বিধান রিবেরু

‘শ্রদ্ধেয় (সংস্কৃতিবিষয়ক) মন্ত্রী, শুনুন, আমি আর নিতে পারছি না। আমি লড়াই চালিয়ে যাব। আমাকে মেরে ফেলুন, অথবা যা ইচ্ছা তা-ই করুন...আমাকে ধ্বংস করে ফেলুন, কিন্তু আমি আমার অধিকার চাই।’
খুন হওয়ার ঠিক আগের বছর, ২০২২ সালে একটি ভিডিওবার্তায় নিরুপায় হয়ে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার এই ঘোষণা দিয়েছিলেন ইরানের নব্য বাস্তববাদী ঘরানার চলচ্চিত্রের প্রতিভূ দারিয়ুস মেহেরজুই, এতে যদি প্রাণ যায় তাতেও তাঁর পরোয়া নেই। ২০১৯ সালে নির্মিত ‘লা মাইনর’ ছবিটি ইরান সরকার ছাড়পত্র দিচ্ছিল না বলে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন বর্ষীয়ান মেহেরজুই।
আর ২০২৩ সালে এসে যখন সস্ত্রীক তাঁকে ছুরিকাঘাতে নিজ বাড়িতে নির্মমভাবে খুন হতে হলো, তখন এর সঙ্গে ইরান সরকারের ১৯৯৮ সালে গোপন বাহিনী দিয়ে ভিন্নমতাবলম্বী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করানোর ঘটনার যোগ খুঁজতে পারেন অনেকে। খুঁজছেন বলেই মেহেরজুইয়ের হত্যার পর দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ বাইদি বিষয়টি উড়িয়ে দেন। বলেন, এটার সঙ্গে আটানব্বইয়ের নভেম্বরের সেই হত্যাকাণ্ডের কোনো যোগ নেই। যদিও তদন্তকারীরা বলছেন, মতপার্থক্যের কারণেই ৮৩ বছর বয়সে খুন হতে হয়েছে মেহেরজুইকে।
১. কথা হলো, মেহেরজুইকে এত ভয় কেন? কেনইবা এই নির্মাতা এত গুরুত্বপূর্ণ? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে চলে যেতে হবে ইতিহাসের পত্র-পল্লবে। যদি আমরা ১৯০৫ সালের দিকে তাকাই দেখব, সেই সময় পারস্যে সাংবিধানিক বিপ্লব শুরু হয়েছে। কাজার বংশের রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে জনগণ গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়নে বদ্ধপরিকর। সংবিধানকে ঘিরে অনেকবার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সে সময়। এরই মধ্যে ১৯০৮ সালে দেশটিতে আবিষ্কার হয় তেলের খনি। এ ঘটনাটি মনে রাখা ভীষণ জরুরি।
অন্তত মেহেরজুইয়ের যুগান্তকারী ছবি ‘গাভ’ বা ‘গাভি’ বোঝার জন্য। সে প্রসঙ্গে একটু পরে আসছি। তো, তেলের খনি আবিষ্কারের পর পারস্যের ওপর নজর পড়ে বহির্বিশ্বের। ১৯১১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে ক্ষমতা দখল করেন রেজা শাহ পাহলভি এবং ১৯২৩ সালে তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু তিনি নিজেও আবার পেছনের দিকে হাঁটা শুরু করেন, অর্থাৎ ১৯২৫ সালে মজলিশ বা সংসদের ভোট নিয়ে নিজেকে সম্রাট ঘোষণা করেন। ফলে দেশটিতে রাজতন্ত্রের যাত্রা পুনরায় শুরু হয়, সামান্য যাত্রাবিরতি দিয়ে। আর সাংবিধানিক বিপ্লবের স্বপ্ন তখনকার মতো সেখানেই মাটিচাপা পড়ে। রেজা শাহের স্বৈরাচারী আমলে নিষিদ্ধ করা হয় “তা’জিয়ে” অভিনয়, ১৯৩৫ সালে পারস্যের নাম পাল্টে রাখা হয় ইরান।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর পর রেজা শাহের প্রতিপত্তি কিছুটা কমতে থাকে। অক্ষশক্তির পক্ষে থাকা ইরান চাপে পড়ে যুদ্ধকালে। ইংরেজ ও রুশ শক্তির কাছে মাথা নত করতে হয় তাদের। ১৯৪১ সালে সেখানে গঠিত হয় কমিউনিস্ট পার্টি তুদেহ্। তারা ক্রমাগত শক্তি সঞ্চয় করে পাহলভি শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম অব্যাহত রাখে, কখনো প্রকাশ্যে, কখনো বা গোপনে। এরই মধ্যে ১৯৫১ সালে মজলিশের সমর্থন নিয়ে তেলের খনি জাতীয়করণ করে ইরান সরকার। শুরু হয় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার নানা তৎপরতা।
তারা তাঁকেই রাখতে চায় ক্ষমতায়, যিনি মার্কিন স্বার্থকে সংরক্ষণ করবেন। এখানে তেলের খনি একটি বড় প্রভাবক বটে। মার্কিন মদদে ষাটের দশকে শাহের নির্দেশে তৈরি হয় গোপন পুলিশ ‘সাভাক’, তারা বিরোধী স্বরকে দমন করতে তৎপর হয়ে ওঠে। এই স্বৈরতন্ত্রের কালে ইরানে তুদেহ পার্টি; পার্টি থেকে বেরিয়ে এসে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করা কমরেডরা এবং আলি শরিয়তির নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক ইসলামি ভাবধারার লোকজনই শাহের মূল বিরোধী কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠে। ঠিক সেই দশকেরই শেষভাগে দারিয়ুস মেহেরজুই বানালেন ‘গাভ’ (১৯৬৯)।
২. ইরানে যখন রাজতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্র হাত ধরাধরি করে চলছে, তখন ১৯৬৯ সালে দারিয়ুস মেহেরজুইয়ের ‘গাভ’ ও মাসুদ কিমিয়াইয়ের ‘কেইসার’ ইরানের মূলধারার চলচ্চিত্রের ভিত নাড়িয়ে দেয়। এই দুই চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে ইরানের চলচ্চিত্রে নতুন ধরনের প্রবাহ বইতে শুরু করে। আর এ কারণেই মেহেরজুইকে বলা হয় ইরানের নয়া ঢেউয়ের অন্যতম পথিকৃৎ। ‘গাভ’ ছবিটি দিয়ে মেহেরজুই কেবল চলচ্চিত্রের পুরোনো ধারাকেই নাকচ করেননি; বরং রাষ্ট্রে যা চলছিল, বিকারগ্রস্ততা, শঙ্কা ও সত্যকে ধামাচাপা দেওয়ার প্রচেষ্টা, সেটাকেও তিনি রূপকের আকারে সরল বয়ানে হাজির করেন।
মেহেরজুই ‘গাভ’ ছবির কাহিনি নিয়েছেন ১৯৬৪ সালে গোলাম হোসেন সাইদির লেখা বিখ্যাত উপন্যাস ‘আজাদারান-ই বায়াল’ (বায়ালের বিলাপ) থেকে। সাইদি বেশ পরিচিত বাম ঘরানার রাজনৈতিক লেখক। ইরানের গ্রামকে কেন্দ্র করে রচিত সেখানকার দারিদ্র্য ও রূপকধর্মী কাহিনির কারণে বইটিও সরকারি নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছিল। মজার বিষয় হলো মেহেরজুই কিন্তু সংস্কৃতি ও শিল্পবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুদান নিয়ে ছবিটি নির্মাণ করেন, ছবি শেষ হওয়ার পর কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে এবং তারা অনেকগুলো জায়গা সংশোধন করতে বলে।
অনেক দিন ছবিটি আটকেও রাখে। কিন্তু সরকারের তোয়াক্কা না করে গোপনে বাইরের চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি পাঠিয়ে দেন মেহেরজুই।৩২তম ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি যখন ফিপ্রেসি পুরস্কারের পাশাপাশি আরও কয়েকটি উৎসবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হয়, তখন সরকারের ওপর চাপ বাড়ে। শিকাগো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ছবির মূল চরিত্রে অভিনয়ের জন্য এজাতুল্লাহ এনতেজামি শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পাওয়ার পর শাহের সরকার বাধ্য হয় ছবিটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে। আর এ ঘটনাই ইরানের নতুন চলচ্চিত্রের সম্ভাবনার পথ প্রশস্ত করে দেয়।
ইরানে ইসলামি বিপ্লবোত্তর সর্বময় নেতা আয়তুল্লাহ খোমেনির ছবিটি পছন্দ হওয়ায়, ক্ষমতা বদলের পর ছবিটির ওপর আর কোনো খড়্গ নেমে আসেনি। তবে রাষ্ট্র কখনো যে শিল্পীর বন্ধু হয় না, তা জীবনের শেষনিশ্বাসেও জেনে গেছেন মেহেরজুই। আর যে শিল্পী প্রতিষ্ঠানবিরোধী তাঁকে নানাবিধ প্রতিকূলতার ভেতর পড়তে হবে, রোষের শিকার হতে হবে। মেহেরজুইয়ের দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘গাভ’ দিয়েই সেটা প্রমাণিত হয়। আদতে কী ছিল সেই রাজনৈতিক বক্তব্যসমৃদ্ধ, দার্শনিক ছবিতে?
ইরানের প্রত্যন্ত এক গ্রামে হাসান নামের এক দরিদ্র কৃষক তার গরুকে ভীষণ ভালোবাসে। স্নান, আহার, বিহার সবই এই গাভিকে কেন্দ্র করে। হাসান এর যত্নআত্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ গাভিটি গর্ভবতী। গ্রামের অধিকাংশ লোকজন সে রকম কোনো কাজ করে না। কয়েকটি চরিত্র বেশ চমকপ্রদ। যেমন এক মানসিক প্রতিবন্ধী চরিত্র ও আরেকটি জানালায় বসে থাকা চরিত্র। ছবিটি শুরু হয় প্রতিবন্ধী মানুষটিকে নিয়ে গ্রামের মাস্তান ধরনের এক লোক ও ছোট ছেলেমেয়েদের নিষ্ঠুর আচরণ দিয়ে। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বলে লোকটি প্রতিবাদ করতে পারে না। ভাবে, এটাই বুঝি খেলা। সে-ও মেতে ওঠে সবার সঙ্গে। আর জানালায় বসে থাকা লোকটি অলস দর্শক। সে শুধু দেখেই চলে। নিষ্ক্রিয় থেকে দৃষ্টি মেলে রাখাই যেন তার কাজ।
গ্রামের নিস্তরঙ্গ জীবনে একদিন সবার কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। হাসান একটি কাজে গ্রামের বাইরে যায়। রাতে এক অজানা কারণে গাভিটি প্রাণ হারায়। গ্রামবাসী হাসানের গাভিপ্রীতি সম্পর্কে জানে। কাজেই তারা সিদ্ধান্ত নেয় সত্য গোপন করে গাভিটিকে মাটিচাপা দিয়ে দেবে। আর হাসানকে বলবে, গাভিটি দড়ি ছিঁড়ে চলে গেছে, খুঁজে আনা হচ্ছে। হাসান যখন গ্রামে ফেরে, কেউ আর তার সঙ্গে কথা বলে না। প্রতিক্রিয়া কী হয়, সেটা ভেবেই সবাই শঙ্কিত। হাসানকে প্রথমে বলা হয় গরুটি পালিয়েছে। হাসানের স্বভাবতই কথাটি বিশ্বাস হয় না এবং একপর্যায়ে হাসান বিমর্ষ ও বিষণ্ন অবস্থা থেকে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
সে নিজেই গাভিতে পরিণত হয়। গোয়ালঘরে থাকে, ঘাসবিচালি খায়। এরই ফাঁকে ফাঁকে আমরা দেখি বুলোরি নামের এক গ্রাম থেকে দস্যু প্রকৃতির লোক ঘোরাফেরা করে হাসানদের গ্রামে, পশু চুরি করাই তাদের প্রধান কাজ। তো এদের ব্যাপারেও সর্বদা সজাগ থাকতে হয় গ্রামবাসীকে। হাসানও ভয় পেত, এরা তার প্রিয় গাভিটিকে চুরি করতে পারে। শঙ্কা সত্য হয়। এরা এসেছিল গরু চুরি করতে, কিন্তু গোয়ালঘরে ঢুকে দেখে গরু নেই, গরুর জায়গায় স্বয়ং মানুষ ধেনু হয়ে বসে আছে।
পরিস্থিতি যখন আরও করুণ হয়ে পড়ে, হাসানের মরো মরো অবস্থা, তখন গ্রামবাসী ঠিক করে হাসানকে অন্য গ্রামে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভেতর তিনজন গ্রামবাসী হাসানকে নিয়ে রওনা দেয়। কিন্তু হাসান কি আর মানুষ আছে? সে তো পশু! পাশবিক শক্তির সঙ্গে পেরে না উঠে গ্রামবাসী তাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে যেতে থাকে। একজন তো তাকে প্রহার করে বসে। হাসান যেন গোঁয়ার গরু, রাখালের লাঠির বাড়ি খাচ্ছে। গরু যেমন দড়ি ছিঁড়ে দৌড় দেয়, হাসানও সে রকম একপর্যায়ে ছুটতে গিয়ে উঁচু পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়ে ভবলীলা সাঙ্গ করে।
এই চলচ্চিত্রে একাধিক স্তরে রাজনৈতিক বক্তব্য যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বয়ান, রয়েছে দার্শনিক চিন্তা। আমাদের এই আলোচনার শুরুতে আমরা বলেছিলাম, ইরানের তেলের খনি আবিষ্কারের বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই চলচ্চিত্রে গরুটিই সেই তেলের খনির রূপক হিসেবে উপস্থিত ছিল। গরুটিকে যেকোনো মুহূর্তে চুরি করে নিয়ে যেতে পারে বহিঃশত্রুরা, এই শঙ্কায় হাসান তথা গোটা গ্রামবাসী ছিল শঙ্কিত। গ্রামটি যেন ইরানের এক ছোট সংস্করণ। শঙ্কাতেই তাদের দিন কাটে, কখনো তাদের সম্পদ চুরির শঙ্কা, আবার কখনো বা সত্য প্রকাশ হয়ে পড়ার শঙ্কা।
১৯৭৩ সালে শাহের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ শঙ্কাই প্রতিধ্বনিত হয়েছিল। শাহের শঙ্কা ছিল পশ্চিমের কাছে তেল বিক্রিতে আরবদের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে। মূলত তেলের খনি আবিষ্কারের পর থেকেই ইরানি শাসকগোষ্ঠীর শঙ্কা শুরু। হাসানের যেমন গর্ভবতী গাভি, সেই গাভির কাছ থেকে গ্রামের সবাই দুধ পেত, ঠিক সে রকম শাহের তেলের খনি, যা জনগণের ভালো-মন্দের সঙ্গে জড়িত ছিল। হাসান যেমন ভীত থাকত কখন তার পশুকে অন্যরা চুরি করে নিয়ে যায়, শাহেরও একই দশা ছিল আরবদের নিয়ে। কাজেই গরু এখানে শুধু অভ্যন্তরীণ রাজনীতির অংশ হিসেবেই উপস্থাপিত হয়নি, বলা যায় ভূরাজনৈতিক রূপক হিসেবেও গাভিটি যথার্থ রূপে ধরা দিয়েছে।
ফেরেইদুন গোভানলুর সাদাকালো সিনেমাটোগ্রাফিতে ছবির আরও একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায়; সেটি হলো গ্রামের অর্থনীতি: দরিদ্র গ্রামীণ জনগোষ্ঠী, যাদের সেই অর্থে কোনো কিছু করার নেই। পাথুরে জমিন। শুষ্ক আবহাওয়া। তার ভেতর এই দুধেল গাই আর গ্রামের মাঝখানে থাকা ছোট্ট জলাধার—এ দুটোই গ্রামবাসীকে বাঁচিয়ে রাখছিল। অপরদিকে দার্শনিক প্রতীতির দেখা মেলে: আমরা দেখি, কেমন করে একজন মানুষ নিজের অস্তিত্বকে অতিক্রম করে আরেক অস্তিত্বের ভেতর প্রবেশ করে। এক অস্তিত্ব থেকে আরেক অস্তিত্বে পরিণত হওয়ার অভিযাত্রাটিও এই চলচ্চিত্রে চমৎকারভাবে দেখিয়েছেন মেহেরজুই। হাসান যেন পরজন্মে নয়, এক জনমেই দুবার জন্মলাভ করে। তার এই অপূর্ব রূপান্তরে চমকিত গ্রামবাসী হকচকিত হয়ে প্রকারান্তরে তাকে হত্যাই করে। সমাজচ্যুত ব্যক্তিকে সমাজ আর গ্রহণ করে না। কিন্তু ব্যক্তি সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয় কেন? সমাজ সত্যকে মাটিচাপা দেয় বলে? নাকি প্রয়োজনের সময় তারা সহমর্মী হতে পারে না বলে?
অনেকেরই হয়তো জানা, পারস্যে ইসলাম ধর্মের আগে প্রভাবশালী ধর্ম হিসেবে বিরাজ করত জরথ্রুষ্ট্রবাদ। এই মতবাদ বা ধর্মানুসারে গরু হলো পৌরাণিক প্রথম প্রাণী, যে প্রাণী শুভ উদ্দেশ্যের প্রতীক। তো এই গুরুত্বপূর্ণ প্রাণীটি যখন মারা যায় এবং তাকে গোটা গ্রামবাসী মাটিচাপা দেয়, তখন আসলে পুরো সমাজই অশুভের দিকে যাত্রা শুরু করে। আমরা চলচ্চিত্রে সেটাই দেখি। বাইরের এলাকা থেকে গ্রামে হানা দেওয়ার ঘটনা ঘটে। হাসানের পরিবর্তন ও মৃত্যু হয়। পুরো গ্রাম যেন এক শোকের ভেতর প্রবেশ করে। থমথমে পরিস্থিতি। আর ওই যে একটা লোক জানালা দিয়ে শুধু তাকিয়ে দেখে, সে যেন দর্শকের প্রতিনিধি। আমরা প্রত্যক্ষ করছি গোটা গ্রামের কর্মকাণ্ড ও ভবিতব্য। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী লোকটি কি সমাজে থাকা বুদ্ধিজীবী? যাদের সমাজ ভয় পায়, তারা সত্যকে প্রকাশ করে দিতে পারে বলে?
৩. মেহেরজুই কেন গুরুত্বপূর্ণ, সেটি শুধু ‘গাভ’ নির্মাণের পর প্রতিক্রিয়া দেখেই বোঝা যায়। তবে মেহেরজুই আরও চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। ‘গাভে’র পর তিনি ‘আগা-ই হালু’ (মিস্টার সিম্পলটন, ১৯৬৯) বানিয়েছেন। সেখানে এক সরকারি কর্মচারীর কার্যকলাপ তিনি তুলে ধরেছেন রম্যের মাধ্যমে। এরপর তিনি নির্মাণ করেছেন রূপকধর্মী রাজনৈতিক ছবি ‘পোস্টচি’ (দি পোস্টম্যান, ১৯৭২), যাতে দেখানো হয় এক নববিবাহিত কিন্তু যৌনতায় অক্ষম এক ডাকবাহকের কাহিনি। ‘দায়েরেহ-এ মিনা’ (দি সাইকেল, ১৯৭৫) ছবিতে বস্তিতে থাকা এক ছেলের গল্প বলেন মেহেরজুই, যে ছেলেটি অসুস্থ বাবাকে শহরে আনে চিকিৎসার জন্য। তো একে একে মেহেরজুই সমগ্র জীবনে ২৪টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন।
তিনি ইতালির নব্য বাস্তববাদী ধারার চলচ্চিত্রের দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। মেহেরজুই নব্য বাস্তববাদের সারকথাটি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন বলেই শুধু ইরানে নয়, গোটা দুনিয়াতেই গুরুত্বপূর্ণ নির্মাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, নব্য বাস্তববাদ বলতে তিনি বোঝেন, নিজের আপন ভূমি ও সংস্কৃতির ভেতর তাকানো, সেখানকার বাস্তবতাকে তুলে ধরা। আর যতই আপনি নিজস্ব সংস্কৃতির গভীর থেকে বয়ান তুলে আনবেন, ততই আপনি আরও বেশি করে বৈশ্বিক হয়ে উঠবেন। দারিয়ুস মেহেরজুই সত্যিকার অর্থেই বিশ্বের সম্পদ হয়ে উঠেছিলেন, নয়তো তাঁকে নিয়ে আজ বাংলাতেও লেখালেখি হতো কি?
লেখক: চলচ্চিত্র সমালোচক

‘শ্রদ্ধেয় (সংস্কৃতিবিষয়ক) মন্ত্রী, শুনুন, আমি আর নিতে পারছি না। আমি লড়াই চালিয়ে যাব। আমাকে মেরে ফেলুন, অথবা যা ইচ্ছা তা-ই করুন...আমাকে ধ্বংস করে ফেলুন, কিন্তু আমি আমার অধিকার চাই।’
খুন হওয়ার ঠিক আগের বছর, ২০২২ সালে একটি ভিডিওবার্তায় নিরুপায় হয়ে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার এই ঘোষণা দিয়েছিলেন ইরানের নব্য বাস্তববাদী ঘরানার চলচ্চিত্রের প্রতিভূ দারিয়ুস মেহেরজুই, এতে যদি প্রাণ যায় তাতেও তাঁর পরোয়া নেই। ২০১৯ সালে নির্মিত ‘লা মাইনর’ ছবিটি ইরান সরকার ছাড়পত্র দিচ্ছিল না বলে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন বর্ষীয়ান মেহেরজুই।
আর ২০২৩ সালে এসে যখন সস্ত্রীক তাঁকে ছুরিকাঘাতে নিজ বাড়িতে নির্মমভাবে খুন হতে হলো, তখন এর সঙ্গে ইরান সরকারের ১৯৯৮ সালে গোপন বাহিনী দিয়ে ভিন্নমতাবলম্বী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করানোর ঘটনার যোগ খুঁজতে পারেন অনেকে। খুঁজছেন বলেই মেহেরজুইয়ের হত্যার পর দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ বাইদি বিষয়টি উড়িয়ে দেন। বলেন, এটার সঙ্গে আটানব্বইয়ের নভেম্বরের সেই হত্যাকাণ্ডের কোনো যোগ নেই। যদিও তদন্তকারীরা বলছেন, মতপার্থক্যের কারণেই ৮৩ বছর বয়সে খুন হতে হয়েছে মেহেরজুইকে।
১. কথা হলো, মেহেরজুইকে এত ভয় কেন? কেনইবা এই নির্মাতা এত গুরুত্বপূর্ণ? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে চলে যেতে হবে ইতিহাসের পত্র-পল্লবে। যদি আমরা ১৯০৫ সালের দিকে তাকাই দেখব, সেই সময় পারস্যে সাংবিধানিক বিপ্লব শুরু হয়েছে। কাজার বংশের রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে জনগণ গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়নে বদ্ধপরিকর। সংবিধানকে ঘিরে অনেকবার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সে সময়। এরই মধ্যে ১৯০৮ সালে দেশটিতে আবিষ্কার হয় তেলের খনি। এ ঘটনাটি মনে রাখা ভীষণ জরুরি।
অন্তত মেহেরজুইয়ের যুগান্তকারী ছবি ‘গাভ’ বা ‘গাভি’ বোঝার জন্য। সে প্রসঙ্গে একটু পরে আসছি। তো, তেলের খনি আবিষ্কারের পর পারস্যের ওপর নজর পড়ে বহির্বিশ্বের। ১৯১১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে ক্ষমতা দখল করেন রেজা শাহ পাহলভি এবং ১৯২৩ সালে তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু তিনি নিজেও আবার পেছনের দিকে হাঁটা শুরু করেন, অর্থাৎ ১৯২৫ সালে মজলিশ বা সংসদের ভোট নিয়ে নিজেকে সম্রাট ঘোষণা করেন। ফলে দেশটিতে রাজতন্ত্রের যাত্রা পুনরায় শুরু হয়, সামান্য যাত্রাবিরতি দিয়ে। আর সাংবিধানিক বিপ্লবের স্বপ্ন তখনকার মতো সেখানেই মাটিচাপা পড়ে। রেজা শাহের স্বৈরাচারী আমলে নিষিদ্ধ করা হয় “তা’জিয়ে” অভিনয়, ১৯৩৫ সালে পারস্যের নাম পাল্টে রাখা হয় ইরান।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর পর রেজা শাহের প্রতিপত্তি কিছুটা কমতে থাকে। অক্ষশক্তির পক্ষে থাকা ইরান চাপে পড়ে যুদ্ধকালে। ইংরেজ ও রুশ শক্তির কাছে মাথা নত করতে হয় তাদের। ১৯৪১ সালে সেখানে গঠিত হয় কমিউনিস্ট পার্টি তুদেহ্। তারা ক্রমাগত শক্তি সঞ্চয় করে পাহলভি শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম অব্যাহত রাখে, কখনো প্রকাশ্যে, কখনো বা গোপনে। এরই মধ্যে ১৯৫১ সালে মজলিশের সমর্থন নিয়ে তেলের খনি জাতীয়করণ করে ইরান সরকার। শুরু হয় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার নানা তৎপরতা।
তারা তাঁকেই রাখতে চায় ক্ষমতায়, যিনি মার্কিন স্বার্থকে সংরক্ষণ করবেন। এখানে তেলের খনি একটি বড় প্রভাবক বটে। মার্কিন মদদে ষাটের দশকে শাহের নির্দেশে তৈরি হয় গোপন পুলিশ ‘সাভাক’, তারা বিরোধী স্বরকে দমন করতে তৎপর হয়ে ওঠে। এই স্বৈরতন্ত্রের কালে ইরানে তুদেহ পার্টি; পার্টি থেকে বেরিয়ে এসে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করা কমরেডরা এবং আলি শরিয়তির নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক ইসলামি ভাবধারার লোকজনই শাহের মূল বিরোধী কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠে। ঠিক সেই দশকেরই শেষভাগে দারিয়ুস মেহেরজুই বানালেন ‘গাভ’ (১৯৬৯)।
২. ইরানে যখন রাজতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্র হাত ধরাধরি করে চলছে, তখন ১৯৬৯ সালে দারিয়ুস মেহেরজুইয়ের ‘গাভ’ ও মাসুদ কিমিয়াইয়ের ‘কেইসার’ ইরানের মূলধারার চলচ্চিত্রের ভিত নাড়িয়ে দেয়। এই দুই চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে ইরানের চলচ্চিত্রে নতুন ধরনের প্রবাহ বইতে শুরু করে। আর এ কারণেই মেহেরজুইকে বলা হয় ইরানের নয়া ঢেউয়ের অন্যতম পথিকৃৎ। ‘গাভ’ ছবিটি দিয়ে মেহেরজুই কেবল চলচ্চিত্রের পুরোনো ধারাকেই নাকচ করেননি; বরং রাষ্ট্রে যা চলছিল, বিকারগ্রস্ততা, শঙ্কা ও সত্যকে ধামাচাপা দেওয়ার প্রচেষ্টা, সেটাকেও তিনি রূপকের আকারে সরল বয়ানে হাজির করেন।
মেহেরজুই ‘গাভ’ ছবির কাহিনি নিয়েছেন ১৯৬৪ সালে গোলাম হোসেন সাইদির লেখা বিখ্যাত উপন্যাস ‘আজাদারান-ই বায়াল’ (বায়ালের বিলাপ) থেকে। সাইদি বেশ পরিচিত বাম ঘরানার রাজনৈতিক লেখক। ইরানের গ্রামকে কেন্দ্র করে রচিত সেখানকার দারিদ্র্য ও রূপকধর্মী কাহিনির কারণে বইটিও সরকারি নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছিল। মজার বিষয় হলো মেহেরজুই কিন্তু সংস্কৃতি ও শিল্পবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুদান নিয়ে ছবিটি নির্মাণ করেন, ছবি শেষ হওয়ার পর কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে এবং তারা অনেকগুলো জায়গা সংশোধন করতে বলে।
অনেক দিন ছবিটি আটকেও রাখে। কিন্তু সরকারের তোয়াক্কা না করে গোপনে বাইরের চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি পাঠিয়ে দেন মেহেরজুই।৩২তম ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি যখন ফিপ্রেসি পুরস্কারের পাশাপাশি আরও কয়েকটি উৎসবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হয়, তখন সরকারের ওপর চাপ বাড়ে। শিকাগো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ছবির মূল চরিত্রে অভিনয়ের জন্য এজাতুল্লাহ এনতেজামি শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পাওয়ার পর শাহের সরকার বাধ্য হয় ছবিটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে। আর এ ঘটনাই ইরানের নতুন চলচ্চিত্রের সম্ভাবনার পথ প্রশস্ত করে দেয়।
ইরানে ইসলামি বিপ্লবোত্তর সর্বময় নেতা আয়তুল্লাহ খোমেনির ছবিটি পছন্দ হওয়ায়, ক্ষমতা বদলের পর ছবিটির ওপর আর কোনো খড়্গ নেমে আসেনি। তবে রাষ্ট্র কখনো যে শিল্পীর বন্ধু হয় না, তা জীবনের শেষনিশ্বাসেও জেনে গেছেন মেহেরজুই। আর যে শিল্পী প্রতিষ্ঠানবিরোধী তাঁকে নানাবিধ প্রতিকূলতার ভেতর পড়তে হবে, রোষের শিকার হতে হবে। মেহেরজুইয়ের দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘গাভ’ দিয়েই সেটা প্রমাণিত হয়। আদতে কী ছিল সেই রাজনৈতিক বক্তব্যসমৃদ্ধ, দার্শনিক ছবিতে?
ইরানের প্রত্যন্ত এক গ্রামে হাসান নামের এক দরিদ্র কৃষক তার গরুকে ভীষণ ভালোবাসে। স্নান, আহার, বিহার সবই এই গাভিকে কেন্দ্র করে। হাসান এর যত্নআত্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ গাভিটি গর্ভবতী। গ্রামের অধিকাংশ লোকজন সে রকম কোনো কাজ করে না। কয়েকটি চরিত্র বেশ চমকপ্রদ। যেমন এক মানসিক প্রতিবন্ধী চরিত্র ও আরেকটি জানালায় বসে থাকা চরিত্র। ছবিটি শুরু হয় প্রতিবন্ধী মানুষটিকে নিয়ে গ্রামের মাস্তান ধরনের এক লোক ও ছোট ছেলেমেয়েদের নিষ্ঠুর আচরণ দিয়ে। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বলে লোকটি প্রতিবাদ করতে পারে না। ভাবে, এটাই বুঝি খেলা। সে-ও মেতে ওঠে সবার সঙ্গে। আর জানালায় বসে থাকা লোকটি অলস দর্শক। সে শুধু দেখেই চলে। নিষ্ক্রিয় থেকে দৃষ্টি মেলে রাখাই যেন তার কাজ।
গ্রামের নিস্তরঙ্গ জীবনে একদিন সবার কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। হাসান একটি কাজে গ্রামের বাইরে যায়। রাতে এক অজানা কারণে গাভিটি প্রাণ হারায়। গ্রামবাসী হাসানের গাভিপ্রীতি সম্পর্কে জানে। কাজেই তারা সিদ্ধান্ত নেয় সত্য গোপন করে গাভিটিকে মাটিচাপা দিয়ে দেবে। আর হাসানকে বলবে, গাভিটি দড়ি ছিঁড়ে চলে গেছে, খুঁজে আনা হচ্ছে। হাসান যখন গ্রামে ফেরে, কেউ আর তার সঙ্গে কথা বলে না। প্রতিক্রিয়া কী হয়, সেটা ভেবেই সবাই শঙ্কিত। হাসানকে প্রথমে বলা হয় গরুটি পালিয়েছে। হাসানের স্বভাবতই কথাটি বিশ্বাস হয় না এবং একপর্যায়ে হাসান বিমর্ষ ও বিষণ্ন অবস্থা থেকে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
সে নিজেই গাভিতে পরিণত হয়। গোয়ালঘরে থাকে, ঘাসবিচালি খায়। এরই ফাঁকে ফাঁকে আমরা দেখি বুলোরি নামের এক গ্রাম থেকে দস্যু প্রকৃতির লোক ঘোরাফেরা করে হাসানদের গ্রামে, পশু চুরি করাই তাদের প্রধান কাজ। তো এদের ব্যাপারেও সর্বদা সজাগ থাকতে হয় গ্রামবাসীকে। হাসানও ভয় পেত, এরা তার প্রিয় গাভিটিকে চুরি করতে পারে। শঙ্কা সত্য হয়। এরা এসেছিল গরু চুরি করতে, কিন্তু গোয়ালঘরে ঢুকে দেখে গরু নেই, গরুর জায়গায় স্বয়ং মানুষ ধেনু হয়ে বসে আছে।
পরিস্থিতি যখন আরও করুণ হয়ে পড়ে, হাসানের মরো মরো অবস্থা, তখন গ্রামবাসী ঠিক করে হাসানকে অন্য গ্রামে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভেতর তিনজন গ্রামবাসী হাসানকে নিয়ে রওনা দেয়। কিন্তু হাসান কি আর মানুষ আছে? সে তো পশু! পাশবিক শক্তির সঙ্গে পেরে না উঠে গ্রামবাসী তাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে যেতে থাকে। একজন তো তাকে প্রহার করে বসে। হাসান যেন গোঁয়ার গরু, রাখালের লাঠির বাড়ি খাচ্ছে। গরু যেমন দড়ি ছিঁড়ে দৌড় দেয়, হাসানও সে রকম একপর্যায়ে ছুটতে গিয়ে উঁচু পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়ে ভবলীলা সাঙ্গ করে।
এই চলচ্চিত্রে একাধিক স্তরে রাজনৈতিক বক্তব্য যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বয়ান, রয়েছে দার্শনিক চিন্তা। আমাদের এই আলোচনার শুরুতে আমরা বলেছিলাম, ইরানের তেলের খনি আবিষ্কারের বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই চলচ্চিত্রে গরুটিই সেই তেলের খনির রূপক হিসেবে উপস্থিত ছিল। গরুটিকে যেকোনো মুহূর্তে চুরি করে নিয়ে যেতে পারে বহিঃশত্রুরা, এই শঙ্কায় হাসান তথা গোটা গ্রামবাসী ছিল শঙ্কিত। গ্রামটি যেন ইরানের এক ছোট সংস্করণ। শঙ্কাতেই তাদের দিন কাটে, কখনো তাদের সম্পদ চুরির শঙ্কা, আবার কখনো বা সত্য প্রকাশ হয়ে পড়ার শঙ্কা।
১৯৭৩ সালে শাহের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ শঙ্কাই প্রতিধ্বনিত হয়েছিল। শাহের শঙ্কা ছিল পশ্চিমের কাছে তেল বিক্রিতে আরবদের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে। মূলত তেলের খনি আবিষ্কারের পর থেকেই ইরানি শাসকগোষ্ঠীর শঙ্কা শুরু। হাসানের যেমন গর্ভবতী গাভি, সেই গাভির কাছ থেকে গ্রামের সবাই দুধ পেত, ঠিক সে রকম শাহের তেলের খনি, যা জনগণের ভালো-মন্দের সঙ্গে জড়িত ছিল। হাসান যেমন ভীত থাকত কখন তার পশুকে অন্যরা চুরি করে নিয়ে যায়, শাহেরও একই দশা ছিল আরবদের নিয়ে। কাজেই গরু এখানে শুধু অভ্যন্তরীণ রাজনীতির অংশ হিসেবেই উপস্থাপিত হয়নি, বলা যায় ভূরাজনৈতিক রূপক হিসেবেও গাভিটি যথার্থ রূপে ধরা দিয়েছে।
ফেরেইদুন গোভানলুর সাদাকালো সিনেমাটোগ্রাফিতে ছবির আরও একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায়; সেটি হলো গ্রামের অর্থনীতি: দরিদ্র গ্রামীণ জনগোষ্ঠী, যাদের সেই অর্থে কোনো কিছু করার নেই। পাথুরে জমিন। শুষ্ক আবহাওয়া। তার ভেতর এই দুধেল গাই আর গ্রামের মাঝখানে থাকা ছোট্ট জলাধার—এ দুটোই গ্রামবাসীকে বাঁচিয়ে রাখছিল। অপরদিকে দার্শনিক প্রতীতির দেখা মেলে: আমরা দেখি, কেমন করে একজন মানুষ নিজের অস্তিত্বকে অতিক্রম করে আরেক অস্তিত্বের ভেতর প্রবেশ করে। এক অস্তিত্ব থেকে আরেক অস্তিত্বে পরিণত হওয়ার অভিযাত্রাটিও এই চলচ্চিত্রে চমৎকারভাবে দেখিয়েছেন মেহেরজুই। হাসান যেন পরজন্মে নয়, এক জনমেই দুবার জন্মলাভ করে। তার এই অপূর্ব রূপান্তরে চমকিত গ্রামবাসী হকচকিত হয়ে প্রকারান্তরে তাকে হত্যাই করে। সমাজচ্যুত ব্যক্তিকে সমাজ আর গ্রহণ করে না। কিন্তু ব্যক্তি সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয় কেন? সমাজ সত্যকে মাটিচাপা দেয় বলে? নাকি প্রয়োজনের সময় তারা সহমর্মী হতে পারে না বলে?
অনেকেরই হয়তো জানা, পারস্যে ইসলাম ধর্মের আগে প্রভাবশালী ধর্ম হিসেবে বিরাজ করত জরথ্রুষ্ট্রবাদ। এই মতবাদ বা ধর্মানুসারে গরু হলো পৌরাণিক প্রথম প্রাণী, যে প্রাণী শুভ উদ্দেশ্যের প্রতীক। তো এই গুরুত্বপূর্ণ প্রাণীটি যখন মারা যায় এবং তাকে গোটা গ্রামবাসী মাটিচাপা দেয়, তখন আসলে পুরো সমাজই অশুভের দিকে যাত্রা শুরু করে। আমরা চলচ্চিত্রে সেটাই দেখি। বাইরের এলাকা থেকে গ্রামে হানা দেওয়ার ঘটনা ঘটে। হাসানের পরিবর্তন ও মৃত্যু হয়। পুরো গ্রাম যেন এক শোকের ভেতর প্রবেশ করে। থমথমে পরিস্থিতি। আর ওই যে একটা লোক জানালা দিয়ে শুধু তাকিয়ে দেখে, সে যেন দর্শকের প্রতিনিধি। আমরা প্রত্যক্ষ করছি গোটা গ্রামের কর্মকাণ্ড ও ভবিতব্য। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী লোকটি কি সমাজে থাকা বুদ্ধিজীবী? যাদের সমাজ ভয় পায়, তারা সত্যকে প্রকাশ করে দিতে পারে বলে?
৩. মেহেরজুই কেন গুরুত্বপূর্ণ, সেটি শুধু ‘গাভ’ নির্মাণের পর প্রতিক্রিয়া দেখেই বোঝা যায়। তবে মেহেরজুই আরও চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। ‘গাভে’র পর তিনি ‘আগা-ই হালু’ (মিস্টার সিম্পলটন, ১৯৬৯) বানিয়েছেন। সেখানে এক সরকারি কর্মচারীর কার্যকলাপ তিনি তুলে ধরেছেন রম্যের মাধ্যমে। এরপর তিনি নির্মাণ করেছেন রূপকধর্মী রাজনৈতিক ছবি ‘পোস্টচি’ (দি পোস্টম্যান, ১৯৭২), যাতে দেখানো হয় এক নববিবাহিত কিন্তু যৌনতায় অক্ষম এক ডাকবাহকের কাহিনি। ‘দায়েরেহ-এ মিনা’ (দি সাইকেল, ১৯৭৫) ছবিতে বস্তিতে থাকা এক ছেলের গল্প বলেন মেহেরজুই, যে ছেলেটি অসুস্থ বাবাকে শহরে আনে চিকিৎসার জন্য। তো একে একে মেহেরজুই সমগ্র জীবনে ২৪টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন।
তিনি ইতালির নব্য বাস্তববাদী ধারার চলচ্চিত্রের দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। মেহেরজুই নব্য বাস্তববাদের সারকথাটি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন বলেই শুধু ইরানে নয়, গোটা দুনিয়াতেই গুরুত্বপূর্ণ নির্মাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, নব্য বাস্তববাদ বলতে তিনি বোঝেন, নিজের আপন ভূমি ও সংস্কৃতির ভেতর তাকানো, সেখানকার বাস্তবতাকে তুলে ধরা। আর যতই আপনি নিজস্ব সংস্কৃতির গভীর থেকে বয়ান তুলে আনবেন, ততই আপনি আরও বেশি করে বৈশ্বিক হয়ে উঠবেন। দারিয়ুস মেহেরজুই সত্যিকার অর্থেই বিশ্বের সম্পদ হয়ে উঠেছিলেন, নয়তো তাঁকে নিয়ে আজ বাংলাতেও লেখালেখি হতো কি?
লেখক: চলচ্চিত্র সমালোচক

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

‘শ্রদ্ধেয় (সংস্কৃতিবিষয়ক) মন্ত্রী, শুনুন, আমি আর নিতে পারছি না। আমি লড়াই চালিয়ে যাব। আমাকে মেরে ফেলুন, অথবা যা ইচ্ছা তা-ই করুন...আমাকে ধ্বংস করে ফেলুন, কিন্তু আমি আমার অধিকার চাই।’
২৩ অক্টোবর ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘শ্রদ্ধেয় (সংস্কৃতিবিষয়ক) মন্ত্রী, শুনুন, আমি আর নিতে পারছি না। আমি লড়াই চালিয়ে যাব। আমাকে মেরে ফেলুন, অথবা যা ইচ্ছা তা-ই করুন...আমাকে ধ্বংস করে ফেলুন, কিন্তু আমি আমার অধিকার চাই।’
২৩ অক্টোবর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

‘শ্রদ্ধেয় (সংস্কৃতিবিষয়ক) মন্ত্রী, শুনুন, আমি আর নিতে পারছি না। আমি লড়াই চালিয়ে যাব। আমাকে মেরে ফেলুন, অথবা যা ইচ্ছা তা-ই করুন...আমাকে ধ্বংস করে ফেলুন, কিন্তু আমি আমার অধিকার চাই।’
২৩ অক্টোবর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

‘শ্রদ্ধেয় (সংস্কৃতিবিষয়ক) মন্ত্রী, শুনুন, আমি আর নিতে পারছি না। আমি লড়াই চালিয়ে যাব। আমাকে মেরে ফেলুন, অথবা যা ইচ্ছা তা-ই করুন...আমাকে ধ্বংস করে ফেলুন, কিন্তু আমি আমার অধিকার চাই।’
২৩ অক্টোবর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫