Ajker Patrika

অভির সঙ্গে ঘর বাঁধতে চেয়েছিলেন তিন্নি

কামরুল হাসান
আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩: ৩৭
অভির সঙ্গে ঘর বাঁধতে চেয়েছিলেন তিন্নি

লাশকাটা ঘরে পড়ে আছে লাশটি। ঠিকানা নেই, তাই মর্গের খাতায় নাম ওঠেনি। নাম নেই পুলিশের কাগজপত্রেও। এর নাম বেওয়ারিশ লাশ। ঢাকায় প্রতিদিন ছয়-সাতজন এভাবে বেওয়ারিশ হয়। ওই তরুণীও সেভাবেই বেওয়ারিশ হয়েছিলেন। যখন পরিচয় পাওয়া গেল, ততক্ষণে আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলাম তাঁকে দাফন করে ফেলেছে। কে জানত, এত জনপ্রিয় মেয়েটি!

জনকণ্ঠের কেরানীগঞ্জ সংবাদদাতা ছিলেন সালাউদ্দিন আহমেদ। একদিন সন্ধ্যায় শার্টের বুক পকেটে করে একটি লাশের ছবি নিয়ে অফিসে হাজির। বললেন, ‘বস, এইডা একটু ছাপাইয়া দ্যান। দ্যাকতে বড় লোকের মাইয়ার মতন লাগে।' সালাউদ্দিনের বর্ণনা ছিল, চীন-মৈত্রী সেতুর পশ্চিম দিক থেকে ১১ নম্বর পিলারের ওপর লাশটি পড়ে ছিল। কেরানীগঞ্জ থানার এএসআই শফিউদ্দিন লাশ উদ্ধার করেছেন। পুলিশ মনে করছে, মেয়েটি আত্মহত্যার জন্য বুড়িগঙ্গা ব্রিজ থেকে লাফ দিয়েছিল। কিন্তু পানিতে না পড়ে পিলারের ওপর পড়েছে। মিটফোর্ড মর্গে লাশ আছে, চার দিনে কেউ তাঁর খোঁজ নিতে আসেনি। পত্রিকায় ছবি ছাপা হলে হয়তো পরিচয় মিলবে। ২০০২ সালের কথা বলছি। তখন সংবাদপত্রে লাশের ছবি ছাপা নিয়ে অত রাখঢাক ছিল না। হরদম ছাপা হতো।

ছবিটি নিয়ে চিফ রিপোর্টারকে দেখালাম, পাত্তা পেলাম না। পরদিন বার্তা সম্পাদককে অনুরোধ করতেই বললেন, ‘পেজ টু-এ দিয়ে দেন।’ ‘এই তরুণীর পরিচয় নেই’ শিরোনামে তিন কলামজুড়ে ছাপা হলো অজ্ঞাত তরুণীর লাশের ছবি।

এটা ২০০২ সালের ১৬ নভেম্বর। ওই দিন দুপুরে ধানমন্ডি থেকে ফোন দিলেন অনু নামের এক যুবক। বললেন, ছাপা ছবিটির মূল ছবি তাঁরা দেখতে চান। সেটা দেখতে একটি পরিবার আমার অফিসে আসবে। কলাবাগান থেকে ইস্কাটনে জনকণ্ঠ ভবনে তাঁরা এলেন সন্ধ্যার দিকে। ছবিটি হাতে নিতেই সুজন নামে একজন বলে উঠলেন, ‘ঠিকই তো আছে।’ পাশে থাকা এক নারী ছবির দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলেন। তাঁর দেখাদেখি আরেকজনও শুরু করলেন কান্না। যতই চুপ করতে বলি, কেউ কথা শোনেন না। বললাম, এটা কার ছবি? কেউ বলেন না। তাঁদের সঙ্গে আসা অনু বললেন, এটা মডেল তিন্নি ওরফে সৈয়দা তানিয়া মাহবুবের ছবি। কয়েক দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন। মাঝবয়সী এক নারীকে দেখিয়ে বললেন, ‘উনি তিন্নির ফুফু’।

একজন একটু শান্ত হয়ে জানতে চাইলেন, এখন তাঁদের কী করতে হবে। বললাম, আগে মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন। সবাই গাড়িতে উঠে চলে গেলেন।

ঘণ্টা দেড়েক পর অনুর ফোন: ‘ভাই, মর্গে তো লাশ নেই। আজ বিকেলে আঞ্জুমান জুরাইন কবরস্থানে দাফন কইরা ফেলছে।’ বললাম, এবার কেরানীগঞ্জ থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। তিন্নির চাচা সৈয়দ রেজাউল করিমও সম্ভবত তাঁদের সঙ্গে ছিলেন।

পরদিন ফলোআপ করতে তিন্নিদের কলাবাগানের বাড়িতে গেলাম। মনে হলো সবাই খুব ভয়ে আছেন। কেউ কিছু বললেন না। কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা হলো। তদন্ত শুরু করলেন এসআই কাইয়ুম আলী সরদার। তিনি তদন্তের শুরুতেই তিন্নির স্বামী শাফকাত হোসেন পিয়ালকে গ্রেপ্তার করলেন। পুলিশ ধরে নিয়েছিল, এ ঘটনার কয়েক দিন আগে তিন্নির সঙ্গে পিয়ালের ছাড়াছাড়ি হয়। সেই ক্ষোভেই পিয়াল মেয়েটিকে খুন করেছেন।

কেরানীগঞ্জ থানায় গিয়ে পিয়ালের সঙ্গে কথা বলতেই পেয়ে গেলাম আসল খবর। পিয়ালের এক বন্ধু সে সময় থানায় ছিলেন। বললেন, নামকরা একটি পত্রিকার কাভার ফটো হওয়ার পর রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যান তিন্নি। এরপর খুব কম সময়ে তিনি অনেকগুলো নামী পণ্যের মডেল হন। তাঁর এই সাফল্যের পেছনের মানুষ ছিলেন স্বামী শাফকাত হোসেন পিয়াল। তাঁদের তিন বছরের সংসারে দেড় বছরের একটি মেয়ে ছিল।

একদিন একটি পাঁচতারকা হোটেলের পার্টিতে এসে তিন্নির সঙ্গে পরিচয় হয় সাবেক সাংসদ গোলাম ফারুক অভির। অভির প্রেমে পড়ে যান তিন্নি। তখন অভি থাকতেন নিউ ইস্কাটনের প্রোপার্টি এনক্লেভের একটি ফ্ল্যাটে। সেখানে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন তিন্নি। অভির সঙ্গে কয়েকবার বিদেশেও যান। নতুন সম্পর্ক নিয়ে পিয়ালের সঙ্গে বিরোধ বাধে তিন্নির। তিন্নি সিদ্ধান্ত নেন পিয়ালকে ছেড়ে অভিকেই বিয়ে করবেন।

২০০২ সালের ৬ নভেম্বর পিয়ালের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করে দেড় বছরের মেয়েকে স্বামীর কাছে রেখে অভির ইস্কাটনের ফ্ল্যাটে চলে আসেন তিন্নি। সেখানে থাকার সময় ২০০২ সালের ১০ নভেম্বর রাতে তিনি খুন হন।

এই খুনের মামলা যাঁরা তদন্ত করেছিলেন, তাঁদের একজন সিআইডির এএসপি আরমান আলী। অভির গাড়িচালক, গৃহকর্মী ও ফ্ল্যাটের নিরাপত্তাকর্মীকে জেরা করেন তিনি। আরমান আলী আমাকে বলেছিলেন, ইস্কাটনের বাড়িতে এসে বিয়ের জন্য অভিকে চাপ দিতে থাকেন তিন্নি। কিন্তু অভি রাজি হচ্ছিলেন না। একপর্যায়ে গণমাধ্যমের কাছে এ ঘটনা ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে অভি তিন্নির মাথায় আঘাত করেন। সঙ্গে সঙ্গে নিস্তেজ হয়ে পড়েন তিন্নি। এরপর গভীর রাতে অভি সেই মরদেহ গাড়িতে তুলে বুড়িগঙ্গা ব্রিজের কাছে যান। এরপর ব্রিজের ওপর থেকে লাশটি নদীতে ফেলে দেন। কিন্তু পানিতে না পড়ে লাশ পড়ে ব্রিজের পিলারের মাথার ওপর।

সাতজন তদন্তকারী এই মামলার তদন্ত করেন। ছয় বছর পর ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর চার্জশিট দিয়েছিলেন সিআইডির এএসপি মোজাম্মেল হক। অভিনেত্রী তমালিকা কর্মকার, অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয় ও নাট্যকার এজাজ খান এই মামলার সাক্ষী ছিলেন। আরেক সাক্ষী ছিলেন শীর্ষসন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন। ইমন পুলিশকে বলেছিলেন, তিন্নি খুনের পর অভি ঢাকা থেকে পালিয়ে নেপাল হয়ে কলকাতায় যান। কলকাতায় তাঁর আশ্রয়ে থাকার সময় তিন্নিকে খুন করার কথা স্বীকার করেন অভি।

এবার অভিকে নিয়ে কিছু বলতেই হয়। বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ধামুড়া গ্রামের আরশাদ আহমেদের চার ছেলে ও চার মেয়ে। ছেলেদের মধ্যে ছোট গোলাম ফারুক অভি। অসম্ভব মেধাবী অভি এসএসসিতে মেধাতালিকায় স্থান পান। ভাইবোনদের সবাই উচ্চশিক্ষিত, কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কেউ পদস্থ সরকারি চাকুরে। একজন নামকরা সাংবাদিক। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ‘হিফজুল বাহার’-এ সওয়ার হয়েছিলেন ছাত্রজীবনে। তারপর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে ভিড়ে যান। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদকও হন। আরেক ছাত্রনেতা নীরুর সঙ্গে মিলে গড়ে তোলেন বিশাল এক বাহিনী। ছাত্ররাজনীতির পাশাপাশি তাঁরা নানা ধরনের সন্ত্রাসী কাজে জড়িয়ে পড়েন।

এরশাদবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন তখন তুঙ্গে। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে ছাত্রদল প্রকাশ্যে থাকলেও অভি-নীরু গোপনে এরশাদের সঙ্গে আঁতাত করেন। এর মধ্যে ১৯৮৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হল থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন অভি। এতে তাঁর ভাগ্য খুলে যায়। জেলে এরশাদের লোকজন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরশাদের পক্ষে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জেল থেকে বেরিয়ে আসেন অভি। ১৯৯০-এর ২৭ নভেম্বর এরশাদের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় দখলে নেতৃত্ব দেন অভি-নীরু। ওই দিন গুলিতে ডা. মিলন নিহত হলে পরিস্থিতি ভয়ংকর হয়ে ওঠে। কয়েক দিন পর এরশাদের পতন হয়।

এনএসআইয়ের সাবেক পরিচালক সফিক উল্লাহ তাঁর বই ‘এক পুলিশের ডায়েরি’তে লিখেছেন, এরশাদের এক সেনা কর্মকর্তার নির্দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দখল করতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন থেকে অভিদের জন্য সরকারি গুলি সরবরাহ করা হয়। পরে সেই গুলির কিছু অংশ রাজারবাগে ফেরতও দেওয়া হয়। রাজারবাগের অস্ত্রাগারের নথিতে এসব তথ্য রয়েছে।

ডা. মিলন হত্যার পর গোপনে কলকাতায় চলে যান অভি। ফিরে এসে বরিশাল-২ আসন থেকে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হন ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে। ২০০১ সালের নির্বাচনে ওই আসনে বিএনপির মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের কাছে হেরে যান।

অভির জীবন ছিল বেপরোয়া। বহু অভিনেত্রী, মডেল ও চিত্রনায়িকা তাঁর লালসার শিকার হয়েছেন। একবার ব্যক্তিগত ছবি ফাঁস করার অভিযোগে এক অভিনেত্রী তাঁর মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিলেন। অভির সর্বশেষ শিকার মডেল তিন্নি।

অভির বিরুদ্ধে তিন্নি খুনের অভিযোগ ওঠে লাশ উদ্ধারের চার-পাঁচ দিন পর। এরপরই গা-ঢাকা দেন তিনি। শুনেছিলাম, একটি ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সহায়তায় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে নেপালে যান। সেখান থেকে কলকাতা হয়ে থিতু হন কানাডায়। রমনা থানার একটি অস্ত্র মামলায় অভির ১৭ বছরের সাজা হয়েছে। তাঁকে ধরতে ইন্টারপোল কয়েক দফা রেড নোটিশ জারি করেছিল। সব মিলিয়ে পুলিশি তৎপরতা বলতে ছিল এটুকুই।

এই লেখাটা শেষ করার আগে তিন্নির ফেলে আসা পরিবারের খোঁজ নিলাম। তাঁর মেয়ে এখন বাবার সঙ্গে বিদেশে থাকেন। তিন্নিরা ছিলেন দুই বোন, ছোট বোন এয়ারহোস্টেস। তাঁর প্রবাসী বাবা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান এখন দেশে একাই থাকেন। তিন্নির মা স্বামীকে ছেড়ে পাকিস্তানে চলে গেছেন। কলাবাগানে ফুফুর যে বাড়িতে তিন্নিরা থাকতেন, অভির ভয়ে সেটাও বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয় পরিবারটি। এভাবে একটি খুন লন্ডভন্ড করে দেয় গোটা একটি পরিবারকে। অথচ ঘটনার মূল হোতা অভি থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে।

আসলে, ধর্মের কলও অনেক সময় বাতাসে নড়ে না।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ০৫
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।

হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।

দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’

পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।

এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।
গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।

আলোচিত ফয়সাল করিম কে?

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।

২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।

ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।

২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।

অভ্যুত্থানের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ফয়সালের দ্রুত জামিন নিয়ে প্রশ্ন সবার

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।

মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।

জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খুনের পর মোবাইল, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট, ‘গৃহকর্মী আয়েশা’র পরিচয় মেলেনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৭
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।

স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।

মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।

মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সৌদি আরবে অপহরণ, ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি দেশে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।

গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।

গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুলিশের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ২৫
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।

ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’

কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।

পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’

যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’

গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’

ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।

নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।

সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত