Ajker Patrika

নির্বাচনী টাইমলাইন

ব্যবসায়ীরা পেলেন নতুন দিশা

রোকন উদ্দীন, ঢাকা
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২: ১২
আশরাফ আহমেদ, মহিউদ্দিন রুবেল ও ড. মোস্তাফিজুর রহমান। ফাইল ছবি
আশরাফ আহমেদ, মহিউদ্দিন রুবেল ও ড. মোস্তাফিজুর রহমান। ফাইল ছবি

বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষণায় দেশের জনগণের দীর্ঘদিনের একটি বড় প্রশ্নের উত্তর মিলেছে—এই সরকার কত দিন ক্ষমতায় থাকবে। তাঁর দেওয়া সময়সীমা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শেষ বা ২০২৬ সালের মাঝামাঝি একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং এর মধ্য দিয়ে নতুন রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। যদিও রাজনৈতিক দলগুলো এই সময়সীমাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবে, তা ভিন্ন বিষয়; তবে এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কাটিয়ে স্থিতিশীলতার একটি স্পষ্ট দিকনির্দেশনা এসেছে। ফলে দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসায় নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, ঘোষিত সময়সীমা একটি নির্ভরযোগ্য কাঠামো তৈরি করবে, যা দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নকে সহায়তা করবে। এই ঘোষণার ফলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশে স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবে, যা বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে এবং সামনের দিনগুলোতে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে নতুন উদ্যম জোগাবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা চেম্বারের সদ্য সাবেক সভাপতি আশরাফ আহমেদ আজকের পত্রিকাকে জানান, বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং জ্বালানিসংকটের মধ্যে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের বড় ধরনের শিল্পসম্পর্কিত চ্যালেঞ্জও রয়েছে, যেগুলোর ইতিবাচক ফল অর্জন করতে হলে একটি স্থিতিশীল ও নিরাপদ পরিবেশ প্রয়োজন। একটি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা এবং সময়সীমা দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করবে।’

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এত দিন একধরনের অনিশ্চয়তা বিরাজ করছিল—এই সরকার কত দিন কার্যক্রম চালাতে পারবে, সেই প্রশ্ন অনেকের মনে ছিল। এই দ্বিধা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি উৎসাহের অভাব তৈরি করেছিল। সেই সংশয় কেটে গেছে। এখন পরিষ্কার সময়সীমার ঘোষণার মাধ্যমে এক নতুন দিশা মিলেছে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থার জায়গা তৈরি করবে। এই আত্মবিশ্বাসে নতুন বিনিয়োগের সুযোগের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে আরও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে।

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ও জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এটি কোনো রোডম্যাপ নয়, বরং নির্দিষ্ট টাইমলাইন; যা দেশের মানুষকে স্বস্তি দেবে এবং অনিশ্চয়তা কমাবে। অন্তর্বর্তী সরকার এক বছর পর্যন্ত তাদের সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে যাবে, যা দেশের জনগণের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং বাজারে এর স্পষ্ট প্রতিফলন দেখা যাবে।

বিজিএমইএর সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণাটি আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যবসা করা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ক্রেতারা প্রায়ই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সম্পর্কে তথ্য জানতে চায়। এই ঘোষণা একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে, যা আন্তর্জাতিক অংশীদারদের মধ্যে আস্থা তৈরিতে সহায়ক হবে।’

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ঘোষিত সংস্কার এবং নির্বাচনের টাইমলাইন বিনিয়োগকারীদের পরিকল্পনায় এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কাজ করতে সহায়তা করবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের, বিশেষত পশ্চিমাদের অধিকাংশের জন্য স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করার জন্য একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রয়োজন। একটি অনির্বাচিত সরকারের নেতৃত্বাধীন দেশ তাদের মোটেও আকৃষ্ট করছে না। এখন পরিস্থিতি পরিবর্তন হবে।’

এদিকে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা ঘোষণা করায় ব্যাংক খাতেও কিছু প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ আদায় ও রি-শিডিউল লোনের ফিগারে একটা অগ্রগতি আমরা দেখতে পারি। অনেককে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য ঋণ সমন্বয় করা লাগতে পারে। ফলে কিছু খেলাপি ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা রয়েছে।’

এখন দরকার জাতীয় পরিকল্পনা

ব্যবসায়ী মহলের প্রত্যাশা, যে রাজনৈতিক সরকারই আসুক, যারা একটি সুস্থ এবং স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করবে। তবে তারা এ-ও মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকার একটি ভালো উদ্যোগ নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিবেশ উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়ন করছে। এর প্রয়োজনীয়তা আছে। যার ধারাবাহিকতা রাজনৈতিক সরকারকেও বজায় রাখা জরুরি। এর জন্য রাজনৈতিক সরকার আসার আগেই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট জাতীয় লক্ষ্য নির্ধারণ করা উচিত। দেশের জন্য একটি স্থায়ী জাতীয় নীতি প্রয়োজন, যা অনুসরণ করে দেশের অর্থনীতিকে উন্নতির উচ্চ স্তরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। নির্বাচনে যে দলই জয়ী হোক, সেই নীতি এবং লক্ষ্য যেন পরিবর্তিত না হয়। নতুন সরকার এলেও পূর্ববর্তী নীতিগুলো বজায় রেখে দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে সবাই যেন একসঙ্গে কাজ করে।

সংস্কারের ধারাবাহিকতাও দরকার

অনেক ব্যবসায়ীর কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য নেওয়া নতুন সিদ্ধান্তগুলো বেশ ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। তাঁরা বলছেন, অনেক জায়গায় এরই মধ্যে পরিবর্তন শুরু হয়েছে, যা ব্যবসার জন্য খুবই ভালো। এই সংস্কারগুলো চালিয়ে গেলে ভবিষ্যতে বাণিজ্য আরও চাঙা হবে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক পরিচালক হাজি এনায়েতুল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখন দেশে স্বাধীনভাবে তাঁদের ব্যবসা করার একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে ডলারের বিনিময় হার, এলসি খোলার সমস্যা কমতে শুরু করেছে। এই সরকার আরও বেশি সময় থাকলে আরও বেশি সংস্কার করতে পারত। তবে যেহেতু রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে, তাই এই ঘোষণার পর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে যে সরকারই দায়িত্ব নিক, সংস্কারপ্রক্রিয়া যেন অব্যাহত থাকে, তা নিশ্চিত করা জরুরি। ব্যবসা ও রাজনীতি যেন একে অপরের মধ্যে মিশে না গিয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বাভাবিক গতিতে উন্নয়ন চলতে থাকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তেল-পেঁয়াজে দাম বাড়তি, সবজিতে ফিরছে স্বস্তি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪০
টাটকা সবজি কিনছেন একজন। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে।
টাটকা সবজি কিনছেন একজন। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে।

বাজারে একলাফে লিটারে ৯ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম। আর দেশি পুরোনো পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা। তবে এসব পণ্যের সরবরাহে তেমন কোনো সমস্যা নেই বাজারে। পুরোনো পেঁয়াজের সঙ্গে নতুন পেঁয়াজও পাওয়া যাচ্ছে।

ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজ ছাড়া বাজারে সবজি, ডিম, মুরগি, আটা, চিনিসহ প্রায় অধিকাংশ পণ্যের দাম কমেছে। বিশেষ করে সবজির বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, রামপুরাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে মানভেদে দাম ছিল ১১০-১২০ টাকা কেজি। নতুন পেঁয়াজের দাম অবশ্য তুলনামূলক কম। খুচরায় পাতাসহ নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি।

জানতে চাইলে রামপুরা বাজারের সবজি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার পেঁয়াজ আমদানি না করেই বাজারের চাহিদা মিটে গেছে। এখন আগের মৌসুমের পেঁয়াজের মজুত একেবারেই শেষের দিকে। এই সময় পুরোনো পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেশিই থাকে। তবে এটা বেশি দিন থাকবে না। বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। চাহিদা অনুসার পেঁয়াজ রয়েছে।’

বেড়েছে ভোজ্যতেলের দামও। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯৮ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮৯ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫-১৭৯ টাকা লিটার, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭১-১৭৪ টাকা লিটার।

বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানিগুলো গত এক সপ্তাহে ধীরে ধীরে বাজারে বাড়তি দামে তেল সরবরাহ করেছে। এখনো অনেক দোকানে আগের দামের তেল পাওয়া যায়। তবে বাজারের অধিকাংশ দোকানেই বাড়তি দামের তেল রয়েছে।

গত সপ্তাহ পর্যন্ত খুচরায় কাঁচা মরিচ বিক্রি হতো ১২০-১৫০ টাকা কেজি, তবে চলতি সপ্তাহে দাম কমে ৭০-১০০ টাকা কেজিতে নেমেছে। এ ছাড়া শীতের সবজি হলেও শিমের দাম হঠাৎ বেড়ে ১৫০ টাকার ওপরে উঠেছিল।

সেই শিম এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি। ফুলকপি, বাঁধাকপির দাম কমেছে প্রতিটিতে ১০ টাকা। দুই ধরনের কপিই পাওয়া যাচ্ছে ৩০ টাকায়। তবে ভালো মানের ফুলকপি ৫০ টাকা। গত সপ্তাহে একটি কপি কিনতে ৪০-৬০ টাকা লেগেছিল।

দাম কমেছে টমেটোরও। মান ও বাজারভেদে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৪০ টাকা।

দেশি গাজরের সরবরাহ ব্যাপক বেড়েছে বাজারে, এতে দামও কমেছে। প্রতি কেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০-১০০ টাকা। তবে আমদানির গাজর আগের মতোই ১২০-১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে বেগুন বিক্রি হয়েছিল ৮০-১০০ টাকা কেজি, যা চলতি সপ্তাহে কমে ৭০-৮০ টাকায় নেমেছে। বাজারে আলুর দাম আগের মতোই প্রতি কেজি ২৫ টাকা রয়েছে।

আমিষের সবচেয়ে বড় উৎস ডিমের দাম আরও কমেছে। ফার্মের মুরগির সাদা ও বাদামি ডিমের দাম কমে ১১০ থেকে ১২৫ টাকা ডজনে নেমেছে। গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৩০ টাকা।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত বছর এই সময় ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছিল ১৪০-১৫০ টাকা ডজন। টিসিবি বলছে, গত বছরের তুলনায় ডিমের দাম ৩৫ শতাংশ কমেছে।

ডিমের সঙ্গে কমেছে ফার্মের মুরগির দামও। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম কমে ১৫০-১৭০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬০-১৮০ টাকা কেজি।

সেগুনবাগিচা বাজারের ডিম বিক্রেতা নূর ই আলম বলেন, ‘ডিম ও মুরগির বাজার স্বাভাবিক আচরণ করছে না। হঠাৎ দামের এত পতন হচ্ছে কেন, তা বোঝা যাচ্ছে না। বর্তমানে ডিমের যে দাম, তা গত কয়েক বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম।’

ডিম-মুরগির সঙ্গে কিছুটা কমেছে রুই-কাতলা মাছের দামও। বাজারে চাষের এই মাছগুলো বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩২০-৪৫০ টাকা কেজি।

মুদিপণ্যের মধ্যে চিনির দাম আগে থেকেই কমেছে। খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯০-১০০ টাকা কেজি। চলতি সপ্তাহে নতুন করে কমেছে আটা, মসুর ডাল, ছোলার দাম। খোলা আটার দাম ২-৩ টাকা কমে ৪৫-৪৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৪৮-৫০ টাকা কেজি। কেজিপ্রতি বড় দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৯৫-১০৫ টাকা। ছোলার দামও কেজিপ্রতি ৫ টাকা কমে ৯৫-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের মামা-ভাগনে মুদিদোকানের বিক্রেতা হারুনুর রশিদ বলেন, রমজান উপলক্ষে পণ্যের আমদানি ব্যাপক বেড়েছে। তাই প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম কমছে। তবে ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজের বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

উত্তরা ব্যাংকের ২৫০তম শাখার উদ্বোধন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

উত্তরা ব্যাংক পিএলসির একটি নতুন শাখার উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার ব্যাংক রোড, দৌলতগঞ্জ বাজারে ব্যাংকের ২৫০তম লাকসাম শাখার উদ্বোধন করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. আবুল হাশেম।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল হাসান।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. রবিউল হাসান এবং উপমহাব্যবস্থাপক ও আঞ্চলিক প্রধান (কুমিল্লা অঞ্চল) মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টানা চার মাস কমল রপ্তানি আয়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রেমিট্যান্সে প্রবাহ বাড়লেও পণ্য রপ্তানিতে ধাক্কার ধারা থামছে না। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের নভেম্বরে দেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৮৯ কোটি ১৫ লাখ ডলার। গত বছরের একই মাসে এই আয় ছিল ৪১১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ মাসওয়ারি হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি আয় কমেছে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, টাকার অঙ্কে এই হ্রাসকৃত রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ কোটি ৮১ লাখ ডলার।

এবারই প্রথম নয়, আগস্ট থেকে শুরু হওয়া নিম্নমুখী ধারা নভেম্বরে এসে চতুর্থ মাসে পা দিল। জুলাইয়ের শক্তিশালী সূচনার পর রপ্তানি খাত যে ধারাবাহিক গতি অর্জন করেছিল, সেই গতি আগস্টেই থমকে যায়। ওই মাসে আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে আসে। সেপ্টেম্বরেও পতন গভীর হয়—৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। অক্টোবরে সেই হার আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশে।

জুলাইয়ের ব্যতিক্রমী সাফল্যের পর পরবর্তী চার মাস যেন একটানা ঢালু পথ। সেই জুলাইয়ে রপ্তানি আয় ছিল ৪৭৭ কোটি ৫ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। কিন্তু এরপর প্রতি মাসেই কমতে কমতে নভেম্বরে এসে রপ্তানি আয়ের ব্যবধান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

সার্বিক চিত্রটি বলছে, অর্থবছরের শুরুতে পাওয়া জোয়ারটি এখন চার মাসের টানা ভাটার মুখে দাঁড়িয়ে।

আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ইপিবির তথ্য পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর মিলিয়ে পাঁচ মাসে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ২০০২ কোটি ৮৫ লাখ ডলার; যা আগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ঘটেছে মাত্র দশমিক ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ পাঁচ মাসের সার্বিক রপ্তানি আয়ের চিত্রও নামমাত্র।

নভেম্বরের সবচেয়ে বড় আঘাত লেগেছে পোশাক খাতে, যেটি দেশের রপ্তানির প্রধান ভরসা। ওই মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৩১৪ কোটি ৯ লাখ ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ কম। এ সময় নিটওয়্যার খাতে আয় নেমেছে ১৬১ কোটি ৮৪ লাখ ডলারে, আর ওভেনে এসেছে ১৫২ কোটি ২৪ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে নিটওয়্যার আয় ছিল ১৭৩ কোটি ৮২ লাখ ডলার এবং ওভেন ১৫৬ কোটি ৯২ লাখ ডলার।

পোশাকের বাইরে কৃষিপণ্যে রপ্তানি কমেছে ২৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্যে কমেছে ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ ছাড়া রপ্তানি পতনের তালিকায় রয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত সামগ্রী, হোম টেক্সটাইলস, ফার্মাসিউটিক্যালস, জাহাজ, চিংড়ি ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং। এর মানে হচ্ছে, প্রচলিত এসব খাতেও মন্থরতা স্পষ্ট।

তবে সব বাজারে একই চিত্র নয়। কিছু গন্তব্যে বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যা সামগ্রিক মন্দার মধ্যেও আশার সঞ্চার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেড়েছে ৪ দশমিক ২০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। উদীয়মান বাজারগুলোর মধ্যেও ইতিবাচক প্রবণতা স্পষ্ট—চীনে রপ্তানি বেড়েছে ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ, পোল্যান্ডে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ, সৌদি আরবে ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং স্পেনে ১০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এ প্রবণতা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যেন অনেকটাই ব্যতিক্রমী সাফল্য।

সব মিলিয়ে চিত্রটি দ্বিমুখী। একদিকে ঐতিহ্যগত প্রধান খাতগুলোতে পতন; অন্যদিকে কিছু নতুন বাজারে ইতিবাচক ইঙ্গিত। তবে বড় প্রশ্ন রয়ে যায়, এই বাজার বৃদ্ধি কি পোশাকসহ প্রধান খাতের ধারাবাহিক মন্দাকে সামাল দিতে পারবে?

বর্তমান বাস্তবতা বলছে, বৈচিত্র্য বাড়ানোর পথে অনেক দূর যেতে হবে। উৎপাদন প্রতিযোগিতা, মূল্যের চাপ, বৈদেশিক অর্ডার সংকোচন এবং বিশ্ববাজারের অনিশ্চয়তা, সব মিলিয়ে রপ্তানি খাতে সামনের পথ সহজ নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিল সিগারেট কোম্পানি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৪৮
৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিল  সিগারেট কোম্পানি

পাবনার ইশ্বরদীভিত্তিক সিগারেট কোম্পানি ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রায় ৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযানে গিয়ে এই ফাঁকি ধরেছেন বলে আজ বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে এনবিআর।

এনবিআর জানায়, তামাক ও তামাকজাত পণ্যের অবৈধ উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধে সম্প্রতি কার্যক্রম আরও জোরদার করেছে এনবিআর। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সূত্রের ভিত্তিতে এনবিআরের ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের একটি দল ঈশ্বরদীতে অবস্থিত ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে।

গোয়েন্দা দলের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ করলেও দীর্ঘদিন ধরে আনুষ্ঠানিক উৎপাদন কার্যক্রম প্রদর্শন না করে গোপনে সিগারেট উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে। অভিযানে ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯০ শলাকা জাল ব্যান্ডরোলযুক্ত সিগারেট জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য ৩৮ লাখ টাকারও বেশি। এসব সিগারেটের বিপরীতে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ২৯ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।

এ ছাড়া ১০ লাখ ২৯ হাজারটি অব্যবহৃত জাল ব্যান্ডরোল বা স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়, যা ব্যবহার করা হলে অতিরিক্ত ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকারও বেশি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া সম্ভব ছিল। প্রতিষ্ঠানটি ৩ লাখ ২২ হাজার ৫০০টি বৈধ ব্যান্ডরোল সংগ্রহ করলেও তা ব্যবহার না করে জাল ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে সিগারেট উৎপাদন ও বিক্রি করছিল।

এনবিআর জানিয়েছে, সব সিগারেট ও উপকরণ আইনানুগভাবে জব্দ করা হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনিপ্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। অভিযানে উদ্ধার করা দলিলাদির ভিত্তিতে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেটকে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ও বিক্রি কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজরদারির জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত