গৌতম রায়

ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কণ্ঠরোধের প্রক্রিয়া যে পর্যায়ে চলেছে, তাকে অঘোষিত জরুরি অবস্থা বললে অত্যুক্তি হবে না। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস, যারা বিজেপির মূল মস্তিষ্ক আরএসএসের নিবিড় ছায়ায় জন্ম নিয়ে তাদেরই আঁচলের তলায় লালিত-পালিত হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ শাসন করছে ১২ বছর, মানে এক যুগ ধরে, তাদের শাসনকালে এই রাজ্যে বর্তমানে শাসকবিরোধী একজন নাগরিকও নিরাপদ নয়। সভা-সমিতি-পত্রপত্রিকায় সরকারের সমালোচনা দূরের কথা, চায়ের বৈঠকে সরকারবিরোধী কোনো কথা বললেও একজন অতি নিরীহ নাগরিককে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে।
মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়টি ভারতে এখন সম্পূর্ণভাবে শাসকের মর্জির ওপর নির্ভর করছে। ভারতের একজন নাগরিক, তার নিজের দেশ কেমনভাবে চলছে, সে বিষয়ে ততখানিই নিজের মত প্রকাশ্যে বলতে পারবে, শাসক যতখানি বরদাশত করবে। শাসকের ছাড়পত্রের বাইরে যদি একজন ভারতীয় নাগরিক তার নিজের অভিমত প্রকাশ করে, তখনই তাঁকে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হতে হবে। সাতেরো দশকে ইন্দিরা গান্ধী প্রবর্তিত জরুরি অবস্থার চেয়েও ভয়ংকর পরিস্থিতি এই মুহূর্তে ভারতের প্রায় প্রতিটি প্রান্তে চলছে।
জরুরি অবস্থার সময় ভারতের নাগরিক সমাজের কণ্ঠ স্তব্ধ করা হয়েছিল, জরুরি অবস্থার দোহাই দিয়ে। আর এখন কোনো ‘দোহাই’ ছাড়াই চলছে নাগরিক সমাজের কণ্ঠ স্তব্ধ করার কাজ। শাসক শিবিরের কোনো মানুষও যদি পরিবর্তিত ভাবনায় এতটুকু শাসকবিরোধিতা করে বসে, তবে তার বিরুদ্ধেও পুলিশ, বিভিন্ন তদন্তকারী এজেন্সিকে লেলিয়ে দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে চরম হেনস্তা করা হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা চলে—বিজেপির জামানাতেই জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল সতপাল মালিকের পুলওয়ামা কাণ্ড ঘিরে মন্তব্যের জেরে সতপাল মালিককে আজও নানা ধরনের হেনস্তা করা হয়।
পশ্চিমবঙ্গের শাসক তৃণমূল কংগ্রেস দলটির জন্ম বিজেপির মস্তিষ্ক আরএসএসের জঠরে। অটল বিহারি বাজপেয়ির প্রধানমন্ত্রিত্বকালে এই দল বিজেপির সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারে অংশ নিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে প্রায় সাড়ে ছয় বছর বাজপেয়ি মন্ত্রিসভার মন্ত্রী ছিলেন। একসঙ্গে এনডিএ নামক নীতিবিহীন, সুবিধাবাদী জোটে থেকে তাঁরা লোকসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এনডিএর সব শরিকের একযোগে দেওয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি, যেখানে ধ্বংসপ্রাপ্ত ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের জমির ওপরেই তথাকথিত রামমন্দির তৈরির প্রতিশ্রুতি ছিল, সেই নির্বাচনী ইশতেহারে সই করে বিজেপির সঙ্গে একযোগে লোকসভার ভোটে লড়েছেন মমতা। জিতে মন্ত্রী হয়েছেন। সেই সম্পর্কের রেশ ধরে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বে কলকাতায় মমতার তথাকথিত অনশনের সময় সমর্থন ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে বিজেপির তৎকালীন জাতীয় সভাপতি রাজনাথ সিং দিল্লি থেকে উড়ে এসে মমতার অনশন মঞ্চে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেই মমতাই এখন মুসলিম ভোটের স্বার্থে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এসে বিজেপিবিরোধিতার অভিনয় করেন, যদিও বিজেপির মূল মস্তিষ্ক আরএসএস সম্পর্কে একটা নেতিবাচক কথা বলা তো দূরের বিষয়, আরএসএসকে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়ে চলেন ধারাবাহিকভাবে।
বিজেপি জাতীয় স্তরে যে পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে, সেই পরিবেশেরই ধারাবাহিকতা পশ্চিমবঙ্গে বয়ে নিয়ে চলেছে এখানকার শাসক তৃণমূল কংগ্রেস। গণতন্ত্রে বিরোধীর যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, সেটাকেই এই তৃণমূল কংগ্রেস স্বীকার করে না। তারা যখন দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ছিল, নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও বিরোধীশূন্য আইনসভা ছিল তাদের টার্গেট। এই লক্ষ্যে তারা বামপন্থীদের ঘর ভাঙাতে বহু রকমের চেষ্টা করেছে। অনেক ক্ষেত্রে সফলও হয়েছে। বামফ্রন্টের সিপিআই (এম) ছাড়া শরিক দলের কোনো কোনো বিধায়ক শাসক তৃণমূলের প্রলোভনে শেষ পর্যন্ত তাদের শিবিরে যোগ দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ফরোয়ার্ড ব্লকের তৎকালীন বিধায়ক উদয়ন গুহের নাম বলা যেতে পারে। বাম আমলে এই বিধায়ক থাকা, ২০১১ সালের ভোটেও ফরোয়ার্ড ব্লকের টিকিটে জেতা, তৃণমূল সরকার প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর টিভির টকশোতে নতুন সরকারের কঠোর সমালোচক উদয়ন এখন তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের একজন কেষ্টবিষ্টু নেতা।
কেবল নাগরিক সমাজই নয়, আমলাকুলের ভেতরে যাঁরা শাসকের গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিতে নারাজ, নাগরিক সমাজের প্রতি সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে কৃতসংকল্প, প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা দেওয়ারের ক্ষেত্রে বিরোধীদের প্রতি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অসূয়া নিয়ে চলেন না, সেই অংশের সৎ, নিষ্ঠাবান, কর্তব্যপরায়ণ করণিক থেকে আমলা এখন কার্যত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হাতে নজরবন্দী অবস্থায় থেকে নিজেদের পেশাজীবন অতিবাহিত করছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আমলাকুলকে দলীয় ক্যাডারে পরিণত করতে আন্তর্জাতিক স্তরের প্রযুক্তি কৌশল যেভাবে ব্যবহার করতে শুরু করেছে, তা কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের নজরদারির উদ্দেশ্যে বিদেশ থেকে কেনা ‘পেগাসাস’কে পর্যন্ত হার মানিয়েছে।
যেসব আমলা শাসকভজনা শিবিরে পশ্চিমবঙ্গে নাম লেখাননি, সামাজিক গণমাধ্যম, ফেসবুক ইত্যাদিতে তাঁদের ওপর যে ধরনের নিষেধাজ্ঞা নেমে আসছে, তাকে নিতান্ত কাকতালীয় বলে ধরলে মনে হয় না পরিস্থিতির আমরা সঠিক মূল্যায়ন করতে পারব। পাঁচতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থেকে নিরপেক্ষ পুলিশ বা প্রশাসনের একজন কর্তা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে সাধারণ টেলিফোনে নিজের কাছের মানুষদের সঙ্গে একটু মন খুলে কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন। এমনই নজরদারির ভেতরে তাঁরা রয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোনো মন্ত্রীর কাছে যদি মন্ত্রীর পরিচিত কেউ দর্শনপ্রার্থী হয়ে তাঁর সরকারি দপ্তরে দেখা করতে যান, তাহলে মন্ত্রীর ঘরে ঢোকার আগে সাক্ষাৎপ্রার্থীকে মন্ত্রীর আপ্তসহায়ক বা ওই স্তরের কোনো লোকের কাছে (আপ্তসহায়ক সরকারি কর্মী নন, মন্ত্রীর ব্যক্তি পছন্দের নিরিখে তিনি কর্মরত হন। মন্ত্রী বদলের সঙ্গে আপ্তসহায়কও বেশির ভাগ সময়ে বদল হন। এই পদে শাসক দলের কর্মীরাই কর্মরত থাকেন) নিজের মোবাইল ফোনটা জমা রাখতে হয়। অবিশ্বাসের পাহাড় এভাবেই ধীরে ধীরে নিজের উচ্চতার প্রমাণ দিচ্ছে। এই অবিশ্বাসের পাহাড়কেই এই ভারতে গণতন্ত্রের বুনিয়াদ হিসেবে তুলে ধরতে এ দেশের শাসক উঠে পড়ে লেগেছে।
ভারতে এখন নির্বাচনের বিষয়টি শাসকের ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। পশ্চিমবঙ্গে স্থানীয় সরকারের ভোটে নির্বাচনী নিয়মকানুনের ধার ধারে না মমতার সরকার। যখন থেকে মমতা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, তখন থেকে এই রাজ্যে কোনো প্রকৃত নির্বাচন হয় না। যা হয় তা হলো, ভোটের নামে মমতার ইচ্ছাপূরণ। মমতা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পৌরসভা, পঞ্চায়েতগুলো শাসক তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হয়েই পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে গণতন্ত্রকে টুঁটি টিপে মেরে ফেলতে মমতার উদ্যোগ আর সেই সময়ে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন কমিশনার মীরা পান্ডের লড়াই কিন্তু এই রাজ্যের মানুষ আজও ভোলেনি। কিন্তু মীরা পান্ডেদের মতো মেরুদণ্ডসম্পন্ন আমলাদের প্রতি কতটা হিংসাত্মক, বিদ্বেষপরায়ণ হতে পারেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে, সে সম্পর্কে ভারতের জাতীয় স্তরে বা আন্তর্জাতিক স্তরে মুক্তবুদ্ধির, গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন মানুষের সম্ভবত কোনো ধারণাই নেই।
লেখক: ভারতীয় ইতিহাসবিদ

ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কণ্ঠরোধের প্রক্রিয়া যে পর্যায়ে চলেছে, তাকে অঘোষিত জরুরি অবস্থা বললে অত্যুক্তি হবে না। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস, যারা বিজেপির মূল মস্তিষ্ক আরএসএসের নিবিড় ছায়ায় জন্ম নিয়ে তাদেরই আঁচলের তলায় লালিত-পালিত হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ শাসন করছে ১২ বছর, মানে এক যুগ ধরে, তাদের শাসনকালে এই রাজ্যে বর্তমানে শাসকবিরোধী একজন নাগরিকও নিরাপদ নয়। সভা-সমিতি-পত্রপত্রিকায় সরকারের সমালোচনা দূরের কথা, চায়ের বৈঠকে সরকারবিরোধী কোনো কথা বললেও একজন অতি নিরীহ নাগরিককে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে।
মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়টি ভারতে এখন সম্পূর্ণভাবে শাসকের মর্জির ওপর নির্ভর করছে। ভারতের একজন নাগরিক, তার নিজের দেশ কেমনভাবে চলছে, সে বিষয়ে ততখানিই নিজের মত প্রকাশ্যে বলতে পারবে, শাসক যতখানি বরদাশত করবে। শাসকের ছাড়পত্রের বাইরে যদি একজন ভারতীয় নাগরিক তার নিজের অভিমত প্রকাশ করে, তখনই তাঁকে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হতে হবে। সাতেরো দশকে ইন্দিরা গান্ধী প্রবর্তিত জরুরি অবস্থার চেয়েও ভয়ংকর পরিস্থিতি এই মুহূর্তে ভারতের প্রায় প্রতিটি প্রান্তে চলছে।
জরুরি অবস্থার সময় ভারতের নাগরিক সমাজের কণ্ঠ স্তব্ধ করা হয়েছিল, জরুরি অবস্থার দোহাই দিয়ে। আর এখন কোনো ‘দোহাই’ ছাড়াই চলছে নাগরিক সমাজের কণ্ঠ স্তব্ধ করার কাজ। শাসক শিবিরের কোনো মানুষও যদি পরিবর্তিত ভাবনায় এতটুকু শাসকবিরোধিতা করে বসে, তবে তার বিরুদ্ধেও পুলিশ, বিভিন্ন তদন্তকারী এজেন্সিকে লেলিয়ে দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে চরম হেনস্তা করা হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা চলে—বিজেপির জামানাতেই জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল সতপাল মালিকের পুলওয়ামা কাণ্ড ঘিরে মন্তব্যের জেরে সতপাল মালিককে আজও নানা ধরনের হেনস্তা করা হয়।
পশ্চিমবঙ্গের শাসক তৃণমূল কংগ্রেস দলটির জন্ম বিজেপির মস্তিষ্ক আরএসএসের জঠরে। অটল বিহারি বাজপেয়ির প্রধানমন্ত্রিত্বকালে এই দল বিজেপির সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারে অংশ নিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে প্রায় সাড়ে ছয় বছর বাজপেয়ি মন্ত্রিসভার মন্ত্রী ছিলেন। একসঙ্গে এনডিএ নামক নীতিবিহীন, সুবিধাবাদী জোটে থেকে তাঁরা লোকসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এনডিএর সব শরিকের একযোগে দেওয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি, যেখানে ধ্বংসপ্রাপ্ত ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের জমির ওপরেই তথাকথিত রামমন্দির তৈরির প্রতিশ্রুতি ছিল, সেই নির্বাচনী ইশতেহারে সই করে বিজেপির সঙ্গে একযোগে লোকসভার ভোটে লড়েছেন মমতা। জিতে মন্ত্রী হয়েছেন। সেই সম্পর্কের রেশ ধরে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বে কলকাতায় মমতার তথাকথিত অনশনের সময় সমর্থন ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে বিজেপির তৎকালীন জাতীয় সভাপতি রাজনাথ সিং দিল্লি থেকে উড়ে এসে মমতার অনশন মঞ্চে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেই মমতাই এখন মুসলিম ভোটের স্বার্থে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এসে বিজেপিবিরোধিতার অভিনয় করেন, যদিও বিজেপির মূল মস্তিষ্ক আরএসএস সম্পর্কে একটা নেতিবাচক কথা বলা তো দূরের বিষয়, আরএসএসকে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়ে চলেন ধারাবাহিকভাবে।
বিজেপি জাতীয় স্তরে যে পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে, সেই পরিবেশেরই ধারাবাহিকতা পশ্চিমবঙ্গে বয়ে নিয়ে চলেছে এখানকার শাসক তৃণমূল কংগ্রেস। গণতন্ত্রে বিরোধীর যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, সেটাকেই এই তৃণমূল কংগ্রেস স্বীকার করে না। তারা যখন দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ছিল, নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও বিরোধীশূন্য আইনসভা ছিল তাদের টার্গেট। এই লক্ষ্যে তারা বামপন্থীদের ঘর ভাঙাতে বহু রকমের চেষ্টা করেছে। অনেক ক্ষেত্রে সফলও হয়েছে। বামফ্রন্টের সিপিআই (এম) ছাড়া শরিক দলের কোনো কোনো বিধায়ক শাসক তৃণমূলের প্রলোভনে শেষ পর্যন্ত তাদের শিবিরে যোগ দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ফরোয়ার্ড ব্লকের তৎকালীন বিধায়ক উদয়ন গুহের নাম বলা যেতে পারে। বাম আমলে এই বিধায়ক থাকা, ২০১১ সালের ভোটেও ফরোয়ার্ড ব্লকের টিকিটে জেতা, তৃণমূল সরকার প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর টিভির টকশোতে নতুন সরকারের কঠোর সমালোচক উদয়ন এখন তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের একজন কেষ্টবিষ্টু নেতা।
কেবল নাগরিক সমাজই নয়, আমলাকুলের ভেতরে যাঁরা শাসকের গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিতে নারাজ, নাগরিক সমাজের প্রতি সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে কৃতসংকল্প, প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা দেওয়ারের ক্ষেত্রে বিরোধীদের প্রতি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অসূয়া নিয়ে চলেন না, সেই অংশের সৎ, নিষ্ঠাবান, কর্তব্যপরায়ণ করণিক থেকে আমলা এখন কার্যত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হাতে নজরবন্দী অবস্থায় থেকে নিজেদের পেশাজীবন অতিবাহিত করছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আমলাকুলকে দলীয় ক্যাডারে পরিণত করতে আন্তর্জাতিক স্তরের প্রযুক্তি কৌশল যেভাবে ব্যবহার করতে শুরু করেছে, তা কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের নজরদারির উদ্দেশ্যে বিদেশ থেকে কেনা ‘পেগাসাস’কে পর্যন্ত হার মানিয়েছে।
যেসব আমলা শাসকভজনা শিবিরে পশ্চিমবঙ্গে নাম লেখাননি, সামাজিক গণমাধ্যম, ফেসবুক ইত্যাদিতে তাঁদের ওপর যে ধরনের নিষেধাজ্ঞা নেমে আসছে, তাকে নিতান্ত কাকতালীয় বলে ধরলে মনে হয় না পরিস্থিতির আমরা সঠিক মূল্যায়ন করতে পারব। পাঁচতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থেকে নিরপেক্ষ পুলিশ বা প্রশাসনের একজন কর্তা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে সাধারণ টেলিফোনে নিজের কাছের মানুষদের সঙ্গে একটু মন খুলে কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন। এমনই নজরদারির ভেতরে তাঁরা রয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোনো মন্ত্রীর কাছে যদি মন্ত্রীর পরিচিত কেউ দর্শনপ্রার্থী হয়ে তাঁর সরকারি দপ্তরে দেখা করতে যান, তাহলে মন্ত্রীর ঘরে ঢোকার আগে সাক্ষাৎপ্রার্থীকে মন্ত্রীর আপ্তসহায়ক বা ওই স্তরের কোনো লোকের কাছে (আপ্তসহায়ক সরকারি কর্মী নন, মন্ত্রীর ব্যক্তি পছন্দের নিরিখে তিনি কর্মরত হন। মন্ত্রী বদলের সঙ্গে আপ্তসহায়কও বেশির ভাগ সময়ে বদল হন। এই পদে শাসক দলের কর্মীরাই কর্মরত থাকেন) নিজের মোবাইল ফোনটা জমা রাখতে হয়। অবিশ্বাসের পাহাড় এভাবেই ধীরে ধীরে নিজের উচ্চতার প্রমাণ দিচ্ছে। এই অবিশ্বাসের পাহাড়কেই এই ভারতে গণতন্ত্রের বুনিয়াদ হিসেবে তুলে ধরতে এ দেশের শাসক উঠে পড়ে লেগেছে।
ভারতে এখন নির্বাচনের বিষয়টি শাসকের ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। পশ্চিমবঙ্গে স্থানীয় সরকারের ভোটে নির্বাচনী নিয়মকানুনের ধার ধারে না মমতার সরকার। যখন থেকে মমতা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, তখন থেকে এই রাজ্যে কোনো প্রকৃত নির্বাচন হয় না। যা হয় তা হলো, ভোটের নামে মমতার ইচ্ছাপূরণ। মমতা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পৌরসভা, পঞ্চায়েতগুলো শাসক তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হয়েই পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে গণতন্ত্রকে টুঁটি টিপে মেরে ফেলতে মমতার উদ্যোগ আর সেই সময়ে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন কমিশনার মীরা পান্ডের লড়াই কিন্তু এই রাজ্যের মানুষ আজও ভোলেনি। কিন্তু মীরা পান্ডেদের মতো মেরুদণ্ডসম্পন্ন আমলাদের প্রতি কতটা হিংসাত্মক, বিদ্বেষপরায়ণ হতে পারেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে, সে সম্পর্কে ভারতের জাতীয় স্তরে বা আন্তর্জাতিক স্তরে মুক্তবুদ্ধির, গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন মানুষের সম্ভবত কোনো ধারণাই নেই।
লেখক: ভারতীয় ইতিহাসবিদ
গৌতম রায়

ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কণ্ঠরোধের প্রক্রিয়া যে পর্যায়ে চলেছে, তাকে অঘোষিত জরুরি অবস্থা বললে অত্যুক্তি হবে না। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস, যারা বিজেপির মূল মস্তিষ্ক আরএসএসের নিবিড় ছায়ায় জন্ম নিয়ে তাদেরই আঁচলের তলায় লালিত-পালিত হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ শাসন করছে ১২ বছর, মানে এক যুগ ধরে, তাদের শাসনকালে এই রাজ্যে বর্তমানে শাসকবিরোধী একজন নাগরিকও নিরাপদ নয়। সভা-সমিতি-পত্রপত্রিকায় সরকারের সমালোচনা দূরের কথা, চায়ের বৈঠকে সরকারবিরোধী কোনো কথা বললেও একজন অতি নিরীহ নাগরিককে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে।
মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়টি ভারতে এখন সম্পূর্ণভাবে শাসকের মর্জির ওপর নির্ভর করছে। ভারতের একজন নাগরিক, তার নিজের দেশ কেমনভাবে চলছে, সে বিষয়ে ততখানিই নিজের মত প্রকাশ্যে বলতে পারবে, শাসক যতখানি বরদাশত করবে। শাসকের ছাড়পত্রের বাইরে যদি একজন ভারতীয় নাগরিক তার নিজের অভিমত প্রকাশ করে, তখনই তাঁকে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হতে হবে। সাতেরো দশকে ইন্দিরা গান্ধী প্রবর্তিত জরুরি অবস্থার চেয়েও ভয়ংকর পরিস্থিতি এই মুহূর্তে ভারতের প্রায় প্রতিটি প্রান্তে চলছে।
জরুরি অবস্থার সময় ভারতের নাগরিক সমাজের কণ্ঠ স্তব্ধ করা হয়েছিল, জরুরি অবস্থার দোহাই দিয়ে। আর এখন কোনো ‘দোহাই’ ছাড়াই চলছে নাগরিক সমাজের কণ্ঠ স্তব্ধ করার কাজ। শাসক শিবিরের কোনো মানুষও যদি পরিবর্তিত ভাবনায় এতটুকু শাসকবিরোধিতা করে বসে, তবে তার বিরুদ্ধেও পুলিশ, বিভিন্ন তদন্তকারী এজেন্সিকে লেলিয়ে দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে চরম হেনস্তা করা হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা চলে—বিজেপির জামানাতেই জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল সতপাল মালিকের পুলওয়ামা কাণ্ড ঘিরে মন্তব্যের জেরে সতপাল মালিককে আজও নানা ধরনের হেনস্তা করা হয়।
পশ্চিমবঙ্গের শাসক তৃণমূল কংগ্রেস দলটির জন্ম বিজেপির মস্তিষ্ক আরএসএসের জঠরে। অটল বিহারি বাজপেয়ির প্রধানমন্ত্রিত্বকালে এই দল বিজেপির সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারে অংশ নিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে প্রায় সাড়ে ছয় বছর বাজপেয়ি মন্ত্রিসভার মন্ত্রী ছিলেন। একসঙ্গে এনডিএ নামক নীতিবিহীন, সুবিধাবাদী জোটে থেকে তাঁরা লোকসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এনডিএর সব শরিকের একযোগে দেওয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি, যেখানে ধ্বংসপ্রাপ্ত ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের জমির ওপরেই তথাকথিত রামমন্দির তৈরির প্রতিশ্রুতি ছিল, সেই নির্বাচনী ইশতেহারে সই করে বিজেপির সঙ্গে একযোগে লোকসভার ভোটে লড়েছেন মমতা। জিতে মন্ত্রী হয়েছেন। সেই সম্পর্কের রেশ ধরে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বে কলকাতায় মমতার তথাকথিত অনশনের সময় সমর্থন ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে বিজেপির তৎকালীন জাতীয় সভাপতি রাজনাথ সিং দিল্লি থেকে উড়ে এসে মমতার অনশন মঞ্চে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেই মমতাই এখন মুসলিম ভোটের স্বার্থে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এসে বিজেপিবিরোধিতার অভিনয় করেন, যদিও বিজেপির মূল মস্তিষ্ক আরএসএস সম্পর্কে একটা নেতিবাচক কথা বলা তো দূরের বিষয়, আরএসএসকে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়ে চলেন ধারাবাহিকভাবে।
বিজেপি জাতীয় স্তরে যে পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে, সেই পরিবেশেরই ধারাবাহিকতা পশ্চিমবঙ্গে বয়ে নিয়ে চলেছে এখানকার শাসক তৃণমূল কংগ্রেস। গণতন্ত্রে বিরোধীর যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, সেটাকেই এই তৃণমূল কংগ্রেস স্বীকার করে না। তারা যখন দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ছিল, নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও বিরোধীশূন্য আইনসভা ছিল তাদের টার্গেট। এই লক্ষ্যে তারা বামপন্থীদের ঘর ভাঙাতে বহু রকমের চেষ্টা করেছে। অনেক ক্ষেত্রে সফলও হয়েছে। বামফ্রন্টের সিপিআই (এম) ছাড়া শরিক দলের কোনো কোনো বিধায়ক শাসক তৃণমূলের প্রলোভনে শেষ পর্যন্ত তাদের শিবিরে যোগ দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ফরোয়ার্ড ব্লকের তৎকালীন বিধায়ক উদয়ন গুহের নাম বলা যেতে পারে। বাম আমলে এই বিধায়ক থাকা, ২০১১ সালের ভোটেও ফরোয়ার্ড ব্লকের টিকিটে জেতা, তৃণমূল সরকার প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর টিভির টকশোতে নতুন সরকারের কঠোর সমালোচক উদয়ন এখন তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের একজন কেষ্টবিষ্টু নেতা।
কেবল নাগরিক সমাজই নয়, আমলাকুলের ভেতরে যাঁরা শাসকের গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিতে নারাজ, নাগরিক সমাজের প্রতি সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে কৃতসংকল্প, প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা দেওয়ারের ক্ষেত্রে বিরোধীদের প্রতি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অসূয়া নিয়ে চলেন না, সেই অংশের সৎ, নিষ্ঠাবান, কর্তব্যপরায়ণ করণিক থেকে আমলা এখন কার্যত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হাতে নজরবন্দী অবস্থায় থেকে নিজেদের পেশাজীবন অতিবাহিত করছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আমলাকুলকে দলীয় ক্যাডারে পরিণত করতে আন্তর্জাতিক স্তরের প্রযুক্তি কৌশল যেভাবে ব্যবহার করতে শুরু করেছে, তা কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের নজরদারির উদ্দেশ্যে বিদেশ থেকে কেনা ‘পেগাসাস’কে পর্যন্ত হার মানিয়েছে।
যেসব আমলা শাসকভজনা শিবিরে পশ্চিমবঙ্গে নাম লেখাননি, সামাজিক গণমাধ্যম, ফেসবুক ইত্যাদিতে তাঁদের ওপর যে ধরনের নিষেধাজ্ঞা নেমে আসছে, তাকে নিতান্ত কাকতালীয় বলে ধরলে মনে হয় না পরিস্থিতির আমরা সঠিক মূল্যায়ন করতে পারব। পাঁচতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থেকে নিরপেক্ষ পুলিশ বা প্রশাসনের একজন কর্তা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে সাধারণ টেলিফোনে নিজের কাছের মানুষদের সঙ্গে একটু মন খুলে কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন। এমনই নজরদারির ভেতরে তাঁরা রয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোনো মন্ত্রীর কাছে যদি মন্ত্রীর পরিচিত কেউ দর্শনপ্রার্থী হয়ে তাঁর সরকারি দপ্তরে দেখা করতে যান, তাহলে মন্ত্রীর ঘরে ঢোকার আগে সাক্ষাৎপ্রার্থীকে মন্ত্রীর আপ্তসহায়ক বা ওই স্তরের কোনো লোকের কাছে (আপ্তসহায়ক সরকারি কর্মী নন, মন্ত্রীর ব্যক্তি পছন্দের নিরিখে তিনি কর্মরত হন। মন্ত্রী বদলের সঙ্গে আপ্তসহায়কও বেশির ভাগ সময়ে বদল হন। এই পদে শাসক দলের কর্মীরাই কর্মরত থাকেন) নিজের মোবাইল ফোনটা জমা রাখতে হয়। অবিশ্বাসের পাহাড় এভাবেই ধীরে ধীরে নিজের উচ্চতার প্রমাণ দিচ্ছে। এই অবিশ্বাসের পাহাড়কেই এই ভারতে গণতন্ত্রের বুনিয়াদ হিসেবে তুলে ধরতে এ দেশের শাসক উঠে পড়ে লেগেছে।
ভারতে এখন নির্বাচনের বিষয়টি শাসকের ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। পশ্চিমবঙ্গে স্থানীয় সরকারের ভোটে নির্বাচনী নিয়মকানুনের ধার ধারে না মমতার সরকার। যখন থেকে মমতা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, তখন থেকে এই রাজ্যে কোনো প্রকৃত নির্বাচন হয় না। যা হয় তা হলো, ভোটের নামে মমতার ইচ্ছাপূরণ। মমতা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পৌরসভা, পঞ্চায়েতগুলো শাসক তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হয়েই পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে গণতন্ত্রকে টুঁটি টিপে মেরে ফেলতে মমতার উদ্যোগ আর সেই সময়ে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন কমিশনার মীরা পান্ডের লড়াই কিন্তু এই রাজ্যের মানুষ আজও ভোলেনি। কিন্তু মীরা পান্ডেদের মতো মেরুদণ্ডসম্পন্ন আমলাদের প্রতি কতটা হিংসাত্মক, বিদ্বেষপরায়ণ হতে পারেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে, সে সম্পর্কে ভারতের জাতীয় স্তরে বা আন্তর্জাতিক স্তরে মুক্তবুদ্ধির, গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন মানুষের সম্ভবত কোনো ধারণাই নেই।
লেখক: ভারতীয় ইতিহাসবিদ

ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কণ্ঠরোধের প্রক্রিয়া যে পর্যায়ে চলেছে, তাকে অঘোষিত জরুরি অবস্থা বললে অত্যুক্তি হবে না। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস, যারা বিজেপির মূল মস্তিষ্ক আরএসএসের নিবিড় ছায়ায় জন্ম নিয়ে তাদেরই আঁচলের তলায় লালিত-পালিত হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ শাসন করছে ১২ বছর, মানে এক যুগ ধরে, তাদের শাসনকালে এই রাজ্যে বর্তমানে শাসকবিরোধী একজন নাগরিকও নিরাপদ নয়। সভা-সমিতি-পত্রপত্রিকায় সরকারের সমালোচনা দূরের কথা, চায়ের বৈঠকে সরকারবিরোধী কোনো কথা বললেও একজন অতি নিরীহ নাগরিককে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে।
মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়টি ভারতে এখন সম্পূর্ণভাবে শাসকের মর্জির ওপর নির্ভর করছে। ভারতের একজন নাগরিক, তার নিজের দেশ কেমনভাবে চলছে, সে বিষয়ে ততখানিই নিজের মত প্রকাশ্যে বলতে পারবে, শাসক যতখানি বরদাশত করবে। শাসকের ছাড়পত্রের বাইরে যদি একজন ভারতীয় নাগরিক তার নিজের অভিমত প্রকাশ করে, তখনই তাঁকে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হতে হবে। সাতেরো দশকে ইন্দিরা গান্ধী প্রবর্তিত জরুরি অবস্থার চেয়েও ভয়ংকর পরিস্থিতি এই মুহূর্তে ভারতের প্রায় প্রতিটি প্রান্তে চলছে।
জরুরি অবস্থার সময় ভারতের নাগরিক সমাজের কণ্ঠ স্তব্ধ করা হয়েছিল, জরুরি অবস্থার দোহাই দিয়ে। আর এখন কোনো ‘দোহাই’ ছাড়াই চলছে নাগরিক সমাজের কণ্ঠ স্তব্ধ করার কাজ। শাসক শিবিরের কোনো মানুষও যদি পরিবর্তিত ভাবনায় এতটুকু শাসকবিরোধিতা করে বসে, তবে তার বিরুদ্ধেও পুলিশ, বিভিন্ন তদন্তকারী এজেন্সিকে লেলিয়ে দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে চরম হেনস্তা করা হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা চলে—বিজেপির জামানাতেই জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল সতপাল মালিকের পুলওয়ামা কাণ্ড ঘিরে মন্তব্যের জেরে সতপাল মালিককে আজও নানা ধরনের হেনস্তা করা হয়।
পশ্চিমবঙ্গের শাসক তৃণমূল কংগ্রেস দলটির জন্ম বিজেপির মস্তিষ্ক আরএসএসের জঠরে। অটল বিহারি বাজপেয়ির প্রধানমন্ত্রিত্বকালে এই দল বিজেপির সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারে অংশ নিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে প্রায় সাড়ে ছয় বছর বাজপেয়ি মন্ত্রিসভার মন্ত্রী ছিলেন। একসঙ্গে এনডিএ নামক নীতিবিহীন, সুবিধাবাদী জোটে থেকে তাঁরা লোকসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এনডিএর সব শরিকের একযোগে দেওয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি, যেখানে ধ্বংসপ্রাপ্ত ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের জমির ওপরেই তথাকথিত রামমন্দির তৈরির প্রতিশ্রুতি ছিল, সেই নির্বাচনী ইশতেহারে সই করে বিজেপির সঙ্গে একযোগে লোকসভার ভোটে লড়েছেন মমতা। জিতে মন্ত্রী হয়েছেন। সেই সম্পর্কের রেশ ধরে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বে কলকাতায় মমতার তথাকথিত অনশনের সময় সমর্থন ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে বিজেপির তৎকালীন জাতীয় সভাপতি রাজনাথ সিং দিল্লি থেকে উড়ে এসে মমতার অনশন মঞ্চে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেই মমতাই এখন মুসলিম ভোটের স্বার্থে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এসে বিজেপিবিরোধিতার অভিনয় করেন, যদিও বিজেপির মূল মস্তিষ্ক আরএসএস সম্পর্কে একটা নেতিবাচক কথা বলা তো দূরের বিষয়, আরএসএসকে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়ে চলেন ধারাবাহিকভাবে।
বিজেপি জাতীয় স্তরে যে পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে, সেই পরিবেশেরই ধারাবাহিকতা পশ্চিমবঙ্গে বয়ে নিয়ে চলেছে এখানকার শাসক তৃণমূল কংগ্রেস। গণতন্ত্রে বিরোধীর যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, সেটাকেই এই তৃণমূল কংগ্রেস স্বীকার করে না। তারা যখন দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ছিল, নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও বিরোধীশূন্য আইনসভা ছিল তাদের টার্গেট। এই লক্ষ্যে তারা বামপন্থীদের ঘর ভাঙাতে বহু রকমের চেষ্টা করেছে। অনেক ক্ষেত্রে সফলও হয়েছে। বামফ্রন্টের সিপিআই (এম) ছাড়া শরিক দলের কোনো কোনো বিধায়ক শাসক তৃণমূলের প্রলোভনে শেষ পর্যন্ত তাদের শিবিরে যোগ দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ফরোয়ার্ড ব্লকের তৎকালীন বিধায়ক উদয়ন গুহের নাম বলা যেতে পারে। বাম আমলে এই বিধায়ক থাকা, ২০১১ সালের ভোটেও ফরোয়ার্ড ব্লকের টিকিটে জেতা, তৃণমূল সরকার প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর টিভির টকশোতে নতুন সরকারের কঠোর সমালোচক উদয়ন এখন তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের একজন কেষ্টবিষ্টু নেতা।
কেবল নাগরিক সমাজই নয়, আমলাকুলের ভেতরে যাঁরা শাসকের গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিতে নারাজ, নাগরিক সমাজের প্রতি সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে কৃতসংকল্প, প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা দেওয়ারের ক্ষেত্রে বিরোধীদের প্রতি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অসূয়া নিয়ে চলেন না, সেই অংশের সৎ, নিষ্ঠাবান, কর্তব্যপরায়ণ করণিক থেকে আমলা এখন কার্যত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হাতে নজরবন্দী অবস্থায় থেকে নিজেদের পেশাজীবন অতিবাহিত করছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আমলাকুলকে দলীয় ক্যাডারে পরিণত করতে আন্তর্জাতিক স্তরের প্রযুক্তি কৌশল যেভাবে ব্যবহার করতে শুরু করেছে, তা কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের নজরদারির উদ্দেশ্যে বিদেশ থেকে কেনা ‘পেগাসাস’কে পর্যন্ত হার মানিয়েছে।
যেসব আমলা শাসকভজনা শিবিরে পশ্চিমবঙ্গে নাম লেখাননি, সামাজিক গণমাধ্যম, ফেসবুক ইত্যাদিতে তাঁদের ওপর যে ধরনের নিষেধাজ্ঞা নেমে আসছে, তাকে নিতান্ত কাকতালীয় বলে ধরলে মনে হয় না পরিস্থিতির আমরা সঠিক মূল্যায়ন করতে পারব। পাঁচতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থেকে নিরপেক্ষ পুলিশ বা প্রশাসনের একজন কর্তা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে সাধারণ টেলিফোনে নিজের কাছের মানুষদের সঙ্গে একটু মন খুলে কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন। এমনই নজরদারির ভেতরে তাঁরা রয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোনো মন্ত্রীর কাছে যদি মন্ত্রীর পরিচিত কেউ দর্শনপ্রার্থী হয়ে তাঁর সরকারি দপ্তরে দেখা করতে যান, তাহলে মন্ত্রীর ঘরে ঢোকার আগে সাক্ষাৎপ্রার্থীকে মন্ত্রীর আপ্তসহায়ক বা ওই স্তরের কোনো লোকের কাছে (আপ্তসহায়ক সরকারি কর্মী নন, মন্ত্রীর ব্যক্তি পছন্দের নিরিখে তিনি কর্মরত হন। মন্ত্রী বদলের সঙ্গে আপ্তসহায়কও বেশির ভাগ সময়ে বদল হন। এই পদে শাসক দলের কর্মীরাই কর্মরত থাকেন) নিজের মোবাইল ফোনটা জমা রাখতে হয়। অবিশ্বাসের পাহাড় এভাবেই ধীরে ধীরে নিজের উচ্চতার প্রমাণ দিচ্ছে। এই অবিশ্বাসের পাহাড়কেই এই ভারতে গণতন্ত্রের বুনিয়াদ হিসেবে তুলে ধরতে এ দেশের শাসক উঠে পড়ে লেগেছে।
ভারতে এখন নির্বাচনের বিষয়টি শাসকের ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। পশ্চিমবঙ্গে স্থানীয় সরকারের ভোটে নির্বাচনী নিয়মকানুনের ধার ধারে না মমতার সরকার। যখন থেকে মমতা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, তখন থেকে এই রাজ্যে কোনো প্রকৃত নির্বাচন হয় না। যা হয় তা হলো, ভোটের নামে মমতার ইচ্ছাপূরণ। মমতা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পৌরসভা, পঞ্চায়েতগুলো শাসক তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হয়েই পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে গণতন্ত্রকে টুঁটি টিপে মেরে ফেলতে মমতার উদ্যোগ আর সেই সময়ে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন কমিশনার মীরা পান্ডের লড়াই কিন্তু এই রাজ্যের মানুষ আজও ভোলেনি। কিন্তু মীরা পান্ডেদের মতো মেরুদণ্ডসম্পন্ন আমলাদের প্রতি কতটা হিংসাত্মক, বিদ্বেষপরায়ণ হতে পারেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে, সে সম্পর্কে ভারতের জাতীয় স্তরে বা আন্তর্জাতিক স্তরে মুক্তবুদ্ধির, গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন মানুষের সম্ভবত কোনো ধারণাই নেই।
লেখক: ভারতীয় ইতিহাসবিদ

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কণ্ঠরোধের প্রক্রিয়া যে পর্যায়ে চলেছে, তাকে অঘোষিত জরুরি অবস্থা বললে অত্যুক্তি হবে না। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস, যারা বিজেপির মূল মস্তিষ্ক আরএসএসের নিবিড় ছায়ায় জন্ম নিয়ে তাদেরই আঁচলের তলায় লালিত-পালিত হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ শাসন করছে ১২ বছর, মানে এক যুগ ধরে, ত
০২ জুন ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কণ্ঠরোধের প্রক্রিয়া যে পর্যায়ে চলেছে, তাকে অঘোষিত জরুরি অবস্থা বললে অত্যুক্তি হবে না। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস, যারা বিজেপির মূল মস্তিষ্ক আরএসএসের নিবিড় ছায়ায় জন্ম নিয়ে তাদেরই আঁচলের তলায় লালিত-পালিত হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ শাসন করছে ১২ বছর, মানে এক যুগ ধরে, ত
০২ জুন ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কণ্ঠরোধের প্রক্রিয়া যে পর্যায়ে চলেছে, তাকে অঘোষিত জরুরি অবস্থা বললে অত্যুক্তি হবে না। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস, যারা বিজেপির মূল মস্তিষ্ক আরএসএসের নিবিড় ছায়ায় জন্ম নিয়ে তাদেরই আঁচলের তলায় লালিত-পালিত হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ শাসন করছে ১২ বছর, মানে এক যুগ ধরে, ত
০২ জুন ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কণ্ঠরোধের প্রক্রিয়া যে পর্যায়ে চলেছে, তাকে অঘোষিত জরুরি অবস্থা বললে অত্যুক্তি হবে না। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস, যারা বিজেপির মূল মস্তিষ্ক আরএসএসের নিবিড় ছায়ায় জন্ম নিয়ে তাদেরই আঁচলের তলায় লালিত-পালিত হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ শাসন করছে ১২ বছর, মানে এক যুগ ধরে, ত
০২ জুন ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫