কামরুল হাসান

চিত্রনায়ক সালমান শাহর সঙ্গে আমার কোনো কালে কোনো জানাশোনা ছিল না। সেটা হওয়ার কথাও নয়। তবে তাঁর সঙ্গে মাত্র একবার দেখা হয়েছিল, কথাও হয়েছিল। সেটা এফডিসিতে কী একটি অপ্রীতিকর ঘটনার সময়। এটা ঠিক যে, তাঁর মতো নক্ষত্রের সঙ্গে আমার মতো উটকো লোকের আলাপ কখনো কখনো হয়তো হয়, কিন্তু তার আয়ু খুব বেশি স্থায়ী হয় না। তার পরও সালমান শাহকে এভাবে দেখব, সেটা একেবারে মাথায় ছিল না।
শুক্রবারের সকাল মানেই রিপোর্টারদের বিশ্রামের দিন, এদিন অ্যাসাইনমেন্ট কম থাকে। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর দিনের প্রথম ভাগে বিশ্রামেই ছিলাম। দুপুরের ঠিক আগে খবর এল চিত্রনায়ক সালমান শাহ খুন হয়েছেন। লাশ হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে। আমার সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল পায়ে হাঁটা দূরে। দিলাম দৌড়। গিয়ে শুনি লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হলি ফ্যামিলির জরুরি বিভাগে একজন ডাক্তার বসে ছিলেন। বললেন, ‘গলায় ফাঁসির দাগ আছে, আত্মহত্যা হতে পারে।’
ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে দেখি শত শত মানুষের ভিড়। বেশির ভাগই সিনেমার লোকজন। সবাই চুপচাপ, কেউ কিছু বলছেন না। কী হয়েছে, তা-ও কেউ জানেন না।
নায়ক সালমান তাঁর স্ত্রী সামিরা হক ওয়াইজকে নিয়ে থাকতেন দিলু রোডের উল্টো দিকের ইস্কাটন প্লাজায়। গেলাম সেখানে। কেউ কিছু বলেন না। বিকেলের দিকে তাঁর বাবা কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী এলেন রমনা থানায় মামলা করতে।
সালমান শাহরা ছিলেন দুই ভাই। তাঁর মা নিলুফার জামান চৌধুরী, যিনি নীলা চৌধুরী নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন এরশাদের রাজনীতি করার সুবাদে। সালমানের বাবা কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ছিলেন নিরীহ প্রকৃতির। ১৯৯২ সালে চট্টগ্রামে একটি শো করতে গিয়ে সাবেক ক্রিকেটার শফিকুল হক হীরার মেয়ে সামিরার সঙ্গে সালমানের পরিচয় হয়। পরে মায়ের অমতে সালমান তাঁকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর সালমান মায়ের বাসা থেকে ইস্কাটনে এসে থাকতে শুরু করেন। সালমানের সঙ্গে তাঁর মায়ের তেমন কোনো কথা হতো না। বাসায় আসতেন শুধু তাঁর বাবা কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।
রমনা থানায় এসে কমর উদ্দিন বললেন, সেদিন তাঁদের সিলেটে যাওয়ার কথা ছিল। সকালে তিনি ছেলের সঙ্গে দেখা করতে ইস্কাটনের বাসায় যান। বাসার নিচে দারোয়ান তাঁকে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। জোর করে তিনি ওপরে গেলে সালমানের স্ত্রী সামিরা তাঁকে বলেন, সালমান ঘুমাচ্ছে। এ কথা শুনে তিনি বাড়ি ফিরে যান। এরপর বেলা ১১টার দিকে সেলিম নামে চলচ্চিত্রের এক কর্মী নীলা চৌধুরীকে ফোন দিয়ে দ্রুত সালমানের বাসায় আসতে বলেন। নীলা চৌধুরী ছোট ছেলে চৌধুরী মো. শাহরান বিল্টুকে নিয়ে ইস্কাটনের বাসায় এসে দেখেন কয়েকজন নারী সালমানের পায়ে তেল মালিশ করছেন। তাঁর শরীর নীল হয়ে গেছে। বাদল খন্দকার নামের একজন চলচ্চিত্রকার তখন সেখানে ছিলেন। এরপর সবাই সালমানকে ধরাধরি করে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার ডাক্তার বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা গেছেন।
কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর এই মামলা অপমৃত্যুর মামলা হিসেবে রেকর্ড করে রমনা থানা। ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন লাশ নেওয়া হলো এফডিসিতে। হাজার হাজার মানুষ সেখানে। সবাই বললেন, এটা পরিষ্কার হত্যাকাণ্ড। সেদিনই সালমানের লাশ সিলেটে নিয়ে হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারের কবরস্থানে দাফন করা হলো। সব কাগজে এই মৃত্যু নিয়ে রহস্যের খবর ছাপা হলো।
দেশজুড়ে তখন সালমানের অসংখ্য ভক্ত। কয়েকজন তরুণী এই মৃত্যু মেনে নিতে না পেরে আত্মহত্যাও করলেন। আকস্মিক এই মৃত্যুতে স্তম্ভিত গোটা দেশ। সালমানভক্তদের মধ্যে তৈরি হলো নানা প্রশ্ন। এ অবস্থায় পরিবারের দাবির মুখে আবার লাশ তুলে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত হলো সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে। ভিসেরা পরীক্ষাও হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর জন্য উচ্চপর্যায়ের একটি বোর্ড গঠন করে দেয়। তাঁদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত হয়, সালমান শাহর গলায় ফাঁস ছিল ‘এনটিই মর্টেম’ বা মৃত্যুপূর্ব।
মারা যাওয়ার সময় সালমানের পকেটে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া যায়। তাতে লেখা ছিল—‘সুস্থ মস্তিষ্কে আমি আত্মহত্যা করছি’। সেই নোট পাঠানো হয় সিআইডিতে। সিআইডির হস্তরেখাবিদ সমীর কুমার মুখার্জি এটা পরীক্ষা করেন। তিনি একদিন আমাকে বলেছিলেন, দুটো লেখা হুবহু মিলে গেলেই ধরে নিতে হয় একটি জাল। বড় খবরের আশায় একদিন আমি তাঁর কাছে গেলাম। বললেন, সুইসাইড নোট ঠিক আছে। এটা সালমানের হাতের লেখা। বড় খবরের আশা উবে গেল।
প্রথমে এই মামলা তদন্ত করল রমনা থানার পুলিশ, তারপর এল ডিবি এবং সিআইডিতে। সবাই বললেন, এটা আত্মহত্যা। সিআইডির রিপোর্টের ব্যাপারে নারাজি দিলেন সালমানের বাবা। তিনি বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাইলেন। ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক বিচার বিভাগীয় তদন্ত করলেন। সালমানের বাবা সেই তদন্তেও নারাজি দেন। তাঁর দাবি, সালমানকে চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে গলায় বিদ্যুতের তার পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়। সর্বশেষ আদালত পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। পিবিআই এ ঘটনাকে ‘আত্মহত্যা’ বলে প্রতিবেদন দেয়। সালমানের বাবা মারা যাওয়ায় (২০০০ সালের ১১ মে) এবার নারাজি দেন তাঁর মা নীলা চৌধুরী।
এই তদন্তের মাঝে একটি ঘটনা ঘটে। সালমানের মৃত্যুর বছরখানেক পর রেজভী আহমেদ নামে এক যুবক সালমানের মায়ের বাড়িতে গিয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করলে তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে বলেন, সালমানকে তাঁর স্ত্রী, শাশুড়ি, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ কয়েকজন মিলে খুন করেছেন। পরে আবার সিআইডির কাছে তিনি বলেন, তাঁর এই জবানবন্দি ছিল সাজানো। ক্যান্টনমেন্ট থানার পুলিশ তাঁকে মারধর করে এই জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছিল।
অনেক বছর ধরে এ ঘটনার ফলোআপ করেছি। বিভিন্ন সময় যেসব তথ্য পেয়েছি, তা নিয়ে আমার মনেও অনেক প্রশ্ন। সালমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আশরাফুল হক ডন, তাঁর গৃহকর্মী, বন্ধুসহ আরও অনেকে আমাকে বলেছিলেন, সালমানের মৃত্যুর নেপথ্যে ছিল নায়িকা শাবনূরের সঙ্গে তাঁর গভীর সম্পর্ক। শাবনূরের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি সামিরা জেনে যান।
সালমান একবার শাবনূরের সঙ্গে ভারতেও গিয়েছিলেন। তা ছাড়া, সামিরা ঢাকার বাইরে গেলেই শাবনূর এসে সালমানের বাসায় রাত কাটাতেন। সামিরা একবার এফডিসিতে তাঁদের দুজনকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখেও ফেলেন। সালমানের ঘনিষ্ঠরা বলেছিলেন, সন্তান না হওয়ায় সালমান খুব বিপর্যস্ত ছিলেন। তিনি কাজের মেয়ে ডলির সন্তানকে দত্তক নিতে চেয়েছিলেন।
সালমান চেয়েছিলেন, সামিরা থাকবেন, আবার তিনি শাবনূরকেও বিয়ে করবেন। তাঁর মায়ের বোধ হয় এতে সম্মতি ছিল। ডনের ধারণা, এর পরই সবকিছু জটিল হয়ে যায়। সালমান আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
সালমান ছিলেন ঢাকাই ফিল্মের ‘হার্টথ্রব’ নায়ক। আজকের দিনে বসে এটা একেবারেই ভাবা কঠিন যে তিনি কতটা জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর পোশাকপরিচ্ছদ, সংলাপ বলার ধরন, অভিনয়দক্ষতা—সবকিছু মিলিয়ে রোমান্টিক হিরোর পরিচিতি পেয়ে যান। সালমান শাহ মাত্র চার বছর অভিনয় করেন। এ সময় তিনি ২৭টি সিনেমায় অভিনয় করেন। বেশির ভাগই সিনেমা ছিল আলোচিত এবং ব্যবসাসফল। যখন তিনি মারা যান, তাঁর পেছনে প্রযোজকদের লগ্নি ছিল আড়াই শ কোটি টাকা।
সালমান শাহর মৃত্যুসংবাদ দর্শকের মনে এতটাই দাগ কেটেছিল যে দুই দশকের বেশি সময় পরেও তাঁকে নিয়ে আলোচনা থামেনি। এখনো অনেক ভক্তের কাছে তাঁর এই মৃত্যু রহস্যে ঘেরা। আমার কাছে তো বটেই।

চিত্রনায়ক সালমান শাহর সঙ্গে আমার কোনো কালে কোনো জানাশোনা ছিল না। সেটা হওয়ার কথাও নয়। তবে তাঁর সঙ্গে মাত্র একবার দেখা হয়েছিল, কথাও হয়েছিল। সেটা এফডিসিতে কী একটি অপ্রীতিকর ঘটনার সময়। এটা ঠিক যে, তাঁর মতো নক্ষত্রের সঙ্গে আমার মতো উটকো লোকের আলাপ কখনো কখনো হয়তো হয়, কিন্তু তার আয়ু খুব বেশি স্থায়ী হয় না। তার পরও সালমান শাহকে এভাবে দেখব, সেটা একেবারে মাথায় ছিল না।
শুক্রবারের সকাল মানেই রিপোর্টারদের বিশ্রামের দিন, এদিন অ্যাসাইনমেন্ট কম থাকে। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর দিনের প্রথম ভাগে বিশ্রামেই ছিলাম। দুপুরের ঠিক আগে খবর এল চিত্রনায়ক সালমান শাহ খুন হয়েছেন। লাশ হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে। আমার সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল পায়ে হাঁটা দূরে। দিলাম দৌড়। গিয়ে শুনি লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হলি ফ্যামিলির জরুরি বিভাগে একজন ডাক্তার বসে ছিলেন। বললেন, ‘গলায় ফাঁসির দাগ আছে, আত্মহত্যা হতে পারে।’
ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে দেখি শত শত মানুষের ভিড়। বেশির ভাগই সিনেমার লোকজন। সবাই চুপচাপ, কেউ কিছু বলছেন না। কী হয়েছে, তা-ও কেউ জানেন না।
নায়ক সালমান তাঁর স্ত্রী সামিরা হক ওয়াইজকে নিয়ে থাকতেন দিলু রোডের উল্টো দিকের ইস্কাটন প্লাজায়। গেলাম সেখানে। কেউ কিছু বলেন না। বিকেলের দিকে তাঁর বাবা কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী এলেন রমনা থানায় মামলা করতে।
সালমান শাহরা ছিলেন দুই ভাই। তাঁর মা নিলুফার জামান চৌধুরী, যিনি নীলা চৌধুরী নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন এরশাদের রাজনীতি করার সুবাদে। সালমানের বাবা কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ছিলেন নিরীহ প্রকৃতির। ১৯৯২ সালে চট্টগ্রামে একটি শো করতে গিয়ে সাবেক ক্রিকেটার শফিকুল হক হীরার মেয়ে সামিরার সঙ্গে সালমানের পরিচয় হয়। পরে মায়ের অমতে সালমান তাঁকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর সালমান মায়ের বাসা থেকে ইস্কাটনে এসে থাকতে শুরু করেন। সালমানের সঙ্গে তাঁর মায়ের তেমন কোনো কথা হতো না। বাসায় আসতেন শুধু তাঁর বাবা কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।
রমনা থানায় এসে কমর উদ্দিন বললেন, সেদিন তাঁদের সিলেটে যাওয়ার কথা ছিল। সকালে তিনি ছেলের সঙ্গে দেখা করতে ইস্কাটনের বাসায় যান। বাসার নিচে দারোয়ান তাঁকে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। জোর করে তিনি ওপরে গেলে সালমানের স্ত্রী সামিরা তাঁকে বলেন, সালমান ঘুমাচ্ছে। এ কথা শুনে তিনি বাড়ি ফিরে যান। এরপর বেলা ১১টার দিকে সেলিম নামে চলচ্চিত্রের এক কর্মী নীলা চৌধুরীকে ফোন দিয়ে দ্রুত সালমানের বাসায় আসতে বলেন। নীলা চৌধুরী ছোট ছেলে চৌধুরী মো. শাহরান বিল্টুকে নিয়ে ইস্কাটনের বাসায় এসে দেখেন কয়েকজন নারী সালমানের পায়ে তেল মালিশ করছেন। তাঁর শরীর নীল হয়ে গেছে। বাদল খন্দকার নামের একজন চলচ্চিত্রকার তখন সেখানে ছিলেন। এরপর সবাই সালমানকে ধরাধরি করে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার ডাক্তার বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা গেছেন।
কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর এই মামলা অপমৃত্যুর মামলা হিসেবে রেকর্ড করে রমনা থানা। ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন লাশ নেওয়া হলো এফডিসিতে। হাজার হাজার মানুষ সেখানে। সবাই বললেন, এটা পরিষ্কার হত্যাকাণ্ড। সেদিনই সালমানের লাশ সিলেটে নিয়ে হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারের কবরস্থানে দাফন করা হলো। সব কাগজে এই মৃত্যু নিয়ে রহস্যের খবর ছাপা হলো।
দেশজুড়ে তখন সালমানের অসংখ্য ভক্ত। কয়েকজন তরুণী এই মৃত্যু মেনে নিতে না পেরে আত্মহত্যাও করলেন। আকস্মিক এই মৃত্যুতে স্তম্ভিত গোটা দেশ। সালমানভক্তদের মধ্যে তৈরি হলো নানা প্রশ্ন। এ অবস্থায় পরিবারের দাবির মুখে আবার লাশ তুলে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত হলো সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে। ভিসেরা পরীক্ষাও হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর জন্য উচ্চপর্যায়ের একটি বোর্ড গঠন করে দেয়। তাঁদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত হয়, সালমান শাহর গলায় ফাঁস ছিল ‘এনটিই মর্টেম’ বা মৃত্যুপূর্ব।
মারা যাওয়ার সময় সালমানের পকেটে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া যায়। তাতে লেখা ছিল—‘সুস্থ মস্তিষ্কে আমি আত্মহত্যা করছি’। সেই নোট পাঠানো হয় সিআইডিতে। সিআইডির হস্তরেখাবিদ সমীর কুমার মুখার্জি এটা পরীক্ষা করেন। তিনি একদিন আমাকে বলেছিলেন, দুটো লেখা হুবহু মিলে গেলেই ধরে নিতে হয় একটি জাল। বড় খবরের আশায় একদিন আমি তাঁর কাছে গেলাম। বললেন, সুইসাইড নোট ঠিক আছে। এটা সালমানের হাতের লেখা। বড় খবরের আশা উবে গেল।
প্রথমে এই মামলা তদন্ত করল রমনা থানার পুলিশ, তারপর এল ডিবি এবং সিআইডিতে। সবাই বললেন, এটা আত্মহত্যা। সিআইডির রিপোর্টের ব্যাপারে নারাজি দিলেন সালমানের বাবা। তিনি বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাইলেন। ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক বিচার বিভাগীয় তদন্ত করলেন। সালমানের বাবা সেই তদন্তেও নারাজি দেন। তাঁর দাবি, সালমানকে চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে গলায় বিদ্যুতের তার পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়। সর্বশেষ আদালত পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। পিবিআই এ ঘটনাকে ‘আত্মহত্যা’ বলে প্রতিবেদন দেয়। সালমানের বাবা মারা যাওয়ায় (২০০০ সালের ১১ মে) এবার নারাজি দেন তাঁর মা নীলা চৌধুরী।
এই তদন্তের মাঝে একটি ঘটনা ঘটে। সালমানের মৃত্যুর বছরখানেক পর রেজভী আহমেদ নামে এক যুবক সালমানের মায়ের বাড়িতে গিয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করলে তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে বলেন, সালমানকে তাঁর স্ত্রী, শাশুড়ি, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ কয়েকজন মিলে খুন করেছেন। পরে আবার সিআইডির কাছে তিনি বলেন, তাঁর এই জবানবন্দি ছিল সাজানো। ক্যান্টনমেন্ট থানার পুলিশ তাঁকে মারধর করে এই জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছিল।
অনেক বছর ধরে এ ঘটনার ফলোআপ করেছি। বিভিন্ন সময় যেসব তথ্য পেয়েছি, তা নিয়ে আমার মনেও অনেক প্রশ্ন। সালমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আশরাফুল হক ডন, তাঁর গৃহকর্মী, বন্ধুসহ আরও অনেকে আমাকে বলেছিলেন, সালমানের মৃত্যুর নেপথ্যে ছিল নায়িকা শাবনূরের সঙ্গে তাঁর গভীর সম্পর্ক। শাবনূরের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি সামিরা জেনে যান।
সালমান একবার শাবনূরের সঙ্গে ভারতেও গিয়েছিলেন। তা ছাড়া, সামিরা ঢাকার বাইরে গেলেই শাবনূর এসে সালমানের বাসায় রাত কাটাতেন। সামিরা একবার এফডিসিতে তাঁদের দুজনকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখেও ফেলেন। সালমানের ঘনিষ্ঠরা বলেছিলেন, সন্তান না হওয়ায় সালমান খুব বিপর্যস্ত ছিলেন। তিনি কাজের মেয়ে ডলির সন্তানকে দত্তক নিতে চেয়েছিলেন।
সালমান চেয়েছিলেন, সামিরা থাকবেন, আবার তিনি শাবনূরকেও বিয়ে করবেন। তাঁর মায়ের বোধ হয় এতে সম্মতি ছিল। ডনের ধারণা, এর পরই সবকিছু জটিল হয়ে যায়। সালমান আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
সালমান ছিলেন ঢাকাই ফিল্মের ‘হার্টথ্রব’ নায়ক। আজকের দিনে বসে এটা একেবারেই ভাবা কঠিন যে তিনি কতটা জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর পোশাকপরিচ্ছদ, সংলাপ বলার ধরন, অভিনয়দক্ষতা—সবকিছু মিলিয়ে রোমান্টিক হিরোর পরিচিতি পেয়ে যান। সালমান শাহ মাত্র চার বছর অভিনয় করেন। এ সময় তিনি ২৭টি সিনেমায় অভিনয় করেন। বেশির ভাগই সিনেমা ছিল আলোচিত এবং ব্যবসাসফল। যখন তিনি মারা যান, তাঁর পেছনে প্রযোজকদের লগ্নি ছিল আড়াই শ কোটি টাকা।
সালমান শাহর মৃত্যুসংবাদ দর্শকের মনে এতটাই দাগ কেটেছিল যে দুই দশকের বেশি সময় পরেও তাঁকে নিয়ে আলোচনা থামেনি। এখনো অনেক ভক্তের কাছে তাঁর এই মৃত্যু রহস্যে ঘেরা। আমার কাছে তো বটেই।
কামরুল হাসান

চিত্রনায়ক সালমান শাহর সঙ্গে আমার কোনো কালে কোনো জানাশোনা ছিল না। সেটা হওয়ার কথাও নয়। তবে তাঁর সঙ্গে মাত্র একবার দেখা হয়েছিল, কথাও হয়েছিল। সেটা এফডিসিতে কী একটি অপ্রীতিকর ঘটনার সময়। এটা ঠিক যে, তাঁর মতো নক্ষত্রের সঙ্গে আমার মতো উটকো লোকের আলাপ কখনো কখনো হয়তো হয়, কিন্তু তার আয়ু খুব বেশি স্থায়ী হয় না। তার পরও সালমান শাহকে এভাবে দেখব, সেটা একেবারে মাথায় ছিল না।
শুক্রবারের সকাল মানেই রিপোর্টারদের বিশ্রামের দিন, এদিন অ্যাসাইনমেন্ট কম থাকে। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর দিনের প্রথম ভাগে বিশ্রামেই ছিলাম। দুপুরের ঠিক আগে খবর এল চিত্রনায়ক সালমান শাহ খুন হয়েছেন। লাশ হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে। আমার সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল পায়ে হাঁটা দূরে। দিলাম দৌড়। গিয়ে শুনি লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হলি ফ্যামিলির জরুরি বিভাগে একজন ডাক্তার বসে ছিলেন। বললেন, ‘গলায় ফাঁসির দাগ আছে, আত্মহত্যা হতে পারে।’
ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে দেখি শত শত মানুষের ভিড়। বেশির ভাগই সিনেমার লোকজন। সবাই চুপচাপ, কেউ কিছু বলছেন না। কী হয়েছে, তা-ও কেউ জানেন না।
নায়ক সালমান তাঁর স্ত্রী সামিরা হক ওয়াইজকে নিয়ে থাকতেন দিলু রোডের উল্টো দিকের ইস্কাটন প্লাজায়। গেলাম সেখানে। কেউ কিছু বলেন না। বিকেলের দিকে তাঁর বাবা কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী এলেন রমনা থানায় মামলা করতে।
সালমান শাহরা ছিলেন দুই ভাই। তাঁর মা নিলুফার জামান চৌধুরী, যিনি নীলা চৌধুরী নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন এরশাদের রাজনীতি করার সুবাদে। সালমানের বাবা কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ছিলেন নিরীহ প্রকৃতির। ১৯৯২ সালে চট্টগ্রামে একটি শো করতে গিয়ে সাবেক ক্রিকেটার শফিকুল হক হীরার মেয়ে সামিরার সঙ্গে সালমানের পরিচয় হয়। পরে মায়ের অমতে সালমান তাঁকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর সালমান মায়ের বাসা থেকে ইস্কাটনে এসে থাকতে শুরু করেন। সালমানের সঙ্গে তাঁর মায়ের তেমন কোনো কথা হতো না। বাসায় আসতেন শুধু তাঁর বাবা কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।
রমনা থানায় এসে কমর উদ্দিন বললেন, সেদিন তাঁদের সিলেটে যাওয়ার কথা ছিল। সকালে তিনি ছেলের সঙ্গে দেখা করতে ইস্কাটনের বাসায় যান। বাসার নিচে দারোয়ান তাঁকে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। জোর করে তিনি ওপরে গেলে সালমানের স্ত্রী সামিরা তাঁকে বলেন, সালমান ঘুমাচ্ছে। এ কথা শুনে তিনি বাড়ি ফিরে যান। এরপর বেলা ১১টার দিকে সেলিম নামে চলচ্চিত্রের এক কর্মী নীলা চৌধুরীকে ফোন দিয়ে দ্রুত সালমানের বাসায় আসতে বলেন। নীলা চৌধুরী ছোট ছেলে চৌধুরী মো. শাহরান বিল্টুকে নিয়ে ইস্কাটনের বাসায় এসে দেখেন কয়েকজন নারী সালমানের পায়ে তেল মালিশ করছেন। তাঁর শরীর নীল হয়ে গেছে। বাদল খন্দকার নামের একজন চলচ্চিত্রকার তখন সেখানে ছিলেন। এরপর সবাই সালমানকে ধরাধরি করে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার ডাক্তার বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা গেছেন।
কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর এই মামলা অপমৃত্যুর মামলা হিসেবে রেকর্ড করে রমনা থানা। ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন লাশ নেওয়া হলো এফডিসিতে। হাজার হাজার মানুষ সেখানে। সবাই বললেন, এটা পরিষ্কার হত্যাকাণ্ড। সেদিনই সালমানের লাশ সিলেটে নিয়ে হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারের কবরস্থানে দাফন করা হলো। সব কাগজে এই মৃত্যু নিয়ে রহস্যের খবর ছাপা হলো।
দেশজুড়ে তখন সালমানের অসংখ্য ভক্ত। কয়েকজন তরুণী এই মৃত্যু মেনে নিতে না পেরে আত্মহত্যাও করলেন। আকস্মিক এই মৃত্যুতে স্তম্ভিত গোটা দেশ। সালমানভক্তদের মধ্যে তৈরি হলো নানা প্রশ্ন। এ অবস্থায় পরিবারের দাবির মুখে আবার লাশ তুলে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত হলো সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে। ভিসেরা পরীক্ষাও হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর জন্য উচ্চপর্যায়ের একটি বোর্ড গঠন করে দেয়। তাঁদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত হয়, সালমান শাহর গলায় ফাঁস ছিল ‘এনটিই মর্টেম’ বা মৃত্যুপূর্ব।
মারা যাওয়ার সময় সালমানের পকেটে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া যায়। তাতে লেখা ছিল—‘সুস্থ মস্তিষ্কে আমি আত্মহত্যা করছি’। সেই নোট পাঠানো হয় সিআইডিতে। সিআইডির হস্তরেখাবিদ সমীর কুমার মুখার্জি এটা পরীক্ষা করেন। তিনি একদিন আমাকে বলেছিলেন, দুটো লেখা হুবহু মিলে গেলেই ধরে নিতে হয় একটি জাল। বড় খবরের আশায় একদিন আমি তাঁর কাছে গেলাম। বললেন, সুইসাইড নোট ঠিক আছে। এটা সালমানের হাতের লেখা। বড় খবরের আশা উবে গেল।
প্রথমে এই মামলা তদন্ত করল রমনা থানার পুলিশ, তারপর এল ডিবি এবং সিআইডিতে। সবাই বললেন, এটা আত্মহত্যা। সিআইডির রিপোর্টের ব্যাপারে নারাজি দিলেন সালমানের বাবা। তিনি বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাইলেন। ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক বিচার বিভাগীয় তদন্ত করলেন। সালমানের বাবা সেই তদন্তেও নারাজি দেন। তাঁর দাবি, সালমানকে চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে গলায় বিদ্যুতের তার পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়। সর্বশেষ আদালত পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। পিবিআই এ ঘটনাকে ‘আত্মহত্যা’ বলে প্রতিবেদন দেয়। সালমানের বাবা মারা যাওয়ায় (২০০০ সালের ১১ মে) এবার নারাজি দেন তাঁর মা নীলা চৌধুরী।
এই তদন্তের মাঝে একটি ঘটনা ঘটে। সালমানের মৃত্যুর বছরখানেক পর রেজভী আহমেদ নামে এক যুবক সালমানের মায়ের বাড়িতে গিয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করলে তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে বলেন, সালমানকে তাঁর স্ত্রী, শাশুড়ি, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ কয়েকজন মিলে খুন করেছেন। পরে আবার সিআইডির কাছে তিনি বলেন, তাঁর এই জবানবন্দি ছিল সাজানো। ক্যান্টনমেন্ট থানার পুলিশ তাঁকে মারধর করে এই জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছিল।
অনেক বছর ধরে এ ঘটনার ফলোআপ করেছি। বিভিন্ন সময় যেসব তথ্য পেয়েছি, তা নিয়ে আমার মনেও অনেক প্রশ্ন। সালমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আশরাফুল হক ডন, তাঁর গৃহকর্মী, বন্ধুসহ আরও অনেকে আমাকে বলেছিলেন, সালমানের মৃত্যুর নেপথ্যে ছিল নায়িকা শাবনূরের সঙ্গে তাঁর গভীর সম্পর্ক। শাবনূরের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি সামিরা জেনে যান।
সালমান একবার শাবনূরের সঙ্গে ভারতেও গিয়েছিলেন। তা ছাড়া, সামিরা ঢাকার বাইরে গেলেই শাবনূর এসে সালমানের বাসায় রাত কাটাতেন। সামিরা একবার এফডিসিতে তাঁদের দুজনকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখেও ফেলেন। সালমানের ঘনিষ্ঠরা বলেছিলেন, সন্তান না হওয়ায় সালমান খুব বিপর্যস্ত ছিলেন। তিনি কাজের মেয়ে ডলির সন্তানকে দত্তক নিতে চেয়েছিলেন।
সালমান চেয়েছিলেন, সামিরা থাকবেন, আবার তিনি শাবনূরকেও বিয়ে করবেন। তাঁর মায়ের বোধ হয় এতে সম্মতি ছিল। ডনের ধারণা, এর পরই সবকিছু জটিল হয়ে যায়। সালমান আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
সালমান ছিলেন ঢাকাই ফিল্মের ‘হার্টথ্রব’ নায়ক। আজকের দিনে বসে এটা একেবারেই ভাবা কঠিন যে তিনি কতটা জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর পোশাকপরিচ্ছদ, সংলাপ বলার ধরন, অভিনয়দক্ষতা—সবকিছু মিলিয়ে রোমান্টিক হিরোর পরিচিতি পেয়ে যান। সালমান শাহ মাত্র চার বছর অভিনয় করেন। এ সময় তিনি ২৭টি সিনেমায় অভিনয় করেন। বেশির ভাগই সিনেমা ছিল আলোচিত এবং ব্যবসাসফল। যখন তিনি মারা যান, তাঁর পেছনে প্রযোজকদের লগ্নি ছিল আড়াই শ কোটি টাকা।
সালমান শাহর মৃত্যুসংবাদ দর্শকের মনে এতটাই দাগ কেটেছিল যে দুই দশকের বেশি সময় পরেও তাঁকে নিয়ে আলোচনা থামেনি। এখনো অনেক ভক্তের কাছে তাঁর এই মৃত্যু রহস্যে ঘেরা। আমার কাছে তো বটেই।

চিত্রনায়ক সালমান শাহর সঙ্গে আমার কোনো কালে কোনো জানাশোনা ছিল না। সেটা হওয়ার কথাও নয়। তবে তাঁর সঙ্গে মাত্র একবার দেখা হয়েছিল, কথাও হয়েছিল। সেটা এফডিসিতে কী একটি অপ্রীতিকর ঘটনার সময়। এটা ঠিক যে, তাঁর মতো নক্ষত্রের সঙ্গে আমার মতো উটকো লোকের আলাপ কখনো কখনো হয়তো হয়, কিন্তু তার আয়ু খুব বেশি স্থায়ী হয় না। তার পরও সালমান শাহকে এভাবে দেখব, সেটা একেবারে মাথায় ছিল না।
শুক্রবারের সকাল মানেই রিপোর্টারদের বিশ্রামের দিন, এদিন অ্যাসাইনমেন্ট কম থাকে। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর দিনের প্রথম ভাগে বিশ্রামেই ছিলাম। দুপুরের ঠিক আগে খবর এল চিত্রনায়ক সালমান শাহ খুন হয়েছেন। লাশ হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে। আমার সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল পায়ে হাঁটা দূরে। দিলাম দৌড়। গিয়ে শুনি লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হলি ফ্যামিলির জরুরি বিভাগে একজন ডাক্তার বসে ছিলেন। বললেন, ‘গলায় ফাঁসির দাগ আছে, আত্মহত্যা হতে পারে।’
ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে দেখি শত শত মানুষের ভিড়। বেশির ভাগই সিনেমার লোকজন। সবাই চুপচাপ, কেউ কিছু বলছেন না। কী হয়েছে, তা-ও কেউ জানেন না।
নায়ক সালমান তাঁর স্ত্রী সামিরা হক ওয়াইজকে নিয়ে থাকতেন দিলু রোডের উল্টো দিকের ইস্কাটন প্লাজায়। গেলাম সেখানে। কেউ কিছু বলেন না। বিকেলের দিকে তাঁর বাবা কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী এলেন রমনা থানায় মামলা করতে।
সালমান শাহরা ছিলেন দুই ভাই। তাঁর মা নিলুফার জামান চৌধুরী, যিনি নীলা চৌধুরী নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন এরশাদের রাজনীতি করার সুবাদে। সালমানের বাবা কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ছিলেন নিরীহ প্রকৃতির। ১৯৯২ সালে চট্টগ্রামে একটি শো করতে গিয়ে সাবেক ক্রিকেটার শফিকুল হক হীরার মেয়ে সামিরার সঙ্গে সালমানের পরিচয় হয়। পরে মায়ের অমতে সালমান তাঁকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর সালমান মায়ের বাসা থেকে ইস্কাটনে এসে থাকতে শুরু করেন। সালমানের সঙ্গে তাঁর মায়ের তেমন কোনো কথা হতো না। বাসায় আসতেন শুধু তাঁর বাবা কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।
রমনা থানায় এসে কমর উদ্দিন বললেন, সেদিন তাঁদের সিলেটে যাওয়ার কথা ছিল। সকালে তিনি ছেলের সঙ্গে দেখা করতে ইস্কাটনের বাসায় যান। বাসার নিচে দারোয়ান তাঁকে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। জোর করে তিনি ওপরে গেলে সালমানের স্ত্রী সামিরা তাঁকে বলেন, সালমান ঘুমাচ্ছে। এ কথা শুনে তিনি বাড়ি ফিরে যান। এরপর বেলা ১১টার দিকে সেলিম নামে চলচ্চিত্রের এক কর্মী নীলা চৌধুরীকে ফোন দিয়ে দ্রুত সালমানের বাসায় আসতে বলেন। নীলা চৌধুরী ছোট ছেলে চৌধুরী মো. শাহরান বিল্টুকে নিয়ে ইস্কাটনের বাসায় এসে দেখেন কয়েকজন নারী সালমানের পায়ে তেল মালিশ করছেন। তাঁর শরীর নীল হয়ে গেছে। বাদল খন্দকার নামের একজন চলচ্চিত্রকার তখন সেখানে ছিলেন। এরপর সবাই সালমানকে ধরাধরি করে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার ডাক্তার বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা গেছেন।
কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর এই মামলা অপমৃত্যুর মামলা হিসেবে রেকর্ড করে রমনা থানা। ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন লাশ নেওয়া হলো এফডিসিতে। হাজার হাজার মানুষ সেখানে। সবাই বললেন, এটা পরিষ্কার হত্যাকাণ্ড। সেদিনই সালমানের লাশ সিলেটে নিয়ে হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারের কবরস্থানে দাফন করা হলো। সব কাগজে এই মৃত্যু নিয়ে রহস্যের খবর ছাপা হলো।
দেশজুড়ে তখন সালমানের অসংখ্য ভক্ত। কয়েকজন তরুণী এই মৃত্যু মেনে নিতে না পেরে আত্মহত্যাও করলেন। আকস্মিক এই মৃত্যুতে স্তম্ভিত গোটা দেশ। সালমানভক্তদের মধ্যে তৈরি হলো নানা প্রশ্ন। এ অবস্থায় পরিবারের দাবির মুখে আবার লাশ তুলে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত হলো সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে। ভিসেরা পরীক্ষাও হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর জন্য উচ্চপর্যায়ের একটি বোর্ড গঠন করে দেয়। তাঁদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত হয়, সালমান শাহর গলায় ফাঁস ছিল ‘এনটিই মর্টেম’ বা মৃত্যুপূর্ব।
মারা যাওয়ার সময় সালমানের পকেটে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া যায়। তাতে লেখা ছিল—‘সুস্থ মস্তিষ্কে আমি আত্মহত্যা করছি’। সেই নোট পাঠানো হয় সিআইডিতে। সিআইডির হস্তরেখাবিদ সমীর কুমার মুখার্জি এটা পরীক্ষা করেন। তিনি একদিন আমাকে বলেছিলেন, দুটো লেখা হুবহু মিলে গেলেই ধরে নিতে হয় একটি জাল। বড় খবরের আশায় একদিন আমি তাঁর কাছে গেলাম। বললেন, সুইসাইড নোট ঠিক আছে। এটা সালমানের হাতের লেখা। বড় খবরের আশা উবে গেল।
প্রথমে এই মামলা তদন্ত করল রমনা থানার পুলিশ, তারপর এল ডিবি এবং সিআইডিতে। সবাই বললেন, এটা আত্মহত্যা। সিআইডির রিপোর্টের ব্যাপারে নারাজি দিলেন সালমানের বাবা। তিনি বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাইলেন। ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক বিচার বিভাগীয় তদন্ত করলেন। সালমানের বাবা সেই তদন্তেও নারাজি দেন। তাঁর দাবি, সালমানকে চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে গলায় বিদ্যুতের তার পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়। সর্বশেষ আদালত পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। পিবিআই এ ঘটনাকে ‘আত্মহত্যা’ বলে প্রতিবেদন দেয়। সালমানের বাবা মারা যাওয়ায় (২০০০ সালের ১১ মে) এবার নারাজি দেন তাঁর মা নীলা চৌধুরী।
এই তদন্তের মাঝে একটি ঘটনা ঘটে। সালমানের মৃত্যুর বছরখানেক পর রেজভী আহমেদ নামে এক যুবক সালমানের মায়ের বাড়িতে গিয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করলে তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে বলেন, সালমানকে তাঁর স্ত্রী, শাশুড়ি, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ কয়েকজন মিলে খুন করেছেন। পরে আবার সিআইডির কাছে তিনি বলেন, তাঁর এই জবানবন্দি ছিল সাজানো। ক্যান্টনমেন্ট থানার পুলিশ তাঁকে মারধর করে এই জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছিল।
অনেক বছর ধরে এ ঘটনার ফলোআপ করেছি। বিভিন্ন সময় যেসব তথ্য পেয়েছি, তা নিয়ে আমার মনেও অনেক প্রশ্ন। সালমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আশরাফুল হক ডন, তাঁর গৃহকর্মী, বন্ধুসহ আরও অনেকে আমাকে বলেছিলেন, সালমানের মৃত্যুর নেপথ্যে ছিল নায়িকা শাবনূরের সঙ্গে তাঁর গভীর সম্পর্ক। শাবনূরের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি সামিরা জেনে যান।
সালমান একবার শাবনূরের সঙ্গে ভারতেও গিয়েছিলেন। তা ছাড়া, সামিরা ঢাকার বাইরে গেলেই শাবনূর এসে সালমানের বাসায় রাত কাটাতেন। সামিরা একবার এফডিসিতে তাঁদের দুজনকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখেও ফেলেন। সালমানের ঘনিষ্ঠরা বলেছিলেন, সন্তান না হওয়ায় সালমান খুব বিপর্যস্ত ছিলেন। তিনি কাজের মেয়ে ডলির সন্তানকে দত্তক নিতে চেয়েছিলেন।
সালমান চেয়েছিলেন, সামিরা থাকবেন, আবার তিনি শাবনূরকেও বিয়ে করবেন। তাঁর মায়ের বোধ হয় এতে সম্মতি ছিল। ডনের ধারণা, এর পরই সবকিছু জটিল হয়ে যায়। সালমান আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
সালমান ছিলেন ঢাকাই ফিল্মের ‘হার্টথ্রব’ নায়ক। আজকের দিনে বসে এটা একেবারেই ভাবা কঠিন যে তিনি কতটা জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর পোশাকপরিচ্ছদ, সংলাপ বলার ধরন, অভিনয়দক্ষতা—সবকিছু মিলিয়ে রোমান্টিক হিরোর পরিচিতি পেয়ে যান। সালমান শাহ মাত্র চার বছর অভিনয় করেন। এ সময় তিনি ২৭টি সিনেমায় অভিনয় করেন। বেশির ভাগই সিনেমা ছিল আলোচিত এবং ব্যবসাসফল। যখন তিনি মারা যান, তাঁর পেছনে প্রযোজকদের লগ্নি ছিল আড়াই শ কোটি টাকা।
সালমান শাহর মৃত্যুসংবাদ দর্শকের মনে এতটাই দাগ কেটেছিল যে দুই দশকের বেশি সময় পরেও তাঁকে নিয়ে আলোচনা থামেনি। এখনো অনেক ভক্তের কাছে তাঁর এই মৃত্যু রহস্যে ঘেরা। আমার কাছে তো বটেই।

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায়
২ দিন আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
৫ দিন আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
৭ দিন আগে
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
১৬ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায় তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সাতটি মামলা রয়েছে। পুলিশ বলছে, ভবনটি বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহৃত হতো।
আজ শনিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, হাসনাবাদ বাজারের ফলপট্টি গলিতে উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসা। মাদ্রাসায় শিশুদের পাঠদান করা হয়। বিস্ফোরণে চার কক্ষের একতলা ভবনটির পশ্চিম পাশের দুটি কক্ষ সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে, সিঁড়ির পাশের ছাদের একাংশ উড়ে গেছে এবং সব কটি কক্ষের পিলার ও দেয়ালে ফাটল ধরেছে। ঘটনাস্থলে ককটেল, রাসায়নিক দ্রব্য ও বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক বিভাগের ক্রাইম সিন ইউনিটের কর্মীরা আলামত সংগ্রহ করছেন। তাঁরা পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছেন। ভবনের পাশের একটি ভবনের দোতলার দেয়ালে বিস্ফোরণে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া বিস্ফোরণে পাশের একটি অটোরিকশার গ্যারেজের টিনের ছাউনি উড়ে গেছে। টিনের নিচে চাপা পড়েছিলেন গ্যারেজের ম্যানেজার আবুল কালাম।
আবুল কালাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এত বিকট শব্দ হয়েছে যে আমার কানে তব্দা লেগে যায়। আমি টিনের নিচে চাপা পড়ি। পরে হামাগুড়ি দিয়ে বের হই। এরপর দেখি মাদ্রাসার মধ্যে আগুন জ্বলছে। যারা ভেতরে ছিল, তারা দ্রুত বাচ্চাদের নিয়ে বের হয়ে চলে যায়।’
গ্যারেজের মালিক মোশাররফ হোসেন ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘বিস্ফোরণের পর পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। আমিও বাসা থেকে দৌড়ে আসি। আমার গ্যারেজের দুজন অটোচালক দুই শিশুকে ওই ভবন থেকে বের করেন। এক নারী আর এক শিশুকে নিয়ে চলে যায়। এ সময় আল আমিনও দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। আধা ঘণ্টার মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের লোকজন এসে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়।’
মাদ্রাসার পাশের ৫ তলা বাড়ির বাসিন্দা মনোয়ার বলেন, ‘হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। মনে হয়েছিল ভূমিকম্প। কারণ, বিস্ফোরণে সব ভবনে কাঁপুনি লাগে। সবাই চিৎকার করেছিল।’
ওই বাসিন্দা আরও বলেন, ‘মাদ্রাসাটিতে ৩০-৩৫ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করত। তবে শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় মাদ্রাসা বন্ধ ছিল। এ কারণে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।’
ভবনটির পশ্চিম পাশের এক পাশে তিনটি কক্ষে মাদ্রাসার কার্যক্রম পরিচালিত হতো। অপর পাশের একটি কক্ষে পরিচালক শেখ আল আমিন (৩২), তাঁর স্ত্রী আছিয়া বেগম (২৮) এবং তাঁদের তিন সন্তান নিয়ে সেখানেই থাকতেন। বিস্ফোরণে দুই ছেলে উমায়েত (১০) ও আবদুল্লাহ (৭) আহত হয়। এর মধ্যে আছিয়া ও তাঁর দুই সন্তানকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
পাশের ভবনের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিস্ফোরণে আমাদের ভবনের কিছু অংশ ফেটে গেছে। ঘরের ভেতরের আসবাবও ভেঙে পড়েছে।’
ঘটনাস্থলেই পুলিশ হেফাজতে বসে ছিলেন ভবনমালিক পারভীন বেগম। ভবনের জমি তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি। সেখানে লিবিয়ায় থাকা তাঁর দুই ছেলে এই ভবন ২০২২ সালে তৈরি করেন। এরপর হারুন অর রশীদ নামের এক ব্যক্তি এটি মাদ্রাসা করবেন বলে ১০ হাজার টাকায় ভাড়া নেন। পারভীন বেগম বলেন, ‘তিন বছর ধরে আমার বাড়ি ভাড়া নিয়ে মুফতি হারুন অর রশীদ মাদ্রাসা পরিচালনা করতেন। হারুন তাঁর শ্যালক আল আমিন ও শ্যালকের স্ত্রী আছিয়াকে মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্ব দেন। তিনি মাঝেমধ্যে মাদ্রাসায় আসতেন। আমি নিয়মিত খোঁজখবর নিতাম। কিন্তু মাদ্রাসার আড়ালে কী কার্যক্রম চলছিল, তা বুঝতে পারিনি। আজ এসে দেখি, ভবনের চারপাশ উড়ে গেছে।’
পারভীন বেগমের পাশেই ছিলেন তাঁর ছোট মেয়ে সোহানা। তিনি বলেন, ‘ভাড়া নেওয়ার সময় শুধু হারুন অর রশীদ একাই এসেছিলেন। এরপর তাঁরা মাদ্রাসা পরিচালনা শুরু করেন। তবে তাঁরা আশপাশের কারও সঙ্গে তেমন মিশতেন না।’
পুলিশ ভবনের ভেতর থেকে কেমিক্যাল, ককটেল, ভেস্ট ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস, কম্পিউটার ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, কোনো বিস্ফোরক তৈরি করতে গিয়ে বিস্ফোরিত হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে গতকাল বিকেলে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট শেখ আল আমিন পলাতক রয়েছেন। তবে কেরানীগঞ্জ থেকে তাঁর স্ত্রী আছিয়া বেগম, আছিয়ার ভাই হারুনের স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার এবং ঢাকার বাসাবো থেকে আসমানী খাতুন নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, আল আমিনের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে। তাঁর বিরুদ্ধে এর আগে ২০১৭ ও ২০২০ সালে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন জেএমবির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকা এবং আশপাশের বিভিন্ন থানায় অন্তত সাতটি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার আসমানী খাতুনের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায় তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সাতটি মামলা রয়েছে। পুলিশ বলছে, ভবনটি বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহৃত হতো।
আজ শনিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, হাসনাবাদ বাজারের ফলপট্টি গলিতে উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসা। মাদ্রাসায় শিশুদের পাঠদান করা হয়। বিস্ফোরণে চার কক্ষের একতলা ভবনটির পশ্চিম পাশের দুটি কক্ষ সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে, সিঁড়ির পাশের ছাদের একাংশ উড়ে গেছে এবং সব কটি কক্ষের পিলার ও দেয়ালে ফাটল ধরেছে। ঘটনাস্থলে ককটেল, রাসায়নিক দ্রব্য ও বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক বিভাগের ক্রাইম সিন ইউনিটের কর্মীরা আলামত সংগ্রহ করছেন। তাঁরা পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছেন। ভবনের পাশের একটি ভবনের দোতলার দেয়ালে বিস্ফোরণে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া বিস্ফোরণে পাশের একটি অটোরিকশার গ্যারেজের টিনের ছাউনি উড়ে গেছে। টিনের নিচে চাপা পড়েছিলেন গ্যারেজের ম্যানেজার আবুল কালাম।
আবুল কালাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এত বিকট শব্দ হয়েছে যে আমার কানে তব্দা লেগে যায়। আমি টিনের নিচে চাপা পড়ি। পরে হামাগুড়ি দিয়ে বের হই। এরপর দেখি মাদ্রাসার মধ্যে আগুন জ্বলছে। যারা ভেতরে ছিল, তারা দ্রুত বাচ্চাদের নিয়ে বের হয়ে চলে যায়।’
গ্যারেজের মালিক মোশাররফ হোসেন ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘বিস্ফোরণের পর পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। আমিও বাসা থেকে দৌড়ে আসি। আমার গ্যারেজের দুজন অটোচালক দুই শিশুকে ওই ভবন থেকে বের করেন। এক নারী আর এক শিশুকে নিয়ে চলে যায়। এ সময় আল আমিনও দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। আধা ঘণ্টার মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের লোকজন এসে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়।’
মাদ্রাসার পাশের ৫ তলা বাড়ির বাসিন্দা মনোয়ার বলেন, ‘হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। মনে হয়েছিল ভূমিকম্প। কারণ, বিস্ফোরণে সব ভবনে কাঁপুনি লাগে। সবাই চিৎকার করেছিল।’
ওই বাসিন্দা আরও বলেন, ‘মাদ্রাসাটিতে ৩০-৩৫ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করত। তবে শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় মাদ্রাসা বন্ধ ছিল। এ কারণে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।’
ভবনটির পশ্চিম পাশের এক পাশে তিনটি কক্ষে মাদ্রাসার কার্যক্রম পরিচালিত হতো। অপর পাশের একটি কক্ষে পরিচালক শেখ আল আমিন (৩২), তাঁর স্ত্রী আছিয়া বেগম (২৮) এবং তাঁদের তিন সন্তান নিয়ে সেখানেই থাকতেন। বিস্ফোরণে দুই ছেলে উমায়েত (১০) ও আবদুল্লাহ (৭) আহত হয়। এর মধ্যে আছিয়া ও তাঁর দুই সন্তানকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
পাশের ভবনের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিস্ফোরণে আমাদের ভবনের কিছু অংশ ফেটে গেছে। ঘরের ভেতরের আসবাবও ভেঙে পড়েছে।’
ঘটনাস্থলেই পুলিশ হেফাজতে বসে ছিলেন ভবনমালিক পারভীন বেগম। ভবনের জমি তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি। সেখানে লিবিয়ায় থাকা তাঁর দুই ছেলে এই ভবন ২০২২ সালে তৈরি করেন। এরপর হারুন অর রশীদ নামের এক ব্যক্তি এটি মাদ্রাসা করবেন বলে ১০ হাজার টাকায় ভাড়া নেন। পারভীন বেগম বলেন, ‘তিন বছর ধরে আমার বাড়ি ভাড়া নিয়ে মুফতি হারুন অর রশীদ মাদ্রাসা পরিচালনা করতেন। হারুন তাঁর শ্যালক আল আমিন ও শ্যালকের স্ত্রী আছিয়াকে মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্ব দেন। তিনি মাঝেমধ্যে মাদ্রাসায় আসতেন। আমি নিয়মিত খোঁজখবর নিতাম। কিন্তু মাদ্রাসার আড়ালে কী কার্যক্রম চলছিল, তা বুঝতে পারিনি। আজ এসে দেখি, ভবনের চারপাশ উড়ে গেছে।’
পারভীন বেগমের পাশেই ছিলেন তাঁর ছোট মেয়ে সোহানা। তিনি বলেন, ‘ভাড়া নেওয়ার সময় শুধু হারুন অর রশীদ একাই এসেছিলেন। এরপর তাঁরা মাদ্রাসা পরিচালনা শুরু করেন। তবে তাঁরা আশপাশের কারও সঙ্গে তেমন মিশতেন না।’
পুলিশ ভবনের ভেতর থেকে কেমিক্যাল, ককটেল, ভেস্ট ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস, কম্পিউটার ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, কোনো বিস্ফোরক তৈরি করতে গিয়ে বিস্ফোরিত হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে গতকাল বিকেলে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট শেখ আল আমিন পলাতক রয়েছেন। তবে কেরানীগঞ্জ থেকে তাঁর স্ত্রী আছিয়া বেগম, আছিয়ার ভাই হারুনের স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার এবং ঢাকার বাসাবো থেকে আসমানী খাতুন নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, আল আমিনের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে। তাঁর বিরুদ্ধে এর আগে ২০১৭ ও ২০২০ সালে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন জেএমবির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকা এবং আশপাশের বিভিন্ন থানায় অন্তত সাতটি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার আসমানী খাতুনের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

চিত্রনায়ক সালমান শাহর সঙ্গে আমার কোনো কালে কোনো জানাশোনা ছিল না। সেটা হওয়ার কথাও নয়। তবে তাঁর সঙ্গে মাত্র একবার দেখা হয়েছিল, কথাও হয়েছিল।
০৬ নভেম্বর ২০২১
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
৫ দিন আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
৭ দিন আগে
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
১৬ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এ সারা দেশে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২ লাখ ৫৮ হাজার ১৬৮টি মোটরসাইকেল ও ২ লাখ ৬৪ হাজার ৪১১টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ৩ হাজার ৩৯৪টি অবৈধ মোটরসাইকেল আটক করা হয়।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ‘ফ্যাসিস্টদের’ দমনে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এ সারা দেশে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২ লাখ ৫৮ হাজার ১৬৮টি মোটরসাইকেল ও ২ লাখ ৬৪ হাজার ৪১১টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ৩ হাজার ৩৯৪টি অবৈধ মোটরসাইকেল আটক করা হয়।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ‘ফ্যাসিস্টদের’ দমনে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।

চিত্রনায়ক সালমান শাহর সঙ্গে আমার কোনো কালে কোনো জানাশোনা ছিল না। সেটা হওয়ার কথাও নয়। তবে তাঁর সঙ্গে মাত্র একবার দেখা হয়েছিল, কথাও হয়েছিল।
০৬ নভেম্বর ২০২১
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায়
২ দিন আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
৭ দিন আগে
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
১৬ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২৮ হাজার ৭৬৬টি মোটরসাইকেল ও ৪৩ হাজার ৩৫২টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ২৯১টি অবৈধ মোটরসাইকেল আটক করা হয়।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ‘ফ্যাসিস্টদের’ দমনে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২৮ হাজার ৭৬৬টি মোটরসাইকেল ও ৪৩ হাজার ৩৫২টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ২৯১টি অবৈধ মোটরসাইকেল আটক করা হয়।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ‘ফ্যাসিস্টদের’ দমনে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।

চিত্রনায়ক সালমান শাহর সঙ্গে আমার কোনো কালে কোনো জানাশোনা ছিল না। সেটা হওয়ার কথাও নয়। তবে তাঁর সঙ্গে মাত্র একবার দেখা হয়েছিল, কথাও হয়েছিল।
০৬ নভেম্বর ২০২১
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায়
২ দিন আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
৫ দিন আগে
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
১৬ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।
দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’
পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।
২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।
ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।
মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।
দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’
পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।
২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।
ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।
মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

চিত্রনায়ক সালমান শাহর সঙ্গে আমার কোনো কালে কোনো জানাশোনা ছিল না। সেটা হওয়ার কথাও নয়। তবে তাঁর সঙ্গে মাত্র একবার দেখা হয়েছিল, কথাও হয়েছিল।
০৬ নভেম্বর ২০২১
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায়
২ দিন আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
৫ দিন আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
৭ দিন আগে