Ajker Patrika

মানুষের ‘বন্ধু’ ব্যাঙ রক্ষায় চাই উদ্যোগ

আশিকুর রহমান সমী 
আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২৪, ১২: ৫৫
মানুষের ‘বন্ধু’ ব্যাঙ রক্ষায় চাই উদ্যোগ

বর্ষাকাল চলছে। এই বৃষ্টির সঙ্গে অনন্য সম্পর্ক যে প্রাণীটির সেটি ব্যাঙ। বাঙালির বর্ষাকালের সঙ্গে ব্যাঙের সম্পর্ক আরও গভীর।  প্রাচীনকাল থেকে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতিতেও। বাংলাদেশের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় রয়েছে এর গুরুত্বপূর্ণ অবদান। শুধু প্রকৃতির জন্য নয়, বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতির স্বার্থেও জরুরি ব্যাঙ সংরক্ষণ।

বাংলাদেশের দক্ষিণ এশিয়ার ছোট্ট একটি দেশ হলেও জীববৈচিত্র্য অনেকই সমৃদ্ধ। ওরিয়েন্টাল নামক প্রাণি-ভৌগলিক অঞ্চলের ইন্দো-বার্মা ও ইন্দো-চায়না হটস্পটের সংযোগস্থলে অবস্থিত হওয়ায় এ দেশ প্রাণীবৈচিত্র্যে তথা বন্যপ্রাণী বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। এ দেশের উত্তর- পূর্বাঞ্চলে এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে রয়েছে পাহাড়ি চির সবুজ বন, দক্ষিণ-পশ্চিমে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন, দক্ষিণজুড়ে বঙ্গোপসাগর আর মধ্যাঞ্চল থেকে উত্তর-পশ্চিম পর্যন্ত শালবন ও জালের মতো ছড়ানো নদ-নদী। যা সম্মিলিতভাবে গড়ে তুলেছে জীব-বৈচিত্র্যের এক অপূর্ব সমাহার। 

এখানকার বন্যপ্রাণীদের একটি অংশ উভচর শ্রেণির সদস্য। বাংলাদেশে Anura (অ্যানুরা) এবং Gymnophiona (জিমনোফিনা) পরিবারের উভচরদের দেখা মেলে। উভচর গবেষণা সংস্থা এম্ফিবিয়ান স্পিসিস অব দ্য ওয়ার্ল্ডের তথ্যমতে বিশ্বে এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত উভচর প্রাণীর সংখ্যা ৮ হাজার ৭৫২ টি। এর মধ্যে অ্যানুরা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ৭ হাজার ৭০৭ টি। তবে বর্তমানে নিত্য-নতুন গবেষণায় আবিষ্কৃত হচ্ছে নতুন নতুন প্রজাতি। বিগত বছরগুলোর বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও গবেষণায় বাংলাদেশেও বেড়েছে উভচরের সংখ্যা। আর এদের মধ্যে অন্যতম বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাঙ। এরা দেশের পরিবেশ ও প্রতিবেশসহ কৃষি অর্থনীতিতে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান।

বাংলাদেশে পাওয়া যাওয়া ব্যাঙগুলোর একটি ঝিঁঝি ব্যাঙ। ছবি: লেখকবাংলাদেশে ব্যাঙেদের অবস্থা
গত ৫০ বছরের বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী বাংলাদেশে ব্যাঙের প্রজাতিগত সংখ্যা ৬৩টি। কিন্তু আমাদের বন্যপ্রাণীবিষয়ক বিজ্ঞানীরা মনে করেন এই সংখ্যাটি প্রকৃতপক্ষে ১০০-র ওপরে হতে পারে। আর গত ১২ বছরে বাংলাদেশ মোট ২৪টি নতুন প্রজাতির ব্যাঙের সন্ধান মিলেছে, যার মধ্যে ৯টি প্রজাতি শুধু যে বাংলাদেশের জন্য নতুন তা নয়, পুরো পৃথিবীর জন্যই নতুন। ২০১৫ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশনের (আইইউসিএন) মূল্যায়িত তথ্য অনুযায়ী ৯ প্রজাতির ব্যাঙকে বিলুপ্তির ঝুঁকির লাল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। 

বাংলাদেশে ব্যাঙেদের আবাসস্থল
সারাদেশ জুড়েই রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাঙের সমারোহ। জলজ-স্থলজ সব পরিবেশেই ব্যাঙ পাওয়া যায়, তবে ব্যাঙের জীবন ধারণের জন্য জলজ পরিবেশ অত্যাবশ্যকীয়। তাই সারাদেশের জলাশয়কেন্দ্রিক মিঠাপানিতে ব্যাঙের দেখা মেলে। কুনো ব্যাঙ, কোলা ব্যাঙ, গেছো ব্যাঙ, লাউবিচি ব্যাঙ, ঝিঁঝি ব্যাঙ, কটকটি ব্যাঙ, ভেপু ব্যাঙ সচরাচর দেখতে পাওয়া ব্যাঙের প্রজাতি। তবে সিলেট ও চট্টগ্রামের বনাঞ্চলে বিশেষ করে পাহাড়ি ছড়া এবং ঝিরিতে বেশি এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্যাঙের দেখা মেলে। এ ছাড়া শালবন ব্যাঙের জন্য একটি আদর্শ আবাসস্থল। সিলেটের হাওর ও গঙ্গা প্লাবনভূমির জলাভূমিও ব্যাঙের চমৎকার আবাসস্থল। বর্ষাকালে বৃষ্টি হলে ব্যাঙের আনাগোনা বাড়ে। এ সময়টা মূলত ব্যাঙের প্রজনন মৌসুম।

গেছো ব্যাঙ। ছবি: লেখকশহরেও থাকে ব্যাঙ, রাখে মশা দমনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান 
বর্তমানে পৃথিবীর ৫৫ শতাংশ মানুষ শহরে বসবাস করে। ফলে কমছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। ব্যাঙ টিকে থাকার জন্য জল ও স্থল দুটিরই প্রয়োজন। কিন্তু শহরের জলজ পরিবেশ দিন দিন দূষিত হচ্ছে। বাংলাদেশের বড় শহরগুলো বিশেষ করে ঢাকার কথা যদি চিন্তা করি, বর্ষাকালে ব্যাঙের জন্য প্রয়োজনীয় জলাশয় একেবারেই কম। আর অস্থায়ী যেসব জলাশয় দেখা যায়, সেখানেও পানি সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাঙের প্রজনন বিঘ্নিত হয়। এ কারণে শহরের প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে বিলুপ্ত হচ্ছে ব্যাঙ। এতে বেড়ে যাচ্ছে ব্যাঙের খাদ্য মশাসহ ক্ষতিকর কীট-পতঙ্গ। কিছুদিন আগে মশা দমনে ঢাকা শহরের বিভিন্ন জলাশয়ে ব্যাঙ অবমুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু ব্যাঙগুলো টিকে থাকার মতো পরিবেশ সেখানে আছে কিনা তা কতটা বিবেচনা করা হয়েছে তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়াসহ বিভিন্ন মশাবাহিত রোগের বাহক মশার লার্ভা ব্যাঙাচি অবস্থায় খায় ব্যাঙ। যা মশা দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান শিল্পায়ন, নগরায়ণের ফলে ব্যাঙের আবাসস্থল নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি প্রজনন ক্ষেত্রও নষ্ট হচ্ছে। এর ফলে কমছে তাদের সংখ্যা। প্রকৃতি হারিয়ে ফেলছে ভারসাম্য। ফলাফল হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পুরো মানবজাতি।

হাজার বছর ধরে কুনো ব্যাঙের প্যারোটিড গ্রন্থি ও অন্যান্য ত্বকীয় গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রস বিভিন্ন ধরনের রোগের চিকিৎসা হয়। 

সরু মাথা ব্যাঙ। ছবি: লেখকপরিবেশের নির্দেশক ও আবহাওয়া পূর্বাভাসে ব্যাঙ
পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক ব্যাঙ। একটি পরিবেশ বিশেষ করে জলজ পরিবেশ কতটা সুস্থ তার নির্দেশক হিসেবে কাজ করে বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাঙ। বাস্তুতন্ত্র ও খাদ্যশৃঙ্খলে রয়েছে প্রাণীটির বড় ভূমিকা। অর্থাৎ পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনার একটি নির্দেশক হিসেবে কাজ করে ব্যাঙ। 

কৃষকের বন্ধু ব্যাঙ
ব্যাঙ এক রাতে শরীরের ওজনের দ্বিগুণ পোকামাকড় খেতে পারে। এই পোকামাকড় ফসলের ক্ষতি করে। এতে অতিরিক্ত কীটনাশক যেমন প্রয়োগ করতে হয় না, তেমন ঠিক থাকে ফসলের গুণগত মান ও মাটির গুনাগুণ। আর ঠিক থাকে প্রকৃতির ভারসাম্য। আবার ব্যাঙের মূত্রে ইউরিয়া-জাতীয় পদার্থ থাকে, যা জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে এবং ফসলের উৎপাদন ত্বরান্বিত করে। এক হিসেবে দেখা গেছে, একটি কোলা ব্যাঙ তার পুরো জীবনে প্রায় ৪ লাখ  টাকার ফসল রক্ষা করে। পর্যাপ্ত ব্যাঙ থাকলে জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পায়। এতে যে আমরা শুধু আর্থিক ভাবে লাভবান হবো তা নয়, পাব কীটনাশক ও বিষমুক্ত খাবারের সরবরাহ। এতে কীটনাশকের বিষও পরিবেশে ছড়াবে না। এতে পরিবেশ, বিশেষ করে জলজ পরিবেশ থাকবে বিষক্রিয়া এবং দূষণ মুক্ত।

আমাদের সংস্কৃতির অংশ
আমাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি সবকিছুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ব্যাঙ। এখনো বৃষ্টির আশায় দেশীয় প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী দেওয়া হয় ব্যাঙের বিয়ে। এ ছাড়াও ব্যাঙ নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন প্রবাদ প্রবচন। যা বহুকাল ধরে বাংলায় প্রচলিত। পাশাপাশি বাংলাদেশের লোকসাহিত্য, রূপকথা, উপন্যাস, কবিতায় বারবার উঠে এসেছে এই প্রাণীটির নাম। খনার বচনেও এসেছে ব্যাঙের কথা, ‘ব্যাঙ ডাকে ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ, শীঘ্রই হবে বৃষ্টি জান’। 

আমাদের অতি পরিচিত কোলা ব্যাঙ। ছবি: লেখকমানব কল্যাণেই চাই বাংলাদেশে ব্যাঙ সংরক্ষণ 
সংরক্ষিত এলাকাগুলোর বাইরে এই নতুন আবিষ্কৃত ব্যাঙ বা বিলুপ্তির হুমকিতে থাকা ব্যাঙের একটি বড় অংশ রয়েছে। আমাদের হুমকিগ্রস্ত ৯টি ব্যাঙের মধ্যে ৬টি ব্যাঙই সংরক্ষিত এলাকার বাইরে এমনকি নতুন আবিষ্কৃত ২৪টি ব্যাঙের মধ্যে ৯টি আবিষ্কৃত হয়েছে সংরক্ষিত এলাকার বাইরে। এ ছাড়া ঢাকাইয়া ঝিঁঝি ব্যাঙ পাওয়া গেছে দূষিত শহর ঢাকা থেকে। তবে উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে আবিষ্কৃত সব ব্যাঙই কয়েকটি সংরক্ষিত এলাকায় পাওয়া গেছে। এই তথ্য এটাই নির্দেশ করে যে, ব্যাঙ নিয়ে এই অঞ্চলে আরও বিস্তৃত গবেষণা হলে নতুন নতুন ব্যাঙ প্রজাতির তথ্য বের হয়ে আসবে।

আমাদের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বের চিরসবুজ বা মিশ্র চিরসবুজ বন বন্যপ্রাণীর জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হলেও আমাদের সারা দেশই ব্যাঙের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, গঙ্গা অববাহিকায় তিন ধরনের বিপন্ন প্রজাতির ব্যাঙ পাওয়া যায় এবং ২ প্রজাতির নতুন ব্যাঙ এখান থেকে পাওয়া গেছে। এ রকম প্রতিটি অঞ্চলই ব্যাঙের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। 

তবে বিশেষ করে সংরক্ষিত এলাকার বাইরে ব্যাঙেরা আজ হুমকির সম্মুখীন। ক্রমশ ধ্বংস হচ্ছে জলজ পরিবেশ। সেই সঙ্গে জলজ পরিবেশে টিকে থাকা ব্যাঙের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। জলজ পরিবেশ দূষণ, গুণগত মান নষ্ট হওয়া, জলজ পরিবেশের নিয়ামকগুলোর মান নষ্ট হওয়া, জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার, শহরের আয়তন বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক পরিবেশের বিলুপ্তি, রাস্তায় অতিরিক্ত যানবাহনের ফলে ব্যাঙের দুর্ঘটনায় মৃত্যু, পাহাড়ে অবৈধভাবে ব্যাঙ শিকার ইত্যাদি কারণে প্রাণীটির সংখ্যা আজ কমে যাচ্ছে। সংরক্ষিত এলাকার বাইরে আমাদের অগোচরে কত ব্যাঙ হারিয়ে যাচ্ছে, তা আমরা বুঝতে পর্যন্ত পারছি না।

তাই সময় এসেছে সংরক্ষিত এলাকার বাইরে পরিবেশের এই পরম বন্ধু ব্যাঙ সংরক্ষণে গুরুত্ব দেওয়ার। বড় কোনো প্রাণী যেরকম সংরক্ষণে গুরুত্ব পায় ঠিক ওই রকম না হলেও ন্যূনতম গুরুত্ব যেন বাংলাদেশের ব্যাঙেরা পায়।

লেখক: বন্যপ্রাণী গবেষক, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিকাল ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকায় আজ ছুটির দিনে আবহাওয়া কেমন থাকবে জানা গেল পূর্বাভাসে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৮
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রৌদ্রোজ্জ্বল ঢাকায় আজ শুক্রবার সকালে হালকা কুয়াশার দেখা মিলেছে। তবে হাড়কাঁপানো শীত না পড়লেও বইছে মিষ্টি হিমেল বাতাস। আজ সারা দিন রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চলে আকাশ পরিষ্কার থাকবে, আবহাওয়াও থাকবে শুষ্ক।

আজ সকাল ৭টায় ঢাকা ও আশপাশ এলাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সকাল ৬টায় রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৯ শতাংশ। এদিন দুপুর পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১১ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যাস্ত ৬টা ২৮ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২১ নভেম্বরের পর ভূমিকম্পে কতবার কাঁপল বাংলাদেশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৬
নরসিংদীতে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের মাটিতে গতকাল ফাটলের নমুনা সংগ্রহ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ। ছবি: আজকের পত্রিকা
নরসিংদীতে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের মাটিতে গতকাল ফাটলের নমুনা সংগ্রহ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ। ছবি: আজকের পত্রিকা

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৬টা। সূর্যের আলো যখন পুরোপুরি ফুটে ওঠেনি, ঠিক তখনই ভূমিকম্পে আবারও কেঁপে উঠল রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চল। রিখটার স্কেলে এই ভূকম্পনের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১। উৎপত্তিস্থল ঢাকা থেকে ৩৮ কিলোমিটার দূরে নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার পাটুয়ারপাড় এলাকা।

আর এই ভূকম্পনেই আতঙ্কিত হয়ে ওঠে ঢাকার নগরজীবন থেকে শুরু করে সারা দেশের মানুষ। আতঙ্কিত হয়ে ওঠাই স্বাভাবিক। কারণ, এক-দুবার নয়, মাত্র ১৪ দিনে বাংলাদেশে একাধিকবার ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে চারটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদী, গাজীপুরের মতো ঢাকার আশপাশের অঞ্চল ছিল বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি হয় গত ২১ নভেম্বর। ওই দিন ৫ দশমিক ৭ মাত্রার এক ভূমিকম্পে ঢাকাসহ সারা দেশ কেঁপে উঠেছিল।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর বাংলাদেশেই উৎপত্তিস্থল ছিল পাঁচটি ভূমিকম্পের। এর প্রথমটি ছিল ২১ নভেম্বরের ঠিক দুই মাস আগে ২১ সেপ্টেম্বর। এদিন ৪ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এর উৎপত্তি হয় সিলেটের ছাতকে।

এরপরের ভূমিকম্প ছিল ২১ নভেম্বর, মাত্রা ৫ দশমিক ৭। পরদিন ২২ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটে ৪ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদী জেলার কালীগঞ্জ। এর ৫ দিন পর, ২৭ নভেম্বর বিকেল সোয়া ৪টায় ৪ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, উৎপত্তিস্থল ঢাকার পাশের জেলা গাজীপুরের টঙ্গীর ঢালাদিয়া এলাকা।

কতবার ভূকম্পন হলো

তবে বারবার ভূমিকম্প কেবল বাংলাদেশেই নয়, সীমান্তঘেঁষা মিয়ানমার, ভারত, নেপাল, এমনকি চীনের তিব্বত সীমান্তেও ঘন ঘন ভূমিকম্প হচ্ছে। চলতি বছরের ১১ মাসে এই অঞ্চলে ২৮৫ বার ভূমিকম্প হয়েছে। এর কোনোটিই ৪ মাত্রার নিচে ছিল না।

গত সোমবার ১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে মিয়ানমারের ফালামে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ফলে চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকেও এটি অনুভূত হয়েছে। ঢাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র থেকে উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ছিল ৪৩১ কিলোমিটার। ওই ভূমিকম্প বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা ৫৫ মিনিট ১৬ সেকেন্ডে অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৯।

বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, টেকটোনিক প্লেটে বাংলাদেশের যে অবস্থান, তাতে দুটো প্লেটের সংযোগস্থল রয়েছে, পশ্চিমে ইন্ডিয়ান প্লেট আর পূর্ব দিকে বার্মা প্লেট। আর বাংলাদেশের উত্তর দিকে আছে ইউরেশিয়ান প্লেট।

রাজধানীর পুরান ঢাকায় বংশাল এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ অনেক ভবনের ক্ষতির আশঙ্কা। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর পুরান ঢাকায় বংশাল এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ অনেক ভবনের ক্ষতির আশঙ্কা। ছবি: সংগৃহীত

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বিবিসি বাংলাকে বলেন, ভারতীয় প্লেটটি ধীরে ধীরে পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বার্মা প্লেটের নিচে, অর্থাৎ চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। আর এই তলিয়ে যাওয়ার কারণে একটা সাবডাকশন জোনের তৈরি হয়েছে।

হুমায়ুন আখতার আরও বলেন, ‘এই জোনের ব্যাপ্তি সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত। পুরো চট্টগ্রাম অঞ্চল এর মধ্যে পড়েছে। এখানে বিভিন্ন সেগমেন্ট আছে। আমাদের এই সেগমেন্টে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার শক্তি জমা হয়ে আছে। এটা বের হতেই হবে।’ তাঁর মতে, ‘এখানে প্লেট লকড হয়ে ছিল। এর অতি সামান্য ক্ষুদ্রাংশ খুলল বলেই শুক্রবারের ভূমিকম্প হয়েছে। এটিই ধারণা দেয় যে সামনে বড় ভূমিকম্প আমাদের দ্বারপ্রান্তে আছে।’

আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ

তবে ভূমিকম্প নিয়ে উৎকণ্ঠিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ভূতত্ত্ববিদ ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. মমিনুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখন যেসব ভূকম্পন, সেগুলো হলো ২১ নভেম্বর ভূমিকম্পের ‘আফটার শক’।

২০১১ সালের ১১ মার্চ জাপানের হনশু দ্বীপের টোহুকু অঞ্চলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প এবং এর জেরে সৃষ্ট সুনামির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই ঘটনার পর কেবল ৬ মাত্রারই ৪৫০ বার আফটার শক হয়েছিল জাপানে। আরও অসংখ্যবার ছোট ছোট আফটার শক হয়েছিল তখন।

ভূকম্পনবিদ্যার গবেষক মমিনুল ইসলাম আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে ২১ নভেম্বরের পর একাধিকবার আফটার শক হচ্ছে। এই আফটার শক বহুদিন ধরে হতে পারে, কমপক্ষে আরও তিন মাস হতে পারে। ২ মাত্রার নিচের ভূকম্পনগুলো আমাদের (বাংলাদেশে) সিস্টেমে ধরা পড়ে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বায়ুদূষণে দিল্লিকে হারিয়ে শীর্ষে ঢাকা, খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসে যা করতে হবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শহরগুলো বিশ্বের দূষিত শহর তালিকায় শুরুর দশের মধ্যে অবস্থান করছে। এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই এ তালিকায় শীর্ষে ছিল ভারতের দিল্লি। আজ বৃহস্পতিবার দিল্লিকে পেছনে ফেলে এ শীর্ষ দূষিত শহর হলো ঢাকা।

বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ ঢাকার অবস্থান ১ম। আজ সকাল ১০টার রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান আজ ২৯৬, যা খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।

ঢাকার যেসব এলাকায় বায়ু দূষণ সবচেয়ে বেশি— পল্লবী দক্ষিণ, কল্যাণপুর, বেজ এজওয়াটার আউটডোর, ইস্টার্ন হাউজিং ও গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল।

ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্‌রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

দূষিত বায়ুর শহর তালিকায় শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো— ভারতের দিল্লি ও কলকাতা, পাকিস্তানের লাহোর ও কাতারের দোহা। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২৭৮, ২৩৩, ১৯৯ ও ১৮৯।

বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্‌রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকার তাপমাত্রা আজও ১৭ ডিগ্রির ঘরে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৫
আজ সোমবার ভোরবেলা ঢাকায় পড়েছিল হালকা কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার ভোরবেলা ঢাকায় পড়েছিল হালকা কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ছিল ১৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গতকাল ছিল ১৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের বেলা এই তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আজ সকাল ৭টায় পরবর্তী ছয় ঘণ্টার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে এসব কথা বলা হয়েছে।

পূর্বাভাসের তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮১ শতাংশ।

এ ছাড়া আজ দুপুর পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। আবহাওয়া প্রায় শুষ্ক থাকবে। দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ দুপুর পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১১ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যাস্ত ৬টা ২৭ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত