Ajker Patrika

বাড়তি শুল্ক-ভ্যাটের উত্তাপে বাজার গরম

রোকন উদ্দীন, ঢাকা
আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭: ৪০
বাড়তি শুল্ক-ভ্যাটের উত্তাপে বাজার গরম

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা পুরানা পল্টনের বাসিন্দা আলিমুজ্জামান গতকাল রোববার বের হয়েছিলেন বারডেম হাসপাতালে একজন পরিচিত রোগীকে দেখতে। পথে সেগুনবাগিচা বাজারে থামেন রোগীর জন্য ফল কিনতে। আপেলের দাম জিজ্ঞেস করেই থমকে গেলেন। গত বৃহস্পতিবার এই একই বাজার থেকে যে দামে আপেল কিনেছিলেন, আজ (গতকাল) তার চেয়ে ২০ টাকা বেশি চাইছেন বিক্রেতা। তাঁর দাবি, আড়তে ফলের দাম বেড়েছে প্রতি কার্টনে ১০০-১৫০ টাকা। কাঁচাবাজারের ছোট ফল বিক্রেতা ভ্যাটের হিসাব অত না বুঝলেও আলিমুজ্জামান ঠিকই বুঝে গেলেন, ফলসহ বেশ কিছু পণ্য ও সেবায় সরকার যে ভ্যাট বাড়িয়েছে, তার প্রভাব শুরু হয়ে গেছে বাজারে।

বাজারেই কথা হলে এ প্রতিবেদককে আলিমুজ্জামান বলেন, এখন তেমন দেশীয় ফলের মৌসুম নেই। বছরজুড়েই ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকে। বিশেষ করে ঢাকায় ডেঙ্গু ও সাধারণ জ্বরের রোগীর পথ্য হিসেবে আপেল, কমলা ও মাল্টার বাড়তি চাহিদা থাকে। এসব পণ্যকে বিলাসী হিসেবে ধরে আগেই এক দফা কর বাড়ানো হয়েছে। এখন আবার ভ্যাট বাড়ানোয় অনেক সাধারণ মানুষ ক্রয়ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে।

সরকার গত বৃহস্পতিবার শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, তার প্রভাব ইতিমধ্যে বাজারে ফুটে উঠেছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু পণ্য ও সেবার খরচ বেড়ে গেছে। রেস্তোরাঁ-মালিকেরা ক্রেতার কাছ থেকে বিলে বাড়তি ভ্যাট আদায় করছেন। পোশাকের নতুন দাম কার্যকর করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। মোবাইল ফোনের কল ও ইন্টারনেটের বাড়তি খরচ কেটে নিচ্ছে অপারেটরগুলো। বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং সাধারণ ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, যেসব পণ্যের দাম এখনো বাড়েনি, সেগুলোর উৎপাদনকারী ও সরবরাহকারীরা বলছেন, পুরোনো চালানের মজুত শেষ হয়ে নতুন পণ্য বাজারে এলে সেগুলোর দামও বাড়বে। নানা কারণে পণ্য উৎপাদন খরচ আগে থেকেই বেড়েছিল। এখন সরকার ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানোর কারণে খরচের সীমা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।

সরকার বছরের মাঝপথে এসে মোবাইল ফোনের সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ২০ থেকে বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করেছে। ফ্রিজ, রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার, কম্প্রেসর ও মোটরসাইকেলের করপোরেট কর ১০ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। ব্র্যান্ডের পোশাকের দোকান ও সব ধরনের রেস্তোরাঁর বিলের ওপর ভ্যাট একলাফে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া মিষ্টির দোকান, এলপি গ্যাস, কিচেন টাওয়েল, টয়লেট টিস্যু, ন্যাপকিন, ফেসিয়াল টিস্যু, হ্যান্ড টাওয়েল, সানগ্লাস, নন-এসি হোটেল, ব্র্যান্ডের তৈরি পোশাকের শোরুম বা বিপণিবিতানের পণ্য ও সেবা বিক্রিতে থাকা বিদ্যমান ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।

শুল্ক-কর বৃদ্ধির তালিকায় আরও রয়েছে আমদানি করা বাদাম, রং ও ডিটারজেন্ট।

এ ছাড়া স্থানীয় উৎস বা দেশের মধ্যে উৎপাদিত তামাকযুক্ত সিগারেট, প্লাস্টিক ও মেটাল চশমার ফ্রেম, রিডিং গ্লাস, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ও তাতে ব্যবহৃত তেল, বৈদ্যুতিক খুঁটি, সিআর কয়েল, জিআই তারসহ বেশ কয়েকটি পণ্যে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের প্রভাব ইতিমধ্যে বাজারে দেখা গেছে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, যেসব রেস্তোরাঁ এনবিআরের দেওয়া ইসিআর মেশিন ব্যবহার করে বা খরিদ্দারকে ভ্যাট চালান দেয়, তারা ইতিমধ্যে সরকারের নতুন ঘোষণা অনুসারে ১৫ শতাংশ ভ্যাট নিতে শুরু করেছে। এতে ক্রেতাকে ১০০০ টাকা বিল হলে সঙ্গে বাড়তি ১৫০ টাকা দিতে হচ্ছে, যা আগে ছিল ৫০ টাকা।

এ ছাড়া একইভাবে ব্র্যান্ডের পোশাকের দোকানগুলোয় ১ হাজার টাকায় বাড়তি দিতে হচ্ছে ১৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৫০ টাকা।

ইতিমধ্যে সিগারেটের দাম প্রতি প্যাকেটে বেড়েছে ৬০-৭০ টাকা। ভ্যাটের প্রভাব পড়েছে রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের ওপরও। বিমানে যাতায়াতে তাঁদের খরচও বেড়েছে ৫০০ টাকা। বিমান ভ্রমণে আবগারি শুল্ক ২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ইতিমধ্যে আড়াই হাজার টাকা নেওয়া শুরু করেছে এয়ারলাইনসগুলো। প্রভাব পড়েছে নির্মাণশিল্পেও। ভ্যাট বাড়ানোর ফলে ইতিমধ্যে রডের দাম টনপ্রতি ১০ হাজার টাকা বেড়েছে। ৭৭-৭৮ হাজার টাকা টনের রড রাতারাতি এখন ৮৬-৮৭ হাজার টাকায় উঠে গেছে।

সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে ১২ কেজি এলপিজিতে ভ্যাট বাড়বে ৩৬ টাকার কিছু বেশি। সরকার এখনো এলপিজির নতুন দাম নির্ধারণ না করলেও খুচরা পর্যায়ে বাড়তি দাম রাখছেন সরবরাহকারীরা। ১২ কেজির সিলিন্ডারের বর্তমান দাম ১ হাজার ৪৫৫ টাকা। অনেক এলাকায়ই তা ১ হাজার ৫৫০ টাকা পর্যন্ত রাখছেন বিক্রেতারা।

ইতিমধ্যে মোবাইল ফোনের খরচ বেড়েছে শতকরা ২ টাকা। অর্থাৎ আগে ১০০ টাকার কথা বললে ২৮ টাকা বাড়তি খরচ হতো। এখন তা ৩০ টাকা হচ্ছে।

ইতিমধ্যে বাজারে ২৫ টাকার টিস্যু ২৮ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে অনেক জায়গায়। ৬০ টাকার বিস্কুট এখন ৭০ টাকা।

সেগুনবাগিচা বাজারের দোকানি মোস্তাফিজুর রহমান বললেন, ‘আমি এখনো বাড়তি দামের টিস্যু আনি নাই। তবে কোম্পানির সরবরাহকারীরা আমাকে জানিয়ে গেছে, এর দাম শিগগিরই বাড়বে।’

বসুন্ধরা গ্রুপের ফুড ডিভিশন অ্যান্ড এলপিজির হেড অব সেলস রেদোয়ানুর রহমান বলেন, ‘যেকোনো পণ্য উৎপাদন থেকে খুচরা পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছাতে ৮-১০ দিন লাগে। এ জন্য এখনো বাজারে ভ্যাট-ট্যাক্সের প্রভাব পুরোপুরি পড়েনি। যখন নতুন পণ্য বাজারে আসবে, তখন দামের প্রভাব আরও ভালোভাবে বোঝা যাবে।’

অফিস-আদালতের আলাপে, চায়ের দোকানের আড্ডায় বা গণপরিবহনের কথোপকথনে হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সীমিত আয়ের মানুষের কষ্টের আভাস ভালোই পাওয়া যাচ্ছে। রাজস্ব আয় বাড়াতে সরকারের মরিয়া এই প্রয়াস ইতিমধ্যেই মূল্যস্ফীতির চাপে থাকা মানুষকে আরও দুর্ভোগে ফেলছে বলে মন্তব্য করেছেন বাজার বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানাবিধ উদ্যোগ নিলেও তার তেমন কোনো সুফল সাধারণ মানুষ পাচ্ছে না। সরকার ইতিপূর্বে ২৯টি পণ্যের ভ্যাট ও আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করলেও ভোক্তা পর্যায়ে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। ওই শুল্ক প্রত্যাহারের পুরো সুবিধাটুকু হাতিয়ে নিয়েছে বড় বড় করপোরেট গ্রুপ ও আমদানিকারকেরা। মূল্যস্ফীতি ক্রমাগতভাবে ঊর্ধ্বমুখী থাকায় মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে। প্রতি মাসে ধারদেনা ও খাবারের তালিকা কাটছাঁট করে কোনোরকমে সংসার চালাতে হচ্ছে।

ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, ‘সীমিত ও প্রান্তিক আয়ের মানুষ এমনিতেই নিত্যপণ্যের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। এই ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা আরেক দফা মূল্য বাড়িয়ে তাদের জীবন আরও দুর্বিষহ করে তুলবে। তাই এই অধ্যাদেশ বাতিল অথবা আগামী রমজান পর্যন্ত কার্যকর না করার দাবি জানিয়েছি আমরা।’

এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, শুল্ক-কর বাড়ানোর কারণে বছরে ১২ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আদায় করা যাবে। এতে সরকারের রাজস্ব ঘাটতি কমবে। মানে হলো, এই ১২ হাজার কোটি টাকার প্রায় পুরোটাই যাবে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে। কারণ, পণ্যের ভ্যাট নিতান্ত গরিব-মিসকিন থেকে শুরু করে সবাইকে দিতে হয়। আর আয়কর দিতে হয় শুধু ধনীদের। তাই অনেকের পরামর্শ, ভ্যাট বাড়িয়ে সীমিত আয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের ওপর বোঝা না চাপিয়ে আয়করের আওতা বাড়িয়ে বাজেট ঘাটতি মেটানো হোক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। আজ মঙ্গলবার পোশাকমালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জানাজার আগপর্যন্ত দেশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, ‘দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প কারখানায় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

পৃথক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সারা দেশের বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিজিএমইএ ছাড়াও শোক জানিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), টেক্সটাইল মিলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসসহ (বেসিস) আরও অনেক সংগঠন।

সংগঠনগুলো পৃথক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত চেয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত