Ajker Patrika

মুনাফাখোর চক্র সক্রিয় বাজারে

ফারুক মেহেদী, ঢাকা
আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১: ২৭
মুনাফাখোর চক্র সক্রিয় বাজারে

নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের লাগামহীন দামে রীতিমতো দিশেহারা মানুষ। নানা অজুহাতে প্রায় সব পণ্যের দাম ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে পকেট কেটে চলেছেন একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা। তিন বছর ধরে এ অপচেষ্টা প্রায় অপ্রতিরোধ্য। সরকার, নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা, ভোক্তার দাবি–কোনো কিছুতেই গা করছেন না তাঁরা। পেঁয়াজ, চিনি, আটা, ডাল, ভোজ্যতেল, মাংস, ডিম, আলুসহ প্রায় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম শুধু সরকারি হিসাবেই গত এক বছরে ৩ শতাংশ থেকে ১৬৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সরকারের দেওয়া শুল্কছাড়, এলসি-সুবিধাসহ কোনো সহায়তায়ই ভোক্তার কোনো লাভ হয়নি। বরং ব্যবসায়ীদের পকেট ভারী হয়েছে। অথচ বিশ্ববাজারে প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম কমে গেছে। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) গত সপ্তাহে দেওয়া তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, গত জানুয়ারিতে খাদ্যপণ্যের দাম গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। এর মধ্যেও ব্যবসায়ীদের আবদার মেনে শুল্কছাড় দেওয়া হচ্ছে। এতে সরকারের বিপুল অঙ্কের রাজস্ব ক্ষতি হলেও ভোক্তারা বলতে গেলে এর সুফলই পান না। রাজস্ব বিভাগও শুল্ককর ছাড়ের সুফল ভোক্তা পেল কি না, তার তদারকি করে না। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, বাজারদরে নৈরাজ্যের দায়ে তথ্য-প্রমাণসহ শক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে দাম সহনীয় হবে না।

তথ্য-উপাত্ত বলছে, দুই বছর ধরে নানা কারণে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম কিছুটা অস্থির ছিল। তবে ক্রমেই তা সহনীয় হয়ে আসে। বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার অজুহাতে দেশে যে হারে দাম বেড়েছে, তা সহনীয় তো নয়ই; বরং অব্যাহতভাবে বেড়েছে। শুধু যে আমদানি করা পণ্যের দাম বেড়েছে তা-ই নয়, স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পরও সব ধরনের শাকসবজি, মাছ, মাংসের দামও বেড়েছে লাগামহীন। বলা যায়, রীতিমতো প্রতিযোগিতা করে প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়িয়ে চলেছেন তাঁরা।

বাজারে ভোক্তারা যে দামে পণ্য কিনছেন, তার চেয়ে অনেক কমিয়ে মূল্যতালিকা প্রকাশ করে যাচ্ছে সরকারি সংস্থা টিসিবি। এ তালিকার প্রতি ভোক্তার আস্থা কম থাকলেও, ওই সংস্থাটির গতকালের মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেও জিনিসপত্রের দাম বাড়ার অস্থিরতার চিত্র পাওয়া যায়। তাতে দেখা যায়, গত এক বছরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৬৪ শতাংশের বেশি। চিনির বেড়েছে ১৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ, আটার বেড়েছে ১৪ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, ডালের দাম বেড়েছে ১০ দশমিক ২৬ শতাংশ, ব্রয়লার মুরগির বেড়েছে ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এ ছাড়া চাল, গরুর মাংস, ডিম, আলুসহ এমন কোনো পণ্য নেই, যার দাম বাড়েনি। শুধু বাড়েইনি, বরং এই বাড়া ছিল চরম অসহনীয়।

সাধারণ ভোক্তাদের এ সময়ে আয় না বাড়লেও বাড়তি দাম দিয়ে নিত্যপণ্য কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেকে ধারকর্জ করে জীবন চালাচ্ছেন। অনেকে ক্ষুদ্র সঞ্চয় ভেঙে সংসার চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। সরকারের আগের মেয়াদে মানুষের কাছে জিনিসপত্রের দাম বাড়ার বিষয়টিই সবচেয়ে বড় ইস্যু ছিল। বর্তমান সরকার এ মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই জিনিসপত্রের দাম সহনীয় করার ব্যাপারে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এক মাস ধরে সরকারের বাণিজ্য, কৃষি, অর্থ ও খাদ্য মন্ত্রণালয় গলদঘর্ম হয়ে পণ্যের দাম কমানোর বিষয়ে দফায় দফায় যৌথ সভা করছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুরো ব্যাংকিং খাতে টাকার প্রবাহে লাগাম টেনেছে। সুদের হার বাড়িয়ে দিয়ে টাকা ব্যাংকে ঢোকানোর নীতি বাস্তবায়ন করছে। এতে অন্য সব খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও মূল্যস্ফীতি কতটা সহনীয় হবে, এ ব্যাপারে কমবেশি সবাই হতাশা প্রকাশ করেছেন। খোদ প্রধানমন্ত্রী আসছে রমজান মাসে চাল, চিনি, ভোজ্যতেল, খেজুরের দাম সহনীয় রাখতে শুল্ককর কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর নির্দেশনা মেনে এসব পণ্যের শুল্ককর কমানো হচ্ছে।

অথচ বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যের দাম ব্যাপকভাবে কমেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সূচকে দেখা গেছে, গত জানুয়ারিতে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন খাবারের গড় দাম অনেক কমেছে, যা গত ৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত জানুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম অনেক নিম্নমুখী হয়েছে। দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলোতে ফসলটির মাড়াই বেড়েছে। তাতে বিশ্ববাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। আলোচ্য মাসে ভুট্টা ব্যাপক দর হারিয়েছে। গত জানুয়ারিতে সারা বিশ্বে মাংসের দাম আরও কমেছে। বিশ্বে পণ্যের বাম্পার ফলন হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে ধরনা দিয়ে দাম কমাতে বিভিন্ন সুবিধা বাগিয়ে নিচ্ছেন। সরকার কয়েকটি পণ্যের দাম ঠিক করে দিলেও তাঁরা তা মানছেন না। দেখা গেছে, চিনি, ডিম, ভোজ্যতেল, মাংসের দাম ঠিক করে দেওয়ার পরও তাঁরা তাঁদের ঠিক করা দামেই বিক্রি করে চলেছেন পণ্য। ভোক্তা-অধিকার অধিদপ্তর বাজারে বাজারে গিয়ে কয়েকজনকে ধরে জরিমানা করার মধ্যেই সীমিত থাকছে। এতে সত্যিকার অর্থে বাজার সহনীয় হচ্ছে না।

রমজান শুরু হতে মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাকি। সরকারের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে বাজার নিয়ন্ত্রণের ঘোষণার পরও বাজারে এর প্রভাব সামান্যই। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ভোক্তাদের সঙ্গে কথা হলে, তাঁরা বলেন, সরকারের গতানুগতিক পদক্ষেপ চলতে থাকলে বাজার সহনীয় হবে না। এখানে শুল্কছাড়ের বিষয়টির সুফল নিয়ে শুল্ক বিভাগকে নজরদারি করতে হবে। অতিমুনাফার কর দেয় কি না তা আয়কর বিভাগকে দেখতে হবে। কত টাকায় পণ্য এলসি খুলে, কত টাকা ঘোষণা দিয়ে পণ্য ছাড়িয়েছে, ওই পণ্য কত বিক্রি করেছে–কত মুনাফা করেছে ইত্যাদি দালিলিক তথ্য পর্যালোচনা করে ধরতে হবে। নাহলে বাজারে এর কার্যকর প্রভাব পড়বে না।

 অধ্যাপক-ড.-মিজানুল-হক-কাজলসংস্থাগুলোয় সমন্বয়ের অভাব: অধ্যাপক ড. মিজানুল হক কাজল
দাম কমাতে সরকারের সংস্থাগুলো সমন্বিতভাবে কাজ করছে না। ফলে এর সুফল মিলছে না। শুল্কছাড়ের উদ্যোগটি ভালো। কিন্তু এর সুফল ভোক্তা ঠিকমতো পায় না। যদি সুফল নাই পাবে, তাহলে এ সুবিধা কেন দিতে হবে? মূলত দেশে পণ্য উৎপাদন ও চাহিদার তথ্য বিশ্লেষণ করে সরকারি সংস্থাকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যেহেতু কোনোভাবেই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে ধরা যাচ্ছে না, তাহলে বিকল্প হিসেবে টিসিবি আরও শক্তিশালী করা যায়।

সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতি

এ এইচ এম সফিকুজ্জামানঅভিযানের ফলে দাম কমছে: এ এইচ এম সফিকুজ্জামান
আমরা সাধ্যমতো আমাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। আমাদের অভিযানের ফলে ডিম, চাল, ভোজ্যতেল, আলুর দাম কিছুটা কমে এসেছে। মাংসের দামও কিছুটা কমেছে। দাম বাড়ার অনেক কারণ রয়েছে। এখানে আরও কিছু সংস্থা জড়িত রয়েছে। আমি আমার দিক থেকে যতটা করা দরকার করছি। দাম যে কমছে না, তা তো নয়। কমছে। দামটা যাতে যৌক্তিক থাকে সে ব্যাপারে আমাদের দিক থেকে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

মহাপরিচালক, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সোনার দাম ভরিতে ১৪৭০ টাকা বাড়ল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশের বাজারে সোনার দাম আরও বাড়ানো হয়েছে। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম বাড়ানো হয়েছে ১ হাজার ৪৭০ টাকা। এতে এক ভরি সোনার দাম ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৭ টাকা হয়েছে।

স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার (পাকা সোনা) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম বাড়ানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠক করে এই দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এর আগে ১৪ ডিসেম্বর ভালো মানের প্রতি ভরি সোনার দাম বাড়ানো হয় ৩ হাজার ৪৪২ টাকা এবং ১২ ডিসেম্বর ভালো মানের প্রতি ভরি সোনার দাম বাড়ানো হয় ১ হাজার ৫০ টাকা। এই দাম বাড়ানোর ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে এখন আবার দাম বাড়ানো হলো।

এখন সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনায় ১ হাজার ৪৭০ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৭ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ১ হাজার ৪১১ টাকা বাড়িয়ে ২ লাখ ৭ হাজার ২১১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ১ হাজার ২৪৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম ১ লাখ ৭৭ হাজার ৬৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনায় ১ হাজার ৬৩ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৯০০ টাকা।

বিষয়:

দামসোনা
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেভরনের সহায়তায় সিলেটে ৬০ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনে ফেরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
শেভরন-এসএমআইএল প্রকল্পে ৬০ প্রতিবন্ধীর মধ্যে কৃত্রিম অঙ্গ বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
শেভরন-এসএমআইএল প্রকল্পে ৬০ প্রতিবন্ধীর মধ্যে কৃত্রিম অঙ্গ বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

শেভরন বাংলাদেশের সহায়তায় বাস্তবায়িত এসএমআইএল (SMILE) প্রকল্পের আওতায় ‘রিস্টোরিং মোবিলিটি: আর্টিফিশিয়াল লিম্ব সাপোর্ট’ উদ্যোগের সমাপনী অনুষ্ঠান সম্প্রতি গ্র্যান্ড সিলেটে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে সিলেট ও নবীগঞ্জ উপজেলার ৬০ শারীরিক প্রতিবন্ধী উপকারভোগীর মধ্যে কৃত্রিম অঙ্গ (প্রোস্থেটিক) ও অর্থোটিক ডিভাইস বিতরণ করা হয়।

দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে পুনর্বাসন ও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত থাকা এই উপকারভোগীরা কৃত্রিম অঙ্গ পেয়ে নতুন জীবন ফিরে পেলেন। জালালাবাদ ডিজেবল্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতালের (জেডিআরসিএইচ) সহযোগিতায় এই উদ্যোগ পরিচালিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সমন্বয় ও মনিটরিং উইংয়ের সচিব মো. আবদুল মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন শেভরন বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও প্রেসিডেন্ট এরিক এম ওয়াকার, করপোরেট অ্যাফেয়ার্স পরিচালক মুহাম্মদ ইমরুল কবির, সোশ্যাল ইনভেস্টমেন্ট প্রধান এ কে এম আরিফ আক্তার, সুইসকন্টাক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর হেলাল হোসেন এবং জেডিআরসিএইচ বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান রোটারিয়ান পিপি ইঞ্জিনিয়ার শোয়াইব আহমেদ মতিন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘কৃত্রিম অঙ্গ সহায়তা শুধু চিকিৎসা নয়, এটি প্রতিবন্ধী মানুষের জীবনযাত্রায় মৌলিক পরিবর্তন আনে। শেভরন বাংলাদেশ, সুইসকন্টাক্ট ও জেডিআরসিএইচের যৌথ উদ্যোগ চলাচল সক্ষমতা ফিরিয়ে এনে উপকারভোগীদের জীবনে নতুন আশার দ্বার খুলে দিয়েছে।’

শেভরন বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও প্রেসিডেন্ট এরিক এম ওয়াকার বলেন, ‘বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ এ ধরনের বিশেষায়িত পুনর্বাসন সেবার পর্যাপ্ত সুযোগ পায় না। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ব্যক্তিকেন্দ্রিক সেবা পৌঁছে দিতে পারা আমাদের জন্য গর্বের। উপকারভোগীদের প্রতিটি অগ্রযাত্রাই একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের দিকে দৃঢ় পদক্ষেপ।’

সুইসকন্টাক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর হেলাল হোসেন বলেন, ‘এই প্রকল্প কেবল চলাচল সক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়নি; এটি উপকারভোগীদের কর্মজীবনে ফেরা, শিক্ষা চালিয়ে যাওয়া এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করেছে—যা সমাজে অন্তর্ভুক্তি আরও সুদৃঢ় করেছে।’

করপোরেট অ্যাফেয়ার্স পরিচালক মুহাম্মদ ইমরুল কবির বলেন, ‘শেভরন তিন দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের বিশ্বস্ত জ্বালানি অংশীদার। আমাদের অঙ্গীকার কেবল জ্বালানি সরবরাহেই সীমাবদ্ধ নয়। এসএমআইএল প্রকল্পের মতো উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা চলাচল সক্ষমতা ও মানবিক মর্যাদা পুনরুদ্ধারে কাজ করছি। বাংলাদেশে আমাদের সামাজিক বিনিয়োগ কার্যক্রম জাতিসংঘ ঘোষিত ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের মধ্যে ৯টির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’

অনুষ্ঠানে উপকারভোগীরা তাঁদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, কৃত্রিম অঙ্গ পাওয়ার ফলে তাঁরা আবার স্বাভাবিক চলাচল, আত্মনির্ভরতা ও আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন। এই ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রভাব পরিবার ও সমাজেও ছড়িয়ে পড়ছে।

গৃহস্থালি আয় স্থিতিশীল হওয়া ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির ফলে এর ইতিবাচক প্রভাব পরিবার ও সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে—যা কমিউনিটির স্থিতিশীলতা ও সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করছে। এ সাফল্যের ধারাবাহিকতায় শেভরন বাংলাদেশ ও সুইসকন্টাক্ট এসএমআইএল প্রকল্পের মাধ্যমে টেকসই ও প্রভাবশালী উন্নয়ন উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে তারা অর্থোটিক ও প্রোস্থেটিক সহায়তা প্রয়োজন, এমন মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বাস্তব ও পরিমাপযোগ্য পরিবর্তন নিশ্চিত করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আরও ১৪ কোটি ১৫ লাখ ডলার কিনল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলো থেকে অতিরিক্ত ডলার ক্রয় করেছে। আজ সোমবার ১৩টি ব্যাংক থেকে প্রায় ১৪ কোটি ১৫ লাখ মার্কিন ডলার (১৪১.৫ মিলিয়ন) কেনা হয়েছে। ডলারের বিনিময়হার ছিল ১২২ দশমিক ২৯ থেকে ১২২ দশমিক ৩০ টাকা আর কাট-অফ রেট ছিল ১২২ দশমিক ৩০ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে, ১১ ডিসেম্বর ১৬টি ব্যাংক থেকে প্রায় ১৫ কোটি ডলার (১৪৯ মিলিয়ন) কেনা হয়েছিল। এ সময় প্রতি ডলারের বিনিময়হার ছিল ১২২ টাকা ২৫ পয়সা থেকে ১২২ টাকা ২৯ পয়সা। আর কাট-অফ রেট ছিল ১২২ টাকা ৯ পয়সা। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত নিলামপদ্ধতিতে মোট ২৮০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার (২.৮০ বিলিয়ন) সংগ্রহ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জানান, আজ ১৩টি ব্যাংক থেকে প্রায় ১৪ কোটি ১৫ লাখ মার্কিন ডলার কেনা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দিনে ১৭২৫০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিল সরকার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বাজার সহনীয় করতে পেঁয়াজের আমদানি আরও বাড়িয়েছে সরকার। আজ সোমবার থেকে দৈনিক ১৭ হাজার ২৫০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে; যা আগে ছিল ৬ হাজার টন করে।

আজ এক বিজ্ঞপ্তিতে কৃষি মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।

জানা যায়, চলতি মাসের শুরু থেকে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। তিন দিনের ব্যবধানে ১২০ টাকার পেঁয়াজের দাম বেড়ে ১৫০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৭ ডিসেম্বর থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া শুরু করে কৃষি মন্ত্রণালয়। শুরুতে প্রতিদিন ৫০ জন আমদানিকারককে ৩০ টন করে মোট ১ হাজার ৫০০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। দীর্ঘ তিন মাস পর এই অনুমোদন দেওয়া হয়।

তবে এরপরও বাজারে দাম না কমলে আমদানির অনুমতির পরিমাণ বাড়ানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমদানি আরও বাড়ানো হয়। ১৩ ডিসেম্বর থেকে প্রতিদিন ২০০ জনকে ৩০ টন করে ৬ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়, যা আজ থেকে আরও বাড়িয়ে ১৭ হাজার ২৫০ টন করা হয়।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে আজ বলা হয়, পেঁয়াজের বাজার সহনীয় রাখতে ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর দুই দিনের জন্য প্রতিদিন ৫৭৫টি করে আইপি (আমদানি অনুমতি) ইস্যু করা হবে। প্রতিটি আইপিতে আগের ন্যায় সর্বোচ্চ ৩০ টন পেঁয়াজের অনুমোদন দেওয়া হবে। আবেদনের বিষয় আগের ন্যায় বলবৎ থাকবে। অর্থাৎ গত ১ আগস্ট থেকে যেসব আমদানিকারক আমদানি অনুমতির জন্য আবেদন করেছেন, তাঁরাই কেবল এই দুই দিন আবেদন পুনরায় দাখিল করতে পারবেন। একজন আমদানিকারক একবারের জন্য আবেদনের সুযোগ পাবেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইংয়ের অতিরিক্ত উপপরিচালক (আমদানি) বনি আমিন খান বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পর আজ আমরা ৫৭৫ জনকে আমদানির অনুমোদন দিয়েছি। অনুমোদন নিয়ে এ দিন আমদানিকারকেরা ঋণপত্র খুলতে পেরেছেন। যদিও দুই দিনের কথা বলা হয়েছে, তবে সরকার প্রয়োজন মনে করলে সময় আরও বাড়বে। এর আগে গত শনিবার থেকে প্রতিদিন ৬ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দিয়ে আসছিলাম আমরা।’

দেশে সাধারণত প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। সে হিসাবে যেদিন ঋণপত্র খোলেন, সেদিনই আমদানি করতে পারেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত