়াদ তিনি কাকে শোনাবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত