Ajker Patrika

দখলদারদের পেটে ২০ হাজার পুকুর-দিঘি, হারাচ্ছে আসকারদীঘি-বলুয়ারদীঘিও

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১৭ জুন ২০২৪, ২১: ০১
দখলদারদের পেটে ২০ হাজার পুকুর-দিঘি, হারাচ্ছে আসকারদীঘি-বলুয়ারদীঘিও

চারপাশে গাছগাছালিতে ঘেরা দিঘি ভরা পানি। পড়ন্ত বেলায় দিঘির পাড়ে নানা বয়সীদের সমাগম। কেউ বসে বসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছেন, কেউবা ধরছেন মাছ। দিঘিতে চলছে সাঁতার কাটা ও গোসল—এই চিত্র চট্টগ্রাম নগরীর জামালখানের ঐতিহাসিক আসকারদীঘির। কিন্তু সেটি এখন অতীত।

সাড়ে ৪০০ বছর আগে মুঘলদের শাসনামলে প্রায় সাড়ে ৮ একর জমিতে খনন করা এই দিঘির বেশির ভাগটাই চলে গেছে দখলদারদের পেটে। দিঘি আছে মাত্র ২ একর জায়গাজুড়ে। চারদিকে দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে ঘরবাড়ি, এমনকি মসজিদ-মন্দিরও। এখন দিঘির পাড়ে আর মানুষ বসতে পারে না। কারণ, এখন সেখানে বসলে নাকে সৌরভ ভেসে আসে না। দুর্গন্ধে পাশ দিয়ে পথ চলাও দায়। 
 
চট্টগ্রাম শহরের বুকে আসকারদীঘির মতোই আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিঘি বলুয়ারদীঘি। এটির চারপাশ দখল হয়ে গেছে। এটি এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত। এ রকম আরও অনেক দিঘি কিছু পুরো ভরাট হয়ে গেছে, আর কিছু ভরাট হওয়ার অপেক্ষায়। এসব দখলের পেছনে রয়েছে ক্ষমতাসীনদের ছত্রচ্ছায়া। 

আসকারদীঘি নামেই পরিচিত এলাকাটির স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল জব্বার। ৭৫ বছর বয়সী সাবেক এই সরকারি কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই দিঘিতে আমরা সাঁতার কেটেছি। আমাদের শৈশব কেটেছে এখানে। দিঘি ভরা পানি, চারপাশে গাছ। এখন তো সব দখল।’

কয়েক বছর ধরে বলুয়ারদীঘি দখলের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন স্থানীয় মো. আরশেদ আজিম আরিফ। দখলের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, এমনকি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিক চিঠি দিয়েছেন তিনি। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের নীরব ভূমিকায় প্রভাবশালীরা দিঘিটি দখলে নিচ্ছেন প্রতিদিন। এক বছর আগে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আসকারদীঘি, বলুয়ারদীঘিসহ দখলে থাকা পুকুর জলাশয় পুনরুদ্ধার করার ঘোষণা দিলেও এখনো কোনো অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। 

আরশেদ আজিম আরিফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালীরা দিনদুপুরে মাটি ফেলে বলুয়ারদীঘি দখল করছেন। প্রশাসনকে এ বিষয়ে বারবার বলার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অজ্ঞাত কারণে প্রশাসন অভিযানও পরিচালনা করছে না। 

মৎস অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ৩০ বছরে চট্টগ্রামে ১৯ হাজার ২৫০টি পুকুর–জলাশয় ভরাট হয়ে গেছে বা দখল হয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে অনেক ঐতিহ্যবাহী পুকুর-জলাশয়ও। তবে ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক মোরশেদ হোসেন মোল্লার এক সমীক্ষায় চট্টগ্রাম শহরে ১ হাজার ২৪৯টি জলাশয়ের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। 

এখনো বেঁচে থাকা চট্টগ্রাম শহরের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ দিঘি ও ডেবা সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছে। এগুলো হলো—চট্টগ্রামের কোতোয়ালির আসকারদীঘি, বলুয়ারদীঘি, আগ্রাবাদ ডেবা, পাহাড়তলীর জোর ডেবা ও ভেলুয়ারদীঘি। আসকারদীঘি ও বলুয়ারদীঘির চারদিকে উঠেছে বহুতল স্থাপনা; রয়েছে মসজিদ-মন্দিরও। দখল-দূষণে সংকুচিত হচ্ছে এনায়েত বাজার এলাকার রানীর দীঘি, পাহাড়তলীর পদ্মপুকুর, বড় মিয়ার মসজিদ পুকুর। বড়মিয়া মসজিদের পুকুর ওপরের উঠেছে মসজিদ। চারপাশে হয়ে গেছে দোকানপাঠও।

এ ছাড়া হালিশহরের খাজাদীঘি, চান্দগাঁওয়ের মুন্সি পুকুর, বাকলিয়ার আবদুল্লাহ সওদাগর পুকুর, আগ্রাবাদের দাম্মো দীঘি, কর্নেল হাট দীঘি, হাজারীর দীঘি, কারবালা পুকুর, কাজীর দীঘি ও রামপুর বড় পুকুরেরও আর অস্তিত্ব নেই। পাহাড়তলীর জোড় ডেবার আয়তন ২১ দশমিক ৪৮ একর। 

আসকারদীঘির পানিও নেই আগের মতোসরেজমিন দেখা যায়, পাহাড়তলী বাজারের শেষে রেলওয়ের জোড় ডেবা। এটির চারপাশে ধীরে ধীরে দখল হয়ে যাচ্ছে। গড়ে উঠেছে বস্তি-দোকান। জোড় ডেবার প্রবেশমুখ থেকে সোজা পশ্চিম ঝরনাপাড়া পর্যন্ত দুই শতাধিক বসতি ও ১২টি দোকান। এখান থেকে প্রতি মাসে গণি সরদারের লোকজন এসে আট হাজার টাকা নিয়ে যান বলে জানা গেছে। তবে, গণি সরদার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। 

১৯ দশমিক ৭৮ একর আয়তনের আগ্রাবাদ জলাশয়। এই জলাশয়ের এক পাড়ে রেলওয়ের বাসা, অন্য পাড়ে বসতি-দোকান। স্থানীয়রা জানান, অন্তত পাঁচ শতাধিক বাসা-দোকান গড়ে উঠেছে। এখান থেকেও প্রতি মাসে টাকা তোলা হয়। প্রতিবছর এখানেও প্রায় অর্ধকোটি টাকার বাণিজ্য হয়। হাবিব উল্লাহ চৌধুরী এই টাকা তোলেন বলে অভিযোগ। তবে তিনি এসব অস্বীকার করেন। 

পাহাড়তলীর ১৩ দশমিক ৭৪ একরের ভেলুয়ার দীঘি ঘিরে প্রায় তিন দশক ধরে চলছে দখলের মহোৎসব। এতে কমে গেছে দিঘির আয়তন। ২৫ নম্বর রামপুরা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুস সবুর লিটন ও নূর হোসেন বাক্কু এই জলাশয় দখলের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে তাঁরা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের তথ্যমতে, ১৯৯১ সালে মৎস্য অধিদপ্তরের এক জরিপে ১৯ হাজার ২৫০টি পুকুর-জলাশয়ের অস্তিত্ব মেলে। ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এক জরিপে চার হাজার ৫২৩টি পুকুর-জলাশয় পাওয়া যায়। 

পরিবেশবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা রসায়নের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ১৯৯১ সালে মৎস্য অধিদপ্তরের জরিপে ১৯ হাজার ২৫০টি পুকুর-জলাশয়ের অস্তিত্ব মেললেও এখন (২০২৪ সালে) ১০ শতাংশও নেই। অর্থাৎ এখন ২০০ মতো জলাশয় আছে। তাও দখল হয়ে গেছে। প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় এসব দিঘি-জলাশয় দখল হচ্ছে। 

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এসব দিঘি-পুকুর ও জলাশয় দখলে নিতে বেশ অভিনব কৌশল নেওয়া হয়। প্রভাবশালীরা প্রথমে পুকুরের পাশের নাল জমিতে ছোট স্থাপনা নির্মাণ করেন। পরে স্থাপনার পাশে ধীরে ধীরে পুকুর ভরাট করেন। একসময়ে ভূমি অফিসে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করার আবেদন করেন। পরিদর্শনে গিয়ে ভূমি অফিসের লোকজন যদি দেখেন, পুকুরের কোনো অস্তিত্ব নেই, তখন তারা শ্রেণি পরিবর্তনের পক্ষে প্রতিবেদন দেন। এভাবে পুকুর নাল কিংবা কিলা ভুমিতে পরিণত হয়। 

অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলী বলেন, মানুষ কৌশলে পুকুরের শ্রেণি পরিবর্তন করছে। এ ক্ষেত্রে খতিয়ানে জমির শ্রেণির পুকুর লেখা না থাকলে প্রতিকার পাওয়া দুষ্কর। পুকুর-জলাশয় ভরাটের বিরুদ্ধে আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারেন জনপ্রতিনিধিরা। 

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার উপপরিচাল মো. ফেরদৌস আনোয়ার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পুকুর ভরাটের কোনো সংবাদ পেলে আমরা দ্রুততম সময়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি; জরিমানা করি। কিছুদিন আগে কর্ণফুলীতে পুকুর ভরাট করায় জরিমানা করেছি। যেগুলো ভরাট হয়ে গেছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে খতিয়ান দেখে জলাশয় থাকলে, খনন করে আগের অবস্থায় ফিরে নিয়ে আসি। তবে এ ক্ষেত্রে মানুষকে আগে সচেতন হতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেঁকে বসেছে শীত, বছরের শেষ দিন পর্যন্ত কমতে পারে তাপমাত্রা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৩৭
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

মধ্য পৌষে এসে সারা দেশে শীত যেন জেঁকে বসেছে। গতকালের তুলনায় আজ রোববার তাপমাত্রা সামান্য বেড়েছে। তবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাপমাত্রা কমতে পারে। এর সঙ্গে পড়বে ঘন কুয়াশা।

আজ বেলা ১১টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ পূর্বাভাসে এসব কথা জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসের তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল ৬টায় সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের নিকলীতে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় রাজধানী ঢাকায় ছিল ১৪ দশমিক ৩।

বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে সকালে তাপমাত্রা ছিল রাজশাহী, রংপুর, বরিশালে ১৩; ময়মনসিংহে ১৩ দশমিক ৩, সিলেটে ১৪ দশমিক ৮, চট্টগ্রামে ১৬, খুলনায় ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আজ রোববার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও আবার দুপুর পর্যন্ত কুয়াশা থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে।

সারা দেশে আজ রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে দেশের অনেক জায়গায় শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে।

এ ছাড়া আজ ঢাকায় পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার গতিতে বাতাস বয়ে যেতে পারে।

২৯ ডিসেম্বরও পরিস্থিতির পরিবর্তন তেমন হবে না উল্লেখ করে আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানায়, ৩০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। তবে নদী অববাহিকার কোথাও কোথাও ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এদিন রাতে তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। পরদিন ৩১ ডিসেম্বর সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে দিনের বেলা তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফের বায়ুদূষণে বিপর্যস্ত দিল্লি, ঢাকার বাতাস খুব অস্বাস্থ্যকর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

শীতের মৌসুমে বাতাস থাকে শুষ্ক। বেড়ে যায় ধূলিকণার পরিমাণ। আর এ কারণে বায়ুদূষণও বাড়তে থাকে। আজ রোববার ঢাকার বায়ুমানের অবনতি হয়ে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় আছে।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ারের তালিকায় দেখা যায়, বিশ্বের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ ঢাকা তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। আর শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি।

আইকিউএয়ারের সকাল ৮টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী, ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ২১৬, খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক। আর শীর্ষে থাকা দিল্লির এয়ার কোয়ালিটি ইনডেস্ক স্কোর ৪২৪, যা দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের নির্দেশক।

শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো আফগানিস্তানের কাবুল (২৪৩), ভারতের কলকাতা (২১৪) ও পাকিস্তানের লাহোর (২০২)।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১ থেকে ২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্‌রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

শীতকালীন আবহাওয়ার ধরন, যানবাহন ও শিল্প থেকে অনিয়ন্ত্রিত নির্গমন, চলমান নির্মাণকাজ থেকে সৃষ্ট ধুলো এবং আশপাশের ইটভাটাগুলো এই দূষণ সংকটের জন্য দায়ী।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তাপমাত্রা কমবে কি না জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫০
তাপমাত্রা খুব বেশি কমলেও আজ রোববার সকাল থেকে রাজধানী ঢাকার আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন। দেখা মেলেনি সূর্যের আলো। ছবি: আজকের পত্রিকা
তাপমাত্রা খুব বেশি কমলেও আজ রোববার সকাল থেকে রাজধানী ঢাকার আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন। দেখা মেলেনি সূর্যের আলো। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানী ঢাকায় আজ রোববার সকাল ৬টায় তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে, যা গতকাল একই সময়ে ছিল ১৩ দশমিক ৫।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ ঢাকায় তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। সেই সঙ্গে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।

আজ সকাল ৭টায় ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ সকাল ৬টায় রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৩ শতাংশ।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া থাকতে পারে শুষ্ক। আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। আজ সূর্যাস্ত ৫টা ২০ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৪০ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তীব্র শীতে বিপর্যস্ত দেশ কষ্টে খেটে খাওয়া মানুষ

  • গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে
  • শীতের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ
  • গরম কাপড় ব্যবহার ও কুসুম গরম পানি পানের পরামর্শ চিকিৎসকদের
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪০
কাজের অপেক্ষায় বসে আছেন কয়েকজন শ্রমজীবী। ছবি: আজকের পত্রিকা
কাজের অপেক্ষায় বসে আছেন কয়েকজন শ্রমজীবী। ছবি: আজকের পত্রিকা

পৌষের প্রথম সপ্তাহে শীতের কামড় তেমন না থাকলেও মাঝামাঝি সময়ে এসে সারা দেশে ঘন কুয়াশার সঙ্গে অনুভূত হচ্ছে তীব্র শীত। তীব্র শীতে সারা দেশের জনজীবন অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম, মধ্যাঞ্চল থেকে রাজধানীসহ সবখানেই শীতের দাপট। বিশেষ করে দুর্ভোগে পড়েছেন শ্রমজীবীসহ নিম্ন আয়ের মানুষেরা।

গতকাল শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। এ জেলার তাপমাত্রা নেমে আসে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

চলতি সপ্তাহের শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি সতর্কতা জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা। তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের মধ্যে গত দুই দিন তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। আগামী কয়েক দিন আবহাওয়ার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। ফলে শীত ও কুয়াশার এই পরিস্থিতি আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে।’

এর আগে গত শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, গোপালগঞ্জ ও নীলফামারীর ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা কোথাও কোথাও অব্যাহত থাকতে পারে।

তীব্র শীতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর, রিকশাচালক, নির্মাণশ্রমিক ও খেটে খাওয়া মানুষ, যাদের বেশির ভাগকেই খোলা আকাশের নিচে কাজ করতে হয়। যশোর শহরের বিভিন্ন শ্রমবাজারে প্রতিদিন যেখানে

৩০০-৪০০ মানুষ কাজের আশায় জড়ো হন, কাজকর্ম কম থাকায় সেখানে এখন সেই সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। অনেকেই সকাল থেকে অপেক্ষা করে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।

রিকশাচালক, নির্মাণশ্রমিক ও দিনমজুররা জানান, বেশি শীতের কারণে লোকজন ঘর থেকে কম বের হচ্ছে। নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজ তেমন হাতে নেওয়া হচ্ছে না। এতে তাঁদের কাজ কমে গেছে। কিন্তু আয় কমলেও সংসারের ব্যয় তো কমছে না। এ চিত্র বগুড়া, গাইবান্ধা, লালমনিরহাটসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়।

বগুড়ায় গতকাল শনিবার মৌসুমের সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকেই ঘন কুয়াশা আর হিমশীতল বাতাসে লোকজনের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হয়।

বগুড়া আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘বগুড়ায় কয়েক দিন ধরেই শীতের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। শনিবার সকাল থেকেই জেলাজুড়ে ব্যাপক কুয়াশা এবং হিমেল বাতাস বয়ে গেছে। জেলায় সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়। এটিই এখন পর্যন্ত এই মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আগামী কয়েক দিন শীতের এমন তীব্রতা অব্যাহত থাকতে পারে।’

উত্তরের শেষ প্রান্ত, হিমালয়ের ঘেঁষা জেলা লালমনিরহাটে শীতের তীব্রতা আরও বেশি। চরাঞ্চলে ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় রুটিরুজি কমে গরিব মানুষ কষ্টে আছেন। সন্ধ্যার আগেই কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে পুরো এলাকা।

লালমনিরহাটের সীমান্তে কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সুবল চন্দ্র বলেন, রাজারহাট ও আশপাশের এলাকায় তাপমাত্রা ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী চার বা পাঁচ দিন আবহাওয়ার উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।

লালমনিরহাটের প্রধান সড়কে ভারী কুয়াশায় যানবাহন চলাচল খুব কমে গেছে। ট্রাকচালক জামাল উদ্দিন বলেন, দিনে হেড লাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালালেও সন্ধ্যার পরে কিছুই দেখা যায় না। ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বৃদ্ধি পাওয়া ছাড়াও জ্বালানি খরচ আর সময় অনেক বেশি লাগছে।

তিস্তার চরাঞ্চলের গোবর্ধন গ্রামের আবদুর রশিদ বলেন, ‘চরাঞ্চলে কুয়াশা আর হিমেল হাওয়া অনেক বেশি। রাতে বিছানাও বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে যায়। এক-দুইটা পাতলা কম্বলে শরীর গরম হচ্ছে না। ফলে রাতেও ঘুমাতে পারছি না।’

মধ্য উত্তরের জেলা গাইবান্ধার আশপাশের এলাকাগুলোতে শীত ও কুয়াশার কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। শীত থেকে বাঁচতে আগুন পোহাতে দেখা যাচ্ছে অনেককে। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরোনো কাপড়ের দোকানগুলোতে নিম্ন আয়ের মানুষের ভিড় বেড়েছে।

কুয়াশার প্রভাব আকাশ, নৌ ও সড়কপথে

ঘন কুয়াশার প্রভাব পড়েছে নৌ এবং আকাশপথেও। রাজধানী ঢাকায়ও কুয়াশার তীব্রতা বেড়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কুয়াশার কারণে গতকাল সকালে আটটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অবতরণ করতে না পারায় তাদের বিকল্প বিমানবন্দরে পাঠানো হয়েছে। দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় নিরাপত্তার স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ রুটে ঘন কুয়াশার কারণে গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে বাড়তি সতর্কতার জন্য সাড়ে ১৪ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন ঘরমুখী হাজারো মানুষ। পরে গতকাল শনিবার সকালে ফের চালু করা হয় ফেরি। ঘন কুয়াশায় জামালপুরে যমুনা নদীতে প্রায় ১৫ ঘণ্টা আটকে থাকার পর বর-কনেসহ ৪৭ যাত্রীকে ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার করে।

বেড়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

শীতের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ। জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। চিকিৎসকেরা যথাযথ গরম কাপড় ব্যবহার ও কুসুম গরম পানি পান করা এবং প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।

বিভিন্ন জেলার প্রশাসন শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে বলে জানালেও জানা গেছে, অনেক এলাকায় তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। বিশেষ করে শিশুদের গরম কাপড় ও কম্বলের অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত