Ajker Patrika

ব্যাংক বাঁচাতে টাকা ছাপানোকে আত্মঘাতী বলছে আইএমএফ

  • ব্যাংক লুটে দায়ী দায়সারা নীতিমালা, পরিদর্শন কার্যক্রম
  • অর্থ পাচারে বিএফআইইউর শৈথিল্যে বিস্মিত প্রতিনিধিরা
  • মূল্যস্ফীতি ও খেলাপি ঋণ কমাতে পরামর্শ
  • ঋণমান যাচাই, পরিদর্শনে আপত্তি
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩: ১৪
ব্যাংক বাঁচাতে টাকা ছাপানোকে আত্মঘাতী বলছে আইএমএফ

উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেও গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনার অজুহাতে কয়েকটি ব্যাংককে হাজার হাজার কোটি টাকা নগদ সহায়তা প্রদানের পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিরা গণবিরোধী ও আত্মঘাতী বলে মন্তব্য করেছেন। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার দুর্বলতা ও দায়িত্বহীন পরিদর্শনের সুযোগে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে অর্থ পাচারের ঘটনা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁরা। ঋণ জালিয়াতি এবং ব্যাংক তছরুপে সহযোগীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর অবহেলার পরিচায়ক বলে অভিযোগ করেছেন আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।

৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের শর্ত পর্যালোচনায় ঢাকায় অবস্থানরত আইএমএফ মিশনটি গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে, যেখানে তারা বিএফআইইউ এবং ব্যাংকগুলোর শিথিলতা ও অবহেলার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এর আগে গত মঙ্গলবারের বৈঠকেও একই বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রতিনিধিদল পরিস্থিতি দ্রুত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দিয়েছে।

বৈঠকে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আইএমএফের সদস্যরা দাবি করেছেন, প্রেসক্রাইবড পরিদর্শনের মাধ্যমে বানোয়াট তথ্য উপস্থাপন করে ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। গত কয়েক বছরে ব্যাংক খাতে ঋণ অনাচারের কারণে ব্যাপক অর্থ হরিলুট হয়েছে। ঋণের নামে চুরি ও ডাকাতি একসঙ্গে সংঘটিত হয়েছে। বিশেষ করে কয়েকটি গ্রুপ এবং কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ব্যাংক খাতের নিয়মকানুনকে নিজেদের স্বার্থে ভেঙে ফেলেন। যার ফলে ব্যাংক খাত পঙ্গু হয়ে পড়েছে এবং সেখান থেকে দেখা দিয়েছে তারল্যসংকট। আরও কিছু ব্যাংক গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে টালবাহানা করছে, যার কারণে গ্রাহকদের আস্থা তলানিতে নেমে এসেছে।

এ পরিস্থিতিতে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে সংকটগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে হাজার হাজার কোটি টাকার নগদ সহায়তা দিয়েছে, যা মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দিতে পারে। উসকানি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর কিছু দুর্বলতা আইএমএফ ‘রেড মার্ক’ করে চিহ্নিত করেছে এবং ব্যাংকিং খাতে লুটপাটের কড়া নজরদারি নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছে। আইএমএফের মতে, টাকা ছাপানো একটি আত্মঘাতী ও গণবিরোধী পদক্ষেপ, যা পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে।

এদিকে প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) শিথিলতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষত গত ১৫ বছরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে একটি প্রভাবশালী মহল বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরও বিএফআইইউ কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে তারা সন্দেহ প্রকাশ করেছে। আইএমএফ পাচারে সন্দেহভাজন কিছু হিসাব তলব, লেনদেনে স্থিতাদেশ এবং জব্দের মতো পদক্ষেপের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার বিষয়ে বিএফআইইউর সদস্যদের কাছে স্পষ্ট ব্যাখ্যা চেয়েছে। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী একাধিক সূত্রের তথ্যমতে, আইএমএফ এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য চাপ দিয়েছে।

জানতে চাইলে অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ড. মইনুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, ‘এ অবস্থায় ব্যাংক খাতে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে সামনে দেশের অর্থনীতি গভীর সংকটে পড়বে। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারের উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সদিচ্ছা অত্যন্ত জরুরি। ব্যাংক লুটেরা এবং খেলাপি ঋণগ্রহীতা এবং অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন, যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।’

বৈঠকে উপস্থিত অপর একটি সূত্র জানায়, ব্যাংকগুলোর নিয়মনীতি পরিপালনে ঘাটতি, ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি, পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্বহীনতা এবং আইন প্রয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্বল ভূমিকা আইএমএফের কাছে দায়িত্বে অবহেলার অংশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আইএমএফ ব্যাংকগুলোর উন্নতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত পদক্ষেপ যাচাই-বাছাই করছে। তারা ব্যাংকগুলোর ক্যামেল রেটিংয়ের আওতায় মূলধন পর্যাপ্ততা, সম্পদের গুণগত মান, ব্যবস্থাপনা, মুনাফাজনিত আয়, তারল্য এবং বাজারের ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ ও তদারক কার্যক্রমের কার্যকারিতা পর্যালোচনা করছে।

এ ছাড়া ঋণ আদায়ের সমস্যা, গ্রাহকের অবস্থান এবং বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তারা মতামত দিয়েছে এবং ব্যাংকগুলোর ঋণের চাহিদা এবং গ্রাহকের আস্থা ফেরানোর উদ্যোগের বাস্তবতার প্রতি নজর দিয়েছে। আইএমএফের পক্ষ থেকে খেলাপি ঋণের মান, পরিমাণ ও লক্ষ্য অর্জন নিয়ে কড়া মতামত প্রদান করা হয়েছে; যা ব্যাংকিং খাতের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

আরেক কর্মকর্তা জানান, বেনামি ও জামানতবিহীন ঋণ দেওয়ার ফলে অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে গৃহীত পদক্ষেপ, নীতিমালার দুর্বলতা এবং সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে ব্যাংকের নির্বাহী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার শিথিলতা, পরিদর্শনে ত্রুটি এবং অর্থঋণ আদালতের কার্যকারিতা জোরদারে তাঁরা আরও মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়া ডলারের রেট, আমদানি-রপ্তানির আড়ালে পাচার, কার্যকর মুদ্রানীতি প্রণয়ন এবং পরবর্তী ১২ মাসের জন্য বেঞ্চমার্ক কাঠামো নির্ধারণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বলেন, আইএমএফের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ ব্যাংককে তাৎক্ষণিক কিছু পরামর্শ দিয়েছেন এবং কিছু বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে অতিরিক্ত তথ্য চেয়েছেন।

সম্প্রতি প্রকাশিত শ্বেতপত্রের খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত ১০টি ব্যাংক বর্তমানে টেকনিক্যালি দেউলিয়া এবং সংকটে রয়েছে। সিপিডি জানিয়েছে, কিছু ব্যাংক কার্যত মৃত এবং অনেক ব্যাংক ‘ক্লিনিক্যালি ডেথ’ হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরও একই মন্তব্য করেছেন, ১০টি ব্যাংক তারল্যসংকটে এবং দেউলিয়ার পথে যাচ্ছে। এ ছাড়া গত ২ নভেম্বর টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান দাবি করেন, প্রতিবছর ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

ভালুকায় কারখানার শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আদালতের রায়ে ইতিহাস গড়লেন ইলন মাস্ক, সম্পদ ছাড়াল ৭০০ বিলিয়ন ডলার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক। ছবি: সংগৃহীত
টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক। ছবি: সংগৃহীত

পে প্যাকেজ বা বেতন-ভাতাসংক্রান্ত একটি মামলার রায়ের পর টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্কের সম্পদ গত শুক্রবার রাতে ৭৪৯ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকেছে।

ফোর্বসের বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, ডেলাওয়্যার সুপ্রিম কোর্ট মাস্কের ১৩৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের টেসলা স্টক অপশনগুলো পুনর্বহাল করার পরই তাঁর সম্পদে এই বিশাল উল্লম্ফন দেখা যায়।

উল্লেখ্য, গত বছর আদালত এই সুবিধাগুলো বাতিল করেছিলেন।

২০১৮ সালে মাস্কের যে বেতন প্যাকেজের মূল্য ৫৬ বিলিয়ন ডলার ছিল, সেটিই গত শুক্রবার ডেলাওয়্যার সুপ্রিম কোর্ট পুনর্বহাল করেন। এর দুই বছর আগে নিম্ন আদালত ওই পারিশ্রমিক চুক্তিকে ‘অবিশ্বাস্য’ আখ্যা দিয়ে বাতিল করেছিলেন।

সুপ্রিম কোর্ট রায়ে বলেছেন, ২০২৪ সালে দেওয়া যে সিদ্ধান্তে বেতনের প্যাকেজটি বাতিল করা হয়েছিল, তা সঠিক ছিল না এবং মাস্কের প্রতি অন্যায্য ছিল।

এর আগে চলতি সপ্তাহে মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স শেয়ারবাজারে আসতে পারে—এমন প্রতিবেদনের পর মাস্কের সম্পদ ৬০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্য দিয়ে তিনি ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন।

এদিকে গত নভেম্বরে টেসলার শেয়ারহোল্ডাররা আলাদাভাবে মাস্কের জন্য ১ ট্রিলিয়ন ডলারের একটি পারিশ্রমিক পরিকল্পনা অনুমোদন করেন।

এটি করপোরেট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বেতন প্যাকেজ। বিনিয়োগকারীরা বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা টেসলাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিকসভিত্তিক এক শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরে মাস্কের পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানান।

ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী, মাস্কের বর্তমান সম্পদমূল্য গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজের চেয়ে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার বেশি। ল্যারি পেজ বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

ভালুকায় কারখানার শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পুঁজিবাজারে নথি জমা এখন এক ক্লিকে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
পুঁজিবাজারে নথি জমা এখন এক ক্লিকে

দীর্ঘদিন ধরে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর তথ্য জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া ছিল জটিল ও সময়সাপেক্ষ। একই তথ্য বারবার ছাপিয়ে আলাদা স্টক এক্সচেঞ্জে জমা দিতে হতো। এ সমস্যার সমাধান হিসেবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সম্প্রতি চালু করেছে সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেম (এসএসএস)।

নতুন এই সিস্টেমের মাধ্যমে কোম্পানি ও ফান্ডগুলো মূল্য সংবেদনশীল ঘোষণা, আর্থিক প্রতিবেদন ও অন্যান্য রেগুলেটরি ফাইলিং কাগজ ছাড়াই অনলাইনে জমা দিতে পারবে। এতে সময় ও খরচ কমার পাশাপাশি তথ্য ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা এবং ট্র্যাকিং ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

ডিএসই সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া এই প্ল্যাটফর্ম ধাপে ধাপে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। সর্বশেষ দুটি নতুন মডিউল যুক্ত হওয়ায় এখন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে তথ্য একই ডিজিটাল গেটওয়ে দিয়ে জমা দেওয়া সম্ভব। ফলে দ্বৈত সাবমিশনের ঝামেলা প্রায় সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, এই উদ্যোগের মাধ্যমে কাগুজে নথির ওপর নির্ভরতা পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। ডিজিটাল সাবমিশন শুধু সুবিধার বিষয় নয়, এটি বাজার শৃঙ্খলা ও সময়ানুবর্তিতা নিশ্চিত করার একটি কাঠামোগত পরিবর্তন।

ডিএসই জানায়, চায়নিজ কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে কাজ করে প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বাড়ানোর পর সিস্টেমটি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে ভবিষ্যতে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী নতুন ফিচার যুক্ত করা সহজ হবে।

প্রযুক্তিগত দিক থেকে এর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে ডিএসইর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ড. মো. আসিফুর রহমান বলেন, একক ডিজিটাল সাবমিশন পয়েন্ট চালু হওয়ায় ম্যানুয়াল হস্তক্ষেপজনিত ভুল কমবে এবং তথ্য জমার প্রতিটি ধাপ ডিজিটালি যাচাইযোগ্য থাকবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের প্রভাব শুধু স্টক এক্সচেঞ্জেই সীমাবদ্ধ থাকবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

ভালুকায় কারখানার শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দেশের প্রথম ‘ক্যাশলেস’ জেলা হতে যাচ্ছে কক্সবাজার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশকে একটি ডিজিটাল ও নগদ লেনদেনমুক্ত (ক্যাশলেস) রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বড় ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে দেশের প্রথম ‘ক্যাশলেস’ জেলা হিসেবে ঘোষণা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

গতকাল শনিবার চট্টগ্রামে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এই তথ্য জানান।

গভর্নর বলেন, ‘২০২৭ সালের মধ্যে দেশের অন্তত ৭৫ শতাংশ খুচরা লেনদেন ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে দেশের প্রতিটি নাগরিকের হাতে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকার মধ্যে স্মার্টফোন পৌঁছানো নিশ্চিত করতে হবে।’

চট্টগ্রাম অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা শীর্ষক এই সভায় গভর্নর চট্টগ্রামকে দেশের ‘অর্থনৈতিক লাইফলাইন’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘প্রধান সমুদ্রবন্দর, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড), ভারী শিল্প এবং জ্বালানি অবকাঠামোর কেন্দ্রবিন্দু এই চট্টগ্রাম। সিঙ্গাপুর, দুবাই বা হংকংয়ের মতো চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সংযোগ শক্তিশালী করতে হবে। তবেই এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হবে।’

আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সহজ করতে দেশের সব সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরে শিগগিরই ২৪ ঘণ্টা রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) সিস্টেম চালু করা হবে বলে জানান গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এটি একটি তাৎক্ষণিক ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার ব্যবস্থা যা বাণিজ্যের গতি বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এ ছাড়া, তৃণমূল পর্যায়ে বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এমএমই) এবং কৃষি খাতে পর্যাপ্ত ও সহজ শর্তে ঋণ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন গভর্নর। জেলা ও তৃণমূল পর্যায়ে উৎপাদনশীল খাতের বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে ব্যাংকগুলোকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মকবুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় বিভিন্ন ব্যবসায়িক চেম্বার, ব্যাংকার, সরকারি সংস্থার প্রতিনিধি এবং শিক্ষাবিদ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

ভালুকায় কারখানার শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের গ্র্যাচুইটি ফান্ড: কর্মকর্তার অবহেলায় ৬৫ লাখ টাকার ক্ষতি

  • ৩৩ মাস অব্যবহৃত পড়ে ছিল ফান্ডের অর্থ
  • অভিযুক্ত কর্মকর্তা আগাম স্বেচ্ছা অবসরে
  • দায়িত্বে অবহেলায় জরিমানা ১ লাখ টাকা
সবুর শুভ, চট্টগ্রাম 
প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের গ্র্যাচুইটি ফান্ড: কর্মকর্তার অবহেলায় ৬৫ লাখ টাকার ক্ষতি

দেশের একমাত্র গাড়ি প্রস্তুত ও সংযোজনকারী রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে কর্মচারীদের গ্র্যাচুইটি ফান্ড ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘ ৩৩ মাসের অবহেলায় অন্তত ৬৫ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। অথচ এই ক্ষতির দায়ে তদারকি কর্মকর্তার কাছ থেকে জরিমানা হিসেবে আদায় করা হয়েছে মাত্র ১ লাখ টাকা। বিশাল ক্ষতির বিপরীতে সামান্য দণ্ডে দায় নিষ্পত্তির ঘটনা প্রতিষ্ঠানটিতে প্রশ্ন ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

ফান্ড দেখভালের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহপ্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ মিললেও তিনি শর্তসাপেক্ষে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে দায়িত্বমুক্ত হয়েছেন। ২৫ ডিসেম্বর তাঁর অবসর কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও তিনি গত ৩১ আগস্ট থেকে আগাম অবসরে যান। ২১ জুলাই শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) কাছে তিনি স্বেচ্ছায় অবসরের আবেদন করেন এবং তাঁর অবসর মঞ্জুর করা হয়।

এ বিষয়ে জসিম উদ্দিন বলেন, আমি প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এমপ্লয়িজ গ্র্যাচুইটি ফান্ড ট্রাস্টের সদস্য নই। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ফান্ডের দেখভাল করেছি। ডাবল বেনিফিট স্কিমের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর ভুলবশত তা রিনিউ করা হয়নি। দোষটা আসলে ব্যাংকের, বিষয়টি ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। সে কারণে আমরা মুনাফা থেকে বঞ্চিত হয়েছি।

জসিম উদ্দিন আরও বলেন, গ্র্যাচুইটি ফান্ড পরিচালনার পূর্ণ দায় ট্রাস্টি বোর্ডের সাত সদস্যের। তারপরও আমার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে, আমি তা মোকাবিলা করেছি এবং ১ লাখ টাকা জরিমানাও গুনেছি। এটি অনিচ্ছাকৃত একটি ভুল।

প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ সূত্রে জানা যায়, কর্মচারীদের জন্য গঠিত ‘প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এমপ্লয়িজ গ্র্যাচুইটি ফান্ড ট্রাস্ট’-এর ২ কোটি টাকা ২০১২ সালের ২৪ জুলাই জনতা ব্যাংকের শেখ মুজিব রোড (আগ্রাবাদ) শাখায় ডাবল বেনিফিট স্কিমে জমা রাখা হয়। ছয় বছর মেয়াদি এ স্কিমে সুদের হার ছিল ১২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। মেয়াদ শেষে ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই সুদে-আসলে টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ কোটি ৭৯ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।

কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৩৩ মাস ওই অর্থ একইভাবে ব্যাংকে পড়ে থাকে। এ সময়ে না প্রগতি কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নেয়, না ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ফান্ডের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়। এতে সম্ভাব্য মুনাফা হারিয়ে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয় ৯৩ লাখ ৯৪ হাজার ৬১০ টাকা।

ঘটনাটি ধরা পড়ার পর ফান্ড তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা জসিম উদ্দিনের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। ২০২৩ সালের ১ মার্চ দেওয়া তাঁর ব্যাখ্যা কর্তৃপক্ষ গ্রহণযোগ্য মনে করেনি। পরবর্তী সময়ে ১১ এপ্রিল প্রগতির তিন কর্মকর্তাকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন বিভাগীয় প্রশাসনিক প্রধান মো. নুর হোসেন। সদস্য হিসেবে ছিলেন সহপ্রধান হিসাবরক্ষক গোলাম রাব্বি মোহাম্মদ সাদাত হোসেন এবং হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. খায়রুল বাশার।

তদন্ত কমিটির সুপারিশে জনতা ব্যাংকের কাছে ৩৩ মাসের মুনাফা দাবি করা হয়। দেনদরবারের পর ব্যাংক সঞ্চয়ী বেনিফিটের আওতায় ২৮ লাখ টাকা পরিশোধ করে। জসিম উদ্দিনের কাছ থেকে আদায় করা জরিমানার ১ লাখ টাকা যোগ করে মোট উদ্ধার হয় ২৯ লাখ টাকা। ফলে এখনো অনাদায়ী থেকে যায় ৬৪ লাখ ৯৪ হাজার ৬১০ টাকা।

এ বিষয়ে জনতা ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ব্যবস্থাপক মো. সানাউল্লাহ বলেন, ডাবল বেনিফিট স্কিমের মেয়াদ শেষে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নবায়ন হয় না। এ কারণে ওই সময়ের বেনিফিট পাওয়ার সুযোগ ছিল না। ২৮ লাখ টাকা পরিশোধের বিষয়ে তিনি জানান, বিষয়টি তাঁর আগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপকের সময়কার সিদ্ধান্ত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

ভালুকায় কারখানার শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত